শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কলম্বো গেজেট এই খবর নিশ্চিত করেছে।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে চলতি সপ্তাহেই দায়িত্ব ছাড়তে পারেন বলে শ্রীলঙ্কার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল। বলা হচ্ছিল, নিজ দল শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)-এর স্থানীয় কাউন্সিল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে পদ ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার অনুরোধ করেছিলেন বলে জানা গেছে।
পদত্যাগের পর এক টুইটে মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, ‘আবেগী জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের মনে রাখতে হবে সংঘাত কেবল সংঘাতই বাড়ায়। অর্থনৈতিক সংকটের প্রয়োজন অর্থনৈতিক সমাধান। তা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বৈদেশিক রিজার্ভের সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতিতে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এ জন্য রাজাপাকসে সরকারের দুর্নীতিকে দুষছে দেশটির জনগণ। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। শুক্রবার সকালে কলম্বোয় সহিংসতায় আহত হন অন্তত ৭৬ জন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই দফায় রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে। সবশেষ শুক্রবার রাতে জারি হয় দ্বিতীয় দফায় জরুরি অবস্থা।
এদিকে কলম্বোর দক্ষিণ, উত্তর এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ এলাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে পুলিশ।
গোতাগোগামা এবং মাইনাগোগামা এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষের পরপর জারি হয় কারফিউ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ওই দুই এলাকায় তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। সরকার দলের সমর্থকরা এসব তাঁবু গুড়িয়ে দিয়েছে। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়।
আরও পড়ুন:While emotions are running high in #lka, I urge our general public to exercise restraint & remember that violence only begets violence. The economic crisis we're in needs an economic solution which this administration is committed to resolving.
— Mahinda Rajapaksa (@PresRajapaksa) May 9, 2022
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির সর্বোচ্চ পতন রেকর্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার টানা ষষ্ঠ দিন ডলারের বিপরীতে রুপির পতন অব্যাহত রয়েছে। দিনের শুরুতে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য ১৯৬.১০ রুপি গুনতে হয়েছে।
দেশটির মুদ্রাবিষয়ক সংস্থা ফরেক্স অ্যাসোসিয়েশন অফ পাকিস্তানের (এফএপি) প্রতিবেদন মতে, সোমবারের চেয়ে রুপির দর ডলারের বিপরীতে ১.৫০ কমে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৬.১০ রুপি।
দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং অতিরিক্ত আমদানির কারণে রুপির দরপতন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
রুপির দরপতন শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার। সেদিন ডলারের বিপরীতে রুপির লেনদেন হয়েছে ১৮৮.৬৬ তে। বুধবার তা আরও বেড়ে হয়েছে ১৯০.৯০। বৃহস্পতি, শুক্র ও সোমবার ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার বিনিময় হার রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে ১৯২, ১৯৩.১০ ও ১৯৪ রুপি। ষষ্ঠ দিন মঙ্গলবার তা হয়েছে ১৯৬.১০ রুপি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে ডলারের উচ্চদরে হিমশিম খাচ্ছিল পাকিস্তানি রুপি। তবে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে সেই পতন ভয়াবহ পর্যায়ে নামতে থাকে।
আরও পড়ুন:নানা সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় মাত্র এক দিন ব্যবহার করা যাবে, এ পরিমাণ পেট্রল মজুত রয়েছে।
দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে আর মাত্র এক দিনের পেট্রল মজুত আছে। আগামী কয়েক মাস আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে। আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নিতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
‘অল্প সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘জনগণের কাছে মিথ্যা বলার বা সত্য লুকানোর কোনো ইচ্ছা আমার নেই। পরিস্থিতি ভীতিকর, এটাই সত্য। তবে এই সময় দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো আমাদের সহায়তা করবে। তারা এরই মধ্যে সাহায্য করা শুরু করেছে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।
‘আগামী তিন দিনের মধ্যে ১ হাজার ১৯০ স্টেশনে তেল সরবরাহ করা হবে। অনুরোধ করব তার আগে তেলের জন্য লম্বা লাইন না দিতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। এই পদের জন্য কোনো অনুরোধ করিনি। দেশের সংকট উত্তরণে প্রেসিডেন্ট আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘কেরোসিন, গ্যাস, জ্বালানির লাইন থাকবে না- এমন একটি দেশ গড়ব আমরা। সেখানে কোনো অভাব থাকবে না। জনগণের জন্য এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি। কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা দলকে রক্ষা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। সবাই আমার পাশে থাকবেন।’
গত কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
এ অবস্থায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। এক পর্যায়ে রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
সরকারবিরোধী আন্দোলন সম্প্রতি আরও বড় রূপ ধারণ করে। আন্দোলনে বসা বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। এতে বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে সরকারদলীয় এমপি, পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন নয়জন। আহত হন দুই শতাধিক।
আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
আরও পড়ুন:কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা ও আত্মসাৎ ঘটনার হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে আদালতে তোলা হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজতে থাকা পি কে হালদারসহ ৬ জনকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সিবিআই আদালতে নেয়া হবে।
আদালতে তোলার আগে ইডির তদন্তকারীরা টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে পি কে হালদার চক্রের বেআইনি সম্পত্তি, পাচার করা অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্র জানার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে কোন কোন প্রভাবশালীর সঙ্গে তার উঠাবসা রয়েছে বা ছিল এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিস্তারিত জেনে নিতে চাইছেন তারা।
এসব বিষয়ের সদর্থক জবাব না পেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে আবারও হেফাজতে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে ইডি।
পাশাপাশি ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, এমনকি পাসপোর্ট জাল করে অবৈধভাবে এদেশে থাকার বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই বা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন তদন্ত করতে পারে। কারণ ইডি কেবল অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার এখতিয়ার রাখে।
মঙ্গলবার রুটিন মেডিক্যাল চেকআপের পর পি কে হালদারসহ ৬ জনকে সিবিআই আদালতে তোলা হবে।
‘আমি দেশে ফিরতে চাই’
পি কে হালদারকে সোমবার বিধাননগর মহাকুমা হাসপাতালে রুটিন মেডিক্যাল চেকআপের পর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির অফিসে ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় লিফটের মধ্যে তিনি বলেন, ‘আমি দেশে ফিরতে চাই। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
ইডি সূত্রে খবর, প্রথম দিকে তদন্তকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে অসহযোগিতা করলেও লাগাতার জেরার মুখে এক পর্যায়ে ভেঙে পড়েন পি কে হালদার। তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি হন তিনি। এদিন কখনও একা, আবার কখনও ইডির রিমান্ডে থাকা সহযোগীদের পাশে বসিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদার জালিয়াত চক্রের বেআইনি বিনিয়োগের বহু তথ্য ও নথি ইডির তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। প্রয়োজনে আরও জেরা করতে ইডি অভিযুক্তদের আবারও হেফাজতে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতণ্ডার পর এবার রাজ্যটির বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের জায়গা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
পাল্টাপাল্টি দাবির পর সোমবার আদালতের নির্দেশে মসজিদ চত্বরে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ ঘর (তাহখানা), অজুখানা এবং আশপাশের এলাকা সিল করে দিয়েছে প্রশাসন।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব দুই হাজার বছরের পুরোনো কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ধ্বংস করে সেখানে গড়েন জ্ঞানবাপী মসজিদ।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার থেকে মসজিদের দুটি গম্বুজ, ভূগর্ভস্থ অংশ, পুকুরসহ সব জায়গার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা এবং ভিডিও করে সোমবার বারাণসীর আদালতে রিপোর্ট পেশ করা হয়।
এরপরই কয়েকটি এলাকা সিল করে সিআরপিএফ মোতায়েনের নির্দেশ দেয় আদালত। বারাণসীর জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনারের পাশাপাশি সিআরপিএফের একজন কমান্ডান্ট (সুপার) স্তরের কর্মকর্তাকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন নগর-দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর।
আবেদনকারী হিন্দুত্ববাদী পক্ষের আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন সোমবার বলেন, ‘অজুখানার পুকুরে শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব মেলার কারণেই আদালত এই পদক্ষেপ করেছে।’
আরেক আইনজীবী মদনমোহন যাদবের দাবি, মসজিদের পশ্চিমের দেয়ালের অদূরে অবস্থিত নন্দীমূর্তির মুখ রয়েছে শিবলিঙ্গের দিকে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট সোমবার জানিয়েছে, জ্ঞানবাপীতে সমীক্ষা ও ভিডিওগ্রাফি বন্ধের দাবিতে করা আবেদনের শুনানি হবে মঙ্গলবার।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, জ্ঞানবাপী মসজিদ যে জমিতে গড়ে উঠেছে, তা আসলে হিন্দুদের। সুতরাং সেই জমি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেয়া হোক।
মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব দুই হাজার বছরের পুরোনো কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে তোলেন দাবি তুলে সেখানে ‘হিন্দুত্বের ছাপ’ খুঁজতে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার দাবি জানানো হয় আদালতে।
অন্যদিকে, জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে ‘দেবদেবীর মূর্তি’ আছে দাবি করে সেগুলো পুজো করার অনুমতি চেয়ে ২০২১ সালে আদালতে একটি পৃথক আবেদন করেন পাঁচ নারী।
এরই জেরে গত বৃহস্পতিবার বারাণসীর জেলা আদালত জ্ঞানবাপী মসজিদের প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিল।
সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়।
এর আগে ষোড়শ শতকে মোঘল সম্রাট বাবরের সময় তৈরি করা বাবরি মসজিদ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরে হিন্দুত্ববাদী ভিএইচপি, বিজেপি এবং শিবসেনা পার্টির সদস্যরা ধ্বংস করে দেন।
তাদের মতে, মসজিদের ওই জায়গাটি ছিল হিন্দুধর্মের অন্যতম আরাধ্য দেবতা রামের জন্মস্থান এবং সেখানে মসজিদ হওয়ার আগে একটি মন্দির ছিল।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে হওয়া দাঙ্গায় ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা যাযন। এরপরও অযোধ্যা ইস্যু নিয়ে ভারতে একাধিকবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণহানি হয়েছে বহু মানুষের।
২০২০ সালের নভেম্বরে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটিতে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন:
অনাস্থা ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো ইমরান খানের নিরাপত্তায় ১৯৯ কর্মী মোতায়েন হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যও।
ইমরানের প্রাণ নিয়ে শঙ্কার কথা সামনে আসার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই নির্দেশনা দেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেয়ার পর ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান যখন তার বাসভবন বানি গালায় থাকবেন এবং কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে যাবেন, তখন তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন ওই নিরাপত্তাকর্মীরা।
রেডিও পাকিস্তান বলছে, এসব নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও ইমরানের জন্য একজন প্রধান নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনিই সবকিছু দেখাশোনা করবেন।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতা ইমরানের নিরাপত্তায় তার বাসভবনে নিয়োগ করা হবে ৯৪ জন কর্মী, এর মধ্যে ইসলামাবাদ থেকে আসবেন পুলিশের ২২ সদস্য আর বাকি ৭২ জন মোতায়েন হবে আধা সামরিক বাহিনী থেকে।
এর বাইরে ২৬ কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে। সেনাবাহিনীর ৯ সদস্যকেও নিয়োগ দেয়া হবে ইমরানের জন্য।
খাইবার পাখতুনখাওয়া পুলিশ তাদের ২৬ সদস্যকে নিয়োগ দেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য। বেলুচিস্তান থেকে আসবে আরও ছয়জন।
এ ছাড়া ইমরান খান যখন কোনো কর্মসূচিতে যাবেন, তখন তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন শাহবাজ শরিফ।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ইমরান খান বাসা থেকে বের হলে তাকে ঘিরে থাকবে পুলিশের চারটি গাড়ি, যাতে সতর্ক অবস্থায় থাকবেন তাদের ২৩ জন। আরেকটি গাড়িতে থাকবে বিশেষ বাহিনীর পাঁচ সদস্য।
বিভিন্ন নাটকীয়তার পর গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাতের অনাস্থা ভোটে ৬৯ বছর বয়সী ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান ঘটে। তিনি দেশটির ২২তম প্রধানমন্ত্রী।
পরে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে আবার ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ।
দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। তার সরকারের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:গম রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে খাদ্যশস্যটির দাম।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বেঞ্চমার্ক ইনডেক্সে বিশ্বে গমের মূল্যসূচক বেড়ে গেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরের মাস মার্চে প্রচণ্ড গরম আর তাপদাহে ভারতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গমের ফলন। এতে দেশটির অভ্যন্তরে প্রধান খাদ্যশস্যটির দাম বেড়ে যায় রেকর্ড পরিমাণ। এমন বাস্তবতায় গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিশ্ববাজারে গমের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এতে গম থেকে উৎপাদিত রুটি, নুডুলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়।
গত শুক্রবার অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত সংস্থা (ডিজিএফটি) স্থানীয় সময় শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়।
শুক্রবারের ঘোষণার আগে লেটার অফ ক্রেডিট (এলওসি) ইস্যু হয়েছে এমন সব রপ্তানির চালান সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হবে। এর বাইরেও কোনো দেশের অনুরোধে গম রপ্তানি করা যাবে।
ডিজিএফটির ঘোষণায় আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক খাদ্যসংকট নিয়ন্ত্রণে নয়াদিল্লি গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবেশী ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে ভারত।
চীনের পর গমের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ভারত। তবে উৎপাদিত গমের অধিকাংশই ভারতকে ব্যবহার করতে হয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে গমের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ভারতের দ্বারস্থ হন ক্রেতারা।
ভারত সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আগে ইস্যু করা রপ্তানির আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন দেশকে গম পাঠানো অব্যাহত রাখবে নয়াদিল্লি। আর যে সব দেশ তাদের খাদ্যনিরাপত্তার চাহিদা মেটাতে ভয়াবহ সংকটের মুখে রয়েছে, তারাও ভারতের গম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।
ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারাও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয় এবং এটি সংশোধন করা যেতে পারে।
তবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত গ্রুপ অফ সেভেন-জি৭ভুক্ত দেশগুলোর বৈঠকে কৃষিমন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷
জার্মান খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী সেম ওজদেমির বলেন, ‘ভারতের মতো অন্য দেশগুলো যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা বাজার বন্ধ করতে শুরু করে, তবে এই সংকট আরও তীব্রতর হয়ে দেখা দেবে।’
জি৭ হলো বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম ও উন্নত অর্থনীতির একটি সংগঠন, যার আধিপত্য রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায়। জি৭ভুক্ত দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ, তবে এটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ নয়। কারণ এর বেশির ভাগ উৎপাদিত শস্য অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের গম রপ্তানিতে ধস নামে। খরা ও বন্যার হুমকিতে থাকা দেশগুলো নিজেদের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।
নিষেধাজ্ঞা দেয়ার এক সপ্তাহ আগে, ভারত চলতি বছর রেকর্ড ১০ মিলিয়ন টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে গমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত একাই তা মেটাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের সঙ্গে মিল রেখে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোটা বিশ্ববাসীকে খাবার সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত।
তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে নিজের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে যায় নয়াদিল্লি, এমন মন্তব্য করেছেন সংবাদমাধ্যম বিবিসির ভারতবিষয়ক সম্পাদক ভিকাস পান্ডে।
আরও পড়ুন:তীব্র গরমে অতিষ্ঠ ভারতের দিল্লিবাসীর জনজীবন। রোববার রাজধানী দিল্লির মুঙ্গেশপুরে ৪৯.২ ডিগ্রি ও নাজাফগড়ে ৪৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এ সময় সফদরজং পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তাপমাত্রা ছিল ৪৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি। গুরুগাঁওয়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নয়ডায় তা ছিল ৪৭.১ ডিগ্রি, যদিও আশা করা হচ্ছে, সেখানে সোমবার তাপমাত্রা ২৮.৮১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে।
এই বছরই মুঙ্গেশপুর ও নাজাফগড়ের দুটি স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন চালু করা হয়েছে।
দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, এই বছর গ্রীষ্মজুড়ে বৃষ্টির অভাবের কারণে দেশটিতে অত্যধিক গরম দেখা যাচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর-পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রাকে সহনীয় পর্যায়ে রেখেছে, তা দিল্লিতে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ তাদের গভীরতা ও তীব্রতা কম ছিল। এর মানে হলো দিল্লির তাপমাত্রা কমানোর মতো বৃষ্টি হয়নি।
এদিকে গত শনিবার দিল্লির অনেক এলাকায় তীব্র গরমের কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এবং রোববারের জন্য জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা।
আবহাওয়া অনুযায়ী আইএমডি চার ধরনের সতর্কতা জারি করে। এতে সবুজের কোনো সতর্কতা নেই, হলুদে সতর্কতা, কমলাতে জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকা এবং রেড অ্যালার্টে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
চলতি গ্রীষ্মের মৌসুমে দিল্লিতে তাপপ্রবাহের এটা পঞ্চম রাউন্ড। গত মার্চে একের পর এপ্রিলে তিন রাউন্ড তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হতে হয়েছিল দিল্লিকে।
গত দুই মাসে দিল্লিতে অল্প বৃষ্টির কারণে এপ্রিলে গ্রীষ্মের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। ১৯৫১ সালের এপ্রিলের পর থেকে দিল্লি দ্বিতীয়বার সবচেয়ে খারাপ তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে। এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য