সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনির সঙ্গে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েকটি হামলার প্রেক্ষাপটে পশ্চিমতীরে অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলি সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে মধ্য ইসরায়েলে আবারও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে মধ্য ইসরায়েলের শহর এলআদে এক হামলায় তিন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, হামলাকারী দুই জন ছুরি ও কুড়াল নিয়ে পার্কে পথচলার রাস্তায় হামলা করে। এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের আটক করতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারীদের ধরতে ইসরায়েলি পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের এলাকায় রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেকটি গাড়িতে তল্লাশী করা হচ্ছে।
এলআদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, শহরের বাসিন্দাদের ঘরে থাকতে বলেছে। শহরের অধিকাংশ বাসিন্দাই কট্টর-রক্ষণশীল ইহুদি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইটবার্তায় বলেছেন, এলআদ শহরের প্রাণঘাতী হামলা আমাদের হৃদয় ও আত্মাকে আহত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এলআদ শহরে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
মার্চ থেকেই ইসরায়েলে হামলার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ইসরায়েল ও পশ্চিমতীরে বেশ কয়েকটি হামলায় একজন আরব পুলিশসহ ১৬ জন ইসরায়েলি এবং দুইজন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযানে ২৬ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
গত এপ্রিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনীকে হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি কেউই মিশরে গাজা সম্মেলনে যোগ দেবেন না। মিশর এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য ইরানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে সোমবার ভোরে আরাগচি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছে, প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বা আমি কেউই ইরানি জনগণের ওপর আক্রমণকারী এবং আমাদের হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখা প্রতিপক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারি না।
সোমবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, মিশর রোববার সন্ধ্যায় ইরানকে লোহিত সাগরের অবকাশস্থল শারম আল-শেখে সোমবারের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
জুনে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইরানের পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে করা হামলায় ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সঙ্গে সংক্ষেপে যোগ দেয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরো বলেন, তেহরান ‘গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ করার’ এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষার যে কোনও উদ্যোগকে সমর্থন করে।
ইরান ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকে তাদের পররাষ্ট্র নীতির একটি অংশ করে তুলেছে।
বিপ্লবটি মার্কিন-সমর্থিত ইরানের শাহকে উৎখাত করেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য যুদ্ধবিরতি সুসংহত করা এবং যুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক কাঠামোর রূপরেখা তৈরি করা।
২০টিরও বেশি দেশের নেতৃবৃন্দ এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ইসরায়েল বা হামাস কেউই এতে অংশ নেবে না। সূত্র: বাসস
গাজা থেকে প্রথম পর্যায়ে সাতজন ইসরাইলি জিম্মিকে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) কাছে হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। সোমবার (১৩ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকালে সাতজন জিম্মিকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো মুক্তি পাওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করেছে। তারা হলেন— যমজ সন্তান গালি এবং জিভ বারম্যান, মাতান অ্যাংরেস্ট, অ্যালোন ওহেল, ওমরি মিরান, এইতান মোর ও গাই গিলবোয়া-দালাল।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, হামাসের মুক্তি দেওয়া সাতজন বন্দি এখন তাদের হেফাজতে রয়েছে এবং তারা ‘ইসরাইলি ভূখণ্ডের পথে’ রয়েছে।
জর্ডানের আম্মান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক নূর ওদেহ জানিয়েছেন, বন্দিদের ‘অবস্থা মোটামুটি ভালো’ এবং তারা ‘কোনো চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াই হেঁটে চলাফেরা করতে পারছেন’।
এর আগে বন্দি বিনিময়ের জন্য মোট ২০ জন ইসরাইলি জিম্মির তালিকা প্রকাশ করেছে হামাস। বর্তমানে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মির মধ্যে এখনো এই ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে আলোচনায় বসছেন বিশ্বনেতারা। স্থানীয় সময় আজ সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলন। সেখানে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি ইতিমধ্যে চুক্তি হয়েছে, তাতে ট্রাম্প সই করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর আলজাজিরার।
ট্রাম্পসহ ২০টির বেশি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলনে যোগ দিতে ইতিমধ্যে মিসরে পৌঁছেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের।
তবে ইসরায়েল সরকারের কেউ থাকছেন না সম্মেলনে। গতকাল রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান।
এদিকে ফিলিস্তিনি একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গাজায় সংঘাত নিয়ে আলোচনা হলেও হামাসের কোনো নেতা সম্মেলনে থাকবেন না। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া হামাসের প্রতিনিধিদলের প্রধান খলিল আল-হায়াসহ বেশির ভাগ সদস্য গত শনিবার শারম আল শেখ ছেড়েছেন।
মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর একটি অংশ কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা করে রাজধানী আন্তানানারিভোতে জমায়েত হওয়া হাজার হাজার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে। মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমাগত জোরাল হয়ে ওঠার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটল।
বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। গত শনিবার তরুণদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীরা প্রথমবারের মতো মাদাগাস্কারের রাজধানী শহরের মে থার্টিন চত্বরে প্রবেশ করেন। চলমান এ বিক্ষোভে এ পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় জমায়েতগুলোর একটি এটি। সম্প্রতি কেনিয়া ও নেপালে হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের অনুপ্রেরণায় ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এমন বিক্ষোভ হচ্ছে। কেনিয়া ও নেপালের ওই বিক্ষোভ জেন–জি বিক্ষোভ হিসেবে পরিচিত।
মাদাগাস্কারের পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পর কিছুসংখ্যক সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিক্ষোভকারীরা তখন সেনাসদস্যদের স্বাগত জানান এবং উল্লাস প্রকাশ করেন।
এর আগে আন্তানানারিভো শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি সেনা ব্যারাকে সেনাসদস্যদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। ওই সময় মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট সিএপিএসএটির সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভকারীদের করা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আবেদন জানান, যা বিরল ঘটনা। কারণ, ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনার উত্থানের ক্ষেত্রে এই সিএপিএসএটি ইউনিটের মুখ্য ভূমিকা ছিল।
সোয়ানিয়েরানা অঞ্চলের একটি ঘাঁটির সেনাসদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন। সেখানে তারা বলেন, ‘সেনা, আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ—চলুন, এক হয়ে কাজ করি। বেতনের বিনিময়ে আমাদের বন্ধু, ভাইবোনদের গুলি করার আদেশ আমরা মেনে নেব না।’
বিমানবন্দরে নিযুক্ত সেনাদের উদ্দেশে তারা বলেছেন, কোনো উড়োজাহাজকে উড়তে না দিতে। অন্য সেনাঘাঁটির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, ‘আপনাদের বন্ধুদের ওপর গুলি করার আদেশ মানবেন না।’
ভিডিওতে আরও বলা হয়, ‘ফটকগুলো বন্ধ করে দিন এবং আমাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করুন। আপনাদের ঊর্ধ্বতনদের আদেশ মানবেন না। যারা আপনাদের সহযোদ্ধাদের ওপর গুলি করার আদেশ দিচ্ছে তাদের দিকে আপনারা অস্ত্র তাক করুন। কারণ, যদি আমরা মারা যাই, তারা আমাদের পরিবারের দেখভাল করবে না।’
ঠিক কতজন সেনাসদস্য বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নতুন নিয়োগ পাওয়া সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী দেরামাসিনজাকা মানানৎসোয়া রাকোতোআরিভেলো সেনাসদস্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে রাকোতোআরিভেলো বলেন, ‘যেসব ভাই আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন, আমরা তাদের আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
রাকোতোআরিভেলো আরও বলেন, মালাগাসির সেনাবাহিনী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা বজায় রেখেছে এবং জাতির শেষ প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করলে কয়েকজন আহত হন।
দুই বছর ধরে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালানোর পরেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সদ্য ঘোষিত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। সম্প্রতি ইসরায়েলের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী এ সমর্থন জানান।
ওই সাক্ষাৎকারে মাচাদো বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, একদিন ভেনিজুয়েলা ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এটি হবে আমাদের পক্ষ থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থনের অংশ। আমি বিশ্বাস করি এবং ঘোষণা করতে পারি যে আমাদের সরকার ইসরায়েলে ভেনিজুয়েলার দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবে।
দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ মাচাদোকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল কমিটি তাদের বিবৃতিতে জানায়, যখন স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার সাহসী রক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তৎকালীন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের আমলে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে ভেনিজুয়েলা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং দেশ থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মাচাদো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে আলোচনায় আসেন। ৫৮ বছর বয়সি এই শিল্পপ্রকৌশলী বর্তমানে গোপনে বসবাস করছেন। ২০২৪ সালে আদালতের রায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, ভারতের ভোটাধিকার কেবল নাগরিকদেরই থাকা উচিত।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, অমিত শাহ বলেন, ‘মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, অন্যদিকে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এই পরিবর্তন প্রজনন হারের কারণে নয়, বরং অনুপ্রবেশের ফলেই হয়েছে।’
ধর্মভিত্তিক দেশভাগের প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহ বলেন, ‘ভারতের দুই প্রান্তে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই অনুপ্রবেশ চলছে, আর তার ফলেই এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী আর শরণার্থীর মধ্যে পার্থক্য আছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে, কারণ অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রধানত অনুপ্রবেশের কারণে, প্রজনন নয়।’
তিনি অভিযোগ করেন, ভোটার তালিকায় অনুপ্রবেশকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা সংবিধানের মূল চেতনাকে বিকৃত করছে। ‘ভোটাধিকার কেবল নাগরিকদেরই থাকা উচিত,’ জোর দিয়ে বলেন শাহ।
কিছু রাজনৈতিক দল অনুপ্রবেশকারীদের ‘ভোট ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, ‘গুজরাট ও রাজস্থানেও তো সীমান্ত আছে, সেখানে কেন অনুপ্রবেশ হয় না?’
অমিত শাহ বলেন, ‘অনুপ্রবেশ কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, এটি জাতীয় সমস্যা। বিরোধীরা বলে, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) কেন্দ্রের অধীনে, তাই দায়িত্বও কেন্দ্রের। কিন্তু সীমান্তের অনেক জায়গায় ভৌগোলিক কারণে বেড়া দেওয়া সম্ভব নয়। কেবল কেন্দ্র একা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবে না, রাজ্য সরকারগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু দল অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করে, কারণ তারা সেখানে ভোট ব্যাংক খোঁজে।’
তিনি আরও জানান, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, আসামে এক দশকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ‘অনুপ্রবেশ ছাড়া এটি অসম্ভব,’ বলেন শাহ। ‘পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলায় বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ, আর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর কিছু জায়গায় তা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এসবই অতীতের অনুপ্রবেশের স্পষ্ট প্রমাণ।’
অমিত শাহের দাবি, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, এবং তার মূল কারণও বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। রোববার অস্ট্রেলিয়ার অন্তত ২৭টি স্থানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশের অংশ নেওয়া অনেকে গাজা উপত্যকায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি টিকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সমাবেশের আয়োজনকারী সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার সর্বাধিক জনবহুল শহর সিডনিতে বিক্ষোভে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। তবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো হিসেব জানায়নি পুলিশ।
এদিকে রোববার সকালের দিকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দৃশ্য দেখা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি সৈন্যরা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা থেকে চলে গেছেন। দুই বছর ধরে চলা গাজা উপত্যকায় এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৬৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সিডনি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজক আমাল নাসের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি টিকলেও ইসরায়েল এখনো গাজা ও পশ্চিম তীরে সামরিক দখল চালিয়ে যাচ্ছে। এই দখলদারিত্ব এবং ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এক ধরনের বর্ণবৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ও ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পরিহিত অবস্থায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পদযাত্রা করেন। পুলিশ বলেছে, দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শেষ হয়েছে। বিক্ষোভ থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অ্যাবি জর্ডান বলেন, ইসরায়েলের তথাকথিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থায়ী হবে না। তিনি বলেন, ইসরায়েল অতীতে কখনো কোনো যুদ্ধবিরতি রক্ষা করেনি। ৭৮ বছর ধরে তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
তবে অস্ট্রেলিয়ার ২০০টিরও বেশি ইহুদি সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়ান জিউরি ওই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রধান নির্বাহী পিটার ওয়ার্থহেইম বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা চান এই চুক্তি ব্যর্থ হোক। যার অর্থ যুদ্ধ জারি থাকুক।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। পরে সেদিনই গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকে চলা ইসরায়েলি যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলি যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অস্ট্রেলিয়ায়, বিশেষ করে সিডনি ও মেলবোর্নে নিয়মিত ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
মন্তব্য