স্থানীয় সময় গতকাল বিকেলে পিসিআর টেস্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগ থেকে বিবৃতিতে এমনটা জানানো হয়েছে।
তিনি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার পূর্ণ ডোজ দিয়েছেন এবং তার শরীরে সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু।
পররাষ্ট্র বিভাগের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বেশ কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি। দেশটির সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (সিডিসি) নীতিমালা মেনেই প্রেসিডেন্টকে ব্লিঙ্কেনের সংস্পর্শে আসার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।
এদিকে করোনাভাইরাস শনাক্তের দিনই মৃদু লক্ষণ নিয়ে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেলো এবরার্ডের সঙ্গে। ব্লিঙ্কেনের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে যে এই সাক্ষাতের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষেত্রে যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা, তা মানা হয়নি। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখেই মাস্ক ছিল না।
My thanks to Mexican Foreign Secretary @m_ebrard for his visit to Washington, D.C. I appreciate the opportunity for a constructive conversation on continued collaboration between Mexico and the United States. pic.twitter.com/lPjyjX3CIg
— Secretary Antony Blinken (@SecBlinken) May 4, 2022
একই দিনে কাউন্সিল অফ আমেরিকাসের একটি অনুষ্ঠানেও ব্লিঙ্কেনকে দেখা গেছে। তার টুইটারে পোস্ট করা ছবিতে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি স্পষ্ট না হলেও সে সময় তার মুখে মাস্ক ছিল না।
Thank you @secBlinken for joining us for the #2022WCA private luncheon in partnership with @StateDept. It was a pleasure to be together in person to discuss priorities for the hemispheric agenda.
Watch the Secretary's remarks here: https://t.co/ELHTYbtX2B https://t.co/j6V1CdnBi9— Americas Society/Council of the Americas (@ASCOA) May 3, 2022
ব্লিঙ্কেনের করোনা শনাক্তের আগের দিন ৩ মে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে দেয়া এক ভিডিওতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখা গেছে। সেখানেও উপস্থাপকের সঙ্গে তার সামাজিক দূরত্ব ছিল না।
এ ছাড়াও সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যান লিন্ডের সঙ্গেও পররাষ্ট্র বিভাগে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। জাপানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা আকিবা তাকিওর সঙ্গেও দেখা করেন।
একই দিনে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরারাত মিরজয়ানের সঙ্গে। সেখানেও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মানা হয়নি। টুইটারে দেয়া ছবিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে করমর্দনও করতে দেখা গেছে।
Today we launched the U.S.-Armenia Strategic Dialogue with Armenian Foreign Minister @AraratMirzoyan as we celebrate 30 years of diplomatic relations. The U.S. is committed to strengthening our bilateral relationship, which is strongly rooted in shared democratic values. pic.twitter.com/lhB0rKxo75
— Secretary Antony Blinken (@SecBlinken) May 2, 2022
এরই মধ্যে মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবরার্ডের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়েছে। তার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সফর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ীই করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় এখন তার সংস্পর্শে আসা বাকি ব্যক্তিদের করোনা বিধি মোতাবেক কী পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে তা জানা যায়নি।
তবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিবৃতিতে বলছে, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিডিসির নীতিমালা মেনে বাসায় অবস্থান করবেন এবং ভার্চুয়াল কাজের সময়সূচি বজায় রাখবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় ও দেশটির অধিকাংশ মানুষ টিকা কার্যক্রমের আওতায় আসায় করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে।
পুরো বিশ্বে মহামারি শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখের বেশি ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ লাখ ২৩ হাজার ৫১৩ জন।
আরও পড়ুন:অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলায় একদিনে আরও ৭২ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৬০০ ছাড়াল। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়াল ৬৪ হাজার ৬৫৬ জনে।
এদিকে তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলুকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম গাজা শহরে বাস্তুচ্যুত পরিবারের তাঁবুতে গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে দুটি ফিলিস্তিনি পরিবারের অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া পশ্চিম গাজা শহরের বহুতলবিশিষ্ট টিবা–২ আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনী বোমাবর্ষণ করে। আগে থেকেই সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও হামলায় দুইজন নিহত হন।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম গাজার নাসের স্ট্রিটে বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
আরেকটি ড্রোন হামলা হয় আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালের কাছে প্যালেস্টাইন স্কোয়ারে একটি তাঁবুতে। এতে এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
শেখ রাদওয়ান এলাকায় একত্রিত হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গোলাবর্ষণ করেছে ইসরাইলি সেনারা। এতে একজন নিহত হন। ওই এলাকায় ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এতে একজন নিহত হন এবং অনেকে আহত হন। দেইর আল-বালাহ শহরে একটি তাঁবুতে ড্রোন হামলায় এক শিশুর মৃত্যু হয় এবং আরও অনেকে আহত হন।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের জালাল স্ট্রিটে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে চারজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন শিশু।
আনাদোলু বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এই অভিযানে পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং জনগণ চরম দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।
হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতিরোধের যোদ্ধারা কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না এবং তারা ইসরায়েলি আগ্রাসনের সামনে নত হবে না। তিনি দাবি করেন, ‘প্রতিরোধই ইসরায়েলকে থামিয়ে রেখেছে এবং এবার আগ্রাসনের শিকার হতে পারে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিরোধকে সমর্থন করাই হলো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ইসরায়েলি আগ্রাসন ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।’
গত বুধবার মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে কাসেম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘লেবাননের প্রধান সমস্যা হলো এর জনগণের মধ্যে জাতিগত ঐক্য গড়ে ওঠেনি। হিজবুল্লাহ লেবানন এবং তার ভূমির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তার নেতাদের ত্যাগ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিরোধই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে এবং এটি ইসরায়েলকে তার লক্ষ্য অর্জনে বাধা দিচ্ছে।’
কাসেম লেবানন সরকারের প্রতি ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় ইসরায়েল লেবাননকে নিয়ন্ত্রণ করুক’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল চায় লেবাননের কোনো সামরিক শক্তি না থাকুক।’ তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘হিজবুল্লাহ কোনো মূল্যে আত্মসমর্পণ করবে না।’ হিজবুল্লাহ নেতা আরও বলেন যে, মার্কিন-ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য লেবাননের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
কাতারের দোহায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে।’ তিনি দাবি করেন, ‘বৃহত্তর ইসরায়েল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তেল আবিব যেকোনো সময় সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও আক্রমণ করতে পারে’ এবং একমাত্র প্রতিরোধই ইসরায়েলকে থামিয়ে রেখেছে। এই খবরটি মেহর নিউজ থেকে নেওয়া হয়েছে।
টুইট টাওয়ারে হামলার প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। প্রায় ২৪ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে চারটি যাত্রীবাহী প্লেন ছিনতাই করে সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয় নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবনে। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান কয়েক হাজার মানুষ। এই হামলা ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়।
এদিকে মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন দাবি করেছেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার আগেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন। একটি প্রামাণ্যচিত্র সিরিজে তিনি এ বিষয়সহ দীর্ঘদিন ধরে চাপা থাকা বহু তথ্যই সামনে আনবেন বলে জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার কার্লসন পিয়ার্স মরগানের অনুষ্ঠান আনসেন্সরড নিউজে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের নেতৃত্ব কখনোই ৯/১১ হামলা নিয়ে তাদের মনোভাব লুকায়নি। বরং তারা মনে করত ওই হামলা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার ছিনতাইকারীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে একইসঙ্গে চারটি প্লেন ছিনতাই করে। তারপর সেগুলো ব্যবহার করে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে আঘাত হানার জন্য বিশাল ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে। দুটি প্লেন বিধ্বস্ত করা হয় নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে।
প্রথম প্লেনটি আঘাত হানে নর্থ টাওয়ারে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে। দ্বিতীয় প্লেনটি সাউথ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করা হয় এর কয়েক মিনিট পরেই, সকাল ৯টা ৩ মিনিটে।
হামলায় দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দুটির ওপরের তলাগুলোতে মানুষজন আটকা পড়ে যায়। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দুটি ভবনই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে সেগুলো বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে গুঁড়িয়ে পড়ে।
তৃতীয় প্লেনটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর বিশাল এই পেন্টাগন ভবন।
এরপর, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ প্লেনটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার একটি মাঠে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ প্লেনের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি বিধ্বস্ত করা হয়। ধারণা করা হয়, ছিনতাইকারীরা চতুর্থ প্লেনটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে আঘাত হানতে চেয়েছিল।
ওই হামলার পরই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, এটা আসলে ভালো একটা ঘটনা। কারণ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে যা নিয়ে আমরা কয়েক দশক ধরে অস্তিত্বের লড়াই করছি।
২০০২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, যুদ্ধে যেতে গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে কখনো কখনো ‘বোমা মেরে বাধ্য করতে হয়’। তিনি ৯/১১ হামলার সঙ্গে পার্ল হারবারে জাপানি হামলার তুলনা করেছিলেন।
কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল?
এসব হামলায় সব মিলিয়ে মারা যায় ২ হাজার ৯৭৭ জন। এর মধ্যে অবশ্য ১৯ জন ছিনতাইকারী অন্তর্ভুক্ত নেই। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন নিউইয়র্কের মানুষ। চারটি প্লেনের ২৪৬ জন যাত্রী ও ক্রুর প্রত্যেকেই মারা যান। টুইন টাওয়ারের দুটি ভবনে মারা যান ২ হাজার ৬০৬ জন। তাৎক্ষণিক ও পরে আঘাত থেকে পেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জন।
সর্বকনিষ্ঠ নিহতের বয়স ছিল মাত্র দু’বছর। নাম ক্রিস্টিন লি হ্যানসন। বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি প্লেনের যাত্রী ছিল সে। নিহত সর্বজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির নাম রবার্ট নর্টন। তার বয়স ছিল ৮২। তিনি ছিলেন অন্য আরেকটি প্লেনে। স্ত্রী জ্যাকুলিনের সঙ্গে তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
প্রথম প্লেনটি যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করে, তখন ভেতরে আনুমানিক ১৭ হাজার ৪০০ জন লোক ছিল। নর্থ টাওয়ারের যে অংশে প্লেন আঘাত করে, তার উপরের কোনো তলার মানুষই প্রাণে বাঁচেনি। তবে সাউথ টাওয়ারে যেখানে প্লেন আঘাত করে, তার উপরের অংশ থেকে ১৮ জন প্রাণ নিয়ে বের হতে পেরেছিলেন। হতাহতের মধ্যে ৭৭টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষ ছিলেন। নিউইয়র্ক শহরে যারা প্রথম ঘটনাস্থলে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় দৌড়ে যান, তাদের মধ্যে মারা যান ৪৪১ জন।
হাজার হাজার মানুষ আহত হন, যারা পরে নানা ধরনের অসুস্থতার শিকার হন। যেমন দমকলকর্মীদের অনেকে বিষাক্ত বর্জ্যের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
হামলাকারীদের সম্পর্কে কী জানা যায়?
উগ্র মতাদর্শের কথিত ইসলামপন্থি সংগঠন আল-কায়েদা আফগানিস্তান থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠী মুসলিম বিশ্বে সংঘাত সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোকে।
ছিনতাইকারী ছিল মোট ১৯ জন। এদের মধ্যে তিনটি দলে ছিল পাঁচজন করে, যারা প্লেন ছিনতাই করে হামলা চালায় টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে। আর যে প্লেনটি পেনসিলভেনিয়ায় ভেঙে পড়ে, তার ছিনতাইকারী দলে ছিল চারজন।
প্রত্যেক দলে একজন ছিনতাইকারীর পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ ছিল। এই ছিনতাইকারীরা তাদের পাইলটের ট্রেনিং নেয় যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি ফ্লাইং স্কুলে। ১৫ জন ছিনতাইকারী ছিল সৌদি নাগরিক। এছাড়া দুজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের, একজন মিসরের এবং একজন লেবাননের নাগরিক।
হামলার পর কী প্রতিক্রিয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্রের?
এই হামলার এক মাসেরও কম সময় পর আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করা এবং ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করার ঘোষণা দিয়ে আফগানিস্তান আক্রমণ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই অভিযানে যোগ দেয় আন্তর্জাতিক মিত্র জোট। যুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর পর ২০১১ সালে মার্কিন সৈন্যরা অবশেষে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পায় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে এবং তাকে হত্যা করে।
নাইন ইলেভেন হামলার অভিযুক্ত পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদকে ২০০৩ সালে গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তানে। এরপর থেকে তাকে গুয়ান্তানামো বের বন্দিশিবিরে মার্কিন তত্ত্বাবধানে বন্দি রাখা হয়েছে।
আল-কায়েদা এখনো টিকে রয়েছে। আফ্রিকায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের দেশগুলোতে গোষ্ঠীটি সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী। তবে আফগানিস্তানের ভেতরেও তারা সক্রিয়। আক্রমণের প্রায় ২০ বছর পর ২০২১ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে যায় পশ্চিমা বাহিনী। এরপর দেশটির ক্ষমতা দখল করে আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।
গ্রিসের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন দ্বীপ মিলোসের সমুদ্র সৈকতের কাছে একটি বিতর্কিত হোটেল নির্মাণ প্রকল্প কয়েক মাস ধরে বিতর্কের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই সপ্তাহে একথা জানিয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে অপরিকল্পিত নির্মাণের পর বেশিরভাগই জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপগুলোর স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। এরপর থেকেই গ্রিসের বিচার বিভাগ নতুন প্রকল্পগুলোর তদন্ত জোরদার করেছে।
এথেন্স থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
মিলোস পৌর পরিষদ বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের নগর পরিকল্পনা বিভাগ সারাকিনিকোর কাছে হোটেলটির নির্মাণ লাইসেন্স বাতিল করেছে। এটি চাঁদের মতো আগ্নেয়গিরির ভূদৃশ্যের জন্য ‘চাঁদের সমুদ্র সৈকত’ নামে পরিচিত।
কাউন্সিল বলেছে, ‘পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে, সব প্রয়োজনীয় অনুমোদন এবং সহায়ক নথিপত্র জমা দেওয়া হয়নি’।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইন এবং পরিবেশগত প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণরূপে মেনে না চললে কোনো নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাবে না’।
হোটেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর এই বিতর্ক ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় এবং কর্মকর্তারা নির্মাণের অনুমতিপত্র পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হন।
২০১৯ সালে এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসের কাছের বাসিন্দারা গ্রিসের শীর্ষ প্রশাসনিক আদালতে একটি নতুন দশ তলা পাঁচ তারকা হোটেলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জিতেছিলেন। এই হোটেলটি ছিল এলাকার সবচেয়ে উঁচু ভবন। তাই হোটেলটি নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচনা হয়েছিল।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে হোটেলের ওপরের দু’টি তলা অপসারণের নির্দেশ দেয়। এখন ২০২৭ সাল থেকে হোটেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জাওফ প্রদেশে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩১ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বুধবার এ হামলা চালানো হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানায় আলজাজিরা। এ হামলার একদিন আগে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে আলজাজিরা জানায়, সানার আল-তাহরির এলাকার আবাসিক ভবন, একটি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং আল-জাওফ প্রদেশের রাজধানী আল-হাজমের সরকারি কমপাউন্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে অনেকেই আটকে থাকতে পারেন।
হুথি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টিভি দাবি করেছে, হামলায় সানার দক্ষিণ-পশ্চিমের স্বাস্থ্য খাতের একটি মেডিকেল সেন্টার এবং আল-হাজমে স্থানীয় সরকারি কার্যালয় লক্ষ্যবস্তু করা হয়। বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।
হুথি মুখপাত্র ইয়াহইয়া সারে জানান, ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করতে তারা সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ব্যবহার করেছেন। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে কিছু ইসরায়েলি বিমানকে পিছু হটতে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, কিছু ইসরায়েলি বিমান তাদের অস্ত্র ব্যবহার করার আগেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একাধিক সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল নিক্ষেপ করে জায়নবাদী আগ্রাসনের মোকাবিলা করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সানা ও আল-জাওফে হুথি গোষ্ঠীর সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল হুথিদের সামরিক শিবির, সামরিক জনসংযোগ সদর দপ্তর এবং একটি জ্বালানি সংরক্ষণাগার।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, রামন বিমানবন্দরে হুথিদের ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এ আঘাত হানা হয়েছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা আমাদের আক্রমণ করবে, আমরা তাদের খুঁজে বের করব এবং জবাব দেব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত যে ঠিক কী করবেন, তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আজ তিনি যা বলছেন, কাল তা বদলে দিচ্ছেন। তিনি যা বলছেন, তার ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে তাঁর উপদেষ্টার কণ্ঠে। ফলে ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি এবং শুল্কযুদ্ধের পরিণতি শেষমেশ কী হবে, তা এখনো অজানা।
যদিও বুধবার সকালটা আরও একবার নতুন আশা জাগিয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে ট্রাম্পের টুইট এবং কালক্ষেপ না করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইতিবাচক প্রত্যুত্তর বাণিজ্য জটিলতা কাটানোর আশা জোরালো করেছে।
ভোরে (যুক্তরাষ্ট্রের সময় সন্ধ্যা) ট্রাম্প টুইট করে বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, দুই দেশের বাণিজ্য বাধা কাটাতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমার খুব ভালো বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা হবে। আমি নিশ্চিত, দুই মহান দেশের জন্যই ভালো হবে, বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে এমন সফল উপসংহারে পৌঁছতে আমাদের অসুবিধা হবে না।’
এক্সে ট্রাম্পের ওই টুইটের উত্তর দিতে মোদিও কালক্ষেপণ করেননি। ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক মিত্র’ উল্লেখ করে মোদি লেখেন, ‘দুই দেশের অংশীদারত্বে যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাণিজ্য আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই জটিলতা কেটে যাবে। আমাদের প্রতিনিধি দল এই আলোচনা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কাজ করে চলেছে। আমিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় রয়েছি। দুই দেশ ও তার জনগণের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলতর ও সমৃদ্ধশালী করে তুলতে আমরা কাজ করে যাব।’
ট্রাম্পের কাছে ভারত বরাবরই ‘ট্যারিফ কিং’ বা শুল্ক সম্রাট। মার্কিন পণ্য আমদানি রুখতে ভারতের অত্যধিক শুল্ক ও অশুল্ক বাধার বিরুদ্ধে ট্রাম্প বরাবর সরব।
যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে সেই বাধা দূর করতে তিনি ভারতীয় রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তারপর রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার ‘অপরাধে’ আরও ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানা শুল্ক ধার্য করা হয়।
তখন থেকে ভারত–যুক্তরাষ্ট্র শুল্কযুদ্ধ অব্যাহত। ট্রাম্পকে চাপে রাখতে চীন ও রাশিয়ার দিকে ভারত ঝুঁকেছে। তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে মোদি যোগ দেন। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকও করেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করা হবে না, সে কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই ট্রাম্পের দিক থেকে পরপর দুবার বার্তা দেওয়া হয়, যা মোদির কাছে ‘ইতিবাচক’ মনে হয়েছে।
তা সত্ত্বেও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক ঠিক কেমন হতে চলেছে। এর কারণ নানা সময়ে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টাদের ভিন্নমুখী বার্তা। ট্রাম্প নিজেই কিছুদিন আগে এক বার্তায় বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে ভারত ও রাশিয়াকে আমরা চীনের গহিন অন্ধকারে হারিয়ে ফেলছি।’
ট্রাম্পের সেই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আবার বলেন, ‘মোদি মহান প্রধানমন্ত্রী। তিনি সব সময় মোদির বন্ধু থাকবেন। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিশেষ ধরনের। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মোদিও সেই দিনেই ওই মন্তব্যকে ‘ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে ‘এক্স’ বার্তায় বলেন, ‘ভারত তার প্রতিদান দেবে।’
অথচ ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ভারতকে আক্রমণ করে একনাগাড়ে বিবৃতি দিয়েই চলেছেন। প্রথমে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘মোদির যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন। তারপর বলেন, ভারতের ব্রাহ্মণেরা রাশিয়ার তেল বেচে বড়লোক হচ্ছেন।
নাভারো বলেন, ভারত হলো ক্রেমলিনের হয়ে তেলের অর্থ পাচারকারী। ভারতকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হতে গেলে ভারতকে ঠিকমতো আচরণ করতে হবে। ট্রাম্পও মাঝেমধ্যে ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন।
বুধবার ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য করার আগেই ট্রাম্প ইইউকে অন্য রকম পরামর্শ দেন। রয়টার্স সেই খবর দিয়ে জানায়, ট্রাম্প নাকি ইইউ কর্তাদের বলেছেন, চীন ও ভারতের ওপর তারা যেন ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যাতে ওই দুই দেশ রাশিয়া থেকে তেল না কেনে। তাতে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে।
ফলে ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা কবে শেষ হবে, পরিণতিই–বা কী হবে, এখনই তা বলা যাচ্ছে না। একের পর এক পরস্পরবিরোধী মন্তব্য সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করে চলেছে।
ভারতের নতুন উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী সি পি রাধাকৃষ্ণন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক বিচারপতি সুদর্শন রেড্ডিকে হারিয়ে তিনি এ পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই আগের উপরাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করায় মধ্যবর্তী ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৭৮১ সদস্যবিশিষ্ট ইলেকটোরাল কলেজ- যেখানে সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যরা ভোট দেন- ভোটে রাধাকৃষ্ণন পান ৪৫২টি ভোট।
অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সুপ্রিম কোর্ট সাবেক বিচারপতি সুদর্শন রেড্ডি পেয়েছেন ৩০০ ভোট।
বিবিসি বলছে, দীর্ঘদিনের বিজেপি রাজনীতিক রাধাকৃষ্ণন বর্তমানে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতেও কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি একজন ‘অসাধারণ উপ-রাষ্ট্রপতি’ হবেন এবং ‘সংবিধানিক মূল্যবোধ আরও শক্তিশালী করবেন।’
এই নির্বাচনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ গত জুলাই মাসে জগদীপ ধনখড় হঠাৎ করেই স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। তিনি ২০২২ সালের আগস্টে দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং ২০২৭ সাল পর্যন্ত তার দায়িত্বে থাকার কথা ছিল।
ধনখড় পদত্যাগের পর বিরোধীদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে, হয়তো তার সঙ্গে শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্বের সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল। যদিও ধনখড় নিজে বলেছেন, স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তিনি পদ ছাড়ছেন। কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছিলেন, পদত্যাগের পেছনে আরও গভীর কারণ রয়েছে।
মোদি এ বিষয়ে শুধু তার সুস্বাস্থ্য কামনা করে মন্তব্য সীমিত রাখেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘অকারণে বিষয়টি নিয়ে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে।’
এদিকে মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচিত হলেও রাধাকৃষ্ণন পূর্ণ পাঁচ বছরের জন্য উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটে মোট ৭৫৪টি ভোট পড়ে, যার মধ্যে ১৫টি অবৈধ ঘোষিত হয়। বৈধ ভোটের মধ্যে রাধাকৃষ্ণন পান ৪৫২টি, আর রেড্ডি পান ৩০০ ভোট।
৬৮ বছর বয়সী রাধাকৃষ্ণনের জন্ম ১৯৫৭ সালে ভারতের দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ুতে। কৈশোরে তিনি যোগদেন জাতীয় স্বয়ংসেবক সংঘে (আরএসএস), যা বিজেপির আদর্শিক ভিত্তি হিসেবে পরিচিত। ধীরে ধীরে তিনি বিজেপির বিভিন্ন পদে ওঠেন এবং রাজ্য সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে কোয়েম্বাটুর আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তার বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ার দক্ষতা নতুন ভূমিকায় সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শপথ নেওয়ার আগে তাকে অবশ্যই মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের পদ ছাড়তে হবে।
ভারতের সাংবিধানিকভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী হলেন উপরাষ্ট্রপতি। তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে সাময়িকভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন উপরাষ্ট্রপতি।
মন্তব্য