নাৎসিবাদ নিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মন্তব্যে ক্ষেপেছে ইসরায়েল। তেল আবিবে রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে ইহুদি রাষ্ট্রটি। এ ঘটনায় এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি রাশিয়া।
জিউসদের বংশধর ছিলেন আডলফ হিটলার, কদিন আগে এমন মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ অভিযানের পর থেকে নিরপেক্ষ অবস্থানে আছে ইসরায়েল। মস্কো তার পদক্ষেপকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ দাবি করে আসছে। তারা বলছে, ইউক্রেনকে ‘অসামরিকীকরণ’ এবং ‘ডিনাজিফাই’ অভিযানের উদ্দেশ্য।
ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির জনগণের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে। তবে পশ্চিমাদের মতো নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটেনি তেল আবিব। উল্টো মস্কো-কিয়েভের মধ্যে মধ্যস্ততার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট।
তবে ইতালিয়ান এক চ্যানেলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। গত রোববারের টিভি সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ বলেন, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টসহ কিছু ব্যক্তি ইহুদি হলেও কিয়েভে এখনও নাৎসি মতাবলম্বী থাকতে পারে।
‘আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু হিটলারেরও ইহুদি রক্ত ছিল।’
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিড ল্যাভরভের বিবৃতিকে অমার্জনীয়, কলঙ্কজনক এবং একটি ভয়াবহ ঐতিহাসিক ভুল বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘হলোকাস্টে ইহুদিরা নিজেদের হত্যা করেনি। ইহুদিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের সর্বনিম্ন স্তর হলো ইহুদিদের নিজেদের ইহুদি-বিদ্বেষে অভিযুক্ত করা।’
ইউক্রেনে রুশ অভিযানের সমালোচনা না করলেও ল্যাভরভের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট।
তিনি বলেন, ‘তার কথা অসত্য। তাদের উদ্দেশ্য ভুল। রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ইহুদি জনগণের হলোকাস্ট ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’
ইসরায়েলের ওয়ার্ল্ড হোলোকাস্ট রিমেমব্রেন্স সেন্টারের কর্মকর্তা ইয়াদ ভাশেম ল্যাভরভের বিবৃতির সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর এবং বিপজ্জনক মন্তব্য নিন্দার যোগ্য।
আরও পড়ুন:#Lavrov's direct anti-Semitic statements, accusations of Jews of the WWII and the Holocaust are the evidence of Russia being a successor to Nazi ideology.
— Михайло Подоляк (@Podolyak_M) May 2, 2022
By trying to rewrite history, Moscow is simply looking for arguments to justify the mass murders of Ukrainians. (1/2)
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর পোপ ফ্রান্সিস রবিবার ভ্যাটিকানে তার বাসভবনে ফিরে যাবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির খবরে জানানো হয়, পোপ ফ্রান্সিস রোমের জেমেলি হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন।
বিষয়টি উল্লেখ করে চিকিৎসক সার্জিও আলফিয়েরি জানান, ৮৮ বছর বয়সী ক্যাথলিক চার্চের প্রধান শনিবার জানান, স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে শুনে তিনি ‘খুব খুশি’।
আলফিয়েরি সতর্ক করে বলেন, তাকে সুস্থ হতে এখনও ‘কমপক্ষে দুই মাস’ সময় লাগবে। যুবক বয়সে পোপের ফুসফুসের একাংশ অপসারণ করা হয়েছিল।
পোপ ফ্রান্সিসকে বিকেলের দিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভ্যাটিকান জানিয়েছে, দুপুরের ঠিক পরে (গ্রিনিচ মান সময় ১১টা) হাসপাতালের বাইরে শুভাকাঙ্ক্ষীদের আশীর্বাদ করবেন ও তাদের উদ্দেশে হাত নাড়বেন তিনি। ১৪ ফেব্রুয়ারির পর এটাই হবে জনসমক্ষে তার প্রথম উপস্থিতি।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:অগ্নিকাণ্ডে নিকটবর্তী একটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় এক হাজারের বেশি ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে।
খুদে ব্লগ ব্লুস্কাইয়ে দেওয়া এক পোস্টে ফ্লাইটরাডার২৪ নামের একটি ফ্লাইট ট্র্যাকার জানিয়েছে, ‘শুক্রবার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় এক হাজার ৩৫১টি ফ্লাইট চলাচল ব্যহত হয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর থেকে আসা বেশ কয়েকটি ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে। কিছু ফ্লাইট লন্ডনের বাইরে গ্যাটউইক বিমানবন্দরে, প্যারিসের শার্ল দ্য গোল বিমানবন্দর ও আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন তথ্য দিয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রী ও সহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ রাখার কোনো বিকল্প নেই। আসন্ন দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
খুলে না দেওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের এ বিমানবন্দর দিয়ে ভ্রমণ না করতে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরের একটি হিথ্রো। কেবল চলতি বছরের জানুয়ারিতেই এ বিমানবন্দর দিয়ে ৬৩ লাখ যাত্রী ভ্রমণ করেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি।
এর আগে ২০২৩ সালে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেওয়ায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের বিলম্ব হয়েছিল। তখন বেশ কয়েক দিন ধরে দেশটিজুড়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ হয়েছিল ধীরগতিতে।
অগ্নিকাণ্ডের পর ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের সাতটি ফ্লাইটকে ফিরে যেতে হয়েছে কিংবা অন্য বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করতে হয়েছে। আর শুক্রবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে এ এয়ারলাইনসের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার শেষ রাতে পূর্ব লন্ডনের একটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের ট্রান্সফরমারে অগ্নিকাণ্ডে আগুনের শিখা আকাশে উঠতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পরও সেই আগুন ধিকিধিকি জ্বলে। বিমানবন্দর থেকে দুই মাইল দূরে সাব-স্টেশনটির অবস্থান।
আগুন নেভাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে ১০টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও ৭০ জনের মতো দমকলকর্মী কাজ করেছেন। এতে কয়েক হাজার বসতবাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রায় ১৫০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হয়েছে। স্কটল্যান্ড ও সাদার্ন ইলেকট্রিসিটি নেটওয়ার্কস জানায়, ১৬ হাজার ৩০০ বাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থাপনাটি থেকে ব্যাপক আগুন ও কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে।
যুক্তরাজ্যের জ্বালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেন, ‘সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ আমাদের জানা নেই। অবশ্যই এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।’
আরও পড়ুন:যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেন সম্মতি দেওয়ার পর এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতিতে সায় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির সুযোগটি কাজে লাগাবেন, নাকি তা প্রত্যাখ্যান করবেন?
সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এক মাসের একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়াকেও একই প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে জানান, শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেনকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেওয়া হবে।
ইউক্রেন প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে উল্লেখ করে রুবিও বলেন, যদি রাশিয়াও শান্তির হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এতদিনের চলমান যুদ্ধ বন্ধ হতে খুব বেশি দেরি নেই। কিন্তু রাশিয়া যদি এ প্রস্তাব মেনে না নেয়, তাহলে শান্তি আলোচনায় অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়, যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়ার রাজি হওয়া না হওয়া বহুমুখী হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভর করছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি অবধি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাফ জানিয়ে এসেছেন, কোনো ধরনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগ্রহ তার নেই। যদি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করতেই হয়, সেটি হতে হবে স্থায়ী সমাধান।
বর্তমানে যুদ্ধে অনেকটাই কোণঠাসা ইউক্রেন। রাশিয়ার সেনারা ভালো অবস্থানে রয়েছে। তা ছাড়া পুতিন বারংবার বলেছেন, সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ পাবেন। এ পরিস্থিতিতে পুতিন ট্রাম্পের মন রাখবেন নাকি যুদ্ধ চালিয়ে ইউক্রেনে জয়ের পথেই হাঁটবেন তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
মূলত, ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ১২ ফেব্রুয়ারি পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের একান্ত ফোনালাপ এবং এরপর একের পর এক রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকানদের বৈঠকই চলমান যুদ্ধের আশু সুরাহার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।
রাশিয়ার পদক্ষেপ এখনও স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।
সৌদিতে বৈঠকের পর বেশ কৌশলের সঙ্গে ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত না জেনে কোনো মন্তব্য জানানো হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না বলেই রাশিয়া এমন কৌশলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন কিছু বিশ্লেষক।
রুশ-আমেরিকানদের সাপে-নেউলের সম্পর্কের বাইরে গিয়ে ট্রাম্প-পুতিন সখ্য কিন্তু বিশ্ব পাড়ায় মোটেই অজানা নয়। তবে এ সখ্যই সব নয়। এর বাইরে আছে ইউক্রেনের খনিজের প্রতি ট্রাম্পের চোখ আর কিয়েভের ভূমির ওপর পুতিনের লোভ।
শেষ কয়েক দিনের যুদ্ধে ভালোই এগিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর কুরুস্কের বেশির ভাগ এলাকা এখন রাশিয়ার দখলে।
দর কষাকষিতে কুরুস্ককে নিজেদের হাতে রাখতে চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। তবে দিন দিন তা কঠিন হয়ে উঠছে তার সেনাদের জন্য।
আবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডা এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অসম্মান করার অভিযোগ নিয়ে আমেরিকা ত্যাগের মতো ঘটনা এতদিন জেলেনস্কিকে ভালোই ভুগিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, শান্তি চুক্তির প্রতি যতদিন না আগ্রহ দেখাবে ইউক্রেন, ততদিন বন্ধ থাকবে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নিতে হচ্ছে জেলেনস্কির।
প্রশ্ন হলো পুতিন কেন আপস করবে? বাইডেন প্রশাসনের সময়ে হাজারখানেক নিষেধাজ্ঞার ভারেও নতজানু না হওয়া পুতিন কেন এত সহজে রাজি হবে যুদ্ধবিরতিতে?
এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি এস পেশকভের সাক্ষাৎকারে।
পেশকভ জানান, জেদ্দার আলোচনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করছে মস্কো। এখনই হলফ করে কিছু বলা না গেলেও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের আরেক দফা ফোনালাপের পর রাশিয়া নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে।
প্রথমবার ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে ইতোমধ্যে দখলকৃত ইউক্রেনের ভূমি নিয়ে ফয়সালা, কোনোভাবেই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদান করতে না দেওয়ার ওয়াদা এবং পূর্ব-মধ্য ইউরোপে ন্যাটোর হম্বিতম্বি কমিয়ে আনার ব্যাপারে পুতিন জোরালো দাবি তুলেছেন বলে খবর পাওয়া যায়।
চলতি সপ্তাহেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানান, আবারও পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করবেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এপির নিশ্চিত করা এ তথ্য থেকেই চূড়ান্ত দরকষাকষির আভাস পাচ্ছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এর আগে ট্রাম্প বেশ কয়েকবার তার বক্তব্যে আভাস দিয়েছেন, এ চুক্তিতে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। এতদিন ইউক্রেন ছাড় দিতে রাজি না থাকলেও এবার বাধ্য হয়েই আপসের পথে হাঁটতে হতে পারে দেশটি।
রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিয়া গ্রাশ্চিনেকভ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাদা চোখে এ চুক্তিতে কারও বিজয় হয়নি মনে হলেও রাশিয়া কৌশলগত বিজয় নিশ্চিত করেই চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দেবে।’
রাশিয়া কৌশলগত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এ কথা উঠে এসেছে মস্কোর সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও। বলা হয়েছে, রুশ প্রতিনিধিরা জেদ্দায় না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান জন র্যাটক্লিফ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন রুশ প্রশাসনের সঙ্গে।
ট্রাম্পের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ গত মাসেও রাশিয়ায় পুতিনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন এবং আগামীতেও তার রাশিয়া সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।
এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো। তা হলো এ পুরো আলোচনায় ইউরোপকে তোয়াক্কাই করছে না ট্রাম্প প্রশাসন।
ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ঘটনায় এরই মধ্যে দুই ভূখণ্ডের সম্পর্ক অনেকটাই শীতল। ন্যাটো নিয়েও ট্রাম্প খুশি নন। শপথ নিয়েই দাবি জানিয়েছেন ন্যাটোর বাজেট বাড়ানোর।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও তার উপদেষ্টা ইলন মাস্কও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত।
এদিকে ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড আদায় চেষ্টার ইস্যুতেও ইউরোপের সঙ্গে কয়েক দফা মন কষাকষি হয়েছে ট্রাম্পের। সব মিলিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে ভেঙে রাশিয়ামুখী হওয়াকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কংগ্রেস সদস্য ভালো চোখে না দেখলেও এটাই এখন বাস্তব।
এ বাস্তবতাকে পুঁজি করেই রুশ কূটনৈতিক বিশ্লেষক স্যামুয়েল শ্যারাপ বলেন, ‘ওয়াশিংটনের সঙ্গে বর্তমানে মস্কোর সম্পর্ক যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো। ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যকার উষ্ণতার বিচার-বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে তা মস্কো মেনে নিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
শুরুতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের পথ রচিত হলেও পরবর্তী সময়ে হয়তো এ এক মাসের যুদ্ধবিরতিই স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধের সূচনা করবে এবং তিন বছর ধরে চলা এ সংঘাতের অবসান হবে বলে মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকের।
আরও পড়ুন:ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রবিবার বলেছেন, লন্ডনে সংকট নিয়ে আলোচনার পর ইউক্রেনের আকাশ, সমুদ্র ও জ্বালানি অবকাঠামোতে এক মাসের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন।
প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ফ্রান্সের লে ফিগারো সংবাদপত্রের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, এ ধরনের যুদ্ধবিরতি, প্রাথমিকভাবে অন্তত স্থল যুদ্ধকে অন্তর্ভুক্ত করবে না।
তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হবে।
মাখোঁ আরও বলেন, ‘আগামী সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনের মাটিতে ইউরোপীয় সেনা থাকবে না।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, ওয়াশিংটনের পরিবর্তনশীল অগ্রাধিকার ও রাশিয়ার সামরিকীকরণের প্রতিক্রিয়া জানাতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৩ থেকে ৩.৫ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি করা উচিত।
তিনি সংবাদপত্রটিকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে, রাশিয়ানরা তাদের জিডিপির ১০ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করেছে।
‘তাই আমাদের পরবর্তী সময়ে কী হবে তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে খুব শিগগিরই তার বৈঠক হতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সত্যিই ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে চান।
তিনি এমন সময় এ মন্তব্য করেন যখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আগামী দিনে সৌদি আরবে প্রাথমিক আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট পাম বিচ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘সময় নির্ধারণ করা হয়নি, তবে খুব শিগগিরই তা হতে পারে।’
ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বার্ষিকী ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা চলছে।
আগামী দিনে সৌদি আরবের রাজধানীতে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় রুবিও একটি উচ্চস্তরের আমেরিকান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে উড্ডয়নের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, তার দল রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য’ আলোচনা করছেন। মধ্যপ্রাচ্যে তার রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ দলভুক্ত রয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, উইটকফ সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছেন।
পুতিন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে চান।’
পুতিন পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘এটাই ছিল তার কাছে আমার প্রশ্ন।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যদি তিনি চালিয়ে যেতে চান তাহলে আমার জন্য একটা বড় সমস্যা হতো।
‘আমি মনে করি তিনি এটি শেষ করতে চান এবং তারা দ্রুত এটি শেষ করতে চান।জেলেনস্কিও এটি শেষ করতে চান।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে দীর্ঘ যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সৌদি আরবে এ বৈঠক হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গেল তিন বছর ধরে চলা আমেরিকান নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েটে প্রেসের খবরে জানানো হয়, স্থানীয় সময় বুধবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ‘এ যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে পুতিন ও আমি একমত।’
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা হবে বলে জানান ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনও সমানভাবে অংশীদার হবে কি না, সে বিষয়ে তার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা শান্তি অর্জনের পথে রয়েছি। আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও শান্তি চান।
‘আমিও শান্তি চাই। আমি কেবল দেখতে চাই, লোকজনের প্রাণহানি হচ্ছে না।’
পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিনের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জনগণ সত্যিকার অর্থে জানেন না। কিন্তু আমি মনে করি, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, তিনিও এ যুদ্ধের অবসান দেখতে চান। কাজেই সেটা ভালো এবং আমরা এ যুদ্ধ বন্ধের দিকে যাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব।’
ওই সময় শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান ট্রাম্প। বৈঠকটি সৌদি আরবে হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার মাধ্যমে এ আভাসই দেওয়া হচ্ছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ওয়াশিংটন ও মস্কো একটি চুক্তি পৌঁছাতে একমত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিয়েভও যে পরিপূর্ণ একটি অংশীদার হবে বলে মনে করত জো বাইডেন প্রশাসন, সেখান থেকে সরে এসেছে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনও এ যুদ্ধের সমান অংশীদার হতে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘খুবই চমৎকার প্রশ্ন। আমি মনে করি তারাও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান।’
এ ছাড়া ইউক্রেন যে পশ্চিমাদের সঙ্গে আরও ঘেঁষতে চাইছে, সে প্রত্যাশায় আরেকটি আঘাত করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ।
ব্রাসেলসে ন্যাটোর প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর সদস্য হওয়া বাস্তবসম্মত নয়।’
পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘হেগসেথ যে কথা বলেছেন, সেটিই সত্য বলে আমি মনে করি।’
ইউক্রেনে ২০২২ সালে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা এ সামরিক জোটের সদস্য হওয়া অপরিহার্য।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য