পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের বাইরে গত ২৬ এপ্রিল আত্মঘাতী বোমা হামলায় হামলাকারীসহ পাঁচজন প্রাণ হারান। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। তারা বলছে, দুই সন্তানের জননী ও স্কুলশিক্ষক শারি বালুচ এ হামলা চালান। শারি আত্মঘাতী হামলা চালানো বিএলএর প্রথম নারী কর্মী। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইসের প্রতিবেদন ভাষান্তর করেছেন সঞ্জয় দে।
দারুণ সুখী ও প্রাণবন্ত এক পরিবার। জন্মদিন উদযাপনের রঙিন বেলুনে সাজানো ঘর। হাসিখুশি স্বামী-স্ত্রীর হাতেও বেলুন। পেছন থেকে ভেসে আসছে উচ্ছ্বসিত শিশুর কণ্ঠ। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের দিকে তাকান গভীর আবেগে। হাতের বেলুন ফাটিয়ে চলতে থাকে উদযাপন।
কিছুক্ষণ পর উষ্ণ আলিঙ্গনে সন্তানসহ সেলফি তোলেন তারা।
এমন মধুর পারিবারিক বন্ধনে থাকা কেউ আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিজেকে উড়িয়ে দেবেন, ধারণা করাও কঠিন। তবে সেটাই ঘটেছে পাকিস্তানের করাচি শহরে।
জন্মদিন উদযাপনের ভিডিওতে থাকা নারী শারি বালুচ গত ২৬ এপ্রিল আত্মঘাতী হামলা চালান করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের বাইরে। এতে তিনিসহ মোট পাঁচজন প্রাণ হারান।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শারি তার হাতের একটি ব্যাগের ভেতরে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের বহনকারী একটি মিনিভ্যান উড়িয়ে দেয়াই ছিল তার লক্ষ্য।
বিস্ফোরণে চীনা ভাষা প্রশিক্ষক ডিং মু পেং ও চেন সাই এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক হুয়াং গুই পিং, ভ্যানের চালক পাকিস্তানি নাগরিক খালিদ নওয়াজ নিহত হন।
ওই হামলার পর টুইটারে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শারির আনন্দে মেতে থাকার ভিডিওটি প্রকাশ করেন তার স্বামী।
এই হামলা বহু পাকিস্তানিকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সঙ্গে জড়িত চীনারাও যে হামলার লক্ষ্য হতে পারেন, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত।
চীনা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মুস্তাজাব হুসেন বলছিলেন, ‘আমি ভেঙে পড়েছি। তারা (নিহত ৩ চীনা নাগরিক) আমাদের দেশের অতিথি ছিলেন, আমাদের ভাষা প্রশিক্ষণ দিতেন। তারা ছিলেন আমাদের অভিভাবক। পাকিস্তান তাদের কাছে দ্বিতীয় বাড়ির মতো ছিল।’
আত্মঘাতী হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে ছিলেন মুস্তাজাব।
ভাষা প্রশিক্ষক চেন সাইয়ের ভক্ত ছিলেন মুস্তাজাব। এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিনি (চেন) একজন দুর্দান্ত শিক্ষক ছিলেন। আমাদের কাছে কোনো কিছু কঠিন ঠেকলেই তিনি সাহায্য করতে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ক্লাসের বাঁধাধরা সময়ের দিকে তার কোনো খেয়াল থাকত না।
‘এমনকি রাতেও তিনি হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের জিজ্ঞাসার জবাব দিতেন। আর বাকিরাও ছিলেন তার মতোই দারুণ শিক্ষক। তারা আমাদের জন্য বন্ধুত্ব ও মর্যাদার পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন।’
মুস্তাজাব বলেন, ‘তিনজনের হৃদয়েই ছিল পাকিস্তানের প্রতি প্রবল ভালোবাসা। ইনস্টিটিউটের পরিচালক একবার আমাদের বলেছিলেন, তিনি যখনই পাকিস্তানের বিমানবন্দরে পৌঁছান, তখনই মনে হয় নিজের বাড়িতে ফিরেছেন।’
এ হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠী বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। বেলুচিস্তান প্রচুর খনিজসমৃদ্ধ একটি প্রদেশ, তবে ইরান ও আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলটি পাকিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা হিসেবেও পরিচিত।
বঞ্চনার শিকার বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতার জন্য দুই দশক ধরে সশস্ত্র লড়াই করছে বিএলএ। তাদেরকে এরই মধ্যে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের আওতায় পাকিস্তানে প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীন। তবে বিএলএ মনে করছে এসব প্রকল্প বেলুচিস্তানে সম্পদের শোষণ ও বঞ্চনা আরও বাড়িয়ে দেবে। এ জন্য প্রকল্পগুলো ঠেকানোর কৌশল হিসেবে তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা নাগরিকদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করেছে। দিনে দিনে বাড়ছে হামলার মাত্রা।
বিএলএ ২০২০ সালে পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলার দায় স্বীকার করে, যাতে প্রাণ হারান সাতজন। এর আগের বছর বিএলএ বন্দুকধারীরা গোয়াদর শহরের একটি হোটেলে গুলি চালিয়ে আটজনকে হত্যা করে। সংগঠনটি ২০১৮ সালে চীনা কনস্যুলেটে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায়ও স্বীকার করেছিল, যাতে নিহত হন চারজন।
ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে জোর দিলেও বিএলএ সম্প্রতি ইসলামি উগ্রপন্থিদের মতোই আত্মঘাতী হামলার দিকে ঝুঁকছে। সংগঠনটি হুঁশিয়ার করে বলেছে, ‘চীনা শোষণ’ থেকে মুক্তির দাবি পূরণ না হলে তাদের শত শত ‘উচ্চ প্রশিক্ষিত’ পুরুষ ও নারী সদস্য আরও হামলার জন্য প্রস্তুত।
করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট লক্ষ করে পরিচালিত হামলা বিএলএর সঙ্গে বেলুচিস্তানের শিক্ষিত পেশাজীবীদের জড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দলটি বলেছে, শারি বালুচ ছিলেন ৩০ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষক। প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শারি পরে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিষয়েও আরেকটি ডিগ্রি অর্জন করেন। বিএলএর প্রথম নারী কর্মী হিসেবে তিনি ২৬ এপ্রিল আত্মঘাতী বোমা হামলাটি চালান।
এক বিবৃতিতে বিএলএ বলেছে, শারি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় দুই বছর আগে সংগঠনের আত্মঘাতী শাখা মাজিদ ব্রিগেডে যোগ দেন। ‘আত্মত্যাগের মিশনে’ যুক্ত হওয়ায় সম্মতি দেয়ার পর সিদ্ধান্তটি ভেবে দেখতে তাকে সময় দেয়া হয়েছিল। তবে তিনি প্রতিজ্ঞা থেকে পিছু হটেননি। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালানোর বিষয়ে ছয় মাস আগে তিনি ফের নিজের সম্মতি জানান।
শারির স্বামী হাবিতান বশির বালুচ একজন দন্ত চিকিৎসক ও শিক্ষক। হামলার পরদিন তিনি জন্মদিন অনুষ্ঠানে শারির উচ্ছ্বসিত ভিডিওটি টুইট করেন। হাবিতান লেখেন, ‘শারি জান, তোমার আত্মোৎসর্গ আমাকে নির্বাক করে দিয়েছে, তবে আমিও আজ গর্বিত।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রিয় শারু, তোমার সঙ্গে কাটানো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টিকে আমি আজীবন লালন করব। তুমি সব সময় থাকবে আমার পাশে।’
অবশ্য পরে তদন্তকারীরা হাবিতানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনি দাবি করেন, তার স্ত্রী ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ছিলেন এবং নিয়মিত ওষুধ খেতেন।
দুই সন্তানের মা শারির পরিচিতদের কাছে ঘটনাটি এখনও অবিশ্বাস্য।
শারির চাচা বিশিষ্ট বেলুচ লেখক এবং অধিকার কর্মী গনি পারভেজ বলেন, ‘আমরা সবাই হতবাক, ওর বাবাও হতবাক। এমন কিছু ঘটবে আমরা কখনও কল্পনা করিনি। শারি ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল, কোমল হৃদয় ও বুদ্ধিমান মেয়ে। সব সময় সবার প্রতি ছিল যত্নশীল ও আন্তরিক। কখনও সে অন্যের বা নিজের ক্ষতি করার কথা ভাবেনি।’
এ ঘটনায় পরিবার প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছেন বলে স্বীকার করেন পারভেজ। তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করেন বেলুচিস্তানে ভয়াবহ বাস্তবতাই শারির মতো শিক্ষিত নারীকে উগ্রপন্থার দিকে প্ররোচিত করেছে। তিনি বলেন, ‘বেলুচিস্তানের অবস্থা খুবই খারাপ। আর তাই নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে কোনো গা করছে না।
‘আমরা গুম, হত্যা, লাশের ওপর লাশ এবং নির্যাতন দেখেছি। এগুলোর পরিবর্তন ঘটানো জরুরি, বেলুচিস্তানের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা দরকার।’
ভূমির পরিমাণ বিবেচনায় বেলুচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ। তবে এটিই দেশটির সবচেয়ে কম জনবহুল, স্বল্পোন্নত ও স্বল্প শিক্ষিত এলাকা। পুরো পাকিস্তানের বিদ্যুতের উৎপাদন এই প্রদেশের কয়লা ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। অথচ বেলুচিস্তানের এক কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির জোগান অনেকটাই সীমিত। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ, এমনকি স্বাস্থ্যসেবাও পাকিস্তানের বাকি অংশের চেয়ে অনেক কম।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক বঞ্চনা, রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং সহিংসতার ফলে তৈরি হওয়া ক্ষোভ বেলুচিস্তানের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রতি তাদের সহানুভূতি দিনে দিনে জোরালো হচ্ছে। শারির আত্মঘাতী হামলা এই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।
বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের নামে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মী বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহে অপহরণ ও গুমের ঘটনা অজস্র। বিনা বিচারে বা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই অনেক অধিকার কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আটক রাখা হয়েছে। কেউ কেউ মাসের পর মাস বা বছর ধরে নির্যাতন সহ্য করছেন।
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে হামলার পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা লাহোর শহর ও করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বেলুচ ছাত্রকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অপহরণের নিন্দা করেছেন অধিকার কর্মীরা।
পারভেজ সতর্ক করে বলছেন, ‘এ অবস্থা পাকিস্তানের জন্য আরও সমস্যা তৈরি করছে। বৈষম্য এবং হত্যাকাণ্ড আমাদের অঞ্চলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে বাধ্য। এর অবসান হওয়া দরকার। এটি কেবল ঘৃণাই সৃষ্টি করছে। মানুষ, বিশেষ করে তরুণেরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে।’
পাকিস্তানের সাবেক সিনেট চেয়ারম্যান রাজা রব্বানীও একই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘চরম জাতীয়তাবাদী চেতনা এত প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে শিক্ষিত নারীরাও জীবন দিতে তৈরি। এর অর্থ হলো নিপীড়ন, দমন, বিচ্ছিন্নতা এবং বঞ্চনাবোধের বীজ অনেক গভীরে প্রোথিত। এ অবস্থা রাষ্ট্র ও এর কৌশলগত স্বার্থের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিক্রিয়াকে প্ররোচিত করছে।’
পাকিস্তানের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলেছে, সবশেষ হামলাটির জন্য তারা বিএলএর দুই কমান্ডারের বিরুদ্ধে হত্যা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ আনবে। পুলিশ কর্তারা বলছেন, তাদের বিশ্বাস পাকিস্তান ও চীনের সুসম্পর্ক নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এ হামলা, আর এতে মদদ দিয়েছে একটি ‘বিদেশি শত্রু সংস্থা’।
পাকিস্তান এর আগে অনেকবার বিএলএকে গোপনে অর্থায়ন ও সমর্থনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে দায়ী করেছে। তবে এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে ভারত।
অন্যদিকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে’ পাকিস্তানের পদক্ষেপকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে বেইজিং। হামলায় জড়িতদের চরম মূল্য দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে তারা। ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় তল্লাশি করা হচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে।
আরও পড়ুন:
সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশন
‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হারনাই জেলায় বিস্ফোরণস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হারনাই জেলায় শুক্রবার শ্রমিক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির কোয়েটা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা শাহজাদ জাহরি এএফপিকে জানান, হারনাই জেলায় এ বোমা বিস্ফোরণে ১০ খনিশ্রমিক নিহত হন।
একই জেলার আরেক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সেলিম তারিন এএফপিকে বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজের জায়গা থেকে বাজারে কেনাকাটার জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তাদের গাড়িটি আক্রমণের শিকার হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ছিল একটি আইইডি বিস্ফোরণ।আমরা হামলার তদন্ত করছি।’
হারনাই দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জেলা।
কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে বেলুচ লিবারেশন আর্মি প্রায়ই অন্যান্য প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বা পাকিস্তানিদের, বিশেষ করে বেলুচিস্তানের পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক হামলার দাবি করে।
আরও পড়ুন:
সশস্ত্র প্রহরায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: ইউএনবি
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সেনাবাহিনীর আলাদা তিন অভিযানে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রদেশের লাক্কি মারওয়াত, কারাক ও খাইবার জেলায় অভিযান চালায়।
এতে আরও বিবৃতিতে বলা হয়, লাক্কি মারওয়াতে অভিযানে ১৮ সন্ত্রাসী নিহত ও ছয়জন আহত হন। কারাক জেলায় আরও ৮ সন্ত্রাসী নিহত হন।
সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তাদের তৃতীয় অভিযানটিতে গোষ্ঠীটির নেতাসহ ৪ সন্ত্রাসী নিহত ও দুজন আহত হন।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
এলাকায় অন্য সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নির্মূল করতে একটি ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালানো হচ্ছে।
সেনাবাহিনী বলেছে, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিপদ নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
আরও পড়ুন:
প্রতীকী ছবি
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে।
তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
পুলিশ জানায়, একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ওই নারী। বৃহস্পতিবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
বাহিনীটি আরও জানায়, শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা একটি নির্জন এলাকায় নারীর মৃতদেহ দেখতে পান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন।
কর্ণাটক থেকে পিটিআই শনিবার এ খবর জানায়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রাণ হারানো নারী বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি ছয় বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন।
তার কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তবে তার স্বামীর বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে এবং তিনি মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
ওই নারী বৃহস্পতিবার তার সহকর্মীকে বলেছিলেন, তার কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে এবং দেরি হতে পারে। তাই সহকর্মীকে বলেন তাকে ছাড়াই চলে যেতে। তবে বাড়ি ফিরতে নারীর দেরি হলে তার স্বামী রামমূর্তি নগর থানায় অভিযোগ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী স্বেচ্ছায় কোনো নির্জন জায়গায় গিয়েছিলেন পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার মাথায় গুরুতর জখমের চিহ্ন ছিল।
তথ্য পাওয়ার পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পূর্ব বিভাগ পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) দেবরাজ।
আরও পড়ুন:
অস্ত্র হাতে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। ছবি: এএফপি
ভারতের মধ্যাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১২ মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
নয়াদিল্লি মাওবাদীদের দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা দমনে পদক্ষেপ জোরদার করেছে। শুক্রবার পুলিশ এই খবর জানায়।
কয়েক দশকের মাওবাদী সহিংসতায় ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন।
বিদ্রোহীদের দাবি, তারা প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সহিংসতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছত্রিশগড়ের বিজাপুর জেলার বন-জঙ্গলে বৃহস্পতিবার এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পি. এএফপিকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১২ মাওবাদী নিহত হয়েছে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই শতাধিক মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সরকার আশা করছে ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্রোহীদের দমন করা সম্ভব হবে।
বিদ্রোহীরা গত কয়েক বছরে সরকারি সেনাদের টার্গেট করে বেশ কিছু প্রাণঘাতী হামলা চালায়।
চলতি মাসের গোডার দিকে রাস্তায় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৯ ভারতীয় সেনা নিহত হন।
আরও পড়ুন:
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সাইফ আলী খান। ছবি: ইউএনবি
ভারতের মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় অনুপ্রবেশকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সাইফ আলী খান।
স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রাত আড়াইটায় একজন অনুপ্রবেশকারী বাসায় ঢুকে সাইফ আলীকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করে। বর্তমানে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার চলছে।
হাসপাতালকর্মীরা বলছেন, সাইফ আলী খান এখন বিপদমুক্ত। রাতে তার নিউরো সার্জারি করা হয়েছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি চলছে।
এ ঘটনায় বান্দ্রা থানায় একটি এজাহার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, সাইফ আলী যখন বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন একজন অনুপ্রবেশকারী চুপিসারে তার বাসায় ঢোকেন। এ সময়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সাইফের হাতাহাতি হয়।
এরপর সাইফ আলী খানকে ছয়বারের বেশি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান অনুপ্রবেশকারী।
এক বিবৃতিতে লীলাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয়টি আঘাতের মধ্যে দুটি তার মেরুদণ্ডের কাছে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
এরই মধ্যে তার বাসার তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত করছে মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
এক বিবৃতিতে সাংবাদিক ও ভক্তদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে সাইফ আলী খান টিম।
এতে বলা হয়, ‘এটি এখন পুলিশের কাজ। আমরা আপনাদের হালানাগাদ তথ্য জানিয়ে দেব।’
কারিনা কাপুর খান টিমও একই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো আছেন।’
আরও পড়ুন:
ইসলামি বিশ্বে নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মালালা ইউসুফজাই এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন। ছবি: এএফপি
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই শনিবার বলেছেন, তিনি তার জন্মভূমি পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে ‘অভিভূত’ ও ‘আনন্দিত’।
ইসলামি বিশ্বে নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।
ইসলামাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ২০১২ সালে স্কুলছাত্রী মালালাকে পাকিস্তানি তালেবানরা গুলি করে এবং এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। বিদেশে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকবার তিনি দেশে আসেন।
রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলনে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত, অভিভূত ও আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুই দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন শনিবার সকালে। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একত্রিত হবেন।
স্থানীয় সময় রোববার ইউসুফজাইয়ের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এক্সে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি সকল মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকার রক্ষার বিষয়ে কথা বলব। আফগান নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কেন তালেবান নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে, সে ব্যাপারেও বলব।'
দেশটির শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তালেবান ইসলামাবাদের এ আমন্ত্রণে কোনো সাড়া দেয়নি।
আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে কঠোরভাবে ইসলামী আইন আরোপ করেছে। জাতিসংঘ একে ‘লিঙ্গ বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান তীব্র শিক্ষা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। দেশটিতে দুই কোটি ৬০ লাখের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। তাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকার একটি স্কুল বাসে ২০১২ সালে পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের হামলার পর ইউসুফজাই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
পরবর্তী সময়ে তিনি নারী শিক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য