ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুতিনও জানিয়ে দিয়েছিলেন, বন্ধু নয় এমন রাষ্ট্রকে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনতে হলে রুবলে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এতে অস্বীকৃতি জানানোয় পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন বলছে, জ্বালানিকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপকে বিভক্ত করতে চাইছে ক্রেমলিন।
এমন পরিস্থিতিতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানির অন্যতম বড় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ইউনিপার যে পদ্ধতিতে রাশিয়ার জ্বালানির দাম পরিশোধ করতে চাইছে, তাতে রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হতে পারে।
ইউনিপার বলছে, তারা ইউরোতেই মূল্য পরিশোধ করবে। যদিও তা পরে রুবলে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনায় ক্রেমলিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার মুদ্রাতেই মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পর অন্যান্য ইউরোপীয় দেশেও সরবরাহ বন্ধের আশঙ্কায় ইউরোপের অন্যান্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোও ইউনিপারের দেখানো পথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ইউনিপার বলেছে, ‘আমাদের হাতে বিকল্প কোনো উপায় নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য এবং পুরো জার্মানির জন্য আপাতত রুশ গ্যাসের কোনো বিকল্প নেই; অন্যথায় তা আমাদের অর্থনীতির ওপর নাটকীয় প্রভাব ফেলবে।’
একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তারা এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে।
জার্মানির অন্যতম বড় জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আরডব্লিউই কীভাবে রাশিয়ার গ্যসের মূল্য পরিশোধ করেছে, তা জানাতে অস্বীকার করেছে।
এদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম রুবলে দিতে অস্বীকার করায় ২৬ এপ্রিল থেকে পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া।
পোল্যান্ডের রাষ্ট্রচালিত গ্যাস ফার্ম পিজিনিগ জানিয়েছে, ইয়ামাল পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
রুশ প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
যদিও প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সের্গেই কুপ্রিয়ানভে অবশ্য আগেই বলেছিলেন, পোল্যান্ডকে অবশ্যই রুবলে গ্যাসের মূল্য দিতে হবে, যদিও ওয়ারশ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
বুলগেরিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বুলগারগাজকে জানানো হয়েছে, বুধবার থেকে দেশটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হবে।
বুলগেরিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, রুবলে মূল্য পরিশোধ অগ্রহণযোগ্য এবং বুলগেরিয়ার জন্য তাতে ‘উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি’ রয়েছে। এরই মধ্যে দেশটি প্রাকৃতিক গ্যাসে রাশিয়ার বিকল্প খুঁজছে।
পোল্যান্ডের জলবায়ুমন্ত্রী আনা মসকওয়া বলেছেন, রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধ হলেও পোল্যান্ডে গ্যাসের কোনো ঘাটতি হবে না।
গত মার্চের শেষ দিকে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প পাওয়া ‘ব্যবহারিকভাবেই অসম্ভব।’
সাদ আল-কাবি শুধু কাতারের জ্বালানিমন্ত্রীই নন, তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কাতার এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও।
সাক্ষাৎকারে সাদ বলেন, বিশ্ববাজারের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়া সরবরাহ করে। দেশটির তেল-গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরিকল্পনা নেই কাতারের। কাতার মনে করে, জ্বালানিকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত।
এদিকে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপের জবাবে প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। প্রাথমিক অবস্থায় রুশ মুদ্রার মান পুনরুদ্ধারে গ্যাস কূটনীতি ভালোই ফল দিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় বৈদেশিক মুদ্রায় আস্থা হারিয়েছে তারা। তাই ইউক্রেন ইস্যুতে রুশবিরোধী অবস্থান নেয়া দেশগুলোকে রুশ মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার দাবি করেছে ইউক্রেন। তবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও লড়াইয়ে লক্ষ্যপূরণ ও সাফল্যের দাবি করেছে। তবে ইউক্রেনের সেনা সংখ্যা নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি এবার নতুন তথ্য দিয়েছেন।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর আগে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর পরিধির থেকে যুদ্ধের ৩ মাসে এসে তা ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের দরকার ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার সেনা। কিন্তু সে সময় যুদ্ধের জন্য সক্ষম সেনা ছিল মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার।'
জেলেনস্কি দাবি করেন, ২০২২-এর শুরুতেই তিনি সেনা সংখ্যা ১ লাখ বাড়ানোর আদেশ জারি করেন। আমাদের অর্থ থাক বা না থাক। যদিও এই সংখ্যাটাও রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর মতো যথেষ্ট ছিল না।
তিনি বলেন, এখন সংখ্যাটি ৭ লাখ। আর আপনি ৭ লাখ সেনার লড়াইয়ের ফলাফল পাচ্ছেন।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি।
এ সপ্তাহের শুরুতে নতুন একটি আইনের প্রস্তাবও ইউক্রেনের পার্লামেন্টে উঠেছে, যুদ্ধে সক্ষম ব্যক্তি যারা লড়াইতে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, বিয়েতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নেচে এসেছিলেন সংবাদের শিরোনামে। পরে যোগ দেন পুতিনের দেশেরই এক প্রতিষ্ঠানে। এবার সে চাকরি ছাড়লেন তিনি।
আলোচিত কারিন নেইসলের রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোসনেফ্ট ছাড়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দিয়ে কারিনের চাকরি ছাড়ার তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার থেকে এই কর্মকর্তা আর দায়িত্বে নেই।
৫৭ বছর বয়সী কারিন ২০১৮ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। সে সময় ‘বন্ধু’ পুতিনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। বিয়ের অনুষ্ঠানে পুতিনের সঙ্গে নাচেন কারিন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্বের প্রথম শ্রেণির গণমাধ্যমগুলো।
নিজ দেশের সরকারের দায়িত্ব ছেড়ে বিয়ের পরের বছরই রুশ কোম্পানি রোসনেফ্টে যোগ দেন কারিন। গত জুনে পান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের দায়িত্ব।
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোডার রোসনেফ্টে ছেড়ে যাচ্ছেন বলে তথ্য প্রকাশের পরদিনই নিজের পদত্যাগের কথা জানান সাবেক এই মন্ত্রী। অবশ্য শুক্রবারই তিনি জানিয়েছিলেন, আরও বছরখানেক কোম্পানিতে থাকতে চান।
চার বছর আগে অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারিন যখন বিয়েতে পুতিনকে আমন্ত্রণ জানান, তখন বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
বিরোধী দলীয় রাজনীতিকরা অভিযোগ করেছিলেন, কারিন তার বিয়েতে পুতিনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন।
তৎকালীন মন্ত্রী কারিনের বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুলের তোড়া নিয়ে প্রবেশ করেন পুতিন। তার সঙ্গে ছিল রাশিয়ার সংগীত শিল্পীদের একটি দল। তারা বিয়েতে গানও পরিবেশন করে। অস্ট্রিয়ার স্টাইরিয়া রাজ্যে হওয়া অনুষ্ঠানে কারিনের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নাচেন পুতিন। এ নিয়ে বিতর্ক হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। কারিনের পদ ছাড়ার সঙ্গে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তা অবশ্য এখনই স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাশিয়ার এক সেনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ইউক্রেনের একটি আদালত।
সোমবার এই রায় ঘোষণা করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
৬২ বছর বয়সী এক বেসামরিক নাগরিককে হত্যার দায়ে এ সাজা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ইউক্রেন রাশিয়ার কোনো সেনাকে সাজা দিল।
ইউক্রেনের একটি গ্রামে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যার দায় স্বীকার করেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত ২১ বছর বয়সী ট্যাঙ্ক কমান্ডার ভাদিম সিসিমারিন। তবে তিনি বলেছেন, আদেশ পেয়ে গুলি ছুড়েছিলেন।
রাশিয়ার এই সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে আরও অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।
রাশিয়া বলছে, কোনো বেসামরিক নাগরিকের ওপর তাদের সেনারা কোনো হামলা চালাচ্ছে না। তবে ইউক্রেনের দাবি, এরই মধ্যে ১১ হাজারের বেশি যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটিয়েছে রুশ সেনারা।
এমন প্রেক্ষাপটে রুশ সেনাদের বিচার করতে কিয়েভে আদালত বসিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের সেনার দণ্ড পাওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে তিন জনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ার পরেই পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে যেতে না পারে তার জন্য বেলজিয়ামের রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট গ্রুপ আক্রান্তদের জন্য ২১ দিনের কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করেছে।
এদিকে রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরোলজিস্ট মার্ক ভ্যান রানস্ট রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে দেশটিতে চতুর্থ রোগীর বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন যে আগের তিন জন আক্রান্তের মত চতুর্থজনও সমকামী ফেটিশ উৎসব ডার্কল্যান্ডসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যা মে মাসের প্রথম দিকে এন্টওয়ার্পে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেকে যারা ডার্কল্যান্ডস ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছিলেন তারা যেন উপসর্গের বিষয়ে সজাগ থাকেন।’
এরই মধ্যে আফ্রিকার বাইরে ১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলে ৮০ জনের বেশি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। যদিও বলা হচ্ছে, এই ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সাধারণত মধ্য ও পশ্চিমা আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে এই ভাইরাসের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা কম।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান।
আফ্রিকার বাইরে মাঙ্কিপক্সের বর্তমান প্রাদুর্ভাব বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নতুন পরামর্শ জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তিন সপ্তাহের জন্য সেলফ- কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত।
বেলজিয়াম প্রথম দেশ হিসেবে শুক্রবার মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত ব্যক্তিদের জন্য তিন সপ্তাহের কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে চলমান রুশ সামরিক অভিযানের মধ্যেই বেলারুশ সীমান্তে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করছে ইউক্রেন, এমন অভিযোগ করেছেন বেলারুশ নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলারুশ নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান আলেকজান্ডার ভলফোচিভ বেলারুশ-১ টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইউক্রেনীয় সেনারা বেলারুশ সীমান্ত বরাবর কয়েকটি স্থানে জড়ো হয়েছে। তারা ল্যান্ডমাইন স্থাপন ও ব্যারিকেড তৈরির কাজ করছে এবং কিছু নাশকতাকারী দল বেলারুশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে।
বেলারুশের অনুমান, প্রায় ১০ হাজার ৫০০ ইউক্রেনীয় সেনা উত্তর-পশ্চিম রোভনো অঞ্চলে, ৪ হাজার ৫০০ পূর্ব চের্নিগভে ও প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কিয়েভের বাইরে মধ্য ইউক্রেনে জড়ো হয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু ইস্যুতে বেলারুশের সঙ্গে ইউক্রেনের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক চলছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। রুশ সেনারা ইউক্রেনের ওপর একাধিক দিক থেকে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, যার মধ্যে বেলারুশের অঞ্চলও ছিল।
যদিও বেলারুশ রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এমনকি কিছুক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যস্ততার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে বেলারুশকে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:রুশ সামরিক অভিযানের মুখে ইউক্রেন ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির লাখ লাখ নাগরিক। পোল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ বিপুল শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। আশ্রয় নেয়াদের খাদ্য, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করছে এসব দেশের সরকার।
ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা- ওএসসিই বলছে, সংকটের এই মুহূর্তে আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইউক্রেনীয় নারীদের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক। বিভিন্ন নিষিদ্ধ সাইটে তাদের খোঁজার ইতিহাস ঘেঁটে সংস্থাটি বলছে, ইউক্রেনীয় যৌনকর্মী খোঁজার হার বেড়েছে ৬০০ শতাংশ পর্যন্ত।
আয়ারল্যান্ডের বেসরকারি সংস্থাটি বলছে, আয়ারল্যান্ডে অবস্থান করছেন সবকিছু ফেলে আসা ইউক্রেনীয় নারীরা। আর এই সুযোগটা লুফে নিচ্ছেন অনেকেই। এসব নারীর যৌনসান্নিধ্য পেতে ইন্টারনেটে চলছে ব্যাপক খোঁজ।
ওএসসিইর বিশেষ প্রতিনিধি এবং মানব পাচার প্রতিরোধের কো-অর্ডিনেটর ভ্যালিয়েন্ট রিচি বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সম্মেলনে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে এ পর্যন্ত কেবল আয়ারল্যান্ডে যৌনতার জন্য ইউক্রেনীয় নারীদের খোঁজার হার বেড়েছে ২৫০ শতাংশ। অন্য সব দেশে এই হার ৬০০ শতাংশ পর্যন্ত।
রিচি দাবি করেছেন, পতিতাবৃত্তি এবং অন্যান্য যৌন পরিষেবার জন্য আয়ারল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় বাজার এসকর্ট আয়ারল্যান্ড। তারা গ্রাহকদের ইউক্রেনীয় নারীদের সঙ্গে যৌনতায় সুযোগ করে দিচ্ছে।
তবে এটা স্পষ্ট নয় যে ওয়েবসাইটের মালিকরা সরাসরি এই বার্তাটি প্রচার করছে নাকি সাইটের ব্যক্তিগত এসকর্ট বিজ্ঞাপনগুলো দেখাচ্ছে।
রিচি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। পাচারকারীদের জন্য ইউক্রেনীয় নারীদের নিয়োগ ও শোষণের জন্য একটি শক্তিশালী প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এগুলো আমাদের থামাতে হবে। সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার সম্ভবত এই সংকটের লাগাম টানতে পারবে।
সম্মেলনে অনেক বক্তা জানান, পাচারের ঝুঁকিতে থাকা ইউক্রেনীয়দের রক্ষায় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পাশাপাশি তারা কীভাবে আইনি সহায়তা পাবে, সে বিষয়ে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে।
আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের তথ্য বলছে, গত বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৩০ হাজার শরণার্থী ইউক্রেন থেকে আয়ারল্যান্ডে এসেছেন। দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ইউক্রেনীয় আয়ারল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টায় আসেন।
আরও পড়ুন:যে ন্যাটো নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব, সেই ন্যাটোতেই যোগ দিতে যাচ্ছে ফিনল্যান্ড। এর প্রেক্ষাপটে ফিনল্যান্ডে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে আবারও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল রাশিয়া।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয় বলে রুশ কর্তৃপক্ষের বরাতে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
গ্যাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ফিনল্যান্ড বলছে, এতে তাদের ভোক্তাদের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।
রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধের দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেনি ফিনল্যান্ড। একই সঙ্গে ন্যাটোয় যোগ দেয়ার চেষ্টাও তারা থামাবে না বলে জানিয়েছে।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরও ইউরোপের অনেক দেশেই গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। তারা বলছে, বন্ধু নয় এমন দেশগুলোকে অবশ্যই রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে পশ্চিমাসহ বিভিন্ন দেশ। পদক্ষেপ নেয় রাশিয়াও।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশ ছেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য