ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। পশ্চিমারা সরাসরি পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে সেনা না পাঠালেও ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। রাশিয়া অভিযোগ করে আসছে, পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তা ইউক্রেন পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। রুশ মিডিয়া বলছে, ছায়া ন্যাটোর সঙ্গেই লড়ছে তাদের দেশের সেনারা।
এমন পরিস্থিতিতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তরের এক শহরে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বাইরের কোনো দেশ (পশ্চিমা) ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে বিদ্যুৎগতিতে দ্রুত জবাবের মুখোমুখি হবে।
রাশিয়ার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে পুতিন বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন সব অস্ত্র রয়েছে, ফলে কেউই আমাদের সামনে দম্ভ দেখাতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা সেগুলো ব্যবহার করব।’
এ ছাড়া তিনি জানিয়েছেন, বাইরের দেশের হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এরই মধ্যে ঠিক করে ফেলা হয়েছে।
যদিও পুতিন সম্ভাব্য রুশ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিনের বক্তব্য ইউক্রেনের মিত্রদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যাতে তারা ইউক্রেন সংঘাতে আর না জড়ায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা ইন্টারফেক্সকে তিনি বলেন, ‘বিপদ (বিশ্বযুদ্ধের হুমকি) গুরুতর, বাস্তব, আপনি একে অবজ্ঞা করতে পারেন না।’
এদিকে ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলো অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে। জার্মানিও ভারী সমরাস্ত্র পাঠাতে রাজি হয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়াকে পরাজিত করবে, এমন নিশ্চয়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের আশপাশের এলাকাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দোনবাস অঞ্চল দখল করতে বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রাশিয়া।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি রুশ বাহিনী ইউক্রেনের কঠোর প্রতিরোধকে কাটিয়ে ওঠা কঠিন মনে করছে এবং ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
পশ্চিমকে মোকাবিলায় জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার রাশিয়ার
পশ্চিমাদের প্রভাব কমাতে জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে রাশিয়া। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম রুবলে দিতে অস্বীকার করায় পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি।
গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সের্গেই কুপ্রিয়ানভে অবশ্য আগেই বলেছিলেন, পোল্যান্ডকে অবশ্যই রুবলে গ্যাসের মূল্য দিতে হবে, যদিও ওয়ারশ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
আমাদের কাছে এমন সব অস্ত্র রয়েছে, ফলে কেউই আমাদের সামনে দম্ভ দেখাতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা সেগুলো ব্যবহার করব।
বুলগেরিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বুলগারগাজকে জানানো হয়েছিল যে বুধবার থেকে দেশটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হবে।
বুলগেরিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, রুবলে মূল্য পরিশোধ অগ্রহণযোগ্য এবং বুলগেরিয়ার জন্য তাতে ‘উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি’ রয়েছে। এরই মধ্যে দেশটি প্রাকৃতিক গ্যাসে রাশিয়ার বিকল্প খুঁজছে।
পোল্যান্ডের জলবায়ুমন্ত্রী আনা মসকওয়া বলেছেন, রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধ হলেও পোল্যান্ডে গ্যাসের কোনো ঘাটতি হবে না।
যেভাবে ইউক্রেন সংকটের শুরু
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া অভিযানের পর থেকেই রাশিয়ার মূলধারার গণমাধ্যমগুলোকে রুশ বাহিনীর যেকোনো অপারেশনাল ব্যার্থতার বিষয়ে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে এবং রুশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনেকটাই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের বিপরীত তথ্য প্রচার করেছে।
এবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে ক্রেমলিনের দাবিকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
ক্রেমলিন শুরু থেকেই বলে আসছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান রাশিয়ার পরিকল্পনা মাফিকই হচ্ছে। এতদিন রুশ টেলিভিশন চ্যানেলকে এই বিষয়টি প্রচার করতে দেখা গেছে।
এই প্রথম রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের ৬০ মিনিটের টকশো অনুষ্ঠান টুয়াইস ডেইলির প্রোগ্রামের অতিথি অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ও সামরিক বিশ্লেষক মিখাইল খোদারেনেক রুশ টেলিভিশনে সচরাচর প্রচার করা তথ্যের বিপরীতে ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করেছেন।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘পরিস্থিতি (রাশিয়ার জন্য) স্পষ্টতই খারাপ হয়ে যাবে কারণ ইউক্রেন পশ্চিমাদের কাছে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা পাবে এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী দশ লাখ মানুষকে অস্ত্র দিতে পারে।’
টকশোতে যুদ্ধক্ষেত্রে নৈতিক অবস্থানের বিষয়ে আলোকপাত করেছেন মিখাইল। তিনি ইউক্রেনীয় সেনাদের বিষয়ে বলেন, ‘তাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করার আকাঙ্খা অনেক বেশি বিদ্যমান। আর যুদ্ধক্ষেত্রের চূড়ান্ত বিজয় সেনাদের মনোবল দ্বারা নির্ধারিত হয়।’
রুশ এই সামরিক বিশ্লেষকের মতে, রাশিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ব থেকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং পুরো বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে, যদিও আমরা একটা স্বীকার করতে চাই না। আমাদের এটি সমাধান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমাদের বিরুদ্ধে ৪২টি দেশের জোট থাকে এবং যখন আমাদের সম্পদ, সামরিক ও প্রযুক্তি বিষয় সীমিত হয় তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে মনে করা যায় না।’
তার বক্তব্যের বিষয়ে স্টুডিওর অন্যান্য অতিথিরা চুপ ছিলেন। এমন কি প্রোগ্রামের উপস্থাপক ওলগা স্কাবেয়েভা, যাকে ক্রেমলিনপন্থি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সবসময় ক্রেমলিনের পক্ষে যিনি উচ্চকন্ঠ। অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেলের বক্তব্যের বিষয়ে তাকেও চুপ করে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রের গতি-প্রকৃতি মস্কোর পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে না এবং রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারে ইউক্রেন, এমনটাই দাবি করেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
রোববার প্রতিবেদকদের সঙ্গে হওয়া এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের সবশেষ পরিস্থিতির আলোকে এই মন্তব্য করেন স্টলটেনবার্গ। ‘ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন, ন্যাটোর প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করা এবং যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব’ ছিল বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু।
এ ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোটের ভবিষ্যৎ অবস্থান কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘রাশিয়ার পরিকল্পনামাফিক যুদ্ধ চলছে না। তারা কিয়েভ দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে। খারকিভ থেকেও পিছু হটেছে। দোনবাসেও তারা হামলা স্থগিত করেছে। রাশিয়া তাদের কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে। সাহসিকতার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাটো আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দৃঢ়ভাবে একত্রিত।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেন ত্যাগ না করে রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করেন এবং লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সেনা অভিযানের মধ্যেই ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান রাজধানী কিয়েভ সফর করেন।
যদিও চলতি মাসের শুরুর দিকে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিকল্পনামাফিকই চলছে।
আমরা বিশ্ব থেকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং পুরো বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে, যদিও আমরা একটা স্বীকার করতে চাই না। আমাদের এটি সমাধান করতে হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। এছাড়া ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ভূমিকায় থাকতে হবে, অর্থ্যাৎ দেশটি কখনোই পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:পিরিয়ড বা মাসিকের সময় শারীরিক জটিলতায় ভোগা নারীদের কর্মক্ষেত্রে ছুটির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে স্পেন সরকার। মন্ত্রিসভা বৈঠকে মঙ্গলবার প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়।
এ ছাড়া ১৬ বছর বয়স হলে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই কিশোরীদের গর্ভপাতের অধিকারে সায় দিয়েছে স্পেনের মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত আরও বেশকিছু পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়েছে।
চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে বিষয়গুলো এরপর পার্লামেন্টে তোলা হবে। আর সেখানে আইন হিসেবে পাশ হলে ইউরোপের প্রথম দেশের নাগরিক হিসেবে ঋতুস্রাবের সময় ছুটির অধিকার ভোগ করবেন স্পেনের নারীরা।
খসড়ায় এ ক্ষেত্রে মাসে তিন অথবা পাঁচ দিনের ছুটির প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিসভা কোনো সময় বেঁধে দেয়নি। ফলে পিরিয়ড জটিলতা যত দিন চলবে ততদিন পর্যন্ত সবেতনে ছুটি নিতে পারবেন স্পেনের নারীরা। তবে এজন্য চিকিৎসকের সনদ থাকতে হবে।
বর্তমানে শুধু জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও জাম্বিয়ায় নারীর ঋতুস্রাবকালীন ছুটির অনুমোদন আছে।
স্প্যানিশ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, পিরিয়ডের সময় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী গুরুতর ব্যথায় ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে থেকেই ব্যথায় ভোগা নারীদের বিবেচনায় নিলে সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ডিসমেনোরিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর।
মন্ত্রিসভা বৈঠক সামনে রেখে স্পেনের সমতাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রদ্রিগেজ গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব লক্ষণ (তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর) কারও মধ্যে দেখা গেলে সাময়িক শারীরিক জটিলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাজেই পিরিয়ডের সময়কার এসব জটিলতাকেও আমাদের স্বীকার করা প্রয়োজন। এ সময়টি অত্যন্ত কষ্টকর, তাই এতে আক্রান্ত নারীদের বাড়িতে বিশ্রামের সুযোগ দেয়া উচিত।’
পাশাপাশি এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমরা উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছি, যাতে করে ব্যথা নিয়ে নারীদের কাজ করতে যাওয়া আর স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত না হয়। পিরিয়ডকে ঘিরে কলঙ্ক, লজ্জা ও নীরবতার অবসান যাতে ঘটে। আমরা অধিকার প্রশ্নে অগ্রগতি ঘটাতে চাই।’
স্পেনের বামপন্থি সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্য বিরোধিতার মুখেও পড়ছে। বামপন্থি জোটের মধ্যে থাকা কিছু দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিভক্তি। কেউ কেউ বলছেন, এই পদক্ষেপের বিপরীত ফল হতে পারে। নারীদের নিয়োগ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে হেয় করার প্রবণতা বাড়তে পারে।
স্পেনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবে ছুটির বিষয়টি ছাড়াও ঋতুস্রাবকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপে জোর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলগুলোতে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ, প্রান্তিক এলাকার নারীদের স্যানিটারি প্যাড ও ট্যাম্পন বিনা মূল্যে প্রদান এবং সুপার মার্কেটে এসব পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে চলমান রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা শঙ্কায় দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দুই দেশের যোগদানকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে।
এবার রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্য পদের আবেদনের বিরোধিতা করবে তুরস্ক। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আঙ্কারাকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে রাজি করাতে যেকোনো চেষ্টা নিষ্ফল হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আঙ্কারার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়া হবে। এর আগে ন্যাটোর জেনারেল মিরসিয়া জিওনা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে তুরস্ককে এই ইস্যুতে রাজি করানো যাবে।
সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হেলসিংকি ও স্টকহোম থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল তুরস্ক সফরে যাবে। যদিও এরদোয়ান প্রেসব্রিফিংয়ে আপস না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এ সপ্তাহেই সুইডেন ও ফিনল্যান্ড রাশিয়ার হুমকি সত্ত্বেও ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আগে থেকেই এরদোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সম্পর্কে বলেছেন, দুই দেশই তুরস্কে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি (পিকেকে) ও পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (ডিএইচকেপি/সি) এর নিরাপদ অতিথিশালা।
তুরস্ক এই দুই সংগঠনকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
পশ্চিমা এই সামরিক জোটের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগ দিতে হলে প্রতিটি দেশের সমর্থন লাগবে। কোনো একটি ন্যাটোভুক্ত দেশ ফিনল্যান্ডের যোগদানের বিষয়ে ভেটো প্রদান করলেই দেশটির ন্যাটোতে যোগদান স্থগিত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এরদোয়ানের এই ঘোষণা দুই দেশের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল।
তুরস্কের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। ফিনল্যান্ড ও আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিরাপত্তার সক্ষমতা এবং নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে।’
সানা মারিন আশা করেন যে ফিনিশ পার্লামেন্টে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের প্রস্তাব পাস হবে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে দুই নরডিক দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দুই দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দুই দেশকেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিনল্যান্ডের এমন পদক্ষেপ রুশ-ফিনিশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি উত্তর ইউরোপের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ফিনল্যান্ডকে নিরপেক্ষ দেশের ভূমিকায় থাকতে বাধ্য করার জন্য রাশিয়া সামরিক প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য বিকল্প উপায়ে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
তবে ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের কারণে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে মস্কো ঠিক কী কী পদক্ষেপ নেবে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি দেশটির সাম্প্রতিক দেয়া বিবৃতিতে। এর আগে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেয়, তবে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে।
রুশ নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ এর আগে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, দুই দেশ যাতে বাস্তবতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যথায় বাড়ির পাশে পরমাণু অস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বসবাস করতে হবে তাদের।
এ ছাড়া ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ন্যাটোর সম্প্রসারণ কীভাবে কার্যকর হয় এবং তা রুশ সীমান্তের কতটা কাছে চলে আসে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’
ফিনল্যান্ডে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রাও নরডিক। যদিও বলা হচ্ছে, দেশটির ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়নি। পাওনা টাকা নিয়ে জটিলতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাও নরডিক।
তবে ফিনল্যান্ড বলছে, রাশিয়া দেশটির চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ফলে ফিনল্যান্ড বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ আনতে পারবে। এটি দেশটির জন্য খুব একটা চাপ নয়।
আরও পড়ুন:ফ্রান্সের শ্রমমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নিকে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে ৩০ বছরের বেশি সময় পর দেশটিতে একজন নারী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সরকারি দপ্তর এলিসি প্যালেস সোমবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এলিজাবেথ বর্নির নিয়োগের বিষয়টি জানায়। ৬১ বছর বয়সী এই নারী রাজনীতিক বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্সের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
এর আগে সামাজিক সংস্কারে নেয়া দেশটির প্রেসিডেন্টের ঘোষিত প্যাকেজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ফ্রান্সে। সেই সময় একজন দক্ষ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান এলিজাবেথ বর্নি। বর্নির কার্যকর পদক্ষেপ আন্দোলন প্রশমনে মাখোঁ সরকারকে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
দেশটিতে সবশেষ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন ইডিথ ক্রেসন। তিনি ১৯৯১ সালের মে মাস থেকে ১৯৯২-এর এপ্রিল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্স এর আগে তার পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দিয়েছেন।
চলতি বছর এপ্রিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাখোঁর দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ের পর সরকারে ব্যাপক রদবদল আনার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পদে এমন পরিবর্তন আনলেন মাখোঁ।
আগামী জুনে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হবার কথা রয়েছে ফরাসি পার্লামেন্টে। এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লড়াইয়ে মধ্যপন্থী মাখোঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বামপন্থী ও কট্টর ডানপন্থীদের জোট।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একজন বামপন্থী নেতা এবং যার পরিবেশ বিষয়ে পর্যাপ্ত দখল রয়েছে তাকেই প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্য মনে করেছেন মাখোঁ।
এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে সামাজিক সংস্কার ও নারী উন্নয়নে মাখোঁর দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডিমানসেকে দেয়া বক্তব্যে ইডিথ ক্রেসন বলেন, ফ্রান্সের রাজনীতি এখনও পুরুষতান্ত্রিক হয়ে আছে। ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হলে নতুন নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীকে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
মারিওপোলে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতিরোধের সর্বশেষ অধ্যায় শেষ হতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় নিশ্চিত করেছে যে, মারিওপোলের অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানায় আটকে থাকা সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল স্টাফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্যারিসন মারিওপোলে নির্ধারিত যুদ্ধ মিশন সম্পন্ন করেছে। সর্বোচ্চ সামরিক কমান্ড যোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে অ্যাজোভস্টালে থাকা ইউক্রেনীয় কমান্ডারদের জন্য এ আদেশ (আত্মসমর্পণ) জারি করেছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী আনা মালিয়ার এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে বন্দি হওয়া রুশ সেনাদের সঙ্গে বিনিময় করা হবে। তবে বিনিময়ের শর্ত এখনও ঠিক হয়নি।
ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোল রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে এলে শুধু অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানাতেই এত দিন ইউক্রেনীয় সেনারা নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
রুশ সেনারা সেখানে সর্বাত্মক অভিযান না চালালেও স্থানটি ঘিরে রাখে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার সেনাদের আদেশ দেন, একটা মাছিও সেখান থেকে যেন বেরিয়ে যেতে না পারে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু জানিয়েছিলেন, প্রায় ২ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় যোদ্ধা এখনও কারখানাটিতে রয়েছেন এবং সেখানে বিশাল ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। এসব ইউক্রেনীয় যোদ্ধার মধ্যে মেরিন ও দেশটির জাতীয়তাবাদী আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্য রয়েছেন। যদিও এর মধ্য থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কিছু বেসামরিক মানুষকে বের করে আনা হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:গম রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে খাদ্যশস্যটির দাম।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বেঞ্চমার্ক ইনডেক্সে বিশ্বে গমের মূল্যসূচক বেড়ে গেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরের মাস মার্চে প্রচণ্ড গরম আর তাপদাহে ভারতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গমের ফলন। এতে দেশটির অভ্যন্তরে প্রধান খাদ্যশস্যটির দাম বেড়ে যায় রেকর্ড পরিমাণ। এমন বাস্তবতায় গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিশ্ববাজারে গমের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এতে গম থেকে উৎপাদিত রুটি, নুডুলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়।
গত শুক্রবার অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত সংস্থা (ডিজিএফটি) স্থানীয় সময় শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়।
শুক্রবারের ঘোষণার আগে লেটার অফ ক্রেডিট (এলওসি) ইস্যু হয়েছে এমন সব রপ্তানির চালান সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হবে। এর বাইরেও কোনো দেশের অনুরোধে গম রপ্তানি করা যাবে।
ডিজিএফটির ঘোষণায় আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক খাদ্যসংকট নিয়ন্ত্রণে নয়াদিল্লি গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবেশী ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে ভারত।
চীনের পর গমের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ভারত। তবে উৎপাদিত গমের অধিকাংশই ভারতকে ব্যবহার করতে হয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে গমের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ভারতের দ্বারস্থ হন ক্রেতারা।
ভারত সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আগে ইস্যু করা রপ্তানির আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন দেশকে গম পাঠানো অব্যাহত রাখবে নয়াদিল্লি। আর যে সব দেশ তাদের খাদ্যনিরাপত্তার চাহিদা মেটাতে ভয়াবহ সংকটের মুখে রয়েছে, তারাও ভারতের গম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।
ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারাও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয় এবং এটি সংশোধন করা যেতে পারে।
তবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত গ্রুপ অফ সেভেন-জি৭ভুক্ত দেশগুলোর বৈঠকে কৃষিমন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷
জার্মান খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী সেম ওজদেমির বলেন, ‘ভারতের মতো অন্য দেশগুলো যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা বাজার বন্ধ করতে শুরু করে, তবে এই সংকট আরও তীব্রতর হয়ে দেখা দেবে।’
জি৭ হলো বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম ও উন্নত অর্থনীতির একটি সংগঠন, যার আধিপত্য রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায়। জি৭ভুক্ত দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ, তবে এটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ নয়। কারণ এর বেশির ভাগ উৎপাদিত শস্য অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের গম রপ্তানিতে ধস নামে। খরা ও বন্যার হুমকিতে থাকা দেশগুলো নিজেদের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।
নিষেধাজ্ঞা দেয়ার এক সপ্তাহ আগে, ভারত চলতি বছর রেকর্ড ১০ মিলিয়ন টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে গমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত একাই তা মেটাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের সঙ্গে মিল রেখে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোটা বিশ্ববাসীকে খাবার সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত।
তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে নিজের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে যায় নয়াদিল্লি, এমন মন্তব্য করেছেন সংবাদমাধ্যম বিবিসির ভারতবিষয়ক সম্পাদক ভিকাস পান্ডে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। দেশটিতে রাশিয়া হামলা শুরু করলেও পশ্চিমা কোনো দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠায়নি। তবে সেনা না পাঠালেও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ইউক্রেনে ব্যাপক সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছে। পশ্চিমাদের দাবি, এর প্রভাব পড়েছে লড়াইয়ের ময়দানে। রাশিয়াও পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহকেই দায়ী করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি হয়ে উঠছে পশ্চিমারা। যুদ্ধক্ষেত্রের গতি-প্রকৃতি মস্কোর পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে না এবং রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারে ইউক্রেন, এমনটাই মনে করেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার প্রতিবেদকদের সঙ্গে হওয়া এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের সবশেষ পরিস্থিতির আলোকে এই মন্তব্য করেন স্টলটেনবার্গ। ‘ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন, ন্যাটোর প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করা এবং যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব’ ছিল বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু।
এ ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোটের ভবিষ্যৎ অবস্থান কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘রাশিয়ার পরিকল্পনামাফিক যুদ্ধ চলছে না। তারা কিয়েভ দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে। খারকিভ থেকেও পিছু হটেছে। দোনবাসেও তারা হামলা স্থগিত করেছে। রাশিয়া তাদের কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে। সাহসিকতার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাটো আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দৃঢ়ভাবে একত্রিত।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেন ত্যাগ না করে রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করেন এবং লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সেনা অভিযানের মধ্যেই ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান রাজধানী কিয়েভ সফর করেন।
যদিও চলতি মাসের শুরুর দিকে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিকল্পনামাফিকই চলছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ অভিযান।
ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে। সাহসিকতার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাটো আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দৃঢ়ভাবে একত্রিত।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। এছাড়া ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ভূমিকায় থাকতে হবে, অর্থ্যাৎ দেশটি কখনোই পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
এদিকে শুধু ইউক্রেনই নয়। রাশিয়ার আরেক প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডও ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
এদিকে ন্যাটোতে যোগদানের পরিনতির বিষয়ে এরই মধ্যে ফিনল্যান্ডকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ক্রেমলিন।
রুশ নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ এর আগে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, দুই দেশ যাতে বাস্তবতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যথায় বাড়ির পাশে পরমাণু অস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বসবাস করতে হবে তাদের।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ন্যাটোর সম্প্রসারণ কীভাবে কার্যকর হয় এবং তা রুশ সীমান্তের কতটা কাছে চলে আসে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’
দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রাখলেও ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রেক্ষাপটে ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। ফিনল্যান্ড ও আমাদের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিরাপত্তার সক্ষমতা এবং নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য