ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর দুই মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেশটির রাজধানী কিয়েভে যাচ্ছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন রোববার কিয়েভ সফর করবেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি।
তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই সফরের ব্যাপারে এখনও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ২৪ ফেব্রুয়ারি এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের এত উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এটাই প্রথম ইউক্রেন সফর। এর আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা প্রতিবেশী পোল্যান্ড সফর করেছেন।
গত আট সপ্তাহের এই যুদ্ধে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশের ভেতরেও উদ্বাস্তু হয়েছে আরও কয়েক লাখ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই কর্মকর্তার সফরের সময় ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে কি না তা পরিষ্কার নয়।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘এই যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জয়লাভ করবেন। এই যুদ্ধে ইউক্রেন জয়লাভ করতে যাচ্ছে, রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় হতে যাচ্ছে।’
যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে প্রাইস বলেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ইউক্রেনীয়দের যা দরকার আমরা সেসবই পাঠাচ্ছি।’
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ইউক্রেনে বড় ধরনের সামরিক সফলতা দেখাতে চাইছে দেশটি।
যুক্তরাজ্য বলছে, যুদ্ধক্ষেত্রে যত দিন যাবে তত দ্রুত ও শক্তিশালী হামলার মুখোমুখি হতে হবে ইউক্রেনকে। রুশ বাহিনী এরই মধ্যে দোনবাস থেকে ক্রামাটর্স্কে আক্রমণ করতে পারে। এরই মধ্যে শহরটিতে ব্যাপক মাত্রায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে।
১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজিত করার বিষয়টিকে স্মরণ করেই ৯ মে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়।
ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা, দিনটিকে সামনে রেখেই যুদ্ধকে আরও এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য স্থির করতে পারেন ভ্লাদিমির পুতিন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের দেশ হিসেবে পরিচিতি আছে অস্ট্রেলিয়ার কিন্তু যখন রাজনীতির বিষয়টি আসলে চিত্রটি ভিন্ন হয়ে যায়, যেখানে ৯৬ শতাংশ কেন্দ্রীয় আইনপ্রণেতা শ্বেতাঙ্গ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য কাটিয়ে ওঠার সুযোগ এ বছরের নির্বাচনে ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই তা বেছে নেয়নি। যেমন ভিয়েতনামি বংশোদ্ভুত তু লে তার আসনে নির্বাচনের জন্য প্রাক মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে পার্টির কর্তারা একজন শ্বেতাঙ্গ নারী ক্রিস্টিনা কেনেলিকে তার বদলে চুড়ান্ত মনোনয়ন দেয়।
অথচ কেনেলিকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ফেরি, ট্রেন, বাস ও অন্য একটি বাসে সিডনির উত্তর সৈকতে তার বাড়ি থেকে ফাউলারে যেতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। অথচ তু লে ছিলেন এখানকারই বাসিন্দা। ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা এই এলাকার সঙ্গে কেনেলির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রতি পাঁচজন অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে একজন অস্ট্রেলিয়ানের শেকড় ইউরোপে নয়। আবার নাগরিকদের ৪৯ শতাংশ হয় অন্য দেশে জন্মিয়েছেন নয়তো তাদের অভিভাবকরা অন্য দেশে জন্মিয়েছেন।
১৯০১ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে অশ্বেতাঙ্গদের অভিবাসন নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেখান থেকে দেশটি বেরিয়ে আসলেও রাজনীতির ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য রয়েই গেছে।
ড: সাউথ পোমাসসেন বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা যে বহু সাংস্কৃতিক চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করি, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তার কাছাকাছিও নেই।’
অন্য পশ্চিমা বহু সাংস্কৃতিক দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই একই বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
দুই দশক আগেও অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের মধ্যেই ছিল। তবে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক দল সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিয়ে এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের গণতন্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি বদ্ধ। প্রধান দলগুলো যাদের নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক বাছাই করে, তাদের প্রায় সবই পদমর্যাদার সাপেক্ষেই। প্রায়শই তারা বর্তমান এমপিদের কর্মী হিসেবেই কাজ করেন। এমন পরিস্থিতিতে অশ্বেতাঙ্গদের মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দীর্ঘদিনের ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসেছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। এরই মধ্যে দুইদেশই পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে আবেদন করেছে। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তুরস্কের বিরোধিতা দুই দেশের দ্রুত ন্যাটোতে যোগদানের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।
এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের পূর্ণাঙ্গ ও সার্বিক সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী মাগদালিনা এন্ডারসন ও ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিসতোকে পাশে রেখেই হোয়াইট হাউসে দেয়া এক বক্তব্যে এমনটাই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
তিনি একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, ‘ন্যাটোতে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়া কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে দুইদেশের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যও।
এদিকে গত সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্য পদের আবেদনের বিরোধিতা করবে তুরস্ক। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আঙ্কারাকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে রাজি করাতে যেকোনো চেষ্টা নিষ্ফল হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আঙ্কারার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়া হবে। এর আগে ন্যাটোর জেনারেল মিরসিয়া জিওনা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে তুরস্ককে এই ইস্যুতে রাজি করানো যাবে।
সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হেলসিংকি ও স্টকহোম থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল তুরস্ক সফরে যাবে। যদিও এরদোয়ান প্রেসব্রিফিংয়ে আপস না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এ সপ্তাহেই সুইডেন ও ফিনল্যান্ড রাশিয়ার হুমকি সত্ত্বেও ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আগে থেকেই এরদোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সম্পর্কে বলেছেন, দুই দেশই তুরস্কে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি (পিকেকে) ও পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (ডিএইচকেপি/সি) এর নিরাপদ অতিথিশালা।
তুরস্ক এই দুই সংগঠনকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
পশ্চিমা এই সামরিক জোটের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগ দিতে হলে প্রতিটি দেশের সমর্থন লাগবে। কোনো একটি ন্যাটোভুক্ত দেশ ফিনল্যান্ডের যোগদানের বিষয়ে ভেটো প্রদান করলেই দেশটির ন্যাটোতে যোগদান স্থগিত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এরদোয়ানের এই ঘোষণা দুই দেশের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে দুই নরডিক দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দুই দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দুই দেশকেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিনল্যান্ডের এমন পদক্ষেপ রুশ-ফিনিশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি উত্তর ইউরোপের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ফিনল্যান্ডকে নিরপেক্ষ দেশের ভূমিকায় থাকতে বাধ্য করার জন্য রাশিয়া সামরিক প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য বিকল্প উপায়ে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
তবে ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের কারণে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে মস্কো ঠিক কী কী পদক্ষেপ নেবে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি দেশটির সাম্প্রতিক দেয়া বিবৃতিতে। এর আগে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেয়, তবে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে।
রুশ নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ এর আগে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, দুই দেশ যাতে বাস্তবতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যথায় বাড়ির পাশে পরমাণু অস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বসবাস করতে হবে তাদের।
ফিনল্যান্ডে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রাও নরডিক। যদিও বলা হচ্ছে, দেশটির ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়নি। পাওনা টাকা নিয়ে জটিলতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাও নরডিক।
তবে ফিনল্যান্ড বলছে, রাশিয়া দেশটির চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ফলে ফিনল্যান্ড বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ আনতে পারবে। এটি দেশটির জন্য খুব একটা চাপ নয়।
আরও পড়ুন:অঞ্জলি খারিয়া একজন নারী শ্রমিক। ভারতের আসামের ডিব্রুগড় জেলার চাপাটোলি গ্রামের এক চা-বাগানে কাজ করেন তিনি। অন্যান্য শ্রমিকদের মতো প্রতিদিন তাকেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এরপরেও কাজ শেষে এসে তিনি পরিবারকেই সময় দেন।
গত ৪ এপ্রিল মেয়েকে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে বসেছিলেন অঞ্জলি খারিয়া। তখনও তিনি জানতেন না, এটিই মেয়ের সঙ্গে খাওয়া তার শেষ খাবার। সারা দিন চা-বাগানে কাজের শেষে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তাই খাবার শেষে আর অপেক্ষা না করে রাতের ঘুমের জন্য শুয়ে পড়েছিলেন।
রাত ৩টার দিকে তার ছয় বছরের মেয়ে সুস্মিতার বমির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। তারপর তার বমিভাব হতে শুরু করে এবং তিনি কাঁপতে থাকেন।
মেয়ের অবস্থা সারা রাত ধরে এমন চলতে থাকলে খারিয়া চিন্তিত হয়ে পড়েন, কিন্তু যখন কয়েক ঘণ্টা পর তার ছেলে ও শ্বশুরের অবস্থাও খারাপ হতে শুরু করে তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
৩৭ বছর বয়সী খারিয়া বলছিলেন, তারা সবাই একযোগে কাঁপছিলেন। এরপর তাদের ভয়ানক ও লাগামহীন ডায়রিয়া শুরু হয়েছিল।
পরে তিনি বুঝতে পারেন, শুধু তাদের ঘরেই এই সমস্যা নয়, আশপাশের আরও কয়েকজনের সেই রাতেই একই সমস্যা হয়েছিল। সবাই যন্ত্রণায় ছটফট করছিল কিন্তু কেউ জানত না কেন?
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই খারিয়া তার মেয়েকে নিয়ে কাছের একটি ফার্মেসিতে ছুটে যান। সেখানে তাকে স্যালাইন ও ওষুধ দেয়া হয়।
তার শ্বশুর ও ছেলের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়, তাদের চিকিৎসায় তিনি তার শেষ সম্বল ব্যয় করেছিলেন। যদিও অ্যাম্বুলেন্সে তিনি তার মেয়েকে পাঠাননি। খারিয়া বলেন, সে ওষুধ খাওয়ার পর ভালো অনুভব করছিল তাই আমি ভেবেছিলাম সে ঠিক হয়ে যাবে।
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তার মেয়ে আবার বমি করতে শুরু করে কিন্তু এবার খারিয়ার কাছে অ্যাম্বুলেন্স ডাকার জন্য অবশিষ্ট আর কোনো টাকা নেই। কয়েক ঘণ্টা পরেই তার কোলে মারা যায় খারিয়া।
পরে দেখা গেল যে সেদিন যারা অসুস্থ হয়েছিলেন তারা সবাই এক ধরনের বন্য মাশরুম খেয়েছিলেন যা খারিয়ার শ্বশুরই কাছের জঙ্গল থেকে ছিঁড়ে আনেন। তিনি এই মাশরুম তাদের প্রতিবেশীদেরও দিয়েছিলেন।
সরকারি রেকর্ড নিশ্চিত করেছে যে ৬ বছরের সুস্মিতা ছাড়াও সেদিন আরও দুজন মারা গিয়েছিলেন। মোট ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
মাশরুম খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়াদের একজন ৩৬ বছর বয়সী নেহা লামা। তিনি বলেন, ‘আমি সেই রাতটির কথা কখনই ভুলব না। আমি ভেবেছিলাম, আমরা সবাই মারা যাব। আমরা বহু বছর ধরে মাশরুম সংগ্রহ করছি ও খাচ্ছি। আমরা কীভাবে বুঝব যে সেগুলো বিষাক্ত হতে পারে?’
ভারতের আসাম ও প্রতিবেশী উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে মাশরুমের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়।
বন্য মাশরুম এ অঞ্চলগুলোর দরিদ্র মানুষের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উৎস। এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা বন্য মাশরুম দিয়ে ঘন স্যুপ এবং সবজি হিসেবেও রান্না করেন। কিন্তু এই মাশরুমগুলো প্রায়ই বিষাক্ত হয় এবং এর শিকার হন হতদরিদ্র শ্রমিকেরা।
এসব মৃত্যুর কোনো সরকারি রেকর্ড নেই। তবে রাজ্যের দুজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এপ্রিলেও বিষাক্ত মাশরুমে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগই চা-বাগানের শ্রমিকদের পরিবারের সদস্য।
এই মৃত্যুর কোনো সরকারি রেকর্ড রাখা হয়নি, তবে রাজ্যের দুজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন এপ্রিলে যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারের।
আমি সেই রাতটির কথা কখনই ভুলব না। আমি ভেবেছিলাম, আমরা সবাই মারা যাব। আমরা বহু বছর ধরে মাশরুম সংগ্রহ করছি ও খাচ্ছি। আমরা কীভাবে বুঝব যে সেগুলো বিষাক্ত হতে পারে?
এর আগে ২০০৮ সালে, বিষাক্ত মাশরুম খেয়ে ২০ জন মারা গিয়েছিলেন। যার বেশির ভাগই চা-বাগানের শ্রমিক। এখন পর্যন্ত এক ঘটনায় এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু। রাজ্য সরকার সে সময় বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি প্যানেল গঠন করেছিল।
আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী এবং প্যানেলের অন্যতম সদস্য দিলিপ কুমার সরমা বলেছিলেন, এই মৃত্যুর বড় কারণ হলো চা-বাগানের শ্রমিকদের সচেতনতার অভাব। তারা জানেন না কোন ধরনের মাশরুম বিষাক্ত আর কোন ধরনের মাশরুম খাওয়ার যোগ্য।
ড. সরমার মতে, বাগানমালিকদেরই দায়িত্ব তাদের শ্রমিকদের রক্ষা করা।
মাশরুমের ব্যাপারে সচেতনতামূলক বার্তা, সতর্কতা ও পরামর্শ সংবাদপত্রে বেশ কয়েকবার ছাপানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তা চা-বাগানের শ্রমিকদের পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছায় না। কারণ অধিকাংশ শ্রমিকই পড়াশোনা জানেন না।
আসামের উর্বর পাহাড়গুলো বিশ্বের সবচেয়ে দামি চায়ের ঠিকানা। এগুলোর মালিক বড় বড় ভারতীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল মোটেল যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
কিন্তু এত কিছুর যারা প্রধান কারিগর, সেসব শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত খারাপ।
চাপাতলীতে বিবিসি যে কয়েকজন চা-শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা টিনের ছাদ ও বাঁশের কুটিরে বানানো বাড়িতে বসবাস করেন। যেখানে স্যানিটেশন খুবই খারাপ। মজুরি এতটাই কম যে চা-শ্রমিকেরা প্রায়ই ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকেন। সম্প্রতি করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক ইস্যুতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ভেতরেও গোলা নিক্ষেপ করছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। এবার দেশটির কুরস্ক অঞ্চলের তেতকিনো গ্রামে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে অন্তত একজন রুশ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুরস্ক অঞ্চলের মেয়র রোমান স্টারোভয়েট এক টেলিগ্রাম পোস্টে হতাহতের বিষয়টি বলেছেন।
স্ট্ররোভয়েট দাবি করেন, ইউক্রেনীয় সেনারা ভোরবেলা গোলা নিক্ষেপ করেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
মেয়র জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় হামলায় নিহত ব্যক্তি পেশায় একজন ট্রাকচালক।
ইউক্রেনীয় গোলার আঘাতে গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দমকলকর্মীরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছেন। এর মধ্যে কিছু অবিস্ফোরিত শেলও রয়ে গেছে।
তবে ইউক্রেন হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগেও রাশিয়ার ভেতরে যেকোনো হামলার বিষয়ে ইউক্রেন কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে গত বুধবারও রাশিয়ার কুরস্ক ও বেলগোরোদে বেশ কয়েকটি গ্রামে ইউক্রেনীয় সেনাদের গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে একজন আহত হয়েছিলেন।
রুশ তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের হামলার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক মন্দা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে পাকিস্তানি রুপির। প্রতি ডলারের বিপরীতে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি রুপির বাজারদর ২০০-তে পৌঁছেছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ৩৮ অপরিহার্য নয়, এমন বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসলামাবাদ। এ পদক্ষেপকে ‘জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা’ বলছে পাকিস্তান সরকার।
দেশটির তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব ইসলামাবাদে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে নিষেধাজ্ঞার এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। । ‘জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার’ আওতায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর কিছু পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জানান, এ সিদ্ধান্তে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা পাবে।
টুইটে শাহবাজ বলেন, ‘আমরা কঠোরতা অনুশীলন করব। আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিদের এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে। যাতে আমাদের মধ্যে কম সুবিধাপ্রাপ্তদের পিটিআই (ইমরান খানের দল) সরকারের চাপানো বোঝা বহন করতে না হয়।’
Together we will overcome all the challenges with resolve and determination, InshaAllah! 🇵🇰 https://t.co/gIM7lqcjls
— Shehbaz Sharif (@CMShehbaz) May 19, 2022
ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়, হিসাবের ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের কারণে গত কয়েক সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে রুপির দর হারিয়েছে ব্যাপকহারে। এই পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের নতুন সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে দিনরাত কাজ করছেন। এ জন্য সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল সামগ্রী আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
নিষিদ্ধ হয়েছে যেসব পণ্য
গাড়ি, মুঠোফোন, সিগারেট, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, ফলমূল, ক্রোকারিজ, ব্যক্তিগত অস্ত্র ও গোলাবারুদ, জুতা, বৈদ্যুতিক বাতি, হেডফোন ও লাউড স্পিকার, সস, দরজা ও জানালার কাঠামো, ভ্রমণে ব্যবহৃত ব্যাগ, স্যানিটারি পণ্য, মাছ, কার্পেট, সংরক্ষিত ফলমূল, টিস্যু পেপার, আসবাব, শ্যাম্পু, বেকারি পণ্য, বিলাসবহুল ম্যাট্রেস ও স্লিপিং ব্যাগ, জ্যাম ও জেলি, কর্নফ্লেক্স, প্রসাধনী, হিটার ও ব্লোয়ার, সানগ্লাস, রান্নাঘরের সরঞ্জাম, হিমায়িত মাংস, ফলের জুস, পাস্তা, আইসক্রিম, দাড়ি কামানোর সামগ্রী, বিলাসী চামড়াজাত পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, সেলুনের সরঞ্জাম, চকলেট ও কোমল পানীয় আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন জরুরি পরিস্থিতি চলছে। পাকিস্তানের জনগণকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে মেনে নিতে হবে। যদিও এর জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিতে পড়তে হবে। বিলাসবহুল পণ্যের ওপর এই নিষেধাজ্ঞায় ৬০০ কোটি ডলার খরচ কমবে।
‘ইতোমধ্যে সেসব আমদানি আদেশের ক্রেডিট চিঠি খোলা হয়েছে বা অর্থ প্রদান করা হয়েছে সেগুলোর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। সরকার এখন রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আওতায় স্থানীয় শিল্পের উন্নতি ঘটবে, কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।’
তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব আরও বলেন, ‘নতুন ব্যবস্থাগুলো চলতি অ্যাকাউন্টের ঘাটতির ওপরও প্রভাব ফেলবে। তবে পদক্ষেপটি একটি “জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা” এর অধীনে নেয়া হয়েছিল। ভোক্তাদের ওপর জ্বালানির দামের প্রভাব কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়েও ভাবছে সরকার।’
পিটিআই-এর নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকারের সমালোচনা করে আওরঙ্গজেব বলেন, ‘ইমরান খান সরকার মূল্যস্ফীতির তীব্র বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সন্ত্রাসের জন্য দায়ী। তিনি (ইমরান খান) একটি অপরিশোধিত জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি অর্থনীতির সঙ্গে খেলছিলেন। আগত সরকারকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।’
আগাম নির্বাচনের জন্য পিটিআই-এর ক্রমাগত আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মন্ত্রী বলনে, সরকার এবং তার মিত্ররা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কখন নির্বাচন করা হবে এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। আপনি যদি নির্বাচন করতে চান, তাহলে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার আগেই তা করতেন।’
বর্তমান সরকারই কেবল বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট দেশককে থেকে বের করে আনতে পারে বলে দাবি করেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য কাজ করছেন। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
‘বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। আমদানি করা পণ্য নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপটি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এ ইস্যুতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ।’
সরকারের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন পিটিআই নেতা হাম্মাদ আজহার। তার ভাষ্য, নিষিদ্ধ হওয়া পণ্যগুলো মোট আমদানির ছোট একটা অংশ কেবল।
Non oil current account deficit stands at just under $1 bn. These measures to ban items will be inconsequential. pic.twitter.com/feknyr7ny6
— Hammad Azhar (@Hammad_Azhar) May 19, 2022
টুইটে তিনি বলেন, ‘ লাখ লাখ ব্যবসায়ী এবং দোকানদার এই পদক্ষেপে প্রভাবিত হবে। এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও প্রভাব ফেলবে। এতে চোরাচালান বাড়ার আশঙ্কাও তীব্র। বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে।
আরও পড়ুন:আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন তার মাথায় ছিল হেলমেট, গায়ে ছিল ভেস্ট। যেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল ‘প্রেস’।
গুলি হেলমেট ও ভেস্টের ঠিক মাঝখান দিয়ে শিরিনের ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। এ সময় শিরিনের সহকর্মীরা এবং পথচারীরা তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করলে গুলি চলতে থাকে। তাই তারা এগিয়ে আসতে পারেননি। নিথর পড়ে ছিল শিরিনের দেহ।
শুরুতে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। বিষয়টি প্রমাণে একটি ভিডিও প্রকাশ করে তেল আবিব। যেখানে দেখা যায়, একদল ফিলিস্তিনি গুলি ছুড়তে ছুড়তে একটি সরু গলি পার হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থা- বিটস্লেম ওই ভিডিও ধারণের স্থানটি খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছে, ওই ভিডিওটি শিরিন হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে ৩০০ মিটার (৯৮৫ ফুট) দূরের একটি স্থান।
শিরিনের কর্মস্থল আল জাজিরার সানাদ নিউজ ভেরিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটও বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। তারাও দাবি করেছেন ভিডিওটি ভুয়া।
প্রপাগান্ডায় কাজ না হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসে ইসরায়েল সরকার। তারা এই হত্যার তদন্ত করার আশ্বাস দেয়। তবে শেষমেশ আগের রূপেই ফিরেছে ইসরায়েল সরকার। তদন্ত না করার ইঙ্গিত দিয়েছে তেল আবিব। অতীতে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় তদন্ত করে নিজ দেশে সমালোচিত হয়েছিল দেশটির সরকার।
পশ্চিম জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক ইমরান খান বলেন, ‘আসলে সক্রিয় সামরিক অভিযানে একজন চাকরিরত ইসরায়েলি সেনা অফিসার বা সৈনিকের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি তদন্ত খুলতে হবে। ইসরায়েলের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টা এখন একেবারেই অসম্ভব।
‘তদন্ত হলে সরকারের ওপর হামলা হবে। বিরোধীরা এটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। এ ছাড়া সাধারণত ইসরায়েলিরা সেনাবাহিনীকে অন্য চোখে দেখে। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সেনারা তাদের রক্ষক।’
ইসরায়েলের জনপ্রিয় দৈনিক হারেটজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ নেই। ইসরায়েলি সেনারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা ভেবেছিল ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দিকে গুলি ছোড়া হচ্ছিল। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সাংবাদিক শিরিনের আশপাশে কোনো গুলি চলেনি।
শিরিনের শরীর থেকে বের করা বুলেটের টুকরা প্রমাণ হিসেবে রেখেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলের সামরিক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, তদন্ত হলে ইসরায়েলি সেনাদের সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিষয়টি ইসরায়েলি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেটজের বরাতে বৃহস্পতিবার এ খবর ছেপেছে জেরুজালেম পোস্ট।
সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ দুই দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন। ২০০০ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহের সময় পশ্চিম তীরের প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বড় বড় হামলাগুলো কভার করে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শিরিন।
পশ্চিম তীরের শহর জেনিনে গত ১১ মে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের খবর কভার করার সময় গুলিতে নিহত হন ৫১ বছরের শিরিন। প্রত্যক্ষদর্শী এবং তার সহকর্মীদের দাবি, ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন শিরিন।
হারেটজের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় শিরিনের পরিবার জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মৃত্যুর তদন্ত না করায় তারা বিস্মিত নয়।
‘আমরা এটিই আশা করছিলাম। এ কারণেই আমরা চাইনি তারা (ইসরায়েল) তদন্তে অংশ নিক। আমরা এই কাজের জন্য দায়ী যে কাউকেই জবাবদিহি করতে চাই।
‘যেহেতু তিনি একজন আমেরিকান নাগরিক, তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ তদন্ত শুরুর পাশাপাশি এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জবাব দিয়েছে ওয়াশিংটন। নিজের নাগরিকের হত্যার তদন্তে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
আরও পড়ুন:ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব লাদাখের প্যাংগং সো হ্রদের কাছে আরেকটি সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছে চীন। এর আগে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি চীন পূর্ব লাদাখে প্যাংগং তসো হ্রদের ওপর একটি সেতু তৈরির কাজ শুরু করে চীন।
স্যাটেলাইট থেকে নেয়া ছবিতে দেখা গেছে, হ্রদের চারপাশে নিজেদের এলাকায় দ্বিতীয় একটি বড় সেতু নির্মাণ করছে বেইজিং।
উত্তর প্যাংগং লেকের কাছে গত সেপ্টেম্বর থেকে ৩১৫ মিটারের সেতু তৈরির কাজ শুরু করে দেশটি। এই সেতুপথেই সামরিক যান ও অস্ত্র বহন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকায় সেনা মোতায়েন করছে চীন সরকার। সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পদক্ষেপের ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে সেনা মোতায়েন সহজ হবে চীনের।
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক তলানিতে। পূর্ব লাদাখের অনেক জায়গায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে বিবাদ পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে কয়েকবার।
এসব ঘটনায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রোষানলে পড়েছেন ভারতের নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস যুব শাখার সভাপতি বিবি শ্রীনিবাস মোদি সরকারকে কটাক্ষ করে লেখেন, “মোদিজি, ভয় পাবেন না - এই ‘ব্রিজে’ কখন ‘বুলডোজার’ চালাবেন?”
সেতু নির্মাণের খবর নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। তবে বিতর্কিত এলাকায় চীনের কর্মকাণ্ডকে উসকানি হিসেবে দেখছে ভারত। প্যাংগং লেকসহ পূর্ব লাদাখের একাধিক এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারে বেইজিংয়ের ওপর চাপ বাড়িয়েছে দিল্লি।
গালওয়ান নদী উপত্যকা, গোগরা, হট স্প্রিংসহ কিছু এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনাদের সামান্য পিছিয়ে আনা (ডিসএনগেজমেন্ট) ছাড়া তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি চীনকে।
গালওয়ানে সেনার সংখ্যা সামান্যই কমেছে; পরিবর্তে উত্তর লাদাখের দেপসাং ভ্যালিতে নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে চীন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য