১৯৪৬ সালে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবিতে তৎকালীন নিখিল ভাতর মুসলিম লীগ যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল তাতে শুরু হয় মুসলিম-হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা। একপর্যায়ে দাঙ্গার সময় কলকাতার একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান।
পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে ৭৬ বছর আগে যে বাড়িতে উঠিছেন বাংলাদেশের জাতীর পিতা সে বাড়ির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশের দুটি গবেষণা দল।
বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা আত্মজীবনী থেকে পাওয়া খুঁটিনাটি তথ্য মিলিয়ে শ্রীরামপুরের মসজিদ লেনের সে বাড়িটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও গবেষণামূলক সংস্থা ‘হাসুমনির পাঠশালা’ এবং ‘মুজিবুর রহমান গবেষণা সংস্থা’র কর্তা শামসুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল বাড়িটি চিহ্নিত করেছে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য ডেরার খোঁজ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল সে বাড়ির খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরের ২/এ মসজিদ লেনের টিকিয়াপাড়ার যান। সেখানে পরে সে বাড়িটিকে চিহ্নিত করে।
বাড়িটিকে চিহ্নিত করতে পেরে উচ্ছ্বসিত শামসুল হুদা বলেন, ‘এ যেন ইতিহাসের পুনরুদ্ধার।’
বাংলাদেশের হাসুমনির পাঠশালার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ে ওই বাড়ির খোঁজ শুরু করেন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘শেওড়াফুলির রাজবাড়ির বংশধর আশীষ ঘোষের চেষ্টায় ওই বাড়ির খোঁজ মিলেছে। পুরনো ধাঁচের ইমারতের একাংশে আধুনিকতার ছোঁয়া পড়েছে বাড়িতে।’
তিনি বলেন, ‘এই বাড়িতেই দাঙ্গার সময় আত্মীয়-পরিজনদের খোঁজ নিতে এসে থেকেছিলেন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
স্থানীয়রা কেউ বিষয়টি বলতে না পারলেও সূত্র দিলেন মসজিদ লেনের বয়স্ক বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘মুজিবুর সাহেবকে আমার মনে নেই। তবে মসজিদের পাশের বাড়িটা সবুর মিয়ার ছিল। তিনি অভিজাত মানুষ ছিলেন। সে জমানায় বাড়িতে বন্দুক থাকত। অনেকে এসে থাকতেন। তখন খুব ছোট ছিলাম। একজন একটু খুঁড়িয়ে চলা মানুষও থাকতেন, পরে তাকে খুলনাতে দেখেছি। শুনেছি আন্দোলন করেছেন।’
মুজিবুর রহমান গবেষণা সংস্থার কর্তা শামসুল হুদা বলেন, ‘ওই খুঁড়িয়ে চলা ব্যক্তি নাসের শেখ। জাতির জনকের ভাই। পরে তিনি খুলনাতে বাস করতেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনিও খুন হয়েছিলেন। সব ইতিহাসই মিলে যাচ্ছে। অতি দ্রুত আমাদের সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রীসহ একটি প্রতিনিধিদল ভারতে আসবে।’
তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন পাকিস্তান রাষ্ট্র বাস্তবায়নের দাবিতে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ পালনের ঘোষণা দেন, এর পরিপ্রেক্ষিত শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা।
শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইতে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে-
‘‘হাশিম সাহেব আমাদের নিয়ে সভা করলেন। আমাদের বললেন, ‘তোমাদের মহল্লায় মহল্লায় যেতে হবে, হিন্দু মহল্লায়ও তোমরা যাবে। তোমরা বলবে, আমাদের এই সংগ্রাম হিন্দুদের বিরুদ্ধে নয়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, আসুন আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দিনটি পালন করি।’ আমরা গাড়িতে মাইক লাগিয়ে বের হয়ে পড়লাম। হিন্দু মহল্লায় ও মুসলমান মহল্লায় সমানে প্রোপাগান্ডা শুরু করলাম। অন্য কোন কথা নাই, ‘পাকিস্তান’ আমাদের দাবি। এই দাবি হিন্দুর বিরুদ্ধে নয়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। ফরোয়ার্ড ব্লকের কিছু নেতা আমাদের বক্তৃতা ও বিবৃতি শুনে মুসলিম লীগ অফিসে এলেন এবং এই দিনটা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু মুসলমান এক হয়ে পালন করা যায় তার প্রস্তাব দিলেন। আমরা রাজি হলাম। কিন্তু হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের প্রোপাগান্ডার কাছে তারা টিকতে পারল না। হিন্দু সম্প্রদায়কে বুঝিয়ে দিল এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে।’’
সে সময় তরুণ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোদ্ধাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কলকাতায় আক্রান্তদের রক্ষা করার। সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। তখন একটা সময়ে আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল তাকে।
আরও পড়ুন:ভারতের চারটি রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা ও ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে নভেম্বরে ভোট গ্রহণের পর রোববার সকাল থেকে শুরু হয় ভোট গণনার পর্ব।
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে তিনটি রাজ্যেই জয় পেতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল, বিজেপি।
এ দিকে তেলেঙ্গানায় হার স্বীকার করে নিয়েছে বিআরএস। ১১৯টি আসনের মধ্যে ৬৫টি আসনে বড় ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
চার রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে লড়াই হচ্ছে ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মধ্যে। আর তেলেঙ্গানায় লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে ‘ভারত রাষ্ট্র সমিতি’র (বিআরএস)।
এই চার রাজ্যের পাশাপাশি গত মাসে মিজোরামেও বিধানসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। রাজ্যটিতে ভোট গণনার তারিখ এক দিন পিছিয়ে সোমবার করেছে নির্বাচন কমিশন।
পাকিস্তানের চিলাস শহরের কাছে একটি বাসে বন্দুকধারীদের হামলায় আটজন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা।
আঞ্চলিক সরকারের মুখপাত্র মুহাম্মদ আলী জোহরের বরাত দিয়ে রয়টার্সের রোববারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহরে শনিবার সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা বাসে হামলা চালায়।
গিলগিত-বালতিস্তান পুলিশের মুখপাত্র গোলাম আব্বাস ডিপিএ নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে দুজন সেনাসদস্যও রয়েছেন।
আব্বাসের মতে, হামলায় আহতদের মধ্যে কিছু গুলিবিদ্ধও আছেন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বাসটি কারাকোরাম হাইওয়ে দিয়ে যাতায়াত করছিল, যা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সড়কগুলোর একটি।
কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
আরও পড়ুন:ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন নয়জন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মারাউই শহরের মিন্দানাও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সমাবেশ চলাকালে রোববার এ ঘটনা ঘটে।
আঞ্চলিক পুলিশ ডিরেক্টর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অ্যালান নোবেলেজা জানান এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তিনি এ হামলার জন্য ইসলামিক স্টেটপন্থীদের (আইএস) দায়ী করেছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, মারাউই শহরটি ২০১৭ সালে ইসলামিক স্টেটপন্থী দল প্রায় পাঁচ মাস অবরুদ্ধ করে রাখে। এর পর মারাউই শহরকে মুক্ত করে ফিলিপাইন্স সেনাবাহিনী। পাঁচ মাসব্যাপী ওই লড়াইয়ে প্রাণ যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের। বাস্তুহারা হন প্রায় তিন লাখ।
ফিলিপাইনের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা শনিবার মাগুইন্দানাও দেল সুর প্রদেশে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে ইসলামিক স্টেটপন্থী দল দাওলাহ ইসলামিয়া-ফিলিপাইনের সদস্যসহ ১১ জনকে হত্যা করেছে। এর প্রতিশোধ নিতেই ক্যাথলিক সমাবেশে হামলা চালানো হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
লানাও দেল সুর প্রদেশের গভর্নর মামিনতাল আদিয়ং জুনিয়র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে।
আরও পড়ুন:আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ইমরান খানের পর এবার দলটির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন ব্যারিস্টার গহর আলী খান। ইমরান খান নিজেই ব্যারিস্টার খানকে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করার কয়েকদিন পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন তিনি।
শনিবার তার দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি জানায় পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওমর আইয়ুব খান।
দলের কয়েকটি পদে নেতাদের দায়িত্ব দিতে শনিবার পিটিআইয়ে ভোটাভুটি হয়। পরে পিটিআইয়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়াজুল্লাহ নিয়াজি নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন।
পিটিআই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পেশাওয়ারে এক ভাষণে গহর আলী খান বলেন, ‘ইমরান খানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘১৯৬০ সাল থেকে পাকিস্তানে বিদ্যমান ১৭৫টি রাজনৈতিক দলের সবাই পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে তাদের আন্তঃদলীয় নির্বাচনের বিবরণ প্রদান করে আসছে। তবে কোনো নির্বাচনে কোনো দলকে পিটিআইয়ের মতো এতটা চুলচেরা যাচাই করা হয়নি।
‘জনগণ সবই দেখছে; তারাই এ নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে পিটিআই এবং এই সংগ্রাম করতে গিয়েই আজ কারাগারে বন্দি ইমরান খান।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘নির্বাচনে আমরা সবাইকে পরাজিত করব।’
কেন্দ্রীয় দুই নেতার পাশাপাশি কয়েকটি প্রদেশেও নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছে দলটি। এর মধ্যে বালুচিস্তান প্রদেশে পিটিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মুনির আহমেদ বালুচ, সিন্ধ প্রদেশে হালীম আদিল শেখ, পাখতুনখাওয়া প্রদেশে আলী আমিন গেন্দাপুর খাইবার এবং পিটিআইয়ের পাঞ্জাব প্রদেশের সভাপতি হয়েছেন ইয়াসমিন রশিদ।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। ক্ষমতা হারিয়েই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক মামলার শিকার হন তিনি। এর মধ্যে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় এ বছরের ৫ আগস্ট তিন বছরের কারাদণ্ড হয় ইমরানের। যদিও এ মামলায় তার সাজা স্থগিত রয়েছে, তবে কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁসের আরেক মামলায় বর্তমানে কারাবন্দি তিনি।
আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে ইমরানের মুক্তি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় তার নেতৃত্বে পিটিআইয়ের নির্বাচনে অংশ নেয়া-না নেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গহর খানকে দলটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:বয়সে সবচেয়ে বড় তাই বিপদেও যেন বড় দায়িত্ব পালন করলেন ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আটকা পড়া গব্বর সিংহ নেগি। সুড়ঙ্গ থেকে একে একে ৪০ জন বেরিয়ে আসার পর, সবার শেষে বেরোলেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার পর উদ্ধারকারীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে গব্বর সিংহের প্রশংসা। তাকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাকি শ্রমিকরাও।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ১৭ দিনের বন্দিদশায় বাকিদের যোগাসন শিখিয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ গব্বর। বিপদ এবং আতঙ্কের মধ্যেও শ্রমিকরা যাতে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকেন, তা সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গব্বর। সেখানেই তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলছিল।
হাসপাতালের বাইরে থেকেই গব্বরের ভাই জয়মল সিংহ নেগি এনডিটিভিকে বলেন, দাদা বাকিদের বলেছিল, আমি সবার বড়। আমি সবার শেষে সুড়ঙ্গ থেকে বেরোব। দাদা ফিরে আসায় তিনি এবং তাদের পরিবার যে খুশি, সে কথাও জানান জয়মল।
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গমুখ থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দূরে উত্তরাখণ্ডের পাওড়ি গঢ়ওয়াল জেলায় গব্বরের বাড়ি। তার সাহসিকতার প্রশংসা শোনা গিয়েছে বড়ির লোকেদের কাছ থেকেও।
প্রথমে পাইপের মাধ্যমে, পরে ফোনের মাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই গব্বরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন ভাই জয়মল। তার কথায়, দাদা খুব সাহসী। দাদাকে বললাম, উদ্ধারকাজ শুরু হলে তো হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যাবে। তখন কী করবে? বলল, আমি বড়। আমি সবার শেষে বেরোব।
১৭ দিন পর মঙ্গলবার রাতে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। সবাই সুস্থ রয়েছেন। তবে দীর্ঘ দিন সুড়ঙ্গে বন্দি থাকার কারণে তাদের মনের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুড়ঙ্গের বাইরে গড়ে তোলা হয়েছিল অস্থায়ী হাসপাতাল। মঙ্গলবার রাতে সুড়ঙ্গ থেকে বের করার পর শ্রমিকদের সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা চলে।এর পর তাদের ৩০ কিলোমিটার দূরে চিনিয়ালিসৌর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই ৪১টি শয্যা তৈরি ছিল। প্রত্যেক শয্যায় ছিল অক্সিজেনের ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন:১৭ দিন ধরে আটকে থাকার পর অবশেষে ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হয়েছেন ৪১ শ্রমিক। একটা সময় হয়তো তারা ধরেই নিয়েছিলেন, আর বেঁচে ফেরা হবে না তাদের। তবে সব আশঙ্কা দূর করে একে একে বেরিয়ে এসেছেন তারা।
কীভাবে কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে এই শ্রমিকরা আটকে পড়ে সময় কাটিয়েছেন, কী খেয়েছেন এ কদিন ধরে- এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছে তারা।
ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলা থেকে শ্রমিক হিসেবে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী জমরা ওঁরাও। ধস নামার কারণে বাকি শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জমরা জানান, ১২ নভেম্বর ভোরে সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় একটা বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। তাদের চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ।
জমরার কথায়, আমরা প্রাণ বাঁচাতে পড়িমরি করে দৌড়েছিলাম। লাভ হয়নি। কেউ বেরোতে পারিনি। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে পড়েছি। সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। খুব খিদে পেয়েছিল। ভয় গ্রাস করছিল। সাহায্যের জন্য প্রার্থনা শুরু করি। কিন্তু আশা ছাড়িনি।
জমরা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর টানা ২৪ ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হয়েছিল তাদের। তার পর খাবার পাঠায় প্রশাসন। প্রথম বার খাবার হিসেবে এসেছিল মুড়ি এবং এলাচ। সেই খাবার খেয়েই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছিলেন বলে জানান জমরা।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা পর যখন আমরা প্রথম খাবার খেলাম, তখন উপলব্ধি হলো যে বেঁচে আছি। আমরা বুঝতে পারি যে, কেউ ঠিক আমাদের কাছে পৌঁছাবে। আমাদের উদ্ধার করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। আমাদের আশা আরও বাড়ে।
জমরা আরও জানিয়েছেন, কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে সময় পার করতে মোবাইলের গেমই ছিল তাদের ভরসা। মোবাইলে লুডো খেলে অনেকটা সময় পার হয়েছে তাদের। বাইরে থেকে চার্জার পাঠিয়ে দেয়ায় ফোন চার্জ করতে অসুবিধা হয়নি। তবে নেটওয়ার্ক না থাকায়, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মোবাইলে গেম খেলা ছাড়া একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলে এবং মনোবল বাড়িয়েও সুড়ঙ্গের মধ্যে তারা সময় কাটিয়েছিলেন বলে জমরা জানিয়েছেন।
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে যে ৪১ জন আটকে ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক। তাদের মধ্যেই ছিলেন জমরা। জমরা জানিয়েছেন, স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে মাসে ১৮ হাজার টাকার জন্য তিনি ওই সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন।
১৭ দিন পর খোলা আকাশে নিশ্বাস নেয়ার পর জমরা বলেন, ‘আমি ভাল আছি। আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিয়েছেন। এটাও বিশ্বাস রেখেছিলাম যে, যেহেতু ৪১ জন আটকে রয়েছি, তাই কেউ ঠিক আমাদের উদ্ধার করবে। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছিলাম। যারা ১৭ দিন ধরে লাগাতার পরিশ্রম করে আমাদের উদ্ধার করেছেন, তাদের ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন:
মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে নির্মাণাধীন ভবন ধসে তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ আছেন চারজন।
নিউ স্ট্রেইট টাইমসের বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পেনাংয়ের বাতু মংয়ে ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড অফিসের কাছে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পেনাংয়ের ডেপুটি পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ উসুফ জান মোহাম্মাদ জানান, ভবনে ১৮ জন কর্মী নিযুক্ত ছিলেন। শ্রমিকরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।
তিনজনের মধ্যে ঘটনাস্থলে দুইজনের মৃত্যু হয় এবং পেনাং হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আরেকজনকে মৃত বলে জানান চিকিৎসক। উদ্ধারকারী দল এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া বাকি চারজনকে খুঁজছে।
ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অপারেশনের সহকারী পরিচালক খায়েরি সুলাইমান বলছেন, ‘বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও চারজন আটকে আছেন বলে আমাদের ধারণা, তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
সবাইকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা অভিযান বন্ধ করব না, তবে বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়া থাকলে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য