বিস্ফোরণে আবারও রক্তাক্ত হলো আফগানিস্তান। দেশটির চার জায়গায় বৃহস্পতিবারের বোমা হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন।
মাজার-ই-শরীফ শহরের একটি শিয়া মসজিদে প্রথম বিস্ফোরণটি হয়। এতে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন, আহত ৮৭ জন।
ইসলামিক স্টেস্ট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তালেবান বলছে, তারা আইএসকে পরাজিত করেছে। কিন্তু গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের কাছে একটি গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইএস বলছে, মাজার-ই-শরীফ মসজিদে হামলায় তারা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরিত বুবি-ট্র্যাপড ব্যাগ ব্যবহার করেছে। গোষ্ঠীটির সাবেক নেতা ও মুখপাত্রকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
বাকি তিনটি হামলার বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।
দ্বিতীয় হামলাটি হয় কুন্দুজের একটি পুলিশ স্টেশনের কাছে। গাড়িতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে অন্তত চার জন প্রাণ হারান। আহত হয়েছেন ১৮ জন।
পূর্ব নাঙ্গারহার প্রদেশের একটি রাস্তায় হয় তৃতীয় হামলা। তালেবানের গাড়িতে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হন চার জন। একজনের অবস্থা গুরুতর।
এ ছাড়া রাজধানী কাবুলের নিয়াজ বেইক এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে দুই শিশু আহত হয়েছে।
কাবুলের শিয়া অধ্যুষিত দাশত-ই-বার্চি এলাকার আব্দুল রহিম হাই স্কুলে দুই দিন আগে বোমা হামলা হয়। এতে ছয়জন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হন। এর দায় নেয়নি আইএস।
আরও পড়ুন:তালেবান গত গ্রীষ্মে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেয়। শুরু হয় নারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিধিনিষেধ। নারীর স্বাধীনতাকে সীমিত করার সবশেষ ডিক্রিটি জারি হয় শনিবার। তাতে বলা হয়, এখন থেকে আপাদমস্তক বোরকা পরতে হবে আফগান নারীদের। এই খবরে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাচ্ছেন আফগান নারী ও অধিকারকর্মীরা।
কাবুলের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্জিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, ‘কেন তারা নারীদের যৌনতার বস্তু হিসেবে দেখছে?
‘আমি একজন অনুশীলনকারী মুসলিম। ইসলাম আমাকে যা শিখিয়েছে তার মূল্য দেই। বোরকা নিয়ে যদি মুসলিম পুরুষের সমস্যা হয়, তবে তাদের নিজেদেরই বোরকা পরা উচিত, দৃষ্টিও নামিয়ে রাখতে হবে।’
৫০ বছরের ওই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘কেন আমাদের সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ করা হবে? এর কারণ তারা ইসলাম পালন করতে পারে না। তারা কি যৌন ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না?’
অধ্যাপক মার্জিয়া অবিবাহিত। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। বৃদ্ধ মায়ের দেখাশোনা তিনিই করেন।
তিনি বলেন, ‘১৮ বছর আগে তালেবান আমার ভাই, আমার একমাত্র মাহরামকে একটি হামলায় হত্যা করে। তারা কি এখন আমাকে আরও শাস্তি দেয়ার জন্য একজন মাহরাম ধার দেবে?’
বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে যাওয়ার সময় বার বার তালেবান ওই অধ্যাপককে বাধা দিয়েছে। তালেবান বলছে, একা ভ্রমণ আদেশের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
মার্জিয়া বলেন, ‘ট্যাক্সিওয়ালারা সব সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমার মাহরাম কোথায়। যখন আমি তালেবানকে বলি আমার মাহরাম নেই, তারা মানতে চায় না। আমি একজন সম্মানিত অধ্যাপক। কিন্তু তারা (তালেবান) একটুও পাত্তা দেয় না। আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিতে চালকদের নির্দেশ দেয় তারা।
‘কোনো অনুষ্ঠান কিংবা ক্লাসে যেতে আমাকে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়েছে।’
নতুন বিধিনিষেধ আরোপের পর কাবুলের ওই অধ্যাপকের বক্তব্য আফগানিস্তানের পাশাপাশি গোটা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে।
তালেবানের কাবুল দখলের প্রতিবাদে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন মানবাধিকারকর্মী হুদা খামোশ। গত ফেব্রুয়ারিতে নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর তালেবানের দমন অভিযানের মুখে তিনি পালিয়ে যান নরওয়েতে। সেখানে তিনি তালেবান নেতাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। দাবি জানিয়েছিলেন নারী বিক্ষোভকারীদের অবিলম্বে মুক্তির।
তিনি বলেন, ‘তালেবান শাসন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের স্ব-আরোপিত নিয়মের আইনগত ভিত্তি নেই। আফগানিস্তানের এই প্রজন্মের তরুণীদের কাছে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে তারা। এসবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। কখনোই চুপ থাকব না।’
‘কেবল স্বামী বেছে নেয়া এবং বিয়ে করার সুযোগের চেয়েও নারীকে বেশি কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে ইসলামে। তালেবান কেবল এই ইস্যুতে মনোযোগী। ইসলামে শিক্ষা এবং কাজের বিষয়ে যা বলা হয়েছে সেসব কিছুই তারা বলছে না।
‘২০ বছরের অর্জন রাতারাতি হারিয়েছি। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা জয় পেয়েছিলাম। সমাজ থেকে কেউ আমাদের সরাতে পারবে না।’
আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের নীরব অবস্থানের সমালোচনা করেছেন অনেক মানবাধিকারকর্মী।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আফগান কর্মী এবং সিনিয়র গবেষক সামিরা হামিদি। তিনি বলেন, ‘গত আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পরও আফগান নারীদের বিশ্বাস ছিল আন্তর্জাতিক সহায়তায় নারীদের অধিকার বজায় থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগান নারীদের আবারও ব্যর্থ করেছে।’
হামিদি বলেন, ‘তালেবানের সঙ্গে যারা শান্তি আলোচনায় বসেছিলেন, তাদের অনেক আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তালেবান ক্ষমতায় এলে নারীদের ভাগ্যে কী ঘটবে তা স্পষ্ট করতে। আফসোস, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার সক্ষমতার অভাব ছিল তাদের।’
হামিদির সঙ্গে একমত খামোশ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব তাদের নীরবতা দিয়ে একটি পুরো প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। একটি দেশকে তার অর্ধেক জনসংখ্যার জন্য কারাগারে পরিণত করার অনুমতি দেয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ।’
অধ্যাপক মার্জিয়া একই ধরনের হতাশার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি জাতি, যারা অনেক নারী নেতা তৈরি করেছে। আমি আমার ছাত্রদের বলতাম তারা যেন সব সময় নারীদের সম্মান ও সমর্থন করে।’
“প্রতিটি ‘নতুন আইন’ আমার হৃদয়কে টুকরো টুকরো করে ফেলে। যেগুলো ইসলাম এবং আফগান মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানে নারীর জন্য তালেবানের নির্ধারিত পোশাক না পরাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ-সংক্রান্ত একটি ডিক্রি রোববার জারি করেছে তালেবান সরকার।
এর আগেও আফগান নারীর প্রতি নানা বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছিল। তবে ফৌজদারি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এবারই প্রথম।
কাবুলে এক আয়োজনে শনিবার আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা ও তালেবানপ্রধান হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা নারীদের আপাদমস্তক বোরকা পরার ডিক্রি জারি করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের (নারী) চাদোরি (মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকা) পরা উচিত। কারণ এটি ঐতিহ্যবাহী এবং সম্মানজনক।’
এর পর পরই এ-সংক্রান্ত বিবৃতি দেয় মিনিস্ত্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্টিউ অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ ভাইস। বলা হয়, সম্মানিত আফগান নারীদের জন্য হিজাব বা হেডস্কার্ফ পরা আবশ্যক। চাদোরিকে (নীল রঙের আফগান বোরকা বা পুরো শরীরের পর্দা) ‘সবচেয়ে উত্তম হিজাব’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মন্ত্রণালয়। লম্বা কালো পর্দা যা একজন নারীকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখে, সেসব পোশাককেও ধরা হবে হিজাব হিসেবে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে দেয়া পোশাকের বর্ণনায় বলা হয়, ‘কোনো নারীর শরীর ঢেকে রাখার পোশাককে হিজাব হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবে তা অবশ্যই খুব বেশি আঁটসাঁট হবে না। আবার শরীর দেখা যায় এমন পাতলাও যেন না হয়।’
তালেবান সরকারের এই আদেশ না নামলে সাজার মুখোমুখি হতে হবে। বিবৃতিতে সাজার বিবরণে বলা হয়, অপরাধী নারীর পুরুষ অভিভাবককে প্রথমে সতর্ক করা হবে। এতে কাজ না হলেও তাকে কারাগারে পাঠানো হবে।
‘যদি কোনো নারী হিজাব ছাড়া ধরা পড়ে, তার মাহরামকে (পুরুষ অভিভাবক) সতর্ক করা হবে। দ্বিতীয়বার সেই অভিভাবককে (তালেবান কর্মকর্তাদের দ্বারা) ডেকে পাঠানো হবে। এর পরও না শোধরালে অভিভাবককে তিন দিনের জন্য বন্দি করা হবে।’
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকিফ মুহাজির বলেন, ‘হিজাবের নিয়ম লঙ্ঘনকারী সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হবে।’
আরও পড়ুন:হেরোইনের মূল উপাদান পপি ফুল বা আফিম। এই ফুল চাষের জন্য ব্যাপক পরিচিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান।
দীর্ঘ দুই দশক পর আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আবারও এসেছে তালেবান। বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে তারা গত মাসে পপি চাষে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে কতটা কার্যকর হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা?
এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে ভাইস ওয়ার্ল্ড নিউজ। তাদের একটি দল চষে বেড়িয়েছে পপি চাষের মূল কেন্দ্র হেলমান্দ এবং কান্দাহার অঞ্চলে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হেলমান্দ প্রদেশে পপি এবং আফিম সম্পর্কিত তথ্য নিতে তালেবানের স্পষ্ট নিষেধ আছে। তাই তালেবানের চোখ এড়িয়ে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে নেমে পড়েন ভাইসের অনুসন্ধানী দল।
হেলমান্দের প্রত্যন্ত শহর মুসা কালা। সেখানকার ব্যস্ত একটি মার্কেটে প্লাস্টিক ব্যাগে প্রকাশ্যেই বেচা হচ্ছে আফিম, অনেকটা শাকসবজি বিক্রির মতো। অন্যপাশে চলছে ফসল কাটার কাজ।
কিছুদিন আগেও তালেবানের শক্ত ঘাঁটি ছিল এই মুসা কালা শহর। আফগানিস্তানের অন্যসব গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মতো এখানে আমেরিকাবিরোধী মনোভাব প্রবল। এই অঞ্চলে বাড়ির বাইরে নারীর দেখা মেলা ভার।
আফিম ব্যবসা এই অঞ্চলে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এমন না যে কোনো মাফিয়া চক্র এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ বাসিন্দারাই এই ব্যবসায় জড়িত। এদের অনেকে সচ্ছল, অনেকে আবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন। যুবক, বৃদ্ধ এমনকি তালেবান… সবাই বেচছে আফিম।
মুসা কালার কাছে ঘান্দেই গ্রামের বাসিন্দা ইজবুল্লাহ। ২৮ বছরের ইজবুল্লাহ একটি পপিক্ষেতের মালিক। দিন শেষে শ্রমিকদের দেখতে এসেছেন তিনি।
ভাইসকে ইজবুল্লাহ বলেন, ‘এখানে এমন কোনো পরিবার নেই, যার অন্তত একজন সদস্য পপি ক্ষেতে কাজ করছেন না।
‘নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার কয়েক দিন পর তালেবানরা বাড়ি বাড়ি এসে আমাদের জানায়, আপাতত ফসল কাটুন। তবে পরবর্তীতে এসব বন্ধ করতে হবে।’
মসজিদ এবং বাজারেও ফলাও করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রচার করে তালেবান। তবে আফিমসহ অন্যসব মাদকের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়।
নুর আহমদ নামে এক পপিচাষি বলেন, ‘তারা (তালেবান) যদি পপি চাষ নিষিদ্ধ করে, তাহলে আমাদের কাছে অর্থ উপার্জন এবং পরিবারকে খাওয়ানোর অন্য কোনো উপায় থাকবে না।’
সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে কাজে নেমে পড়েন নুর আহমদ। তার দৈনিক মজুরদের মধ্যে আছে স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্ররাও; অল্প কিছু অর্থের জন্য মরিয়া তারা।
আফগানিস্তানের অর্থনীতি ভয়াবহ বিপর্যস্ত। চলছে দুর্ভিক্ষ। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলছে, ২ কোটি ২৮ লাখ (আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক) তীব্র খাদ্যসংকটে আছে।
স্থানীয়রা বলছে, পপি চাষে নিষেধাজ্ঞার প্রধান কারণ যুব সমাজ। তাদের বাঁচাতেই এই নিষেধাজ্ঞা। অন্য কারণটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেটি হলো বিদেশিদের খুশি করা।
পার্শ্ববর্তী কাজকি জেলায় ৪৪ বছরের এক পপিচাষি ভাইস ওয়ার্ল্ড নিউজকে জানায়, ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালেবান। তারা জনগণের কথা ভাবেনি।’
এর আগেও পপি চাষে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তালেবান, সেটা ২০০০ সালে। তবে তা কার্যকর ছিল কেবল এক মৌসুমে। নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নিয়ে কৃষকরা সন্দিহান।
৪৪ বছরের এক পপিচাষি বলেন, ‘এটি এক বছর স্থায়ী হতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত এটি সমস্যা সৃষ্টি করবে। নিষেধাজ্ঞার ফলে কৃষক এবং তালেবানদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।’
গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা নেয়ার আগেও পপি চাষে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু চাষিরা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে চালিয়ে যেতেন চাষাবাদ।
এখন প্রশ্ন হলো, এতসব সতর্কতা ও জনসংযোগের মধ্যেও নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিক তালেবানরা? কারণ পপি চাষ ছাড়া কৃষক ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হবে খোদ তালেবানরাও।
আফগানিস্তানের জিডিপির ১১ শতাংশ আসে আফিম থেকে। অনেকেই মনে করছেন, পশ্চিমাদের বাহবা পেতে এই আয় হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছে তালেবানরা।
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় বিপাকে আছেন কৃষকরা। তারা কাজ হারানোর পথে। আফিম চাষে অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন। এই চাষ বন্ধ হলে জমির মালিকরা অন্য ফসল চাষে ঝুঁকবেন। অনেক কৃষক কাজ হারাবেন। তাদের বাড়ি বা জমি থাকবে না।
আজরাত মোহাম্মদ নামে এক আফিমচাষি বলেন, আমি আবার রোপণের পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু তালেবানের নিষেধাজ্ঞার পর আমার ভাই আমাকে এ কাজে বাধা দেয়। কারণ ওদের শাস্তি ভয়াবহ।
আফগানিস্তানে পপি চাষের সময় পরিবর্তন হয়। উত্তর হেলমান্দের কাজকিতে পপি চাষের উপযুক্ত সময় এখনই। কিন্তু নিষেধাজ্ঞায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। ছোট ছোট বাচ্চা আছে। আশা করি আবার পপি চাষ করতে পারব।’
ধারণা করা হচ্ছে, পপি চাষ বন্ধে জমির মালিক কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের সরাসরি টার্গেট করতে পারে তালেবান। এতে পরিস্থিতি বড় সংঘাতে গড়াতে পারে।
কাজাকি জেলার তালেবান ডেপুটি গভর্নর মৌলভি নুরুল হক বলেন, ‘আমি একটি পপি ক্ষেতের মালিক। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর চাষ বন্ধ করে দিয়েছি।
‘সরকার পপির রাজস্ব প্রতিস্থাপনের জন্য বিকল্প ফসল এবং অন্যান্য সংকট সমাধানের ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে।’
আফগানিস্তানের দক্ষিণজুড়ে সূত্রগুলো বলছে, টম্যাটো, গম, চাল, তুলা, বাদাম, শসা, ভুট্টা এবং এমনকি জাফরান চাষ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। অনেকে আবার পোল্ট্রিসহ অন্যান্য ব্যবসার কথা ভাবছেন।
নুরুল হক বলেন, ‘এগুলো সংকট সমাধানের পথ হতে পারে। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে।’
ভাইস ওয়ার্ল্ড নিউজ আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে কৃষকরা তাদের শাসকদের সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।
তালেবানরা একটি সূক্ষ্ম পথে চলছে
কাজকি জেলার দেহ বাবা বাজারের রাস্তায় পশ্চিমা সাংবাদিক নিরাপদ নয়। তাই ভাইস নিউজ আফিম বিক্রেতাদের সঙ্গে গোপন এক জায়গায় দেখা করেন। সেখানে সবজির আড়ালে এবং মাটির দেয়ালের পেছনে আফিম লুকিয়ে রাখা আছে।
কাজাকির একজন প্রধান আফিম ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় ভাইসের। তিনি এই এলাকার আফিম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। একটি অন্ধকার ঘরে তাকে বসে থাকতে দেখা গেছে আফিম বিক্রির অপেক্ষায়।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘তালেবান সরকার যদি আমাদের বিকল্প না দেয়, তাহলে হয়তো জনগণ বিদ্রোহ করবে, যুদ্ধ করবে। কিন্তু যদি যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানে তবে তারা আমাদের অনেক অর্থ দেবে।’
স্থানীয় তালেবান নেতারা পিক-আপ ট্রাকে চেপে লাউডস্পিকারে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে তারা কাজাকির আফিম ব্যবসায়ীদের বিরক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, তালেবান স্থানীয়দের আফিম ব্যবসার অনুমতি দিলেও, কখনও কখনও তরুণ ডিলারদের গ্রেপ্তার করে তারা। এসব ডিলার হেলমান্দের দক্ষিণে মরুভূমি হয়ে পাকিস্তান সীমান্তের বরমচা বাজার থেকে আফিম নিয়ে আসেন।
গ্রেপ্তারের হুমকি সত্ত্বেও ডিলাররা চেকপোস্টসহ প্রধান সড়ক এড়িয়ে সীমান্তে আফিম আনতে থাকে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিকল্প রুট ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা প্রায় অসম্ভব।
আফিম প্রক্রিয়াকরণ ল্যাবগুলোও বন্ধ করে দিচ্ছে তালেবান। নিষেধাজ্ঞার পর মুসা কালা জেলার ২০টি ল্যাবের মধ্যে ১৮টিই বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা।
এতসবের পরও অনেকে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। হেলমান্দ নদীর তীর ঘেঁষে একটি পরিত্যক্ত বাগানে ল্যাব চালু রেখেছেন ৩০ বছরের এক ব্যবসায়ী। ভাইসকে তিনি জানান, ল্যাবে আফিমকে পেস্ট করা হচ্ছে। এতে পরিবহনের সময় ঝুঁকি কমে আসে।
রাতে কথা হয় মুসা কালার কাছের আরেকটি গ্রামের এক তালেবান নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে; যিনি একটি পপি ক্ষেতের মালিক।
তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিটি পরিবারের একটি পা তালেবানের মধ্যে, অন্যটি আফিম ব্যবসায়। হেলমান্দের অনেক অংশে বিশেষ করে মুসা কালায় প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন সদস্য আফিম বা পোস্ত ব্যবসায় জড়িত। অন্যজন তালেবানের হয়ে লড়াই করছেন।’
আফিম ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত তালেবান
গত শুক্রবার ঈদের ছুটির আগে এক বার্তায় তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা পপি চাষের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনরাবৃত্তি করেন। তবে এখন যেসব জমিতে পপি চাষ হচ্ছে, এসবের কী হবে তা স্পষ্ট করেননি তালেবানপ্রধান।
ওই বার্তায় আফগান জনগণ বিশেষ করে কৃষকদের বিকল্প জীবিকা ও চাষাবাদের সন্ধান করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন আখুনজাদা।
অতীতেও এমন আহ্বান এসেছিল তালেবানের পক্ষ থেকে। তবে বিকল্প ফসল চাষে তেমন আগ্রহ দেখায়নি আফগানরা। এ ছাড়া নতুন ফসল চাষে অর্থায়ন করতে পর্যাপ্ত তহবিলও নেই তালেবানের হাতে। তারা বিদেশি টাকা আসার বিষয়ে বাজি ধরছে।
ইনডিপেনডেন্ট কনসালটেন্ট ডেভিড ম্যানসফিল্ড দুই দশক ধরে আফগানিস্তানের অর্থনীতি এবং গ্রামীণ জীবিকা নিয়ে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আফিমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অলৌকিক ফসলের অনুসন্ধান বেশ কঠিন। গত ২০ বছরের প্রমাণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আফিম থেকে সরানোর জন্য কৃষকদের উন্নত নিরাপত্তা, শাসন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাকতালীয় অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, তালেবান কেবল বিদেশি আর্থিক সাহায্য টানার জন্য নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করছে।
এ প্রসঙ্গে ম্যানসফিল্ড বলেন, ‘সমালোচকরা এই নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখতে পারে। তবে তালেবানকে অর্থায়ন করা পশ্চিমাদের ভুল সিদ্ধান্ত হবে।
‘আফগানিস্তানে এর আগে অনেকবার এমনটা করা হয়েছে। তবে এটি কখনই ভালোভাবে শেষ হয় না। মাদক ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য ‘তাড়াহুড়ো বা চাপ প্রয়োগ করা উচিত না। নতুন সরকার এমন একটি কৌশল বেছে নিয়েছে যা জনগণকে আরও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে।’
আফগানিস্তানে নারীর প্রতি আইন আরও কঠোর করল দেশটির শাসনে থাকা তালেবানরা। নব্বইয়ের দশকের মতো আফগান নারীদের আপাদমস্তক বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। অর্থাৎ পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্দা করতে হবে নারীদের। নতুন এই আদেশে স্বাধীনচেতা অন্তত দুই কোটি আফগান নারীর স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে।
আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা ও তালেবানপ্রধান হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা শনিবার কাবুলে এক অনুষ্ঠানে এই আদেশ জারি করেন। এতে বলা হয়, ‘তাদের (নারী) চাদোরি (মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকা) পরা উচিত। কারণ এটি ঐতিহ্যবাহী এবং সম্মানজনক।’
গত আগস্টে কাবুল দখলের পর নারী অধিকার রক্ষায় সচেতন ভূমিকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তালেবান শাসকরা। কিন্তু ক্ষমতা পোক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসল রূপে ফিরতে থাকে উদ্রবাদী তকমা পাওয়া তালেবান।
নারীদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় চাকরির অধিকার, বন্ধ করে দেয়া হয় নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের পর নারী ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দেয় তালেবান।
বিবিসির খবরে বলা হয়, কোনো নারী আদেশ মানতে ব্যর্থ হলে, তার পুরুষ অভিভাবক তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবে। এতেও কাজ না হলে ভাইস অ্যান্ড ভার্টিউ মন্ত্রণালয় তাদের ডেকে পাঠাবে। এর পরও আদেশ মানতে রাজি না হলে পুরুষ অভিভাবককে তোলা হবে আদালতে। জেল হতে পারে তার তিন দিনের।
৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দুই দশক ধরে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল তালেবান।
নব্বইয়ের দশকের তালেবান শাসনে আফগান নারীরা মৌলিক অধিকারের গুরুতর অভাবে ভোগে। তারা পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না, বয়স আট পেরোনোর পর কাজ কিংবা শিক্ষাগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল।
শুধু তা-ই নয়, পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বারণ ছিল নারীদের। অথচ দেশটিতে চিকিৎসকের সংখ্যা হাতেগোনা। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতেন বেশির ভাগ আফগান নারী।
এ ছাড়া নেইল পলিশ দেয়ার কারণে এক নারীর আঙুল কেটে ফেলার ঘটনাও সে সময়ে স্বাভাবিক ছিল। এসব সাজা দেয়া হতো প্রকাশ্যে। পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ছিল আলোচিত।
তবে এবার ক্ষমতায় আসার পর তালেবানের বুলিতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আফগান নারীরা। তারা বলেছিল, নারীদের শিক্ষাগ্রহণ এবং কাজ করার অনুমতি দেবে তারা। গত ডিসেম্বরেই শাসকরা জানিয়েছিলেন ‘নারীরা সম্পত্তি নয়’। কিন্তু শাসনের ৯ মাসে একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভাঙতে দেখা গেছে তালেবানদের।
নব্বইয়ের দশকের কট্টর শাসনে পুরোপুরি ফিরে না গেলেও নারী অধিকারগুলো এক এক করে কেড়ে নিচ্ছে তালেবান।
মার্চে হঠাৎ করেই মেয়েদের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেয় তালেবান। আফগান মেয়েরা কেবল প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ হয় নারীর ওপর। বলা হয়, একজন পুরুষ আত্মীয় ছাড়া ৪৫ মাইলের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না কোনো নারী; সিনেমা এবং টিভি শোতে অংশ নিতে পারবেন না তারা। একই সঙ্গে পুরুষদের সঙ্গে বা সরকারে কাজ করার অনুমতি পাবেন না তারা।
এতসব কড়াকড়ি অবশ্য মাথা পেতে নিয়েছেন বেশির ভাগ আফগান। এর অন্যতম কারণ চার কোটি জনসংখ্যার আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশ মানুষই বাস করেন গ্রামে।
ইউএন উইমেন এবং লিঙ্গসমতা নিয়ে কাজ করা সংস্থা প্রমুন্ডোর ২০১৯ সালে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ১৫ শতাংশ আফগান পুরুষ বিশ্বাস করেন বিয়ের পর নারীদের কাজ করার অনুমতি দেয়া উচিত। অন্যদিকে দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ বলছেন, আফগান নারীদের ‘অত্যধিক অধিকার’ দেয়া হয়েছে।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, আফগান সমাজ ভীষণ পুরুষতান্ত্রিক। তবে পরিবার এবং ব্যক্তিক্ষেত্রে সম্প্রদায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গোত্রে এখনও নিজস্ব বিচারব্যবস্থা চালু আছে।
১৯৬৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধানে নারী অধিকারের বিষয়টি যুক্ত হয়। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়।
আরও পড়ুন:অবশেষে প্রকাশ্যে এলেন আফগান তালেবানদের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা। কান্দাহারের ঈদগাহ মসজিদে শনিবার কয়েক হাজার মুসল্লির সামনে বক্তব্য রাখেন তালেবানের এই শীর্ষ নেতা। শেষবার ২০১৬ সালে তাকে দেখা গিয়েছিল প্রকাশ্যে।
আখুনজাদা বলেন, ‘বিজয়, স্বাধীনতা এবং সাফল্যের জন্য অভিনন্দন। এই নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং ইসলামিক শাসন কায়েমের জন্য আপনাদের অভিনন্দন।’
গত আগস্টে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে কট্টর শাসনব্যবস্থার জন্য সমালোচিত হয়ে আসছে তালেবান। আমেরিকা রিজার্ভ জব্দ করে দেয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে তালেবান সরকার।
এই পরিস্থিতির মধ্যে তালেবান শাসকদের ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে চেপেছে অতর্কিত বোমা হামলা। জঙ্গি সংগঠন আইএস কয়েকটির দায় স্বীকার করেছে। সংগঠনটি বলছে, তাদের টার্গেট শিয়া এবং সুফি মতাবলম্বীরা।
রমজানের শেষ দুই সপ্তাহে হামলা হয়েছে বেশি। সর্বশেষ শুক্রবার কাবুলে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের ওপর বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হন। পুলিশ স্টেশন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও চলছে হামলা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট বলছে, ভিড় এড়াতে কান্দাহারে মুসল্লিদের সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আখুনজাদা। তার কাছে সাংবাদিকদের যেতে দেয়া হয়নি। ২ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেছিলেন আখুনজাদা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরোটা সময় তার মাথার ওপর দুটি হেলিকপ্টার ঘোরাঘুরি করছিল।
আফগানিস্তানজুড়ে ধারাবাহিক হামলায় আতঙ্কে আছেন সাধারণ বাসিন্দারা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, লোকজন ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
কাবুলের বাসিন্দা আহমাদ শাহ হাশেমি বলেন, ‘আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে মসজিদে যা ঘটেছিল তার পর। অনেক যুবক ও বৃদ্ধ শহীদ হয়েছেন। আফগানিস্তানের জনগণের দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই।’
আখুনজাদার আকস্মিক প্রকাশ্যে আসায় তালেবান সরকারে তার ভূমিকা নিয়ে জল্পনাগুলোর অবসান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এমনকি তার মৃত্যুর গুজবও।
আখুনজাদার বয়স এখন ৭০, বেশির ভাগ সময় থাকেন কান্দাহারে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ঘটনায় অডিওবার্তা পাঠিয়ে থাকেন তিনি।
পাকিস্তানে ২০১৬ সালে আমেরিকার ড্রোন হামলায় তালেবানের শীর্ষ মোল্লা আক্তার মনসুর নিহত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হন আখুনজাদা।
গত শুক্রবার এক অডিওবার্তায় আফগানিস্তানে হামলার বিষয়টি উল্লেখ না করে শক্তিশালী ইসলামি ও জাতীয় সেনাবাহিনী এবং শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা গঠনে তালেবানের প্রশংসা করেন আখুনজাদা। এ সময় তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মসজিদে হামলায় অর্ধশতাধিক নিহতের ঘটনার এক দিন পর আবারও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার একটি যাত্রীবাহী ভ্যানে এই হামলায় একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ঈদুল ফিতরের ছুটির মধ্যেই পরপর দুই দিনের হামলায় শঙ্কা বেড়েছে তালেবানশাসিত দেশটিতে। এবারের হামলার দায় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আলী মাইসাম বলেন, রক্তাক্ত ও পুড়ে যাওয়া অবস্থায় কয়েকজনকে মিনিবাস থেকে বের হতে দেখেছি। নিহতদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর জিকিরে অংশ নেয়া মুসল্লিদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে অর্ধশতাধিক নিহত ছাড়াও আহতদের মধ্যে ৭৮ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমুখপাত্র বেসমুল্লা হাবিব জানান, শুক্রবার বিকেলে রাজধানী শহরের পশ্চিমে খলিফা সাহেব মসজিদে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় মুসল্লিরা মসজিদে জুমার নামাজ শেষে জিকিরে অংশ নিতে সমবেত হয়েছিলেন।
ক্ষমতাসীন তালেবানের একজন মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগানিস্তানে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে বহু আফগান বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এসব হামলার কয়েকটির দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট।
তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে তারা দেশটিকে সুরক্ষিত করেছে এবং ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখাগুলোকে অনেকাংশেই নির্মূল করতে পেরেছে। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটিতে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
অনেক হামলায় শিয়া সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে সুন্নি মসজিদেও হামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি মসজিদে শক্তিশালী বিস্ফোরণে ৫০ জনের বেশি মুসল্লি নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৭৮জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর জিকিরে অংশ নেয়া মুসল্লিদের লক্ষ্য করে এই বোমা হামলা চালানো হয়।
পবিত্র রমজান মাসে আফগানিস্তানে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক হামলার সর্বশেষ ঘটনা এটি। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করেনি।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র বেসমুল্লা হাবিব জানান, শুক্রবার বিকেলে রাজধানী শহরের পশ্চিমে খলিফা সাহেব মসজিদে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় মুসল্লিরা মসজিদে জুমার নামাজ শেষে জিকিরে অংশ নিতে সমবেত হয়েছিলেন।
সুন্নি ওই মসজিদটিতে জুমার নামাজের পর জিকিরের জন্য সমবেত মুসল্লিদের ওপর এ হামলা হয়।
মসজিদের ইমাম সৈয়দ ফজিল আগা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘ওই জমায়েতে কোনও আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ঢুকে পড়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
‘বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে চারদিক কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। আর মুসল্লিদের দেহগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। নিহতদের মধ্যে আমার ভাগ্নেরাও ছিল। আমি নিজে বেঁচে গেছি, কিন্তু প্রিয়জনকে হারিয়েছি।’
মোহাম্মদ সাবির নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি একের পর এক আহতকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে দেখেছি। বিস্ফোরণটির শব্দ ছিল ভয়াবহ। আমি ভেবেছিলাম আমার কানের পর্দা ফেটে গেছে।’
কাবুলের শহরতলির ইমার্জেন্সি হসপিটাল জানিয়েছে, সেখানে ২১ জন আহতকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর দুইজন হাসপাতালে পৌঁছানোর সময়ই মারা গেছেন।
হাসপাতালের একজন নার্স জানান, চিকিৎসাধীন আহত কয়েকজনের অবস্থা খুবই গুরুতর।
হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৩০টি লাশ নেয়া হয়েছে বলে জানান এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
অন্য হাসপাতালের এক কর্মী জানান, সেখানে ৪৯ জন রোগী এবং পাঁচজনের মরদেহ রয়েছে। আহতদের মধ্যে দশজনের অবস্থা গুরুতর। প্রায় ২০জনকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত ৬৬ জনের মরদেহ নেয়া হয়েছে। চিকিৎসার জন্য ভর্তি রয়েছে ৭৮জন।
ক্ষমতাসীন তালেবানের একজন মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগানিস্তানে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে বহু আফগান বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এসব হামলার কয়েকটির দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
ইমার্জেন্সি হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা শুধু এপ্রিল মাসেই কাবুলে হামলায় আহত শতাধিক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছে। সর্বশেষ হামলাটি হলো ঈদের ছুটির শুরুতে। পবিত্র জুমাতুল বিদার দিনে।
ক্ষমতাসীন তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে তারা দেশটিকে সুরক্ষিত করেছে এবং ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখাগুলোকে অনেকাংশেই নির্মূল করতে পেরেছে। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটিতে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
অনেক হামলায় শিয়া সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে সুন্নি মসজিদেও হামলা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরিফে শিয়া মুসলমানদের বহনকারী দুটি যাত্রীবাহী ভ্যানে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত নয়জন নিহত হন। গত শুক্রবার, কুন্দুজ শহরে জুমার নামাজের সময় একটি সুন্নি মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত হন ৩৩ জন।
মন্তব্য