সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে পশ্চিম তীরে ১৪ বছরের কিশোরসহ মারা গেছে পাঁচ ফিলিস্তিনি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বুধবার ইসরায়েলি অভিযানে মারা গেছে তিনজন ও বৃহস্পতিবার মারা গেছে দুজন।
এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের গুলিতে একজন ১৪ বছরের ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, নিহত ফিলিস্তিনি কিশোর তাজা গোলাবারুদে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের চেষ্টা করছিল। তাই সেনারা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সেনাদের সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে ফিলিস্তিনিরা। এ সময় ইসরায়েলি সেনাদের গুলির শব্দও শোনা যায়।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বুধবার ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৩৪ বছর বয়সী আইনজীবী মোহাম্মদ হাসসান মোহাম্মদ আসসাফ।
আইনজীবী হিসেবে আসসাফ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারত্বের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) হয়ে কাজ করতেন।
এ ছাড়া ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ৩৬ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে যেসব ফিলিস্তিনি ইসরায়েলে হামলা চালাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, তারাও রয়েছে।
এদিকে মার্চ থেকে ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ তেলআবিবে হামলায় ইসরায়েলি হতাহতের ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট সব নিরাপত্তা বাহিনীকে হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন।
শুক্রবার তেলআবিবের বিনোদন এলাকায় এক ফিলিস্তিনির হামলায় তিন ইসরায়েলি নিহত এবং ১৬ জন আহত হওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ নেয়া হলো।
ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, সেদিন রাতে জনাকীর্ণ বার ও রেস্টুরেন্টগুলোয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলাকারী ফিলিস্তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় এরই মধ্যে প্রায় ২০০ জনকে আটকের বিষয়টি জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ। তিনি বলেন, প্রয়োজনে হাজারও লোককে আটক করা হবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরের উত্তর দিকে প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। এ ছাড়া এক হাজার ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য তেলআবিবে অভিযান পরিচালনা করছে।
মোট আহত ১৬ জনের মধ্যে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আটজন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। বাকি আহত আটজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে তেলআবিবে হামলাকারী হাজেমের বাবা ফাতি হাজেম আল জাজিরাকে বলেছেন, এই তরুণরা সব আশাই হারিয়ে ফেলছে। কোনো চাকরি নেই, ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়মিত হামলা, অনেক সহকর্মী, বন্ধু ও প্রতিবেশী হারিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একটি মোটেলে বন্দুক নিয়ে খেলার সময় গুলিতে এক বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ওই শিশুটির দুই বছর বয়সী বোন। বন্দুকটি ছিল আট বছর বয়সী একটি ছেলেশিশুর বাবার।
এ ঘটনায় ওই ছেলেশিশুর বাবা রোডেরিক ডায়নে র্যানডেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এসক্যাম্বিয়া কাউন্টির পুলিশপ্রধান চিপ সাইমন্স বলেন, ‘একজন আসামির বন্দুক রাখার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৫ বছর বয়সী র্যানডেলকে। তার বিরুদ্ধে অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ নষ্ট করা, আগ্নেয়াস্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা ও হেয়ালিপনার অভিযোগ আনা হয়েছে।’
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশপ্রধান জানান, ফ্লোরিডার একটি মোটেলের রুমে আট বছরের এক শিশুর হাতে ছিল তার বাবার বন্দুক। গুলিভর্তি বন্দুকটি নিয়ে অন্য দুই শিশুর সঙ্গে খেলায় মেতেছিল সে। এ সময় হঠাৎ একটি গুলি সরাসরি বিদ্ধ হয় এক বছরের একটি শিশুর শরীরে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আহত হয় তাদের সঙ্গে খেলারত দুই বছরের আরেকটি শিশু।’
গুলির সময় মোটেলের অন্য কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন র্যানডেল ও তার বান্ধবী।
আট বছরে ছেলেশিশুটির বাবা হলেন র্যানডেল। আর এক ও দুই বছর বয়সী কন্যাশিশু দুটির মা হচ্ছেন র্যানডেলের বান্ধবী। গুলিতে নিহত শিশুটির নাম ‘কাচে ব্যাস’।
পুলিশ জানায়, ওই দুই শিশুর মাকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়নি।
র্যানডেল তার অস্ত্রটি শিশু তিনটি যে রুমে খেলছিল সেখানে একটি আলমারিতে রেখেছিলেন। র্যানডেলের ছেলে অস্ত্রটি খুঁজে পায় এবং অন্য শিশু দুটির সঙ্গে তা দিয়ে খেলতে শুরু করে। এ সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
গুলির শব্দ শুনে র্যানডেল শিশুদের রুমটিতে আসেন এবং অস্ত্রটিসহ এক ব্যাগ সন্দেহভাজন মাদক সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেন।
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘এভাবে অবহেলায় আমরা আমাদের সন্তানদের প্রতিপালন করতে চাই না, তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে চাই না। এটি খুবই হতাশাজনক এবং অপ্রত্যাশিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘র্যানডেলের বিরুদ্ধে রয়েছে ১২৯ পৃষ্ঠার অপরাধের দলিল। এগুলোর মধ্যে ১৪টি বড় ধরনের অপরাধ। ৪১ হাজার ডলার বন্ড দিয়ে জামিনে রয়েছেন তিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ‘শিশুর প্রতি অন্যায় ও খামখেয়ালির অপরাধে গত সপ্তাহে এক মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ওই মা তার এক বছর বয়সী ছেলেসন্তানকে গাড়িতে আটকিয়ে রেখে বারে যান। এ সময় গাড়ির সব উইন্ডোজ বন্ধ ছিল। ম্যাডিসন হ্যালি হার্ট নামের ২৭ বছর বয়সী ওই নারীকে সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুরতার অপরাধে কারাগারে পাঠানো হয়।’
অস্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন এভরিটাউন ফর গান সেফটির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ১৮ বছরের নিচের শিশুদের মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে কমপক্ষে ৩৯২টি গুলির ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। পশ্চিমা বাধা উপেক্ষা করে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরিকল্পনা বুঝতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের।
এমন পরিস্থিতিতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জি-সেভেনের সম্মেলন চলাকালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দাবি করেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নারী হলে ইউক্রেন আক্রমণ করতেন না।
বরিস বলেন, ‘যদি পুতিন একজন নারী হতেন, স্পষ্টই তিনি তা নন, কিন্তু তিনি যদি হতেন, আমি সত্যিই মনে করি না যে তিনি আক্রমণ ও সহিংসতার জন্য একটি পাগলাটে যুদ্ধ শুরু করতেন।’
তার মতে, ইউক্রেনে আক্রমণ বিষাক্ত পুরুষত্বের একটি নিখুঁত উদাহরণ। তাই তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পদগুলোতে নারীদের যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের চার মাস হয়ে গেলেও যুদ্ধ সমাপ্তির কোনো লক্ষণ নেই। ন্যাটো বলছে, যুদ্ধ দীর্ঘ হবে।
তবে জি-সেভেনের নেতারা মরিয়া হয়ে চাইছেন ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি, এমনটাই জানিয়েছেন বরিস জনসন। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, সহসা যুদ্ধ অবসানে কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই।
তবে জনসনের মতে, পশ্চিমাদের উচিত হবে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়া। ফলে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে জেলেনস্কি ভালো অবস্থানে থাকবেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
দোনবাসের বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসার প্রতিষ্ঠিত অনুসন্ধানী সংবাদ পোর্টালের ওয়েবসাইট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
মারিয়া রেসার প্রতিষ্ঠিত ‘র্যাপলার হল’ প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সমালোচনা করা গুটিকয়েক মিডিয়া আউটলেটের একটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত এমন সময় নিল, যখন দুতার্তে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার এ মাসেই অর্পণ করতে যাচ্ছেন মে মাসের নির্বাচনে বিজয়ী ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের কাছে। রাজনীতির মাঠে দুতার্তে ও ফার্দিনান্দ মিত্র হিসেবেই পরিচিত।
তবে সহজে হাল ছাড়ছে না র্যাপলার। বুধবার সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবে।
তবে দুতার্তের সমালোচনার কারণে মিডিয়া আউটলেটের ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়নি বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ।
ফিলিপাইন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, একটি আপিলের ভিত্তিতে কোম্পানি পরিচালনার লাইসেন্স প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কারণ আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌছেছে যে র্যাপলারের ব্যবসায়িক মডেল অসাংবিধানিক।
র্যাপলার হলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ফিলিপাইনের গণমাধ্যমে বিদেশি মালিকানার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে সংস্থাটি একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজের নিয়ন্ত্রণ বিক্রি করেছিল।
তবে র্যাপলার বলছে, তারা ২০১৫ সালে ওমিদার নেটওয়ার্কের থেকে তহবিল পেয়েছিল। এই নেটওয়ার্ক একটি জনকল্যাণমূলক বিনিয়োগ সংস্থা। ‘ই-বে’র প্রতিষ্ঠাতা বিলিয়নিয়ার পিয়ের ওমিদার এ সংস্থাটি জনহিতৈষী কাজের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন।
এর ঠিক তিন বছর পরই র্যাপলার-কর্মীদের পুরো বিনিয়োগের অর্থ পুরোপুরি দিয়ে দেয় ওমিদার নেটওয়ার্ক। এ ঘটনাই প্রমাণ করে, র্যাপলারের ব্যবসায় ওমিদার নেটওয়ার্ক কোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নয়।
র্যাপলারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক আদেশ র্যাপলার বন্ধ করার বিষয়টি কার্যকরভাবে নিশ্চিত করেছে।
যদিও মারিয়া রেসা মঙ্গলবার এক মিডিয়া কনফারেন্সে বলেছিলেন যে সাইটটি বন্ধ হবে না।
গত বছর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে র্যাপলারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মারিয়া রেসা রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় ফিলিপাইনের নাম রয়েছে।
২০১৬ সালে ফিলিপাইনের ক্ষমতায় বসেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে। এর পরই রেসা ও তার প্রতিষ্ঠান র্যাপলারকে বেশ কয়েকটি মামলার মুখে পড়তে হয়। বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে রেসাকে হুমকিসহ অবমাননাকর বার্তাও পাঠানো হয়।
র্যাপলারকে ‘ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ হিসেবে দেখেন দুতার্তে।
আরও পড়ুন:ন্যাটো সদস্য হওয়ার জন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দেবে তুর্কিয়ে। তুর্কিয়ের এ সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের ন্যাটোতে যোগদানের সবচেয়ে বড় বাধার অবসান হলো।
পশ্চিমা এই সামরিক জোটের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগ দিতে হলে প্রতিটি দেশের সমর্থন লাগবে। কোনো একটি ন্যাটোভুক্ত দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগদানের বিষয়ে ভেটো প্রদান করলেই দেশ দুটির ন্যাটোতে যোগদান স্থগিত হয়ে যাবে। সে কারণে তুর্কিয়ের সমর্থন দুই দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের তুরস্কে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে সুইডেন চেষ্টা বাড়াতে সম্মত হয়েছে এবং সুইডেন ও ফিনল্যান্ড দুই দেশই তুরস্কের ওপর দেয়া অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হয়েছে।
ফলে আঙ্কারা সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যোগদান সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড থেকে যা পাওয়ার ছিল তা তুর্কিয়ে পেয়েছে।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নিনিস্তো বলেছেন, তিনটি দেশের যৌথ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছে, যেখানে একে অপরের নিরাপত্তার হুমকির বিরুদ্ধে পূর্ণ সমর্থন দেবে।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাগদালেনা অ্যান্ডারসন বলেছেন, এটি পশ্চিমা জোট ন্যাটোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছিলেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্য পদের আবেদনের বিরোধিতা করবে তুর্কিয়ে এবং আঙ্কারাকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে রাজি করাতে যেকোনো চেষ্টা নিষ্ফল হবে।
এরদোগান ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সম্পর্কে বলেছিলেন, দুই দেশই তুর্কিয়েতে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ও পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (ডিএইচকেপি/সি) নিরাপদ অতিথিশালা।
তুর্কিয়ে এই দুই সংগঠনকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
যদিও ন্যাটোর জেনারেল মিরসিয়া জিওনা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে তুরস্ককে এই ইস্যুতে রাজি করানো যাবে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে দুই নরডিক দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দুই দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দুই দেশকেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছিল, ফিনল্যান্ডের এমন পদক্ষেপ রুশ-ফিনিশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি উত্তর ইউরোপের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ফিনল্যান্ডকে নিরপেক্ষ দেশের ভূমিকায় থাকতে বাধ্য করার জন্য রাশিয়া সামরিক প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য বিকল্প উপায়ে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
তবে ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের কারণে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে মস্কো ঠিক কী কী পদক্ষেপ নেবে, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি দেশটির সাম্প্রতিক দেয়া বিবৃতিতে।
এর আগেও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেয়, তবে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে।
রুশ নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ এর আগে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, দুই দেশ যাতে বাস্তবতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যথায় বাড়ির পাশে পরমাণু অস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বসবাস করতে হবে তাদের।
এ ছাড়া ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ন্যাটোর সম্প্রসারণ কীভাবে কার্যকর হয় এবং তা রুশ সীমান্তের কতটা কাছে চলে আসে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’
ফিনল্যান্ডে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রাও নরডিক। যদিও বলা হচ্ছে, দেশটির ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়নি। পাওনা টাকা নিয়ে জটিলতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাও নরডিক।
তবে ফিনল্যান্ড বলছে, রাশিয়া দেশটির চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ফলে ফিনল্যান্ড বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ আনতে পারবে। এটি দেশটির জন্য খুব একটা চাপ নয়।
আরও পড়ুন:ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের ও সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি একটি অপদার্থ দল।’
আসানসোলে মঙ্গলবার এক কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলেন।
বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘যখন আপনাদের নেতারা ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বলেন, ঘৃণা ছড়ান, তখন আপনারা তাদের গ্রেপ্তার করেন না। আর আমরা কথা বললে খুনি বানিয়ে দেন। জুবায়েরকে কেন গ্রেপ্তার করলেন? তিস্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? ওরা কী করেছেন? গোটা দুনিয়া এর নিন্দা করছে।’
AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়েরকে সোমবার গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন খবরকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন এই জুবায়ের। দিল্লি পুলিশের তরফে বলা হয়, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলে জুবায়েরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে গুজরাট এটিএস মুম্বাইয়ের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মহানবীকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার নাম উল্লেখ না করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমি নাম নেব না। আমরা নাম নিতে চাই না। কিন্তু যারা ধর্ম তুলে গালাগালি করেন, তাদের আপনারা গ্রেপ্তার করেন না কেন? তবে আমাদের সরকার তাকে সমন পাঠিয়েছে। আমরা ছাড়ব না।’
আরও পড়ুন:ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে ক্ষমতাসীন বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে খুন হয়েছেন এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে। তাদের রাজসমন্দ জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজস্থানের উদয়পুরে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি পেশায় দর্জি। তার শিরোশ্ছেদ করা হয়।
এক টেলিভিশন বিতর্কে গত মাসের শেষ দিকে মহানবীকে নিয়ে নূপুর শর্মা এমন এক মন্তব্য করেন, যা ভারতের মুসলিমদের পাশাপাশি গোটা মুসলিম বিশ্বকে চরম ক্ষুব্ধ করে। বাধ্য হয়ে তাকে মুখপাত্রের পদ থেকে বহিষ্কার করে বিজেপি। জোরদার করা হয় তার নিরাপত্তা।
মঙ্গলবারের ঘটনায় শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাজস্থানজুড়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে জারি হয়েছে এক মাসের ১৪৪ ধারা।
এডিজি ’ল অ্যান্ড অর্ডার হাওয়া সিং ঝুমারিয়া বলেছেন, ‘জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৬০০ পুলিশ সদস্যকে উদয়পুরে পাঠানো হচ্ছে। রাজস্থান সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত দুজন কানহাইয়ালাল নামে পরিচিত এক দর্জির সঙ্গে কাপড়ের মাপ দেয়ার কথা বলে দেখা করেছিলেন। তাদের একজনের করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দর্জি এক ব্যক্তির মাপ নিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর ব্যক্তিটি একটি ক্লেভার বের করে দর্জির ঘাড়ে আঘাত করেন। এমন সময় দর্জিকে বলতে শোনা যায়, ‘কেয়া হুয়া বাতাও তো সাহি (কী হয়েছে? আমাকে বলুন!)’
দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, একজন নিজেকে মোহাম্মদ রিয়াজ বলে পরিচয় দেন, অন্যজন তার বন্ধু। এই ‘শিরোশ্ছেদ’ নিয়ে গর্ব করতে দেখা যায়। পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি ‘একটি সতর্কবাণী’ দেন তারা।
এক টুইটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, ‘আমি উদয়পুরে এক যুবকের জঘন্য হত্যার নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িত সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ অপরাধের তলানিতে যাবে।
‘আমি সব পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাই। এ ধরনের জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে কঠোরতম শাস্তি দেয়া হবে। এই পরিস্থিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়া উচিত।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গেহলট বলেন, ‘এসব ভিডিও শেয়ার না করার আহ্বান জানাচ্ছি। শেয়ার করলে অপরাধীদের সমাজে ঘৃণা ছড়ানোর উদ্দেশ্য সফল হবে।’
চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে না ন্যাটো। তবে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির উষ্ণ সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোটটি।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে না ন্যাটো। তবে ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে মস্কো-বেইজিং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে আমরা চিন্তিত।’
মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলনের ফাঁকে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমরা চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে গণ্য করি না। চীন শিগিরই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোতে তাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।
‘তবে আমরা হতাশ হয়েছি। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করতে পারেনি চীন। তারা ন্যাটো, পশ্চিমাদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা আখ্যান ছড়িয়ে দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, চীন ও রাশিয়া এখন অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ।’
ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার বিপক্ষে ভোট দেয় চীন। এতে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিশ্ব নেতারা।
এমনকি এই ইস্যুতে রাশিয়ার কোনো নিন্দাও জানায়নি। উল্টো জ্বালানি রপ্তানিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা খাওয়া রাশিয়ার তেল কেনার আভাস দিয়েছে বেইজিং।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য