ইরানের আপত্তি পাশ কাটিয়ে সৌদি আরব ও কুয়েত গ্যাসক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে। আর এ জন্য প্রয়োজন আলোচনা। তাই ইরানকে ডেকেছে দেশ দুটি। কারণ এই অঞ্চলের মালিকানার অন্যতম দাবিদার ইরান।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, আরাশ/ডোরা সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য উপসাগরীয় মিত্ররা তাদের পুরোনো চুক্তিকে সম্মান জানাবে, যেটিকে ইরান ‘অবৈধ’ বলে দাবি করেছে।
‘সৌদি আরব ও কুয়েত এই এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করবে। তাই যে বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, তা বহাল থাকবে।’
এই বিবৃতির পাশাপাশি সমুদ্র সীমানা নিয়ে আলোচনার জন্য ইরানকে নতুন করে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। সীমান্তসংক্রান্ত এই জটিলতা কয়েক দশকের।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব ও কুয়েত এখানে একপক্ষ। চুক্তি পুনর্বহালে আলোচনার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চের শেষদিকে তেহরান জানিয়েছিল, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। তাই ওই অঞ্চলের অধিকার তাদেরই থাকবে।
ব্যর্থ আলোচনা
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই পরিস্থিতে বিভিন্ন দেশ জ্বালানির ভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজছে। দূরদর্শিতার অভাবে ইউরোপের দেশগুলোর যে এখন ধুঁকছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়েছে অনেকেই।
এই অঞ্চলের সীমানা নিয়ে বৈরিতার শুরু ষাটের দশকে। সে সময় ইরান ও কুয়েত সমঝোতার ভিত্তিতে অঞ্চলের একটি অংশকে সাবেক অ্যাংলো-ইরানীয় তেল কোম্পানিকে অন্যটি রয়্যাল ডাচ শেলকে দিয়েছিল।
অঞ্চলের উত্তর অংশ তখন অগোচরে থেকে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে পুনরুদ্ধারযোগ্য মজুত প্রায় ২২০ বিলিয়ন ঘনমিটার (সাত ট্রিলিয়ন ঘনফুট)।
ইরান ও কুয়েত বিতর্কিত সামুদ্রিক সীমান্ত এলাকা (প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ অঞ্চল) নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা করেও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
২০০১ সালে সেখানে খনন শুরু করে ইরান। সে সময় তারা কুয়েত এবং সৌদি আরবকে একটি সামুদ্রিক সীমান্ত চুক্তিতে ডেকে আনে। চুক্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান করতে পারবে সৌদি আরব ও কুয়েত।
কুয়েত চলতি বছরের মার্চে জানিয়েছিল, এই ক্ষেত্র থেকে দিনে ৮৪ হাজার ব্যারেল কনডেনসেটসহ এক বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ইরান-সৌদি আলোচনা
ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এসএনএসসি) একটি সংবাদ আউটলেট গত মার্চে একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। সেখানে বলা হয়, ইরান কারণ উল্লেখ না করেই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের সঙ্গে একতরফাভাবে আলোচনা স্থগিত করেছে।
রিয়াদ ও তেহরানের আশা, কেবল আলোচনাই পারে বছরের পর বছর ধরে চলা উত্তেজনা কমাতে। যদিও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রত্যাশা কমে গেছে।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটে ২০১৬ সালে। সে বছর রিয়াদে এক শিয়া আধ্যাত্মিক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষুব্ধরা হামলা চালিয়ে বসে।
ইরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে বিশ্বনেতাদের যখন চাপ দিচ্ছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, সে সময় ওয়াশিংটনকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছিল সৌদি আরব। এ ছাড়া ২০১৯ সালে সৌদির একটি তেল স্থাপনায় হামলার জন্য তেহরানকে দায়ী করে আসছে রিয়াদ।
ইয়েমেন ইস্যুতেও দেশ দুটির অবস্থান বিপরীত। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ২০১৫ সাল থেকে বিমান হামলা চালাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। অন্যদিকে অস্ত্র ও অর্থ নিয়ে হুতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান।
আরও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত করা সন্দেহভাজন যুবক হাদি মাতারের নামে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের চৌতাউকা কাউন্টির প্রসিকিউটর জানিয়েছেন হামলাকারী হাদি মাতারকে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সব ধরনের জামিন বাতিল করা হয়েছে।
মাতারের বিরুদ্ধে একটি স্থানীয় শিক্ষাকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মঞ্চে দৌড়ে সালমান রুশদি এবং তার সাক্ষাৎকারকারীর ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুক্রবার ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত রুশদির সার্জারির পর তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। লেখকের অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।
৭৫ বছর বয়সী সালমান রুশদি তার উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বছরের পর বছর হত্যার হুমকি পেয়ে এসেছেন। বইটিকে অনেক মুসলমান ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা বলে মনে করেন।
চৌতাউকা ইনস্টিটিউশনে হামলার কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ থেকে মাতারকে আটক করা হয়।
হামলার পরদিন স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হয় তাকে। এ সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। সন্দেহভাজন হাদি মাতারের মুখে মাস্ক ও পরনে ছিল কারাগারের পোশাক।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেসন এসমিডট একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘এটি একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায় মাত্র।’
স্থানীয় সময় শুক্রবার সালমান রুশদির ওপর হামলায় জড়িত অভিযোগে হাদি মাতারকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করে পুলিশ।
তার বইয়ের এজেন্ট এন্ড্রু ওয়াইলি জানিয়েছেন, সম্ভবত তিনি এক চোখ হারিয়েছেন। রুশদির অবস্থা ভালো নয়।
আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুলিশের হাতে আটক হাদি মাতারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় হলেও তিনি নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকায় বসবাস করছিলেন।
হাদির জন্মের আগে তার বাবা-মা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ইয়ারুন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। ইয়ারুন পৌরসভার প্রধান আলী কাসেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লেবাননের সংবাদপত্র ডেইলি আন-নাহারকে তিনি বলেন, হাদির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, তিনি কখনও ইয়ারুনে আসেননি।
এর আগে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রুশদির অবস্থা দেখে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হবে হাদির বিরুদ্ধে।
হাদি মাতারের আগের রেকর্ড জানতে এবং হামলার উদ্দেশ্য বের করতে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহায়তা চেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।
নিউ ইয়র্ক পুলিশের মেজর ইউজিন স্ট্যানিসজেউস্কি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ছুরিকাঘাতের উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদির অ্যাকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি শিয়া চরমপন্থা এবং ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রতি সহানুভূতিশীল।
হাদির ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়েও তথ্য পেয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।
নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনের শুক্রবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালান হাদি মাতার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুশদিকে ২০ সেকেন্ডে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলার পর রুশদি তৎক্ষণাৎ মেঝেতে পড়ে যান। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লেখককে ঘিরে ফেলেন। অনুষ্ঠানে আনুমানিক আড়াই হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রুশদিকে মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয় এবং তিনি তার রক্তের ওপরই লুটিয়ে পড়েন।’
হামলায় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসও মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন। রিস একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা; যা নিপীড়নের হুমকির মধ্যে থাকা নির্বাসিত লেখকদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন এই লেখক।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এই বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশনার পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকও।
আরও পড়ুন:এখন থেকে ট্যুরিস্টসহ যেকোনো ধরনের ভিসাতেই সৌদি আরব গেলে ওমরাহ পালন করা যাবে। সেই সঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জন্য মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে প্রবেশে বাড়তি কোনো অনুমতি নিতে হবে না।
দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এমন সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরব তাদের নেয়া ভিশন ২০৩০ সামনে রেখে আমলাতন্ত্রকে সহজ করতে ও হজযাত্রীদের দেশটিতে আরও বেশি আকৃষ্ট করতে এমন বিভিন্ন সুবিধা দেবে।
সে কারণে চলতি বছরের ওমরাহকে সামনে রেখে, হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা, সর্বোচ্চ পরিষেবা দেয়া এবং হজের অভিজ্ঞতাকে আরও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ করতেই হজ মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিল।
দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলছে, বিশ্বের ৪৯ দেশের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসার সুবিধা দেবে তারা। দেশগুলো থেকে অনলাইনে ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, ই-ভিসার আবেদনের পর যারা যোগ্য বিবেচিত হবেন তাদের সৌদি বিমানবন্দর থেকেই ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং শেনজেন ভিসাধারীরা সৌদি আরবে গিয়ে ঘোরাফেরার পাশাপাশি চাইলে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।
এমনকি যারা পরিবার ভিসাতে সৌদি যাবেন, তারাও ওমরাহ পালনের জন্য 'ইতমারনা অ্যাপে' ওমরাহ পালনের আবেদন করতে পারবেন।
অনুমতি ছাড়াই শিশুরা প্রবেশ করতে পারবে গ্র্যান্ড মসজিদে
কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই এখন থেকে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।
এক টুইটে মন্ত্রণালয় জানায়, ‘কোনো অনুমতি ছাড়াই এখন থেকে পিতামাতারা তাদের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের গ্র্যান্ড মসজিদের ভেতর নিয়ে যেতে পারবেন।’
যদিও পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের ‘ইতমারনা অ্যাপের’ মাধ্যমে আবেদন করে পবিত্র এই স্থানটিতে প্রবেশের অনুমতি নিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর কাবা শরিফের চারপাশে প্রতিবন্ধকতা দিয়েছিল সৌদি সরকার। বাইরের দেশের জন্য বন্ধ ছিল হজ পালনও। চলতি বছর থেকে কিছুটা বড় পরিসরে আবারও হজ আয়োজন শুরু করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আর চলতি মাসের শুরুতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে কাবার সামনে দেয়া প্রতিবন্ধকতাও।
এ ছাড়া ওমরাহ ও হজকে নিরাপদ এবং হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথাও জানিয়েছে দেশটির হজ মন্ত্রণালয়।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাদের যে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন, সে সময়ের মধ্যে দেশটিতে বছরে তিন কোটি জনকে হজ ও ওমরাহ পালনের সুযোগ দিতে চান।
আর এর মাধ্যমে দেশটি বছরে ১৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করেছে।
আরও পড়ুন:পশ্চিম তীরের নাবলুসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় সিনিয়র এক কমান্ডারসহ তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে খবর ছিল শহরের একটি ভবনে অবস্থান করছে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের কমান্ডার ইব্রাহিম আল-নাবুলসি। তারা সেখানে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। কয়েক ঘণ্টার বন্দুকযুদ্ধে ইব্রাহিমসহ তিনজন নিহত হন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৩০ বছরের ইব্রাহিম আল-নাবুলসির সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন ইসলাম সাব্বুহ এবং হুসেইন জামাল তাহার নামে দুই সঙ্গী। অভিযানে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন, চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আল জাজিরার জন হলম্যান বলেন, ‘আল-নাবুলসি নিহত হওয়ার আগে ‘আত্মসমর্পণ’ করতে অস্বীকার করেছিলেন।
‘ওনাকে ধরার চেষ্টা এটাই প্রথম না। আগেও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। সবশেষ জুলাইয়ে একটি অভিযান চালিয়েছিল তেল আবিব। ওই অভিযানে দুজন নিহত হন।’
আল-নাবুলসি ‘নাবলুসের সিংহ’ নামে পরিচিত। অনেক দিন ধরেই তিনি পলাতক ছিলেন। ইসরায়েলের একাধিক হত্যাচেষ্টা থেকেও বেঁচে ফিরেছিলেন। সহকর্মীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তার প্রকাশ্য উপস্থিতি ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিবৃতিতে জানিয়েছে, সন্ত্রাসী ইব্রাহিম আল-নাবুলসিকে নাবলুস শহরে হত্যা করা হয়েছে। সেই বাড়িতে থাকা আরেক সন্ত্রাসীও মারা গেছে।
আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড হলো ফাতাহর সশস্ত্র শাখা, যে আন্দোলন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের পশ্চিম তীরে সীমিত স্ব-শাসন রয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আল-নাবুলসির একটি অডিও ক্লিপ। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে এটি তিনি রেকর্ড করেছিলেন।
এতে আল-নাবুলসিকে বলতে শোনা যায়, ‘মাতৃভূমির যত্ন নিন। আমি এখন ঘেরাও। তবে শহীদ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করব। আমি আমার মাকে ভালোবাসি, অস্ত্র ছেড়ে দিও না।’
ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলো এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। এ পদক্ষেপকে ‘কাপুরুষ’ বলে অভিহিত করেছে তারা।
ফাতাহ মুখপাত্র মুনথার আল-হায়েক বলেন, ‘আমরা আমাদের শহীদ ইব্রাহিম আল-নাবুলসি, ইসলাম সাব্বুহ এবং হুসেন তাহার জন্য শোক জানাচ্ছি।
‘হত্যার এই কাপুরুষোচিত অপরাধটি ইসরায়েলের দখলদারত্বের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে জনগণের দৃঢ় সংকল্পকে বাড়িয়ে তুলবে।’
الشهيد إبراهيم النابلسي (اب فتحي) في لباسه العسكري محمولاً على الاكتاف بعد اخراجه من المنزل الذي كان يتحصن به هو ورفيقه الشهيد اسلام ابو صبح.
— شجاعية (@shejae3a) August 9, 2022
تصوير @HShaqrah pic.twitter.com/AXc7afIhqf
বামপন্থি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) গ্রুপ বলছে, নিহতদের প্রতিরোধ ইসরায়েলের ব্যর্থতার প্রকাশ। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম যোদ্ধাদের ‘মহাকাব্য বীরত্ব’কে স্বাগত জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় শুক্রবার ইসলামিক জিহাদের অবস্থানগুলোতে আর্টিলারি বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মিশরের মধ্যস্থতায় রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ফলে তিন দিনের তীব্র লড়াইয়ের অবসান ঘতেছিল। ওই লড়াইয়ে ১৬ শিশুসহ ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়, আহতের সংখ্যা ৩৬০।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবের মক্কায় ক্লক টাওয়ারে বজ্রপাতের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্ষার সন্ধ্যায় বজ্রপাতটি ঘটার সময় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো আকাশ।
মুলহাম এইচ নামে একজন টুইটারে ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল: ‘কয়েকদিন আগে, মক্কায় বৃষ্টির সময় বুর্জ আল-সা-তে বজ্রপাত হয়।’
ভিডিওটি সোমবার পর্যন্ত দেখেছেন ১৩ লাখের বেশি মানুষ।
রিটুইট করে একজন লিখেছেন, এ সুন্দর দৃশ্যে আমরা বিস্মিত।
একজন লেখেন, ‘নিউরনের সঙ্গে বজ্রপাতের আকর্ষণীয় সাদৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করে।’
قبل قليل صاعقة تضرب #برج_الساعة مع #أمطار_مكة جعلها الله صيبا نافعا للبلاد والعباد #مكه_الان pic.twitter.com/y9ZziH2dn3
— الفلكي مُلهَم هندي (@MulhamH) August 4, 2022
কয়েকদিন ধরে সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশে মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছে। আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়, প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কিছু অংশে ‘দশকের মধ্যে সবচেয়ে আর্দ্র আবহাওয়া’ অনুভূত হচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি (এনসিএম) বলছে, জুলাইয়ে প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আর্দ্র আবহাওয়া ছিল।
আমিরাত এবং সৌদিতে মুষলধারে বৃষ্টিকে ‘ভারতীয় বর্ষা’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে বজ্রপাত এবং একটি ঝলসানো গাছের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার কয়েক দিনের মধ্যে মক্কার ভিডিওটি ভাইরাল হলো। ওহাইওতে বজ্রপাতের পর আগুন পুরোপুরি নেভাতে গাছটি কেটে ফেলতে হয়েছে।
বজ্রপাত অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও দূর থেকে এই প্রাকৃতিক ঘটনা সবসময়ই মানুষকে মুগ্ধ করে। চলতি বছরের শুরুতে, আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বজ্রপাতের একটি ভিডিও টুইটারে ভাইরাল হয়।
I just captured the most insane strike of lightning I’ve ever caught on camera.. 😳😱⚡️ @weatherchannel @KSNNews @KWCH12 @KAKEnews @JimCantore pic.twitter.com/17TxaFiyXk
— Taylor Vonfeldt (@therealskicast) March 30, 2022
ভিডিওতে, একটি আলোক শিখাকে দিগন্তসীমা থেকে পুরো আকাশে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সাধারণত এমন দৃশ্য বেশ বিরল। কোনো অঞ্চলের কাছাকাছি পজিটিভ ক্লাউড-টু-গ্রাউন্ড ফ্ল্যাশ থাকলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় ইসরায়েল ও ইসলামিক জিহাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় ১৫ শিশুসহ কমপক্ষে ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩৬০ জনের বেশি আহত হওয়ার তিন দিন পর স্থানীয় সময় রোববার রাত সাড়ে ১১টায় অস্ত্রবিরতিতে যায় দুই পক্ষ।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় পারস্পরিক ও ব্যাপক অর্থে যুদ্ধবিরতি পালনে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মিসর।
মিসরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা মেনার খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি ইসরায়েলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনি খলিল আওয়াওদেহকে মুক্তি ও হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করছে মিসর। বন্দি আরেক ফিলিস্তিনি বাসাম আল সাদিকেও মুক্ত করার চেষ্টা করছে দেশটি।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের জ্যেষ্ঠ সদস্য মোহাম্মদ আল হিন্দি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুত সাবুসোলু ও গাজার শাসক দল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা এবং আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের জোরপূর্বক প্রবেশের বিষয়ে ফোনালাপ করেছেন।
গাজায় তিন দিনের যুদ্ধে অনেক ফিলিস্তিনি হতাহত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি এরই মধ্যে শোচনীয়।
বিবৃতিতে তিনি গাজায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়া রোধ এবং সংঘর্ষ দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলার নিন্দা জানিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেছেন, নৃশংসতার জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে ইসরায়েলকে।
স্থানীয় সময় শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের মহাসচিব জিয়াদ আল-নাখালাহর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রেস টিভির খবরে বলা হয়, গাজায় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলার এক দিন পর সালামির সঙ্গে বৈঠক হয় জিয়াদের। শনিবার পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ছয় শিশুসহ কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
জিয়াদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইআরজিসির প্রধান বলেন, গাজায় হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া নতুন যুগের সূচনার প্রমাণ। সাম্প্রতিক অপরাধের জন্য জায়নবাদী শক্তিকে (ইসরায়েল) আরও একবার চড়া মূল্য দিতে হবে।
সালামি আরও বলেন, অতীতের তুলনায় সামর্থ্য বেড়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের। বড় ধরনের যুদ্ধ সামলাতে পারার সক্ষমতা অর্জন করেছেন তারা।
ইসলামিক জিহাদের মহাসচিব জিয়াদ বলেন, ইসলামিক জিহাদ ও অন্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ‘উল্লেখযোগ্য’ সামরিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারা ইসরায়েলি হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত।
আরও পড়ুন:গাজা উপত্যকায় দ্বিতীয় দিনের মতো ইসরায়েলের বিমান হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি শিশুসহ অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি ছিটমহল নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে স্থানীয় সময় শনিবার ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের হামলায় নিহত ২৪ জনের মধ্যে ৬ শিশুও রয়েছে। এ ঘটনায় এককভাবে তারা ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য এর দায় অস্বীকার করেছে। বাহিনীটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক জিহাদ’ এর ছোড়া একটি রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে শরণার্থী শিবিরের কাছে আঘাত হানে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দিনের সংঘর্ষে অন্তত ২০৩ জন আহত হয়েছে।
গাজার আশপাশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ অবস্থা শুক্রবার থেকে ফের অস্থিরতায় রূপ নেয়। সেদিন সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের একজন সিনিয়র কমান্ডারকে ইসরায়েল সুর্নিদিষ্ট হামলার মাধ্যমে হত্যা করে। এর পর পাল্টা হামলা শুরু করেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সদস্যরা।
ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র গাজার বাড়িঘর, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ধ্বংস করা শুরু করে। এ সময় এটি আঘাত হানে শরণার্থী শিবিরের কাছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সতর্ক করেছে, ইসলামিক জিহাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান এক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।
ইসরায়েলি অভিযানে নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৭৩ বছর বয়সী উম ওয়ালিদ, যিনি তার ছেলের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বেইট হ্যানউন শরণার্থী শিবিরে একটি গাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন ওই নারী।
ফিলিস্তিনির যোদ্ধারা গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের স্থাপনা লক্ষ্য করে অন্তত ৪০০ রকেট ছুড়েছে। তবে এদের অধিকাংশ আটকে দিয়েছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য