ক্ষমতায় এসেই কাশ্মীর ইস্যুতে মনোযোগ দিলেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর বিরোধের একটি ‘শান্তিপূর্ণ’ নিষ্পত্তি ‘অপরিহার্য’।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শাহবাজকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জবাবে মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শাহবাজ বলেন, "দিল্লির সঙ্গে ইসলামাবাদ 'শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক' সম্পর্ক চায়। কূটনৈতিক সম্পর্কে আমরা জোর দেব।"
এক টুইটে পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘অভিনন্দনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ। ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চায় পাকিস্তান। জম্মু ও কাশ্মীরসহ বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোতে শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি অপরিহার্য।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের আত্মত্যাগ সর্বজনবিদিত। আসুন শান্তি সুরক্ষিত করি এবং আমাদের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করি।’
ইমরান খানকে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হারিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সোমবার পাকিস্তানের মসনদে বসেন মুসলিম লীগের এই নেতা।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মীরের হিমালয় অঞ্চল নিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির বিবাদ লেগে আছে।
মনোরম উপত্যকাটি পাকিস্তান এবং ভারত ভাগাভাগি করে নিলেও দুই দেশই পুরো কাশ্মীর দাবি করে আসছে। এই কাশ্মীরের একটি অংশ আবার রয়েছে চীনের নিয়ন্ত্রণে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান গত ৭৫ বছরে তিনবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছে। ব্রিটিশদের শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরের বছর ১৯৪৮ সালে প্রথম দফা যুদ্ধে জড়ায় দিল্লি-ইসলামাবাদ। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালেও হয়েছিল লড়াই।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চাইছে। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে, ১৯৮৯ সালে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
উত্তেজনা আরও তীব্র হয় ২০১৯ সালের আগস্টে। মোদি সরকার ভারতশাসিত কাশ্মীরকে তার বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেয় সে মাসে।
শাহবাজের বিবৃতির প্রতিক্রিয়া
ভারতশাসিত কাশ্মীরের ভারতপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, তারা সব সময় কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যে আলোচনার পক্ষে আছেন।
জম্মু-কাশ্মীরের একটি রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুখপাত্র ইমরান নবী দার আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার পক্ষে। সব সময়ই তা চেয়ে এসেছি।
‘দুই দেশের বৈরিতার কারণে কাশ্মীরিরা ভুগছে। আমরা চাই দুই দেশ আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করুক।’
কাশ্মীরের শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ অবশ্য আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। এই বিশ্লেষক মনে করেন, শাহবাজ শরিফের বক্তব্য ইসলামাবাদের নিয়মিত ঘটনার অংশ শুধু।
সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য পাকিস্তানে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিকে ইসলামাবাদের একটি নিয়মিত আয়োজন হিসেবে বিবেচনা করি। কারণ এটা কল্পনা করা কঠিন যে, ইসলামাবাদের কেয়ারটেকার সরকারের সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে আলোচনায় বসবে দিল্লি।’
তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং ফোর্স ম্যাগাজিনের সম্পাদক প্রভিন সাহনি বলছেন, পাকিস্তানের নেতার বক্তব্যে ভারতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত।
তিনি বলেন, ‘ভারতের উচিত আলোচনা শুরু করা। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমি দেখছি, এতে দুই পক্ষই আগ্রহী। তাই দেরি না করাই ভালো।’
দিল্লিঘেঁষা শরিফ পরিবার
শাহবাজের বড় ভাই নওয়াজ শরিফ ছিলেন পাকিস্তানের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তার শাসনামলে দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করেছিলেন।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নওয়াজ শরিফ। পিছিয়ে থাকেননি মোদিও। পাকিস্তানে শরিফ পরিবারের এক বিয়েতে মোদির উপস্থিতি চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে।
শরিফ পরিবার যেখানে দিল্লির সঙ্গে সমঝোতামূলক এবং আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জোর দিয়েছিলেন, সেখানে বিপরীত অবস্থানে ছিলেন ইমরান খান।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার জবাবে দিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ফাটল তীব্র হয়। স্থগিত করা হয়েছিল সরাসরি বাণিজ্য সুবিধা।
নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ঘোর সমালোচক ছিলেন ইমরান। ভারতে উগ্রবাদীদের হাতে সে দেশের মুসলিম নাগিরকদের হত্যার বিচার চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মহলে।
ইসলামাবাদের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে 'সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক' মেনে চলেছে শরিফ ভাইরা। তাই শান্তি আলোচনার উপযুক্ত সময় এখনই।
শাহবাজ শরিফ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন। কেবল তাই নয়, সীমান্তের ভারতীয় অংশে নিজেদের পৈতৃক গ্রাম পরিদর্শন করেন শাহবাজ। সে সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের পর বছর চলা উত্তেজনা কমে আসতে পারে নতুন প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে।
দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় দর্শন বেহেরা বলেন, ‘তিনি এমন কেউ নন যে ভারতকে বিরোধিতা করার চরম পর্যায়ে যাবে।’
Thank you Premier Narendra Modi for felicitations. Pakistan desires peaceful & cooperative ties with India. Peaceful settlement of outstanding disputes including Jammu & Kashmir is indispensable. Pakistan's sacrifices in fighting terrorism are well-known. Let's secure peace and.. https://t.co/0M1wxhhvjV
— Shehbaz Sharif (@CMShehbaz) April 12, 2022
রাজস্থানের উদয়পুরে দরজিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন আজমির শরিফের প্রধান দেওয়ান জয়নুল আবেদীন আলী খান। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতে ‘তালেবানি মানসিকতা’ কখনো মেনে নেয়া হবে না। কোনো ধর্মই মানবতার বিরুদ্ধে সহিংসতাকে সমর্থন করে না।
মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে দেশ-বিদেশে ক্ষোভের মুখে আছেন ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা। সমালোচনার মুখে পদ হারান তিনি। নানা হুমকি আসতে থাকায় তার নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ।
সেই নূপুর শর্মার পক্ষে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন উদয়পুরের ওই দরজি। দুই যুবক মঙ্গলবার সেই দরজির দোকানে গিয়ে তার শিরশ্ছেদ করে এবং তা ভিডিও করেন। পরে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।
এ প্রসঙ্গে আজমির শরিফের প্রধান দেওয়ান জয়নুল আবেদীন আলী খান বলেন, ‘আমি এই কাজটিকে দৃঢ়ভাবে নিরুৎসাহিত করছি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। ভারতের মুসলমানরা কখনই মাতৃভূমিতে তালেবানিকরণের মানসিকতা প্রকাশ করতে দেবে না।
আরও পড়ুন:
পদত্যাগ করেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। শুধু তা-ই নয়, মহারাষ্ট্র আইন পরিষদের সদস্যপদও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহা বিকাশ আঘাদি সরকারের এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, সুপ্রিম কোর্ট এমন প্রমাণ চাওয়ার কিছু পর, এই ঘোষণা দেন উদ্ধব ঠাকরে।
এক অনলাইন ভাষণে উদ্ধব ঠাকরে বলেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান করি। গণতন্ত্র অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, বুধবার সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় সর্বোচ্চ আদালত জানায়, এনসিপির অনিল দেশমুখ ও নবাব মালিক বৃহস্পতিবারের আস্থা ভোট দিতে পারবেন। এ সময় শিবসেনার আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সাফ জানিয়ে দেয়, বৃহস্পতিবারই হবে আস্থা ভোট। তার পরই স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন উদ্ধব।
সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য বলেছে, বৃহস্পতিবারের ভোটের ফল ১১ জুলাই তার রায়ের সাপেক্ষে হবে। এদিন ঠাকরের পক্ষের অনুরোধে শিবসেনার বিধায়কদের একটি অংশকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নিজ দলের ৩৯ জন বিধায়ক উদ্ধবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এতে নেতৃত্বে দিচ্ছেন একনাথ শিন্ডে, যিনি একজন জ্যেষ্ঠ শিবসেনা নেতা।
তারা বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর দলের চেয়ে শিবসেনা অনেক বড় দল। তাদের অবশ্যই বর্তমান সরকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধতে হবে। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহা বিকাশ আঘাদি সরকারের কংগ্রেস এবং শরদ পাওয়ারের এনসিপি রয়েছে।
একনাথ শিন্ডে কিছুদিন আগে বিধায়কদের একটি দল নিয়ে গভীর রাতে মুম্বাইয়ে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। পরে তারা গুজরাটের সুরাটে রওনা হন; স্পষ্টতই বিজেপির নির্দেশে। একদিন পর ঠাকরের প্রতিনিধিরা তাদের কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করতে করেন। পরে বিদ্রোহীরা গুয়াহাটিতে চলে যায়।
গুয়াহাটিতে শিবসেনার সদস্য দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত তাদের ৩৯ জন এমএলএ আছে, যা পার্টিকে বিভক্ত করার জন্য এবং ঠাকরের অপসারণ নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট। কেবল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, তার পিতা যে দলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার সভাপতি পদ থেকে সরে যেতে হচ্ছে ঠাকরেকে।
বলা হচ্ছে, বিজেপি এবং কিছু স্বতন্ত্র বিধায়কের সমর্থন নিয়ে শিন্ড পক্ষ ভোটে ক্ষমতাসীন সরকারকে ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ নির্বাচনে মোট ৪৫টি আসনের মধ্যে ২৭টি আসনে জয় পেয়েছে অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম)। দলটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে জিটিএ বোর্ড গঠন করছে।
১০ বছর পর রোববার জিটিএ নির্বাচনের ৪৫টি আসনের ভোট গ্রহণ হয়। এবারের নির্বাচনে ভারতীয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং হামরো পার্টি প্রত্যেকটি আসনে প্রার্থী দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস ১০টিতে, সিপিএম ১২টিতে এবং কংগ্রেস ৫টি আসনে প্রার্থী দেয়।
এবারের নির্বাচনে জিটিএ-এর বিরোধিতা করে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, বিজেপি ও জিএনএলএফ। গোর্খা লিগ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।
বুধবার সকাল আটটা থেকে কড়া নিরাপত্তায় গণনা শুরু হয়। ভোটের ফলাফল প্রকাশ হলে দেখা যায় অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ২৭টি আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। তারাই এবার জিটিএ বোর্ড গঠন করছে।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এবারই ৫টি আসনে জয় পেয়েছে। অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি ৮টি এবং নির্দলীয় প্রার্থীরা ৫টি আসনে জয়লাভ করেছে। সিপিএম ও কংগ্রেস কোনো আসনে জিততে পারেনি।
তৃণমূল নেতা বিনয় তামাং ডালি আসন থেকে ৫০০-এর বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই জয় পাহাড়ের জয়।’
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন হামরো পার্টি প্রধান অজয় এডওয়ার্ড।
আর নিজে দুটি আসনে জয় পেয়েছেন অনিত থাপা। তার দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
জয়ের পর অনিত থাপা বলেন, ‘প্রথম থেকেই জেতার বিষয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। যারা জিতেছেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর এটা মানুষের নির্বাচন, তাই তাদের মতামতকে সম্মান দিতে হবে। আমাদের আসল উদ্দেশ্য, পাহাড়ে শান্তি ফেরানো।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা এসেছে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর; তবে উল্টো পথেও হেঁটেছে কেউ কেউ। সেই তালিকায় এবার যোগ হলো পাকিস্তানের নাম। সস্তায় রাশিয়ার তেল কেনার কথা ভাবছে এ দেশ।
এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রণালয় শিল্প বিশ্লেষকদের কাছে মত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে বুধবার জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম জিও টিভি।
অর্থনৈতিকসহ নানা সংকটে পড়েছে এশিয়ার দেশ পাকিস্তান। জ্বালানি আমদানিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া ছাড়ে যে জ্বালানি বিক্রি করছে; তার সুযোগ নিতে চায় শাহবাজ শরিফের দেশ।
এর আগে ভারত ও শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশই রাশিয়ার তেল আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়। এর প্রভাব পড়েছে তেলসমৃদ্ধ দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর। যুদ্ধরত অবস্থাতেও জ্বালানি বিক্রি করে তাদের আয় বেড়েছে অনেক।
পাক-আরব শোধনাগারর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাতীয় শোধনাগার এবং পাকিস্তানি শোধনাগারসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠিয়ে রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে যৌক্তিক মত চেয়েছে পাক মন্ত্রণালয়।
জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোসাদিক মালিক বলেন, সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কেনার কথা ভাবছে পাকিস্তান।
তিনি বলেন, রাশিয়া অমাদের কাছে অল্প দামে তেল বেচতে চায়। তবে ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে রাশিয়ার জ্বালানি খাত বড় ধাক্কার মুখে পড়ার শঙ্কা ছিল, তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ভারত-চীনের মতো দেশ। তবে ছাড়ে পাওয়া বেশি পরিমাণ তেল কিনে নিয়েছে চীন।
পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থি বিদ্রোহীদের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৪ সাল থেকে এ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করেন।
এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কিছুদিন সীমান্তে সেনা মোতায়েন রেখে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশ ছেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক, সমাজকর্মী গ্রেপ্তারের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘সাংবাদিকরা যা লেখেন, যা টুইট করেন এবং যা বলেন তার জন্য জেলে যাওয়া উচিত নয়।‘
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে দৈনিক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অল্টনিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে স্টিফেন বলেন, ‘জনগণকে কোনো হয়রানির হুমকি ছাড়াই স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশের অনুমতি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।’
অল্ট নিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিন্হা জানান, ২০২০ সালে একটি অন্য মামলায় জুবায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। যে মামলায় আদালত ইতোমধ্যে তাকে যাতে গ্রেপ্তার করা না হয় তার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তাকে অন্য একটি মামলায় সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে নিয়েই জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবার জুবায়েরকে আদালতে তোলা হবে।
অল্ট নিউজ একটি অলাভজনক ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ সংবাদমাধ্যম। এই ওয়েবসাইটে মূলত খবরের সত্য-মিথ্যাকে বিশ্লেষণ এবং যাচাই করে প্রকাশ করা হয়। অল্ট নিউজের প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক আর জুবের।
জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের দুই দিন আগে, গ্রেপ্তার করা হয় তিস্তা সেতালবাদকে। সমাজকর্মী তিস্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি ও আদালতে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হেনস্তা করতে মিথ্যা প্রমাণ দেয়ার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা তিস্তা সেতালভাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে।
আরও পড়ুন:
ভারতজুড়ে আলোড়ন তোলা উদয়পুরের হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দেশবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার সকালে এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘সহিংসতা ও উগ্রপন্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। উদয়পুরে যা ঘটেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা করছি । আইন যা করার করবে। আমি সকলকে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানাচ্ছি।’
বিজেপি নেত্রী নুপূর শর্মার হজরত মুহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে করা মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন রাজস্থানের উদয়পুরে কানহাইয়া লাল নামের এক দর্জি।
নুপূর শর্মাকে সমর্থন করায় ক্ষিপ্ত হয়ে কানহাইয়ার শিরোচ্ছেদ করেন মোহাম্মদ রিয়াজ আখতার ও মোহাম্মদ গোশ নামের দুই যুবক।
এই ঘটনার পুরোটাই ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পোস্ট করেন তারা। সেই ভিডিওতে তারা বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার শিরোচ্ছেদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকেও খুনের হুমকি দেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে রাজস্থানজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে রাজ্যটিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১ মাসের জন্য জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
এক টুইটে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, ‘আমি উদয়পুরে এক যুবকের জঘন্য হত্যার নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িত সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ অপরাধের তলানিতে যাবে।
‘আমি সব পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাই। এ ধরনের জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে কঠোরতম শাস্তি দেয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের ও সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি একটি অপদার্থ দল।’
আসানসোলে মঙ্গলবার এক কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলেন।
বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘যখন আপনাদের নেতারা ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বলেন, ঘৃণা ছড়ান, তখন আপনারা তাদের গ্রেপ্তার করেন না। আর আমরা কথা বললে খুনি বানিয়ে দেন। জুবায়েরকে কেন গ্রেপ্তার করলেন? তিস্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? ওরা কী করেছেন? গোটা দুনিয়া এর নিন্দা করছে।’
AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়েরকে সোমবার গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন খবরকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন এই জুবায়ের। দিল্লি পুলিশের তরফে বলা হয়, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলে জুবায়েরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে গুজরাট এটিএস মুম্বাইয়ের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মহানবীকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার নাম উল্লেখ না করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমি নাম নেব না। আমরা নাম নিতে চাই না। কিন্তু যারা ধর্ম তুলে গালাগালি করেন, তাদের আপনারা গ্রেপ্তার করেন না কেন? তবে আমাদের সরকার তাকে সমন পাঠিয়েছে। আমরা ছাড়ব না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য