ক্ষমতায় এসেই কাশ্মীর ইস্যুতে মনোযোগ দিলেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর বিরোধের একটি ‘শান্তিপূর্ণ’ নিষ্পত্তি ‘অপরিহার্য’।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শাহবাজকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জবাবে মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শাহবাজ বলেন, "দিল্লির সঙ্গে ইসলামাবাদ 'শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক' সম্পর্ক চায়। কূটনৈতিক সম্পর্কে আমরা জোর দেব।"
এক টুইটে পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘অভিনন্দনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ। ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চায় পাকিস্তান। জম্মু ও কাশ্মীরসহ বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোতে শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি অপরিহার্য।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের আত্মত্যাগ সর্বজনবিদিত। আসুন শান্তি সুরক্ষিত করি এবং আমাদের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করি।’
ইমরান খানকে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হারিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সোমবার পাকিস্তানের মসনদে বসেন মুসলিম লীগের এই নেতা।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মীরের হিমালয় অঞ্চল নিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির বিবাদ লেগে আছে।
মনোরম উপত্যকাটি পাকিস্তান এবং ভারত ভাগাভাগি করে নিলেও দুই দেশই পুরো কাশ্মীর দাবি করে আসছে। এই কাশ্মীরের একটি অংশ আবার রয়েছে চীনের নিয়ন্ত্রণে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান গত ৭৫ বছরে তিনবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছে। ব্রিটিশদের শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরের বছর ১৯৪৮ সালে প্রথম দফা যুদ্ধে জড়ায় দিল্লি-ইসলামাবাদ। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালেও হয়েছিল লড়াই।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চাইছে। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে, ১৯৮৯ সালে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
উত্তেজনা আরও তীব্র হয় ২০১৯ সালের আগস্টে। মোদি সরকার ভারতশাসিত কাশ্মীরকে তার বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেয় সে মাসে।
শাহবাজের বিবৃতির প্রতিক্রিয়া
ভারতশাসিত কাশ্মীরের ভারতপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, তারা সব সময় কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যে আলোচনার পক্ষে আছেন।
জম্মু-কাশ্মীরের একটি রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুখপাত্র ইমরান নবী দার আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার পক্ষে। সব সময়ই তা চেয়ে এসেছি।
‘দুই দেশের বৈরিতার কারণে কাশ্মীরিরা ভুগছে। আমরা চাই দুই দেশ আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করুক।’
কাশ্মীরের শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ অবশ্য আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। এই বিশ্লেষক মনে করেন, শাহবাজ শরিফের বক্তব্য ইসলামাবাদের নিয়মিত ঘটনার অংশ শুধু।
সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য পাকিস্তানে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিকে ইসলামাবাদের একটি নিয়মিত আয়োজন হিসেবে বিবেচনা করি। কারণ এটা কল্পনা করা কঠিন যে, ইসলামাবাদের কেয়ারটেকার সরকারের সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে আলোচনায় বসবে দিল্লি।’
তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং ফোর্স ম্যাগাজিনের সম্পাদক প্রভিন সাহনি বলছেন, পাকিস্তানের নেতার বক্তব্যে ভারতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত।
তিনি বলেন, ‘ভারতের উচিত আলোচনা শুরু করা। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমি দেখছি, এতে দুই পক্ষই আগ্রহী। তাই দেরি না করাই ভালো।’
দিল্লিঘেঁষা শরিফ পরিবার
শাহবাজের বড় ভাই নওয়াজ শরিফ ছিলেন পাকিস্তানের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তার শাসনামলে দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করেছিলেন।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নওয়াজ শরিফ। পিছিয়ে থাকেননি মোদিও। পাকিস্তানে শরিফ পরিবারের এক বিয়েতে মোদির উপস্থিতি চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে।
শরিফ পরিবার যেখানে দিল্লির সঙ্গে সমঝোতামূলক এবং আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জোর দিয়েছিলেন, সেখানে বিপরীত অবস্থানে ছিলেন ইমরান খান।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার জবাবে দিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ফাটল তীব্র হয়। স্থগিত করা হয়েছিল সরাসরি বাণিজ্য সুবিধা।
নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ঘোর সমালোচক ছিলেন ইমরান। ভারতে উগ্রবাদীদের হাতে সে দেশের মুসলিম নাগিরকদের হত্যার বিচার চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মহলে।
ইসলামাবাদের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে 'সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক' মেনে চলেছে শরিফ ভাইরা। তাই শান্তি আলোচনার উপযুক্ত সময় এখনই।
শাহবাজ শরিফ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন। কেবল তাই নয়, সীমান্তের ভারতীয় অংশে নিজেদের পৈতৃক গ্রাম পরিদর্শন করেন শাহবাজ। সে সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের পর বছর চলা উত্তেজনা কমে আসতে পারে নতুন প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে।
দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় দর্শন বেহেরা বলেন, ‘তিনি এমন কেউ নন যে ভারতকে বিরোধিতা করার চরম পর্যায়ে যাবে।’
Thank you Premier Narendra Modi for felicitations. Pakistan desires peaceful & cooperative ties with India. Peaceful settlement of outstanding disputes including Jammu & Kashmir is indispensable. Pakistan's sacrifices in fighting terrorism are well-known. Let's secure peace and.. https://t.co/0M1wxhhvjV
— Shehbaz Sharif (@CMShehbaz) April 12, 2022
বাংলাদেশে ‘উগ্রবাদী বক্তব্য’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত বলেছে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘চরমপন্থী বক্তব্য, সহিংসতা ও উসকানির ক্রমবর্ধমান ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনাকে শুধু গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না।’
‘আমরা আবারও বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জয়সওয়াল বলেন, ‘ভারত সরকার বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরেছে।
‘বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খুব স্পষ্ট করে বিরোধিতা করেছি। আমরা বাংলাদেশের কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছি যে, সংখ্যালঘুদের রক্ষা ও তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে এবং তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে হবে।’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড প্রসঙ্গে জয়সওয়াল বলেন, ‘এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। আমরা ইসকনকে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত সংস্থা হিসেবে দেখছি। সংস্থাটির সমাজসেবায় ব্যাপক কর্মকাণ্ডের নজির রয়েছে।’
ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা ও প্রত্যাশা করি যে ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত করে এই প্রক্রিয়াগুলো ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছভাবে মোকাবিলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তার স্ত্রী বুশরা বিবিসহ পিটিআইয়ের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর নামে নতুন করে আটটি মামলা করা হয়েছে।
ইমরানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ২৬ নভেম্বর ইসলামাবাদে বড় ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করেছে পিটিআই।
কারাবন্দি ইমরানের ডাকা চূড়ান্ত বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় বাদী হয়ে গত ২৭ নভেম্বর বুধবার এসব মামলা করে পুলিশ।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ডন ও জিও নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, শাহজাদ টাউন, সিহালা, খান্না, শামস কলোনি, নুন, নিলোরসহ বিভিন্ন থানায় মামলাগুলো করা হয়।
আসামির তালিকায় দলের স্থানীয় নেতারা ছাড়াও কয়েক হাজার ব্যক্তির নাম রয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে সন্ত্রাস, পুলিশের ওপর হামলা, ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন, অপহরণ এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৬ নভেম্বর ইমরানের সমর্থকরা ইসলামাবাদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ডি-চকে এসে পৌঁছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করেন।
নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। পরে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয় পিটিআই।
আরও পড়ুন:কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রথমবারের মতো ভারতে লোকসভার সদস্য হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে শপথ নিয়েছেন। ইন্দিরা গান্ধীর এই নাতনি এবারই প্রথম লোকসভার সদস্য হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন।
ভারতের বার্তা সংস্থা এনডিটিভি’র উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই এ খবর জানিয়েছে।
স্পিকার ওম বিড়লা ও অন্যান্য এমপির উপস্থিতিতে প্রিয়াঙ্কা লোকসভায় শপথবাক্য পাঠ করেন। প্রিয়াঙ্কার শপথ গ্রহণের বিশেষ মুহূর্তে লোকসভার গ্যালারিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে ভাই রাহুল গান্ধী ও স্বামী রবার্ট ভদ্র উপস্থিত ছিলেন।
প্রিয়াঙ্কার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে গান্ধী পরিবারের তিনজন সদস্য এমপি হলেন। ভাই রাহুল গান্ধীর ছেড়ে দেয়া আসন থেকে উপ-নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।
রাহুল দুটি আসনে জয়ী হন। রাহুল ওয়েনাদ ও উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে ওয়েনাদের আসনটি ছেড়ে দিলে সেখান থেকে প্রিয়াঙ্কা উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হন।
প্রিয়াঙ্কার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা, সিপিআইয়ের সত্যান মোকেরি ও বিজেপির নভ্যা হরিদাস ছিলেন প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী।
‘ডেকান হেরাল্ডের’ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা নির্বাচনে চার লাখ ১০ হাজার ৯৩১ ভোটের বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হন। গত সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় ভোটারের উপস্থিতি ৯ শতাংশ কম হওয়া সত্ত্বেও প্রিয়াঙ্কার প্রাপ্ত ভোটের হার ৬৫ শতাংশ।
বারানসিতে জ্ঞানবাপী মসজিদে হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব নিয়ে অনেক দিন ধরেই সোচ্চার হিন্দু উগ্রবাদীরা। আদালতেও গড়িয়েছে বিষয়টি। এতে বিতর্কিত নির্দেশনাও দিয়েছে আদালত। এর পরে উত্তর প্রদেশের সন্তুলে জামা মসজিদ নিয়ে একই দাবি তোলার রাজনীতি চলছে। এর জের ধরে সেখানে সংঘর্ষে সম্প্রতি চারজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।
সন্তুলে জামা মসজিদের জায়গায় হিন্দু মন্দির ছিল দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন এক ব্যক্তি। তারপরই আদালত সমীক্ষার নির্দেশ দেয়। আর শুরু হয়ে বিতর্ক, গোলমাল।
প্রথম দিন জরিপের কাজ চললেও দ্বিতীয় দিনে জরিপ শুরু হওয়ার পর প্রবল ক্ষোভ জানাতে থাকেন স্থানীয় মুসলমানরা। এক পর্যায়ে তা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে পরিণত হয়। এখন সেখানে চলছে পুলিশের কড়া পাহারা। তবে উত্তেজনা থামেনি।
এবার রাজস্থানে আজমির শরিফের দরগা নিয়েও অনুরূপ বিতর্ক তুলতে মামলা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজমির শরিফের দরগায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন। শুধু মুসলমানরাই নন, সব ধর্মের মানুষ প্রবল বিশ্বাস নিয়ে এখানে আসেন। এখানে রয়েছে ত্রয়োদশ শতাব্দীর সূফি সাধক খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির সমাধি। ভারত সরকারের আইনে একটি ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় এই দরগা।
কিন্তু সর্বধর্মের এই মিলনক্ষেত্র নিয়েও রাজনীতি শুরু হয়েছে। গত বুধবার হিন্দু সেনা নামের একটি সংগঠনের সভাপতি বিষ্ণু গুপ্ত স্থানীয় আদালতে মামলা ঠুকেছেন। তার দাবি, শিব মন্দিরের ওপর তৈরি হয়েছে এই দরগা। তাই এটিকে ভগবান শ্রী সংকটমোচন মহাদেব বিরাজমান মন্দির বলে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আজমির দরগা কমিটি, ভারত সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে নোটিশ জারি করেছেন দেওয়ানি আদালতের বিচারক মন মোহন চান্ডেল। মামলাটি গ্রহণ করে বিচারক আগামী ২০ ডিসেম্বর শুনানীর দিন ধার্য করেছেন।
সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, দরগা সরিয়ে ফেলারও আর্জি জানানো হয়েছে আদালতের কাছে। একই সঙ্গে ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে দিয়ে জরিপ করার আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনকারীর আইনজীবী শশী রঞ্জন কুমার সিং আদালতে আবেদনে জানান, দরগার প্রধান ফটকের ছাদের নকশার সঙ্গে হিন্দু মন্দিরের নকশার মিল রয়েছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের খুররাম জেলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ জনে।
হাসপাতাল প্রশাসন মিডিয়াকে এ খবর জানায়।
ইসলামাবাদ থেকে সিনহুয়া জানায়, গত বৃহস্পতিবার শিয়া মুসলমানদের বহনকারী যাত্রীবাহী কোচের একটি বহরের ওপর পারাচিনার এলাকায় অতর্কিত হামলা চালালে বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হন।
এই হামলা একপর্যায়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নিলে পরবর্তী সময়ে একাধিক প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
প্রাদেশিক সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উভয় সম্প্রদায় সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নিজেদের মধ্যে পলিটিকাল ইস্যু থাকতে পারে, কিন্তু নদীর পানির হিস্যা নীতি ছিল। ভারতের কোনো যুক্তিই নেই আমাদের পানি না দেয়ার। এটা নিয়ে ভারতকে চাপ দিতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘উজানে যৌথ নদীর পানি প্রত্যাহার: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, বাংলাদেশ।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারতে যখন পানির চাপ থাকে তখন আমাদের এদিকে স্লুইস গেটগুলো খুলে দেয়। আবার ওখানে যখন পানির স্বল্পতা থাকে তখন গেটগুলো বন্ধ করে দেয়।
‘তারা ইচ্ছেমতো এটা করছে। আর সেজন্য আমরা পানি পাচ্ছি না। এতে করে আমাদের চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। দিন দিন মরুভূমির মতো হয়ে হচ্ছে। গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল নেমে যাচ্ছে। আমরা আর কত সহ্য করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কাজগুলো করছি সেগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং। এগুলোতে জনগণের সাপোর্ট প্রয়োজন। শুধু ফারাক্কা নয়; অভিন্ন আরও যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো থেকে যাতে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায় সেজন্য আমরা কাজ করব।’
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষে অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫ জন।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় যাত্রীবাহী গাড়িতে এক ভয়াবহ বন্দুক হামলায় শিয়া সম্প্রদায়ের ৪২ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পরদিনই এই সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। শুক্রবার রাতভর চলে এই সংঘর্ষ।
সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ শিয়া মুসলমান। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা দেশটিতে নতুন নয়।
দেশজুড়ে সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করলেও কুররামসহ কিছু কিছু জায়গায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার ওই অঞ্চলের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি বাগান ও বাচাকোট এলাকার দোকানপাট, বাড়ি ও সরকারি সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া কুররামের আলিজাই ও বাগান সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কুররামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। উভয় পক্ষই ভারী ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে একে অপরের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে।
বার্তা সংস্থা এপি’র সঙ্গে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে আগুনের লেলিহান শিখা একটি বাজারকে গ্রাস করেছে। এ সময় গুলির শব্দও শোনা যায়।
বন্দুক হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, হামলাকারীরা একটি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বাস ও গাড়িতে গুলি ছুড়তে শুরু করে। বৃহস্পতিবারের হামলার স্থানটি লক্ষ্য করেও সশস্ত্র ব্যক্তিরা হামলা চালায়।
রক্তক্ষয়ী এই হামলার দায় এখন পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেনি। পুলিশও এই হত্যাযজ্ঞ চালানোর উদ্দেশ্য শনাক্ত করতে পারেনি।
জুলাই মাসে জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিষয়টি বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সহিংসতায় এ পর্যন্ত বেশকিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য