ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী অস্ত্রধারী বাহিনী আজভ ব্যাটালিয়ন দাবি করেছে, আজভ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মারিওপোলের লড়াইয়ে রুশ সেনারা রাসায়নিক অস্ত্র মোতায়েন ও ব্যবহার করেছে।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে আজভ ব্যাটালিয়ন দাবি করেছে, সোমবার শনাক্ত করা যায়নি এমন একটি রাসায়নিক এজেন্ট ড্রোনের সাহায্যে আজভ যোদ্ধাদের ওপর নিক্ষেপ করে রুশ সেনারা। ফলে যোদ্ধাদের দম বন্ধ হয়ে আসে ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তবে আজভ ব্যাটালিয়নের দাবি এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এরই মধ্যে রাসায়নিক হামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
তবে রাশিয়া বলছে, মস্কোকে শাস্তি দিতে পশ্চিমারা আরও একধাপ এগিয়ে যেতে চায়। তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ আনা হচ্ছে, যাতে দেশটির বিরুদ্ধে আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়া যায়।
ইউক্রেনের আজভ ব্যাটালিয়নকে নব্য নাৎসি, উগ্র জাতীয়তাবাদী অস্ত্রধারী গোষ্ঠী হিসেবে মনে করে ক্রেমলিন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘রুশ সেনারা মারিওপোলের বাসিন্দাদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। আমরা এর বিস্তারিত নিশ্চিত হতে মিত্রদের নিয়ে কাজ করছি।
‘এ ধরনের যেকোনো অস্ত্র ব্যবহার সংঘাত বৃদ্ধি করবে এবং আমরা পুতিন ও রুশ শাসকগোষ্ঠীকে জবাবের আওতায় আনব।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ইউক্রেনে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে ন্যাটো।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে রাসায়নিক অস্ত্র প্রতিরোধী সরঞ্জাম পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। তবে পাঠানো সরঞ্জামের পরিমাণ জানা যায়নি।
গত ১ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছিলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এই ধরনের হামলার পর জীবন বাঁচাতে ব্যবহার হয় এমন সরঞ্জাম সরবরাহ করার বিষয় নিয়ে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মারিওপোলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেনের নেতারা বলে আসছেন, রাশিয়া সম্ভবত রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র ইউক্রেনে মোতায়েন করতে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:Reports that Russian forces may have used chemical agents in an attack on the people of Mariupol. We are working urgently with partners to verify details.
— Liz Truss (@trussliz) April 11, 2022
Any use of such weapons would be a callous escalation in this conflict and we will hold Putin and his regime to account.
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অ্যাপলের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর শুক্রবার বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএপি জানায়, ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি প্রধান সূচক পুরো দিন ধরে পড়তির মধ্যেই ছিল। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রযুক্তি ভিত্তিক নাসদাক সূচক, যেখানে অ্যাপলের শেয়ার একাই ৩ শতাংশ কমে গেছে।
প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টের বাজার প্রায় ১.৫ শতাংশ করে কমেছে, বিশেষ করে বিলাসবহুল পণ্য ও গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য ট্রাম্পের হুমকিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে তিনি ইইউর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন।
লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচকও প্রাথমিক বৃদ্ধি শেষে দিনের শেষে নেতিবাচক হয়ে পড়েছে।
জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তথ্য ইতিবাচকভাবে সংশোধন হওয়ায় দিনের শুরুতে ডিএএক্স সূচক কিছুটা বাড়লেও পরে তা পড়ে যায়।
শুল্কনীতি শাস্তিমূলক, অর্থনৈতিক নয়:
বিনিয়োগ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান কুইল্টারের কৌশলবিদ লিন্ডসে জেমস বলেন, ‘চীনের তুলনায় ইইউ এখন বেশি শুল্কের মুখে পড়ছে—এটা কয়েক সপ্তাহ আগেও অকল্পনীয় ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে, এই নীতি অর্থনৈতিক যুক্তির চেয়ে শাস্তিমূলক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে, যদিও দিনে তা একবার এক শতাংশের মতো পড়ে গিয়েছিল। ডলারের দাম ছিল চাপে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে শুল্ক স্থগিতের পর বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশাবাদী হলেও ট্রাম্পের নতুন হুমকিতে সেই আস্থা আবারও নড়বড়ে হয়ে গেছে।
স্টোনএক্সের বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদা বলেন, ‘বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যত আশাবাদই ছিল, মূহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ লেখেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে না, তাই ১ জুন থেকে আমি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছি।’
এক্সটিবি প্ল্যাটফর্মের গবেষণা পরিচালক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেছেন, ট্রাম্পের প্রতি ইইউর নেতাদের বিশ্বাসের অভাব ও তাঁর ব্যক্তিগত অসন্তোষের কারণে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত মাসে ট্রাম্প ইইউর পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও আলোচনার সুযোগ দিতে তা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিলেন। তবে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ শুল্ক এখনও বহাল রয়েছে।
শুক্রবার তিনি হুঁশিয়ারি দেন, অ্যাপলের আইফোন যদি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি না হয়, তবে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
প্রথমে শুধু অ্যাপলকে লক্ষ্য করলেও পরে তিনি বলেন, এই শুল্ক অন্য সব স্মার্টফোন নির্মাতাদেরও (যেমন স্যামসাং) প্রভাবিত করতে পারে।
এই ঘোষণাগুলোর ফলে শেয়ারবাজারে নতুন করে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। আগে থেকেই মার্কিন ঋণ ও সুদের হার বাড়ার আশঙ্কায় বাজার চাপে ছিল ।
পাকিস্তানে একটি স্কুলবাসে বোমা হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় গুরুতর তিন শিশু আজ শুক্রবার মারা যাওয়ার পর হতাহতের এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। গত বুধবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের খুজদার শহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, এই হামলায় বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে ভারত।
নিহতদের মধ্যে দুই সেনাও রয়েছেন। সেনাসদস্যরা হামলার সময় বাসে ছিলেন। পাকিস্তানের এই প্রদেশটিতে কয়েক দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিদ্রোহ করে আসছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, হামলায় ৩৯ শিশুসহ মোট ৫৩ জন আহত হয়েছেন। শিশুরা তাদের আর্মি পাবলিক স্কুলে যাওয়ার সময় বোমা হামলার শিকার হন।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ বলেছেন, আহত শিশুদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে ভারতের নির্দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত বালুচ লিবারেশন আর্মির বিদ্রোহীরা বোমা হামলা চালিয়েছে। ভারতের পরামর্শে সংগঠনটিকে ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।
শরিফ বলেন, পাকিস্তানের কাছে প্রমাণ আছে যে, ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা’ পরিচালনা করছে ভারত। এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর দেওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ভারত এই অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি এবং পাকিস্তানও নিজের দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
কোনো গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
চলতি মাসের শুরুতে দুই পক্ষের মধ্যে চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখনও চরমে। এমনকি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগেও উভয় পক্ষই সীমান্তে গুলি চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির ইহুদি জাদুঘরের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ক্রিস্টি নোম। তিনি জানান, এ হামলার ঘটনা ঘটেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়াশিংটন কার্যালয়ের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, তিনি ওয়াশিংটনের বর্তমান অ্যাটর্নি ও সাবেক বিচারক জ্যানিন পিরোর সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে, এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে তিনি ‘একটি বর্বর ও ইহুদি-বিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেন।
তবে বুধবার রাত পর্যন্ত হামলার সঙ্গে কারা জড়িত কিংবা কী উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে, সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি পুলিশ।
ড্যানন বলেন, ‘আামদের বিশ্বাস, এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন, ইসরায়েল তার নাগরিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের আশাবাদের জেরে বিটকয়েনের দাম বুধবার নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন এদিন বেড়ে দাঁড়ায় সর্বকালের সর্বোচ্চ ১,০৯,৪৯৯.৭৬ মার্কিন ডলারে, যা আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০ জানুয়ারি, যেদিন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বিটকয়েনের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক একটি প্রস্তাবিত আইনের প্রতি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সমর্থনের কারণে। ওই আইনটি মূলত ‘স্টেবলকয়েন’ নিয়ন্ত্রণে প্রণয়ন করা হচ্ছে—যেসব ডিজিটাল কয়েনের মান ডলারের সঙ্গে যুক্ত।
যদিও বিটকয়েন সরাসরি ডলারের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তবুও এই আইনের মধ্য দিয়ে খাতটির জন্য একটি সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বিটকয়েনকেও ইতিবাচক প্রভাবিত করেছে।
এ ছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে, যা বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তবে, তিনি বিশ্বজুড়ে যে নতুন শুল্ক আরোপ করেন, তা বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছিল।
চলতি বছরের ৮ মে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিটকয়েন ফের প্রতীকী ১ লাখ ডলারের সীমা অতিক্রম করে, যা এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ছুঁয়েছিল।
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো শুরুর পর থেকেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কখনো চরম দোলাচলের জন্য, কখনো আবার শিল্পখাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পতনের জন্য। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এফটিএক্স নামের এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মটির ধস।
বিটকয়েন তৈরি হয়—বা ‘মাইনিং’ করা হয়—যখন শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে একটি হস্তক্ষেপ-প্রতিরোধী নিবন্ধনপদ্ধতি ‘ব্লকচেইন’-এ লেনদেন যাচাই করা হয়।
সম্প্রতি ৪০ রোহিঙ্গাকে সাগরে ছুড়ে ফেলে মিয়ানমারে ফিরতে বাধ্য করেছে ভারতের কর্তৃপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। ভারতের এমন ‘নিন্দনীয়’ কাজের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপির মতো প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এরই মধ্যে এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল।
যেভাবে সাগরে ফেলা হয় রোহিঙ্গাদের
গত ৮ মে সন্ধ্যায় দিল্লির এক তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে একটি ফোনকল পান। ফোনের অন্যপাশে ছিলেন তার বাবা-মা। তরুণ বলেন, বাবা-মা আমাকে জানান, তাদের সমুদ্রের মাঝখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র দুই দিন আগেই ওই তরুণ দেখেছিলেন, পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে তার বাবা-মাসহ আরও ৪১ জনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর ফোনে তার বাবা-মা তাকে এক নির্মম অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। তারা জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের একটি নৌবাহিনী জাহাজ থেকে আন্দামান সাগরে নামিয়ে দেয় এবং কেবল লাইফ জ্যাকেট পরে সাঁতরে মিয়ানমারের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে বাধ্য করে।
ভুক্তভোগীদের নির্মম অভিজ্ঞতা
গত শুক্রবার পাঁচজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বার্তা সংস্থা এপিকে নিশ্চিত করেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা সেই দলের মধ্যে ছিলেন, যাদের ৬ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আটক করেছিল। ওই দলে ১৫ জন খ্রিষ্টানও ছিলেন। তাদের একটি বিমানযোগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ৮ মে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়।
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষে আইনি লড়াই করা আইনজীবী দিলাওয়ার হুসেইন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছে, যাতে তাদের ফেরত এনে আবার দিল্লিতে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারতের নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
জাতিসংঘ কী বলছে
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর গত ১৫ মে এক বিবৃতিতে জানায়, অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নয়াদিল্লিতে আটক করা হয় এবং ভারত-মিয়ানমার জলসীমার কাছে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়। শরণার্থীদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধও ছিলেন। তারা সাঁতরে উপকূলে পৌঁছান। তবে তারা বর্তমানে মিয়ানমারে কোথায় রয়েছেন, তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, এই ঘটনাকে তারা ‘অবিবেচনাপ্রসূত, গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করছে এবং তদন্তের জন্য একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি ভারত সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ‘অমানবিক ও জীবনহানিকর আচরণ’ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রিউজ এই ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন যাদের, তাদের জীবন ও নিরাপত্তার প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটিকে ‘একটি ভয়াবহ ঘটনা’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।
অ্যান্ড্রিউজ আরও বলেন, এমন নিষ্ঠুর কাজ মানবতাবিরোধী এবং ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ নীতির গুরুতর লঙ্ঘন, যা একটি আন্তর্জাতিক আইনি নীতিমালা- যেখানে বলা হয়েছে, কাউকে এমন কোনো এলাকায় ফেরত পাঠানো যাবে না, যেখানে তার জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ভারতের অবস্থান
ভারতের কোনো জাতীয় শরণার্থী নীতিমালা বা আইন নেই। দেশটি ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের পক্ষভুক্ত নয়। তবুও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ
গত সপ্তাহে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট আন্দামান সাগরে ৪০ জন রোহিঙ্গাকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা সংক্রান্ত একটি আবেদনের শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানান। তারা এই ঘটনাটিকে ‘চমৎকারভাবে রচিত গল্প’ বলে মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন ও সমুদ্রের ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের এমন অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ।
সোমবার সিভিল রাইটস সুরক্ষা সংস্থা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই একই ভাষা ব্যবহার করছে, যা এই অমানবিক সরকার ব্যবহার করে শরণার্থীদের প্রতি। তারা বলছে, ভারত কোনো ধর্মশালা নয়।
তার কথায়, আপনারা বলেন ‘বাসুধৈব কুটুম্বকম’ (গোটা পৃথিবীই একটি পরিবার)। আপনারা জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সংবিধান মানবিক এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ নাগরিক ও অনাগরিক সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ আপনারা এখন বলছেন, তারা কোনো অধিকার রাখে না, আপনি তাদের সঙ্গে যা খুশি করতে পারেন... তাদের সীমান্ত পেরিয়ে সাগরে ফেলে দিতে পারেন!’
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এবার সামান্য পরিমাণ খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। রোববার ইরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে উপত্যকাটিকে পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে রাখে তেল আবিব। সেসময় কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় নতুন করে বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সময়ে হামাস ও নেতানিয়হু সরকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য একটি চুক্তি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, "গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের খাদ্য সংকট এড়াতে মৌলিক কিছু খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরাইল।"
এতে আরও বলা হয়, মানবিক এই সহায়তা যাতে হামাসের হাতে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে তারা।
গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ইসরাইলের এই অবরোধ চালু ছিল। যার লক্ষ্য ছিল হামাসকে চাপ দিয়ে কিছু দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিল ইসরাইল। তবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করে আসছিল যে, এই অবরোধের ফলে গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী রবিবার জানিয়েছে, তারা “গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে” এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এই তীব্র অভিযান মূলত শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে পরাজিত করে জিম্মিদের মুক্ত করা। যদিও একই লক্ষ্য সামনে রেখে কাতারেও পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল ও হামাস।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও জানায়, প্রস্তাবিত চুক্তির মধ্যে থাকবে "সব জিম্মির মুক্তি, হামাস সন্ত্রাসীদের দেশত্যাগ এবং গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ।"
মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সমাধান আসেনি।
নেতানিয়াহু বলে আসছেন, হামাসকে পরাজিত না করে যুদ্ধ থামানো যাবে না। অপরদিকে হামাস তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করতে নারাজ।
আলোচনার সঙ্গে জড়িত হামাসের এক সূত্র জানিয়েছে, “যদি একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে রাজি।” তবে ইসরাইল তাদের বন্দিদের এক বা দুই দফায় মুক্তির বিনিময়ে শুধু অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী।
এদিকে, রবিবার বিকেলে দক্ষিণ ইসরাইলে সাইরেন বেজে ওঠে। পরে সেনাবাহিনী জানায়, গাজা থেকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ভূপাতিত করা হয়েছে।
পরে ইসরাইলি বাহিনী গাজার কিছু এলাকায় লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এবং জানায়, এসব এলাকা থেকে রকেট ছোড়া হলে কঠোর হামলা চালানো হবে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, রবিবার বিকাল পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গাজার দক্ষিণের আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের তাঁবুতে হামলায় ২২ জন নিহত এবং অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন।
এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, লোকজন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজছে এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, গত এক সপ্তাহে তারা গাজা জুড়ে ৬৭০টির বেশি হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মারওয়ান আল-হামস জানান, খাদ্য সহায়তা বন্ধের কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ জন শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে এএফপি স্বাধীনভাবে এই সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি। এর আগে জাতিসংঘও গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জানিয়েছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার জানায়, ইসরাইল ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে এবং প্রবেশাধিকার বন্ধ করেছে। এতে হাসপাতালটি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় গাজার উত্তরাঞ্চলে এখন আর কোনও সরকারি হাসপাতাল চালু নেই।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইল নতুন করে হামলা শুরু করার পর এখন পর্যন্ত ৩,১৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আর পুরো যুদ্ধজুড়ে মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৫৩,৩৩৯ জনে।
একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আরও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। শনিবার শুরু হওয়া নতুন আলোচনার পর তারা এই প্রস্তাব দিয়েছে । গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর উভয় পক্ষের মধ্যে এই আলোচনা শুরু হলো। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতেই ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৯ জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত নতুন চুক্তিতে প্রতিদিন ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের গাজায় প্রবেশ এবং অসুস্থ বা রোগীদের গাজা থেকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে।
দোহায় দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবিত চুক্তি সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা এই আলোচনার আগে জানিয়েছে যে, তারা গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার বা যুদ্ধ বন্ধের কোনো অঙ্গীকার করবে না। জবাবে ইসরায়েল হামাসের হাতে এখনো আটকে থাকা সব জিম্মি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। অভিযানে বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। কারণ ইসরায়েল খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা সেখানে যেতে দিচ্ছে না।
এর আগে হামাসকে ধ্বংস করতে ও গাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযানের কথা বলেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা থেকে সাংবাদিক ঘাদা আল কুর্দ বিবিসি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে সেখানে ব্যাপক হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ফুটেজগুলোয় ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, গাজায় বহু মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না। কিন্তু ইসরায়েল সরকার বারবার গাজায় খাদ্য সংকটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল থেকে ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়ো রোজ বিবিসি রেডিও ফোর-এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, তার টিম অবসন্ন হয়ে পড়েছে এবং কর্মীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওজন হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিশুরা খুবই লিকলিকে হয়ে পড়েছে। আমরা অনেককে পেয়েছি যাদের দাঁত পড়ে গেছে। অনেকে পুড়ে আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ইনফেকশনের প্রবণতা আছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ৫ মে বলেছেন, তারা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ওই অঞ্চলে তার সফর শেষ করেছেন। আইডিএফ বলছে, সব জিম্মির মুক্তি এবং যত দিন হামাসকে আর কোনো হুমকি মনে না হবে, তত দিন তাদের অভিযান চলবে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে নিহত ১০০
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে কমপক্ষে ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে নতুন করে মধ্যস্থতা শুরু করেছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল-দেকরান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘রাতভর আমরা অন্তত ১০০ জন শহীদের খবর পেয়েছি। অনেক পরিবার পুরোপুরি মুছে গেছে নাগরিক নিবন্ধন তালিকা থেকে।’
বিমান হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে গাজাজুড়ে বিস্তৃত হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল, যার লক্ষ্য হলো নতুন একটি স্থল অভিযান চালিয়ে গাজার নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ’নিশ্চিত করা।
ইসরায়েল মার্চের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানির প্রবেশ বন্ধ রেখেছে, যাতে হামাসকে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি দিতে চাপ দেওয়া যায়। একই সঙ্গে গাজা পুরোপুরি দখল ও ত্রাণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও অনুমোদন করেছে দেশটি। হামাস বলেছে, তারা কেবল যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলিদের মুক্তি দেবে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন দফায় মধ্যস্থতা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। তবে আলোচনার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ আরাবিয়া ও বিবিসি জানিয়েছে, হামাস একটি প্রস্তাব দিয়েছে- যার আওতায় তারা দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রায় অর্ধেককে মুক্তি দিতে চায় এবং এর বদলে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের ছাড়ার দাবি জানিয়েছে।
রয়টার্সকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের অবস্থান অপরিবর্তিত- তারা শুধু নিজেদের জিম্মিদের মুক্তি চায়, যুদ্ধ শেষের কোনও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই। এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতিতে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবরে। তবে হামাস বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি, আর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও কোনও মন্তব্য আসেনি।
ইসরায়েলের এই সংকটের মধ্যেও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পরিবর্তে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে দায়ী করেছেন এক জিম্মির মা। মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার এক্স-এ লিখেছেন, সরকার শুধু আংশিক চুক্তিতে আগ্রহী। তারা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে ইচ্ছাকৃত। আমাদের সন্তানদের ফেরত আনুন, সব, ৫৮ জনকেই!’
রাতের এক হামলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে একটি তাঁবুতে আঘাত হানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এতে নারী-শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হন, আহত হন অনেকে এবং বেশ কয়েকটি তাঁবু আগুনে পুড়ে যায়। হামাস এই ঘটনাকে নতুন একটি নৃশংস অপরাধ বলে অভিহিত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকেই এই সহিংসতার জন্য দায়ী করেছে।
মন্তব্য