পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে দাবি করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে বিরোধীরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তার ধারণা, ফেব্রুয়ারির শেষে রাশিয়া সফরই কাল হচ্ছে তার।
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান তার মেয়াদ পূরণ করতে পারেন কি না, এমন আলোচনা যখন বড় হচ্ছে, সে সময় সরকার থেকে তার সরে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব। আর অভাবনীয় কিছু না হলে তার পরাজয় নিশ্চিত প্রায়।
৩ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটের কথা রয়েছে। তার তিন দিন আগে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে আবেগপ্লুত ভাষণ দেন ইমরান। বলেন, তিনি একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ‘ষড়যন্ত্রকারী'দের কাছে পারছেন না।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর অনেকবার হুমকি চিঠি পেয়েছেন বলে ভাষণে জানান ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘এগুলো সব বিদেশি ষড়যন্ত্র।’
বক্তব্যের এক ফাঁকে ইমরান তার পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে জনতাকে দেখিয়ে দাবি করেন, সরকারকে পতনের জন্য একটি ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ তৈরির প্রমাণ এটি। তবে গণমাধ্যমকে সেই নথি দেখাননি ইমরান খান।
যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ
ভাষণের এক পর্যায় মুখ ফসকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে ফেলেন ইমরান খান।
তিনি বলেন, ‘আজ এখানে এসেছি কারণ ৮ বা ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি চিঠি পেয়েছিলাম। এটি একটি স্বাধীন দেশ ও সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ছিল।
‘তারা আগে থেকেই জানত যে একটি অনাস্থা প্রস্তাব আসছে। তখন অনাস্থা প্রস্তাবও জমা দেয়া হয়নি। এর মানে তারা (বিরোধীরা) বিদেশিদের সঙ্গে মিলে এই কাজ করছে। ভিনদেশিরা বলেছিল, তারা পাকিস্তানের প্রতি ক্ষুব্ধ। এটা আসলে একটা অজুহাত।
‘তারা (বিদেশিরা) জানিয়েছিল, ইমরান খান অনাস্থার পদক্ষেপে হেরে গেলে তারা পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দেবে। যদি পদক্ষেপ ব্যর্থ হয় তবে পাকিস্তানকে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
ইমরান বলেন, ‘যেদিন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলাম, সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীন। যার মানে এটা হবে পাকিস্তানিদের জন্য। এর মানে এই নয় যে আমরা শত্রুতা চেয়েছিলাম। যখন সরকার গঠন করি তখন জানিয়েছিলাম, যেসব পররাষ্ট্রনীতি আমাদের পক্ষে নয়, সেগুলো থেকে সরে আসব।’
রাশিয়া সফর নিয়ে যা বললেন
সম্প্রতি রাশিয়া সফর প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রদূত তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) বলেছিলেন যে রাশিয়া সফরের সিদ্ধান্তটি পরে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানতে নারাজ। তারা বলছে, এটি কেবল ইমরান খানের কারণে হয়েছে। তিনি থাকলে আমাদের সম্পর্ক ভালো হতে পারে না। তারা আসলে যা বলছে তা হলো, ইমরান খানের স্থলাভিষিক্ত যিনি হবেন তার সঙ্গে তাদের কোনো সমস্যা নেই।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার দিন যখন পশ্চিমা দেশগুলো যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক অবরোধের ঘোষণা আসছিল, সেদিনই ইমরান খান দেশটিতে দুই দিনের সফরে যান। বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা করে এই সফরের কথা জানানো হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।
আবেগী কথাবার্তা
কীভাবে নানা চড়াই-উৎরাই পাশ কাটিয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন তার ব্যাখ্যাও দেন ইমরান খান।
তিনি বলেন, ‘আজ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলতে হবে। আমি সরাসরি এই আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি কারণ এই মুহূর্তে আমাদের সামনে দুটি পথ রয়েছে।
‘তবে তার আগে আপনাদের বলতে চাই, কেন আমার মতো একজন ব্যক্তি রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন। আমি একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যাকে আল্লাহ খ্যাতি ও সম্পদ সবকিছু দিয়েছিলেন। আমি সেই প্রথম প্রজন্মের যারা একটি স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করেছি।
‘বয়সে পাকিস্তান আমার থেকে পাঁচ বছরের বড়। আমার বাবা-মা দাসত্বের সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারা আমাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিলেন যে আমি ভাগ্যবান। কারণ, আমি স্বাধীন দেশে জন্ম নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি কারণ আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে পাকিস্তান কখনই সেই দেশ হতে পারে না যার স্বপ্ন আল্লামা ইকবাল দেখেছিলেন। যার জন্য অসুস্থ অবস্থায় লড়াই করেছিলেন কায়েদ-ই-আজম। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া, যা মদিনা রাজ্যের সঙ্গে যায়।
‘যখন রাজনীতি শুরু করি, তখন আমি আমার দলের ইশতেহারে তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। ন্যায়বিচার, যার অর্থ শক্তিশালী আইন; যা সবার জন্য সমান। দ্বিতীয়টি হলো মানবতা। কারণ একটি ইসলামী রাষ্ট্রে দয়া থাকতে হয়। শেষ কারণ আত্মসম্মান। একটি মুসলিম জাতি কখনও কারও গোলাম হতে পারে না।’
সৃষ্টিকর্তা তার পাশে ছিলেন- এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ইমরান খান। বলেন, ‘আল্লাহ যদি আমাকে আশীর্বাদ না করতেন তবে আমি রাজনীতিতে আসতাম না।
‘আমাকে ১৪ বছর উপহাস সহ্য করতে হয়েছে। রাজনীতিতে কেন এসেছি সেই প্রশ্নের মুখে পরেছি বারবার। আজকে আমি আপনাদের বলতে চাই, একটি আদর্শের কারণে রাজনীতিতে আমার আসা।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। তবে কোনো কারণ না দেখিয়ে ঠিকানা স্থগিত করা হয়। আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও এমকিউএম-পি এবং বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) উপস্থিত ছিল না।
অনাস্থায় পরাজয় নিশ্চিতপ্রায়
পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার পর প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো ইমরান খানের জন্য সময়ের ব্যাপার হয়ে গেছে। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন জোট সঙ্গী মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট এমকিউএম-পির নেতা ফারুগ নাসিম ও আমিনুল হক।
সরকারে থাকতে পার্লামেন্টে যত ভোটের প্রয়োজন, সেটি নিশ্চিত করা যখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তখন এমকিউএম-পি ইমরানকে দিল কঠিন ধাক্কা। ইমরানের জোট ছেড়ে যোগ দিয়েছে বিরোধী শিবিরে।
জোটসঙ্গীর এমন অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আগেই পদ হারানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। অলৌকিক কিছু না ঘটলে উত্তরসূরিদের পরিণতি বরণ করে নিতে হতে পারে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খানকে। আগামী ৩ এপ্রিল অনাস্থা ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রিসভায় ভাঙন
জোট সরকারের অন্যতম সঙ্গী এমকিউএম-পি। দলটির নেতা ফারুগ নাসিম এবং আমিনুল হক ইমরান খান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। নাসিম ছিলেন আইনমন্ত্রী। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, এমকিউএম-পি আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিকীর নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
আমিনুল হক ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম মন্ত্রীর দায়িত্বে। পদত্যাগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, দলের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই পদ ছাড়ছেন।
পার্লামেন্টে ভোটের হিসাব-নিকাশ
নিম্নকক্ষে ৩৪২ আসনের মধ্যে বিরোধীদের দখলে আছে ১৬৩টি। বাকি ১৭৯ আসন। এর মধ্যে ইমরানের দলের আছে ১৫৫টি, চার জোটসঙ্গীর ২০টি।
পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য এরই মধ্যে প্রকাশ্যে ইমরানের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া বুধবার ইমরান সরকারের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)-এর ৭ এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি)-এর ৫ আসন রয়েছে। সমর্থন প্রত্যাহারকারী জামহুরি ওয়াতন পার্টির রয়েছেন এক সদস্য। পিএমএল-কিউ-এর সদস্য ৫।
এই পরিস্থিতিতে গদি বাঁচাতে মরিয়া ইমরান সোমবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারকে সরিয়ে জোট সঙ্গী পিএমএল-কিউ-এর চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিছুদিন আগেও ইমরান সরকারের জোট ছেড়ে বিরোধী দলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন চৌধুরী পারভেজ এলাহী।
আরও পড়ুন:র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
মন্তব্য