নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সময় ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’র কারণে প্রতিবেশী পাকিস্তানে আঘাত হানে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র। শুক্রবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এমনটি জানিয়েছে।
এই দুর্ঘটনাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নয়াদিল্লি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল তা খতিয়ে দেখতে আদালতের তত্ত্বাবধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই বিবৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লি।
নয়াদিল্লি বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি অত্যন্ত স্বস্তির বিষয় যে এ দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি।
বুধবার ভারত থেকে ছোড়া বিস্ফোরকবিহীন ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম একটি ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাঞ্জাব প্রদেশে এসে পড়ে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আবাসিক এলাকার একটি দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল বাবর ইফতেখার রাওয়ালপিন্ডির গ্যারিসন শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় পাঞ্জাবের চান্নু শহরে ‘সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র’ আঘাত হানে। এটি বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করতে পারত। দুই দেশের বাণিজ্যিক ফ্লাইটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের জীবনও হুমকিতে ফেলে দিতে পারত।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ভাইস মার্শাল তারেক জিয়া জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪০ হাজার ফুট উপর দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দেশটির মিয়া চান্নু শহরে আঘাত হানে। এটি ছোড়া হয়েছিল নয়াদিল্লির পাশের প্রদেশ হরিয়ানার সিরসা শহর থেকে।
আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানিয়ে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে পাকিস্তান। তার মাধ্যমে নয়াদিল্লির কাছে এই ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেনারা ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্টাংশ পরীক্ষা করে দেখেছে।
মেজর জেনারেল ইফতেখার বলেন, পাকিস্তান তার আকাশসীমার ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘনের’ দৃঢ় প্রতিবাদ করে। তা যে কারণেই এই ঘটনা ঘটে থাকুক না কেন? ভারতকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।
ভারতকে দোষারোপ করে ইসলামাবাদ বলেছে, নয়াদিল্লির এমন অসর্তকতামূলক আচরণ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।
আরও পড়ুন:
মাহফুজ আলম। ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভা নভেম্বরেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যে প্রস্তাব, তার মধ্যে মোট ২৩টি প্রস্তাব ছিল আশু করণীয়, যেটা এই সরকারের সময়সীমার মধ্যে করা সম্ভব। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আমলারা পর্যালোচনা করে মোট ১৩টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা খুব শিগগিরই দেখা যাবে। তিনি বলেন, ‘এগুলো যে খুব বড় কিছু, এ রকম নয়। কিন্তু আমাদের যে সময়সীমা আছে, তখন তো ছিল তিন মাস। এখন তো আর হয়তো এক মাস আছে। কারণ, এই যে জিনিসগুলো করা হবে, সেটা ক্যাবিনেটেই করতে হবে। অথবা নীতিমালা বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে করতে হবে। সেটা আমরা নভেম্বরের পরে আর করতে পারব না। কারণ, নভেম্বরেই ক্যাবিনেট ক্লোজ হয়ে যাবে, ক্যাবিনেট মিটিংটা। এরপর নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আর সম্ভবত ক্যাবিনেট মিটিং বসে না।’
মিট দ্য রিপোর্টার্সে নামসর্বস্ব সংবাদ পত্রিকা, সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নির্বাচনে এআই প্রপাগান্ডাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। নামসর্বস্ব পত্রিকার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় এসব পত্রিকার তালিকা তৈরি করেছে। সাংবাদিকদের সমর্থন পেলে গত এক বছরে এক দিনও ছাপা হয়নি, এমন পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
এ সময় তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা কমানো এবং বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানোর পক্ষে। বিজ্ঞাপনের হার যেটা আছে, সেটার দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে সত্যিকারের প্রচারসংখ্যা দেখাতে হবে। তিনি বলেন, এই সুবিধা পেতে সংবাদপত্রকে সাংবাদিকদের জন্য সরকারের নির্ধারিত বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। এই বেসিক স্যালারি (মূল বেতন) না দেওয়া হলে কোনো পত্রিকা সুবিধা (বিজ্ঞাপনের হার) পাবে না।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করে দেওয়া হবে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তত নবম গ্রেডের কাছাকাছি যেন বেতন হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
ওটিটি-ইউটিউব নিয়ে তিনি বলেন, ‘কনটেন্ট নির্মাণ করলে সেটা তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাবলিশড করলে সেটা আইসিটি বিভাগের দেখভালে চলে যাবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যে কনটেন্ট আসে, সেগুলোকে রেগুলেট করার চেষ্টা করছি।’
এই সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল, গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের দৌরাত্ম্য কমানো উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, এ কাজে খুব সফল না হলেও যতটুকু করা যায়, সেই চেষ্টা করা হয়েছে। যেহেতু সরকার শেখ মুজিবের মতো মিডিয়া বন্ধ করতে চায় না, তাই কোনো মিডিয়া বন্ধ করা হয়নি।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা রোধে আইন করা যায় কি না? জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতার পরিমণ্ডল থেকে যদি ‘ব্যাড অ্যাপল’ (খারাপ মানুষ) না সরানো যায়, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন যদি থেকে যায়, তাহলে অবশ্যই সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ হবে।
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘যারা ভায়োলেন্স করবে, আজকে যদি সুযোগ পায়, আজকেই আমাদের মেরে ফেলবে, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে সাংবাদিক পরিচয়ে বা বিভিন্ন পরিচয়ে, বুদ্ধিজীবী পরিচয়ে। টেলিভিশন টকশোতে বসে বসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলতেছে। ওই সাহস কোথায় ছিল গত ১৫ বছরে?’
এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে ‘খুব বেশি’ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়নি উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জন্য যে আমরা চাই না যে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করি।’
সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে আলোচনায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ এসেছে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, তারা প্রশ্ন তুলেছে যে এমন আইন ফ্যাসিস্টের দোসর ছিল, এখন বিভিন্ন হাউসে রয়েছে, তাদের সুরক্ষা দেবে। স্থানীয় পর্যায়ে যারা বিভিন্ন দলের দালালি করে, তারা সুরক্ষা পাবে।
গত ১৫ বছরে ‘অপসাংবাদিকতার’ জন্য কেউ অ্যাপোলজি (ক্ষমা প্রার্থনা) করেনি উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, তাদের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তাহলে কাকে ভরসা করে আইনটা করা হবে?
নতুন দুটি গণমাধ্যমের অনুমোদন দেওয়া নিয়ে লেখালেখি হওয়ার কথা তুলে ধরে এ ক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয় কী ভাবছে, তা জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশে বিকল্প গণমাধ্যম ছাড়া ‘বাকশালী ইকোসিস্টেম’ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি বিকল্প মিডিয়া দেবেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন আমরা মালিকানার ফাইলগুলো দেখি, অধিকাংশ মালিক এখনো আওয়ামী লীগের। এখনো আওয়ামী লীগের মালিকানা পরিবর্তন করা হয় নাই। ওনারা বিদেশ থেকে বসে বসে এখনো এখানে টেলিভিশন চ্যানেলে যে আয় হয়, সেটার থেকে ওনারা পাচ্ছেন। পত্রিকা অফিস থেকে ওনারা পাচ্ছেন।’
মাহফুজ আলম বলেন, পুরোনো বন্দোবস্তের লোকেরা, পুরোনো বড় বড় মিডিয়া হাউস যারা আছে, তারা চায় না যে দেশে কোনো অলটারনেটিভ মিডিয়া (বিকল্প গণমাধ্যম) হোক। সে জায়গা থেকে বিভিন্নভাবে এটাতে (দুই গণমাধ্যমের অনুমোদন) ‘ফ্রেমিংয়ের’ চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনের কারণে যদি তাকে পদ থেকে সরেও যেতে হয়, তাহলেও তিনি নতুন মিডিয়ার লাইসেন্স দেবেন বলে উল্লেখ করেন তথ্য উপদেষ্টা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মিডিয়ায় ‘ফ্রেশ ব্লাড’ দরকার। যেহেতু তারা কোনো মিডিয়া বন্ধ করছেন না, তাই নতুন মিডিয়া দেবেন।
ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান (সিজেসিসি) জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা গত শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
দুদেশের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও জনগণের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে জেনারেল মির্জা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নানা খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
‘আমাদের দুদেশ একে অপরকে সহায়তা করবে,’ বলেন জেনারেল মির্জা। তিনি আরও জানান, করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে দুমুখী নৌপথ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা-করাচি আকাশপথও চালু হবে।
দুপক্ষ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ভুয়া তথ্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার প্রবণতার চ্যালেঞ্জ নিয়েও মতবিনিময় হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বিপদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিকভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’
সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, সিনিয়র সচিব ও এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার উপস্থিত ছিলেন।বাসস
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবায় চরম ভোগান্তিতে চরবাসী। ছবি: সংগৃহীত
কুড়িগ্রাম জেলার বড় অংশজুড়ে রয়েছে চর এলাকা। চরাঞ্চল অধ্যুষিত এ জেলার স্বাস্থ্যসেবা পেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পার হয়ে চরবাসীদের যেতে হয় হাসপাতালে।
দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন এসব চরের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দরিদ্র এ জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়তই টিকে থাকতে হয় প্রকৃতির ভাঙা-গড়ার খেলায়। বন্যা ও নদীভাঙনের ফলে প্রতি বছরই এসব চরের অনেক পরিবার হয় গৃহহীন। বিনষ্ট হয় তাদের আরাধ্য ফসল। আবার ভূমি হারিয়ে অনেকেই হয় নিঃস্ব।
বন্যা-খরার সঙ্গে বাড়তি দুর্ভোগ যোগ করে অসুস্থতা। অথচ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এসব মানুষের ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নেওয়ারও ব্যবস্থা নেই বেশির ভাগ চরাঞ্চলে। হাতে গোনা কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে মিলছে না প্রত্যাশিত সেবা। শিশু কিংবা বৃদ্ধরা অসুস্থ হলেও ভরসা করতে হয় গ্রাম্য কবিরাজের ওপর। বিচ্ছিন্ন এসব চরের বাসিন্দারা বলছেন, চরাঞ্চলগুলোতে ফার্মেসি না থাকায় পাওয়া যায় না সাধারণ রোগের কোনো ওষুধ। মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলেও গর্ভবতী নারীদের নির্ভর করতে হয় স্থানীয় ধাত্রীদের ওপর। সড়ক বা যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে নিতে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।
২২৪৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ২৩ লাখ ২৯ হাজার জনসংখ্যার কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকা ও বুকজুড়ে জেগে রয়েছে ছোট-বড় ৪৬৯টি চর। তবে ২৬৯টি চরে মানুষের বসবাস। প্রায় সাড়ে ৮০০ বর্গকিলোমিটার এসব চরে বসবাস করছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। কয়েক বছর আগে চার শতাধিক চরাঞ্চলের মধ্যে মাত্র ৫০টি চরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে সরকার। এসব ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া গেলেও বাকি চরগুলোতে সে সুযোগটুকুও মিলছে না। যেকোনো রোগের চিকিৎসা করাতে নদীপথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় উপজেলা বা জেলা শহরের হাসপাতালে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার কালির আলগা চরের বাসিন্দা হোসেন আলী তিনি ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। তিনি জানান, ওই চরে প্রায় ৭০০ জন বসবাস করে। চরে স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল নদীভাঙ্গনে সেটিও নেই। চরটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। চরের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগের জন্য প্রথমে পাড়ি দিতে হয় নৌপথ। প্রায় ২ ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিলে যাত্রাপুর ঘাট। সেখান থেকে কিছুদূর হেঁটে গেলে পাওয়া যায় অটোরিকশা। এরপর আরও ৮ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিলে জেলা শহর। পার্শ্ববর্তী অনেক চরেই কমিউনিটি ক্লিনিকও নেই।’
জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যিনন্দ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর অববাহিকার চর বিদ্যানন্দ বাস করেন আব্দুল আজিজ। কয়েকদিন আগে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চরে অন্তত ৫০০টি পরিবার বাস করলেও স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। পরে তার স্ত্রীকে বাঁশ দিয়ে তৈরি ভাড়ে করে প্রথমে নৌকা ঘাটে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে নদী পার হয়ে তারপর অটোরিকশায় করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। একই অবস্থা উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলগুলোর।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা খোদেজা বেগম বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় গর্ভবতী নারীদের। প্রসব ব্যথা উঠলে স্থানীয় ধাত্রীরাই একমাত্র ভরসা। তাতেও সন্তান প্রসব না হলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা নৌপথ পারি দিয়ে যেতে হয় শহরের হাসপাতালে।’
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকার চরে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. মিজানুর রহমান জানান, ঝুনকার চরে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও পার্শ্ববর্তী চরগুলোতে নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও একজন কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারের পদ রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া হলেও প্রসবের ব্যবস্থা নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, নয়টি উপজেলায় ২৯৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে চরাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ৫০টি। এর মধ্যে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ছয়টি ক্লিনিক। তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষ যাতে চিকিৎসাসেবা পায়, সে জন্য কাজ করছি আমরা।’
বৃষ্টি হলে বা নদীতে পানি এলেই খাল-বিল, নদী-নালায় শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। আধুনিকতার ছোঁয়া ও অবৈধ কারেন্ট জালের দৌরাত্ম বাড়ার কারণে তেমন চলছে না গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের তৈরি ডারকি, চাঁই, পলো ও আনতার মতো দেশীয় মাছ ধরার ফাঁদ। মানবেতর জীবনযাপন করছে এই শিল্পের সাথে জড়িত মানুষরা। গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয় বাঁশ ও বেতের তৈরি এসব পণ্য। গ্রামগুলোতে বর্ষা ও বন্যার পানির সঙ্গে আজও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে এই মাছ ধরার সরঞ্জামগুলো। তবে অবৈধ চায়না জাল ব্যবহার বন্ধের জন্য সরকারের সহযোগীতা চান বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগররা।
উপজেলার পৌর এলাকার কোনাবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই ছোট-বড় ভাবে প্রতিবছরই বর্ষাকালে ও বন্যার শুরুতে এ পল্লীতে শুরু হয় বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই, পলো ও আনতা তৈরির কাজ। আগে এই সময়টুকুতে খাওয়ার সময় পেতেন না বাঁশ-বেতের কারিগররা। স্থানীয় হাটবাজারে প্রতি হাটের দিনগুলোতে নানা ডিজাইন, নানা রঙের ও বিভিন্ন আকারের চাঁই, পলো ও আনতা বিক্রি করা হতো। তবে একসময় গ্রামে গ্রামে এসব ফাঁদের ব্যবহার বেশি থাকলেও এখন বাঁশ ও বেতের দাম বৃদ্ধির কারণে ও অবৈধ বিভিন্ন চায়না জাল বাজারে নামার কারণে একবারেই বিক্রি নেই বললেই চলে এসব চাঁই, পলো ও আনতার। আবার গভীর রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাটারি দিয়ে নদীর পানিতে কারেন্টের শক দিয়েও অবৈধ উপায়ে ধরা হচ্ছে মাছ। এসব জেনে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে উপজেলা মৎস্য অফিস।
চাঁই ও পলো কারিগর বৃদ্ধ আফসার আলী, মোবারক হোসেন রোকসানা বেগম বলেন, এসব চাঁই, পলো, ডারকি সাধারণত খাল-বিল কিংবা ডুবে যাওয়া ক্ষেতে ফেলা হয়। এটাতে শোল, শিং, কৈ, খইলসা, পুঁটি চিংড়িসহ দেশীয় সকল মাছ সহজেই ধরা পড়ে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের বড় আকারের চাঁই তৈরি হচ্ছে, এ গুলোতে রুই-কাতলও ধরা সম্ভব। দেশীয় এসব ফাঁদ শুধু মাছ শিকারিদের জীবিকা নয়, বরং আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ।
স্থানীয় গ্রামীণ সরঞ্জাম তৈরির কারিগর ছানোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদাদের ব্যবসা ছিল। তাদের মৃত্যুর পর আমি প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমি বাঁশ ও বেত দিয়ে মাছ ধরার চাঁই, পলো ও আনতা তৈরি করছি। আগে প্রতি মৌসুমে ৫ হাজার থেকে ৭/৮ হাজার ডারকি, পলো, আনতা ও চাঁই বিক্রি হতো। ২০/২৫ জন শ্রমিক কাজ কারত।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবযানী ভৌমিক বলেন, চায়না জালগুলো খুবই মারাত্মক একটি জাল। এটাতে ছোট বড় মাছ ও রেনু পর্যন্ত ধরা পড়ে। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি এই চায়না জাল বন্ধ করতে। ইতোমধ্যে আমরা একাধিক স্থানে ও জালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান ও মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করেছি। অনেক জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ইলিশ পচা গন্ধে বাতাস ভারী হয়েছে সামরাজ মৎস্যঘাটের। চিরচেনা এ মৎস্যঘাটে এমন ঘটনা হরহামেশাই না ঘটলেও ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরেই ঘটেছে। এ মৎস্যঘাটের অবস্থান ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে ইলিশ বোঝাই সাগরগামী শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার মৎস্যঘাটে ফিরেছে। শত শত টন পচা ইলিশের ভাগাড় দেখে সাধারণ ক্রেতারা অবাক হলেও আড়তদার ও পাইকাররা ছিলো আনন্দমুখর। সূর্যের আলো উকি দেওয়ার সাথেই এসব সাগরগামী ট্রলার মৎস্যঘাটে এসে নোঙর করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ ২২ দিন গভীর সাগরে অবস্থান করে এসব ইলিশ মাছ শিকার করেছেন জেলেরা। যদিও এসব তথ্য অকপটে শিকার করেছেন সাগর থেকে ফেরা একাধিক জেলে।
সরেজমিনে রোববার সামরাজ মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোর হতেই একে একে মৎস্যঘাটে ফিরেছে ইলিশ মাছ বোঝাই শতাধিক সাগরগামী ট্রলার। ওই সময় এফবি বিসমিল্লাহ, এফবি আয়েশা-১, এফবি হামিম-২ থেকে জেলেরা ঝুড়িভর্তি ইলিশ মাছ বিক্রির জন্য আড়তগুলোতে নিতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আড়তগুলোতেও মাছ বিক্রি শুরু হয়। কেউবা ঢাকাসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে ইলিশ সরবরাহ করতে গাড়ীতে তুলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাগর থেকে ফেরা এক জেলে জানান, ৪ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার খবর শুনে তার আগের দিবাগত রাতে বরফ, তেল ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ইলিশ শিকারের জন্য গভীর সাগরে গিয়েছেন। তারা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে ইলিশ শিকার করেছেন। দীর্ঘদিন ইলিশ মাছ বরফজাত করে রাখায় দুই-তৃতীয়াংশ মাছ পচে গেছে। এই জন্যই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এফবি বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি নুরমোহাম্মদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। তবে সামরাজ মৎস্য ঘাটের একতা ফিসের আড়তদার অহিদ বলেন, ‘আপনারাতো জানেনই এসব মাছ সাগরের। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলেরা সাগরে মাছ শিকার করেছে। এই মৎস্যঘাটে ৯৮ জন মৎস্য আড়তদার রয়েছে। এসব আড়তদাররা প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।’
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, চরফ্যাশনের বড় মৎস্যঘাটগুলোর মধ্যে সামরাজ, নতুন স্লুইসগেট, খেজুরগাছিয়া, মাইনউদ্দি ঘাট, ঢালচর, বকসীরঘাট, ঘোষেরহাট, চরকচ্ছপিয়া ও কুকরি মুকরি অন্যতম। কাকডাকা ভোর থেকে প্রতিদিন ১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় এসব ঘাটে। উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৮১জন। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে। এ অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলার রয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, এমন তথ্য আমার জানা নেই।
৬ ঘণ্টার মধ্যে সাগরগামী ট্রলার ইলিশ বোঝাই করে মৎস্যঘাটে ফিরে আসা কি সম্ভব? এমন প্রশ্নের প্রতিউত্তরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আপনার কথায় যুক্তি আছে। আমার অফিসারের সাথে কথা বলে জানাব। এ বলেই তিনি কল কেটে দেন।’
নওগাঁয় সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ করায় মাছ চাষিদের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ রেনু উৎপাদন হচ্ছে না। চাষিদের বাড়তি দামে বেসরকারি খামার থেকে কিনতে হচ্ছে। উপকরণ ও জনবল বাড়ানো গেলে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি জেলায় মাছ চাষিরা চাহিদা মতো রেনু পেয়ে উপকৃত এবং লাভবান হবেন।
কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা নওগাঁ। পাশাপাশি মৎস্য খাতেও এগিয়ে এ জেলা। সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ করায় সুবিধা পাচ্ছে মাছ চাষিরা। তবে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এটি দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০০ কেজি রেনু। যা থেকে রাজস্ব আয় হবে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া বিগত অর্থবছরগুলোতে আয় হয়েছে সন্তোষজনক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২২ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২০ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
নওগাঁ শহরের আরজি-নওগাঁয় অবস্থিত সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের আয়তন প্রায় ১১ একর। যেখানে সাড়ে ৪ একর জায়গায় রয়েছে ১০টি পুকুর। এসব পুকুরে কার্প জাতীয় মা-মাছ- রুই, মৃগেল, কাতলা, কালবাউস ও পাঙাশসহ অন্য মাছ চাষ করা হয়। যা থেকে উন্নত মানের রেনু উৎপাদন করে চাষিদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এ খামার থেকে বছরে ৫ মাস রেনু উৎপাদন হলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি খামারে রেনু উৎপাদন কম হওয়ায় বেসরকারি খামারের রেনু দিয়ে চাহিদা পুরণ করে মাছ চাষিরা। জেলায় ৩১টি বেসরকারি মৎস্য বীজ (হ্যাচারি) উৎপাদন খামার রয়েছে। যা থেকে বছরে প্রায় ১৩ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় রেনু উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলায় সরবরাহ করা হয়।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারগুলো মৎস্য চাষ, সরবরাহ এবং জনসাধারণের জন্য অনেকভাবে উপকারী। এই খাবারগুলোর উন্নত মানের পোনা সরবরাহ করে মৎস্য চাষিদের উপকৃত করে, যা মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মাছ চাষিরা জানান, সরকারি খামারে তুলনামূলক রেনুর দাম কম ও মানে ভালো। তবে এ খামার থেকে চাহিদা মতো রেনু না পাওয়ায় মাছ চাষিদের ভরসা বেসরকারি খামার। প্রতি কেজিতে অন্তত ৫০০-৯০০ টাকা বেশি দামে বেসরকারি খামার থেকে কার্প জাতীয় রেনু কিনতে হয়। তবে সরকারি খামারের রেনু থেকে গুণগত মানসম্পন্ন মাছ উৎপাদন হওয়ায় লাভবান চাষিরা।
সদর উপজেলার চকআবরশ গ্রামের মাছচাষি মীর বকস বলেন, ‘সরকারি খামারের রেনু উন্নত মানের। এ রেনু থেকে মাছ চাষ করলে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বেশি হয়। এতে দাম ভালো পাওয়া যায় এবং লাভবান হওয়া যায়।’
হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ইমরান হোসেন বলেন, ‘এ খামারে খামার ব্যবস্থাপকসহ পদসংখ্যা রয়েছে ৫ জন। জনবল কম থাকায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। জনবল ও উপকরণ বাড়ানো গেলে আরও বেশি পরিমাণ রেনু উৎপাদন হবে এবং রাজস্ব বেশি আয় হতো।’
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের প্রধান উদ্যেশ্য গুণগত মানসম্পন্ন রেনু ও পোনা উৎপাদন করা। পাশাপাশি চাষিদের উদ্বৃদ্ধ করা এবং ভালো মানের পোনা সরবরাহ করা। এছাড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ চাষকৃত পুকুর পরিদর্শন করা হয়। তবে খামারে গবেষণা করে নতুন জাত সরবরাহ করা হলে চাষিরা আরও উপকৃত হবে।’
তিনি বলেন, ‘জেলায় বেশকিছু বেসরকারি মাছের খামার (হ্যাচারি) গড়ে উঠেছে। যা আমাদের বিভাগ থেকে তদারকি করা হয়। সরকারি এবং বেসরকারি হ্যাচারি মিলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছি বলে মনে করা হচ্ছে।’
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলী বলেন, ‘মা-বাবা মাছ যদি ভালো হয় তা থেকে উৎপাদিত রেনু ভালো হবে। পদ্মা ও যমুনাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ভালো মানের মা-মাছ সংগ্রহ করে রেনু উৎপাদন করা হয়। সরকারি খামার থেকে মাছ চাষিদের রেনু কেনার জন্য উদবুদ্ধ করা হয়। এতে ভালো রেনু পেয়ে চাষিরা লাভবান ও উপকৃত হবেন।’
পাবনায় বাঁশ বোঝাই ট্রাক উল্টে দুই শিশু শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছ। পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রোববার সকাল ৭টার দিকে একটি স্কুলগামী ভ্যানের উপড় বেড়া থেকে ছেড়ে আসা একটি বাঁশ বোঝাই ট্রাক অপর একটি গাড়িকে বাঁচাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভ্যানের উপড় পড়লে ভ্যানে থাকা দুই শিক্ষার্থীসহ ভ্যানচালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
এ ঘটনায় আহত সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সাদ হোসেনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মাঝে গয়েশপুর ইউনিয়নের পঞ্চমপুর গ্রামের বাসিন্দা আহম্মদ আলী শেখের ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র নূর মোহাম্মদ তোহা (১৩), জাফরাবাজ গ্রামের শামসুল মোল্লার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া (১৩) ও গঙ্গারাম পুর ইউনিয়ন এর ধর্মগ্রামের মৃত আব্বাস হোসেনের ছেলে ভ্যানচালক আকরাম আলী (৫৬)। দুই শিক্ষার্থী পাবনার জালালপুরের পাবনা ক্যাডেট কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, স্থানীয় জনতা এগিয়ে এসে বাঁশের স্তূপ সরিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করেন। এবং সড়কজুড়ে বাঁশ পড়ে, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এসে সড়ক থেকে গাড়ি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাসে এই স্থানে কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটেছে, সড়কে স্পিড ব্রেকার না থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তারা একটি স্পিড ব্রেকার স্থাপনের জোর দাবি জানায়।
মাধপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বেড়া থেকে বাঁশ বোঝাই ট্রাক পাবনা আসার পথে দুর্ঘটনা ঘটে এবং ট্রাকের হেলপার চালিয়ে আসছিল। ভ্যান ড্রাইভারসহ তিনজন নিহত ও একজন আহত হয়েছ তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি জব্দ করতে পারলেও তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য