ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতিতে বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মন্তব্য করেছেন সার উৎপাদনকারী বিশ্বের অন্যতম বড় কোম্পানি ইয়ারা ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভেইন টর হোলসিথার। তার মতে, ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সারের সংকটের কারণে এই বিপর্যয় ঘটতে পারে।
হোলসিথার বলেছেন, ‘সার ব্যবহারের সুবাদে পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠীর চাহিদার সমপরিমাণ বাড়তি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। যদি কিছু ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় সারের যোগান দেয়া না যায়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এটি মূলত বিশ্ব খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন নয়, বরং এই সংকট কত বড় হতে পারে সেটাই ভাববার বিষয়।’
সোমবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে ইয়ারা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের সার উৎপাদনের কাঁচামালের জন্য অনেকাংশেই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল।
ইতোমধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ায় সারের দামও বাড়ছে।
হোলসিথারের মতে, এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিস্থিতি প্রতি ঘণ্টায় বদলে যাচ্ছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই বিশ্বের অন্যতম খাদ্য ও কৃষিজ পণ্য উৎপাদনকারী। রাশিয়াতে পটাশ ও ফসফেটের মতো সার তৈরির প্রধান উপাদানগুলোও বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হয়।
ভেইন টর হোলসিথার বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের আগে থেকেই একটা কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। এখন সাপ্লাই চেইন বাড়তি বাধার মুখোমুখি হচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে এই মৌসুমে বিপুল পরিমাণ সার দরকার। আর চলমান এই যুদ্ধের প্রভাব সার সরবরাহেও পড়বে।’
রাশিয়ার ওপর আরোপ করা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নরওয়ের কোম্পানি ইয়ারার ওপর সরাসরি পড়েনি। তবে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কোম্পানির সার উৎপাদন ও সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ইতোমধ্যে দেশের সার উৎপাদনকারীদেরকে রপ্তানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া।
হোলসিথার জানান, ইউরোপে খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সারের প্রায় এক-চতুর্থাংশই আসে রাশিয়া থেকে। রাশিয়া থেকে রপ্তানি বন্ধ হলে সারের দাম বাড়তে পারে। একই সঙ্গে কমে যেতে পারে খাদ্য উৎপাদন। এর ফলে খাদ্যের দাম আরও বাড়বে।
অ্যামোনিয়া সার উৎপাদনের জন্য নাইট্রোজেনসহ বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রয়োজন হয়। ইউরোপে নিজেদের উৎপাদন কেন্দ্রে রাশিয়া থেকে আনা গ্যাস ব্যবহার করে ইয়ারা।
গত বছর গ্যাসের দাম বাড়ায় সাময়িকভাবে উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশ সার তৈরিতে বাধ্য হয়েছিল কোম্পানিটি।
জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, পটাশের অন্যতম সরবরাহকারী বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বছর সারের দাম বেড়েছিল। একইসঙ্গে বেড়েছিল খাদ্যের দামও।
হোলসিথার মনে করেন, সংকট সামলাতে চাইলে বিশ্বকে খাদ্যের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাড়তি জনসংখ্যার কারণে এমনিতেই বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা চাপের মুখে ছিল। পরে করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।
ইয়ারার প্রধানের মতে, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে গরিব দেশগুলোতে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হবে। এটিকে তিনি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে মনে করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে গত দুই বছরে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি বেড়েছে। তাই এই নতুন বিপর্যয় সত্যিই উদ্বেগের।’
স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) ও প্রতিবেশী লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে (এলপিআর) রক্ষার কথা বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৪ সালে কিয়েভে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় অঞ্চল দুটি।
হামলার যুক্তি হিসেবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, দেশটি চায় ইউক্রেনের ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’।
অপরপক্ষে ইউক্রেন বলছে, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরে সরকারি সাওয়াই মান সিং (এসএমএস) হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আটজন গুরুতর রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার গভীর রাতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ট্রমা সেন্টারের ইনচার্জ ডা. অনুরাগ ধাক্কাদ জানিয়েছেন, আগুন লাগে ভবনের স্টোরেজ এলাকায়। সে সময় নিউরো আইসিইউতে ১১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে গোটা তলায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। হাসপাতালে সংরক্ষিত নথি, আইসিইউ সরঞ্জাম ও রক্তের নমুনাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।
দমকল বাহিনী খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালের কর্মী ও রোগীর স্বজনরা আগুন লাগার পরপরই বিছানাসহ রোগীদের বাইরে সরিয়ে নেন।
ওয়ার্ডবয় বিকাশ পিটিআইকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ধোঁয়া দেখতে পাই এবং সঙ্গে সঙ্গে লোকজনকে বের করে আনি। অন্তত তিন-চারজন রোগীকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি, তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর আর ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি।’
ঘটনাস্থলে পৌঁছান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা, সংসদীয়বিষয়ক মন্ত্রী যোগরাম প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জওহর সিং বেধাম। তারা ক্ষতিগ্রস্ত রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তবে দুই রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, আগুন লাগার সময় হাসপাতালের কর্মীরা পালিয়ে যান এবং রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। তারা আরও জানান, আমরা ধোঁয়া দেখে কর্মীদের জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি।
এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। পাঁচ হাজার টন ওজনের ডেস্ট্রয়ারটি শত্রুদের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করতে সক্ষম। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রাগারে থাকা পাঁচ হাজার টন ওজনের দুটি ডেস্ট্রয়ারের মধ্যে ছো হিওন একটি। দুটি ডেস্ট্রয়ারই এই বছর চালু করা হয়েছে।
দেশটির নৌ সক্ষমতা বাড়াতে এটি কিম জং উনের প্রচেষ্টার একটি অংশ।
রোববার যুদ্ধজাহাজটি পরিদর্শনকালে কিম বলেন, যুদ্ধজাহাজটি ‘(উত্তর কোরিয়ার) সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের একটি স্পষ্ট প্রদর্শনী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশাল সমুদ্রে আমাদের নৌবাহিনীর অসাধারণ ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত, যাতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে শত্রুর উস্কানিকে পুরোপুরি প্রতিহত করা ও শত্রুদের শাস্তি দেওয়া যায়।’
কিম আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যে একই ধরনের তৃতীয় ডেস্ট্রয়ার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য হাজার হাজার উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েনের বিনিময়ে সম্ভবত রাশিয়ার সহায়তায় উত্তর কোরিয়া ছো হিওন তৈরি করেছে।’
কেসিএনএর ছবিতে দেখা গেছে, কিম জাহাজের ভেতরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তদারকি করছেন এবং মনিটরগুলোতে কোরিয়ান উপদ্বীপের চারপাশের সমুদ্র দেখা যাচ্ছে।
আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, সামরিক জেনারেলদের সামনে একটি মানচিত্রের দিকে ইঙ্গিত করছেন কিম।
পরমাণু অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকি প্রতিহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ২৮ হাজার ৫শ সৈন্য মোতায়েন করেছে এবং গত মাসে দেশটির নিরাপত্তা মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে।
পিয়ংইয়ং নিয়মিতভাবে এই ধরনের মহড়াকে আক্রমণের মহড়া হিসেবে নিন্দা করে আসছে। অন্যদিকে মিত্ররা জোর দিয়ে দাবি করেছে যে, এগুলো প্রতিরক্ষামূলক মহড়া।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা হতে পারে বলে সতর্ক করেছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি মনে করেন, আংশিক সরকারি শাটডাউন (অচলাবস্থা) থামাতে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটদলীয় সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো সমাধান আসেনি, তাহলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
গত বুধবার থেকে শাটডাউন শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা আগের দিন মধ্যরাতের মধ্যে নতুন সরকারি ব্যয় বা অর্থায়ন পরিকল্পনায় একমত হতে ব্যর্থ হওয়ায় এমন অবস্থা চলছে।
হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হাসেট সিএনএনের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন অনুষ্ঠানে বলেন, তার বিশ্বাস ডেমোক্র্যাটরা এখনো তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে। আর এর মধ্য দিয়ে একটি বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট এড়ানো সম্ভব হবে।
হাসেট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রাস ভট (হোয়াইট হাউসের বাজেট পরিচালক) সবকিছু প্রস্তুত করছেন এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তৈরি। তবে তারা আশা করছেন, সেটা করতে হবে না। প্রেসিডেন্ট যদি সিদ্ধান্ত নেন, আলোচনা একেবারেই ফলপ্রসূ হচ্ছে না, তবে তখন ছাঁটাই শুরু হবে।’
গত রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প সম্ভাব্য চাকরিচ্যুতিকে ‘ডেমোক্র্যাট ছাঁটাই’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, কেউ যদি চাকরি হারায়, তবে মনে করতে হবে, সেটা ডেমোক্র্যাটদের কারণে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অচলাবস্থা সত্ত্বেও রোববার ভার্জিনিয়ার নরফোকে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন ট্রাম্প।
নরফোকের নেভাল স্টেশনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হোয়াইট হাউস থেকে নেভাল স্টেশনটির উদ্দেশে যাত্রা করার আগে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, যা কিছুই ঘটুক, শো অবশ্যই চলবে।’ তিনি এটিকে নৌবাহিনীর দক্ষতা ও শক্তিমত্তা প্রদর্শনের শো বলে উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারে আংশিক অচলাবস্থার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তারা মার্কিন নৌবাহিনীর জন্মদিনের এই দারুণ উৎসবটাকে নষ্ট করতে চায়।
কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সর্বশেষ বৈঠকের পর এখন পর্যন্ত কোনো অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়নি।
সিনেটের সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার সিবিএসের ফেস দ্য নেশন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নন। ট্রাম্প ও কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে নতুন আলোচনার মাধ্যমেই কেবল অচলাবস্থার অবসান সম্ভব।’
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, সরকারে আংশিক শাটডাউন চলার কারণে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার ফেডারেল কর্মী বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের দিকে জুতা ছুড়ে মেরেছেন ৭১ বছর বয়সি এক আইনজীবী। ঘটনাটি জানার পর দিল্লি পুলিশ সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। তবে জুতা মারার ঘটনায় প্রধান বিচারপতি বিচলিত না হয়ে আইনজীবীদের আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, রাকেশ কিশোর নামের ওই আইনজীবী স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে কোর্ট নম্বর ১-এ শুনানি চলাকালে তাঁর স্পোর্টস শু খুলে প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের দিকে ছুড়ে মারেন।
একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা ওই আইনজীবীকে আটক করে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করেছে। তিনি ময়ূর বিহার এলাকার বাসিন্দা এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধিত সদস্য।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দির চত্বরে ‘ভগবান বিষ্ণু’র একটি মূর্তি পুনর্নির্মাণের আবেদন নিয়ে সাম্প্রতিক এক শুনানিতে প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে ওই আইনজীবী ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দিল্লি পুলিশ এখন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে সমন্বয় করছে। ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগে নয়াদিল্লি জেলা পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
প্রধান বিচারপতি গাভাই দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তা বিভাগের দেওয়া ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা পান।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রণের সঙ্গে দুই বিচারপতির বেঞ্চে সভাপতিত্ব করার সময় প্রধান বিচারপতি গাভাই মন্তব্যটি করেন। সে সময় তিনি খাজুরাহো মন্দির চত্বরের জাভরি মন্দিরে ৭ ফুট লম্বা জরাজীর্ণ ‘ভগবান বিষ্ণু’র মূর্তি পুনর্নির্মাণের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছিলেন।
প্রধান বিচারপতি গাভাই আবেদনকারীকে বলেছিলেন, ‘এটি পুরোপুরি প্রচারের স্বার্থে করা মামলা। আপনি যান এবং দেবতাকে নিজেকেই কিছু করতে বলুন। আপনি যদি নিজেকে ভগবান বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত বলে দাবি করেন, তবে প্রার্থনা করুন এবং কিছুটা ধ্যান করুন।’
পরে প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, তিনি ‘সব ধর্মকে সম্মান করেন’। তিনি স্পষ্ট করেন, মূর্তিটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই)। এই পটভূমিতে তিনি মন্তব্যটি করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘আমি সব ধর্মে বিশ্বাস করি, আমি সব ধর্মকে সম্মান করি।’
নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টাও পার হয়নি, তার আগেই পদত্যাগ করেছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লকর্নু। মাত্র ২৬ দিন আগে তিনি ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
এলিসি প্রাসাদ থেকে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে দেখা করতে এলিসি প্রাসাদে এসেছিলেন সেবাস্তিয়ান লকর্নু। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা এলিসি প্রাসাদে অবস্থান করেন।
গত মাসে ফ্রান্সের পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ফ্রাঁসোয়া বাইরু। তাঁর পদচ্যুতির পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন সেবাস্তিয়ান লকর্নু।
লকর্নু রোববার নতুন যে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন, তা নিয়ে ফ্রান্সের পার্লামেন্টের বেশির ভাগ দলের পক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি ওঠে। কারণ, লকর্নু তার পূর্বসূরি বাইরুর ভেঙে দেওয়া মন্ত্রিসভা প্রায় অক্ষত অবস্থায় ফেরত আনেন। এর সমালোচনা করে দলগুলো নতুন মন্ত্রিসভাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার হুমকি দেয়।
এখন কয়েকটি দল আগাম নির্বাচনের দাবি তুলছে, কেউ কেউ মাখোঁর পদত্যাগ দাবি করছে। মাখোঁর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন না।
গত বছরের জুলাই থেকে ফ্রান্সের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। দেশটির সর্বশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনে কোনো দল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
এর ফলে কোনো প্রধানমন্ত্রীই বিল এবং বার্ষিক বাজেট পাস করানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারছেন না।
ফ্রান্সে দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে এ নিয়ে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পথ বেছে নিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি সমাধানের জন্য তার পরিকল্পনার প্রথম ধাপ আগামী সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। গত রোববার রাতে নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।
ট্রাম্প বলেন, ‘এই সপ্তাহান্তে হামাস এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের (আরব, মুসলিম এবং অন্য সকলের) সঙ্গে খুবই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। জিম্মিদের মুক্তি, গাজায় যুদ্ধের অবসান - কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করা হয়েছে। এই আলোচনা খুবই সফল হয়েছে এবং দ্রুত এগিয়ে চলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চূড়ান্ত বিশদ বিবরণ পরিষ্কার করার জন্য এবং কাজ করার জন্য কারিগরি দলগুলো সোমবার মিসরে আবার মিলিত হবে। আমাকে বলা হয়েছে যে, প্রথম পর্যায়টি এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হওয়া উচিত। আমি সকলকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
ট্রাম্প উল্লেখ করেন, এ বিষিয়ে কোনো বিলম্ব হবে ‘ব্যাপক রক্তপাতের হুমকি আসবে - এটি এমন কিছু যা কেউ দেখতে চায় না।’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস গাজা উপত্যকার সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে ট্রাম্পের ‘ব্যাপক পরিকল্পনা’ প্রকাশ করে। এই নথিতে ২০টি দফা রয়েছে এবং বিশেষ করে ফিলিস্তিনি অঞ্চলটিতে অস্থায়ী ‘বহিরাগত প্রশাসন’ প্রবর্তন। আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথাও বলা হয়েছে। ইসরায়েল এই পরিকল্পনার সঙ্গে একমত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী ১ হাজারেরও বেশি সেনাকে হারিয়েছে। সোমবার এক প্রতিবেদনে জেরুজালেম পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ১ হাজার ১৫২ জন সামরিক সদস্য প্রাণ হারিয়েছে।
ইরানি সংবাদমাধ্যম পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকাশিত পরিসংখ্যানে গাজা উপত্যকা, অধিকৃত অঞ্চলের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল এবং লেবাননের পাশাপাশি পশ্চিম তীরে অবস্থানরত ইসরায়েলি নিরাপত্তা সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পার্সটুডে জানায়, দখলদার বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রায় তিন বছর ধরে গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে একটি পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করেছে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
মন্তব্য