নিজ দেশে রুশ সেনাদের হামলার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। নানা উপায়ে তাদের সহযোগিতায় অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এবার ইউক্রেনের জন্য প্রবাস সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারদের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে কীভাবে সহায়তা করা হবে তার একটা গতিপথ তৈরি হয়ে গেছে। পরিকল্পনার বিস্তারিত কর্মকর্তারা জানাতে চাননি। ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার জন্য পরিকল্পনা করছে পশ্চিমারা।
এতে বলা হয়েছে, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য কীভাবে একটি প্রবাস সরকার গঠন করা যায় তা নিয়ে সহযোগিতার পরিকল্পনা করছে পশ্চিমারা। এই প্রক্রিয়ায় রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ চালানো হবে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র যে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং যেগুলো সে দেশে পাঠানো হচ্ছে, তা আন্দোলনের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
টানা কয়েকদিন ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা চালাতে শুরু করে রাশিয়া। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনও।
যুদ্ধে প্রতিদিনই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবন ও স্থাপনাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বহু মানুষ। যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে এরই মধ্যে দুই দফা ইউক্রেন-রাশিয়া বৈঠকে বসলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সার্বিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিকসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইউক্রেনে অস্ত্র ও অস্ত্র কিনতে অর্থও পাঠিয়েছে বেশ কিছু দেশ।
ইউক্রেনের ব্যাপক ড্রোন হামলায় রাশিয়ার কুরস্কে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্ষমতা হঠাৎ কমে গেছে এবং লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের উস্ত-লুগা জ্বালানি টার্মিনালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই হামলাগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রোববার অন্তত ৯৫টি ইউক্রেনীয় ড্রোন বিভিন্ন অঞ্চলে ভূপাতিত করা হয়। এ দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে ইউক্রেন। ১৯৯১ সালের এ দিনেই সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়েছিল দেশটি।
ইউক্রেনের সর্বশেষ হামলার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে রাশিয়ার কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই কেন্দ্রের ৩ নম্বর রিঅ্যাক্টরে ড্রোন হামলার কারণে একটি সহায়ক ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে রিঅ্যাক্টরের কার্যক্ষমতা অর্ধেকে নেমে আসে। কেন্দ্রটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া অন্য দুটি রিঅ্যাক্টর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে এবং একটি মেরামতের কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক তদারকি সংস্থা (আইএইএ) ঘটনাটির প্রতি গভীর নজর রাখছে। সংস্থাটি বলেছে, সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে কুরস্ক প্ল্যান্টে ট্রান্সফরমারে আগুন লাগার খবর তারা পেয়েছে এবং সব ধরনের পারমাণবিক স্থাপনাকে যেকোনো মূল্যে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, উত্তরে ফিনল্যান্ড উপসাগরের তীরে উস্ত-লুগা বন্দর এলাকায় ড্রোন হামলার পর নোভাটেক পরিচালিত একটি বিশাল জ্বালানি রপ্তানি টার্মিনালে আগুন ধরে যায়। লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার দ্রজদেনকো জানিয়েছেন, অন্তত ১০টি ড্রোন গুলি করে নামানো হলেও এর ধ্বংসাবশেষ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ছড়িয়ে পড়া কালো ধোঁয়া আকাশ ঢেকে ফেলে। দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলেও তিনি জানান। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ড্রোন সরাসরি টার্মিনালে আঘাত হানে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিশাল আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠে যায়। নোভাটেক জানিয়েছে, ২০১৩ সালে চালু হওয়া এই টার্মিনালে গ্যাস কনডেনসেট প্রক্রিয়াজাত করে ন্যাপথা, জেট ফুয়েল, ফুয়েল অয়েল ও গ্যাস অয়েল উৎপাদন করা হয়। পরে এগুলো মূলত এশিয়া ও তুরস্কে রপ্তানি করা হয়।
হামলার কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের পুলকোভো বিমানবন্দরও ছিল। এছাড়া দক্ষিণ রাশিয়ার সামারা অঞ্চলে একটি শিল্প কারখানায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একটি শিশু আহত হয়েছে বলে স্থানীয় গভর্নর জানিয়েছেন।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার কথা উঠলেও বাস্তবে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, যেখানে ইউক্রেন-রুশ সীমান্ত বরাবর দীর্ঘ দুই হাজার কিলোমিটারজুড়ে তীব্র লড়াই চলছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের আগ্রাসন কারণে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অপুষ্টিতে আরও আট শিশু মারা গেছে। ইসরায়েল হামলা শুরুর পর গত প্রায় দুই বছরে গাজায় এ নিয়ে অন্তত ২৮১ জন অপুষ্টিতে মারা গেছেন, যাদের মধ্যে শিশু ১১৪টি।
এদিকে অপুষ্টির শিকার এসব শিশুর চিকিৎসা করতে অন্তত ১০টি হাসপাতাল দরকার বলে জানিয়েছেন শহরটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া ও নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু হাসপাতালের পরিচালক আহমদ আল-ফারা।
আবু সালমিয়া বলেন, শিশুদের পাশাপাশি গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আহত হয়ে আরও যারা ভর্তি হয়েছেন, তারাও বিভিন্ন মাত্রায় অপুষ্টিতে ভুগছেন। অপুষ্টি গাজার অন্যতম প্রধান সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। আল-ফারা বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ভর্তি ১২০টি শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার। যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, সারা জীবন তাদের মাশুল গুনতে হবে।’
এছাড়া গত শুক্রবার দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) এক প্রতিবেদনে জানায়, গাজা উপত্যকার গাজা নগর প্রশাসনিক অঞ্চল ও আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছে। এতে অন্তত ৫ লাখ ১৪ হাজার গাজাবাসী দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী মাসের শেষের দিকে উপত্যকার মধ্যাঞ্চলের প্রশাসনিক অঞ্চল দেইর আল-বালাহ ও দক্ষিণের খান ইউনিসেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের অনুদান ও সহায়তায় পরিচালিত আইপিসির প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল গাজায় দুর্ভিক্ষের দাবি অস্বীকার করেছে।
কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আইপিসির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এক বিবৃতিতে গাজার দুর্ভিক্ষকে ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়’ ও ‘মানবতার ব্যর্থতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক ‘গাজার দুর্ভিক্ষকে ইসরায়েল সরকারের কর্মকাণ্ডের সরাসরি ফলাফল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, গাজায় নিজেরা যে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, তা অস্বীকার করা ইসরায়েলকে বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, যাদের (যেসব দেশের) প্রভাব আছে, তাদের এটাকে (আইপিসির প্রতিবেদনকে) গুরুত্ব ও নৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত। জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব টম ফ্লেচারের বিবৃতি ধরে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
আইপিসির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় টম ফ্লেচার বলেন, ‘এ দুর্ভিক্ষ পুরোপুরি ঠেকানো যেত। কিন্তু ইসরায়েলের পরিকল্পিত বাধায় গাজায় খাদ্য ঢুকতে পারছে না। তাই দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে।’
মিসর সীমান্তে ত্রাণভর্তি হাজারো ট্রাক কয়েক মাস ধরে গাজায় ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু গত মার্চ থেকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। মে মাসের শেষ থেকে তারা গাজায় কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এদিকে ইসরায়েলের ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার সমর্থন না পেয়ে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসপার ভেল্ডক্যাম্প পদত্যাগ করেছেন। ভেল্ডক্যাম্প মধ্য ডানপন্থি নিউ সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট দলের সদস্য।
মিডল ইস্ট আই–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে ইসরায়েলপন্থি ভাষা ব্যবহার না করার অভিযোগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক গণমাধ্যমবিষয়ক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছ। তাঁর নাম শাহেদ ঘোরেইশি। তিনি বার্তা সংস্থা এপির এক প্রশ্নের জবাবে লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজাবাসীদের জোরপূর্বক স্থানান্তরকে সমর্থন করে না।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৬৩ ফিলিস্তিনি
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীর ভেতরে আরও অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে তারা।
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ইসরায়েলি ট্যাংক গাজা নগরীর সাবরা এলাকায় প্রবেশ করেছে। এটি ওই অঞ্চলে সেনাদের স্থল অভিযানের সম্প্রসারণের ইঙ্গিত বহন করে। সাবরা গাজা নগরীর অবরুদ্ধ জায়তুন এলাকার কাছাকাছি, যেটি গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক হামলার শিকার। আল-আহলি হাসপাতালের এক সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ সাবরায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এদিন সকালে খান ইউনূসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল আসদা এলাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুতে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জন শিশু।
মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে দিনভর আরও অন্তত ২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খান ইউনূসের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে একজনকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। নেতজারিম করিডরের কাছেও খাদ্যের সন্ধানে আসা এক বেসামরিক নাগরিক গুলিতে নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮১ জনে। এর মধ্যে ১১৪ জনই শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ বলেছেন, ‘ক্ষুধা নিঃশব্দে মানুষের দেহকে কুরে কুরে খাচ্ছে, শিশুদের জীবন থেকে বঞ্চিত করছে এবং প্রতিদিন তাঁবু ও হাসপাতালকে শোকে ভরিয়ে তুলছে।’
জাতিসংঘ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে—যা মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের প্রথম ঘটনা। সংস্থাটি বলছে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধা’র মুখোমুখি। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস একে ‘মানবসৃষ্ট দুর্যোগ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার এবং রাজনীতির তরুণ মুখ থালাপতি বিজয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি দলের রাজ্য সম্মেলনে দেওয়া উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণে তিনি বিজেপিকে সরাসরি ‘আদর্শিক শত্রু’ আখ্যা দেন। বিজয়ের ভাষায়, ‘সিংহ কখনো বিনোদনের জন্য বের হয় না, সিংহ কেবল শিকারের জন্য বের হয়। রাজনীতির ময়দানেও আমি সেই সিংহের মতো লড়ব।’
বিজয় ইতোমধ্যেই তামিলনাড়ুতে নতুন রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) গঠন করেছেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তার দল প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বিজয় তার দলের অবস্থানকে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন। তিনি ইতিহাস, আঞ্চলিক গর্ব এবং জনসেবার আদর্শকে সামনে রেখে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিভিকে-র দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে বিজয়ের ভাষণ ছিল অত্যন্ত প্রতীকী, আবেগঘন এবং রাজনৈতিক বার্তায় ভরপুর। তিনি বলেন, ‘একটি সিংহ জানে কখন ভিড়ের সঙ্গে চলতে হবে আর কখন একা দাঁড়িয়ে লড়তে হবে। সিংহের মতো আমরাও জানি, কখন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, তার দল বিজেপির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা বা জোট করছে না। গুজব উড়িয়ে দিয়ে তিনি স্পষ্ট জানান, ‘আমরা বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছি না। আমাদের দল কারও ধর্মবিরোধী নয়। আমরা জনগণের দল। তামিলনাড়ুর মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবে।’
বিজেপিকে ‘আদর্শিক শত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করে বিজয় অভিযোগ করেন, বিজেপি তামিলনাড়ুর বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সামাজিক বাস্তবতাকে অবহেলা করছে। তার ভাষায়, বিজেপির নীতি হচ্ছে ‘জনবিরোধী’ আর তাদের শাসনব্যবস্থা ‘কেন্দ্রীকরণমূলক’। তিনি বলেন, ‘আমাদের লড়াই শুধুই ক্ষমতার জন্য নয়, আমাদের লড়াই নৈতিকতা, আত্মপরিচয় এবং জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য।’
বিজয় কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘এনইইটি (NEET) বাতিল করুন! পারবেন কি নরেন্দ্র মোদি আগরওয়াল? যদি জনগণের জন্য কাজ করার সাহস থাকে, তবে এই অন্যায় পরীক্ষার অবসান ঘটান।’
বিজয়ের এই মন্তব্য তামিলনাড়ুর তরুণ সমাজ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবল সাড়া ফেলেছে, কারণ এনইইটি পরীক্ষার বিরোধিতা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজয়ের এই ভাষণ ছিল তার দল টিভিকে-র জন্য এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’। তারা মনে করছেন, বিশাল জনসমাগমে দেওয়া তার এই স্পষ্ট ও চ্যালেঞ্জিং বক্তৃতা টিভিকে-কে রাজনীতির মাঠে ‘উঠতি শক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।
জনসেবা, সততা এবং নৈতিক স্পষ্টতাকে ভিত্তি করে বিজয় তামিলনাড়ুর জনগণের সামনে নতুন এক রাজনৈতিক বিকল্প হাজির করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি তিনি এই ধারা বজায় রাখতে পারেন, তবে টিভিকে আগামী নির্বাচনে তামিল রাজনীতির এক বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
শ্রীলঙ্কার তিন সাবেক প্রেসিডেন্ট রোববার কারাবন্দী সাবেক নেতা রনিল বিক্রমাসিংহের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং তার কারাবাসকে গণতন্ত্রের ওপর ‘পরিকল্পিত আক্রমণ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। কলম্বো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
জুলাই ২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা বিক্রমাসিংহের সাবেক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এই তিন জন বলেছেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অমূলক।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে হাভানায় জি৭৭ শীর্ষ সম্মেলন এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে দেশে ফেরার সময় ব্রিটেনে যাত্রাবিরতির জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিলের ৫৫ হাজার ডলার ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
৭৬ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহকে রিমান্ডে নেওয়ার একদিন পর শনিবার তাকে কলম্বোর প্রধান রাষ্ট্রীয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তিনি তীব্র ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি তীব্র পানিশূন্যতায় ভুগছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা যা দেখছি, তা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মূল বিষয়গুলোর ওপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।’
৮০ বছর বয়সী কুমারাতুঙ্গা বলেছেন, বিক্রমাসিংহের কারাদণ্ডের পরিণতি সমস্ত নাগরিকের অধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে।
কুমারাতুঙ্গা আরও বলেন, ‘আমি এই উদ্যোগগুলোর বিরুদ্ধে আমার অকপট বিরোধিতা প্রকাশ করছি, যা প্রতিরোধ করা সমস্ত রাজনৈতিক নেতার কর্তব্য।’
তার উত্তরসূরী ৭৯ বছর বয়সী মাহিন্দা রাজাপাকসে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করার কিছুক্ষণ আগে বিক্রমাসিংহের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং শনিবার তাকে কারাগারে দেখতে যান।
৭৩ বছর বয়সী মৈত্রীপালা সিরিসেনা এই কারাবাসকে ডাইনি শিকার (উইচ হান্ট) আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেছিলেন এবং ৫২ দিন পরে সুপ্রিম কোর্ট তাকে পুনর্বহাল করতে বাধ্য করেছিলেন।
বিক্রমাসিংহের নিজস্ব ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) শনিবার জানিয়েছে, তারা বিশ্বাস করে যে, তিনি আবারও ফিরে আসতে পারেন- এই ভয়ে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি অনুরা কুমারা দিশানায়েকের কাছে হেরে যান। কিন্তু কোনও নির্বাচিত পদ না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছেন।
২০২২ সালে দ্বীপরাষ্ট্রটির সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বেরিয়ে আসা দিশানায়েকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে বিক্রমাসিংহকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে চলা রাজপথের বিক্ষোভের পর তৎকালীন নেতা গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করার পর ২০২২ সালের জুলাই মাসে বিক্রমাসিংহ প্রেসিডেন্ট হন।
তুরস্কের ফার্স্ট লেডি শনিবার তার যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে চিঠি লিখে ইউক্রেনের শিশুদের প্রতি তিনি যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গাজার শিশুদের প্রতিও তেমনই উদ্বেগ প্রকাশ করতে বলেছেন।
ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
এমিন এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডিকে গাজার শিশুদের প্রতি করুণা দেখানোর জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখতে বলেছেন।
এই মাসের শুরুতে আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে তিনি শিশুদের স্বার্থে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে অনুরোধ করেছেন।
তুরস্কের ফার্স্ট লেডি লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, যুদ্ধে প্রাণ হারানো ৬৪৮ জন ইউক্রেনীয় শিশুর প্রতি আপনার দেখানো গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীলতা গাজাতেও প্রসারিত হবে, যেখানে দুই বছরের ব্যবধানে ১৮ হাজার শিশুসহ ৬২ হাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি মেলানিয়াকে লিখেছেন, ‘একজন মা, একজন নারী এবং একজন মানুষ হিসেবে যারা শান্তি ও প্রশান্তি কামনা করে তাদের পক্ষ থেকে আমি আপনার চিঠিতে প্রকাশিত অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে একমত এবং আমি আশা করি আপনি গাজার শিশুদেরও অনুরূপ আশা দেবেন। ’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান যুদ্ধের চতুর্থ বছরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেছেন।
মঙ্গলবার, তিনি ইসরাইলকে গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ করে বলেন, ফিলিস্তিনি ছিটমহল থেকে আসা ছবিগুলো ‘নাৎসি শিবিরের’ চেয়েও খারাপ।
শুক্রবার জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে, যা নেতানিয়াহু ‘নির্লজ্জ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ভূমধ্যসাগরে স্পেনের বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার সময় নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে ১২ জন অভিবাসী নিখোঁজ হয়েছে, শনিবার সেখানকার কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মাদ্রিদ থেকে এএফপি জানায়, ক্যাব্রেরা দ্বীপের ৫৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে একই নৌকা থেকে আরও ১৪ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে ।
উদ্ধারকৃত অভিবাসী কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, শুক্রবার ১২ জন যাত্রি নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়েন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, স্পেনের সিভিল গার্ড এবং কোস্টগার্ড উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, এই বছর উত্তর আফ্রিকা থেকে বালিয়ারিকে অভিবাসন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
বছরের শুরু থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত, ৪ হাজার ৩২৩ জন অভিবাসী দ্বীপপুঞ্জে এসেছে। ২০২৪ সালে একই তারিখে এই সংখ্যা ছিল ২,৪৪৩ জন। এবারে বৃদ্ধির হার ৭৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক মহাসাগরে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে আগমন ৪৬ শতাংশ কমেছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আরও ৭১ জন নিহত হয়েছেন। একই সময় ২৫১ জন আহত হয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা এখনো অজানা। কারণ, হতাহত অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা সম্ভব হয়নি।
আনাদোলু এজেন্সির খবরে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া আল জাজিরার এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার কিছুক্ষণ উড়ে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলে। এতে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সেখানে অনেক ফিলিস্তিনি অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আল-আহলি হাসপাতালের একটি চিকিৎসা সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আরও একজন নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহারে ও অপুষ্টিতে নতুন করে দুজন মারা গেছেন, যার মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ-সম্পর্কিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৭৩ হয়েছে, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু।
মন্ত্রণালয় বলেছে, অনেকেই এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। তারা আরও উল্লেখ করেছে, ইসরাইলি বোমা হামলা ও সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকারী দলগুলো তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে তাদের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার পর থেকে ১০ হাজার ৭১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৫ হাজার ৩২৪ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী মানবিক সহায়তা নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপরও হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ১৩৩ জন আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মতে, ২৭ মে থেকে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ২ হাজার ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৫ হাজার ১৯৭ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, হামাস যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের শর্তে সম্মত না হলে গাজার বৃহত্তম শহরটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬২ হাজার ২৬৩ জন নিহত এবং এক লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল।
গাজার দুর্ভিক্ষের বর্ণনা দিলেন এক মা
গত পাঁচ মাস ধরে আমরা কোনো আমিষ খাইনি। আমার ছোট ছেলের বয়স চার বছর। কিন্তু সে জানেই না যে ফলমূল আর সবজি দেখতে কিংবা খেতে কেমন হয়। কথাগুলো বলছিলেন গাজা শহরে পাঁচ সন্তান নিয়ে বসবাসরত ৪১ বছর বয়সী নারী রীম তৌফিক খাদার।
গাজার দুর্ভিক্ষে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষের ঘোষণা অনেক দেরিতে এসেছে কিন্তু তবুও এটা গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো গাজা উপত্যকার কিছু অঞ্চলজুড়ে দুর্ভিক্ষের ঘোষণার পর সেখানকার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ভয়াবহ ক্ষুধা কীভাবে তাদের শরীরে প্রভাব ফেলছে।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসরায়েল ব্যাপকভাবে বাধা দিচ্ছে। তবে ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। গাজাজুড়ে যে অনাহার চলছে, সেকথাও ইসরায়েল অস্বীকার করেছে যা ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী, শতাধিক মানবিক গোষ্ঠী ও জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
গত শুক্রবার জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এখন ক্ষুধা, চরম দারিদ্র্য ও মৃত্যুর মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ছয় সন্তানের মা রাজা তালবেহ ২৫ কেজি ওজন হারিয়েছেন। গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় তার বাড়ি ছিল। কিন্তু এক মাস আগে তিনি তা ছেড়ে চলে এসেছেন। এখন তিনি সমুদ্রের ধারে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকছেন।
তার শরীর গ্লুটেন মানে শস্য জাতীয় খাবার সহ্য করতে পারে না। তাই বাজারে বা আশেপাশে তার খাওয়ার মতো খাবার খুঁজে পাওয়াটা এখন কঠিন বিষয় হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের আগে একটি দাতব্য সংস্থা আমাকে গ্লুটেন-মুক্ত খাবার পেতে সাহায্য করতো। কারণ ওই খাবার কিনে খাওয়া আমার সাধ্যের বাইরে ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমার যা দরকার, আমি তা বাজারে পাই না। আর পেলেও কিনতে পারি না। প্রতিদিন বোমাবর্ষণ, বাস্তুচ্যুত জীবন, গরম ও শীত থেকে রক্ষা করতে পারে না এমন এক তাঁবুতে এভাবে থাকা, এর ওপর আবার দুর্ভিক্ষ, এগুলো কি যথেষ্ট নয়?
২৯ বছরের রিদা হিজেহ জানান, তার পাঁচ বছরের মেয়ে লামিয়ার ওজন ১৯ কেজি থেকে নেমে সাড়ে দশ কেজি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের আগে লামিয়ার কোনো রোগ ছিল না। সবকিছুই হয়েছে কেবল দুর্ভিক্ষের কারণে। একটি শিশুর খাওয়ার মতো কিছুই নেই। কোনো সবজি নেই, ফল নেই।
তিনি আরও বলেন, লামিয়া এখন পা ফোলা, চুল পড়া ও স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে। সে হাঁটতে পারে না। আমি বহু ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, ক্লিনিক-হাসপাতাল ঘুরেছি। তারা সবাই বলেছে, আমার মেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে। কিন্তু তারা কেউ কিছু দেয়নি। না চিকিৎসা, না কোনো সহায়তা।
ইউকে-মেড নামের একটি ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থার হয়ে গাজায় কাজ করছেন ব্রিটিশ নার্স ম্যান্ডি ব্ল্যাকম্যান। তিনি বলেন, মাতৃত্বকালীন, প্রসবের আগে ও প্রসবপরবর্তী অবস্থায় যেসব মায়েরা ক্লিনিকে আসেন, তাদের ৭০ শতাংশের শরীরে অপুষ্টি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের আকার ছোট হচ্ছে এবং তারা বেশ নাজুক।
মন্তব্য