ইউক্রেনে সামরিক অভিযান নিয়ে কূটনৈতিক টানাপড়েনে আছে ভারত। দিল্লি চাইছে, পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপশি মস্কোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে।
এই ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া প্রথম বিবৃতিতে কোনো দেশের নাম সরাসরি উল্লেখ করেনি ভারত। কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে সাড়া না দেয়াকে দুঃখজনক বলেছে দিল্লি।
ইউক্রেনে রুশ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি একটি খসড়া প্রস্তাব তোলা হয়। ভোটের আগেই ভারতের প্রতি রাশিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানিয়েছিল তারা যেন ‘সঠিক পদক্ষেপ’ নেয়।
কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে ভোটদানে বিরত থাকে ভারত। তবে তাদের বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে মস্কোকে পরোক্ষভাবে আহ্বান জানিয়েছে দিল্লি।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধার ওপর গুরুত্বের কথা বলা হয়। সেই সঙ্গে সংকট সমাধানের গঠনমূলক উপায় খুঁজে পেতে সব সদস্যরাষ্ট্রকে এই নীতিগুলোর প্রতি সম্মান দেখানোর তাগিদ দেয় দিল্লি।
ভোটদানে বিরত থাকায় ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ায়। তা হলো, এই ইস্যুতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত ছিল কি না।
ভারতের সামনে বিকল্প কী
ভারতের সাবেক কূটনীতিক জে এন মিশ্রের বলেন, ‘এই ইস্যুতে ভারতের সামনে যেসব বিকল্প আছে, তার কোনোটিই ভালো নয়।
‘একই সময়ে কেউ দুইপাশে কাত হতে পারে না। বিবৃতিতে ভারত কোনো দেশের নাম নেয়নি। এর অর্থ মস্কোর বিরুদ্ধে যাবে না দিল্লি।’
ইউক্রেন প্রশ্নে কূটনীতিক সমাধানের ভারতের জোর দেয়ার কিছু কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মস্কোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা ও কূটনীতিক সম্পর্ক।
ভারতে অস্ত্রের যোগান দেয়া দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া এখনও শীর্ষে। যদিও সরবরাহ ৭০ শতাংশ থেকে নেমে এখন ৪৯-এ দাঁড়িয়েছে। এর কারণ অবশ্য ভারত সরকারের পররাষ্ট্রনীতি। অস্ত্র সংগ্রহে বৈচিত্রতা আনতে চাইছে দিল্লি। নিজেরাই এখন অস্ত্র উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে।
অত্যাধুনিক এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মতো সামরিক সরঞ্জাম ভারতকে সরবরাহ করছে রাশিয়া। যা চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত প্রতিরোধ গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার হুমকির পরও মস্কোর কাছ থেকে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেনি ভারত।
প্রতিরক্ষা সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ
বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে কয়েক দশকের কূটনৈতিক সহযোগিতা এড়িয়ে যাওয়াটা ভারতের জন্য বেশ কঠিন। কাশ্মীর প্রশ্নে জাতিসংঘে ভেটো দিয়ে ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল মস্কো। তাই আলোচনায় সংকট সমাধানের পক্ষেই জোর দিচ্ছে দিল্লি।
থিঙ্কট্যাংক উইলসন সেন্টারের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে ভারতের অবস্থানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অতীত কৌশলই বেছে নিয়েছে দিল্লি।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে যা ঘটছে, তাতে দিল্লির খুশী হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তাই বলে অবস্থান বদলের কোনো সম্ভাবনাও নেই।
‘প্রতিরক্ষা ও ভূরাজনৈতিক প্রয়োজনে এ মুহূর্তে ভারত তার অবস্থান বদলাতে পারবে না। যদিও ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দিল্লি কিছু কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছে। ইউক্রেন সংকটে যে দিল্লি স্বাচ্ছন্দ্য নয়, তা বোঝাতেই এমনটা করা হয়েছে।’
ইউক্রেনে ২০ হাজারের বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থীর বাস। তাদের নিরাপদে উদ্ধার ভারত সরকারের জন্য কঠিন পরীক্ষা।
ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়াত। এক সময় কাজ করেছেন রাশিয়া ও লিবিয়ায়। ২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, সেখান থেকে ভারতীয়দের সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদারকি করেছিলেন অনিল।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন থেকে ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার অভিযান সফল করার জন্য এই সংঘাতে জড়িত সবপক্ষের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজন।
‘নাগরিকদের ঝুঁকিতে ফেলে কোনো পক্ষে যেতে পারবে না ভারত। তা ছাড়া এমন প্রেক্ষাপটে সবার সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ রাখাটাও জরুরি।’
সংকট সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ওয়াশিংটনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন আমেরিকানদের সঙ্গে।
কূটনীতিক ত্রিগুনায়াত বলেন, ‘ইউক্রেন প্রশ্নে সরাসরি রাশিয়ার সমালোচনা করেনি ভারত। তবে ইউক্রেনবাসীর দুর্দশা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তাই ভারসাম্য বজায়ের নীতি বেছে নিয়েছে দিল্লি। জাতিসংঘে ভারত আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে কড়া বক্তব্য রেখেছে। যার উদ্দেশ্য ইউক্রেনীয়দের দুর্ভোগ তুলে ধরা।’
কিন্তু ওয়াশিংটন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যদি রাশিয়ায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে, তবে মস্কোর সঙ্গে দিল্লির বাণিজ্যিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে সম্প্রতি ইউক্রেন প্রশ্নে ভারতের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি। বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে পরামর্শ করতে যাচ্ছি। বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান হয়নি।’
এস-৪০০ কেনায় আমেরিকার পক্ষ থেকে এখনও নিষেধাজ্ঞা আসেনি। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়াকে টার্গেট করে ২০১৭ সালে কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাভারসারিজ থ্রু নিষেধাজ্ঞা আইন (Caatsa) প্রণয়ন করে ওয়াশিংটন। এ আইনে কোনো দেশকে এই তিন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে নিষেধ করে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর আগেও ওয়াশিংটন কোনো ছাড় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি দিল্লিকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দর কষাকষি হতে পারে। এদিকে দিল্লি যদি তাদের কৌশল পরিবর্তন করে তবে তাদের চাপে ফেলতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দেবে মস্কো।
উইলসন সেন্টারের কুগেলম্যান বলেন, ‘এ পরিস্থিতি তখনই আসবে, যখন ইউক্রেন সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হবে।
‘আশা করি এটা ঘটবে না। কিন্তু ঘটলে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বে।’
আরও পড়ুন:গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে এবং আরও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছে। এই দীর্ঘ সংঘাতের পর এমন একটি চুক্তির সম্ভাবনা সামনে এসেছে যা গাজায় হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং জীবিত জিম্মিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে। বলা যায় এটাই সর্বশেষ সুযোগ যেটা কাজে লাগিয়ে এই গণহত্যা বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয় যে, হামাস এবং ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করার এই মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে কি না।
এটা অনেকটাই কাকতালীয় ঘটনা যে গাজা সংঘাতের ঠিক দুই বছরপূর্তির মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে সময়ের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলের ধারণা ২০ জন জিম্মি এখনো জীবিত আছে এবং তারা আরও ২৮ জনের মৃরদেহও ফেরত চায়।
ইসরায়েলের ভয়াবহ আগ্রাসনে গাজার বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং ১৮ হাজারেরও বেশি শিশু।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় দেশের নাগরিকরাই যুদ্ধের অবসান চায়। তারা চলমান এই যুদ্ধ নিয়ে হতাশ ও ক্লান্ত। এক জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠরা এমন একটি চুক্তি চায় যার মাধ্যমে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা যাবে এবং যুদ্ধের অবসান ঘটবে। ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী এবং আইডিএফের লাখ লাখ রিজার্ভ সেনা মাসের পর মাস ধরে সক্রিয়ভাবে ইউনিফর্ম পরে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চায়।
গাজার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সেখানে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্ষুধার্ত মানুষ। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কঠোর অবরোধের কারণে কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।
হামাস দুই বছর আগে ইসরায়েলকে যে ধ্বংসাত্মক শক্তি দিয়ে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল তা অনেক আগেই একটি সুসংগত সামরিক সংগঠন হিসেবে ভেঙে পড়েছে।
হামাসও এখন যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানিয়েছে। তারা জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার শাসনভার ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে রাজি হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে, তাদের ভারী অস্ত্রের অবশিষ্টাংশ হস্তান্তর করতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে। তবে তারা আত্মরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্র রাখতে চায়।
অপরদিকে ইসরায়েল হামাসের আত্মসমর্পণের শর্তাবলি নির্ধারণ করতে চাইছে। কিন্তু হামাসের কাছে একটি গুরুতর আলোচনার সুযোগ থাকা এক মাস আগে তারা যা ভেবেছিল তার চেয়েও বেশি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। প্রায় এক মাস আগে দোহার একটি ভবনে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েল হামাসের নেতৃত্বকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল এবং ব্যর্থ হয়েছিল। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়েই সে সময় আলোচনা চলছিল।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মনে ভিন্ন ধরনের চিন্তা রয়েছে। তিনি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে চান, দুর্নীতির জন্য তার বিচার স্থগিত রাখতে চান এবং পরের বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করতে চান।
এটা তিনি তখনই অর্জন করতে পারবেন যখন তিনি ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ ঘোষণা করতে পারবেন। তিনি এটাকে জিম্মিদের প্রত্যাবর্তন, হামাসের ধ্বংস এবং গাজার সামরিকীকরণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যদি তিনি তা করতে না পারেন, তাহলে গত দুই বছরে লেবানন এবং ইরানে-ইসরায়েল তার শত্রুদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে শুধু সেসব বিষয় উল্লেখ করাই তার পক্ষে যথেষ্ট হবে না।
মিসরে হামাস এবং ইসরায়েলি আলোচকরা মুখোমুখি সাক্ষাৎ করবেন না। মিসরীয় এবং কাতারি কর্মকর্তারা এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হবেন এবং সেখানে উপস্থিত মার্কিন কর্মকর্তারাও একটি বড় প্রভাব ফেলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই আলোচনার ভিত্তি হলো- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জোরালোভাবে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের কথা বারবার বললেও জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী ভূমির নিয়ন্ত্রণে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দীর্ঘ সংঘাতের অবসানের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এতে পশ্চিম তীরের ভবিষ্যৎ কী হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্যরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হলেও পশ্চিম তীরের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
আরব ও ইহুদিদের মধ্যে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার বৈঠক ‘ইতিবাচকভাবে’ শেষ হয়েছে। যদিও আলোচনার অগ্রগতি বা সম্ভাব্য সমঝোতার বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
গাজা যুদ্ধের অবসান ও মানবিক সহায়তা প্রবাহ পুনরায় চালুর পথ তৈরি করতে এই আলোচনা একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত সোমবার মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় অংশ নেন হামাসের প্রতিনিধিরা। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এতে যুক্ত ছিলেন মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবারও এ আলোচনা চলবে জানা গেছে।
এ ক্ষেত্রে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো- ইসরায়েলি কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিনা বিচারে আটক গাজার নাগরিকদের বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য পরিস্থিতি তৈরি করা। যদিও এটা কোনো সহজ কাজ নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত ফলাফল চাচ্ছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের দরকষাকষির মধ্যস্থতার মাধ্যমে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুনরুজ্জীবিত করতে চান, যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন। ইসরায়েল যখন গাজায় বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এবং মানবিক সহায়তার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে এবং হামাস ইসরায়েলি বন্দিদের জিম্মি করে রেখেছে তখন এমন পরিস্থিতি সম্ভ হচ্ছে না। সৌদি কর্তৃপক্ষ একাধিক প্রকাশ্য বিবৃতিতে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য একটি স্পষ্ট এবং অপরিবর্তনীয় পথ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।
গাজাগামী নৌবহরে ওঠার পর ইসরাইল কর্তৃক আটক চার কট্টর বামপন্থী ফরাসি ডেপুটি অনশন ধর্মঘট ঘোষণা করেছেন। তাদের দল এ কথা জানিয়েছে।
প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
কট্টর বামপন্থী ফ্রান্স ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অকুণ্ঠ সদস্য ম্যানন অব্রি রোববার ফরাসি রেডিও স্টেশন ফ্রান্সইনফোকে বলেছেন, ‘তাদের আইনজীবীদের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় এবং তাদের সাথে দেখা করতে সক্ষম ফরাসি কনসালের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়’ ছাড়া ‘তাদের কাছে আমাদের কোনো খবর নেই’।
ফ্রান্স আনবোউড শনিবার ঘোষণা করেছেন, ‘তাদের আটকাবস্থা অত্যন্ত কঠিন। তিনি বলেছেন, প্রতি কক্ষে ১০ জনেরও বেশি মানুষ, খাবার এবং পানি পেতে অসুবিধা হচ্ছে। তাদের দুই জাতীয় ডেপুটি ফ্রাঁসোয়া পিকেমাল এবং মেরি মেসমিয়ার এবং তাদের দুই এমইপি, রিমা হাসান এবং এমা ফোরেউ, ‘ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে’ অনশন ধর্মঘট ঘোষণা করেছেন।
অব্রি ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজার ওপর ইসরাইলের অবরোধ ভাঙতে এবং ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে ৪৫টি জাহাজের একটি বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কে আটক করার পর ইসরাইল ৩০ জন ফরাসি নাগরিককে আটক করেছে।
অব্রি তার দলের জাতীয় সমন্বয়কারী ম্যানুয়েল বোম্পার্ডের ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল এলসিআই-তে ‘ফ্রান্সকে অবশেষে কিছু বলতে হবে’ এর আহ্বানের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, ‘ফ্রান্সের অবশেষে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।
ফ্রান্স আনবোউড নেতা জিন-লুক মেলাঞ্চন শনিবার ‘ফ্রান্স সরকারের কাপুরুষদের’ নিন্দা করে উল্লেখ করেছেন, আরো বেশ কয়েকটি দেশের আটক নাগরিকদের ইতোমধ্যেই ইসরাইল থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ইতোমধ্যে ‘ফরাসি ডেপুটিদের তাদের অ্যাসেম্বলিগুলো উপেক্ষা করে। আসুন আমরা সবাই এটা মনে রাখি’।
ম্যাক্রোঁর সাবেক মন্ত্রী এবং বর্তমান এমইপি নাথালি লুইসো পাল্টা বলেছেন,‘ফ্রান্স যা করা দরকার তা করছে’ এবং ‘এই নৌবহরের অংশে থাকা তার নাগরিকদের কনস্যুলার সুরক্ষা প্রদান করছে’।
তিনি নৌবহরে ফ্রান্স আনবোয়েডের জড়িত থাকাকে ‘বিড়ম্বনাকর’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি ফরাসি চ্যানেল ফ্রান্স ৩-কে বলেছেন, ‘এটি কি সত্যিই গাজায় ফিলিস্তিনিদের এবং তাদের দুর্ভোগের ওপর আলোকপাত করার জন্য নাকি এটি একটি আত্ম-প্রচার প্রচেষ্টা? তাই আমি ভয় পাচ্ছি, শেষোক্ত ঘটনাটিই’ ঘটে। সূত্র: বাসস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে ঝামেলা সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি এখন আর পরিবেশ নিয়ে কাজে ব্যস্ত নন। তিনি এখন এসব নিয়ে ব্যস্ত।’
গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদে ছিলেন সুইডেনের জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তার (গ্রেটা থুনবার্গ|) রাগ নিয়ন্ত্রণজনিত সমস্যা আছে, আমার মনে হয় তার চিকিৎকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।’
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘তিনি (থুনবার্গ) খুব রাগান্বিত, তিনি পাগল।’
এর আগে, ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক থুনবার্গসহ ১৭১ জন কর্মীকে গ্রিস এবং স্লোভাকিয়ায় পাঠায়।
বিভিন্ন দেশের ৪০টিরও বেশি জাহাজ নিয়ে গঠিত গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিউনিসিয়া থেকে গাজার দিকে যাত্রা করে। মিশনের লক্ষ্য ছিল গাজা উপত্যকার অবরোধ ভেঙে এর বাসিন্দাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া।
গাজা যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের আংশিক সম্মতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প নিজে। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিষয়টিকে একেবারেই ভিন্নভাবে দেখেছেন। এই মতভেদ নিয়েই দুজনের মধ্যে এক পর্যায়ে উত্তপ্ত ফোনালাপ হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, গত শুক্রবার হামাস যখন ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে আংশিক সম্মতি জানায় তখনই ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ফোন করে বলেন, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু নেতানিয়াহু জবাবে বলেন, ‘এটা উদযাপনের কিছু নয়, এর কোনো অর্থ নেই।’
এতে ট্রাম্প চরম বিরক্ত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি বুঝি না, কেন তুমি সবসময় এত নেতিবাচক।’ এর মধ্যে একটি অশালীন শব্দও ব্যবহার করেন তিনি। পরে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন, ‘এটা একটা জয়, এটা গ্রহণ করো।’ (I don’t know why you’re always so f***ing negative. This is a win. Take it.)
একজন মার্কিন কর্মকর্তা এক্সিওস-কে বলেন, এই সংলাপ দেখিয়েছে—নেতানিয়াহুর আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্প যুদ্ধ শেষের দিকে এগোতে এবং হামাসের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করতে কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
হামাস তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি, তবে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে প্রস্তাবের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলেও জানায় সংগঠনটি।
অন্যদিকে নেতানিয়াহু তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘প্রত্যাখ্যান’ হিসেবে দেখছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করতে চান, যাতে হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখানোর সুযোগ না পায়।
কিন্তু ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, হামাস হয়তো পরিকল্পনাটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে। তাই আংশিক সম্মতিকে তিনি ‘চুক্তির সুযোগ’ হিসেবে দেখেন।
দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ফোনালাপে নেতানিয়াহুর শীতল প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পকে হতাশ করে। তাই তিনি কঠোর সুরে প্রতিক্রিয়া জানান। পরে এক্সিওস-এর সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নেতানিয়াহুকে বলেছিলাম, এটি তোমার জয়ের সুযোগ। শেষ পর্যন্ত সে এতে রাজি হয়েছে। তার রাজি হওয়া ছাড়া উপায়ও নেই—আমার সঙ্গে থাকলে রাজি হতেই হয়।’
ফোনালাপের অল্প সময় পরই ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বিমান হামলা বন্ধের আহ্বান জানান। তিন ঘণ্টা পর নেতানিয়াহু বিমান হামলা বন্ধের নির্দেশ দেন।
যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা পরে বলেন, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর অবস্থান এখন সম্পূর্ণ এক। নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় ট্রাম্পকে প্রশংসা করেন এবং তার বক্তব্যের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলানোর চেষ্টা করেন।
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ফোনালাপের পরিবেশ ছিল ‘উত্তপ্ত ও কঠিন’। তবুও দুই নেতা শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছান। তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘অবশেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি চান, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এ লক্ষ্য অর্জনে।’
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
শনিবার ট্রাম্প আবারও দুই পক্ষকে দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানান এবং হামাসকে সতর্ক করেন—যদি তারা বিলম্ব করে, পুরো চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।
একইদিন ইসরায়েল গাজার কিছু অংশ থেকে প্রাথমিক সেনা প্রত্যাহারের হালনাগাদ মানচিত্রে সম্মত হয়। সোমবার মিশরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার অংশ নেবেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের শিমন সাগাগুচি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে বা রাখা যায়, সে বিষয়ে তাদের গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়ে গতকাল সোমবার এ পুরস্কার ঘোষণা করে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট।
স্টকহোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ বিষয়ক আবিষ্কারের জন্য এ তিন বিজ্ঞানীকে এবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নোবেল জুরির ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের আবিষ্কার ইমিউন সিস্টেমের কার্যপ্রণালী এবং কেন সবাই গুরুতর অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয় না, তা বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নোবেল জুরি জানায়, তাদের গবেষণা একটি নতুন ক্ষেত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং ক্যান্সার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। একইসঙ্গে তাদের আবিষ্কার সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও সহায়ক হতে পারে।
৭৪ বছর বয়সি সাকাগুচি ১৯৯৫ সালে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার করেন। সে সময় অনেক গবেষক মনে করতেন, ‘সেন্ট্রাল টলারেন্স’ নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর ইমিউন কোষ থাইমাসে ধ্বংস হওয়ার কারণেই ইমিউন টলারেন্স তৈরি হয়। তবে সাকাগুচি দেখান, ইমিউন সিস্টেম আরো জটিল এবং তিনি এমন এক নতুন শ্রেণির ইমিউন কোষ আবিষ্কার করেন, যা দেহকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে।
১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণকারী ব্রাঙ্কো এবং ৬৪ বছর বয়সী রামসডেল ২০০১ সালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন। তারা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন কেন কিছু ইঁদুর বিশেষভাবে অটোইমিউন রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
জুরি জানায়, তারা আবিষ্কার করেছেন ওই ইঁদুরগুলোর জিনে একটি মিউটেশন রয়েছে। তারা সেটির নাম দেন ‘ফক্সপ৩’। তারা দেখান, মানুষের শরীরে এ জিনের সমতুল্য মিউটেশন হলে মারাত্মক অটোইমিউন রোগ ‘আইপিইএক্স’ দেখা দেয়।
দুই বছর পর সাকাগুচি এই আবিষ্কারের সঙ্গে নিজের আবিষ্কারকে যুক্ত করেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফের কাছ থেকে তারা নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করবেন। পুরস্কারের মধ্যে থাকছে একটি স্বর্ণপদক, সনদপত্র এবং ১২ লাখ মার্কিন ডলারের চেক।
আগামী সপ্তাহজুড়ে এ বছরের নোবেল পুরস্কারের মৌসুম চলবে। আজ মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞান, আগামীকাল বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার শান্তি এবং আগামী সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরে সরকারি সাওয়াই মান সিং (এসএমএস) হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আটজন গুরুতর রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার গভীর রাতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ট্রমা সেন্টারের ইনচার্জ ডা. অনুরাগ ধাক্কাদ জানিয়েছেন, আগুন লাগে ভবনের স্টোরেজ এলাকায়। সে সময় নিউরো আইসিইউতে ১১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে গোটা তলায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। হাসপাতালে সংরক্ষিত নথি, আইসিইউ সরঞ্জাম ও রক্তের নমুনাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।
দমকল বাহিনী খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালের কর্মী ও রোগীর স্বজনরা আগুন লাগার পরপরই বিছানাসহ রোগীদের বাইরে সরিয়ে নেন।
ওয়ার্ডবয় বিকাশ পিটিআইকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ধোঁয়া দেখতে পাই এবং সঙ্গে সঙ্গে লোকজনকে বের করে আনি। অন্তত তিন-চারজন রোগীকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি, তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর আর ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি।’
ঘটনাস্থলে পৌঁছান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা, সংসদীয়বিষয়ক মন্ত্রী যোগরাম প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জওহর সিং বেধাম। তারা ক্ষতিগ্রস্ত রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তবে দুই রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, আগুন লাগার সময় হাসপাতালের কর্মীরা পালিয়ে যান এবং রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। তারা আরও জানান, আমরা ধোঁয়া দেখে কর্মীদের জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি।
এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। পাঁচ হাজার টন ওজনের ডেস্ট্রয়ারটি শত্রুদের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করতে সক্ষম। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রাগারে থাকা পাঁচ হাজার টন ওজনের দুটি ডেস্ট্রয়ারের মধ্যে ছো হিওন একটি। দুটি ডেস্ট্রয়ারই এই বছর চালু করা হয়েছে।
দেশটির নৌ সক্ষমতা বাড়াতে এটি কিম জং উনের প্রচেষ্টার একটি অংশ।
রোববার যুদ্ধজাহাজটি পরিদর্শনকালে কিম বলেন, যুদ্ধজাহাজটি ‘(উত্তর কোরিয়ার) সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের একটি স্পষ্ট প্রদর্শনী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশাল সমুদ্রে আমাদের নৌবাহিনীর অসাধারণ ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত, যাতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে শত্রুর উস্কানিকে পুরোপুরি প্রতিহত করা ও শত্রুদের শাস্তি দেওয়া যায়।’
কিম আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যে একই ধরনের তৃতীয় ডেস্ট্রয়ার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য হাজার হাজার উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েনের বিনিময়ে সম্ভবত রাশিয়ার সহায়তায় উত্তর কোরিয়া ছো হিওন তৈরি করেছে।’
কেসিএনএর ছবিতে দেখা গেছে, কিম জাহাজের ভেতরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তদারকি করছেন এবং মনিটরগুলোতে কোরিয়ান উপদ্বীপের চারপাশের সমুদ্র দেখা যাচ্ছে।
আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, সামরিক জেনারেলদের সামনে একটি মানচিত্রের দিকে ইঙ্গিত করছেন কিম।
পরমাণু অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকি প্রতিহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ২৮ হাজার ৫শ সৈন্য মোতায়েন করেছে এবং গত মাসে দেশটির নিরাপত্তা মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে।
পিয়ংইয়ং নিয়মিতভাবে এই ধরনের মহড়াকে আক্রমণের মহড়া হিসেবে নিন্দা করে আসছে। অন্যদিকে মিত্ররা জোর দিয়ে দাবি করেছে যে, এগুলো প্রতিরক্ষামূলক মহড়া।
মন্তব্য