× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

আন্তর্জাতিক
America is in turmoil in Russia China unity
google_news print-icon

রাশিয়া-চীন ঐক্যে টালমাটাল আমেরিকা

রাশিয়া-চীন-ঐক্যে-টালমাটাল-আমেরিকা
শি জিংপিং ঐক্যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জে বাইড প্রশাসন। কার্টুন: সংগৃহীত
আমেরিকান কর্তৃত্ব কমাতে রাশিয়া ও চীন দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে একটি মজবুত জুটি গড়ে তুলেছে। এই সম্পর্ক মোটেই ১৯৫০-এর দশকের চীন-সোভিয়েত ব্লকের মতো নয়। রাশিয়া এখন ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস সরবরাহকারী দেশ। চীনও দরিদ্র, যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশ নয়।

রাশিয়া ও চীন নিজেদের বিভেদ পাশে সরিয়ে রেখে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছে মজবুত এক জুটি। লক্ষ্য কয়েক দশক ধরে বিশ্বে আমেরিকার একক কর্তৃত্ব খর্ব করা।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের একটি প্রকাশ্য রূপ বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে শুধু চীনকে ঠেকিয়ে রাখার কৌশলে মনোযোগ দিয়েছে। এর মাঝে রাশিয়া-চীন ঐক্য টালমাটাল পরিস্থিতিতে ফেলেছে বাইডেন প্রশাসনকে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি নতুন গতিপথ তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম বড় কোনো সংঘাত। দুটি প্রধান বিশ্বশক্তি এখন আমেরিকার একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে লড়ছে।



কোল্ড ওয়ার বা শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোট যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল, তার তুলনায় এবারের চ্যালেঞ্জ আলাদা।

আমেরিকান কর্তৃত্ব কমাতে রাশিয়া ও চীন দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে একটি মজবুত জুটি গড়ে তুলেছে। এই সম্পর্ক মোটেই ১৯৫০-এর দশকের চীন-সোভিয়েত ব্লকের মতো নয়। রাশিয়া এখন ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস সরবরাহকারী দেশ। চীনও দরিদ্র, যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশ নয়, বরং তারা এখন বহুমাত্রিক সামরিক সক্ষমতা ধারণের পাশাপাশি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পণ্য উৎপাদন শক্তির দেশ।

‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ এর নামে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে বিশাল সেনাবাহিনী পাঠানোর পর ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ইউরোপের সামনে কোল্ড ওয়ার পরবর্তী নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের দাবি তুলেছেন। তিনি এটাও দেখিয়েছেন, পশ্চিমা আপত্তি ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পরোয়া না করে রাশিয়া এখন নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে।

বেইজিং-মস্কোর সম্পর্কের ওপর আস্থা দেখাতে পুতিন চীন-রাশিয়া সীমান্ত থেকে সামরিক ইউনিট সরিয়ে নিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো জোট না থাকলেও এই দুটি শক্তি তাদের সুবিধার জন্য বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে।

এ উদীয়মান শক্তি ব্যবস্থা ভৌগোলিকভাবে যেসব অঞ্চলে আমেরিকার গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, সেখানে ওয়াশিংটনকে একই সঙ্গে দুই প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করছে।

বাইডেন প্রশাসন এখন নিজেদের প্রাধান্য পুনর্বিবেচনা করা, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, মিত্রদের প্রতি আরও দায়বদ্ধ থাকার দাবি, বিদেশে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন এবং ইউরোপের মস্কো নির্ভরতা কমাতে বিকল্প জ্বালানির উৎস সন্ধানসংক্রান্ত বহুমুখী বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

সাবেক ওবামা সরকারের সময়ে পেন্টাগনের শীর্ষ নীতিনির্ধারক মিশেল ফ্লোরনয় বলেন, ‘আমরা সবাই ইউরোপকে সামগ্রিকভাবে মুক্ত ও চির শান্তির জায়গা হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। আমরা জানতাম, রাশিয়া একটা ছায়া যুদ্ধ চালাতে থাকবে এবং পুতিন তার কেজিবির বৈশিষ্ট্য অবলম্বন করে নিজস্ব পরিধিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবেন। তবে একটি সার্বভৌম দেশের সরকার পুনর্গঠিত করার উদ্দেশ্যে পূর্ণমাত্রায় সামরিক হামলা চালানো সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, পুতিনের কৌশল বেইজিং পছন্দ না করলেও তারা পশ্চিমা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে মস্কোর সঙ্গে মিলেমিশে একটি কতৃর্ত্ববাদী শক্তি হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও দেখা যাবে।’

স্নায়ুযুদ্ধের শেষ দিকে ওয়াশিংটনের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টার কারণে আমেরিকার দুর্দশা আংশিকভাবে বেড়েছে। বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি ক্রেমলিনের নেতৃত্বে ওয়ারশ চুক্তির অধীনে থাকা সদস্য দেশ ও কয়েকটি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রকে ইউরোপের প্রধান সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

এটা ছিল মস্কোর কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হতে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর কয়েক দশকের পুরোনো আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন।

তবে পুতিন বিষয়টিকে হার-জিতের খেলা হিসেবে নিয়েছেন। রাশিয়াকে তিনি সোভিয়েত আমলের অবস্থানে নিয়ে যেতে চান, যেখানে অধীন দেশগুলোর ওপর মস্কোর খবরদারি বজায় থাকবে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টিও সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোতে গণতন্ত্রের আন্দোলনকে আমেরিকান প্লট হিসেবে দেখেছে। তাদের আশঙ্কা ছিল, একই কৌশল বেইজিংয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হতে পারে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর ও সামরিক শক্তি দ্বিগুণ করেছে।

রাশিয়া-চীন ঐক্যে টালমাটাল আমেরিকা
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করে আমেরিকার কর্তৃত্ব খর্ব করতে চায় চীন ও রাশিয়া। কার্টুন: সংগৃহীত



এক দশক আগে শি চিনপিং দায়িত্ব নেয়ার পর এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। হংকংয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলন জোরদার হলে চিনপিং কঠোর নিরাপত্তা আইন জারি করেন। পাশাপাশি সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্রকে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার চুক্তিগুলো তিনি বাতিল করে দেন।

পেন্টাগন ২০১৫ সালে যাকে ‘মহাশক্তির প্রতিযোগিতার পুনরুত্থান’ বলে ঘোষণা দেয়- সেদিকে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আমেরিকান নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান থেকে সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভবিষ্যৎ সংঘাতের জন্য পেন্টাগনের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বারবার চীনকে ‘অগ্রসরমান চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে রাশিয়াকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ততটা বিপজ্জনক ভাবা হয়নি।

এটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিকল্পনার সঙ্গেও মিলে যায়, যদিও তিনি বিশ্বের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বারবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

তিনি দায়িত্ব নেয়ার সময় ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যয়বহুল যুদ্ধের পর আমেরিকানদের জন্য একটি ‘মধ্যপন্থি’ বৈদেশিক নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মহামারি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে তার মনোযোগ দেয়ার কথা।

মস্কোর সঙ্গে তার প্রশাসন সম্পর্ক বজায় রাখলে বেইজিংয়ের সঙ্গে সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় মনোনিবেশ করা যাবে বলে ধারণা ছিল বাইডেনের।

হোয়াইট হাউসের ভাষায় একটি ‘স্থিতিশীল, অনুমেয়’ সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বাইডেন গত জুনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক সুরক্ষায় বাইডেন দূরপাল্লার আমেরিকান ও রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্র সীমিত করে নতুন স্টার্ট চুক্তি (কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি) পাঁচ বছরের জন্য নবায়নে সম্মত হন। আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হুমকির পুনরুত্থান ঠেকাতে হোয়াইট হাউস পেন্টাগনকে মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি ব্যবহারের নির্দেশও দেয়।

ওয়াশিংটনের মনোযোগ অন্যদিকে থাকার সুবিধা নিয়েছেন পুতিন। তিনি বেলারুশ ও ইউক্রেনকে মস্কোর প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসার এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি আমেরিকার ইউরোপীয় মিত্রদের দোরগোড়ায় রাশিয়ার বিশাল সামরিক বাহিনী প্রস্তুত রেখেছেন এবং ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ করেছেন।

আমেরিকার বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ৭০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এখন তাদের সামনে জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলার জন্য রয়েছে রুশ সংকট। চীনা হুমকির প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত থাকা পেন্টাগনের জন্য এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।

সাবেক সামরিক ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ২০১৮ সালে পেন্টাগনের জন্য একটি কৌশলগত গবেষণা পরিচালনা করেন। এতে বলা হয়, ‘আমেরিকান সামরিক বাহিনীকে একই সঙ্গে দুই বা ততোধিক ফ্রন্টে লড়াই করতে বাধ্য করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষভাবে পরাস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

সংকটের কারণে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে আরও সৈন্য পাঠিয়েছে। এটি দেশটিকে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মাত্রা এমনকি সশস্ত্র বাহিনীর আকার পুনর্বিবেচনাকে প্ররোচিত করবে।

চীনের বাড়তে থাকা পারমাণবিক সক্ষমতা কোনো অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ চুক্তির দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার। এ দুটি একসঙ্গে আটকানোর জন্য আমেরিকার পারমাণবিক শক্তি কমানোর যুগের অবসান ঘটতে পারে।

রাশিয়া ও চীন উভয় দেশকে মোকাবিলা করার জন্য এখন বৈশ্বিক শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে নিজস্ব জোটগুলোর দিকে আরও বেশি ঝুঁকতে বাধ্য হবে বাইডেন প্রশাসন।

রাশিয়া-চীন ঐক্যে টালমাটাল আমেরিকা
ইউক্রেনের শহর খারকিভে রাশিয়ার আক্রমণ। ছবি: এএফপি



গত মাসের শুরুর দিকে পুতিন ও চিনপিং বেইজিংয়ে বৈঠক শেষে ৫ হাজার ৩০০ শব্দের একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেই বিবৃতির মূল লক্ষ্য ছিল ন্যাটো। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার অন্য দেশের সঙ্গে আমেরিকান জোটকেও ওই বিবৃতির লক্ষ্য করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমুদ্রপথ দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক ঘাঁটি শক্তিশালী করেছে চীন। দেশটি বিশ্বজুড়ে তাদের ঘাঁটিগুলোর নতুন নেটওয়ার্কও তৈরি করছে। এই নেটওয়ার্ক চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার উদ্যোগের আওতায় নির্মিত বন্দর স্থাপনাগুলোকেও তাদের দ্রুত সম্প্রসারমাণ নৌবাহিনীর জন্য ব্যবহারের সুবিধা তৈরি করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইকুয়েটরিয়াল গিনিকে চাপ দেয়ার মাধ্যমে চীনা নৌবাহিনীর অগ্রগতির সীমা আটলান্টিকে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশল স্টাডিজ থিংক ট্যাংকের সামরিক ইতিহাসবিদ এলিয়ট কোহেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে একই সঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে কাজ করার জন্য আবারও অভ্যস্ত হতে হবে। তা শুধু সামরিকভাবে নয়, মানসিক ও পররাষ্ট্রনীতি তৈরির দিক থেকেও ঘটতে হবে।’

বাইডেন প্রশাসন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টার মধ্যে পেন্টাগন জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল প্রকাশে সময় নিচ্ছে। এ কৌশলে থাকছে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঠেকানোর পরিকল্পনা ও কোন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে নতুন পর্যালোচনা। এর মধ্যেই পেন্টাগনকে বেইজিং ও মস্কোর জোড়া চ্যালেঞ্জের দিকে সমান মনোযোগ দেয়া উচিত, নাকি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গুরুত্ব বাড়াতে হবে, তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে আমেরিকান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

সামরিক ইস্যু ছাড়াও মস্কোর সঙ্গে নতুন সংঘাত অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ভাঙনগুলোকে ত্বরান্বিত করতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির সরবরাহ উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমারা রাশিয়ান ব্যাংক ও বড় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে মস্কো বেইজিংয়ের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। বেইজিং এরই মধ্যে একটি ডিজিটাল মুদ্রা ছেড়েছে এবং পশ্চিমের থেকে আলাদা একটি আর্থিক বিনিময় ব্যবস্থাপনা তৈরি করছে।

রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ইউরোপকে। গত বছর ইউরোপের প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারের ২৯ শতাংশ রাশিয়ার দখলে ছিল। এই কারণে জ্বালানিও জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।

রিসার্চ ফার্ম আইএইচএস মারকিটের ভাইস চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল ইয়েরগিন বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তার গুরুত্ব সম্পর্কে বেখেয়ালের বিষয়টির ইতি এরই মধ্যে ঘটেছে। এর অর্থ হলো ইউরোপের জন্য জ্বালানি উৎসের দিকে জোর দেয়া হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জ্বালানি নীতিগুলো একটি নতুন চেহারা নিচ্ছে।’

ভূ-রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে জ্বালানিকে ব্যবহারের সমর্থকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের এখন উচিত আমেরিকান তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং দেশটিতে নতুন এলএনজি রপ্তানি টার্মিনাল ও পাইপলাইন অনুমোদন করা।

ইউরোপের বর্তমান সংকট ন্যাটোকেও নাড়া দিয়েছে। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল ইয়েনস স্টলটেন বার্গের মতে, ‘ইউরোপীয় নিরাপত্তার নিউ-নরম্যাল’ মোকাবিলার জন্য জোটকে ঢেলে সাজাতে হবে। মিউনিখের এক নিরাপত্তা সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও অন্য নেতারা রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় অংশীদারদের ঐক্যের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

ন্যাটো কর্মকর্তাদের মতে, এর অর্থ হতে পারে স্বল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে নতুন সমর বাহিনী পাঠানো এবং ন্যাটোর পূর্ব প্রান্তে পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাজ্যে মিত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত ন্যাটো-রাশিয়া ফাউন্ডিং অ্যাক্ট ন্যাটোকে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপীয় কোনো নতুন সদস্য দেশের ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের সুযোগ দেয় না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই সমঝোতা বাতিল করা যেতে পারে।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সাম্প্রতিক এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশির ভাগ ইউরোপীয় ইউক্রেন সংকটকে ইউরোপের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন।

বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইউরোপীয় জোটের সংহতি সামনের বছরগুলোতে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। কারণ বিপুল সামরিক ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্ক উঠবে এবং জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক নতুন সংঘাতের কারণ হতে পারে।

রাশিয়া-চীন ঐক্যে টালমাটাল আমেরিকা
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার আক্রমণ। ছবি: এএফপি

ন্যাটো আগামী জুনে মাদ্রিদে জোটের নতুন ‘কৌশলগত ধারণা’ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে, যা সামনের দশকে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিস্তৃত রূপরেখা দেবে। এটি সাবেক কর্মকর্তা ও অন্য বিশেষজ্ঞদের করা আলফেন গ্রুপের একটি প্রতিবেদন হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।

ওই ধারণাপত্রে প্রস্তাব করা হবে, জোটের ইউরোপীয় সদস্য ও কানাডা ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যাটোর ন্যূনতম সামরিক প্রয়োজনীয়তার ৫০ শতাংশের জোগান দেবে, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে নিবৃত্ত করার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে।

ন্যাটোতে আমেরিকার সাবেক দূত আলেক্সান্ডার ভার্শবাও বলেন, ‘সবাই এখন একত্রিত এবং রাশিয়ানরা যা করছে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। তবে যখন আমরা ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতিতে যাওয়ার উদ্যোগ নেব এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক বিষয়গুলোকে পুনর্বিবেচনা করতে নামব, তখন সবাই বিভক্ত হয়ে যেতে পারে।’

আরও পড়ুন:
মরণোত্তর খেতাব পাওয়া সেই ইউক্রেন সেনারা জীবিত
রাশিয়ায় পণ্য বিক্রি বন্ধ অ্যাপলের
এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র

মন্তব্য

আরও পড়ুন

আন্তর্জাতিক
Hamanti and Magnolias mo smell in the courtyard of Uttara Ganabhaban

উত্তরা গণভবনের আঙিনায় হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার ম-ম গন্ধ

উত্তরা গণভবনের আঙিনায় হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার ম-ম গন্ধ ছবি: সংগৃহীত

নাটোর জেলার উত্তরা গণভবনে এখন হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার ভরা মৌসুম। সাতটি করে হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার রুপে রসে গন্ধে অনন্য হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবনের আঙিনা। এছাড়া দুটি হোয়াইট এলামন্ড গন্ধ বিলিয়ে যাচ্ছে। ফুলের কানে ভ্রমরের গুঞ্জনে মোহনীয় চারিদিক।

অপরুপ স্থাপত্য শৈলীর রাজপ্রাসাদ আর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা অসাধারণ সব সামগ্রীর সংগ্রহশালাকে ছাড়িয়ে যায় গণভবনের দুষ্প্রাপ্য কিছু গাছের সমাহার। এর বেশির ভাগটাই ফুল গাছ। এরমধ্যে পারিজাত, ম্যাগনোলিয়া, নাগালিঙ্গম, এগপ্লান্ট, হোয়াইট এলামন্ড, সুরভিকা আর হৈমন্তি অন্যতম। এসব ফুল গাছের উপস্থিতি জানান দেয়, উত্তরা গণভবন শুধু রাজপ্রাসাদই নয় সুবিশাল পুষ্প সাম্রাজ্যও বটে।

এরমধ্যে পারিজাত চক্রাকারে পাতার রঙ পাল্টিয়ে লাল রঙের ফুলের থোকায় পরিণত হয় বসন্তে। এগপ্লান্টে প্রায় সারা বছর দু’একটা ফুল থাকলেও শীত আর বর্ষা এর ভরা মৌসুম। নাগালিঙ্গম আর ম্যাগনোলিয়া বসন্তে ফুটলেও বিস্তৃতি বর্ষাকাল পর্যন্ত। সুরভিকা ফোটে মূলত শীতকালে। গ্রীষ্মের তাপদাহকে উপেক্ষা করে হোয়াইট এলামন্ড তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে এখন।

আর বসন্তে পাতা হারিয়ে হৈমন্তি গাছগুলো হয়ে পড়ে বিবর্ণ। বসন্তের শেষার্ধে ফুল আসতে শুরু করলেও গ্রীষ্মে হৈমন্তির রুপ হয়ে ওঠে অপরুপ। সারাগাছ জুড়ে ফুল আর ফুল, কোন পাতা নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে এ যেন শুভ্র সুন্দর শান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এই ফুল সুবাস ছড়াবে অন্তত দুই মাস। এটিই হৈমন্তির ভরা মৌসুম। শরতে আরো একবার হৈমন্তি শুভ্র সুন্দর হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তবে এত ফুলের প্রাচুর্য আর সুবাস তখন থাকে না।

গণভবনের সিংহ দুয়ার পেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ইটালিয়ান গার্ডেনের প্রবেশপথের আগে দাঁড়িয়ে আছে একটি হৈমন্তি। ইটালিয়ান গার্ডেনে একটি, হরিণনিবাসে একটি, সংগ্রহশালার সাথে একটি, রাজপ্রাসাদের সামনে দুইটি হৈমন্তি গাছ। আর রাণীমহলে একটি হৈমন্তি গাছ। ধীরে বর্ধনশীল হৈমন্তির সাতটি গাছের মধ্যে রাজপ্রাসাদের সামনের গাছটি ফুলে ফুলে সবচেয়ে সমৃদ্ধ।

দুষ্প্রাপ্য গাছের তালিকায় আছে ম্যাগনোলিয়া। এর সংখ্যাও সাতটি। কুমার প্যালেস এর সাথে একটি ছাড়া অন্য ছয়টি ইটালিয়ান গার্ডেনে। কাঁঠাল পাতার মত প্রায় পাঁচ মিটার উঁচুতে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাগনোলিয়ার প্রতিটি গাছে শত শত ফুলের কলি আর ফুল। বিরাট আকৃতির সাদা ফুল অকৃপণভাবে সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইটালিয়ান গার্ডেনকে সুশোভিত করে রাখে অতিকায় দুটো হোয়াইট এলামন্ড। এখন শুধু সুশোভিতই নয় সারা গাছ জুড়ে সাদা ঝিরিঝিরি ফুল রাশি পুরো গার্ডেনকে সুরভিত করে রেখেছে।

জেলা প্রশাসক ও উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আসমা শাহীন বলেন, হৈমন্তী, ম্যাগনোলিয়া আর হোয়াইট এলামন্ড গণভবনকে সুশোভিত সুরভিত করে রেখেছে। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর উত্তরা গণভবনের আঙিনা। সৌন্দর্য পিপাসুদের মধ্যে অনেকেই গ্রীষ্মের এই তাপদাহে এসব ফুল গাছের তলায় দু’দণ্ড শান্তির পরশ খুঁজে পাচ্ছেন। দুষ্প্রাপ্য এসব গাছের সুরক্ষায় জেলা প্রশাসন সদা সচেষ্ট।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Wish was that the corpse returned home to be a judge

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে ঢাবি ছাত্রী আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ছবি: সংগৃহীত
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে। এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। তার ইচ্ছা ছিল এলাকায় বিচারক হয়ে ফেরার; ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার। সে ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে সোমবার লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ ছাত্রী।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে রবিবার রাতে ঝুলন্ত অবস্থায় আনিকাকে উদ্ধার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

আনিকার বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে। সেখানে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার শতবর্ষী দাদা আলহাজ সোলাইমান আলী মণ্ডল হতভম্ব হয়ে এদিক-সেদিক দেখছেন। কান্না থামছিল না ফুফু আক্তার বানুর।

আনিকার এমন মৃত্যুতে বিস্মিত পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা চেয়েছেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে।

এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনে নওগাঁয় সম্মুখসারিতে ছিলেন আনিকা। পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলায় মাইক হাতে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে সড়কে দাঁড়ান তিনি।

সুষ্ঠু তদন্ত দাবি

পরিবারসহ এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আনিকার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হোক।

বকুল নামের একজন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‌‘আমি গিয়ে দেখি আনিকার মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছিল, কিন্তু অর্ধেক মেঝেতে লেগে ছিল। আমার জানা মতে একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।

‘আমরা ঢাকায় আছি। তার বাবা পাগল হয়ে গেছে। তবে আমরা যখন যাই, তখন দেখি লক ভাঙা ছিল। মনে হয় তাকে কেউ নামানোর চেষ্টা করেছিল।’

বুটেক্স ছাত্র আটক

আনিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) এক ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

বাহিনীর ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ঢাবির এ ছাত্রী। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:
অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
The Dealership Agriculture Officer of the Seed Fertilizer by irregularities is a college lecturer

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়। সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

নওগাঁয় অনিয়ম করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিইসি) বীজ ও সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও কৃষি কর্মকর্তা। তাদের স্বজনদেরও একই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুসারে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোথাও থেকে কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা নেওয়ার বিধান নেই। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি একের অধিক ডিলারশিপ নিতে পারবেন না।

অন্যদিকে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’

অনিয়মে যুক্তদের ভাষ্য

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী নওগাঁতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফজলে রাব্বি। তিনি তার স্ত্রী সম্পা বেগমের নামে বিএডিসির বীজের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কৌশলে ডিলারশিপ বিক্রি করে খাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নওগাঁ শহরে বসবাস করলেও তারা পোরশা উপজেলায় ‘সাইফ ট্রেডার্স’ নামের ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্পা বেগম তার নামে লাইসেন্স স্বীকার করে বলেন, ‌‘আমি নওগাঁ বসবাস করলেও পোরশায় আমার দোকান রয়েছে। ওখানে একটি ছেলে আছে। সে দোকান চালায়।’

দোকানের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাব্বি নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’

সাইফ ট্রেডার্স নামের কোনো দোকান পোরশা বাজারে পাওয়া যায়নি। দোকানের সঠিক ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে সম্পা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কথা না শোনার ভান করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই লাইসেন্সটা আমার স্ত্রী সম্পার নামে করা আছে।’

নিয়মিত বীজ তোলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। আপনাদের অনেক সাংবাদিক আসে; চা খেয়ে যায়।

‘সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনি অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’

ওই বক্তব্যের পর সংযোগটি কেটে দেন তিনি।

এদিকে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মেসার্স জিমান ট্রডার্স নামে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন নিয়ে রেখেছেন বিএডিসির সার লাইসেন্সের ডিলারশিপ। প্রোপাইটারে জায়গায় রয়েছে তার নিজের নাম।

তার ছেলে জিমানের নামে নিয়ামতপুর বাজারে রয়েছে দোকান। নিয়মিত বিএডিসির সার ও বীজ তুলে বিক্রি করেন তিনি।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্সটা অনেক আগে করা ছিল। তখন আমার কলেজ সরকারি হয়নি। ২০১৮ সালে আমার কলেজ সরকারি হয়েছে।’

‘তাহলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে সরকারি ডাবল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। এটার সুযোগ রয়েছে কী?’

উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একাধিক জায়গা হতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি তিন মাস আগে ডিসি অফিসে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়েছি।’

এদিকে ধারাবাহিকভাবে গত মাসেও সরকারি গুদাম থেকে সার তুলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সটা আমার ছেলের নামে হস্তান্তর করা হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।’

অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলার ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন বিসিআইসির সার ডিলারশিপ। সরকারি গুদাম থেকে নিয়মিত সার তুলে উপজেলার আমাইতাড়া বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।

এ বিষষে জানতে ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা অনেক আগে করা হয়েছিল। পরে আমার কলেজ সরকারীকরণ হয়।

‘সরকারি একাধিক জায়গা হতে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে। আমি লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করে দেব।’

‘আপনি তো এখনও নিয়মিত সার তোলেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে তো। তাই একটু তুলতেছি।’

যা বলছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা

ডিলারশিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটা করতে পারে না।’

‘আপনার অধিদপ্তরে এমন অনেকে রয়েছে। তাহলে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’

এমন প্রশ্নে প্রোগ্রামের ব্যস্ততার কথা বলে ফোন লাইন কেটে দেন এ কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়।

‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুন:
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর
গলা কেটে হত্যা: দাফন-কাফনে সহযোগিতা করেও হলো না রক্ষা

মন্তব্য

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অজ্ঞাত মুখোশধারীরা গত রবিবার রাতের বেলায় জমিদার বাড়ির পুরোহিতকে ধরে নিয়ে জঙ্গলে বেঁধে রাখে। টাকা-পয়সা এবং জমিদারেরও খোঁজ করে তারা।

এমন পরিস্থিতিতে ডাকাত আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির লোকজন।

মুখোশধারীরা ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশে তল্লাশি চালানোর কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।

এতে দেখা যায়, রবিবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী নেলী চক্রবর্তী ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে দুজন মুখোশধারী ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সঙ্গে পুরোহিতকে বেঁধে ফেলে।

জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুখোশধারী আমাদেরকে ধরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় মুখোশধারীরা জমিদার কোন ঘরে জানতে চায়। সিন্দুকের খোঁজও চায় তারা।

‘বাড়ির তিন তলায় ওঠার চেষ্টাও করে। ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশেপাশে তল্লাশি চালায়।’

বাড়ির কেয়ারটেকার স্বপন সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত জমিদার বাড়িতে চাকরি করছি। দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। পুরো বাড়ি তাদের ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করি।

‘কিন্তু অতীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারের একমাত্র শেষ বংশধর মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বসবাস করছেন। নিঃসন্তান ব্যক্তিটির স্ত্রী কিছুদিন আগে লোকান্তরিত হন। বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী ও পুরোহিত অবস্থান করছেন।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

বাড়ির মালিক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, ‘মুখোশধারীরা হয়তো ধনদৌলত নিতে কিংবা আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করতে চেয়েছিল। তবে বাড়ির লোকজন সজাগ হয়ে যাওয়ার মুখোশধারীরা সেটা করতে পারেনি।’

জানতে চাইলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
তাড়াইলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত: পুলিশ
নোয়াখালীর বয়ারচরে ডাকাতদলের তাণ্ডব, আটজনকে কুপিয়ে জখম
বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও জমিতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ বীর মুক্তিযোদ্ধার
প্যারোলে মেলেনি মুক্তি, বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
জামালপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে নিহত ১, আটক ২

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Petrol Pumps closed in Naogaon strike What the victims say

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। কোলাজ: নিউজবাংলা
আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না। এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, বগুড়ার আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে।

এ ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।

কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজনও। তাদের একজন বেসরকারি সিম কোম্পানির কর্মী আল-আমিন।

তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসি।

‘পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না।

‘এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত মেসার্স সাকিব ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানিচালিত বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরাও।

‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’

প্রেক্ষাপট

পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ বগুড়া। ওই সময় সান্তাহারের হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনে তেলের মিটার উচ্ছেদ করা হয়।

তারা জানান, পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে এ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
ডাকাতি করতে এসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় সাতজন গ্রেপ্তার
শৈত্যপ্রবাহ: নওগাঁয় এক দিনে তাপমাত্রা কমল ৬.৪ ডিগ্রি
নওগাঁয় বিএনপির দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার
সিলেটে কর্মবিরতির ডাক পরিবহন শ্রমিকদের
১৮ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা ওড়ে নওগাঁর আকাশে

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
The bus fares increased by the train closed more than doubled

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি ট্রেন না পেয়ে খুলনা থেকে দূরপাল্লার যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ছবি: নিউজবাংলা
শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেন ব্যবহার করেন। হঠাৎ করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে বাসের ওপর বাড়তি যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাসের টিকিটের মূল্য বেড়ে গেছে।

খুলনা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য সকালে রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।

তারা জানান, খুলনা থেকে নওগাঁ যেতে তারা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কোনো টিকিট পাননি। বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে ভাড়া গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ পথে নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকার বেশি নয়।

শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

‘অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

সান্তনুর মতো অনেক দূরপাল্লার যাত্রীকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

খুলনা থেকে উত্তরবঙ্গে দৈনিক একাধিক ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাজশাহী, রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চিলাহাটি, মহানন্দা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রকেট এক্সপ্রেস খুলনা থেকে পার্বতীপুর, নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, বেনাপোল ও মোংলা কমিউটার খুলনা থেকে বেনাপোল যাতায়াত করে।

এ ছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকাতে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এর মধ্যে কোনো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়নি। ফলে হাজার হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরেছেন।

রেলওয়ের রানিং স্টাফরা মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এ সুবিধা সীমিত করা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।

খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। আজ কোনো ট্রেন চলেনি। টিকিট বুকিং দেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

এ সমস্যার সমাধান কবে হবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন:
ট্রেনের বিকল্প হিসেবে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু
বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক আটজন
ট্রেনযাত্রীদের অধিকার রক্ষার ১০ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর
এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের নজর ছোট ও গণমুখী প্রকল্পে
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিমা সুবিধা দেবে ‘আমি প্রবাসী’ ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
The trial is going on in the court of Jhalkathi

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে ঝালকাঠির আদালত ভবনের বাইরের এবং ভেতরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। কোলাজ: নিউজবাংলা
আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।’

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি।

এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালতে কর্মরতদের।

সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থদের অবহিত করে গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি অফিস ২০১৯ সালে চিঠি চালাচালি করলেও বিষয়টি এখনও ফাইলবন্দি।

ভবনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের দাবি আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জরাজীর্ণ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৫ নভেম্বর বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠান।

ভবন পরিদর্শনকালে তিনজন উপসহকারী প্রকৌশলী, গণপূর্তের ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।

কী ছিল পরিদর্শন কপিতে

ঝালকাঠি গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী অনিরুদ্ধ মন্ডল, মো. বদরুজ্জামান, মো. ইমরান বিন কালাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল-মাসুম স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন কপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভবনটির দুই তলায় করিডোরের বেশ কিছু স্থানে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়ছে। এ ছাড়াও নলছিটি কোর্ট রুমের পরিদর্শনকারীদের বসার ওপরের ছাদের অংশ খসে পড়েছে। এ সমস্ত স্থানে মরিচা পড়ে রড উন্মুক্ত হয়ে আছে। দ্বিতীয় তলা এবং নিচ তলার করিডোরের বেশ কিছু বিম ও কলামে ফাটল লক্ষ করা গেছে।

‘ভবনটির নিচ তলায় হাজতখানার ছাদের বেশ কিছু অংশসহ করিডোরের বিভিন্ন অংশে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়েছে। এসব স্থানেও মরিচা পড়ে রড বের হয়ে আছে। নিচ তলার বিভিন্ন কলাম এবং বিমের ফাটল লক্ষ করা গেছে। কিছু স্থানে কলাম ফেটে রড বের হয়ে গেছে।’

পরিদর্শন প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ১৯৮৯-৯০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ২০০৪-০৫ সালে তৃতীয় তলার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিম কলামে ফাটল থাকায় এবং ছাদের কনক্রিট খসে পড়ায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত ডিজাইন বিভাগের মতামতসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।’

প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ

সম্প্রতি জজ আদালত ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ছাদের ওপর থেকে খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল ধরেছে অনেক পিলারেও। ভারি বৃষ্টি এলেই ছাদ ও দেয়াল চুষে পানি পড়ে মেঝেতে। নষ্ট হয়ে যায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র।

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় তিন তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিচারকের এজলাস, খাসকামরা, পেশকার, সেরেস্তাদারের কক্ষ, নকল কক্ষ, হাজতখানাসহ প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

যা বলছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা

আদালতের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে কথা হয় আবদুর রহমান, তৈয়ব আলী, কামরুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে।

তাদের একজন বলেন, ‘আদালত ভবনের ভিতরে প্রবেশের পর কার্যসম্পাদন করে বের হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকি আতঙ্কে। প্রায় সময়ই ছাদের পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে।

‘বর্ষায় তো বারান্দায় পানি জমে যায়। দেয়ালে পানি চুষে অনেক ফাইল নষ্ট হয়ে যায়।’

আইনজীবী মানিক আচার্য্য বলেন, ‘ভবনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার সংস্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। বিচারকরা যদি ভালো পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে বিচারকার্যে মনোনিবেশও করতে পারেন না।

‘ঝালকাঠির বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সকলেই আমরা এ ভোগান্তিতে রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদস্থদের বিষয়টি অবগত করলেও এখনও কোনো ভূমিকা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা এবং নতুন ভবন নির্মাণ অথবা টেকসই সংস্কারের জন্য গণপূর্তের চিঠি চালাচালি হলেও দীর্ঘদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাইনি। জনস্বার্থে দ্রুত নতুন আদালত ভবন নির্মাণ জরুরি।’

আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে এ আদালতে ১৬ হাজার দেওয়ানি মামলা এবং দেড় হাজার ফৌজদারি মামলা চলমান। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আদালত ভবনের নিচ তলায় হাজতখানার পশ্চিম দিকে মসজিদের সামনে একাধিকবার ধসে পড়েছে ছাদের অংশ। এখন এই ভবন অস্থায়ী সংস্কার না করে এটি ভেঙে এখানে নতুন ভবন করা উচিত।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নব্বই দশকে দোতলা জজ আদালত ভবনটি নির্মাণের পর ২০০৬ সালে এর ওপর আরও এক তলা বর্ধিত করে তৃতীয় তলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে নিচ তলার অনেক পিলারে ফাটল ধরেছে। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আদালতের স্টাফ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা রয়েছেন আতঙ্কে।

‘হাজতখানা সরিয়ে পার্শ্ববর্তী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে নেওয়া হয়েছে। ভবনে আগতদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দ্রুত এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’

জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ঝালকাঠির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার একই ধরনের বক্তব্য দেন।

তাদের একজন বলেন, ‘ভবন পরিদর্শনের রিপোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন ভবনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।

‘সেখান থেকে অর্ডার হলেই গণপূর্ত বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যসম্পাদন করবে।’

ক্যাপশন: ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন। ছবি: নিউজবাংলা

ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ভেতরের জরাজীর্ণ অংশ। ছবি: নিউজবাংলা

আরও পড়ুন:
ঝালকাঠিতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ধারণা পুলিশের
স্কুলের পাশে ইটভাটা, ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পরিবেশ কর্মকর্তার
ওকালতনামা না থাকায় চিন্ময়ের পক্ষে ঢাকার আইনজীবীর ৩ আবেদনই নাকচ
ধাক্কা দিয়ে পথচারীর সঙ্গে প্রাণ হারালেন বাইক চালকও
‘আজ সেই দুষ্টু লোকেরা কোথায়?’

মন্তব্য

p
উপরে