ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া সেনা মোতায়েনের পর কয়েক দিন ধরে চলছিল টানটান উত্তেজনা। অবশেষে এই উত্তেজনা না থেমে বরং আরও বেড়েছে। হামলা হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী।
ঘটছে প্রাণহানি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্পদ। ক্ষতি যে শুধু ইউক্রেনের হচ্ছে তা নয়, হচ্ছে রাশিয়ারও। কিন্তু তারপরও কেন হামলা চালিয়েই যাচ্ছে রাশিয়া? আসলে কী চাইছেন পুতিন?
হামলার নেপথ্য, ইউক্রেন পরিস্থিতি, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন- এসবের বাইরেও এখন আলোচনায় আসছে অনেক কিছুই। সব মিলিয়ে বিশ্ব রাজনীতি কোন পথে, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
চার কোটি ৪০ লাখ মানুষের আবাসস্থল ইউক্রেন একটি উন্নয়নশীল দেশ। পূর্ব ইউরোপের এ দেশের পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পশ্চিমে রোমানিয়া ও মলদোভা, দক্ষিণে কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগর, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুশ। কিয়েভ ইউক্রেনের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। আকাশ-সড়ক-সমুদ্রপথে চলছে যুদ্ধ। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন সেনারা। সঙ্গে যোগ দিয়েছে বেসামরিক নাগরিকও। রাজধানী কিয়েভসহ কয়েকটি এলাকায় বেশ শক্তিশালী হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা।
রাজধানী ঘিরে রুশ সেনারা থাকায় কার্যত সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় নেই কারোরই। কিয়েভের রাজপথ দখল নিয়ে আছে ইউক্রেন সেনারা। তবে অন্য জায়গাগুলোতে কখনও ইউক্রেন কখনও রাশিয়ার হাতে চলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ইউক্রেনবাসীর জীবন এখন হাতের মুঠোয়।
রাশিয়ার সেনারা কেন আক্রমণ করল
আধুনিক ইউক্রেনের ক্রমাগত হুমকির মুখে রাশিয়া মোটেও নিরাপদ নয় জানিয়ে টেলিভিশন ভাষণে যুদ্ধের ঘোষণা দেন পুতিন। এরপরই শুরু হয় রুশ সেনাদের হামলা। উত্তর,পূর্ব এবং দক্ষিণ থেকে ইউক্রেনের রাজধানীতে আকাশ, সড়ক ও সমুদ্রপথে আক্রমণ শুরু করে তারা। পরে ক্রমেই এগিয়ে যেতে থাকে।
প্রথমে সেনা সদর দপ্তর এবং বিমানবন্দরে হামলায় চালায় রুশ সেনারা। এরপর এগোতে থাকে কিয়েভের মূল কেন্দ্রের দিকে।
যুদ্ধ শুরুর আগে নানা বিষয়ে মিথ্যা যুক্তি ও অসত্য তথ্য দিতে থাকেন পুতিন। তিনি দাবি করেন, তার লক্ষ্য গণহত্যার শিকার লোকদের রক্ষা করা এবং ইউক্রেনকে ‘অসামরিকীকরণ এবং নাৎসীকরণের হাত থেকে বাঁচানো।’
সব অভিযোগই অবশ্য অস্বীকার করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। গণতান্ত্রিক এই দেশে গণহত্যার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
কয়েক মাসের আন্দোলনের পর ২০১৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ইউক্রেনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে। ভ্লাদিমির পুতিন বিষয়টি নিয়ে বারবারই জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছেন। তার অভিযোগ চরমপন্থিরা ভিক্টরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
ওই ঘটনার পর ক্রিমিয়ার দক্ষিণাঞ্চল দখল করে প্রতিশোধ নেয় রাশিয়া। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ শুরু করা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দেয় তারা। সে সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে ১৪ হাজার মানুষের প্রাণ যায়।
পরে আবার ২০২১ সালে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। অবশ্য সে সময় যুদ্ধের কোনো পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে দেশটি। এরপর পুতিন ২০১৫ সালের একটি শান্তিচুক্তি বাতিল করেন। ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলনের পর দুটি এলাকাকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভু্ক্তির বিরোধিতা করে আসছে। ন্যাটোকে তাদের রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া কতদূর যাবে?
রাশিয়া যে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেদের মতো কাউকে বসাতে চায়, এ ব্যাপারটা পরিষ্কার। তাদের ভাষায় ব্যাপারটা ‘নাৎসিমুক্ত করা’। এসব নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখা দিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার প্রথম লক্ষ্য হলো আমি। আর দ্বিতীয় লক্ষ্য আমার পরিবার।’
এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না পুতিন ইউক্রেনে কী করতে চান। তবে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে দেশটির জনসাধারণকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করাও তাদের লক্ষ্য।
হামলা ইউরোপের জন্য কতটা ক্ষতিকর
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা যেমন দেশটির নাগরিকদের জন্য ভয়াবহ, তেমনই ভয়ংকর পরিণতি অপেক্ষা করছে এর প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এতটা ভীতিকর অবস্থা আর কখনও দেখেনি তারা। যুদ্ধে এরই মধ্যে ইউক্রেনের শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
জার্মানি একে বলছে ‘পুতিনের যুদ্ধ’। পুতিন ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার সরকার’ চায় বলে মনে করে তারা। ইউরোপের অন্য দেশগুলোর জন্যও এই হামলার ঘটনা এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা। ইউক্রেন ইতোমধ্যে রাশিয়া সমর্থিত যোদ্ধাদের সঙ্গে আট বছর ধরে যুদ্ধ করেছে। ইউক্রেনবাসীদের জন্য প্রতিটি মুহূর্তই এখন চরম ভয়াবহ।
পুতিন ইউক্রেনে যে হামলা শুরু করেছেন, এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না রাশিয়ার নাগরিকেরাও। এমনকি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে যথাযথ রীতি ছাড়াই এই যুদ্ধের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে যুদ্ধের আঁচ পড়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলোর ওপরও। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে হুড়োহুড়ি করে সীমান্তে ছুটছে মানুষ। চেষ্টা করছে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে। পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, মলদোভা, রোমানিয়া ও স্লোভেকিয়াতে ঢোকার চেষ্টা করছেন ইউক্রেনের বাসিন্দারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, ৭০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
হামলা চালাতে এসে পাঁচ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। আর ইউক্রেনের যে শতাধিক মানুষ মারা গেছে, তাদের মধ্যে আছে শিশু-নারীও। এখন পর্যন্ত পঁচ লাখ মানুষ ইউক্রেন যুদ্ধে শরণার্থী হয়েছে বলে জানা গেছে।
পশ্চিমারা কী করছে
ন্যাটো এরই মধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছে, ইউক্রেনকে সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে এর সদস্য দেশগুলোর কেউ কেউ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে। কেউ অর্থ কেউ অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে তারা অস্ত্র ও অর্থ পাঠাবে। সুইডেন অস্ত্র পাঠানোর কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া বাল্টিক সাগরে কয়েক হাজার সেনা রেখেছে ন্যাটো।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান ও কানাডা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়ার ওপর। আকাশসীমা ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। নিষেধাজ্ঞা এসেছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। ইউরোপজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম স্পুতনিক ও রাশিয়া টুডে।
পুতিনের দাবি কী
ভ্লাদিমির পুতিন চান ইউক্রেন যেন কখনই ন্যাটোতে যোগ না দেয়। এই জোটটি ঘড়ির কাঁটা ১৯৯৭ সালে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, রাশিয়ার পিছে ফেরার কিছু নেই।
পুতিন চান ন্যাটো তাদের সদস্য দেশগুলো থেকে তাদের বাহিনী এবং সামরিক অবকাঠামো সরিয়ে ফেলুক। একই সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্তের কাছে তারা যেন ভারী যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন না করে তারও নিশ্চয়তা চান তিনি। তবে জার্মানির মতে ‘রাশিয়ার নেতা তার বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ইউরোপ দখল করতে চান।’
গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয়দের ‘এক জাতি’ হিসাবে বর্ণনা করে একটি দীর্ঘ রচনা লিখেছিলেন। তিনি ওই লেখায় ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে ‘ঐতিহাসিক রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
পুতিনের দাবি, আধুনিক ইউক্রেন সম্পূর্ণরূপে কমিউনিস্ট রাশিয়া দ্বারা তৈরি এবং এখন পশ্চিমা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি পুতুল রাষ্ট্র।
২০১৩ সালে ইইউর সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর না করার জন্য ইউক্রেনের ওপর তার চাপ ছিল। ক্রেমলিনপন্থি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যাপারটি নিয়েও ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয় রাশিয়ায়। এর রেশ চলতে থাকে বহুদিন। অবশেষে তা যুদ্ধে গড়াল।
যুদ্ধ পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কী আর পুতিনইবা কী হিসাব নিয়ে বসে আছেন তা জানতে অপেক্ষা করা ছাড়া আপাতত বিশ্ববাসীর সামনে কোনো পথ নেই। সময়ই নির্ধারণ করে দেবে এই হিসাব-নিকাশ। নতুন করে হয়তো লেখা হবে ইতিহাস।
আরও পড়ুন:চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া, যুক্তরাজ্যের রিচার্ড রবসন এবং জর্ডান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক ওমর এম ইয়াঘি। ধাতব-জৈব কাঠামো (মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস) আবিষ্কারের জন্য তাদের এই পুরস্কারেরস জন্য নির্বাচিত করা হয়।
গতকাল বুধবার রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। স্টকহোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
নোবেল জুরি বোর্ড জানায়, এই কাঠামোগুলো (মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস) ব্যবহার করে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করা যায়, কার্বন ডাই-অক্সাইড আটকানো যায়, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ করা যায় কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়া অনুঘটক হিসেবে কাজে লাগানো যায়।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্লেষকরা ইয়াঘিকে নোবেলের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে গণ্য করে আসছেন। তার সঙ্গে কিতাগাওয়ার নামও প্রায়ই আলোচনায় আসত।
নোবেল কমিটির কেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান হেইনার লিংকে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগে কল্পনাও করা যায়নি এমন সব সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশেষ করে এটি নতুন বৈশিষ্ট্যের উপযোগী কাস্টমাইজড উপকরণ তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে।’
গত বছর রসায়নে নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড বেকার ও জন জাম্পার এবং ব্রিটেনের ডেমিস হাসাবিস। তারা কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে জীবনের মূল গঠন উপাদান প্রোটিনের গঠন কোড উন্মোচনে কাজ করেন।
এই বছর পদার্থবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ব্রিটেনের জন ক্লার্ক, ফ্রান্সের মিশেল এইচ. দেভরেট ও মার্কিন নাগরিক জন এম মার্টিনিস। গত মঙ্গলবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের তিন বিজ্ঞানীকে। যুক্তরাষ্ট্রের মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের শিমোন সাকাগুচি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণার জন্য তারা নোবেল পান।
আজ বৃহস্পতিবার সাহিত্যে এবং আগামীকাল শুক্রবার বহুল আলোচিত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। অর্থনীতির নোবেল দিয়ে আগামী ১৩ অক্টোবর শেষ হবে ২০২৫ সালের নোবেল মৌসুম।
প্রতিটি নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে থাকবে একটি সনদপত্র, একটি স্বর্ণপদক এবং ১২ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের চেক। কোনো বিভাগে একাধিক বিজয়ী হলে পুরস্কারের অর্থ ভাগ করে দেওয়া হয়।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফের কাছ থেকে এই বছর নোবেল বিজয়ীরা আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হামাস চরম প্রতিশোধ নেওয়ার পর ইসরায়েলের দিক থেকে শুরু হওয়া আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু। আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৮০ জন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, হামলায় চিকিৎসা অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে, নিহত হয়েছে ১ হাজার ৭০১ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং আটক হয়েছে আরও ৩৬২ জন। অবরোধ ও বোমাবর্ষণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৪৬০ জন, যাদের মধ্যে শিশু ১৫৪ জন। জাতিসংঘ বলছে, গাজা উপত্যকার মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকা এখনো উচ্ছেদ নির্দেশ বা সামরিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বারবার বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখো ফিলিস্তিনি দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে। গত আগস্ট থেকে কেবল গাজা সিটি থেকেই ৪ লাখ ১৭ হাজার মানুষ স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে মিসরের শার্ম আল শেখে শুরু হয়েছে হামাস-ইসরায়েল পরোক্ষ আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আলোচনায় মূল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বন্দি বিনিময় ইস্যুতে। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। হামাস জানিয়েছে, তারা আংশিকভাবে প্রস্তাবে রাজি হয়েছে, তবে গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে এখনো আপত্তি রয়েছে।
প্রথম দফার আলোচনা ‘ইতিবাচক পরিবেশে’ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। গত মঙ্গলবারও আলোচনায় বসবেন হামাস, মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত বন্দিদের মুক্তির ঘোষণা আসবে। তার প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও সীমিত বন্দি বিনিময়ের কথা রয়েছে।
৭ অক্টোবর হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনেতারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির পক্ষে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রিস, ইতালি ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীরাও ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে স্থায়ী সমাধানের পথে এগোনোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তবে ইসরায়েলের ভেতরে জিম্মিদের পরিবারের চাপ বাড়ছে। তেল আবিবে বিক্ষোভকারীরা সরকারকে অভিযুক্ত করছেন জিম্মিদের অবহেলা করার জন্য। তারা দাবি তুলেছেন, বন্দিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনা হোক। এরই মধ্যে কিছু পরিবার নোবেল কমিটিকে চিঠি লিখে ট্রাম্পকে শান্তি প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েল এবার ৭ অক্টোবরকে সরকারি স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করেনি। দেশটির হিব্রু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৬ অক্টোবর জাতীয় কবরস্থানে আনুষ্ঠানিক স্মরণানুষ্ঠান হবে। তবে বেসরকারি উদ্যোগে কনসার্ট, সমাবেশসহ নানা স্মরণ কর্মসূচি হচ্ছে।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১ জন নিহত এবং ৯৬ জন আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের স্বাধীন প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় উভয় পক্ষের দাবি যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
ক্যান্সারে মারা যাওয়া এক নারীর পরিবারকে ৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে জনসন অ্যান্ড জনসনকে আদেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি আদালত। জুরি মনে করেছে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেবি পাউডার প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি ওই নারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী।
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা মে মুর ২০২১ সালে ৮৮ বছর বয়সে মারা যান। সে বছরই তার পরিবার জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে মামলা করে। অভিযোগে বলা হয়, কোম্পানিটির তৈরি বেবি পাউডারে অ্যাসবেস্টস নামের ক্ষতিকর তন্তু ছিল, যা তার বিরল মেসোথেলিওমা ক্যান্সারের কারণ।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গত সোমবার সন্ধ্যায় জনসন অ্যান্ড জনসনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ বাবদ ৯৫ কোটি ডলার পরিশোধের নির্দেশ দেয় জুরি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুসারে, শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ সাধারণত ক্ষতিপূরণের পরিমাণের ৯ গুণের বেশি হওয়া উচিত নয়। তাই আপিলের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমতে পারে।
জনসন অ্যান্ড জনসনের আইনি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হাস এক বিবৃতিতে লস অ্যাঞ্জেলেসের আদালতের এ রায়কে ‘ভয়াবহ ও অসাংবিধানিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তার মক্কেল দ্রুতই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পরিকল্পনা করছে।
হাস বলেন, বাদীপক্ষের আইনজীবীরা এমন ‘ভুয়া বিজ্ঞানের’ ওপর ভিত্তি করে তাদের যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন, যা জুরির সামনে উপস্থাপন করা উচিত ছিল না।
জনসন অ্যান্ড জনসন বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পণ্য নিরাপদ; এতে অ্যাসবেস্টস নেই এবং এটি ক্যান্সার সৃষ্টি করে না।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে ভারতের উত্তর-পশ্চিম রাজ্য রাজস্থানে ভারত ও রাশিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া ‘ইন্ডরা ২০২৫’ শুরু হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই খবর নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজস্থানের মহাজন রেঞ্জে এই সামরিক মহড়া চলছে এবং তা আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, মহড়ার প্রধান লক্ষ্য হলো- সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উভয় দেশের সামরিক ইউনিটগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনকে আরও তীক্ষ্ণ করা। এর মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কৌশল নিখুঁত করাও অন্তর্ভুক্ত।
মন্ত্রণালয় বলেছে, আধুনিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউনিটগুলোর কার্যক্ষমতাগত সামঞ্জস্যতা বৃদ্ধি এবং সর্বোত্তম অনুশীলন আদান-প্রদানের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে।
এই যৌথ সামরিক মহড়া দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও মজবুত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনকে ঠেকাতে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘ অপেক্ষার পর চলতি সপ্তাহের মধ্যেই মার্কিন নৌবাহিনীর নতুন স্টেলথ যুদ্ধবিমান নির্মাণ ও নকশার দায়িত্ব কোন প্রতিরক্ষা কোম্পানিকে দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে পেন্টাগন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন, এক মার্কিন কর্মকর্তা এবং এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুইজন। কয়েক বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প চীনা প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বোয়িং কোম্পানি এবং নর্থরপ গ্রুম্যান করপোরেশন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে যে কোম্পানি নির্বাচিত হবে, তারা তৈরি করবে ‘এফ/এ-এক্সএক্স’ নামের নতুন যুদ্ধবিমানটি। এটি ১৯৯০-এর দশক থেকে ব্যবহৃত ‘এফ/এ-১৮ ই/এফ’ সুপার হর্নেট বহরের বিকল্প হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ গত শুক্রবার এই প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছেন। সম্ভবত এই সপ্তাহেই নৌবাহিনী বিজয়ী কোম্পানির নাম ঘোষণা করবে। তবে অতীতের মতো শেষ মুহূর্তের জটিলতা আবারও বিলম্ব ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও পেন্টাগন ও মার্কিন নৌবাহিনী এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এফ/এ-এক্সএক্স প্রকল্পে বিলম্ব মার্কিন নৌবাহিনীর বিমান সক্ষমতা ও চীনের বিরুদ্ধে বিমানবাহী রণতরির কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রকল্পটি বিলম্বিত হলে বা বাজেট সংকুচিত হলে মার্কিন নৌবাহিনী ২০৩০ সালের পর আধুনিক যুদ্ধবিমানের ঘাটতিতে পড়তে পারে, যা তাদের বিশ্ব রণাঙ্গনের মঞ্চে দুর্বল করবে।
এই নতুন যুদ্ধবিমানটিতে থাকবে উন্নত স্টেলথ প্রযুক্তি, বেশি পরিসর ও স্থায়িত্ব এবং বিনা চালকে উড্ডয়নযোগ্য ও নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের সক্ষমতা।
বসন্ত ও গ্রীষ্মে কংগ্রেস ও পেন্টাগনের মধ্যে অর্থায়ন নিয়ে বিরোধের কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি থেমে যায়। পেন্টাগন ৭৪ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ চেয়েছিল ‘ন্যূনতম উন্নয়ন তহবিল’ হিসেবে। কিছু কর্মকর্তা প্রকৌশল ও সরবরাহ শৃঙ্খলের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রকল্পটি তিন বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কংগ্রেস ও নৌবাহিনী দ্রুত চুক্তির পক্ষেই ছিল।
পরবর্তীকালে প্রকল্পটি ত্বরান্বিত করতে কংগ্রেস ৭৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে, যা এই গ্রীষ্মে স্বাক্ষরিত কর বিল ও ব্যয় আইনের অংশ। তা ছাড়া ২০২৬ অর্থবছরের জন্য আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিলম্বের আরেকটি কারণ ছিল এই বিতর্ক- বোয়িং ও নর্থরপ গ্রুম্যান সময়মতো বিমান সরবরাহ করতে পারবে কি না। কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলেন, বোয়িং হয়তো পর্যাপ্ত প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে পারবে না। কারণ, তারা সম্প্রতি মার্কিন বিমানবাহিনীর এফ-৪৭ জেট প্রকল্পও পেয়েছে। আবার নর্থরপ গ্রুম্যানের ক্ষেত্রেও উদ্বেগ ছিল যে তাদের সেন্টিনেল আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প এরই মধ্যে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
যদিও এফ/এ-এক্সএক্সের সংখ্যা, মূল্য ও সময়সীমা গোপন রাখা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এটি এফ-৩৫ প্রকল্পের মতোই বহু বিলিয়ন ডলারের হবে।
এদিকে মার্কিন নৌবাহিনী এখনো লকহিড মার্টিন কর্পের এফ-৩৫সি জেটের ২৭০টিরও বেশি ইউনিট কেনার পরিকল্পনা করছে। তবে লকহিড মার্টিনকে এই বছরই এফ/এ-এক্সএক্স প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম ধাপের উৎপাদিত যুদ্ধবিমানগুলো ২০৩০ সালের পর পরিষেবায় যুক্ত হওয়ার কথা, আর বিদ্যমান এফ/এ-১৮ বহর ২০৪০-এর দশক পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আফগান সীমান্তের কাছে গতকাল বুধবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কনভয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। এতে ৯ জন সেনা এবং ২ জন অফিসার নিহত হয়েছেন। সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইতোমধ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেছেন পাকিস্তানি তালেবান। পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেন, রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা প্রথমে কনভয়ে আঘাত হানে। এরপর বহু সংখ্যক জঙ্গি অতর্কিতে বন্দুক হামলা চালায়।
দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কুররাম জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে পাকিস্তানের পাঁচজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, অরাকজাই সংলগ্ন জেলায় এক অভিযানে ১৯ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এই অভিযানের সময় সেনারা নিহত হয়।
অন্যদিকে পাকিস্তানি তালেবান বলেছে, তাদের যোদ্ধারা কনভয়ে হামলা চালিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে এসব হামলা হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান দেশটির সরকার উৎখাতের মাধ্যমে দেশটিতে কঠোর ইসলামিক শাসন বাস্তবায়ন করতে চায়। এ নিয়ে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তারা হামলা বাড়িয়েছে।
অবশেষে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পল কাপুরকে অনুমোদন দিল মার্কিন সিনেট। এর ফলে ডোনাল্ড লুর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তিনি। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতি সামলাতে তাকেই এ অঞ্চলের নতুন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিল যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে এই পদে ছিলেন ডোনাল্ড লু। তার বিদায়ে গত ফেব্রুয়ারিতে এ দায়িত্বের জন্য পল কাপুরকে মনোনীত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার তা অনুমোদন করে মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি। সেখানে পল কাপুর ছিলেন ১০৭ জন মনোনীত ব্যক্তির একজন।
মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কূটনৈতিক পদে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ভারতীয় বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন তিনি। এর আগে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নিশা বিসওয়াল দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
পল কাপুর ভারত ও পাকিস্তানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। তিনি মার্কিন নৌবাহিনীর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির হুভার ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কাজ করেছেন।
ট্রাম্পের প্রথম দফায় তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পলিসি প্ল্যানিং বিভাগে যুক্ত ছিলেন।
ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে তিনি বেশ কিছু বইও লিখেছেন। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে– ‘জিহাদ অ্যাজ গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি: ইসলামিস্ট মিলিট্যান্সি, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড দ্য পাকিস্তানি স্টেট’, ‘ডেঞ্জারাস ডিটারেন্ট: নিউক্লিয়ার উইপনস প্রলিফারেশন অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ইন সাউথ এশিয়া’।
এছাড়া সহলেখক হিসেবে লিখেছেন ‘ইন্ডিয়া, পাকিস্তান অ্যান্ড দ্য বোম্ব: ডিবেটিং নিউক্লিয়ার স্ট্যাবিলিটি ইন সাউথ এশিয়া’।
মন্তব্য