ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ছাড়িয়েছে ১০০ ডলার। এটি গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আগের দিনের চেয়ে ৬ শতাংশের মতো বেড়েছে। এদিন ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর উঠেছে ১০২ ডলার ৭০ সেন্টে। আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল প্রতি ব্যারেল ৯৭ ডলার ৩২ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে।
এই দর ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রয়টার্স প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাবে- এ খবরে বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক হামলার ঘোষণায় সেই দাম বেড়ে ১০০ ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমতে কমতে ৬৬ ডলারে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট তেলের দর কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার।
তিন-চার দিন ওই একই জায়গায় স্থির ছিল তেলের বাজার। কিন্তু ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও করোনার নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মানুষ খুব একটা মারা না যাওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বেশ খানিকটা কেটে যায়। এতে বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়বে- এ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করে দাম। সেই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহ কম এবং ওমিক্রন করোনাভাইরাস নিয়ে সম্ভাব্য আতঙ্ক-উদ্বেগ কমার কারণে বুধবার তেলের দাম দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল মঙ্গলবার বলেছেন, ‘মার্কিন অর্থনীতি ওমিক্রন ঢেউ সহ্য করতে পারবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম তেল ভোক্তাদের খুব সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে। আর এই প্রভাব মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কঠোর মুদ্রানীতি শুরু করার জন্য প্রস্তুত আছে।’
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
গত ২৭ অক্টোবর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে ৮৫ দশমিক ০৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকেই তা কমতে থাকে। ৮ নভেম্বর এর দর ছিল ৮২ দশমিক ৫ ডলার। ১৬ অক্টোবর দাম ছিল ৮০ ডলার।
আর এক বছর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ কোম্পানি ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্সও মাস চারেক আগে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, কোভিডের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছিল তা দূর হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে দেশে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবর মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল, শিগগিরই তা ১০০ ডলার হয়ে যেতে পারে।
তবে গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দাম নিম্নমুখী হয়। তারপরও তা নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনতে নিজ দেশের পেট্রোলিয়াম ভান্ডার থেকে পাঁচ কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত ২৩ নভেম্বর টুইট বার্তায় বাইডেন ঘোষণা দেন, ‘আমেরিকান পরিবারগুলোর জন্য তেল ও গ্যাসের দাম কমাতে পদক্ষেপের কথা আজ ঘোষণা করছি। আমেরিকাবাসীর জন্য স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) থেকে পাঁচ কোটি ব্যারেল তেল ছাড়ব আমরা, যাতে তেল ও গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।’
দেশে তেল ও গ্যাসের মতো জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি রুখতে এই পদক্ষেপ নেন জো বাইডেন। এর জেরে সে দেশে জ্বালানির দাম কমবে বলে মনে করা হচ্ছিল। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দামেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছিলেন অনেকে।
তবে বাইডেনের এই ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম খুব একটা কমেনি। ওমিক্রন আতঙ্কেই মূলত বড় দরপতন হয়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে গত ৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশ যখন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে যে দর ছিল, এখন তার থেকে অনেক বেশি।
সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা করছে সরকার। কিন্তু আসন্ন বোরো মৌসুমে এ নীতিমালার বাস্তবায়নে সরকারের সিদ্ধান্ত ডিলারদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে দেশে সারের সংকট আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ নীতিমালার বাস্তবায়ন পেছানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ)।
একইসঙ্গে সার ডিলারদের কমিশন বাড়িয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সার ডিলার ও আমদানিকারকদের এই সংগঠন।
বুধবার ধানমণ্ডির সীমা ব্লোসম টাওয়ারের একটি কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে সারাদেশের ডিলারদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন আহমেদ।
কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সারের ডিলার নিয়োগের নতুন নীতিমালা করে ইউনিয়ন ভিত্তিক নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে, যা এই সময়ের জন্য বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী একজন ডিলারকে একটি গুদাম ও একটি বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুযায়ী একজন ডিলারকে ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র এবং একটি গুদাম পরিচালনা করতে হবে। এতে করে ডিলারদের পরিচালনা ব্যয় তিন গুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু কমিশন আগের মতো প্রতি কেজিতে ২ টাকা থাকবে। এতে করে সার সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, এখন হুট করে এ নীতিমালা হলে সারের সরকারি দামে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, পরিবহন খরচ এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে কোনোভাবেই ডিলারশিপ ব্যবসাটি আর কার্যকর থাকবে না। আর এখন নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক সময় নয়। কারণ, বর্তমানে মিনি পিকসিজন এবং সামনে বোরোর ভরা মৌসুম আসন্ন। এই মৌসুমে নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গেলে মাঠে এক ধরনের অরাজকতা তৈরি হতে পারে।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ডিলারশীপ প্রথা চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি উপজেলায় এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সালে জারিকৃত ডিলার নিয়োগ ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নের ডিলাররা সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহ করে আসছে। সারাদেশে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৮০০ জন ডিলার এবং প্রায় ৪৫ হাজার খুচরা বিক্রেতা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নাম ও লোগো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার ভুয়া প্রলোভন দেখাচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত মঙ্গলবার (এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সতর্কতা জারি করে)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ ও ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’-এর নাম ও লোগো ব্যবহার করে https://dbbloan.com, https://bblloan.com ও https://www.bdloan71.com নামের কিছু ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চালানো হচ্ছে। এসব প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা আইএমএফ–এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এই সব অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ নানা সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষ আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারেন বা আইনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া বা দেওয়ার উদ্দেশে অনলাইন বা অফলাইন যেকোনো প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয়।
পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪-এর ১৫(২) ধারা অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতারণার জন্য কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সাধারণ জনগণকে এ ধরনের ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান বা আর্থিক লেনদেন না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। এবার ভরিতে ৬ হাজার ৯০৬ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। যা দেশের ইতিহাসে মূল্যবান এই ধাতুর সর্বোচ্চ দাম।
বুধবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। আজ বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫ টাকা ও ৯৪ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০১ টাকা।
এদিকে, বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
এদিকে, বুধবার বিশ্ববাজারে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছেন। ফলে এর দাম এই পর্যন্ত ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
এদিকে ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অনিশ্চিত সময়ে ঐতিহ্যগতভাবে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে বিবেচিত স্বর্ণ বুধবার আউন্স প্রতি ৪,০০৬.৬৮ ডলারে পৌঁছায়। যদিও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ডলার অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছে। রূপার দামও নিজস্ব রেকর্ডের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশের বন্ধ হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে। কারণ, এরফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য-বিশেষ করে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত-প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ব্যাংকের বিশ্লেষক টেলর নাগেন্ট লিখেছেন, ‘স্বর্ণের দামের দ্রুত উত্থানকে সমর্থন করছে এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয়, বিশেষ করে চীনের শক্তিশালী চাহিদা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মুদ্রাস্ফীতি অনিশ্চয়তা স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে।’
অন্যদিকে, স্বর্ণবাজারে ব্যস্ততার মধ্যেও এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলো তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যদিও এআই-নির্ভর প্রবৃদ্ধি অনেক সূচক ও কোম্পানিকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
সরকার দেশের কর ব্যবস্থাকে আরো স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যবসাবান্ধব করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, রাজস্ব প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও দক্ষতা আনার লক্ষ্যে ডিজিটালাইজেশন এবং কর আইন সংস্কার শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বুধবার আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিট দ্যা বিজনেস শীর্ষক অংশীজন সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আয়কর আইন ২০২৩-এর ইংরেজি সংস্করণ মুদ্রণের জন্য সরকারি প্রেসে পাঠানো হয়েছে, কাস্টমস আইন প্রযুক্তিগত পর্যালোচনায় রয়েছে এবং ভ্যাট আইনও চূড়ান্ত পর্যায়ে। ‘খুব শিগগিরই তিনটি প্রধান কর আইন- আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট- ইংরেজিতে অফিসিয়ালভাবে প্রকাশিত হবে,’ তিনি বলেন।
রহমান বলেন, কর ফেরত প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ‘গত বছর আমরা করদাতাদের নগদ ফেরত দিতে পারিনি, এবার তা বাস্তবায়নের পথে আছি,’ তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছর থেকে করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন সম্পূর্ণ অনলাইনে জমা দিতে হবে, যা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। ‘তথ্য বিকৃতি বা পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না- এতে দেশে একটি স্বচ্ছ কর সংস্কৃতি গড়ে উঠবে,’ এনবিআর চেয়ারম্যান মন্তব্য করেন।
রহমান জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় ২০ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
এনবিআর শিগগিরই ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (NSW) সিস্টেমে দ্বৈত কর চুক্তি (DTA) সম্পর্কিত সার্টিফিকেট ইস্যু প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল করবে বলে তিনি জানান। ‘এখন পর্যন্ত সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে ৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও পারমিট ইস্যু হয়েছে, যার ৮০ শতাংশ জমার এক ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হয়,’ তিনি যোগ করেন।
অনিয়মের বিষয়ে সতর্ক করে রহমান বলেন, ‘অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি করদাতাদের হয়রানির বিরুদ্ধেও শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ন্যায্য শুল্ক মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই লেনদেনের প্রকৃত মূল্যের ভিত্তিতে হতে হবে। স্ফীত লক্ষ্যমাত্রা বা অতিরিক্ত আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।’
তিনি উপসংহারে বলেন, ‘একটি আধুনিক, ন্যায্য ও প্রযুক্তিনির্ভর কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা সরকারের আস্থা, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ও করদাতাদের সন্তুষ্টি একসঙ্গে নিশ্চিত করতে চাই।’
আকাশযানে ব্যবহৃত জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে বাংলাদেশি ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ৯৬ দশমিক ৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯ দশমিক ২৯ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেশি ও বিদেশি ক্রেতার থেকে প্রতি লিটার শূন্য দশমিক ৬৩৩৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৬৫৪৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভাড়া কিছুটা বেড়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
নতুন এই দর বুধবার রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে।
এর আগে বুধবার নতুন এই দাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। দাম বাড়ানোর আগে বিইআরসির কার্যালয়ে একটি গণশুনানি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, বিপিসি প্রতিব ছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন জেট ফুয়েল আমদানি করে থাকে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনডেনসেট পরিশোধনের মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে জেট ফুয়েল উৎপাদন করে বিপিসিকে সরবরাহ করেন।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। মোট ৩৯৯টি কোম্পানির ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৪টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট হাতবদল হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় ৬১১ কোটি ৮৭ লাখ ৪৬ হাজার ১৫০ টাকা।
ডিএসইতে মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার ১,২৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৯১৩ টাকা। যা গত মঙ্গলবারের চেয়ে এক হাজার ৯৫৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩২ হাজার ৩০৫ টাকা কম। গত মঙ্গলবার বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২২ হাজার ৮২ কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ২১৮ টাকা।
ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩৯.১৪ পয়েন্ট কমে ৫,৩৩৭.৮৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ডিএস-৩০ সূচক ১৩.৪২ পয়েন্ট কমে ২,০৫১.৫৪ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ১২.৩৭ পয়েন্ট কমে ১,১৪৯.১৮ পয়েন্টে নেমে আসে।
লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৫টির, কমেছে ২২১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের পরিমাণে শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো- সিভিও পেট্রোলিয়াম, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, সোনালি পেপার, কে অ্যান্ড কিউ, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স এবং সিম টেক্স।
দরবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, গ্রীণ ডেল্টা, সিম টেক্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সিভিও পেট্রোলিয়াম, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইন্ট্র্যাকো রি-ফুয়েলিং এবং তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্স।
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক, এসআইবিএল, এক্সিম ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এনবিএল, পিপলস লিজিং, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ফিন্যান্স, কে অ্যান্ড কিউ এবং প্রিমিয়ার লিজিং।
রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল এক্সপো-২০২৫’ শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের সর্বশেষ উদ্ভাবনগুলো প্রদর্শনের লক্ষ্যে ইকো এক্সপো এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই প্রদর্শনীটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের পোশাকশিল্প স্থিতিশীল ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
এই এক্সপোর মাধ্যমে শিল্প বিশেষজ্ঞ, উদ্ভাবক এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার এক অনন্য সুযোগ তৈরি হবে।
এক্সপোতে চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে শীর্ষস্থানীয় প্রস্তুতকারকরা তাদের উদ্ভাবনী পণ্য প্রদর্শন করবেন। এতে অত্যাধুনিক ফাইবার, সুতা, টেকসই ফেব্রিক, ট্রিমস, অ্যাকসেসরিজ, ডাইস্টাফ এবং পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের টেক্সটাইল ও পোশাকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রদর্শিত হবে।
মন্তব্য