ভারতের রাজ্য কেরালায় একটি পাহাড়ের খাদে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দুই দিন ধরে আটকে থাকা তরুণকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২০ বছর বয়সী ওই তরুণকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণের নাম বাবু। তিনি কেরালার পালাক্কাডের পালাম্পুঝা এলাকার একটি পাথুরে পাহাড়ের এক কিনারে আটকে ছিলেন।
সোমবার তিনি সেখানে আটকে পড়লেও তাকে খাবার বা কোনো পানীয় পৌঁছাতে পারেননি উদ্ধারকারীরা।
বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ বাবুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, বাবু একটি টি-শার্ট এবং হাফপ্যান্ট পরে নিজের ভারসাম্য ধরে রেখেছে খুব সতর্কতার সঙ্গে। খুব ছোট্ট একটি খাদে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন তিনি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সকালে এক টুইটে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল বাবুর সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি লেখেন, ‘পালাম্পুঝা পাহাড়ের খাদে আটকে পড়া তরুণকে উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এখন সেখানে দুটি ইউনিট উদ্ধারকাজ করছে। সেনা সদস্যরা তার সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন। আজ উদ্ধার অভিযান আবার শুরু করা হবে। আইএএফ এমসিসি হেলিকপ্টার প্রস্তুত করা হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, আরও দুজনকে নিয়ে বাবু পালাম্পুঝার সেই পাথুরে পাহাড়ে ওঠা শুরু করেন। অন্য দুই সঙ্গী মাঝপথ থেকে ফিরে গেলেও বাবু পাহাড়টিতে উঠতে থাকেন। একপর্যায়ে পা পিছলে তিনি নিচে পড়ে যান। সেখানে একটি খাদে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নেন তিনি। কিন্তু এরপর তিনি আর সেখান থেকে উঠতে বা নামতে পারেননি।
পালাক্কাডার জেলা মেডিক্যাল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা বাবুকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছেন।
আরও পড়ুন:#Malampuzha rescue mission a historic success after 48 hours of tireless efforts. Babu rescued by #IndianArmy. The support given by the locals, including the adivasis, is unparalleled.
— Mohd Anas Nazar Kalathan (@AnasNextSenator) February 9, 2022
Salute to the heroes of the @IaSouthern the @NDRFHQ and the @TheKeralaPolice. ♥️ pic.twitter.com/I5kjIphgEO
চাকরিতে ১৪তম গ্রেড ও ‘টেকনিক্যাল পদমর্যাদা’ দেওয়াসহ ছয় দাবিতে নওগাঁয় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২ঘন্টাব্যাপী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েনের ব্যানারে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এসময় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশ নওগাঁ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক অনুপ কুমার, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি নার্গিস আক্তার, সাধারন সম্পাদক আসমানী বানু, কোষাধ্যক্ষ রুকশানা আরাসহ স্বাস্থ্য সহকারীরা।
তাদের ৬দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সব স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া ও বেতন স্কেল পুনর্র্র্নিধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা।
অবস্থান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা ও সীমিত জনবল নিয়েও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধে কাজ করেন তারা। এছাড়াও রোগ থেকে মুক্তির উপায়, নতুন রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু বেতন কাঠামোয় রয়েছে চরম বৈষম্য। তাই স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি মেনে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশ নওগাঁ সদর উপজেলা শাখার সভাপতি নার্গিস আক্তার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে সারাদেশে প্রায় ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী আছেন। তারা শিশু, গর্ভবর্তী নারী ও কিশোরীদের টিকাদান এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে টেকনিক্যাল পদমর্যাদাসহ বেতন স্কেল উন্নতির জন্য স্বাস্থ্য সহকারীরা আন্দোলন করলেও তা প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
গুম সংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ ধরনের ঘটনার পেছনে শুধু দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীই নয় বরং বিদেশি অংশীদারদের ভূমিকা এবং বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বিধা ও মতবিরোধও কাজ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশ গুমসহ নানা বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যার ফলে অনেককে পেশাগত ও ব্যক্তিগতভাবে ভুগতে হয়েছে।
কমিশন বলেছে, গুম ছিল না বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার ফল, বরং এটি এমন একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা, যেখানে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল-বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার নামে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সম্পৃক্ততা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, গুম সংক্রান্ত বিষয়ে নিরপেক্ষ মত দেওয়ার কারণে তাকে সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়, নতুন পদায়নের আগেই তার সম্পর্কে সতর্ক বার্তা ছড়ানো হত, এমনকি তার পরিবারের ওপর নজরদারি চলত।
এক যুবক কমিশনকে জানান, তার ভাই একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতেন। তাকে রাজনৈতিক ‘বিরোধীদের’ তালিকা করতে বলা হয়। পরে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে, যা জানার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তার ভাই এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
এক সৈনিক জানান, তাকে একটি গোপন বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল যেখানে বন্দিদের প্রতি ছিল চরম নিষ্ঠুরতা। তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয় যেন স্বাভাবিক ব্যবহার না করা হয়, বরং বন্দিদের কষ্ট দেওয়ার নির্দেশ মেনে চলা হয়। এমনকি বন্দিদের সামনে কথা বলাও নিরুৎসাহিত করা হতো; পরিবর্তে ইশারা ও শিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলা হতো- যা অনেক ভুক্তভোগীর বর্ণনায়ও উঠে এসেছে।
তবে প্রতিবেদন জানায়, ওই সৈনিক একপর্যায়ে প্রতিরোধের ছোটখাটো চেষ্টা করতেন, যেমন নিজের খাবার বন্দিদের দিয়ে দিতেন। এক বন্দি কমিশনকে সরাসরি জানান, ওই সৈনিকের দেওয়া খাবারে তিনি বেঁচে ছিলেন।
আরেকজন র্যাব গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তাকে একজন দীর্ঘদিনের বন্দিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা অমান্য করেন এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে থেকে তার অবস্থান ধরে রাখেন।
কমিশনের ভাষায়, ‘সবসময়ই যে অবাধ্যতার ফলাফল তাৎক্ষণিক হয়, তা নয়। কেউ কেউ তাদের অবস্থান জানানোর পরও টিকে ছিলেন।’ যেমন দুজন র্যাব সদস্য র্যাব গোয়েন্দা প্রধানকে নিজ হাতে লেখা চিঠিতে জানান যে তারা বেআইনি কোনো আদেশ পালন করবেন না।
এক চিঠিতে লেখা ছিল: ‘যদি কোনো অভিযান আইন বহির্ভূত বা আইন বহির্ভূত গুলি চালানোর উদ্দেশে হয়, তাহলে আমি তাতে অংশ নিতে পারব না।’
প্রতিবেদন জানায়, বিগত সরকারের পতনের পর এই ধরনের কয়েকটি নোট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকেও পাঠানো হয়েছিল, যা পরে গণভবন থেকে উদ্ধার হয়।
তবু কমিশনের ভাষায়, ‘এরপরও গুমের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেখানে ট্রেনলাইন কিংবা চলন্ত যানবাহনের নিচে ফেলে লাশ গুম করা হয়েছে।’
প্রতিবেদন বলছে, ‘গুমের মতো অপরাধকে অনেকাংশে অঘোষিতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এবং যারা এসব করেছিল, তারা প্রকৃত অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হননি।’
কমিশনের প্রতিবেদন জানায়, আন্তর্জাতিক সংযোগও এই ঘটনার পেছনে কার্যকর ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও, আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পশ্চিমা সহযোগিতার সুবিধাও পেয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয় একজন ভুক্তভোগী কমিশনকে জানান, তাকে ডিবির হেফাজতে দুজন আমেরিকান নাগরিক জেরা করেছিলেন। যদিও তারা সরাসরি নির্যাতনে অংশ নেয়নি, তথাপি তাদের উপস্থিতিই এই বেআইনি আটক ব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদাকে আটকের সময় যেভাবে মব জাস্টিজ করা হয়েছে তা কাম্য নয় বলে জানিয়েয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘গত রোববার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তারের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়; তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার হয়েছেন নুরুল হুদা।’
‘তবে তাকে গ্রেপ্তারের সময় যেভাবে মব জাস্টিজ করা হয়েছে তা কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। এ ঘটনার তদন্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষি জমি দখল রোধে কৃষি জমি সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বিদেশি ফলের পাশাপাশি দেশীয় ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেন এসব ফল হারিয়ে না যায়।’
পরিদর্শনের সময় গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী যাবের সাদেক, কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ, হর্টিকালচার সেন্টারের এনামুল হকসহ পুলিশ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপদেষ্টা হর্টিকালচার সেন্টারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নানা দিক নির্দেশনা দেন।
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির জন্য নির্বাচিত নেত্রকোনার চারজন শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা শেষে তাদের হাতে এই অর্থ তোলে দেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
এই চারজন মেধাবী শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগে মো. সাজ্জাদ আলী, অর্থনীতি বিভাগে মানব তালুকদার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে রেশমা আক্তার এবং বাংলা বিভাগে বন্যা রানী সরকার।
জানা যায়, এই চারজন মেধাবী শিক্ষার্থী নিজেদের প্রচেষ্টা ও প্রতিভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হন। তবে তাদের প্রত্যেকেই আর্থিক সংকটে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়লে খবর পেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এলে জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়, যাতে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, ‘চারজন শিক্ষার্থী ভর্তি সহায়তার জন্য আবেদন করেছিলেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কলেজের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায়, তারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিঃসন্দেহে আমাদের জেলার সম্পদ। ভবিষ্যতে যেন কেউ আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যেই জেলা প্রশাসনের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন, যাতে মেধার বিকাশে অর্থ কখনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।” এছাড়াও স্থানীয়ভাবে এই পদক্ষেপকে শিক্ষাবান্ধব প্রশাসনের একটি মানবিক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পরিবার ও অভিভাবকরাও এ সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম প্রতিদিন তৈরি করছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে রয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। নগরজুড়ে উৎপন্ন এই প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের অভাবে সরাসরি নদী, খাল ও নালায় গিয়ে মিশছে। যা পরিবেশের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), জার্মান সরকার এবং বাউস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে ১৪০ টন সরাসরি খাল ও নালার মাধ্যমে গিয়ে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। নদীতে জমা হওয়া এই প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি হচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের আস্তর। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে জাহাজ ও নৌযান চলাচল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নদীর গভীরতা বাড়াতে সম্প্রতি প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হয়েছে। এই ব্যয় অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য প্লাস্টিকের পাশাপাশি ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, প্লাস্টিক মূলত তৈরি হয় পেট্রোলিয়াম থেকে। সুতরাং পরিবেশের ওপর এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যায়। এছাড়া প্লাস্টিক পলিথিনের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যেগুলোর প্রায় প্রতিটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন হয়। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পরিবেশের উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
চুয়েটের পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যদি শহরের বর্জ্য ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারতাম তাহলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ড্রেজিংয়ে খরচ হতো না। একইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’ এক গবেষণায় দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন গড়ে ৭৮৫ টন বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া ওয়ান টাইম প্লাস্টিক, যা পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। গবেষকরা জানান, বন্দরে যেসব জাহাজ আসে সেগুলোও কম-বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে। এসব বর্জ্য যথাযথভাবে নিষ্কাশন না হলে তা শুধু নদী নয়, সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং সামুদ্রিক পরিবেশেও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
এসসিআইপি প্লাস্টিক প্রজেক্টের পরিচালক ড. ফারজানা রহমান জুথি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে হবে। আর এটি করতে না পারলে নদী ও সমুদ্র উভয়ের পরিবেশই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি। নদীতে প্লাস্টিক দূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা। কারণ, এটি শুধু পরিবেশ নয়, জনস্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক সমীক্ষায় কর্ণফুলী নদীর ৭৯টি স্থানে দূষণের চিত্র ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৭টি স্থানে দূষণকে ভয়াবহ বলা হয়েছে। শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালি, রাসায়নিক, কঠিন ও তরল বর্জ্য, পয়োঃবর্জ্য ও পলিথিন সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের ২৩টি স্থানে এবং ১৯টি খালের মাধ্যমে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য কর্ণফুলীতে যাচ্ছে। শুধু নগরী নয়, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা থেকেও নদীতে ব্যাপক দূষণ হচ্ছে।
বিশেষভাবে কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট, চিনি, তেল পরিশোধন, ফিশিং কমপ্লেক্স ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান নদীতে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা তেলের দোকান, খোলা টয়লেট, ডায়িং মিল, সার কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ড্রেন ও খালের মাধ্যমে গিয়ে মিশছে কর্ণফুলীতে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারও খালের মাধ্যমে নদীতে পৌঁছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ জানান, দেশে বছরে প্রায় ৯, ৭৭,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সবচেয়ে ক্ষতিকর। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক মূলত পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি হয়। এটি পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এসব প্লাস্টিকের মান উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
গড়াইয়ের পানি প্রবাহের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ জেলার মানুষের ভালোমন্দ। তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয় গড়াইয়ের ওপর। একটু বলে রাখা দরকার, ১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে সেচ সুবিধা ও বন্যা থেকে ফসল ও জনপদ রক্ষার জন্য গঙ্গা কপোতাক্ষ পরিকল্পনা (জিকে) সেচ প্রকল্প নামে কার্যক্রম চালু হয়। জাতিসংঘের সহযোগিতায় চালু হওয়া সে প্রকল্পের আওতায় ফসল উৎপাদন বেড়ে যায় প্রায় তিনগুণ। এ প্রকল্পের মূল উৎস ছিল গড়াই। গড়াই নাব্য সংকটে থাকায় উৎসমুখের কাছে ভেড়ামারাতে পাম্প হাউস স্থাপন করে এ প্রকল্প টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাও রক্ষা হয়নি। গড়াই শুকিয়ে যাওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
আর নানা কারণে কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদীর তীরবর্তী দুই পাড় দখলের কবলে পড়ছে। অবৈধ স্থাপনা ও বাধের দুইপাড় দখলের কারণে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে গড়াই নদীর শহর রক্ষা বাঁধ। স্বেচ্চাচারিভাবে নদী তীরে দোকান পাঠ, খামার, প্রতিষ্ঠান, এমনকি ঘর বাড়িও নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীর কিছু কিছু জায়গায় ইতোমধ্যেই দখলদাররা বালু মহাল তৈরি করে পুরো চর দখল করে নিয়েছে। এমনকি নদীর তীরে মোটা বালি চিকন বালির বিশাল বিশাল বড় বড় গাদি করে ট্রলি ও ডাম ট্রাক এর মাধ্যমে এসব বালি বিক্রয় করছে। যা নদী রক্ষা বাঁধ ও তীর হুমকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়াও নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ক্ষমতাসীনদের ছত্র ছায়ায় বিভিন্ন মানুষকে টাকার বিনিময়ে জায়গা বিক্রয় করে তাদেরকে বসবাস করার অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি এই দখলদাররা এলাকার উচ্চ পদের লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে যার ফলে এদের কিছুই হচ্ছে না।
সরজমিনে দেখা যায়, অবৈধ দখলদারদের হাতে বেদখল হয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়া গড়াই নদীর চর ও তীরবর্তী অঞ্চল গুলো। কিছু অসাধু চক্র ক্ষমতার বড়াই দেখিয়ে একের পর এক দখল করে নিচ্ছে গড়াই নদীর পাড়। কুষ্টিয়া থানাপাড়া থেকে শশ্নান ঘাট পর্যন্ত ক্ষমতা দেখিয়ে নদী তীরে দোকান পাঠ, খামার এমনকি ঘর বাড়ি ও নির্মাণ করেছে ওইসব ভূমিদস্যুরা। কোথাও কোথাও পাকা দোতলা পর্যন্ত বাড়ি করা হয়েছে। শুধু তাই নয় কুষ্টিয়া হরিপুর ব্রিজের দুই পাশে দোকানপাট করেছে । এমনকি ব্রিজের পিলার দখল করে দোকান তৈরি করা হয়েছে। এতে হুমকিতে রয়েছে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ। এছাড়াও এইসব দখলবাজদের জন্য সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে কুষ্টিয়া গড়াই নদীর তীর। নষ্ট হচ্ছে নদীর পরিবেশ ও প্রকৃতি। নদী দখল হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া শহরসংলগ্ন জুগিয়ার নদী তীরবর্তী অঞ্চল, মঙ্গলবাড়িয়া বাঁধ সংলগ্ন, রেইনউক বাঁধ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা, হরিপুর সংযোগ ব্রিজ এলাকা, হরিপুরের বিভিন্ন নদীর তীরসংলগ্ন এলাকা, বড়বাজার ঘোড়ার ঘাট এলাকা, শ্বশ্নান ঘাট, সৈয়দ মাসউদ রুমী সেতুসংলগ্ন এলাকা, কয়া বাজার ও কুমারখালী শহররক্ষা বাঁধ। খোকসা উপজেলাতেও চলছে নদী দখলের মহোৎসব। স্থানীয়দের অভিযোগ এই দখলদারিকে কেন্দ্র করে নদী তীরে বেশ কয়েকবার রক্তা রক্তির ঘটনাও ঘটেছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, এসব অবৈধ স্থাপনা নিয়ে কাজ করছে তারা। অতি দ্রুতই এগুলো ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরায় গরমের তীব্রতায় নাভিশ্বাস উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষের। আষাঢ়ের শুরু থেকে গরমের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দুপুরের আগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। অসহনীয় কষ্ট বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। ভিড় বেড়েছে ডাব, শরবত আর আখের রসের দোকানে। গরমের তীব্রতা কাটাতে শহরের পৌরদিঘীতে দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করছেন অনেকেই।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সাতক্ষীরার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আদ্রতা শতকরা ৫৪ ভাগ। অপরদিকে শনিবার সাতক্ষীরায় এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজমান ছিল। ওইদিন তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাতক্ষীরায় গরমের তীব্রতায় নাকাল হয়ে পড়েছে মানুষ। গরমে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির দেখা দিলেও ভ্যাপসা গরম আরো অসহনীয় লাগছে জনসাধারণের ।
ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। রাস্তায় বের হলে মুখ পুড়ে যাচ্ছে গরমে। এছাড়া বাইরে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে ভাড়াও সেভাবে পাচ্ছিনা।’
শহীদ রাজ্জাক পার্কের শরবত বিক্রেতা ইনতাজ আলী জানান, অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় শরবত বিক্রি বেড়েছে। আগে যেখানে ৪০ থেকে ৫০ গ্লাস শরবত বিক্রি করতাম, এখন সেখানে ১০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, ‘সাতক্ষীরায় কখনো মৃদু আবার কখনো মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ধারা জুন মাসের পুরোটা সময় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য