কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে অভিবাসী অধ্যুষিত ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের রিচমন্ড আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে ৪টি মরদেহ পাওয়া গেছে।
কানাডা ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের হোমিসাইড ইউনিট ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে।
রিচমন্ড পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ভ্যানকুভারের দক্ষিণের গার্ডেন সিটির ৪৫০০-ব্লক থেকে ফোন আসে। পরে পুলিশের একটি দল সেখানে উপস্থিত হলে দেখতে পায়, স্থানীয়রা একটি বাড়ির ভেতরে ৪টি মরদেহ পেয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারণা করছে, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার কাছাকাছি সময়ে এসব ব্যক্তিকে গুলিতে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার শিকার ব্যক্তিরা একে অপরকে চিনতেন।
ঘটনাটি তদন্তে এরই মধ্যে ইন্টিগ্রেটেড হোমিসাইড ইনভেস্টিগেশন টিমকে (আইএইচআইটি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ইতিমধ্যে বাড়ির সামনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বাড়ির সামনে ও পেছনে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ ঘটনায় বিস্তারিত এখনও জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
ইন্টিগ্রেটেড হোমিসাইড ইনভেস্টিগেশন টিম (আইএইচআইটি) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছি। আশা করছি, আমরা কমিউনিটিকে শিগগিরই জবাব দিতে পারব।
আরও পড়ুন:4 PERSONS FOUND DECEASED IN RICHMOND RESIDENCE
— IHIT (@HomicideTeam) January 26, 2022
IHIT continues to process the scene. The identities of the victims are not being released at this time, but they are believed to have known each other. pic.twitter.com/eZk614nXcl
গাজা যুদ্ধের ‘ভয়াবহ সংকট’ অবসানে চুক্তিতে পৌঁছাতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানিয়েছে, দোহায় কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবার হোয়াইট হাউসে যান। কাতার সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সময় লাগবে।
হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর ফেরার ঘোষণার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা এক দুঃখজনক পরিস্থিতি। তিনি (নেতানিয়াহু) এর সমাধান চান, আমিও চাই এবং আমার মনে হয় অন্য পক্ষও সেটা চায়।’
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব বলে আমরা আশা করছি, যা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দেবে।’
চুক্তির আওতায় হামাসের হাতে আটকে থাকা ১০ জীবিত ও ৯ মৃত বন্দিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
সোমবার রাতে ট্রাম্পের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেওয়ার পর নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবার হোয়াইট হাউসে আলোচনায় বসেন। এই বৈঠকে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না।
এর আগে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস স্পিকার মাইক জনসনের সঙ্গে এক বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শিগগিরই আসবে কি না জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় থেকে ইসরাইলের প্রতি জোরালো সমর্থন বজায় রেখেছেন। তবে একইসঙ্গে গাজায় চলমান সংঘর্ষকে ‘নরক’ আখ্যায়িত করে তা বন্ধে চাপও বাড়াচ্ছেন।
এদিকে কাতার জানায়, দোহায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা তৃতীয় দিনে গড়ালেও এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো সময়সীমা দেওয়া সম্ভব না, তবে এটুকু বলতে পারি যে, এর জন্য আমাদের সময় লাগবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের পাশাপাশি কাতারও এই আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। তারা জানিয়েছে, দোহায় চলা বৈঠকে মূলত আলোচনা চালানোর নিয়মকানুন ঠিক করা হচ্ছে।
তবে আলোচনায় থাকা এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো বড় অগ্রগতি হয়নি।
অন্যদিকে, ময়দানে সংঘাত চলছেই। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় ২৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে।
উত্তর গাজায় সংঘর্ষে পাঁচ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এই বছর ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর জন্য এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনের মধ্যে একটি। তাদের মৃত্যু হয় বেইত হানুন এলাকার কাছে পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে।
নেতানিয়াহু সেনাদের মৃত্যুকে ‘কষ্টকর সকাল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
লেবানন জানিয়েছে, মঙ্গলবার ত্রিপোলির কাছে এক হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিলেন এক হামাস যোদ্ধা। এটি ওই এলাকায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে গত নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর প্রথম হামলা।
ইরান-ইসরাইলের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগিয়ে গাজা সংকটের নিষ্পত্তি চাচ্ছেন ট্রাম্প।
এদিকে ফ্রান্সের গোয়েন্দা প্রধানও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘গভীরভাবে ব্যাহত’ হয়েছে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে হামলায় আসলে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে
চলমান বিতর্কে তিনি সরাসরি যুক্ত হলেন।
ইসরাইল ও হামাস রোববার থেকে নতুন দফার আলোচনায় বসেছে। যদিও একই ভবনের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে বসে অংশ নিচ্ছেন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা।
ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর সফরসঙ্গী এক ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনায় যে প্রস্তাব উঠেছে তা ‘ইসরাইলের ৮০-৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে।’
তবে ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমাদের সেনাদের হত্যাকারীদের সঙ্গে আলোচনার কোন দরকার নেই, তাদের ছিন্নভিন্ন করে দিতে হবে।’
গাজায় চলমান যুদ্ধ ২০ লাখের বেশি মানুষের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরাইলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল সাধারণ জনগণ। ওই ঘটনায় হামাস ২৫১ জনকে ইসরাইলিকে বন্দি করে। এখনো তাদের হাতে ৪৯ জন বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছে বলে ইসরাইল দাবি করেছে।
অন্যদিকে, ইসরাইলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৭ হাজার ৫৭৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিক বলে জানায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ ওই সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৈরী দুটি দেশ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দেশ দুটি। তবে এই যুদ্ধবিরতিতে ভরসা করতে পারছে না ইরান। তেহরানের আশঙ্কা, যে কোনো সময় আবারো হামলা করতে পারে ইসরায়েল। আর সেই আশঙ্কা থেকেই এবার জোরকদমে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে খামেনি প্রশাসন।
জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই চীন থেকে অত্যাধুনিক সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের (এসএএম) বিশাল চালান হাতে পেয়েছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এতটাই শক্তিশালী, ইরানের আকাশসীমার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশ করাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একাধিক আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তারা জানান, ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই চীনা এসএএম HQ-9 বা HQ-16 এর এসব ব্যাটারি ইরানে পৌঁছায়। যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া প্রতিরক্ষা কাঠামো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই এই সরঞ্জাম হস্তান্তর হয়েছে।
আরেক আরব কর্মকর্তা জানান, ইরান তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে তীব্র গতিতে কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও এ অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত রাখা হয়েছে। জানা গেছে, চীন থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিনিময়ে ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করছে।
চীন বর্তমানে ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে চীন নিয়মিতভাবে ইরানি তেল আমদানি করছে, যা দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও মজবুত করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চীনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের আকাশে ইসরায়েলি আধিপত্যের সমাপ্তি ঘটাতে পারে। কারণ, সম্প্রতি ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও সামরিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে ধ্বংসাত্মক হামলা চালায়।
তবে পাল্টা হামলায় ইরানও ইসরায়েলের তেলআবিব ও হাইফার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে ইরান রাশিয়ার এস-৩০০ ছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তির খোরদাদ ও বাভার-৩৭৩ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরিচালনা করছে, যদিও সেগুলো মার্কিন স্টেলথ ফাইটার F-35 প্রতিরোধে পুরোপুরি কার্যকর নয়। তাই চীনা HQ-9 বা HQ-16 এর মতো আধুনিক এসএএম সিস্টেম ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।
চীন ইতোমধ্যেই পাকিস্তান ও মিসরের মতো মিত্রদের কাছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে। এবার ইরানেও তা হস্তান্তর, মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সোমবার বলেছেন, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন এবং পুরস্কার কমিটির কাছে পাঠানো চিঠির একটি কপি তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উপহার দেন।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
সোমবার রাতে হোয়াইট হাউসের নৈশভোজে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘তিনি আমাদের কথা অনুসারে, একের পর এক দেশে, একের পর এক অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন’।
ট্রাম্প বছরের পর বছর ধরে সমর্থক এবং অনুগত আইন প্রণেতাদের কাছ থেকে একাধিক বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন এবং মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারটি বারবার হাতছাড়া হওয়ার কারণে তিনি তার বিরক্তির কথা গোপন করেননি।
এই রিপাবলিকান অভিযোগ করেছেন, ভারত ও পাকিস্তান, সেইসাথে সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকার জন্য নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি তাকে উপেক্ষা করেছে।
তিনি মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে ‘শান্তি বজায় রাখার’ জন্য এবং ইব্রাহিম চুক্তির মধ্যস্থতার জন্যও কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যা ইসরাইল এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে একটি ধারাবাহিক চুক্তি।
ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাতা’ হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি ইউক্রেন এবং গাজায় দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তার আলোচনার দক্ষতা ব্যবহার করবেন, যদিও তার প্রেসিডেন্ট হিসাবে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে উভয় সংঘাত এখনও তীব্র।
ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ইরানের এখনো দুই বছর ধরে প্রতিদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর মতো পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতা রয়েছে।
সোমবার (০৭ জুলাই) মেজর জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি আধা-সরকারি মেহের নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রস্তুতির শীর্ষে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে, আমাদের গুদাম, ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং সুযোগ-সুবিধা এত বিশাল যে, আমরা এখনো আমাদের বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এবং কার্যকর ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করতে পারিনি।’
আইআরজিসি উপদেষ্টার ভাষ্য, ‘ইসরায়েল এবং আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে, আমরা যদি দুই বছর ধরে প্রতিদিন তাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে মারি, তবুও আমাদের স্থাপনাগুলো খালি হবে না।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়।
এরপর নয় দিন ধরে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যায় ইরান। ২২ জুন ভোরে মার্কিন ভারী বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে এবং সংঘর্ষে প্রবেশ করে।
পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমানঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, কোনো হতাহত বা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
এরপর ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও জানায়, তারা মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানের সমস্ত উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছে। পরিবর্তে তেহরান বলেছে, তারা আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে তেল আবিবের ওপর বিজয় অর্জন করেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম সোমবার জানিয়েছে, তেহরান ৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাগজ পত্রবিহীনদের ইরান ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর জুনের শুরু থেকে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার আফগান নাগরিক ইরান থেকে নিজ দেশে ফিরেছেন।
কাবুল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তেহরান মে মাসের শেষের দিকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাগজপত্রবিহীন আফগানদের দেশত্যাগ করার নির্দেশ দেয়।
এই ঘোষণা ইরানে বাসবাসরত প্রায় ষাট লাখ আফগানের মধ্যে চল্লিশ লাখ আফগানের ওপর এর প্রভাব ফেলছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত জুনের মাঝামাঝি থেকে সীমান্ত অতিক্রমকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কিছু দিন ধরে পশ্চিম হেরাত প্রদেশের ইসলাম কালা দিয়ে প্রায় ৪০হাজার লোক পার হতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, গত ১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ জন আফগান ইরান থেকে নিজ দেশে ফিরে গেছে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৬ হাজার ৩শ’ ২৬ জন আফগান ইরান ছেড়েছেন।
অনেকেই কর্তৃপক্ষের চাপ, গ্রেপ্তার ও নির্বাসন এবং দ্রুত দেশত্যাগের তাড়াহুড়োয় ইতিমধ্যেই কিছু অর্থ হারানোর কথা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বেসরকারি গোষ্ঠী ও তালেবান কর্মকর্তারা ইরান প্রত্যাবর্তনকারী আফগানদের সহায়তার জন্য আরো তহবিলের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, এই অনুপ্রবেশ ইতোমধ্যেই দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত ধাক্কায় জর্জরিত আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
জোরপূর্বক আফগানদের ফেরত না পাঠানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর শুক্রবার (০৪ জুলাই ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আফগানদের ফিরে যেতে বাধ্য করা বা চাপ দেওয়া, এই অঞ্চলে আরো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং আফগানদের ইউরোপের দিকে অগ্রসর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।’
কোনো অগ্রগতি ছাড়াই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সর্বশেষ পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় রবিবার (৬ জুলাই) কাতারের দোহায় দুটি আলাদা ভবনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, আলোচনা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দুপক্ষের মধ্যে বার্তা ও ব্যাখ্যা বিনিময় হয়, তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আলোচনার পরবর্তী ধাপ সোমবার (৭ জুলাই) আবার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুপক্ষের মধ্যকার বাধাগুলো দূর করে সমঝোতার পথ খুঁজতে মধ্যস্থতাকারীরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বক্তব্য জানিয়েছে বিবিসি। এতে বলা হয়, ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল ‘যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন’ ছিল না, কারণ তাদের কাছে ‘বাস্তবিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা’ ছিল না।
এমন এক সময় এ আলোচনা চলছে, যখন ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠকটি যুদ্ধবিরতি ও গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অর্জনের জন্য তিনি তার আলোচকদের ‘পরিষ্কার নির্দেশনা’ দিয়েছেন, যা ইসরায়েলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য।
এদিকে, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখানোর দাবি করেছে হামাস। তবে এখনও দুপক্ষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা দূর না হলে চুক্তি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য হামাসের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো—যেকোনো সমঝোতার শেষে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা। এ অবস্থানে তারা এখনও অনড়।
তবে নেতানিয়াহুর সরকার এর আগেও এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এখনও ইসরায়েলি অবস্থানে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার আগে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এখনো তিনটি লক্ষ্যেই অটল—‘সব জিম্মি, জীবিত ও মৃতদের মুক্তি ও প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা; হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে গাজা থেকে উৎখাত করা; এবং গাজা যেন আর কখনোই ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়, তা নিশ্চিত করা।’
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের জন্য এই পরোক্ষ আলোচনা সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মার্চের আগের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে এ ধরনের নানা উদ্যোগ একই জায়গায় এসে আটকে গেছে।
সেই সময় থেকে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র সামরিক অভিযান শুরু করেছে। পাশাপাশি গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর ১১ সপ্তাহের অবরোধও আরোপ করে, যা কয়েক সপ্তাহ আগে আংশিকভাবে শিথিল করা হয়।
ইসরায়েলি সরকার বলছে, এসব পদক্ষেপ হামাসকে আরও দুর্বল করা এবং তাদেরকে আলোচনায় বসতে ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতেই নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা হামাসের ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
তবে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় রবিবার অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো— কাতারে চলমান এই আলোচনা কি সত্যিই দুপক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে? আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পারবেন যে, এই যুদ্ধের ইতি টানতে হবে?
ইসরায়েলের অনেকেই মনে করছেন, অবশিষ্ট জিম্মিদের বাঁচাতে যুদ্ধ বন্ধের মূল্য দেওয়ার এখনই সময়।
শনিবার রাতেও তারা জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এ সময় দ্রুত চুক্তি করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দরনগরীসহ হুথি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এলাকায় একযোগে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সোমবার ভোরে দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইয়েমেন থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। যদিও সেনাবাহিনীর দাবি, তারা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, হুথিদের সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। টার্গেটগুলোর মধ্যে ছিল হুদাইদা, রাস ইসা ও সালিফ বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুথিদের বারবার হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার আগে হুথি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন রোববার জানায়, ইসরাইলি শত্রুরা হোদেইদা বন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া রাস ইসা ও সালিফ বন্দরের পাশাপাশি রাস আল-কাথিব বিদ্যুৎকেন্দ্রেও হামলা হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই স্থানগুলোতে সম্ভাব্য হামলার সতর্ক করার আধ ঘন্টা পরেই হামলা চালানো হয়।
২০২৩ সালে অক্টোবরে হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পর গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকেই ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে হুথি বিদ্রোহীরা। গত মার্চে দু’মাসের যুদ্ধবিরতি শেষ হলে গাজায় আবারো সামরিক অভিযান শুরু করে তেল আবিব। তখন থেকে ফের হামলা শুরু করে হুথিরাও।
হুথি বিদ্রোহীদের দাবি, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এ হামলা চালাচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তারা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিপিং জাহাজগুলোতেও আক্রমণ করছে।
ইসরাইল বলছে, হুথিদের দখলে থাকা ‘গ্যালাক্সি লিডার’ কার্গো জাহাজেও হামলা চালানো হয়েছে। জাহাজটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে হুথি বিদ্রোহীরা দখলে নেয়। এরপরে রেড সিতে শিপিং ট্র্যাক করার জন্য সেটিতে রাডার ব্যবস্থাও বসায়।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে লোহিত সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করলে লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জাহাজগুলোকেও যুক্ত করে বিদ্রোহীরা।
গত মে মাসে হুথিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে চলা তীব্র মার্কিন হামলার অবসান ঘটে। কিন্তু ইসরাইলি জাহাজগুলোতে হামলা অব্যাহত রাখে হুথিরা।
মন্তব্য