অনেক উন্নত দেশেরই ঝলমলে বর্তমানের পেছনে রয়েছে গাঢ় অন্ধকার। অনেক দেশই অতীতে এলাকার দখল নিতে সেখানকার আদিবাসীদের উচ্ছেদ করেছে কিংবা আফ্রিকা থেকে নিয়ে এসেছে ক্রীতদাস। কানাডাও এর বাইরে নয়। দেশটি একসময় সেখানকার আদিবাসী যারা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ বছর আগে থেকে বসবাস করছিল, তাদের শিশুদের সভ্য করার নামে আবাসিক স্কুলে নিয়ে আসতো। জোরপূর্বক কেড়ে নেয়া হতো ভাষা ও সংস্কৃতি।
এই আবাসিক স্কুলের চাপ সহ্য করতে না পেরেই প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার শিশু। গত বছরেও নামবিহীন প্রায় ২১৫টি কবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবার নতুন করে নাম-পরিচয়হীন আরও অনেকগুলো কবরের সন্ধান পেয়েছে কানাডার আদিবাসী সম্প্রদায়।
উইলিয়াম লেক ফার্স্ট নেশন সোমবার জানিয়েছে, ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ৯৩টি কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রাক্তন কামলপস ইন্ডিয়ান আবাসিক স্কুল বা সেন্ট জোসেফ আবাসিক স্কুলের এলাকায় এই কবরগুলো পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই কবরগুলো সেন্ট জোসেফ আবাসিক স্কুলের ছাত্রদেরই।
প্রায় হাজার হাজার উইলিয়াম লেক ফার্স্ট নেশন ও অন্যান্য আদিবাসী শিশুদের জোরপূর্বক সেন্ট জোসেফ স্কুলে রাখা হয়েছিল। এই স্কুলটি ১৮৮১-১৯৮১ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।
গত বছর মে মাসেও এই আবাসিক স্কুলের আশপাশে প্রায় ২১৫টি নামবিহীন কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
কানাডা ১ লাখ ৫০ হাজার আদিবাসী শিশুকে ১৮০০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জোরপূর্বক আবাসিক স্কুলে যোগদানে বাধ্য করেছিল।
সেখানে শিশুদের থেকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, ভাই-বোন থেকেও আলাদা করা হয়েছিল এবং এসব শিশু মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকারও হয়েছিল।
হাজার হাজার শিশু মারা গিয়েছিল এমন পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে।
বিভিন্ন গীর্জা বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক চার্চ এই স্কুলগুলো পরিচালনা করতেন।
২০১৫ সালে দেশটির ফেডারেল কমিশনও তদন্তের পর এ ঘটনার সত্যতা পায়। তারা কানাডার আবাসিক স্কুল পদ্ধতিকে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ চালানোর দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
এই মাসের শুরুর দিকে কানাডার ফেডারেল সরকার উইলিয়াম লেক ফার্স্ট নেশনের জন্য ১.৯ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার তহবিল ঘোষণা করে, যাতে তারা প্রাক্তন আবাসিক স্কুলগুলোর সঙ্গে যুক্ত সমাধিগুলো নিয়ে তদন্ত করতে পারে।
সর্বোপরি নতুন এই কবরগুলো খুঁজে পাওয়ায়, জোরপূর্বক-আত্মীকরণ প্রতিষ্ঠানের শিকার হওয়া এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
আরও পড়ুন:শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হয় দেশের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্রী। খুলনায় এই হার সবচেয়ে বেশি, ৮৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বরিশাল, ৮০ শতাংশ। আর রাজশাহীতে হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
এমন তথ্যই উঠে এসেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায়।
রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে বুধবার ‘সহিংসতার ভয়, আর নয়’ শীর্ষক আলোচনায় গবেষণাটির ফলাফল জানানো হয়।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো উইমেনের উদ্যোগে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
গবেষণায় ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী দুই হাজার ২৩২ জন শিশু থেকে নারী অংশ নেন। একই বয়সের দুই হাজার ২০৮ জন শিশু থেকে তরুণ অংশ নেন।
দুই হাজার ২১৭ জন মা এবং ২ হাজার ১৯৭ জন বাবা গবেষণাটিতে অংশ নেন।
বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক প্লেসে সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের অবস্থা জানতে গবেষণাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সংস্থাটি।
পারিবারিক সহিংসতা
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
হয়রানি ও সহিংসতা এড়াতে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ নারী বাড়ির বাইরে বের হওয়া ছেড়ে দেন ও লেখাপড়া ছাড়েন ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ির বাইরে গিয়ে খেলাধুলা বন্ধ করেন।
পারিবারিক সহিংসতা তেমন বড় কোনো বিষয় নয় বলে মনে করেন ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। তারা তাদের বাবা, ভাই বা স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে ভয় পান বলে গবেষণায় জানা গেছে।
পারিবারিক সহিংসতা নিরোধের আইন সম্পর্কে জানেন না ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সংস্থাটি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়রানি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়রানির শিকার হতে পারে এই ভয়ে দেশের ৫৪ শতাংশ বাবা তার মেয়েকে কোচিং অথবা প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে দিতে চান না। অন্যদিকে ৬২ শতাংশ মা তার মেয়েকে স্কুলের পিকনিকে পাঠাতে নারাজ।
গবেষণায় উঠে এসেছে, ৪৮ শতাংশ মা তার মেয়েকে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিতে চান না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে সহপাঠী বা সিনিয়রদের কাছ থেকে মোবাইলে আপত্তিকর মেসেজ পেয়েছেন ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আর শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করেছেন ২১ দশমিক ৩ শতাংশ সহপাঠী।
পুরুষ শিক্ষকদের যৌন হয়রানির শিকার হন ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী। আর শিক্ষকদের কাছ থেকে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন ৫৬ শতাংশ।
এসব হয়রানির কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী। বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করেন ৬ দশমিক ২ শতাংশ, পড়ালেখা ছাড়েন ৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও অসুস্থ হয়ে পড়েন ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আর হতাশাগ্রস্ত হন ৯০ শতাংশের ওপরে।
পাবলিক প্লেসে হয়রানি
গত এক বছরে পাবলিক প্লেসে হয়রানির শিকার হন ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
এসব হয়রানির কারণে পরীক্ষায় ফেল করেন এবং পড়ালেখায় মনোযোগ হারান ২ দশমিক ৪ শতাংশ করে।
বাড়ির বাইরে বের হওয়া বা কিছুদিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়েন ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
এসব হয়রানির শিকার হয়েও কাউকে কিছুই বলেননি ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ; জাতীয় জরুরি সেবা সহায়তা নেন ৩ দশমিক ৩; পুলিশকে জানান ৯ দশমিক ৩ ও মামলা করেন ২ দশমিক ৯। আর আশপাশের মানুষের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছেন ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ।
কর্মক্ষেত্রে হয়রানি
কর্মক্ষেত্রে কটু কথা শুনতে হয় ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ নারীকে। আর যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
হয়রানির শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ; চাকরি ছাড়েন ২৬ শতাংশ ও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৪ শতাংশ।
কর্মক্ষেত্রে এসব হয়রানির প্রতিবাদ করেন ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ ও অভিভাবককে জানান ৫৪ শতাংশ।
সহিংসতা নারীকে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যায় বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বলেন, ‘নারী বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে সহিংসতার শিকার হয়। নারীকে এক সময় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল, নারীকে শুধু প্রজননের জন্য ব্যবহার করা হতো। বর্তমানেও নারীরা ডিজিটাল মাধ্যমসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়।’
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহিবুজ্জামান বলেন, ‘সহিংসতা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। সহিংসতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
নারীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নারীদের উচিত তাদের জয়ের গল্প সবাইকে জানানো।’
মালালা ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ এম এইচ তানশেন মনে করেন, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে হলে কোয়ালিটি শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
সহিংসতার ভয় রোধে চারটি জেলায় ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রংপুরে ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আগামী ১০ বছর সংগঠনটি এই ক্যাম্পেইন চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
রংপুর থেকে ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া সাদমান সাবাক বলেন, ‘সমাজে নারীরা সমঅধিকার পায় না। শহরে মেয়েরা যতটুকু অধিকার পায়, গ্রামের মেয়েরা সেই তুলনায় অনেক কম পায়।’
আরও পড়ুন:সঙ্গীর যৌন-সক্ষমতার ঘাটতির কারণে তৈরি হওয়া উদ্বেগ নারীর যৌনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে, উদ্বিগ্ন এসব নারীর নকল অর্গাজমের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, পুরুষ সঙ্গীর কাছে নিজের যৌন চাহিদাও আড়াল করতে শুরু করেন নারীরা।
সোশ্যাল সাইকোলজিক্যাল অ্যান্ড পার্সোনালিটি সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এসেছে এসব তথ্য। সঙ্গীর পৌরুষত্ব নিয়ে নারীর অনাস্থা কীভাবে যৌন সম্পর্কে প্রভাব ফেলে, তা উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।
পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ১৩২ জন নারীর ওপর চালানো প্রাথমিক সমীক্ষায় গবেষক দলটি দেখতে পায়, যেসব নারী সঙ্গীর তুলনায় বেশি অর্থ উপার্জন করেন, তাদের তুলনায় কম উপার্জনকারী নারীরা প্রায় দ্বিগুণ মাত্রায় অর্গাজমের অভিনয় করেন।
তবে এই নকল অর্গাজমের বিষয়ে পুরুষের ভূমিকার কোনো প্রমাণ পাননি গবেষকরা। এ জন্য সঙ্গীর পৌরুষত্ব নিয়ে নারীর উদ্বেগের সঙ্গে ‘প্রতারণামূলক যৌন সম্পর্কের’ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা অনুসন্ধানে গবেষণার পরিসর বাড়ানো হয়।
এবার গবেষকরা বেছে নেন ২৭৬ জন নারীকে, যাদের গত ছয় মাসের মধ্যে সঙ্গমের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এসব নারীর অভিজ্ঞতা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সঙ্গী পৌরুষত্বহীনতায় ভুগছেন বলে মনে করলে নারী তার নিজস্ব চাহিদার প্রকাশ কমিয়ে দেন এবং নকল অর্গাজমের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
অন্যভাবে বলা যায়, একজন নারী যখন দেখেন সক্ষমতা না থাকার পরও তার সঙ্গী নিজেকে ‘আসল পুরুষ’ হিসেবে জাহিরের কসরত করছেন, তখন তিনি তার অনুভূতিকে আঘাতপ্রাপ্ত করতে চান না। এমন অবস্থায় নারী তার চাহিদা বা অতৃপ্তিকে গোপন করতে শুরু করেন। ফলে দুজনের মধ্যে যোগাযোগহীনতা প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করে।
গবেষণার আরেক অংশে ১৯৬ জন নারী অংশ নেন। তাদের এমন একজন পুরুষ সঙ্গীকে কল্পনা করতে বলা হয়েছিল, যার যৌন-সক্ষমতা ভঙ্গুর। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এ ধরনের পুরুষের সঙ্গে নারীরা যৌনতাবিষয়ক আলোচনা একেবারেই অনাগ্রহী।
গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক জেসিকা জর্ডান শিগগিরই ফ্লোরিডার ইউনিভার্সিটি অফ টাম্পার সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, “আমি সব সময় যৌনতায় লিঙ্গ ভূমিকা, বিশেষ করে বিষমকামী নারী ও পুরুষ যেভাবে রোমান্টিক ও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে সেটি বিশ্লেষণে আগ্রহী।
“একজন তরুণী হিসেবে মিডিয়া, বন্ধু এবং বয়স্ক নারীদের কাছ থেকে যৌনতার বিষয়ে অনেক তথ্য আমি পাই। এই যেমন কীভাবে একজন পুরুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ ছাড়া একটি উপদেশ আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়, তা হলো- আমাকে সব সময় সঙ্গীর ‘পুরুষত্বের অনুভূতি’ রক্ষার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।”
গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে জর্ডান বলেন, ‘এ বিষয়ে নারীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ভীষণ অবাক হয়েছি। তাদের প্রায় সবাই বিশ্বাস করেন, সঙ্গীর পৌরুষত্বের অনুভূতি রক্ষায় ভূমিকা পালন করা জরুরি।’
তবে এ ধরনের ঘটনা নারীদের ক্লান্ত যৌনজীবনের দিকে ঠেলে দেয় বলেও মনে করছেন গবেষকরা।
জর্ডান বলেন, ‘গবেষণাগুলো প্রমাণ করেছে নারীরা পুরুষ সঙ্গীর পৌরুষত্ব নিয়ে উদ্বেগের শিকার হলে ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান। তারা ক্রমাগত উদ্বেগে ভোগেন এবং যৌনতা নিয়ে আলোচনা বন্ধ করে দেন। শেষ পর্যন্ত একটি অতৃপ্ত যৌনজীবনের মধ্যে ঢুকে যান।’
গবেষক দলের পরামর্শ- এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা প্রয়োজন।
জর্ডান বলেন, ‘মিলনের বিরতিতে আমরা একে-অপরের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ আলাপ-আলোচনা করে থাকি। আপনি যদি সঙ্গীকে নিয়ে উদ্বেগ্ন বোধ করেন, তাহলে সাবধানে পর্যালোচনা করে দেখুন এটা কেন হচ্ছে। বিষয়টি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করুন।
‘এ ক্ষেত্রে অনেক ফলোআপ প্রশ্ন আছে। তবে বড় প্রশ্নটি হলো এর কি কোনো সমাধান আছে? পুরুষ সঙ্গী সম্পর্কে তাদের (নারীর) ধারণা কতটা সঠিক? তাদের অনুমান কি সঠিক? নাকি নারীরা সাধারণভাবে পুরুষের সম্পর্কে ভুল অনুমান করে থাকেন।’
আরও পড়ুন:সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব পুরুষ শার্ট খোলা ছবি পোস্ট করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ। গবেষণা বলছে, এই ধরনের ছবিতে নারীরা মোটেই আকৃষ্ট হন না। উল্টো উদোমদেহী পুরুষ অযোগ্য এবং যৌনতায় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হন।
সেক্স রোল: আ জার্নাল অফ রিসার্সে সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। মিডিয়ায় ‘যৌন উত্তেজক’ ছবি সম্পর্কে মানুষের ধারণা অনুসন্ধান গবেষণাটির মূল লক্ষ্য হলেও এতে নারীর দৃষ্টিভঙ্গির ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে।
গবেষকেরা দেখার চেষ্টা করেছেন পুরুষের আবেদনময় ছবি সম্পর্কে দর্শকের মানসিকতা কেমন। এ ক্ষেত্রে দর্শক হিসেবে নারীর পাশাপাশি কিছু পুরুষের মতামতও নেয়া হয়েছে।
গবেষণাপত্রের লেখক কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির পোস্টডক্টরাল ফেলো জোআনা ডাইকার বলছিলেন, ‘মিডিয়ায় নারী ও পুরুষের যৌন আবেদনময় ছবি কীভাবে আমাদের মনোভাব ও আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে সে বিষয়টি জানা জরুরি। এই গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা পুরুষের সেক্সি ডেটিং প্রোফাইল বেছে নিয়েছি। এসব প্রোফাইলের ইতিবাচক বা নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো বিচার করতে চেয়েছি।’
গবেষণার ফল বলছে, শার্ট খোলা ছবির পুরুষ মনোযোগ আকর্ষণে চরমভাবে ব্যর্থ। ডেটিং সাইট টিন্ডার-এ পোস্ট করা এ ধরনের ছবি বলতে গেলে কোনো মনোযোগই কাড়তে পারেনি। নারীর পাশাপাশি গবেষণায় অংশ নেয়া পুরুষরাও পাত্তা দেয়নি সেক্সি প্রোফাইলধারী পুরুষকে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ের ৫৬৭ শিক্ষার্থীর মতামত নেয়া হয়েছে গবেষণায়, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৫৭ শতাংশ ছিলেন নারী।
গবেষকেরা দৈবচয়নের ভিত্তিতে তাদের একই ব্যক্তির আটটি মক টিন্ডার প্রোফাইলের মধ্যে একটি দেখতে দেন। মক প্রোফাইলগুলো তৈরি করা হয়েছিল এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের কোমর থেকে ওপরের ছবি দিয়ে। তবে যৌন আবেদনের তিনটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রোফাইলগুলোকে সাজানো হয়েছিল।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে, পেশিবহুলতা (পেশিবহুল বনাম অ-পেশিবহুল), যৌন আবেদনময় চেহারা (শার্টহীন বনাম শার্ট পরা) এবং সম্পর্কের অঙ্গীকার (নিয়মিত যৌনতায় আগ্রহ বনাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্ক)।
এসব টিন্ডার প্রোফাইল দেখার পরে অংশগ্রহণকারীরা পুরুষটির শারীরিক আকর্ষণ ক্ষমতা, সামাজিক আবেদন এবং সক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তৈরি হওয়া ধারণা জানান।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ নারী শার্টবিহীন পুরুষকে ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণকারী, কম আবেদনময় এবং সক্ষমতার দিক থেকে পেছানো বলে বিবেচনা করেছেন। পুরুষরাও বলেছেন, শার্টবিহীন ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ এবং তার সামাজিক আবেদন কম। তবে সক্ষমতার দিক থেকে এ ধরনের পুরুষকে খুব একটা পিছিয়ে রাখেননি গবেষণায় অংশ নেয়া বেশির ভাগ পুরুষ।
পুরুষ এবং নারী দুই পক্ষই পেশিবহুল পুরুষকে বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করেছেন। তবে পেশিবহুল পুরুষকে যৌনতায় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন গবেষণায় অংশ নেয়া পুরুষেরা। নারীরা অবশ্য এমনটা মনে করছেন না।
গবেষণার এমন ফল শার্ট খোলা পুরুষের জন্য সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন জোআনা ডাইকার। তিনি বলেন, ‘একজন পুরুষ সেক্সি উপস্থাপনার জন্য অনলাইন ডেটিং প্রোফাইলে শার্টবিহীন ছবিসহ যেসব তথ্য দেন সেটি তার ঝুঁকি উল্টো বাড়িয়ে দেয়। এর মাধ্যমে তিনি কম উপযুক্ত, কম পছন্দযোগ্য এবং যৌনতায় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অন্যদের কাছে বিবেচিত হতে পারেন।
‘বাস্তবে সেক্সি ডেটিং প্রোফাইল থাকা পুরুষের প্রতি নারীরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান, কারণ এটি তাদের পছন্দের বিপরীত। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সেক্সি চেহারার পুরুষের প্রতি নারীর পাশাপাশি অন্য পুরুষও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান।’
আরও পড়ুন:সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের বার্তা দিতে এবার দলিত পুরোহিতের চিবানো মিষ্টি হাসিমুখে খেয়ে নিলেন ভারতের এক মুসলিম রাজনীতিবিদ।
বেঙ্গালুরুর চামরাজপেট আসনের বিধায়ক (এমএলএ) জামির আহমেদ খান রোববার দলিত সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব আম্বেদকর জয়ন্তী এবং মুসলমানদের ঈদে মিলন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
সেখানে বক্তব্য দেয়ার মাঝে একটি মিষ্টি তিনি তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোহিতকে খাইয়ে দেন। এরপর পুরোহিতকে চিবানো মিষ্টি মুখ থেকে বের করে তার মুখে দেয়ার অনুরোধ করেন এমএলএ নিজেই।
এতে পুরোহিত কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বিধানসভার সদস্যের অনুরোধে নিজের চিবানো মিষ্টি পুড়ে দেন এমএলএ-র মুখে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তুলে ধরতে বিধায়কের এমন দৃষ্টান্তমূলক সম্প্রীতির ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুগুলোকে উসকে দিয়ে ফায়দা আদায় করা রাজনীতিকদের উদ্দেশ করে বিধায়ক জামির আহমেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রবাদী দল ভারতের মাটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
চারবারের বিধায়ক জামির খান এর আগে খাদ্য ও নাগরিক অধিকার, ভোক্তা অধিকার এবং সংখ্যালঘুদের কল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আরও পড়ুন:সব নারী ক্রু দিয়ে এই প্রথম একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে সৌদি আরবের বেসামরিক এয়ারলাইনস ফ্লাইডেল।
স্থানীয় সময় শনিবার ফ্লাইডেল কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা আরব নিউজের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ফ্লাইডেলের মুখপাত্র ইমাদ ইসকানদারানি বলেন, ‘ওই উড়োজাহাজের সাতজন ক্রুর মধ্যে বেশির ভাগই সৌদি নারী। ক্রুদের মধ্যে ফার্স্ট অফিসার একজন সৌদি নারী। তবে ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন বিদেশি একজন নারী।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল দেশটিতে এ ঘটনাকে নারীর ক্ষমতায়নের মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সৌদি আরবে সাশ্রয়ী খরচে পরিচালিত এয়ারলাইনস ফ্লাইডেল এটি পরিচালনা করে। নতুন মডেলের এয়ারবাস এ-৩২০-এর ফ্লাইটটি শনিবার রাজধানী রিয়াদ থেকে উড্ডয়ন করে উপকূলীয় শহর জেদ্দায় পৌঁছায়।’
ফ্লাইডেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটিই প্রথম ফ্লাইট যেখানে সব নারী ক্রুর পাশাপাশি একজন সৌদি নারী কো–পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রক্ষণশীল এই আরব দেশটিতে গত কয়েক বছর যুবরাজ ও দেশটির কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান নারীদের গাড়ি চালনায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের বাইরে যাওয়ার ওপর থাকা বিভিন্ন বিধিনিষেধ তুলে দেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষ অ্যাভিয়েশন খাতের উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছেন, যাতে দেশটি আকাশপথে বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনায় নারীদের ভূমিকা আরও জোরালো করার আশ্বাস দেয়।
এই ফ্লাইটে কো-পাইলটের দায়িত্বে ছিলেন ২৩ বছর বয়সী সৌদি নাগরিক ইয়ারা জান। তিনি দেশটির সবচেয়ে কম বয়সী নারী পাইলট।
তিনি বলেন, ‘দেশটির এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারায় নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে।
‘একজন সৌদি নারী হিসেবে আমি চাইব দেশের এমন সব অগ্রযাত্রার সঙ্গে নিজের নাম স্মরণীয় করে রাখতে।’
ইয়ারা জান ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি ফ্লাইট স্কুল থেকে পাইলট হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ফ্লাইডেল এয়ারলাইনসে পাইলট হিসেবে তিনি চাকরি শুরু করেন ২০২১ সালের জুনে।
তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ এই ফ্লাইটটিতে কো-পাইলট হিসেবে পাইলটকে সহযোগিতা করতে নেভিগেশন ও বিভিন্ন চেকলিস্ট সম্পন্ন করতে হয়েছে আমাকে।’
‘যদিও একজন সৌদি নারীর জন্য পাইলট হওয়া নতুন তবে আমাদের প্রজন্মের জন্য এখন এটি আর অসম্ভব কিছু নয়। বিশেষ করে আমরা আমাদের প্রিয় দেশ এবং আমাদের সম্মানিত নেতাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি। এর ফলে আমি সৌদিতে সর্বকনিষ্ঠ নারী পাইলট হতে অনেক সহায়ক হয়েছে। আমি সব সময় একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে সহায়ক হয়ে কাজ করার সুযোগ পেলে আরও বেশি উচ্ছ্বসিত হব।’
সম্প্রতি সৌদি আরবে নারী পাইলটের সংখ্যা বাড়ছে।
এই ক্ষেত্রে আরও তিনটি নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। হানাদি জাকারিয়া আল-হিন্দি যিনি সৌদি বাণিজ্যিক পাইলটের লাইসেন্স নিয়ে উড়োজাহাজ পরিচালনা করা প্রথম নারী পাইলট।
রাওয়াইয়া আল-রিফি প্রথম নারী যিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে একটি আন্তর্জাতিক বেসামরিক ফ্লাইট এয়ারবাস এ-৩২০ পরিচালনা করে নিজ দেশ সৌদি আরবে নিয়ে আসেন।
ইয়াসমিন আল-মাইমানি, যিনি সৌদি আরবে প্রথম একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নারী কো-পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন:নারীর মেনোপজ বা ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার অংশ। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের শরীরিক ও মানসিক চাপের মুখে পড়েন প্রায় সবাই।
বয়সের সঙ্গে ডিম্বাশয়ের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে ৩৫ বছর বয়স থেকেই। মেনোপজের সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। এর অর্থ হলো ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন তৈরিসহ ডিম নিঃসরণের প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটিয়েছে।
সাধারণভাবে নারীদের মেনোপজের গড় বয়স ৪২ থেকে ৫৩ বছর। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে আরও আগেই এটা ঘটতে পারে। স্থায়ী মেনোপজের আগে টানা ১২ মাস বা এক বছর মাসিক বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় প্রকৃত মেনোপজের কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর আগে থেকেই হট ফ্ল্যাশ ও অনিয়মিত পিরিয়ডের মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই পর্যায়কে বলা হয় পেরিমেনোপজ।
মেনোপজের প্রক্রিয়ার সময় অনেকে প্রচণ্ড মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন। কারও কারও অনিদ্রা, জ্বরের অনুভূতি, যৌনাঙ্গ শুষ্ক হয়ে যাওয়া এমনকি আলঝেইমারসের লক্ষণও দেখা যেতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজের সময় বিশেষ ধরনের চোয়ালের ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ব্যথার নাম টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার ডিস-অর্ডার (টিএমডি)। মেনোপজের সময় অনেক নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি চোয়ালের গোড়ায় ব্যথা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ধারণা করা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের মধ্যে ৪.৮ শতাংশ বা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ টিএমডিতে আক্রান্ত। পুরুষের তুলনায় নারীদের টিএমডিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণভাবে এর পেছনে হরমোনজনিত পরিবর্তনকেই দায়ী মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মেনোপজের সময় টিএমডির মাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ে খুব বেশি গবেষণা নেই। তবে ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজ-পরবর্তী সময়ের তুলনায় মেনোপজের প্রক্রিয়া শুরুর সময়ে নারীদের টিএমডিতে ভোগার প্রবণতা বেশি।
সম্প্রতি আরেক গবেষণাতেও এর প্রমাণ মিলেছে। ব্রাজিলের একদল গবেষক দেখেছেন, টিএমডি সম্পর্কিত ব্যথার সঙ্গে মেনোপজের চূড়ান্ত সময়ের সম্পর্ক রয়েছে। তবে মেনোপজের পর ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমে আসতে শুরু করে।
নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির (এনএএমএন) জার্নাল মেনোপজে গত ১০ মে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
ব্রাজিলের সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেসান্দ্রা পুচি মানটেলি গলহার্দো ও তার সহকর্মীরা গবেষণাপত্রের উপসংহারে লিখেছেন, মেনোপজের দিকে যাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে টিএমডির মাত্রাও পর্যালোচনায় আনা উচিত।
গবেষণাটির ফলাফল চমকপ্রদ বলে মনে করছেন এনএএমএস মেডিক্যাল ডিরেক্টর ড. স্টেফানি ফাউবিওন। তিনি বলছেন, ‘এই গবেষণাটি যৌনতাসংশ্লিষ্ট হরমোন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং ব্যথার অভিজ্ঞতার মধ্যে সম্পর্কের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে। পরিষ্কার প্রমাণ মিলেছে, টিএমডির লক্ষণগুলো মেনোপজের বিভিন্ন লক্ষণের সঙ্গে যুক্ত এবং মেনোপজের বিভিন্ন পর্যায়জুড়ে ভিন্ন মাত্রায় প্রকাশ পায়।’
আরও পড়ুন:পিরিয়ড বা মাসিকের সময় শারীরিক জটিলতায় ভোগা নারীদের কর্মক্ষেত্রে ছুটির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে স্পেন সরকার। মন্ত্রিসভা বৈঠকে মঙ্গলবার প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়।
এ ছাড়া ১৬ বছর বয়স হলে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই কিশোরীদের গর্ভপাতের অধিকারে সায় দিয়েছে স্পেনের মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত আরও বেশকিছু পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়েছে।
চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে বিষয়গুলো এরপর পার্লামেন্টে তোলা হবে। আর সেখানে আইন হিসেবে পাশ হলে ইউরোপের প্রথম দেশের নাগরিক হিসেবে ঋতুস্রাবের সময় ছুটির অধিকার ভোগ করবেন স্পেনের নারীরা।
খসড়ায় এ ক্ষেত্রে মাসে তিন অথবা পাঁচ দিনের ছুটির প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিসভা কোনো সময় বেঁধে দেয়নি। ফলে পিরিয়ড জটিলতা যত দিন চলবে ততদিন পর্যন্ত সবেতনে ছুটি নিতে পারবেন স্পেনের নারীরা। তবে এজন্য চিকিৎসকের সনদ থাকতে হবে।
বর্তমানে শুধু জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও জাম্বিয়ায় নারীর ঋতুস্রাবকালীন ছুটির অনুমোদন আছে।
স্প্যানিশ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, পিরিয়ডের সময় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী গুরুতর ব্যথায় ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে থেকেই ব্যথায় ভোগা নারীদের বিবেচনায় নিলে সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ডিসমেনোরিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর।
মন্ত্রিসভা বৈঠক সামনে রেখে স্পেনের সমতাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রদ্রিগেজ গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব লক্ষণ (তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর) কারও মধ্যে দেখা গেলে সাময়িক শারীরিক জটিলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাজেই পিরিয়ডের সময়কার এসব জটিলতাকেও আমাদের স্বীকার করা প্রয়োজন। এ সময়টি অত্যন্ত কষ্টকর, তাই এতে আক্রান্ত নারীদের বাড়িতে বিশ্রামের সুযোগ দেয়া উচিত।’
পাশাপাশি এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমরা উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছি, যাতে করে ব্যথা নিয়ে নারীদের কাজ করতে যাওয়া আর স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত না হয়। পিরিয়ডকে ঘিরে কলঙ্ক, লজ্জা ও নীরবতার অবসান যাতে ঘটে। আমরা অধিকার প্রশ্নে অগ্রগতি ঘটাতে চাই।’
স্পেনের বামপন্থি সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্য বিরোধিতার মুখেও পড়ছে। বামপন্থি জোটের মধ্যে থাকা কিছু দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিভক্তি। কেউ কেউ বলছেন, এই পদক্ষেপের বিপরীত ফল হতে পারে। নারীদের নিয়োগ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে হেয় করার প্রবণতা বাড়তে পারে।
স্পেনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবে ছুটির বিষয়টি ছাড়াও ঋতুস্রাবকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপে জোর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলগুলোতে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ, প্রান্তিক এলাকার নারীদের স্যানিটারি প্যাড ও ট্যাম্পন বিনা মূল্যে প্রদান এবং সুপার মার্কেটে এসব পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য