আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানের একজন স্থানীয় কমান্ডারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
টোলো নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারী দেশটির পূর্ব কোনার প্রদেশের নারাং জেলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এমনটাই জানিয়েছে নারাং জেলার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, বন্দুকধারীর হামলায় কমান্ডারের ছেলেও মারা গেছে। এ ছাড়া ৪ জন সাধারণ মানুষও প্রাণ হারিয়েছেন এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তবে গত আগস্টে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার সময়েই বিমানবন্দরে হামলা চালায় ইসলামিক স্টেট। দেশটিতে আইএসের উপস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উৎকণ্ঠা রয়েছে।
তবে স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডটি ব্যক্তিগত বিরোধের থেকে হয়ে থাকতে পারে।
শ্রীমঙ্গলে ৪৬ বোতল বিদেশি মদসহ মো. হাবিব উল্লাহ (৩২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে এসআই দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম শ্রীমঙ্গল-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তরসুর এলাকার কৈশর হাজী মার্কেটের সামনে চেকপোস্ট পরিচালনা করে।
চেকপোস্ট পরিচালনাকালে একটি নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। এসময় যাত্রী বসার সিটের পিছন থেকে একটি কাগজের কার্টুন ও সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় রাখা বিভিন্ন ব্রান্ডের ৪৬ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, ‘গ্রেপ্তারকৃত হাবিব উল্লাহ শ্রীমঙ্গলের টিলাগাঁও (হুগলিয়া) গ্রামের আজিম মোল্লার ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে এবং শুক্রবার তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রসহ তিন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুর এলাকায় ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুর এলাকার আরশু মিয়ার ছেলে রাসেল, ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার মনির হোসেনের ছেলে রাজন মিয়া এবং শাওন মিয়া। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনী জানায়, অভিযানের সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে একটি পিস্তলের গুলি, একটি শর্টগানের গুলি, ৪৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪৯ বোতল ফেনসিডিল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র ও মাদক স্থানীয় চক্রের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো।
রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর হাতে আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
জানা যায়, ওই অভিযানে স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে রাসেল, রাজন ও শাওনের কারণে মুড়াপাড়া ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছিল। তারা নিয়মিত মাদক ব্যবসা চালাত এবং প্রতিপক্ষকে দমাতে অস্ত্র ব্যবহার করত। সেনাবাহিনীর অভিযানে তাদের গ্রেপ্তারের ফলে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রশাসন জানিয়েছে, রূপগঞ্জে সকল জায়গা জুড়ে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজারের টেকনাফে সাগর পথে মানব পাচারের সময় বিশেষ অভিযানে পাচারকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সেসময় মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে মানব পাচারের একটি বড় প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)।
বিজিবি জানায়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি মানব পাচার ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে তারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গত বুধবার গভীর রাতে বিজিবির অভিযানে ৮০ জন পাচারের ব্যর্থ করে দিয়ে পাঁচ পাচারকারীকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, সৈয়দ আলম (২৯), পিতা এখলাছ মিয়া
মো. আব্দুল্লাহ (২২), পিতা ইয়াহিয়া, মো. রিদুয়ান হোসেন (২০), পিতা ইউনুস আলী, মো. নুরুল আফসার (২০), পিতা কেফায়েত উল্লাহ, মো. আ. হাকিম (৪০), পিতা মৃত দিল মোহাম্মদ। সকলের বাড়ি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরি এলাকার মিঠাপানিরছরায়।
টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, ‘মানবতা ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে মাদক ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ আসামিকে স্থানীয় থানায় মামলা রুজু করে হস্তান্তর করা হয়েছে ‘
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা মানব পাচার চক্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তবে চক্রের আরও কয়েকজন সক্রিয় সদস্য পালিয়ে গেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন, সাইফুল (৪০), মোস্তাফা ওরফে গোরাইয়া (২০), নুর আলম (৩০) ও সামসু (৪৫)।
চলতি বছর এ পর্যন্ত টেকনাফ ব্যাটালিয়নের বিশেষ অভিযানে ৪৭জন মানব পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। এখনও অন্তত ২১ জন আসামি পলাতক রয়েছে।
শার্শা গোগা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার সময় ৪ জন নারী পুরুষ কে আটক করেছে বিজিবি। শুক্রবার সকালে সীমান্ত এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় কোন পাচারকারীকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
খুলনা ব্যাটালিয়ন ২১বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খুরশীদ আনোয়ার পিবিজিএম, পিএসসি, ইঞ্জিনিয়ার্স জানান গোপন সংবাদে জানতে পারি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া কিছু লোক সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাবে। এমন সংবাদে ভিত্তিতে গোগা ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্তের কাছ থেকে তাদেরকে আটক করেন।
ওই সময় ৪টি মোবাইল ও ১টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়।তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে মামলা দিয়ে শার্শা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
আটকরা হলো মো. মিঠু মোল্লা (৩২), পিতা-মো. কামরুল মোল্লা, গ্রাম বর্ণিমালাধরা, পোস্ট সিদ্ধারপুর, থানা অভয়নগর, জেলা যশোর, মো. মিজানুর সরদার (৪৫), পিতা মৃত আহমদ সরদার, গ্রাম পাতালিয়া, পোস্ট সিদ্ধারপুর যশোর, মোছা শাপলা খাতুন (২৩), পিতা মো. সরোয়ার বিশ্বাস, গ্রাম বলডাঙ্গা কাজিপুর, পো রাজারহাট, থানা কোতোয়ালি, জেলা যশোর ও সুমি আক্তার (২৪), পিতা রতন খলিফা, গ্রামঃ চরখোলা, পোস্টঃ নাজিরপুর, থানাঃ নাজিরপুর, জেলাঃ পিরোজপুর।
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানে পেছন থেকে আসা বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। হতাহত ব্যক্তিরা একটি প্রাইভেটকার করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শহর ও কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছিলেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মীরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি বাজার এলাকায় চট্টগ্রামমুখী লেনে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, ঢাকার উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা গোলাম সারোয়ার (৪৩) ও তার তিন বছর বয়সের মেয়ে মুসকান। একই দুর্ঘটনায় গোলাম সারোয়ারের স্ত্রী উম্মে সালমা (৩৩), ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ (৯), গাড়িচালক গিয়াস উদ্দিন (৩০) ও সাগর (৩০) নামের এক সহকর্মী আহত হয়েছেন। গোলাম সারোয়ার একটি আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
মীরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দলনেতা সাহ্লাঞো মারমা জানান, সকালে ঠাকুরদীঘি বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের পাশে থামিয়ে় রাখা একটি কাভার্ডভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রামমুখী কালো রঙের প্রাইভেটকার। দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। এছাড়া চারজনকে উদ্ধার করে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহত দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত গোলাম সরোয়ারের স্ত্রী উম্মে সালমা বলেন, ‘কাভার্ডভ্যানটির পেছনে ধাক্কা দেওয়ার পর বিকট শব্দে আমি অচেতন হয়ে পড়েছিলাম। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি, আমার স্বামী ও তিন বছরের মেয়েটা আর বেঁচে নেই। আমার ছেলেটাও আহত হয়েছে, সে ঢাকার একটি মাদরাসায় পড়ে। একটি দুর্ঘটনা আমার সাজানো সংসারটি তছনছ করে দিল।’
মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজু সিংহ বলেন, আহত চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন ও সাগর নামের দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উম্মে সালমা ও তার ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক বোরহান উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দুটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোবাসটির চালক চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে ৮৩ জন আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মানবিক রিকশা চালক মহরম আলী রুবেলকে পুরস্কৃত করেছেন প্রক্টরিয়াল বডি। গত বৃহস্পতিবার চবির প্রক্টর অফিসে তাকে পুরস্কৃত করা হয়। মানবিক রিকশা চালক মহরম আলী রুবেলে সরলতা, সততা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের তাকে ওই পুরস্কার দেয়া হয়।
চবি সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, মহরম আলী রুবেল পেশায় একজন রিকশা চালক হলেও চিন্তায় ও মননে পুরোদস্তুর একজন মানবিক মানুষ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় ৮৩ জন আহত শিক্ষার্থীকে চবি মেডিকেল সেন্টারে বিনা ভাড়ায় নিজের রিকশায় যাত্রী হিসেবে সেবা দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। প্রক্টরিয়াল বডির পক্ষ থেকে রুবেলকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
গত ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর চবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে যখন অধিকাংশ যানবাহন ভয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। এ সময় মানবিক রুবেল তার রিকশা নিয়ে এগিয়ে আসেন। তিনি কোনো ভাড়া ছাড়াই প্রায় ৮৩ জন আহত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে পৌঁছে দেন। রুবেলের এই মহৎ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাকে পুরস্কৃত করেছে।
মাছের ঘেরে সারি সারি গাছে ঝুলছে হলুদ ও কালো রঙের অমৌসুমি তরমুজ। কৃষির এই নতুন উদ্যোগ আকৃষ্ট করেছে কৃষক ও ভোক্তাদের দৃষ্টি। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষক ঝুঁকছেন এ চাষের দিকে। এমনই আধুনিকভাবে তরমুজ চাষ করছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের এক কৃষক। যার নাম আধুনিক চাষি রমজান আলী। তিনি উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের বীজ থেকে আধুনিক চাষে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফসল উৎপাদন করছেন।
সোনারগাঁয়ের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের গৌরবরদী গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। বাবা কৃষক তাই তিনি কৃষিতে আগ্রহী হয়েছেন। বিএসএস পাস করে তিনি চাকরির পেছনে সময় নষ্ট না করে চাষবাসে সময় দিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকেই তিনি কৃষিতে হাতেখড়ি নিয়েছেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিভাগে তিনি প্রথম মালচিং চাষ পদ্ধতি শুরু করেন। টমেটো ও চিচিঙ্গা চাষের মধ্য দিয়ে তার মালচিং চাষ পদ্ধতি শুরু হয়। পরবর্তীতে একে একে তিনি দেশি ও বিদেশি সবজি ও ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বর্তমানে তিনি উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের বীজ থেকে ফসল উৎপাদন করে থাকেন। আবহাওয়া ও বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি আধুনিক চাষে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফসল উৎপাদন করছেন। তিনি এখন গ্রীষ্মের ফল তরমুজ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাড়ে ৫ বিঘা জমির চারপাশে তিনি মাচা দিয়ে কালাচাঁন ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করছেন। মাঝে সেখানে হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ থোকায় থোকায় ছোট বড় ঝুলে আছে। মাঝখানের মাছের ঘের। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রমজান আলীর ফলানো তরমুজ বাজারে আসবে। পাশাপাশি তিনি পুকুর পাড়ে করলা ও লাউ চাষ করেছেন। তিনি স্থানীয় কৃষকদের প্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
রমজান আলী জানান, এসএসসি পরীক্ষার আগে থেকেই কৃষি কাজে আগ্রহী ছিল তার। গতানুগতিক চাষ পদ্ধতি বাদ দিয়ে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে। উন্নত উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ রোপন করে তিনি ফসল উৎপাদন করছেন। তিনি ইউটিউব দেখে ও কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কৃষিতে সাফল্য অর্জন করেছেন। তার উৎপাদিত ফসল যাত্রাবাড়ি ও গাউছিয়া কাঁচাবাজার ও ফলের আড়তে বিক্রি হয়।
রমজান আলী আরো জানান, হালাল টাকা উপার্জনে একমাত্র স্বাধীন পেশা কৃষি কাজ। আধুনিক কৃষি থেকে তিনি মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন।
কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অল্প বিনিয়োগে দ্বিগুন লাভের ফসল মালচিং চাষ পদ্ধতি। তিনিই প্রথম চাষবাস শুরু করেন বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান।
গৌরবদী গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, রমজান আলী এ এলাকার কৃষকদের প্রেরণা। তার পরামর্শে এ এলাকার কৃষকরা চাষ পদ্ধতি পরিবর্তন করে লাভবান হয়েছেন। তিনি পোকা মাকড় দমনের জন্য জৈব চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। ফলে অর্গানিক বাম্পার ফলন উৎপাদন হয়।
নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, কৃষি প্রধান এলাকা হলেও কৃষকরা এক সময় চাষবাস করে লাভবান হতে পারিনি। রমজান আলীর কৃষিতে চমক দেখাচ্ছেন। দেশি ও বিদেশি সবজি ও ফল উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করছেন। তাকে দেখে, ও তার পরামর্শ নিয়ে এ এলাকার অনেক কৃষকরা লাভজনক কৃষিতে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা জানায়, তরমুজ একটি লাভজনক চাষাবাদ। অল্প সময়ে কম খরচে কৃষকেরা অধিক লাভবান হয়ে থাকেন। দুমাসে ফলন পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে অল্প সময়ে লাখ টাকার ওপরে আয় করা সম্ভব। মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত আধুনিক চাষি রমজান আলীকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদিয়া সুলতানা জানান, প্রতিনিয়ত তিনি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ দিচ্ছেন। তাছাড়া রমজান আলী তরমুজ চাষ এ এলাকার চাষিদের জন্য অনুকরণ হতে পারে। তার দেখানে পথে চাষবাস করলে চাষিরা লাভবান হবেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে রমজান আলীকে সার, বীজ ও কিটনাশকসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক জানান, রমজান আলীর এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের কৃষির নতুন সম্ভাবনার দিক দেখাচ্ছে। বর্ষাকালে মাচায় তরমুজ চাষ একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি। এতে করে অনাবাদি কিংবা জলাবদ্ধ এলাকার জমিও ব্যবহার করা সম্ভব। স্থানীয় বাজারে এখন তরমুজের চাহিদা বেশি, কারণ এটি সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এখন বর্ষাকালে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এর দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
মন্তব্য