ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা প্রতিরক্ষাপ্রধান বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতসহ ১২ সামরিক কর্মকর্তা বহনকারী সর্বাধুনিক সামরিক হেলিকপ্টারটি কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছিল তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এদিকে, দিল্লির সেনা ছাউনিতে শুক্রবার বিকেলে প্রয়াত প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তার স্ত্রী মধুলিকার শেষকৃত্য হবে।
বিধ্বস্ত সামরিক হেলিকপ্টারটিতে বিপিন রাওয়াতের স্ত্রী, সামরিক কর্মকর্তা ও ক্রুসহ মোট ১৪ যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু নিশ্চিত করে ভারতীয় বিমান বাহিনী। এ ঘটনায় বেঁচে থাকা একজন এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
বুধবার দুপুরে মাঝ আকাশে ভেঙে পড়ে ভারতীয় সেনার এমআই-১৭ হেলিকপ্টার। গুরুতর জখম রাওয়াতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। সেখানে মৃত্যু হয় দেশের প্রথম প্রতিরক্ষাপ্রধানের।
দুর্ঘটনা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে কাটাছেড়া, ওঠে এসেছে নানামুখি প্রশ্ন ও সন্দেহ।
রাওয়াতের মতো হাই-প্রোফাইল সেনা কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হেলিকপ্টারে সুরক্ষা ব্যবস্থা কতটা থাকে? সেগুলি কী এভাবে দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারে?
প্রথমে মনে করা হয়েছিল, হাইটেনশন তারে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ার পর আগুন লেগে গিয়েছিল হেলিকপ্টারটিতে। তবে যত সময় এগোচ্ছে, তত সেই তত্ত্ব হালকা হয়ে আসছে। কারণ, প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ দাবি করছেন, তারা আকাশেই হেলিকপ্টারটিতে আগুন লেগে যেতে দেখেছেন। এরপর জ্বলন্ত হেলিকপ্টারটি মাটিতে আছড়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, প্রয়াত প্রতিরক্ষাপ্রধান বিপিন রাওয়াত যে হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন, সেটি এমআই-১৭-ভি-৫ মডেলের। এমআই সিরিজ়ের সর্বাধুনিক হেলিকপ্টার হল এই এমআই-১৭-ভি-৫। বহুবিদ কাজে ব্যবহার করা যায় এই হেলিকপ্টার। তাই এর চাহিদাও অনেক বেশি।
২০০৮ সালে রাশিয়া থেকে কেনার জন্য ৮০টি এমআই -১৭-ভি-৫ হেলিকপ্টার অর্ডার দিয়েছিল ভারত। ২০১১ থেকে হেলিকপ্টারগুলো একে একে ভারতে আসতে শুরু করে। ২০১৮-র মধ্যেই ভারতে চলে আসে সবকটি হেলিকপ্টার।
রাশিয়া থেকে যে হেলিকপ্টারগুলো ভারত পেয়েছে, তার মধ্যে সর্বাধুনিক হল এই ভি-৫ মডেল। সাধারণত এই ধরনের হেলিকপ্টারগুলোতে ডাবল ইঞ্জিন থাকে। অর্থাৎ, যদি ছোটখাটো কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ হয়, বা যদি একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়, তাহলে তা সামাল দেয়ার জন্য বিকল্প একটি ইঞ্জিন থাকে। সেই কারণে শুধু প্রতিরক্ষা প্রধানই নন, আরও যারা শীর্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন… এমনকী প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিরা এই ধরনের চপার (হেলিকপ্টার) ব্যবহার করে থাকেন।
কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর অধরা থেকে যাচ্ছে।
সেনা কর্মকর্তাদের একটি অংশ মনে করছেন, দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে দৃশ্যমানতার অভাব। কারণ দৃশ্যমানতা কম হয়ে গেলে, তা হেলিকপ্টার পাইলটের কাছে এক বিভীষিকার সমান।
বুধবার নীলগিরির যে অংশের ওপর দিয়ে এই হেলিকপ্টারটি যাচ্ছিল, সেই এলাকায় দৃশ্যমানতা অনেকটাই কম থাকে। এছাড়া বিগত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খারাপ ছিল। সেই কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু যে হেলিকপ্টারে প্রতিরক্ষা প্রধানের মতো হাই প্রোফাইল সামরিক কর্মকর্তা যাচ্ছেন, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা অনেক আঁটসাঁট থাকে।
এই ধরনের ক্ষেত্রে কোনও হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি যখন হেলিকপ্টারে চড়েন, তখন সেটির প্রযুক্তিগত কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা, তা উড্ডয়নের আগে একাধিকবার পরীক্ষা করা হয়ে থাকার কথা। বিমান বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে এই বিষয়টি।
এছাড়া আজকের উড্ডয়নটি যখন আগে থেকেই নির্ধারিত, তখন তা নিশ্চয়ই একাধিকবার পরীক্ষা করা হয়েছে। তারপরেও কেন এমন দুর্ঘটনা? প্রশ্ন অনেকের।
প্রাথমিকভাবে দুটি তত্ত্ব উঠে আসছে – যান্ত্রিক গোলযোগ বা দৃশ্যমানতার অভাব। আর তার সঙ্গে অবশ্যই আরও একটি তত্ত্ব উঠে আসছে। অন্তর্ঘাত কিংবা নাশকতার তত্ত্ব।
বিমান বাহিনী ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
কী বলছেন ভারতীয় বিমান কর্মকর্তা
এই দুর্ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, দেশের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়কের হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ল কী করে? উত্তর খুঁজতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার যোগাযোগ করে বিমানবাহিনীর সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রমেশকুমার দাসের সঙ্গে।
রাওয়াতের হেলিকপ্টার ওয়েলিংটন যাওয়ার পথে নীলগিরি পাহাড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে ওয়েলিংটনের ওই স্টাফ কলেজেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিলেন রমেশ। তাই ওই এলাকা এবং নীলগিরি পাহাড়ি এলাকা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা অনেক পুরনো বলে জানান তিনি।
ওয়েলিংটনের ডিফেন্স স্টাফ কলেজে নিয়মিত বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তারা বক্তৃতা দিতে আসেন, বলে জানান রমেশ। সিডিএস বিপিন রাওয়াতও ওই কলেজেই বক্তৃতা দিতে সুলুর থেকে রওনা দিয়েছিলেন। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ নীলগিরি পাহাড়ে, কুন্নুরের জঙ্গলে ভেঙে পড়ে তার হেলিকপ্টার।
খারাপ আবহাওয়াকে অনেকেই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন। তবে একাধিক কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন রমেশ। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই তামিলনাড়ুর আবহাওয়া খারাপ। নীলগিরি পাহাড়ে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যায়। হেলিকপ্টার টেক-অফ করার পর হয়তো আবহাওয়া খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই খারাপ আবহাওয়ার বিষয়টি একে বারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। দুর্ঘটনার কারণ খোঁজার সময় এটাও নিশ্চয় তদন্ত করে দেখা হবে।’
যদিও দেশের প্রতিরক্ষাপ্রধানের মতো ভিআইপি-দের আকাশ পথে যাতায়াতের সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাসের দিকেও বিশেষ নজর দেয়াই নিয়ম।
সুলুর এয়ারবেস থেকে ওয়েলিংটন যেতে আকাশপথে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে বলে জানান রমেশ। নীলগিরির পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে এই পথ। তার মতে আবহাওয়ার সঙ্গে এলোমেলো হাওয়ার ফলে সেই সময় হেলিকপ্টারটি কোনও বিপদে পড়েছিল কী না সেটিও দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, “হেলিকপ্টারে একাধিক ‘মুভিং পার্টস’ থাকে। হেলিকপ্টারের মাথার ওপর যেমন ব্লেড ঘোরে, তেমনই থাকে ‘টেল রোটার’ অর্থাৎ হেলিকপ্টারের পিছনে বা লেজের দিকে পাখা ঘুরতে থাকে। পাহাড়ে বিভিন্ন মুখী হাওয়া চলে। কখনও উপর দিক থেকে নীচের দিকে, কখনও নীচ থেকে উপরে হাওয়া ওঠে। অনেক সময় এর হঠাৎ তারতম্য ঘটলে অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে।”
একই সঙ্গে রমেশ এটাও জানান যে, এই সব বিষয়গুলো বিমান কর্মকর্তা ও পাইলটরা মাথায় রাখেন। কী ধরনের সমস্যার মুখে তারা পড়তে পারেন তা সম্পর্কেও ধারণা থাকে তাদের।
রুশ এমআই-১৭ দেশের অন্যতম অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট উল্লেখ করে রমেশ বলেন, “যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হেলিকপ্টারে ওঠার আগে সেই হেলিকপ্টারের একাধিক পরীক্ষা করা হয়। ‘সার্ভিস এবিলিটি’ অর্থাৎ পরীক্ষার সঙ্গে যন্ত্রাংশ খুঁটিয়ে দেখা হয়।’’
তিনি বলেন, ‘কোনও এয়ারবেসের স্কোয়াড্রনে যত এয়ারক্রাফট থাকে তার মধ্যে সব থেকে ভালটাই ব্যবহার করা হয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের বহনের কাজে। অভিজ্ঞ পাইলটই সেই হেলিকপ্টারের চালকের আসনে থাকেন।’
সেনা সর্বাধিনায়কের শেষকৃত্য শুক্রবার
দিল্লির সেনা ছাউনিতে শুক্রবার বিকেলে প্রয়াত প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তার স্ত্রী মধুলিকার শেষকৃত্য হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তামিলনাড়ুর সুলুর বিমানঘাঁটি থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজে জেনারেল রাওয়াত এবং তার স্ত্রী মধুলিকার মরদেহ দিল্লিতে আনা হবে। এরপর দু’জনের মরদেহ রাখা থাকবে রাওয়াতের বাড়িতে।
সেনা বাহিনীর বরাতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রয়াত প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়কের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন তার অনুরাগীরা। এরপর কামরাজ মার্গ থেকে শুরু হবে শেষযাত্রা। দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের ব্রার স্কোয়ারে অন্ত্যেষ্টিস্থলে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় হবে শেষকৃত্য।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অপূরণীয় ক্ষতি
সস্ত্রীক জেনারেল বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারতের তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীও।
প্রয়াত প্রতিরক্ষাপ্রধানকে সম্মান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাকে একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। টুইটারে লিখেছেন, ‘জেনারেল বিপিন রাওয়াত একজন অসাধারণ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। তিনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং নিরাপত্তা সরঞ্জামের আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কৌশলগত বিষয়ে তার অন্তর্দৃষ্টি এবং দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ব্যতিক্রমী। তার মৃত্যু আমাকে গভীরভাবে শোকাহত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষাপ্রধান হিসাবে, জেনারেল রাওয়াত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কারসহ আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করেছেন। সেনাবাহিনীতে কাজের একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা তিনি পরবর্তীতে ব্যবহার করেছিলেন। ভারত তার ব্যতিক্রমী সেবা কোন দিন ভুলবে না।’
বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
ভারতের প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রতিবেশী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকরের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় ড. মোমেন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত জেনারেল বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী মাধুলিকা রাওয়াত এবং সহযাত্রীদের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাদের সবার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আরও পড়ুন:পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:গাজা উপকূলে ইসরায়েলি সৈন্যরা দুজন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর তাদের মরদেহ বুলডোজার দিয়ে বালুর নিচে চাপা দেয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচার করেছে আল জাজিরা।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য বুধবার জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিক অধিকার ও অ্যাডভোকেসি সংগঠন ‘দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর)’।
আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার সিএআইআরের এ আহ্বানের কথা জানানো হয়।
আল জাজিরার দুই মিনিটের ওই ভিডিওটিতে দুই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একজনকে হাত উঁচু করে সাদা কাপড়ের টুকরো ওড়াতে দেখা যায়।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদা কাপড় দেখিয়ে ওই ফিলিস্তিনি হয়ত বোঝাতে চাচ্ছিলেন তারা কোনো হুমকি নন। দুজনই উপকূল বরাবর একটি উন্মুক্ত এলাকায় হাঁটছিলেন, সম্ভবত তারা উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন।
সিএআইআর জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উপকূলে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে, যারা কোনো হুমকি ছিল না। এরপর তাদের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য একটি সামরিক বুলডোজার ব্যবহার করা হয়।
এমন জঘন্য যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়ে কাউন্সিল বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ‘ইচ্ছে মতো’ হত্যা করছে এবং তাদের মৃতদেহগুলো ‘আবর্জনার মতো’ ব্যবহার করছে।
গণহত্যামূলক ইসরায়েলি সরকারকে জাতিসংঘের তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন:ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির বিরুদ্ধে কংগ্রেস তাকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে বলে সূত্রের বরাতে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
বুধবার গোয়া, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং দমন ও দিউ- এই চার রাজ্যের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি (সিইসি) ১৮ জনের নাম অনুমোদন করেছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেস সানিয়া মির্জার জনপ্রিয়তা ও তার সেলিব্রিটি স্ট্যাটাসের দিকে নজর রেখে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কংগ্রেস সর্বশেষ ১৯৮০ সালে হায়দরাবাদে জিতেছিল এবং কে এস নারায়ণ সাংসদ হয়েছিলেন।
সূত্রের খবর, সানিয়ার নাম প্রস্তাব করেছিলেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক কংগ্রেস নেতা মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ২০১৯ সালে সানিয়া মির্জার বোন আনাম মির্জার সঙ্গে বিয়ে হয় ক্রিকেটারের ছেলে মহম্মদ আসাদুদ্দিনের।
আজহারউদ্দিন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যেখানে তিনি জুবিলি হিলস আসন থেকে ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) মাগন্তি গোপীনাথের কাছে ১৬০০০ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন।
এআইএমআইএম-এর একটি শক্ত ঘাঁটি হায়দরাবাদ, এই অঞ্চলে ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির’ (কংগ্রেস) সাম্প্রতিক পুনরুত্থান এআইএমআইএমের আধিপত্যের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যা একটি তীব্র কঠিন লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
১৯৮৪ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন ওয়াইসি হায়দরাবাদ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং পরে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এআইএমআইএম প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন।
এর পর আসাদ্দুদ্দিন ওয়াইসি ২০০৪ সাল থেকে এই আসনটি ধরে রেখে উত্তরাধিকার বহন করছেন। ২০১৯ সালে ওয়েইসির বিরুদ্ধে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি তার আধিপত্য বজায় রেখে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫৮.৯৪% পেয়ে আসনটি জিতেছিলেন।
এই লোকসভা নির্বাচনের জন্য হায়দরাবাদে বিজেপি মাধবী লতাকে প্রার্থী করেছে, এবং বিআরএস গদ্দাম শ্রীনিবাস যাদবকে প্রার্থী করেছে।
৫৪৩টি সংসদীয় আসনের নির্বাচন সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে, যা ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১ জুন শেষ হবে। তেলেঙ্গানায় ভোট হবে ১৩ মে।
রাশিয়ার মস্কোতে গত শুক্রবার কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও এ ধরনের আক্রমণের সামর্থ্য জঙ্গি সংগঠনটির আছে বলে বিশ্বাস করে না রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার তার দেশের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাখারোভা বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আইএসের আছে, এমনটি বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন।
সাম্প্রতিক ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৪৩ জন। আহত অনেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও এ দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।
রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর দায় স্বীকার করে আইএস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলাটি চালায় আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে ইউক্রেন, তবে জাখারোভার ভাষ্য, ইউক্রেনকে হামলার দায় থেকে বাঁচাতে ত্বরিত গতিতে আইএসের ওপর দায় চাপায় পশ্চিমা দেশগুলো।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিন ও দেশটির অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজার নির্যাতিত মানুষকে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে ইরান কখনও ইতস্তত বোধ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
গাজার শাসক দল হামাসের পলিট ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার তেহরানে সাক্ষাৎ করতে গেলে আয়াতুল্লাহ এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে প্রেস টিভি।
খামেনিকে উদ্ধৃত করে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং গাজার নিপীড়িত ও সহিষ্ণু জনগণকে সমর্থনের ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কখনও ইতস্তত বোধ করবে না।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় বিরতিহীন এ হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৩২ হাজার ৪১৪ জনের।
এমন বাস্তবতায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে ‘ঐতিহাসিক ধৈর্য’ ধরার জন্য গাজাবাসীর প্রশংসা করে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, এ ধৈর্য ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য মর্যাদা ও গর্বের উৎসে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের শাংলা জেলার বিশাম এলাকায় মঙ্গলবার গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় চীনের পাঁচ নাগরিকসহ কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মালাকান্দ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ আলি গান্দাপুরের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামাবাদ থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার দুসু এলাকার ক্যাম্পে যাওয়ার পথে চীনের প্রকৌশলীদের গাড়িবহরে বিস্ফোরকভর্তি গাড়িটি উঠিয়ে দেয় আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী।
তিনি আরও বলেন, ‘হামলায় চীনের পাঁচ নাগরিক ও তাদের পাকিস্তানি চালক নিহত হন।’
হামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাটি ঘিরে ফেলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্তে নামায় এ পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ইসলামাবাদে চীনা দূতাবাস গিয়ে রাষ্ট্রদূত জিয়াং জ্যায়দংয়ের কাছে শোক প্রকাশ করেন।
এক বিবৃতিতে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘চায়না-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডরের (সিপিইসি) শত্রুরা আরও একবার এ ধরনের কাপুরুষোচিত কাজ করে একে ব্যাহত করার চক্রান্ত করেছে, কিন্তু অশুভ অভিলাষ পূরণে কখনই সফল হবে না তারা।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোরে পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় সেতু ধসের ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ছয় শ্রমিক, যারা নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্স জানায়, সোমবার গভীর রাতে বিদ্যুৎবিহীন বিশাল কার্গো জাহাজটি সজোরে ধাক্কা দিলে বাল্টিমোর হারবারে ধসে পড়ে সেতুটি। এ দুর্ঘটনার ফলে বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যস্ত বন্দর।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ও ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্য পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনার প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর অন্ধকারাচ্ছন্ন ও শ্বাপদসংকুল পরিবেশে উদ্ধার তৎপরতা স্থগিত করে ডুবুরি দল।
কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল শ্যানন গিলরিথ জানান, হিমশীতল পানি ও দুর্ঘটনার পর দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় নিখোঁজ শ্রমিকদের জীবিত পাওয়ার আশা ফুরিয়ে গেছে।
ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্য পুলিশের কর্নেল রোল্যান্ড বাটলার জানান, নিখোঁজ শ্রমিকদের দেহাবশেষ উদ্ধারের আশায় স্থানীয় সময় বুধবার সূর্যোদয়ের পর ডুবুরিদল কাজ শুরু করবে বলে প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ‘ডালি’ নামের জাহাজটি বাল্টিমোর হারবার থেকে শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছিল। স্থানীয় সময় সোমবার রাত দেড়টার দিকে প্যাটাপস্কো নদীর মোহনায় ‘ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজ’ নামের সেতুর একটি পিলারে ঢুকে পড়ে নৌযানটি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য