সাউথ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে পৌঁছানো দুটি ফ্লাইটের ১৩ যাত্রীর দেহে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ৪৮ জনের দেহে।
আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় ১১ নভেম্বর প্রথম করোনার ‘বি.১.১.৫২৯’ ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়, যাকে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ওমিক্রন’ বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনার নতুন এই ধরনটি এরই মধ্যে সাউথ আফ্রিকাতেও শনাক্ত হয়েছে। দেশটির জোহানেসবার্গ ও প্রিটোরিয়াতে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।
এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য দেশ শুক্রবার সাউথ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দক্ষিণের সাতটি দেশ থেকে ইউরোপে সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগেই শুক্রবার সাউথ আফ্রিকা থেকে দুটি ফ্লাইট পৌঁছায় আমস্টারডামে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই দুটি ফ্লাইটের প্রায় ৬০০ যাত্রীকে করোনা পরীক্ষার জন্য বিমানবন্দরেই রেখেছিল ডাচ সরকার। এরপর কোভিড শনাক্ত হওয়া যাত্রীদের বিমানবন্দরের কাছেই একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
ডাচ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাদের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি তারা নিজেদের বাড়িতে পাঁচ দিনের আইসোলেশনে থাকবেন। এরপর আবার তাদের করোনা পরীক্ষা হবে।
এর আগে মিশর থেকে বেলজিয়াম ভ্রমণে যাওয়া একজনের দেহেও ওমিক্রন শনাক্ত হয়। ইউরোপে বেলজিয়ামই প্রথম দেশ, যেখানে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল ও হংকংয়েও শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটি।
১৩ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর ডাচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিউগো দে জং সাম্প্রতিক সময়ে সাউথ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডসে আসা সবাইকে যত দ্রুত সম্ভব করোনা পরীক্ষা করাতে ‘জরুরি অনুরোধ’ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে নেদারল্যান্ডসে ওমিক্রন সংক্রমিত আরও অনেকে আছেন।’
সার্স কভ টু ভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়ে গবেষকদের উদ্বেগের মূল কারণ, এর অনেকবারের মিউটেশন। মিউটেশন হলো এমন এক অভিযোজন কৌশল যার মাধ্যমে ভাইরাস বিরূপ বা নতুন পরিস্থিতিতেও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনে ৩২টি মিউটেশন খুঁজে পেয়েছেন। অন্যদিকে অত্যন্ত সংক্রামক হিসেবে বিবেচিত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন হয়েছে মাত্র আটবার।
স্পাইক প্রোটিনের বেশি মিউটেশন মানেই ভাইরাসটি বেশি প্রাণঘাতী, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বহুবার মিউটেশনের কারণে ওমিক্রনের সঙ্গে মানুষের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার (ইমিউনিটি সিস্টেম) লড়াই করা কঠিন হতে পারে।
ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিন প্রচলিত করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের তুলনায় অনেকটা বদলে যাওয়ায় দেহের ইমিউনিটি সিস্টেম দ্রুত একে শনাক্ত করতে পারে না, ফলে এটি সংক্রমণের হার বাড়াতে পারে। যেকোনো করোনাভাইরাস এদের স্পাইকের সাহায্যেই শ্বাসতন্ত্রের কোষে যুক্ত হয়ে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে।
প্রাথমিক গবেষণা অনুসারে, নতুন ভ্যারিয়েন্টটি টিকার কার্যক্ষমতা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে সক্ষম।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টের দুটি মিউটেশন- আর ২০৩কে এবং জি ২০৪আর ভাইরাসটির দ্রুত প্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম। এ ছাড়া তিনটি মিউটেশন- এইচ৬৫৫ওয়াই, এন ৬৭৯কে এবং পি ৬৮১এইচ ভাইরাসটিকে আরও সহজে মানব কোষে প্রবেশে সাহায্য করে। তারা বলছেন, শেষ দুটি মিউটেশনের একসঙ্গে উপস্থিতি বিরল ঘটনা এবং এর ফলে ওমিক্রন টিকা প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার ইনস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োটেকনোলজির আণবিক জীববিজ্ঞানী ডা. উলরিচ এলিংয়ের মতে, প্রাথমিক লক্ষণ থেকে মনে হচ্ছে করোনার নতুন রূপটি ডেল্টার চেয়ে ৫০০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হতে পারে।
অবশ্য নতুন ভ্যারিয়েন্টটি সার্স কভ টুর আগের ধরনগুলোর তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী- এমন কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে নতুন করে চাপে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন:ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং বলেছেন, বিশ্বের জনবহুল ও সভ্য দেশ হিসেবে চীন-ভারতের বন্ধু হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশ ভালো প্রতিবেশী হয়ে গ্লোবাল সাউথে ভূমিকা রাখতে পারে।
গতকাল রোববার চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন এই দুই নেতা। সেখানে মোদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গ্লোবাল সাউথ বলতে অপশ্চিমা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বোঝানো হয়। শি চিন পিং বলেন, ‘বিশ্ব এখন পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন ও ভারত দুটি সবচেয়ে সভ্য দেশ। আমরা বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দুটি দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের অংশ। তাই আমাদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ভালো প্রতিবেশী হওয়া এবং ড্রাগন ও হাতির একত্রিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ড্রাগন ও এলিফ্যান্ট হলো এই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক।
তিনি আরও বলেন, উভয় দেশের উচিত কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্ক পরিচালনা করা।
চীনের প্রেসিডেন্ট এই বছর চীন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বহুপাক্ষিকতা, বহুমেরু বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরও বেশি গণতন্ত্র বজায় রাখার জন্য আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং এশিয়া ও বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদির এই সাক্ষাৎকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভারতে। শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ তৈরির পর ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে চলা দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর জোর দিচ্ছে নয়াদিল্লি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, প্রায় সাত বছর পর চীন সফর করছেন মোদি। তিনি মূলত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন। এই সম্মেলনকে বেইজিংয়ের নেতৃত্ব প্রদর্শন ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে গ্লোবাল সাউথের ঐক্য গড়ে তোলার সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে সাইডলাইন বৈঠকে উভয়পক্ষের বিশ্বাস, সম্মান ও সংবেদনশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোদি বলেছেন, সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পর শান্তি ও স্থিতিশীলতার একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, শি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ভারত পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিব্বতকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, মাউন্ট কৈলাস ও মানসারোভাতে তীর্থযাত্রা আবারও শুরু হবে। উভয় দেশের মধ্যে পুনরায় সরাসরি বিমান চলাচলের পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে ভারত।
এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ২০টিরও বেশি দেশের নেতারা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এশিয়া আঞ্চলের। রোববার চীনে পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। তিনিসহ অন্যান্য নেতারা বেইজিংয়ে একটি সামরিক প্রদর্শনীতেও অংশ নেবেন।
প্রসঙ্গত, মস্কোর তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তা কার্যকর হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় চীন-ভারত এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হল। দুই নেতা এখন পশ্চিমা চাপের বিপক্ষে এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ পরাশক্তি যে ঐক্যবদ্ধ তা দেখাতে চাইছেন, বলছেন বিশ্লেষকরা।
তবে গত বছর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। দুই দেশ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে একমত হয়েছে বলেও মোদি জানিয়েছেন, তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
গত বছর শি চিন পিং ও মোদি রাশিয়াতে বরফগলানো এক বৈঠকে সীমান্তে টহল নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। এরপর থেকে বিশ্বের শীর্ষ দুই জনবহুল দেশের মধ্যে বিবাদ কমতে শুরু করে; সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা একে অপরের আরও কাছে এসেছে ওয়াশিংটনের দেওয়া শুল্কের চাপে পড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ককে মোকাবেলায় দিল্লি যখন বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করে, তখন বেইজিংকে তারা পাশে পায়।
দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই সরাসরি বিমান চলাচল ফের চালু হবে বলে মোদী জানিয়েছেন। এটি ২০২০ সাল থেকে বন্ধ ছিল। তবে ঠিক কখন থেকে এই সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা বলেননি।
ভারতে দুর্লভ মৌল, সার ও টানেল বোরিং মেশিন রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ছিল চীনের, ভারতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সফরের সময় বেইজিং তা তুলে নিতে রাজি হয়।
ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে তারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন, এ ইস্যুতে বেইজিং ‘দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে থাকবে’ বলে চলতি মাসেই নয়া দিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সু ফেইহং মন্তব্য করেছিলেন।
দশকের পর দশক ধরে ওয়াশিংটন এশিয়ায় বেইজিংয়ের প্রভাব মোকাবেলায় নয়া দিল্লিকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তার উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৭ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযানের মুখে গাজা নগরী ছেড়ে শত শত ফিলিস্তিনি পালাচ্ছেন। হাতে গোনা সামান্য মালপত্র ট্রাক, ভ্যান ও গাধার গাড়িতে তুলে তারা এলাকা ছাড়ছেন।
নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকে দেইর আল-বালাহর কাছে বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাবু ফেলতে শুরু করেছে। এদের অধিকাংশকেই একাধিকবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে।
আগস্টের শুরু থেকে ইসরায়েলি সেনারা হামলা জোরদার করেছে গাজা সিটতে। শহর দখল ও প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যেই এই অভিযান— এমন আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।
গত শুক্রবার ইসরায়েল জানায়, তারা নগরী দখলের ‘প্রাথমিক ধাপ’ শুরু করেছে এবং এটিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করেছে।
গত শনিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই দিন একদিনেই গোটা গাজায় ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু গাজা নগরীতেই নিহত ৪৭ জন। এর মধ্যে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।
অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আবাসিক ভবনে হামলায় সাতজন নিহত হন। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালাতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, ‘গাজা নগরীজুড়ে হামলা আরও বাড়ছে। ঘরবাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনধারার ভিত্তি ভেঙে পড়ছে। এ সব ঘটছে যখন মানুষ দুর্ভিক্ষ, অনাহার আর পানিশূন্যতার মধ্যে রয়েছে। পুরো পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ে গড়াচ্ছে।’
গাজা সংঘাতে ৯০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে শনিবার লড়াই চলাকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) এক রিজার্ভ সদস্য নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিহত সৈনিক সার্জেন্ট ফার্স্ট ক্লাস (রিজার্ভ) এরিয়েল লুবলিনার (৩৪)। তিনি চলমান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহত হওয়া ৯০০তম ইসরায়েলি সেনা।
তার মৃত্যুর পরিস্থিতি তদন্ত করা হচ্ছে। আইডিএফ-এর প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, দুর্ঘটনাবশত অন্য একজন সৈনিকের ছোড়া গুলিতে তিনি প্রাণ হারান।
গাজার খান ইউনিসে নিহত হন লুবলিনার। তিনি উত্তর ইসরায়েলের কিরিয়াত বিয়ালিকের বাসিন্দা ছিলেন। লুবলিনার প্রায় ১০ বছর আগে ব্রাজিল থেকে ইসরায়েলে আসেন। তার স্ত্রী বারবারা স্পেন থেকে আসা একজন অভিবাসী। লিওর নামে তাদের নয় মাস বয়সি একটি ছেলে আছে।
টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুবলিনারের রিজার্ভ ডিউটির পর্ব শেষ করার কথা ছিল এবং পরিবারটি ছুটি কাটাতে ব্রাজিল যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। জুন মাস থেকে তিনি এই পর্বে ডিউটিতে ছিলেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে উত্তর গাজার জায়তুন এলাকায় সাঁজোয়া যানে বোমা বিস্ফোরণে সাতজন ইসরায়েলি সেনা আহত হন। সেনাদের বহনকারী ওই যানটি একটি রাস্তার পাশে পুতে রাখা বিস্ফোরক যন্ত্রের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা কিছুটা গুরুতর, বাকিদের আঘাত আশঙ্কাজন নন। তাদের মধ্যে পাঁচ সেনাকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হামাসের মুখপাত্রকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা
গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কেএএন-এর গত শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা সিটিতে হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু ওবায়দাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, গাজা সিটিতে হামাসের এক ‘গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে’ লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। বিবৃতিতে বিস্তারিত কিছু জানানো না হলেও, একাধিক হিব্রু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে যে, হামাসের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র হুদাইফা সামির আবদুল্লাহ আল-কাহলৌত, যিনি আবু ওবায়দা নামে পরিচিত, তাকে লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলায় তারা নির্ভুল গোলাবারুদ, আকাশপথে নজরদারি এবং অতিরিক্ত গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করেছে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ জানিয়েছে, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন আবু ওবায়দা। ইসরায়েলের এই দাবির বিষয়ে হামাস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং রহস্যময় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি সর্বদা মুখোশ পরে থাকেন এবং তার আসল পরিচয় ও অবস্থান সম্পর্কে কারও কোনো তথ্য জানা নেই। এর আগেও ইসরায়েল বেশ কয়েকবার তাকে লক্ষ্যবস্তু করার চেষ্টা করেছে।
এদিকে, চিকিৎসা সূত্র জানায়, গত শনিবার ভোরে গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলীয় আল-রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ভবনটিতে নারী, শিশু এবং বাস্তুচ্যুত মানুষ বসবাস করছিল।
ইরানের বেসিজ সংগঠনের প্রধান জানিয়েছেন, গত জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান দখলদার ইসরায়েলের ২১টি কৌশলগত স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। আর ইরানের এই টার্গেটগুলো এমন এক নির্ভুলতায় সম্পন্ন হয়েছে, যার ভ্রান্তি এক মিটারেরও কম। খবর মেহের নিউজের।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলামরেজা সোলেইমানি গতকাল রোববার জানান, শত্রুপক্ষ ওই ১২ দিনের যুদ্ধ উসকে দিয়েছিল এবং একইসঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকেও সক্রিয় করেছিল। যাতে ভেতর থেকে ও বাইরে থেকে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
তার ভাষায়, ‘এই ১২ দিনে আমরা জায়নিস্ট শাসনের ২১টি গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছি। নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভরসা করে আমরা আমাদের টার্গেট ব্যাংক সম্পন্ন করেছি, যার নির্ভুলতা এক মিটারেরও কম। আজ আমরা তাদের দুর্বল দিকগুলো পুরোপুরি জানি এবং অধিকৃত ভূখণ্ডের প্রতিটি বর্গমিটারে কী ঘটছে সে সম্পর্কে অবগত’।
বেসিজ সংগঠনের প্রধান এ সময় সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে যদি আবার কোনো আগ্রাসন ঘটে, তাহলে ইরান কেবল জায়নিস্টদের নয় বরং তাদের সমর্থকদেরও দায়ী করবে।
গোলামরেজা সোলেইমানি বলেন, ‘যান এবং খুঁজে দেখুন, সাম্প্রতিক যুদ্ধে কত দেশ ইসরাইলকে রক্ষা করতে অংশ নিয়েছিল এবং কত হাজার টন বোমা ও বিস্ফোরক তারা একটি নিরস্ত্র জাতির ওপর বর্ষণ করার জন্য জায়নিস্ট শাসনকে দিয়েছে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হবে’।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ও অঘোষিত আগ্রাসন শুরু করে, যা ১২ দিনের যুদ্ধকে উসকে দেয়। এই যুদ্ধে অন্তত ১,০৬৪ জন নিহত হয়, যার মধ্যে সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন।
এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয় এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়, যা আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন।
প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত ভূখণ্ডজুড়ে কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, পাশাপাশি কাতারের আল-উদেইদ ঘাঁটিতেও (যা পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি) আঘাত হানে।
গত ২৪ জুন ইরান তার সফল প্রতিশোধমূলক অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের ওপরই চাপে ফেলে এবং আগ্রাসন থামাতে বাধ্য করে।
রাশিয়া ও ভারতের রাষ্ট্রনেতাসহ প্রায় ২০টি ইউরেশীয় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ চীনে পৌঁছেছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর আমন্ত্রণে এক সম্মেলনে যোগ দিতে তারা তিয়ানজিনে একত্রিত হয়েছেন।
উদ্দেশ্য আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনকে কেন্দ্র বিন্দুতে রাখা।
তিয়ানজিন থেকে এএফপি জানায়, এই সম্মেলনের নাম সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও), চলবে সোমবার পর্যন্ত। উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী তিয়ানজিনে এই শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এর কয়েকদিন পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বেইজিংয়ে এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।
এসসিও’র সদস্য দেশগুলো হলো- চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। এছাড়াও, আরও ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক বা ‘সংলাপ সহযোগী’ হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তিয়ানজিনে পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন শীর্ষ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, সি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
চীন ও রাশিয়া এসসিও-কে প্রায়ই ন্যাটোর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এ বছরের সম্মেলনটি প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শনিবার সিনহুয়াতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, এই সম্মেলন ‘সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলায় এসসিও-এর সক্ষমতা বাড়াতে এবং সমগ্র ইউরেশীয় অঞ্চলে সংহতি জোরদার করতে’ সহায়ক হবে।
পুতিন আরো বলেন, ‘এসব উদ্যোগ বিশ্বকে আরো ন্যায়পরায়ণ ও বহুমুখী শক্তির বিশ্বব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নেবে।’
চীনের তাইওয়ান দাবি ও রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বেইজিং ও মস্কো এসসিও-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে।
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডিলান লো বলেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরে এসসিও-কে একটি পশ্চিমাবিরোধী ক্ষমতাধর জোট হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তারা দাবি করে এই জোট এক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে যা আরো গণতান্ত্রিক।’
২০০১ সালে এসসিও প্রতিষ্ঠার পর এবারই জোটটির সবচেয়ে বড় আসর বসেছে। এতে যোগ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ ২০জনের বেশি শীর্ষ নেতা।
লো আরও বলেন, ‘এত বিশাল সংখ্যক দেশের অংশগ্রহণ প্রমাণ করছে যে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং পশ্চিমা-বহির্ভূত দেশগুলোর জন্য এসসিও একটি আকর্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের লিজি লি বলেন, বেইজিং এসসিও’র মাধ্যমে ‘প্রভাব বিস্তার করার এবং এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করবে যে ইউরেশিয়ার নিজের প্রতিষ্ঠান আছে এবং নিজের নিয়মে খেলা চলে।’
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘চীন এটিকে সার্বভৌমত্ব, একে অন্যের ওপর হস্তক্ষেপ না করা এবং বহুমুখী শক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ভিন্ন ধরনের এক ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করছে। দেশটি এটিকে একটি আদর্শ মডেল হিসেবে প্রচার করছে।
শনিবার তিয়ানজিনে সি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
পুতিন সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন। সেখানে যথাক্রমে আলোচনা হবে ইউক্রেন সংঘাত এবং তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে।
জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ লিম তাই ওয়েই বলেন, ‘বিশ্ব মঞ্চের একজন খেলোয়াড় হিসেবে এসসিও থেকে পাওয়া সব ধরনের সুবিধা রাশিয়ার প্রয়োজন। পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সমর্থনও তার দরকার।’
লিম এএফপিকে বলেন, ‘রাশিয়া ভারতকেও নিজেদের পক্ষে টানতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বিরোধ এই সুযোগ তৈরি করেছে।’
এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র শাস্তি হিসেবে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী শনিবার তিয়ানজিনে পৌঁছান। এটি ২০১৮ সালের পর তার প্রথম চীন সফর।
বিশ্বের এই দুই জনবহুল দেশ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রভাব বিস্তারে একে অপরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২০ সালে তাদের মধ্যে সীমান্তে এক প্রাণঘাতী সংঘর্ষও হয়েছিল।
গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে মোদী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এর মাধ্যমেই সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।
জাতিসংঘ আজ শুক্রবার জানিয়েছে, চলতি বছর ইরানে এ পর্যন্ত ৮০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে জনগণকে ভয় দেখাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘ইরান এ বছরের শুরু থেকে গতকাল ২৮ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৪১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।’ প্রকৃত পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু জুলাই মাসেই ইরান কমপক্ষে ১১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসের দ্বিগুণ।’
জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পদ্ধতিগত ধরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’ জাতিগত সংখ্যালঘু ও অভিবাসীরা এর শিকার হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
শামদাসানি বলেন, ‘ইরানে এই মুহূর্তে ১১ ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়ে আছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন নির্বাসিত বিরোধী দল পিপলস মুজাহিদীন অর্গানাইজেশন অব ইরানের (এমইকে) সদস্যপদ গ্রহণ করায় ‘সশস্ত্র বিদ্রোহের’ অভিযোগে অভিযুক্ত।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষের জীবনের জন্য যে অধিকার রয়েছে, মৃত্যুদণ্ড তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং মানবিক মর্যাদার সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ।’
ট্রাম্প প্রশাসন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষা প্রত্যাহার করেছে। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সিএনএন রিপোর্ট করেছে যে হ্যারিসের জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক অনুমোদিত বর্ধিত সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষার মেয়াদ বাতিল করেছে প্রশাসন।
ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তার ছয় মাসের সুরক্ষার মেয়াদ ২১ জুলাই শেষ হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, গত মে মাসে জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা শুধু তার ফোনকলের মাধ্যমেই থেমেছিল।
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত শুরু হলে আমি মোদিকে ফোন করি। তাকে জিজ্ঞেস করি, পাকিস্তানের সঙ্গে কী চলছে? আমি তাকে একজন অত্যন্ত ভয়ংকর মানুষ মনে করি। ফোনকলে তার রাগ ও ঘৃণা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। দুদেশের মধ্যে এই বৈরিতা অবশ্য বহু পুরোনো—শত শত বছরের শত্রুতার মতো।’
ট্রাম্প আরও জানান, সেই ফোনকলে তিনি মোদিকে সতর্ক করেছিলেন—আমি বলেছিলাম, আমি আপনাদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্যচুক্তি করতে চাই না। যদি সংঘাত পরমাণু যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে সেটাই আপনাদের পরিণতি হবে। আমি আরও বলেছিলাম, আগামীকাল যদি ফোন না করেন এবং সংঘাত না থামান তাহলে শুধু বাণিজ্যচুক্তিই বাতিল করব না, এমন শুল্ক আরোপ করব যাতে আপনাদের মাথা ঘুরে যাবে।’
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়। এরপর ৪ মে ভারত শুরু করে ‘অপারেশন সিঁদুর’, যেখানে লস্কর-ই-তইয়বা (লেট) এবং জইশ-ই মোহাম্মদ (জেম)-এর ৭০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করে নয়াদিল্লি।
জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৭ মে শুরু করে ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’। পাকিস্তানের দাবি, এই অভিযানে ভারতে ৩১ জন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছে।
টানা পাঁচ দিন সংঘাত চলার পর ৯ মে দুদেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ইসলামাবাদ এজন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিলেও নয়াদিল্লি সেই দাবি মানেনি।
সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দিল্লির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক গত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
মন্তব্য