মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে আধুনিক বিজ্ঞানে বড় অবদান রাখছে জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন। তবে এ চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে ধর্মবিশ্বাসীদের। বিশেষত অন্য প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিজ দেহে ধারণ নিয়ে মুসলিম বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চলছে বিতর্ক।
জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন হলো এমন এক ধরনের পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অন্য প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কোষ, টিস্যু বা দেহজ তরল মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো মানুষের দেহে শূকরের কিডনি সফলভাবে প্রতিস্থাপনে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকরা। জিনগতভাবে পরিবর্তিত একটি শূকরের কিডনি ব্যবহার করা হয়েছে এ কাজে।
টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের (টিআরটি) প্রতিবেদনে বলা হয়, একদিকে বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে; অন্যদিকে শূকরের অঙ্গ ব্যবহারে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বর্ষপুরোনো বিতর্ক নতুন করে উসকে উঠেছে।
ইসলাম ও ইহুদি ধর্মে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শূকরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।
আবার, ইনসুলিন থেকে শুরু করে হামের টিকা পর্যন্ত বিভিন্ন ওষুধে শূকরের দেহ থেকে সংগৃহীত নানা উপাদানের ব্যবহার রয়েছে। এমনকি ষাটের দশকে প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরুর পর থেকে অনেক মুসলিমের হৃৎপিণ্ডকেই সচল রেখেছে শূকরের ভাল্ভ।
কাতারের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির ইসলাম ও জৈবচিকিৎসাবিষয়ক নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ঘালি বলেন, ‘মূলধারার ধর্মীয় শিক্ষাবিদদের দৃষ্টিতেও কোনো বিকল্প না থাকলে শূকরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহারে মুসলিমদের বাধা নেই।
‘ইসলাম ধর্মে নির্দেশিত বিধানে বলা আছে, চিকিৎসার কারণে প্রয়োজন হলে নিষিদ্ধ বস্তুও অনুমোদনযোগ্য। কারণ ইসলামে মানুষের প্রাণ বাঁচানো ফরজ।’
মৃত্যুশয্যায় থাকা লাখো রোগীর প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাব্য শেষ পথ অঙ্গ প্রতিস্থাপন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় আছেন এক লাখের বেশি রোগী। কিডনি ও যকৃতের জোগান না থাকায় বেশির ভাগই মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন।
এমন পরিস্থিতিতে সফল জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন এখনও গবেষকদের কাছে অনেকটা এক মরীচিকার নাম। অন্য প্রাণীর আস্ত একটি অঙ্গ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মানবদেহে প্রতিস্থাপনের প্রথম চেষ্টার ৪০ বছর পেরিয়েছে, কিন্তু এখনও শতভাগ ক্ষেত্রে সাফল্য আসেনি।
অন্য প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনে প্রথম বাধা হলো, গ্রহীতার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই অঙ্গকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি নতুন কোনো টিস্যু মানবদেহের সংস্পর্শে এলে নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথে ৫৪ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে একটি শূকরের কিডনি এক রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শূকরের কিডনিগ্রহীতা একজন ‘ব্রেন-ডেড’ রোগী, অর্থাৎ যার মস্তিষ্ক কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। লাইফ সাপোর্ট থাকা ওই নারীর কিডনিও সম্প্রতি বিকল হতে বসেছিল।
তার দেহে শূকরের কিডনিটি যুক্ত করার পর কমপক্ষে তিন দিন কোনো ধরনের নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা নজিরবিহীন।
প্রতিস্থাপিত কিডনিটি যাতে রোগীর দেহ প্রত্যাখ্যান না করে, সেটি নিশ্চিতে জিনগতভাবে পরিবর্তিত একটি শূকরের অঙ্গ নেয়া হয়েছিল। ফলে ওই কিডনির টিস্যুতে তাৎক্ষণিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী ক্ষুদ্র জীবাণুর উপস্থিতি ছিল না।
কেন শূকর? ছাগল বা ভেড়া নয় কেন?
জেনোট্রান্সপ্ল্যান্ট গবেষণার প্রায় শুরু থেকেই বিজ্ঞানীদের প্রথম পছন্দ শূকর।
ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিনের কার্ডিয়াক জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রোগ্রামের পরিচালক ড. মুহাম্মদ মনসুর মহিউদ্দিন বলেন, ‘মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য শূকর একটি সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের বাকিদের জন্য তা নয়। তারা শূকরের মাংস তো খাচ্ছেই।’
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মহিউদ্দিন দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন চর্চা করেন। জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন খাতে পৃথিবীর খ্যাতিমান গবেষকদেরও তিনি একজন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথে ড. মহিউদ্দিন ও তার সহকর্মীরা ২০১৪ সালে কয়েকটি বেবুনের দেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেন। এর মধ্যে একটি হৃৎপিণ্ড কার্যকর ছিল প্রায় তিন বছর।
ড. মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা শূকরের জিনোমের পরিপূর্ণ নকশা নির্ণয় করতে পেরেছি। একজন মানুষের সঙ্গে একটি শূকরের জৈবিক পার্থক্য আমরা জানি। শূকরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানুষের দেহের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কী কী পরিবর্তন আনা দরকার, তাও জানি। তবে গরু-ছাগলের দেহের জিনগত তথ্য আমাদের খুব একটা জানা নেই।’
মানুষ নয়, কিন্তু কাছাকাছি প্রজাতির- এমন প্রাণীর মধ্যে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ সংগ্রহের জন্য সবচেয়ে আদর্শ হলো গরিলা। জিনগত দিক থেকেও মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে মিল এ প্রজাতির। বানরের ওপর সর্বাধুনিক জেনোট্রান্সপ্ল্যান্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্যতম কারণ এটি।
তবে বেবুন, গরিলা আর শিম্পাঞ্জি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী বলে এদের নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। করোনাভাইরাসের মতো প্রাণীদেহ থেকে মানুষে সংক্রমণযোগ্য ভাইরাসের কারণেও বেবুন, গরিলা আর শিম্পাঞ্জি উদ্বেগের কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে গবেষকদের কাছে শূকর প্রাধান্য পায় বেশ কয়েকটি কারণে। এই প্রাণীটি তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে, ঘন ঘন শাবক জন্ম দেয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- আকার-আকৃতির দিক থেকে এদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতোই।
ইসলামে শূকর নিকৃষ্ট প্রাণী
শূকরের হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন বা অগ্ন্যাশয় থেকে সংগৃহীত উপাদান থেকে ওষুধ তৈরি একটি বিষয়, আর শূকরের আস্ত একটি প্রত্যঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপন ভিন্ন বিষয়। দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই।
জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মানবদেহের কিছু জেনেটিক উপাদান শূকরের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে বাস্তবতা হলো, এতে শূকরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রূপ নেয় না, শূকরেরই থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বের বড় অংশই স্বাভাবিক কারণেই স্বেচ্ছায় শূকরের অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনে আপত্তি জানাচ্ছে। তবে কারো জীবন ঝুঁকিতে থাকলে বাধ্য হয়ে স্বজনদের মত দেয়ার বিষয়টি একেবারেই আলাদা।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা গত মাসে সফল কিডনি প্রতিস্থাপনের ঘোষণা দেয়ার পরই মিসরের বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদরা বিষয়টির নিন্দা জানান। তাদের যুক্তি, শূকর ইসলামে নিষিদ্ধ।
১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে তখনকার ভারতীয় সৈনিকদের একাংশ বিদ্রোহ করেছিল। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন মূলত মুসলিম পদাতিক সেনারা। লি-এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজ দাঁত দিয়ে কাটতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তারা, কারণ কার্তুজগুলো সিল করা থাকত শূকরের চর্বি দিয়ে।
এমনকি মুসলিম মা-বাবাদের আপত্তির কারণে শিশুদের জন্য নির্মিত পেপ্পা পিগ কার্টুনকে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল তুমুল বিতর্ক।
মুসলিমদের স্বাস্থ্য বৈষম্য ও ইসলামিক জৈবনীতিশাস্ত্র বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ড. আসিম পাদেলা বলেন, ‘পবিত্র কোরআনে যে শূকরকে অপবিত্র বলা হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিতর্কের বিষয় হচ্ছে, কখন এটি নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু ইসলামে সবচেয়ে আগে এটি নিষিদ্ধ।
‘এটা অনেকটা ওয়াইনের মতো। অনাহারে মরতে বসার অবস্থা থাকলে তখন সামনে মদ থাকলে তা পান করে প্রাণ বাঁচানোর অনুমতি আছে, কিন্তু এটা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি।’
ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি কোনগুলো, তা নিয়েও ইসলামিক বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। কারণ, শূকরের দেহ থেকে সংগৃহীত উপাদানে তৈরি পণ্য ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে অনুমোদিত বলে অনেকে মনে করেন।
মিসরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা দার আল-ইফতা আল-মিসিরিয়াহ একটি ডিক্রি জারি করে বলেছে, শূকরের হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভ রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হলে মানবদেহে প্রতিস্থাপন ইসলামের বিধিবহির্ভূত নয়। শূকরের মৌলিক উপাদানগুলো বদলে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত রূপান্তরের পর এর ভাল্ভ মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইসলামে নিষিদ্ধ ওয়াইনকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শরিয়তসম্মত ভিনেগার তৈরির উদাহরণ দেয়া হয়েছে ডিক্রিতে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের দায় কতটা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন গবেষণায় অঙ্গদাতা প্রাণী হিসেবে শূকর প্রাধান্য পাওয়ার কারণ পশ্চিমা বিশ্বে শূকরের মাংস খাওয়ায় কোনো বিধিনিষেধ নেই।
হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির ঘালি বলেন, ‘যদি আমি ইহুদি বা মুসলিম না হই, সে ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় শূকর ব্যবহার না করার কি কোনো কারণ আছে?
‘যদি এই বিজ্ঞানের জন্ম ইসলামি সভ্যতার স্বর্ণযুগে হতো এবং বিকাশ ঘটত, তাহলে শূকর নয়, অন্য কোনো প্রাণীই অগ্রাধিকার পেত।’
মুসলিম দেশগুলো নিজেদের জাতীয় বাজেটের খুব ক্ষুদ্র অংশ গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যবহার করে। এমনকি ধনী পশ্চিমা দেশগুলোর সমান মাথাপিছু আয় যেসব মুসলিম দেশের, তাদের ক্ষেত্রেও বাস্তবতা একই।
পাদেলার মতে, খুব প্রয়োজন হলেও শূকরের মাধ্যমে সংগৃহীত কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাত করা ছাড়া ব্যবহার একজন আদর্শ মুসলিমের কাজ নয়।
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে মুসলিম বিশ্ব ও মুসলিম শিক্ষাবিদরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, আমরা বিনিয়োগ করছি না বলেই আমাদের হালাল গবেষণা বা শরিয়তসম্মত উন্নয়নকাঠামো নেই।’
আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতির উদ্ভাবকরাও অনেক সময় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিশ্বাস বিবেচনায় নেন এবং নিজেদের উদ্ভাবনে তার ছাপও রাখেন।
উদাহরণ হিসেবে পাদেলা ‘জিহোভাহ’র উইটনেসেস’ নামের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের একটি গোত্রের কথা তুলে ধরেন। কয়েক লাখ অনুসারীর এই গোত্রটিতে ধর্মীয় কারণে রক্তদান নিষিদ্ধ। এ কারণে তাদের জন্য পুরোপুরি রক্তবিহীন পূর্ণাঙ্গ অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে পাদেলা বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আমরা খরচ করি নতুন ভবন তৈরির পেছনে। অথচ আমাদের দরকার বিশাল এক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। নিজেদের মূল্যবোধের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেন এই কাজটি আমরা করি না?’
আরও পড়ুন:ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।
স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।
আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।
তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স তাদের নতুন স্মার্টফোন লাইনআপে যুক্ত করেছে যুগান্তকারী নতুন ফিচার ‘ম্যাগচার্জ’।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার এফ-ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক আয়োজনে নতুন নোট ৪০ সিরিজ উদ্বোধন করে করে ব্র্যান্ডটি। সেই আয়োজনেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং ফিচারের যাত্রা শুরুর কথা জানায় ইনফিনিক্স।
ম্যাগচার্জের মতো চার্জিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে এই প্রথম। এ প্রযুক্তি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করছে ইনফিনিক্স।
ম্যাগনেটিক চার্জিংয়ের সুবিধাজনক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নোট ৪০ সিরিজের সঙ্গে আছে ইনফিনিক্সের ম্যাগকিট। এ কিটে ফোনের ব্যাককাভার হিসেবে দেয়া হয়েছে ম্যাগকেস। এর সঙ্গে আরও আছে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্যাড ম্যাগপ্যাড এবং ম্যাগনেটিক পাওয়ার ব্যাংক ম্যাগপাওয়ার।
ইনফিনিক্সের নতুন নোট ৪০ সিরিজের নোট ৪০, নোট ৪০ প্রো, নোট ৪০ প্রো ফাইভজি এবং অত্যাধুনিক নোট ৪০ প্রো+ ফাইভজি স্মার্টফোনগুলোতে পাওয়া যাবে ম্যাগচার্জ ফিচারটি।
এবারের সিরিজটিতে দেয়া হয়েছে ইনফিনিক্সের অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ ২.০ প্রযুক্তি, ১০০ ওয়াট পর্যন্ত মাল্টি-স্পিড ফাস্টচার্জ এবং ২০ ওয়াটের ওয়্যারলেস ম্যাগচার্জ। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চার্জিং মোড ব্যবহার করতে একটি কাস্টম চিপ দেয়া হয়েছে এ সিরিজের ফোনগুলোতে।
উন্নত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতার জন্য নোট ৪০ সিরিজে আছে ১২০ হার্টজের প্রাণবন্ত থ্রিডি-কার্ভড অ্যামোলেড ডিসপ্লে। প্রধান ক্যামেরা হিসেবে সিরিজটিতে আছে ওআইএস সাপোর্টসহ শক্তিশালী ১০৮ মেগাপিক্সেলের সুপার-জুম ক্যামেরা সিস্টেম। এ ছাড়াও ফোনের পেছনের অংশ থেকে বিশেষ ধরনের লাইটিংয়ের জন্য এতে যুক্ত করা হয়েছে অ্যাকটিভ হ্যালো লাইটিংয়ের মতো এআই প্রযুক্তি।
ইনফিনিক্সের নতুন এ স্মার্টফোন সিরিজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট ডিরেক্টর উইকি নিইয়ে বলেন, ‘ইনফিনিক্স নোট ৪০ সিরিজ বাজারে আনার মাধ্যমে চার্জিং প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। চার্জিংয়ের অভিজ্ঞতাকেই বদলে দেবে এই সিরিজ। ‘এ ছাড়াও আমাদের নিজস্ব চিপ চিতা এক্স১-এর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে অলরাউন্ড ফাস্টচার্জ। এখন এতে আছে মাল্টি-স্পিড চার্জিং এবং এক্সট্রিম টেম্পারেচার চার্জিংয়ের মতো ফিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনী ম্যাগচার্জ অ্যাক্সেসরি কিট ফোন ব্যবহারকারীদের দেবে নিরবচ্ছিন্ন চার্জিং ইকোসিস্টেম। এসব অগ্রগতির ফলে ব্যবহারকারীরা সারা দিন যেকোনো পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় পাওয়ারড-আপ থাকতে পারবেন।’
গত বছর অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ প্রযুক্তিসহ নোট ৩০ সিরিজ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে ইনফিনিক্স। সিরিজটিতে আছে ৬৮ ওয়াটের ওয়্যারড চার্জিং এবং ১৫ ওয়াটের ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাদার বোর্ডে সরাসরি চার্জ নেয়ার জন্য এতে আছে বাইপাস চার্জিং এবং আইফোন সেভার হিসেবে পরিচিত ওয়্যারলেস রিভার্স চার্জিং প্রযুক্তি।
চার্জিং, লুক ও পারফরম্যান্সে অভূতপূর্ব আপডেট নিয়ে এখন বাংলাদেশের বাজারে আসার অপেক্ষায় আছে নোট ৪০ সিরিজ। নতুন এ নোট সিরিজের জন্য শুরু হয়ে গেছে প্রি-বুকিংও।
আরও পড়ুন:প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবী পাল্টাচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমান সময়ে যেকোনো কাজ, শিক্ষা কিংবা বিনোদনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ল্যাপটপের ব্যবহার। আধুনিক জীবনের সব রকমের প্রয়োজন মেটাতে ক্রমাগত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এসব ডিভাইস।
ফলে যত বেশি কাজ, তাপও উৎপন্ন হচ্ছে সেই হারে। এই তাপ কমাতে সাধারণত পোর্টেবল কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। এভাবে বাহ্যিক তাপ কমানো গেলেও ল্যাপটপের ভেতরে আটকে পড়া তাপ নিয়ে চিন্তা থেকেই যায়।
তবে ল্যাপটপেই যদি একটি শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম থাকে, তাহলে বাহ্যিক কুলিং ফ্যানের আর প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছর ইনবুক সিরিজের এক্স২ ল্যাপটপ বাজারে আনে ইনফিনিক্স। এই ল্যাপটপের ভেতরে আছে আইস স্টর্ম ১.০ নামক কুলিং প্রযুক্তি। এটি ল্যাপটপে একটি আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্যে করে। আইস স্টর্ম কুলিং সিস্টেম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে মিলিটারি-গ্রেডের বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। গেমিংসহ অন্যান্য কাজ কিংবা বিনোদনের সময় যা নিঃশব্দে পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে।
ইনফিনিক্সের এই প্রযুক্তিটি ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেমের গুরুত্ব তুলে ধরে। ল্যাপটপ কিংবা এর ব্যবহারকারী, উভয়ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে কার্যকর কুলিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাজে আসে এবং এর মাধ্যমে কী কী সমস্যার সমাধান হয়?
পারফরম্যান্স
ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে প্রথম সমস্যা হয় এর পারফরম্যান্সে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ল্যাপটপের কাজের মান ও গতি কমে যায় এবং ল্যাগ সৃষ্টি হয়। একে থার্মাল থ্রটলিং বলে। কার্যকর কুলিং সিস্টেম দ্রুত এই তাপমাত্রা কমিয়ে এনে নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নত পারফরম্যান্সের লেভেল বজায় রাখতে পারে। ফলে মাল্টিটাস্কিং করা সহজ হয়, সফটওয়্যারগুলো দ্রুত কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাও ভালো হয়।
স্থায়িত্ব ও জীবনকাল
ল্যাপটপের সিপিউ ও জিপিউ’র মতো অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো বেশ তাপ সংবেদনশীল। সময়ের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এসব উপাদানের ক্ষতি হয়। এতে ডিভাইসের নির্ভরযোগ্যতা কমে যায় এবং জীবনকালও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। এক্ষেত্রে একটি ভালো কুলিং সিস্টেম দক্ষতার সঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অকালে হার্ডওয়্যার নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এমন সক্রিয় ব্যবস্থা ল্যাপটপের জীবনকাল বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের আর্থিক লোকসানও কমিয়ে আনে।
পরিবেশবান্ধব
তাপমাত্রা বেশি হলে ফ্যানকে আরও বেশি কাজ করতে হয়, ফলে আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। ল্যাপটপে সার্বক্ষণিক ফ্যানের ব্যবহার কমিয়ে কার্যকরভাবে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে উন্নত কুলিং সিস্টেম। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, বিদ্যুৎ বিল কমে আসে এবং পরিবেশের সুরক্ষা হয়।
স্বস্তি এবং স্বাস্থ্য
ডিভাইসের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ল্যাপটপ ব্যবহার করা খুবই অস্বস্তিকর। বিশেষভাবে, যখন কোলের উপর রেখে ব্যবহার করতে হয় তা অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় এভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, ফ্যান অতিরিক্ত শব্দ করলে তা ব্যবহারকারীর মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটায়। ল্যাপটপ ঠান্ডা রেখে নিঃশব্দে কার্যক্রম বজায় রাখার মাধ্যমে এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনে আইস স্টর্ম ১.০-এর মতো অত্যাধুনিক কুলিং সিস্টেমগুলো।
তাই ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম শুধু ডিভাইসের পারফরম্যান্স ও জীবনকালের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ব্যবহারকারীর স্বস্তি, সুস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্যও এটি জরুরি।
ইনফিনিক্সের ইনবুক সিরিজের এক্স২ এবং ওয়াই২ প্লাস ল্যাপটপ দেশজুড়ে রায়ানস, স্টারটেক ও দারাজের মতো অনুমোদিত রিটেইলারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। ১৪ থেকে ২০ মার্চ রায়ানস-এর ব্র্যান্ড উইক চলাকালীন ইনফিনিক্স ল্যাপটপ কিনলেই ক্রেতারা পাবেন একটি পাওয়ার ব্যাংক, একটি মাউস প্যাড এবং ১০০০ টাকার শপিং ভাউচার।
আরও পড়ুন:হঠাৎ করেই যেন রাতের অন্ধকার নেমে এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারীদের জীবনে। আচমকা বিভ্রাটে পড়ে ভীত হয়ে পড়েন অনেকে।
তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নন, বরং ক্ষতির মুখে পড়েছিল কর্তৃপক্ষ। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময়ও নিতে হয়েছে বেশ।
এমন অবস্থায় ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম বন্ধ থাকায় কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, তা নিয়ে সূত্রের বরাতে তথ্য দিয়েছে সংবাদ প্রতিদিন।
প্রতিবেদন বলছে, প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিভ্রাটে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মেটা। সবমিলিয়ে ৩ বিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে আচমকাই অকেজো হয়ে পড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইউজারদের অ্যাকাউন্ট নিজে থেকেই লগ আউট হয়ে যায়।
পরে অবশ্য এক্সে এসে মার্ক জাকারবার্গ জানান, সার্ভার ডাউন। সেই কারণেই কাজ করছে না মেটার দুই প্ল্যাটফর্ম। তবে দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।
এর পরই মাস্ককে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ইলন মাস্কও অবাক হয়ে যাবেন এই ভেবে যে এক্স হ্যান্ডেলে আচমকা এত ভিড় কেন?
পাল্টা জবাব দিয়েছেন এক্সের মালিক মাস্কও। তিনি লেখেন, এই প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের মেসেজ লেখা যাচ্ছে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। কারণ আমাদের সার্ভার খুব ভালো চলছে।
আরও পড়ুন:এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঠিক হয়েছে ফেসবুক। রাত দশটা ৩৫ মিনিটে লগইনের চেষ্টা করলে দেখা যায়, সচল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম বৃহৎ এ প্লাটফরমটি।
বিস্তারিত আসছে…
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক হঠাৎ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা কেউ ফেসবুকে লগইন করতে পারছেন না। এমনকি ফেসবুকে সক্রিয় থাকা আইডিগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর থেকে এ সমস্যার কথা জানাতে থাকেন ব্যবহারকারীরা।
প্রযুক্তি ওয়েবসাইট ডাউন ডিটেক্টরও ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যার কথা নিশ্চিত করেছে। এক্সের ট্রেন্ডিং ফিডেও ফেসবুক সার্ভার ডাউনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
ফেসবুকের পাশাপাশি মেটার আওতাধীন ইনস্টাগ্রাম ও মেসেঞ্জারও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ব্যবহারকারীরা জানান, হঠাৎ করেই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগ আউট হয়ে যায়। পরে তারা লগ ইন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পুরো বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কেউ ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে প্রবেশ করতে পারছে না। এই দুটি মাধ্যমের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস উভয়ই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
মেটা কিংবা ফেসবুক তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি।
টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে দেশের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ঘুরছিল ২০২৩ সাল থেকেই। এসব তথ্য কেনাবেচার কথাও শোনা গেছে। গ্রাহক-তথ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন একটি ভুয়া ব্যবসা শুরু করেছে একটি চক্র। এসব তথ্যের বিক্রি বাড়াতে সম্প্রতি দেশের প্রতিষ্ঠিত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নামও জুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুরুর দিকে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজটি করা হয়েছে বলে জানা গেলেও পরে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইট খুলেও ভুয়া তথ্যের এই জমজমাট ব্যবসা চলছে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের দেয়া বিজ্ঞাপনে বেশ কিছু নামি-দামি ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্য রয়েছে বলেও প্রচার চালাচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে তারা গ্রাহককে ধোঁকা দেয়ার এই ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বেহাত হওয়ার পর টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচার হওয়া নির্দিষ্ট একটি লিংকে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই তার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে আসছিল। একইভাবে এখানেও কিছু মানুষের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
তবে যে তথ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে তার সত্যতা নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এটাকে ভূঁইফোড় ব্যবসা বলেও আখ্যায়িত করছেন। বেশকিছু ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, মোবাইল নম্বর দিলে আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা নাম এমন কিছু তথ্য আসছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য যারা অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করছে এবং প্রলোভনে পড়ে যারা কিনছে তারা উভয়েই সমান অপরাধী। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় উভয়েরই জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
‘কাজেই যারা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে এলে শাস্তির সম্মুখীন হবেন। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো এমন তথ্য কিনে কখনোই টাকা পাওয়ার কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’
সূত্র বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগ থেকে ‘লাখ লাখ’ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তার দুই থেকে তিন মাস পর স্মার্ট কার্ডের তথ্য বেহাতের তথ্য সামনে আসে। এখন এসব তথ্যকেই নতুন মোড়কে মোবাইল ব্যাংকিং এবং প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহক তথ্য হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।
তবে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, একেক গ্রুপে একেক রকম তথ্য আসছে। কোথাও গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর আছে বলে বলা হচ্ছে। আবার কোথাও মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মতারিখের উল্লেখ থাকছে। কোথাও কোথাও ছবি থাকার দাবিও করা হচ্ছে।
দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্টাগ্রাম লিমিটেড যারা ইথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান শাহরিয়ার দিচ্ছেন ভয়াবহ তথ্য। তিনি বলেন, ‘মূলত প্রলোভনে পড়েই অনেকে এমন তথ্য কিনে থাকেন। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের একটি যৌথ এনালাইসিসে দেখা যায়- যারা তথ্য চুরি করেছে, তারা তথ্য বিক্রির সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের তথ্যও সংরক্ষণ করে রাখে।
‘যেহেতু ক্রয়কারীর তথ্য ওরা সংরক্ষণ করছে, ফলে ভবিষ্যতে গ্রাহক হ্যাকিং, ব্ল্যাক মেইলসহ নানা জটিলতার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তখন কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে তারা বলতেও পারবেন না কেন এবং কী কারণে তিনি অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।’
তবে গ্রাহকদের তথ্য এভাবে অবাধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানোর দাবি করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের নাস্থা তৈরি হওয়া বা অহেতুক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই প্রচারণা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিতেও এসেছে। তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমরা প্রতিনিয়তই তথ্যগত নানা অপপ্রচারের শিকার হই। এবারকার বিষয়ও আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা এটি অবহিত করেছি।’
বর্তমানে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও ছবি লাগে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে তথ্য ঘুরছে বলে বলা হচ্ছে এসব তথ্য সত্য হলেও এ দিয়ে কিছুই করা যাবে না বলেও মনে করিয়ে দেন ওই প্রযুক্তিবিদ।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ থেকে তথ্য বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার খবরে এমনিতেই মানুষ এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এখন তাদেরকে বিভ্রান্ত করাটা আগের চেয়ে সহজ। ফলে সত্য-মিথ্যা নানা কথা বলে সুযোগ সন্ধানী কেউ কেউ ব্যবসা করে থাকতে পারে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজে ১২ কোটির মতো মানুষের তথ্য রয়েছে।
মন্তব্য