এক পাশে একটি সাইকেলের দোকান, অন্যপাশে একটি কফি হাউস। এর মাঝখানে থাকা একটি দোকানে ভিড় জমিয়েছে বেশ কিছু মানুষ। পশ্চিম লন্ডনের এই মানুষগুলোকে দুর্ভাগ্যবান বললেও ভুল হবে না। কারণ তারা জড়ো হয়েছেন বিনামূল্যের খাবার খেতে।
বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করা ওই দোকানটির নাম- ডেড’স হাউস। খাঁটি বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘বাবার হোটেল’। বাবার হোটেলের মত এখানেও খাবার খেতে কোনো পয়সা লাগে না।
পাশ্চাত্যে এ ধরনের ব্যবস্থাকে বলা হয়- ফুড ব্যাংক। যুক্তরাজ্যজুড়ে প্রায় ২২০০ ফুড ব্যাংক এখন চালু রয়েছে। ডেড’স হাউস তাদেরই একটি।
ডেড’স হাউসের প্রতিষ্ঠাতা বিলি ম্যাকগ্রানাঘান। সম্প্রতি তার ফুড ব্যাংকে হাজির হয়েছিল সিএনএন বিজনেসের একটি দল।
দোকানে আসা মানুষদের সম্পর্কে সিএনএনকে বিলি বলেন- ‘তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার।’
লন্ডনের ফুড ব্যাংকগুলোতে জরুরি খাদ্য সহায়তা চাওয়া মানুষের ভিড় মহামারির আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল। এর ওপর এবার মহামারির দ্বিতীয় শীতকাল পাড়ি দিতে চলেছে এই শহর। ইতোমধ্যেই মহামারির প্রভাব পড়েছে বাজারে। বেড়ে গেছে খাবারের দাম। জ্বালানির খরচও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যেই আবার বন্ধ হয়ে গেছে মহামারিকালীন সরকারি সুযোগ সুবিধাও। তাই সংসার চালাতে অসংখ্য পরিবারের বাজেট এখন ফেইল করছে। ফলশ্রুতিতে বিনামূল্যের খাবারের জন্য এখন লাইন বাড়ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই লন্ডনের ফুড ব্যাংকগুলোতে অনাহারী মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো টুকি-টাকি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখন এসব ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
ডেড’স হাউসের প্রতিষ্ঠাতা বিলি ম্যাকগ্রানাঘান জানান, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে তার ফুড ব্যাংকে নতুন করে আরও ৭০ জন সাহায্যপ্রার্থী যুক্ত হয়েছেন। সপ্তাহে প্রায় চার শতাধিক মানুষকে এখন তার ফুড ব্যাংক থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন মানুষ যুক্ত হওয়ার এই প্রবণতা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিলির মতে, তার দোকানে আসা মানুষদের খালি চোখে দেখলে মনেই হবে না যে তারা এতটা অভাবী হয়ে পড়েছেন। তাদের এমন অবস্থা অবশ্য এর আগে কখনও ছিল না।
মহামারির সময় ডেড’স হাউস থেকে সাধারণত শিক্ষক, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা করা হতো। স্থানীয় প্রশাসনের রেফারেন্স কিংবা অনলাইনে যারা সাহায্য প্রর্থনা করেছিলেন তাদেরকেই সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু এখন এই ফুড ব্যাংকে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং নিঃসঙ্গ মানুষের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এমন অভাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে গ্যাস, বিদ্যুৎ তথা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করেছেন বিলি।
ডেড’স হাউস থেকে যারা নিয়মিত সহযোগিতা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে ৬৩ বছর বয়স্ক ম্যারি একজন। নিজের পদবি প্রকাশে অনিচ্ছুক ম্যারি জানান, চার মাস ধরে তিনি ডেড’স হাউসের জরুরি সহযোগিতা নিচ্ছেন। কিন্তু এখন আসন্ন ত্রৈমাসিক জ্বালানি বিল নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। তার স্বামীর রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা রয়েছে। তাই জ্বালানি ব্যবহার করে ঘরকে সবসময় গরম রাখতে হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব বেশি খাইনা। বলা যায়- বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই। কিন্তু দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়েছে জ্বালানির দাম, যা কমছেই না, কমছেই না…।’
ডেড’স হাউস থেকে প্রায় সাত মাইল পূবে গিয়ে আরও একটি ফুডব্যাংকের সন্ধান পায় সিএনএন বিজনেস টিম। সেই সন্ধ্যায় প্রায় ১০০ জন মানুষের জন্য মিস্টি কুমড়োর গরম স্যুপের আয়োজন করেছিল ব্যাংকটি। এটির প্রতিষ্ঠাতা ৪২ বছর বয়স্ক রবার্ট হানিঙ্ঘার। হামডিঞ্জারস নামে তার একটি খাবারের দোকান রয়েছে। এই দোকানেরই আরেকটি অংশ হলো- হামডিঞ্জারস ফুড ব্যাংক। গত বছর চালু করা এই ব্যাংক থেকে লকডাউনের দিনগুলোতে প্রায় সহস্রাধিক মানুষকে জরুরি খাদ্য সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।
রবার্ট জানান, তার ফুড ব্যাংকে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে বিনামূল্যে খেতে আসা মানুষের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এদের মধ্যে তরুণ কর্মজীবী মানুষ যেমন আছেন, তেমনি আছেন স্কুলশিক্ষক, এমনকি টেনিস খেলোয়াড়ও।
রবার্ট বলেন, ‘চাকরিজীবীরাও এখানে আসছেন। কারণ তারা জীবন-যাত্রার ব্যায় বহন করতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। দাম বেড়ে যাওয়ায় সবকিছুই এখন তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।’
যুক্তরাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ ফুড ব্যাংকে মুদি পণ্য সরবরাহ করা ট্রাসেল ট্রাস্টের নীতি ও গবেষণা পরিচালক গ্যারি লেমন জানান, তাদের কর্মীরা এখন জরুরি খাদ্য সহযোগিতা নিতে আসা মানুষদের পেছনে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ক্রিসমাসকে সামনে রেখে সামনের সপ্তাহগুলোতেও তারা এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চান।
সিএনএন বিজনেসের প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাজ্যের মানুষের এমন পরিণতির জন্য জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কথাই বলা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে সেখানে গ্যাসের পাইকারি মূল্য ৪২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। জ্বালানির এই দাম বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি কারণকেই এখন দায়ী করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি কারণ হলো- এশিয়ার দেশগুলোতে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি এবং অন্য আরেকটি কারণ হলো- প্রত্যাশা অনুযায়ী রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানি না করা।
এর ফলে যুক্তরাজ্যের শক্তি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানির দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম দিনই বেশিরভাগ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রতি ইউনিট জ্বালানির দাম ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে, যা প্রায় দেড় কোটি মানুষের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
খাদ্য ও জ্বালানিমূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রভাব যাদের ওপর গুরুতরভাবে পড়েছে, ডেড’স হাউসে উপস্থিত হওয়া ৪৯ বছর বয়সী জেমসন কেয়ান তাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিজের মায়ের দেখ-ভাল করতে হয় এই আর্টিস্টকে। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ডেড’স হাউস থেকে তিনি নিয়মিত খাদ্য সহায়তা নিচ্ছেন।
জেমসন বলেন, ‘আমার বাজেট সপ্তাহে ১০০ পাউন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজকাল এই অর্থ যেন নিমেষেই খরচ হয়ে যাচ্ছে।’
জেমসন জানান, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন তার জ্বালানি খরচ বেশি। যদিও আগে যতটুকু জ্বালানি ব্যবহার করতেন, এখনও ঠিক ততটুকুই করছেন।
তার ধারণা, জ্বালানি বাবদ তার যত টাকা খরচ হয়, গত দুই সপ্তাহে সেই খরচ এক তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে, গ্যাসের দাম।
জ্বালানির উচ্চমূল্য পুরো ইউরোপজুড়েই দেখা যায়। কিন্তু সঞ্চিত গ্যাস না থাকায় যুক্তরাজ্যে এই বাজারটি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। তাই আসন্ন শীতে যুক্তরাজ্যের মানুষ খাবে নাকি নিজেকে গরম রাখবে তা নিয়েই এখন সংশয়ে আছে।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলি সৈন্যরা অভিযান চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা গাজার দুটি প্রধান হাসপাতালে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। সেসব গণকবরের স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্বস্ত তদন্তকারীদের অবশ্যই স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। গাজার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্য আরও সাংবাদিকদের নিরাপদে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ‘গাজা শহরের আল শিফা মেডিক্যাল সেন্টার ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল ধ্বংস এবং ইসরায়েলিরা চলে যাওয়ার পর ওইসব স্থাপনার আশপাশে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে আমি আতঙ্কিত।’
এই হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দায়মুক্তির বিদ্যমান পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে এতে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
ভলকার তুর্ক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে হাসপাতালগুলো বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী। আর যুদ্ধে অংশ নিতে অক্ষম এমন বেসামরিক নাগরিক, বন্দি ও অন্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ।’
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল হাসপাতালগুলোতে গণকবরের খবরকে অবিশ্বাস্যভাবে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইসরায়েলি সরকারের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ থামাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে প্রশাসন।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে (এনওয়াইইউ) বিক্ষোভকারীদের একটি ক্যাম্প ভাঙতে সোমবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিনের শুরুতে ইয়েল থেকে বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সশরীরে ক্লাস বাতিল করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
গাজার শাসক দল হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালানোর পর সাঁড়াশি হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সেই থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভ ও উত্তপ্ত বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বেড়েই চলেছে।
উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরাই বলছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি-বিদ্বেষ ও ইসলাম-বিদ্বেষ উভয় ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডেকে এনে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করার পর এই বিক্ষোভ-আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
এরপর থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। এনওয়াইইউ এবং ইয়েল ছাড়াও বার্কলের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি), ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান, এমারসন কলেজ এবং টাফ্টসে ক্যাম্প স্থাপন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা-হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।
অন্যান্য বিক্ষোভকারীর মতো এনওয়াইইউ-এর বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে ইসরায়েলি দখলদারত্বে আগ্রহী অস্ত্র প্রস্তুতকারক এবং সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আর্থিক অনুদান না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আলেহান্দ্রো তানন নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে। এই বিক্ষোভ ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিক্ষোভের সঙ্গে তুলনীয়।’
এক বিক্ষোভকারী সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্যালেস্টাইনের পাশে আছি এবং সব মানুষের মুক্তির পক্ষে।’
এনওয়াইইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিজনেস স্কুলের বাইরে মূল ক্যাম্পে ৫০ জন ছিল। তারা এই বিক্ষোভকে অননুমোদিত বলে বর্ণনা করে বলেছে, এর ফলে ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার শুরু করে। তবে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে কানেক্টিকাটের নিউ হ্যাভেনের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল। তাদের অনেকেই বিক্ষোভস্থল থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানিমূলক আচরণের উল্লেখ করে ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। সেখানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:ইরানের মাটিতে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, আরেকবার ‘ভুল’ করলে তেহরানের জবাব হবে বিপর্যয়কর।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটি লাহোরে (জিসিইউএল) মঙ্গলবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সংস্কৃতি ও শিক্ষাঙ্গনের প্রভাবশালীদের সঙ্গে বৈঠকে রাইসি এ বার্তা দেন বলে জানায় প্রেস টিভি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, বক্তব্যে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে সম্প্রতি ইসরায়েলের মাটিতে তেহরানের আক্রমণের বিষয়টি তুলে ধরেন রাইসি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দামেস্কে ইসরায়েলের হামলাটি ছিল সব আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের বিরোধী। এ কারণে ইসরায়েলকে শাস্তি দিয়েছে ইরান।
ইসরায়েলকে ফের ভুল না করার বিষয়ে সতর্ক করে রাইসি বলেন, ‘জায়নবাদী সরকার যদি আরেকবার ভুল করে ইরানের মাটিতে আগ্রাসন চালায়, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে এবং এই শাসনব্যবস্থার কতটা অবশিষ্ট থাকবে, তা পরিষ্কার নয়।’
গত ১৩ এপ্রিল ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামে অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েক শ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ কাজে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র রাষ্ট্রগুলো।
আরও পড়ুন:ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা সরকারের জন্য বেকারত্ব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বার্তা সংস্থাটি অর্থনীতিবিদদের ওপর চালানো জরিপের ফল বুধবার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরে।
জরিপে অংশ নেয়া অর্থনীতিবিদদের আশা, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বড় অর্থনীতিগুলোর তুলনায় দ্রুততম গতিতে ভারতের প্রবৃদ্ধি হলেও বিপুল ও ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি।
গত ১৬ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ২৬ জন অর্থনীতিবিদের ওপর জরিপ চালায় রয়টার্স, যাদের মধ্যে ১৫ জনই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের জন্য বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব।
অন্যদিকে আট অর্থনীতিবিদ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটির গ্রামাঞ্চলে ভোগকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। অন্যদিকে দুজন অর্থনীতিবদ মূল্যস্ফীতি এবং একজন দারিদ্র্যকে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দল বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল। চলতি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারে দলটি।
বিজেপির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্বের হার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের একর শহরের উত্তরে দেশটির ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের এত ভেতরে এটিই হিজবুল্লাহর প্রথম হামলা।
হিজবুল্লাহ মঙ্গলবার বিবৃতিতে জানায়, ফাঁদ সৃষ্টিকারী ও বিস্ফোরক ড্রোন দিয়ে আকাশপথ থেকে সমন্বিত হামলা চালানো হয়েছে, যার লক্ষ্যবস্তু ছিল একর ও নাহারিয়ার মধ্যবর্তী ইসরায়েলের দুটি ঘাঁটি।
ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটির ভাষ্য, ইসরায়েলি হামলায় তাদের এক যোদ্ধা নিহত হওয়ার বদলা হিসেবে ইসরায়েলে হামলাটি চালানো হয়।
হামলার একটি ছবি প্রকাশ করেছে হিজবুল্লাহ, যেটি দৃশ্যত স্যাটেলাইট চিত্র। এতে হামলাস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে লাল দাগ দিয়ে।
হিজবুল্লাহর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়, তাদের কোনো স্থাপনায় হিজবুল্লাহর হামলার বিষয়ে তথ্য নেই।
এর আগে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলের কাছে ‘আকাশপথে আসা দুটি লক্ষ্য’ প্রতিহত করা হয়েছে।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ জানায়, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হানিনে আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত ও ছয়জন আহত হন।
আরও পড়ুন:মালয়েশিয়ায় একটি সামরিক মহড়ার সময় মাঝ আকাশে নৌবাহিনীর দুটি উড়োজাহাজের সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলভার সাড়ে ৯টার দিকে মালয়েশিয়ার লুমু শহরে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, রয়্যাল মালয়েশিয়ান নৌবাহিনীর কুচকাওয়াজের জন্য একটি সামরিক মহড়া চলাকালীন মাঝ আকাশে নৌবাহিনীর ওই দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষ হয়। পরে বিধ্বস্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যায় বাহন দুটি। কেউই বেঁচে নেই।
নানা মাধ্যমে এর ফুটেজও প্রকাশিত হয়েছে।
রয়্যাল মালয়েশিয়ান নৌবাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই ১০ জনকে মৃত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। লুমুত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে মরদেহ শনাক্তের জন্য। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
যে দুটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে এর মধ্যে একটি হলো এইচওএম এম৫০৩-৩। এতে সাতজন আলোরী ছিলেন। চলমান ট্র্যাকে বিধ্বস্ত হয়েছে এই উড়োজাহাজটি। অন্যটি ফেনেক এম৫০২-৬। এতে ছিলেন তিনজন আরোহী। এটি বিধ্বস্ত হয় কাছাকাছি একটি সুইমিং পুলে।
রাজ্যের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার বিষয়য়ে সতর্ক করা হয়েছিল।
এর আগে গত মার্চ মাসে একটি মালয়েশিয়ান কোস্ট গার্ড উড়োজাহাজ প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সময় মালয়েশিয়ার আংসা দ্বীপের কাছে সাগরে বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনার পর পাইলট, কো-পাইলট এবং এতে থাকা দুই যাত্রীকে জেলেরা উদ্ধার করেন।
এক রাতে ৮০ বারেরও বেশি ভূমিকম্পে দফায় দফায় কেঁপে উঠল তাইওয়ান। স্থানীয় সময় সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এসব কম্পন অনুভূত হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্পের উৎপত্তি পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েনে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশিমক ৩।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া প্রশাসনের বরাত দিয়ে বাসস জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে প্রথম যে ভূমিকম্প আঘাত হানে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশিমক ৫। রাজধানী তাইপেতেও এ কম্পন অনুভূত হয়। এরপর দফায় দফায় কম্পন অনুভূত হতে থাকে। বিশেষ করে মঙ্গলবার সকালে আঘাত হানা দুটি ভূমিকম্প ছিল তীব্র।
রিখটার স্কেলে প্রথমটির তীব্রতা ছিল ৬.০ এবং দ্বিতীয়টির ৬.৩।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল। এতে অন্তত ১৭ জন মারা গেছে। অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তীব্র এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল হুয়ালিয়েন শহরের ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে।
তাইওয়ানে গত ২৫ বছরের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর আগে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প তাইওয়ানে আঘাত আনে। তাতে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায়।
এদিকে নতুন এ ভূমিকম্পের পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ঘটনাস্থলে অগ্নিনির্বাপক দলকে পাঠানো হয়েছে।
কেউ হতাহত হয়নি বলে তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বলে তাইওয়ানে ঘন ঘন ভূমিকম্প আঘাত হানে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য