ইয়েমেনের কৌশলগত শহর মারিবের কাছে বিমান হামলায় ৯৫ হুতি বিদ্রোহী প্রাণ হারিয়েছে বলে দাবি করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট সমর্থিত ইয়েমেন সরকার।
মারিব শহরের দক্ষিণে আল-জাওবা ও উত্তর-পশ্চিমে আল-কাসারা জেলায় বৃহস্পতিবার ওই বিমান হামলা হয়।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১১ অক্টোবর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারিব শহরাঞ্চলে বিমান হামলায় প্রায় দুই হাজার হুতি বিদ্রোহীর মৃত্যু হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, হতাহতের বিষয়ে খুব কমই মন্তব্য করতে রাজি হয় ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা।
আর নিহতের সংখ্যা নিয়ে সৌদি জোট-সমর্থিত ইয়েমেন সরকারের দাবি যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি।
ইয়েমেন সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, মারিবের কাছে দুটি জেলায় হুতিদের লক্ষ্য করে ২২টি অভিযান চালায় সৌদি জোট। অভিযানে ৯৫ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত ও ১১টি সামরিক যান ধ্বংস করা হয়।
ইয়েমেনের মারিব প্রদেশের রাজধানী মারিব তেলসমৃদ্ধ একটি এলাকা। দেশটির উত্তরাঞ্চলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের শেষ দুর্গ এই রাজধানী শহর।
এদিকে লেবাননভিত্তিক পত্রিকা আল-আকবর জানিয়েছে, মারিব শহর ঘিরে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার দাবি করেছে হুতিরা।
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়া হুতি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ নাসের আল-আতেফি বলেন, ‘আমাদের বাহিনী মারিবের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। যেকোনো মুহূর্তে পুরো মারিব আমাদের দখলে চলে আসবে।’
২০১৪ সালে মারিব থেকে ১২০ কিলোমিটার পশ্চিমে ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে হুতি বিদ্রোহীরা। এরপরই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরের বছর ইয়েমেন সরকারকে সামরিক ও নৈতিক সমর্থন দেয় সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী।
ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ হাজারের বেশি মানুষ বেসামরিক। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হয় কয়েক লাখ ইয়েমেনি।
আরও পড়ুন:লেবাননের ভূখণ্ডে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ২৬১ জন নারী ও ১২৭টি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আল-জাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৫১। এ নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতেও রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলোতে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে ইসরায়েলি হামলার মুখে লেবাননে ১২ লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। অব্যাহত বিমান হামলার মুখে রাজধানী বৈরুতের হাজারও বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ গত বছর থেকে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গোষ্ঠীটির ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাত ইসরায়েলও। তবে সম্প্রতি হিজবুল্লাহর ওপর হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল বাহিনী। গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর লেবাননজুড়ে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েল।
বিবিসি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজারে একযোগে বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। ওই বিস্ফোরণে নিহত কয়েকজনের জানাজার সময়ও সেখানে কিছু বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগের নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণে নিহত হয় ২০ জন। আহত হয় ৪৫০ জনের বেশি।
এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করল হিজবুল্লাহ
লেবাননের সীমান্ত গ্রাম আদাইসেহতে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ বাহিনী। মধ্যরাতে আদাইসেহ নামের ওই গ্রামে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
লেবাননে প্রবেশ করতে গত তিন-চারদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলের সেনারা। তারা শুক্রবার রাতে আদাইসেহ নামের ওই সীমান্তবর্তী গ্রাম দিয়ে আবারও প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এতে আদাইসেহ গ্রামে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই হয়। ওই সময় ইসরায়েলি সেনারা পিছু হটে।
আদাইসেহ গ্রামের লড়াই নিয়ে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। তবে এ ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি।
আরও পড়ুন:ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টা হিসেবে ইরানে পরমাণু স্থাপনায় কোনো ধরনের হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের প্রতি সাড়া দিয়ে পাল্টা আঘাত না হানার কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি ইসরায়েল। এ অবস্থায় পরমাণু শক্তিধর হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা ইরানে যেকোনো সময় ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তার বরাতে এমন তথ্য দিয়েছে সিএনএন।
ধারণা করা হচ্ছে ৭ অক্টোবর (সোমবার) হামাসের হামলার বর্ষপূর্তির দিনে তেহরানে আঘাত হানতে পারে তেল আবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডিফেন্স সেক্রেটারি মার্ক এসপার বলছেন, ইরানের শাসক গোষ্ঠীর পতন চাইলে রাজধানী তেহরানে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কার্যালয় টার্গেট করবে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ)। অন্যথায় দেশটির সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাবে ইসরায়েল।
ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে- দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ করে আসছে পশ্চিমারা। এবার ফক্স নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেললগ বলেছেন, ‘তেহরান পরমাণু শক্তিধর হতে মাত্র ৪০ থেকে ৪৮ ঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে।’
সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেসের সাবেক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস জানান, ইরানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে তার দেশ। কারণ তাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে যে ১৫টি বোমা বানানোর মতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে ফেলেছে ইরান। তাই যে কোনো সময় পাল্টা হামলা হতে পারে।
এদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তদন্ত ব্যুরো-এফবিআই ও ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক বার্তা দিয়েছে বলেছে, ‘আগামী সোমবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে বিদেশি সন্ত্রাসীরা। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনালয়গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।’
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতা ঘিরে ওই অঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে পেন্টাগন। ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলে রণতরি এবং ডেস্ট্রয়ার পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতের মহারাষ্ট্রে সচিবালয় ভবন থেকে লাফ দিয়েছেন রাজ্যটির ডেপুটি স্পিকারসহ তিনজন সংসদ সদস্য। শুক্রবার দুপুরের দিকে ভবনটির তিনতলা থেকে তারা লাফ দেন। তবে ভবনের নিচে জাল থাকায় তারা রক্ষা পেয়েছেন।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মহারাষ্ট্র রাজ্যের ধাঙড় গোষ্ঠীকে তফসিলি জনজাতির (এসটি) অন্তর্ভুক্ত করার দাবির প্রতিবাদে ডেপুটি স্পিকার নরহরি জিরওয়াল এবং অন্য তিনজন আদিবাসী সংসদ সদস্য সচিবালয়ের তিনতলা থেকে ঝাঁপ দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ভবনটির নিচে থাকা জালের ওপর তারা। কারও তেমন কোনো আঘাত লাগেনি। তাদেরকে নিরাপদে জাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সচিবালয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধের চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে এই জাল স্থাপন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনজন এমপি জাল থেকে নেমে আবার সচিবালয় ভবনে উঠছেন। চলতি বছরের শেষে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এমন ঘটনা মহারাষ্ট্রে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পশ্চিম মহারাষ্ট্র ও মরাঠাওয়াড়া অঞ্চলে ধাঙড় জনগোষ্ঠীর বসবাস। কয়েক বছর ধরেই তারা ভারত সরকারের কাছে জনজাতির স্বীকৃতি চেয়ে আন্দোলন করে আসছে। গত মাসেই ধাঙড় গোষ্ঠীর এক নেতা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে তাদেরও শিন্ডেকে প্রয়োজন নেই।
মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার ও দেবেন্দ্র ফড়নবিশসহ মন্ত্রিসভার অন্য কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার তফসিলি জনজাতি (এসটি) বিষয়ে বৈঠক করেন। এ সময় কয়েকজন আদিবাসী এমপি সচিবালয় কমপ্লেক্সে বিক্ষোভ করেন। ধাঙড় জনগোষ্ঠী বর্তমানে অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) বিভাগে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা এসটি বিভাগে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ৭৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে ৯৬ হাজার ৭৯৪ জন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় ৯৯ জন নিহত ও ১৬৯ জন আহত হয়।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বৃহস্পতিবার বলেন, গত দুই দিনে গাজায় তিনটি ইউএনআরডব্লিউএ স্কুল আক্রান্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ২১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলগুলোতে ২০ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু স্কুলে একাধিকবার হামলা হয়েছে।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ১৪০টিরও বেশি ইউএনআরডব্লিউএ স্কুল হামলার শিকার হয়েছে বলে জানান তিনি।
লাজারিনি আরও বলেন, আগে স্কুলগুলো ছিল শিক্ষার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এখন তা অনেকের জন্য নরকে পরিণত হয়েছে।
স্কুলকে কেউ সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না। স্কুলগুলো কোনো টার্গেট নয়। এ বিষয়টি যুদ্ধের মৌলিক নিয়ম যা স্পষ্টভাবে এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে।
দক্ষিণ ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা চালায় হামাস। ওই সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করে নেয়া হয় ২৫০ জনের মতো ইসরায়েলি।
ওই হামলার জবাবে গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে বড় আকারের অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শাসক গোষ্ঠী হামাস সরকারের প্রধান রাহী মুস্তাহাসহ আরও দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে হত্যার দাবি করেছে দখলদার ইসরায়েল।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গাজায় হামাস সরকারের প্রধান রাহী মুস্তাহা এবং হামাস কর্মকর্তা সামেহ আল-সিরাজ ও সামি ওদেহকে লক্ষ্য করে তিন মাস আগে হামলা চালানো হয়। এখন তারা নিশ্চিত হয়েছে যে ওই হামলায় উল্লিখিত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যম টাইমস অফ ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
আইডিএফ জানায়, যখন হামলা চালানো হয় তখন এই তিনজন গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি সুড়ঙ্গে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি বাহিনী আরও দাবি করেছে, যে সুড়ঙ্গে গাজার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেটিতে অনেক সুযোগ-সুবিধা ছিল এবং দীর্ঘদিন অবস্থান করার মতো রসদ সেখানে মজুদ রাখা ছিল।
হামাসের যোদ্ধাদের যেন মনোবল না ভাঙে সেজন্য এতদিন হামাস এই তথ্য গোপন রেখেছিল বলেও দাবি করেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শাসক গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় গত বছরের ৭ অক্টোবর। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েল। এর মধ্যে হামাসের যোদ্ধা, কর্মকর্তা ছাড়াও নারী-শিশুসহ হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।
যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েল জানিয়েছিল, গাজা থেকে হামাসকে তারা পুরোপুরি নির্মূল করে দেবে। তবে এখন পর্যন্ত দখলদার ইসরায়েল তাদের সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। দখলদার রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে আজও পূর্ণোদ্যমে লড়ে যাচ্ছে হামাস।
আরও পড়ুন:লেবাননের রাজধানী বৈরুতের প্রাণকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে বছর ধরে চলা সংঘাতে ইসরায়েলি সেনারা সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হওয়ার পর ওই হামলা চালায় তেল আবিব।
ইসরায়েলের ভাষ্য, বৈরুতে নিখুঁত বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটি।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, তারা বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
অন্যদিকে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানায়, মধ্যাঞ্চলীয় বাশুরা এলাকায় লেবাননের পার্লামেন্টের কাছে একটি ভবনকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। লেবাননের প্রাণকেন্দ্রের এত গভীরে গত এক বছরে এটিই দেশটির প্রথম হামলা।
দক্ষিণ ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার শাসক দল হামাসের হামলার পর একই দিন ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে পাল্টা হামলা শুরু করে তেল আবিব।
প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় সাড়ে ৪১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। হামাসের ওই হামলায় নিহত হয় এক হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদের কথা জানিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অবস্থান লক্ষ্য করে প্রায় বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এতে নতুন মাত্রা যোগ করে মঙ্গলবার তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
লেবাননের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি সাতজন আহত হয়।
দেশটির বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, ভবনটির দ্বিতীয় তলায় জ্বলছে আগুন।
ছবিটির সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর দাহিয়েহতেও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যায়, যে এলাকায় গত সপ্তাহে হামলায় প্রাণ হারান হিজবুল্লাহর প্রধান নাসরাল্লাহ। এলাকাটিতে বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ পাওয়া যায়।
এর আগে বুধবার দিনভর দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহরে ডজনের বেশি হামলা চালায় ইসরায়েল।
দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ ঘরবাড়ি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে যাওয়া লেবাননের গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের পরবর্তী নোটিশের আগ পর্যন্ত না ফেরার অনুরোধ করেছে।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ বা অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে দেশটিতে প্রবেশে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সরাসরি নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনে ইসরায়েল বুধবার এমন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছে, ‘যিনি ইরানের ভয়াবহ আক্রমণের সরাসরি নিন্দা জানাতে পারেন না, তিনি ইসরায়েলের মাটিতে পা রাখার যোগ্য নন।
‘গুতেরেস এখন পর্যন্ত ৭ অক্টোবর হামাসের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও যৌন সহিংসতার নিন্দা করেননি। তিনি হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলেও ঘোষণা দেননি।’
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথি ও ইরান বৈশ্বিক সন্ত্রাসের মূল কেন্দ্র। তিনি এমন একজন মহাসচিব যিনি এদের মতো সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও হত্যাকারীদের সমর্থন দেন। তাকে জাতিসংঘের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক হিসেবে স্মরণ করা হবে।
‘অ্যান্তোনিও গুতেরেস থাকুন বা না থাকুন, ইসরায়েল নিজের নাগরিকদের রক্ষা করতে এবং জাতীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল লেবাননে বিমান হামলার পর স্থল অভিযান শুরুর পর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলের দিকে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। গত সাত মাসের মধ্যে ইসরায়েলে ইরানের চালানো এটি দ্বিতীয় হামলা। হিজবুল্লাহ ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইরান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য