যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ এক তরুণের গুলিতে নিহত ৯ কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারকে ৮৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ওই ঘোষণা দেয়া হয় বলে আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
২০১৫ সালের ১৭ জুন সাউথ ক্যারোলিনার চার্লসটন শহরের এক গির্জায় ঢুকে প্রার্থনারত ৯ কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে হত্যা করে স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ডিলান রুফ।
কৃষ্ণাঙ্গ নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে ওই হামলা চালান ২১ বছর বয়সী ওই শ্বেতাঙ্গ। জাতিগত বিদ্বেষমূলক একটি ওয়েবসাইটও ছিল রুফের। সেখানে নয়া-নাৎসিবাদ ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের প্রতীকসংবলিত নিজের বেশ কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেন তিনি।
চার্লসটনের ইমান্যুয়েল আফ্রিকান মেথোডিস্ট এপিসকোপাল গির্জায় ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রুফকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
রুফের গুলিতে নিহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণের ঘোষণার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেন, ‘মাদার ইমান্যুয়েল গির্জায় হত্যাকাণ্ড একটি ভয়াবহ বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ। ওই ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের স্বজনদের অসীম যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
‘গির্জার ওই হত্যাকাণ্ডের পর কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় যাতে ন্যায়বিচার পায়, সে বিষয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট। প্রথমে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া এবং পরে ক্ষতিপূরণের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার মাধ্যমে ডিপার্টমেন্ট তাদের কাজ সততার সঙ্গে সম্পাদন করে।’
নিহতদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা আইনজীবী ব্যাকারি সেলারস বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের ৮৮ সংখ্যাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং হামলার সময় একই সংখ্যক গুলি নিজের কাছে রেখেছিল বলে জানায় রুফ।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক দেয়া হয়েছে পাঁচ নারীকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এ পদক তুলে দেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রাজনীতিতে সৈয়দা জেবুন্নেসা হক (সিলেট), অর্থনীতিতে সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ (কুমিল্লা), শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবায় আছিয়া আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার) এ পদক পান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু সেনা সদস্যের নির্মম হামলায় বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শহীদ হন তিনি। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সামনে রেখে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংবিধানিক পরিচয় ‘আদিবাসী’ করার দাবি জোরালো হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে মঙ্গলবার উদযাপন হবে দিনটি।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়। আমাদের মৌলিক অধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশে যে ৫৪টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী আছে তারা যেন সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পায়।’
সাংস্কৃতিক সংগঠন হিলর প্রডাকশনের সদস্য পিংকি চাকমা বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তি হয়েছিল। এরপর ২৫ বছর কেটে গেলেও আমরা সাংবিধানিকভাবে আদিবাসীর স্বীকৃতি পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ধর্ম সবকিছু রয়েছে। তার পরও সরকার আমাদের কেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা উপজাতি বলছে তা আমরা জানি না।’
রাঙ্গামাটি পৌরসভা মাঠে মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। এতে থাকবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পোশাকের ডিসপ্লে। এরপর আলোচনা সভা ও পরে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা হবে।
জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর সব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সমুন্নত রাখা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১১টি ভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের পর মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। ২০১১ সালে জনশুমারি ও গৃহগণনা তথ্যানুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার।
২০২২ সালের সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৯ জনে। অর্থাৎ ১১ বছরে চাকমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৯ হাজার ২৯৯।
রাঙ্গামাটি বিএম ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ও লেখক আনন্দ জ্যোতি চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতালসহ প্রায় ৫০টি জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। একটি জাতির যা প্রয়োজন, তা আমাদের আছে। নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সবকিছু আছে। এ কারণে আমরা আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সরকার আমাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে সরকারের প্রতি বিশ্বাস আর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।’
আরও পড়ুন:সাউথ আফ্রিকায় একসঙ্গে আট তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৪ জনকে। দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশের মাটিতে ধর্ষকের কোনো স্থান নেই।
পুলিশ জানায়, ক্রজারেসডর্প অঞ্চলে একটি খনির কাছাকাছি বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। শুটিংয়ের জন্যে ৮ তরুণীসহ আরও কয়েকজন গিয়েছিলেন সেখানে। সেট তৈরির জন্য গাড়ি থেকে মালামাল নামানোর সময় তাদের ঘিরে ফেলে সংঘবদ্ধ একটি দলের প্রায় শতাধিক সদস্য। তারা সেখানে ওই আট তরুণীকে পালা করে ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় সেখানে বিভিন্ন খনিতে কাজ করা অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের দায়ী করছে পুলিশ। স্থানীয়দের কাছে এই শ্রমিকরা ‘জামা জামা’ নামে পরিচিত। সেখানে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দেশটির পুলিশপ্রধান ফাননি মোজেমোলা আরও বলেন, ‘অভিযানকালে তাদের সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন দুজন শ্রমিক। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরও একজন। তৃতীয় ওই ব্যক্তি স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সোমবার গ্রেপ্তার ৮৪ জনকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ও চোরাই পণ্য সঙ্গে রাখার অপরাধে তাদের অভিযুক্ত করা হয়।
পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তাদের কেউ জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেলে আরও গভীরভাবে তদন্তে নামবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। এখন পর্যন্ত তাদের কারও বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের মামলা করা হয়নি।’
সোমবার গ্রেপ্তারদের আদালতে আনা হলে, সেখানে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করেন নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করে একটি সংগঠনের সদস্যরা।
ধর্ষকদের জামিন না দিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি জানান তারা। এ সময় তাদের হাতে প্লেকার্ডে লেখা ছিল, ‘ধর্ষকের জামিন নয়’, ‘আমি কী পরবর্তী শিকার’, ‘আমার শরীর অপরাধস্থল নয়’।
এই ঘটনায় গোটা দেশে প্রতিবাদ ও ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছে। ধর্ষককে রাসায়নিক প্রয়োগ করে নপুংসক করা নিয়ে দেশটিতে চলা বিতর্ক আবারও জোরালো হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভেকি চেলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ঘৃণ্য এই বর্বরতা নারীর অধিকার ও স্বাধীনতার পুরোপুরি পরিপন্থি। ধর্ষকের কোনো স্থান নেই এ দেশে।’
স্থানীয় সময় সোমবার সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভেকি চেলে বলেন, 'ভয়ানক ঘৃণ্য নৃশংসতার এই ঘটনাটি জাতির জন্য লজ্জা।'
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী হিসেবে ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিএসপি) পদে যোগ দিয়েছেন মনীষা রোপেতা।
দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিন্ধুর জ্যাকবাবাদের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মনীষা। তিনি ২০২১ সালের এপ্রিলে সিন্ধু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডিএসপি পদের জন্য মনোনীত হন।
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ওই পরীক্ষায় বসার আগে সিন্ধুর খায়েরপুরে শাহ আবদুল লতিফ ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে এম এ করেন মনীষা। তিনি জিন্নাহ পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল সেন্টার থেকে ডক্টর অফ ফিজিক্যাল থেরাপি (ডিপিটি) ডিগ্রি নেন।
মনীষা কবে ডিএসপি পদে যোগ দিয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে।
ডিএসপি হিসেবে যোগ দেয়ার বিষয়ে ওই নারী সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘অধিকাংশ মেয়ে নিজে থেকে অথবা পারিবারিক বাধ্যবাধকতার কারণে চিকিৎসক হতে চায়। এটা তাদের জন্য চরম বাস্তবতা। আমি নারীবান্ধব পেশার এই রীতি ভাঙতে চেয়েছিলাম।’
করাচির অন্যতম প্রাচীন এলাকা লিয়ারিতে প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মনীষাকে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের প্রাথমিক দিনগুলো পার করছি। সমাজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে আমাকে।’
এ পর্যায়ে আসার জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্বটা বাবাকে দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী এ পুলিশ কর্মকর্তা। হাসিমুখে তিনি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করতে সব সময়ের অনুপ্রেরণা তিনি (বাবা)।’
পাকিস্তানে শিক্ষা নিতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় মেয়েদের। ক্যারিয়ারের ইচ্ছাপূরণে বড় ধরনের সুযোগ দেখে না হিন্দু মেয়েরা। এমন বাস্তবতায় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মনীষার নিয়োগ অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন:উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরে বাবা-মা আর ছোট বোনকে নিয়ে ভালোই কাটছিল লতিকা বানসালের। তবে ২০১৬ সালের ১৪ জুনের সকাল পাল্টে দেয় দুই বোনের জীবন। এদিন চোখের সামনে মা অনু বানসালকে আগুনে পুড়ে মরে যেতে দেখে তারা। নির্মম এ ঘটনা ঘটান তাদের বাবা মনোজ বানসাল।
কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন মনোজ। যন্ত্রণায় ছটফট করা অনুর চিৎকার হয়তো পৌঁছায়নি কোথাও। চোখের সামনে মাকে পুড়তে দেখলেও কিছুই করতে পারেনি ১৫ বছরের লতিকা ও তার ১১ বছরের বোন। কারণ তাদের ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন বাবা মনোজ।
আদালতে লতিফা ও তার বোন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৬টায় মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। আমরা তাকে সাহায্য করতে পারিনি। কারণ ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা মারা ছিল। আমরা তাকে পুড়ে মরতে দেখেছি।’
লতিকা বলেন, ‘স্থানীয় পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় ফোন করলেও তারা কেউ সাড়া দেয়নি। পরে আমার মামা ও নানীকে ডেকে আনি। তাদের সাহায্যে মাকে হাসপাতালে নিই।’
চিকিৎসক ভাষ্য ছিল, অনু বানসালের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ক’দিন পর হাসপাতালে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় মামলা হলেও বিষয়টি আলোচনায় আসে লতিকার একটি উদ্যোগে। ন্যায়বিচার চেয়ে ১৫ বছরের লতিকা নিজের রক্ত দিয়ে চিঠি লেখেন উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে। সেখানে লতিকা লেখেন, পুলিশ হত্যা মামলাটিকে আত্মহত্যায় পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।
সঠিক তদন্ত না করার জন্য স্থানীয় মামলার তদন্তকর্মকর্তাকে তখন বরখাস্ত করা হয়। ঊর্ধ্বতন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মামলাটি তদারকি করার নির্দেশ দেন যাদব।
ঘটনার ৬ বছর পর গত বুধবার উত্তর প্রদেশের এক আদালত মামলার রায় দেয়। দুই মেয়ের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় বিচারক মনোজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
মেয়েরা আদালতে জানায়, তাদের বাবা ‘ছেলে জন্ম না দেয়ার জন্য’ তাদের মাকে মারধর করতেন।
আদালতে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন মনোজ। দাবি করেছিলেন, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেন তার স্ত্রী।
দুই পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে বুলন্দশহরের আদালত মনোজকে দোষী সাব্যস্ত করে। রায়ে বলা হয়, ছেলে সন্তান জন্ম না দিতে পারায় স্ত্রীকে খুন করেছেন মনোজ। তার অপরাধ প্রমাণিত।
বংশরক্ষায় ছেলে সন্তান থাকতে হবে এমন গোঁড়ামি ভারতের অন্য প্রদেশগুলোর তুলনায় উত্তর প্রদেশে বেশি।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই বিশ্বাসের কারণে কন্যা সন্তানের প্রতি অবহেলা, দুর্ব্যবহার এবং লিঙ্গ বৈষ্যম প্রবল হয়ে ওঠে। গর্ভপাতের মাধ্যমে লাখ লাখ ভ্রূণ হত্যার পেছনে কাজ করে এই বিশ্বাস।
বিচার চলাকালীন বানসাল বোনেরা আদালতে বলেন, ‘কেবল কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় মাকে কটূক্তি ও লাঞ্চনার শিকার হতে হতো। আমরা এসব দেখেই বড় হয়েছি। কন্য সন্তান আসছে খবর পেলেই গর্ভপাত করানো হতো। ছয়’বার এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে মা।’
বোনদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী সঞ্জয় শর্মা বলেন, ‘অবশেষে বিচার পেতে আমাদের ছয় বছর, এক মাস এবং ১৩ দিন লেগেছে।
‘নিজের বাবার বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে অবশেষে ন্যায়বিচার পাওয়ার একটি বিরল দৃষ্টান্ত এটি। গত ছয় বছরে মেয়েরা একশ বারের বেশি আদালতে হাজির হয়েছে। একটি তারিখও মিস করেনি তারা।’
এ মামলায় কোনো টাকা-পয়সা নেননি জানিয়ে আইনজীবী সঞ্জয় বলেন, ‘তারা আসলে টাকা দেয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। আর আমি এমনিতেই এসব ইস্যুতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
‘এটি কেবল একটি হত্যা না। এটি সমাজের বিরুদ্ধে অপরাধ। সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা নারীর হাতে থাকে না। তাবে তাকে কেন নির্যাতন করা হবে, শাস্তি দেয়া হবে? এটা পাপ।’
আরও পড়ুন:ইরানে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। তবে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ কখনোই আমলে নেয় না ইরানের বিচার বিভাগ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, স্বামীকে হত্যার দায়ে ৩ জন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
ইরান হিউম্যান রাইটস গ্রুপের মতে, গত সপ্তাহেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া ৩২ জনের মধ্যে সেই ৩ নারীও ছিলেন।
এর মধ্যে ১ জন ছিলেন সাবেক বাল্যবধূ সোহেলা আবাদি। যেই স্বামীকে হত্যার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, সেই স্বামীর সঙ্গে ১০ বছর আগে বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর।
বাকি যেই দুজন নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেও স্বামী হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এই বছরই ইরানে দ্বিগুণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই বছরের প্রথম ৫ মাসেই ২৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এর বেশি শিকার হচ্ছেন দেশটির সংখ্যালঘুরাও। ইরানে সংখ্যালঘুরা দেশটির জনসংখ্যার ৫ শতাংশ হলেও মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে প্রতি ৪ জনের ১ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
অনেক ক্ষেত্রেই ইরানি কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে অনেক অভিযুক্তের গণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে থাকে।
যদিও ইরানের পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে খুব একটা প্রকাশ্য ঘোষণা দেয় না। তাই মৃত্যুদণ্ডের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হয় না।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ইরান অনেক বেশি নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই তাদের স্বামী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত।
অথচ পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে ইরানের আদালত খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। নারীরা সেখানে ন্যায়বিচার পায় না।
আরও পড়ুন:জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা দেশে বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯।
এর মধ্যে নারীর সংখ্যা কিছুটা বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার ৪০৮, আর পুরুষের সংখ্যা ৮ লাখ ২৪ হাজার ৭৫১।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে এখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ। এর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে কম সংখ্যা ভিল জনগোষ্ঠীর।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগে বসবাস বেশি
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ বসবাস করছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৬০ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে বরিশাল বিভাগে, ৪ হাজার ১৮১ জন।
এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৮২ হাজার ৩১১, খুলনায় ৩৮ হাজার ৯৯২, ময়মনসিংহে ৬১ হাজার ৫৫৯, রাজশাহীতে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯২ ও রংপুরে ৯১ হাজার ৭০ জন বসবাস করছে।
জেলার বিবেচনায় রাঙ্গামাটিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় এই জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৪। এরপরেই আছে আরেক পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। সেখানে সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৮।
সবচেয়ে বেশি চাকমা, কম ভিল
জনশুমারিতে দেশে ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের সংখ্যা ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৯, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে শতকরা হিসাবে যা ২৯.২৯ শতাংশ।
সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামেরই দুই জাতিগোষ্ঠী মারমা ও ত্রিপুরা। মারমাদের সংখ্যা ২ লাখ ২৪ হাজার ২৬২ বা ১৩.৫৯ শতাংশ, আর ত্রিপুরাদের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৮ বা ৯.৪৯ শতাংশ।
সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ স্থানে থাকা সমতলের সাঁওতালদের সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৯ জন। শতাংশের হিসাবে, যা ৭.৮২
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে কম সংখ্যায় ভিল জনগোষ্ঠীর। এই জনগোষ্ঠীর মাত্র ৯৫ জন রয়েছে বাংলাদেশে। এরপর গুর্খা জনগোষ্ঠী সংখ্যা ১০০ জন বাংলাদেশে বসবাস করছে। আর হো জনগোষ্ঠীর মানুষ আছে ২২৩ জন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য