১৯৫৭ সালে পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম স্যাটেলাইট স্পুৎনিক-১ উৎক্ষেপণ করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
ঐতিহাসিক ওই ঘটনার সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার তুলনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক মিলে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মিলে স্থানীয় সময় বুধবার প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘উচ্চ গতিসম্পন্ন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা খুবই উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। একই সঙ্গে এটি উদ্বেগেরও।’
জেনারেল মিলে বলেন, ‘কৃত্রিম স্যাটেলাইট স্পুৎনিক-১ উৎক্ষেপণ মুহূর্তের সঙ্গে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মুহূর্তের হুবহু মিল রয়েছে কি না, জানি না। তবে আমি মনে করি, উভয় ঘটনার মধ্যে খুব বেশি অমিল নেই।
‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ প্রযুক্তিগত ঘটনা। বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি।’
চলতি বছরের আগস্টে চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের গোপন পরীক্ষার কথা ১৬ অক্টোবর প্রথম জানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
সে সময় ওই পরীক্ষার বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে। ছবি: এএফপি
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইপারসনিক অস্ত্রব্যবস্থায় চীনের অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকে অবাক করে।
সংবাদমাধ্যমটির তথ্য অনুযায়ী, চীনের ক্ষেপণাস্ত্রটি কম উচ্চতায় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এটির গতিবেগ ছিল শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। অবশ্য লক্ষ্যে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়ে লক্ষ্যের চেয়ে ৩০ কিলোমিটারের বেশি দূরে গিয়ে পড়ে ওই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের দাবি প্রত্যাখ্যান করে চীন বলেছিল, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য একটি মহাকাশযানের রুটিন পরীক্ষা করা হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।
অস্ত্র প্রযুক্তিতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র অত্যাধুনিক এক সংযোজন। এটি কম উচ্চতায় ওড়ে। এ কারণে এটি শনাক্ত করা সহজ নয়। লক্ষ্যে খুব দ্রুত আঘাত করার পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া এই ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা খুবই কঠিন।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা যতটা সহজ, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের অবস্থান জানা ততটাই কঠিন।
আর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের এসব বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যদি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র যুক্ত করা হয়, তাহলে এটি আরও বিপজ্জনক অস্ত্রে পরিণত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ যেখানে ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা উন্নত করছে, সেখানে চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ওই সব দেশ শনাক্ত বা ধ্বংস করতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কনগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের (সিআরএস) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের হাইপারসনিকসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিহত করতে চীন তাদের প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত করছে।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া তাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। অন্যান্য দেশ এ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
২০১৯ সালে ডিএফ-১৭ নামের মধ্যম পাল্লার একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে চীন। পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ওই ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস সম্প্রতি যে ক্ষেপণাস্ত্রের কথা জানিয়েছে, তা এর চেয়েও দূরপাল্লার।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বুধবার ফের চীনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে তিনি বলেন, ‘চীনের সামরিক সক্ষমতার যেকোনো ধরনের অগ্রগতি আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে খুব কমই সাহায্য করবে।’
আরও পড়ুন:প্রায় এক দশকের মধ্যে ব্রাজিলের আমাজনে বার্ষিক বন উজাড় সর্বনিম্ন পরিমাণে হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা সরকার স্থানীয় সময় বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ব্রাসিলিয়া থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চের (আইএনপিই) প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এক বছর সময়কালে বন উজাড় ৩০.৬ শতাংশ কমেছে।
আইএনপিই পরিচালক গিলভান অলিভেরা জানান, ওই সময়ে ৬ হাজার ২৮৮ বর্গকিলোমিটার বন ধ্বংস করা হয়, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশ জুড়ে থাকা আমাজন রেইনফরেস্ট গত শতাব্দীতে কৃষি ও গবাদি পশুপালন, জ্বালানি কাঠ এবং খনির বিস্তার এবং শহুরে বিস্তৃতির কারণে প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা হারিয়েছে।
লুলা ২০৩০ সালের মধ্যে আমাজনের অবৈধ বন উজাড় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি কিছু কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর বাধার মুখে পড়েছেন।
আইএনপিইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাজন ছাড়াও মধ্য ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রজাতি-সমৃদ্ধ সাভানার সেরাডোর ২৫.৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ১৭৪ বর্গকিলোমিটার হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রাজসিক প্রত্যাবর্তনের অনন্য নজির পড়ে হোয়াইট হাউজের পথে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট গণনায় উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটে জিতে ম্যাজিক নম্বর ২৭০ পার করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেতে হয়। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি ইলেক্টোরাল ভোট। আর ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন ২২৩টি।
তবে এই প্রতিবেদন দাখিলের সময় (বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা) পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা হয়নি। এজন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হওয়ার আগেই ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা দেশজুড়ে বিজয় উদ্যাপন শুরু করেছেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।
মিডিয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউস জয়ের নেপথ্যে বেশকিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে অর্থনৈতিক ইস্যু।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা সাধারণত অন্য কোনো বিষয়ের চেয়ে অর্থনীতিকেই বেশি আমলে নেয়। এবারের নির্বাচনি প্রচারের সময় বিভিন্ন জনমত জরিপে আমেরিকানদের প্রায় অর্ধেকই বলেছিলেন, চার বছর আগের তুলনায় এখন তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন। সুতরাং দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাদের কাকে পছন্দ তা বেশ স্পষ্টই ছিল।
এছাড়াও মোটাদাগে যেসব কারণ ট্রাম্পকে এই বিজয় এনে দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- গাজায় বছর গড়িয়ে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে বাইডেন প্রশাসনের জোরালো ও খোলামেলা অবস্থান, নারী ও পুরুষ ভোটারের বিভাজন, ট্রাম্পের প্রতি লাতিনো পুরুষদের সমর্থন, জাতিগত সমর্থন, রিপাবলিকানদের পক্ষে যুব ভোটারদের ঝুঁকে পড়া, গ্রামীণ এলাকায় ট্রাম্পের সমর্থন পুনরুদ্ধার, মধ্যপন্থি ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রভাব এবং নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ট্রাম্পের সফলতা।
বিশেষ করে ফল নির্ধারণী সুইং স্টেটগুলোর জয়ই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফেরার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে। জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনের মতো ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের জয় দেখিয়ে দেয়- অনেক আমেরিকান ভোটার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কমলা হ্যারিস সেই সমর্থন ধরে রাখতে পারেননি।
দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের তীব্র লড়াই আর ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা শেষ পর্যন্ত ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে আস্থাশীল ট্রাম্পকেই বেছে নিলেন।
২০১৬ সালের প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ এর নির্বাচনে পরাজিত হন। এরপর এবারের নির্বাচনে আবার জয় পেয়েছেন তিনি। বিরল এ জয়ের মাধ্যমে দেশটিতে নতুন ইতিহাস গড়ে হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর আবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হতে চলেছেন ট্রাম্প। এটি তার দারুণভাবে এক রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের নতুন ইতিহাস হতে চলেছে।
এমন প্রত্যাবর্তনের গল্প ট্রাম্পের আগে মাত্র একজন প্রেসিডেন্টই লিখিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট বলছে, ট্রাম্পের আগে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এমন নজির গড়েছিলেন। নির্বাচনে হেরে আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ওই ডেমোক্রেট।
১৮৯৩ সালে তিনি এই ইতিহাস গড়েছিলেন। ১৮৮৫ সালে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হন ক্লিভল্যান্ড। দেশটির ২২ ও ২৪তম প্রেসিডেন্ট তিনি। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই রেকর্ড গড়লেন ট্রাম্প।
শুধু তা–ই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ৬০ বছর বয়সি কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি আরেক নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে ট্রাম্পের জয়ের খবরে বিভিন্ন রাজ্যে উৎসবে মেতেছেন তার সমর্থকরা। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারের প্রধান কার্যালয় থেকে বিবিসি জানিয়েছে, ফক্স নিউজ যখন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের অনুমান ঘোষণা করছিল তখন হলরুমে উপস্থিত সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।
ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান করার সুযোগ দেবে।’
এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ সময় মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার রানিং মেট জে ডি ভান্স।
শপথ ২০ জানুয়ারি
এদিকে ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার খবর সামনে আসতেই জল্পনা শুরু হয়েছে তার শপথ নিয়ে। তিনি কবে শপথ নেবেন তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনে আগামী ২০ জানুয়ারি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
১৮৪৫ সাল থেকেই এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে। সে সময় থেকেই নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং জানুয়ারির ২০ তারিখে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পরিকল্পনা, নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং আইনি ও পদ্ধতিগত সুরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং শপথ গ্রহণের মধ্যে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখা হয়। নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য এই সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধই কাল হলো ডেমোক্রেটদের
ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে, আরব আমেরিকানদের সমর্থনও পেয়েছেন ট্রাম্প। মিশিগানের ডিয়ারবর্নে ভোটাররা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে। এটি এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় মুসলিম শহর হিসেবে পরিচিত। আর একে বাইডেন প্রশাসনের ইসরায়েল-গাজার যুদ্ধ নিয়ে নেয়া পদক্ষেপের প্রতি স্পষ্ট প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামাস তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন সম্পর্কে আমাদের অবস্থান নির্ভর করবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের আচরণ, তাদের ন্যায়সংগত অধিকার ও আমাদের ন্যায়সংগত ইস্যুর প্রতি তাদের অবস্থানের ওপর।’
হামাস আরও বলেছে, ‘নতুন প্রেসিডেন্টকে গাজার ওপর হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মতামত শুনতে হবে। নতুন প্রশাসনের বোঝা উচিত, আমাদের জনগণ দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের অধিকার খর্ব করা কোনো পথ তারা মেনে নেবে না।’
এ ছাড়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য কাসেম নাইম বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থন বন্ধ করা উচিত। কারণ এটি আমাদের জনগণের ভবিষ্যৎ এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।’
নারী ও পুরুষ ভোটারের বিভাজন
২০২৪ সালে নারীদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন থাকলেও তা ২০১৬ বা ২০২০ সালের তুলনায় বেশি ছিল না। বিশেষত, ট্রাম্প পুরুষদের মধ্যে সমর্থন বজায় রেখেছিলেন।
ট্রাম্পের প্রতি লাতিনো পুরুষদের সমর্থন
২০১৬ সাল থেকে লাতিনো ভোটারদের, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে বাইডেন এদের বেশির ভাগ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালে তারা ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে লাতিন নারীরা এখনও হ্যারিসের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও তা আগের তুলনায় কম।
জাতিগত সমর্থন
২০২৪ সালে হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ও নারীদের মধ্যে শক্তিশালী নেতৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। তবে, শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের আগের মতো নিরঙ্কুশ আধিপত্য ছিল না। শ্বেতাঙ্গ কলেজ-শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে কলেজ-শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে তিনি প্রায় ২০ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। যা বাইডেন বা ক্লিনটনের তুলনায় ভালো।
ট্রাম্পের পক্ষে যুব ভোটারদের ঝুঁকে পড়া
২০২৪ সালে ডেমোক্রেটদের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ভোটার গ্রুপ, অর্থাৎ যুব ভোটারদের কিছুটা সমর্থন কমেছে। যা ডেমোক্রেটদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়। তবে, প্রবীণ ভোটারদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। এক্ষেত্রে হ্যারিস কিছুটা বেশি সমর্থন পেয়েছেন।
গ্রামীণ এলাকায় ট্রাম্পের সমর্থন পুনরুদ্ধার
২০২০ সালে গ্রামাঞ্চলে কিছুটা সমর্থন হারানোর পর, ট্রাম্প ২০২৪ সালে সেখানে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। শহরগুলো এখনো ডেমোক্রেটদের কাছে রয়ে গেছে। কিন্তু উপশহরগুলোতে সমর্থন এবার পুনরায় ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে গেছে।
মধ্যপন্থি ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রভাব
২০১৬ থেকে ২০২৪ সালে মধ্য, উদার ও রক্ষণশীলরা রিপাবলিকান দলের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। মধ্যপন্থি ভোটারদের অধিকাংশ এবারও ডেমোক্রেটিক প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু তা আগের তুলনায় কম ছিল।
ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা স্পষ্ট ছিল। যারা মূলত রিপাবলিকান দলের বিরোধিতার কারণে ভোট দিয়েছেন, তারা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন।
নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ট্রাম্পের সফলতা
ট্রাম্পের নির্বাচনী কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নতুন ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। এই নতুন ভোটাররা সাধারণত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন না। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ট্রাম্প তাদের কাছে বেশি সমর্থন পেয়েছেন। তবে, ২০২৪ সালে প্রথমবার ভোট দেয়া ভোটারদের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় কম ছিল।
২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় এবং তার নির্বাচনি কৌশলগুলো আমেরিকার রাজনীতির গতিপথ এবং ভোটের হিসাব-নিকাশে পরিবর্তনকে স্পষ্ট করেছে। অতীতের তুলনায় ট্রাম্পের নির্বাচন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মোড় নিয়ে এসেছে। যা পরের নির্বাচনি লড়াইগুলোর জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করবে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টারে সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে আমেরিকার ইতিহাসে আগামী চার বছর সবচেয়ে ভাল সময় হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে মঞ্চে ওঠেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে ডি ভ্যান্স। নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জয় ঘোষণা করেন।
ওয়েস্ট পাম বিচে বক্তব্যের এক পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই জয়কে ‘রাজনৈতিক বিজয়’ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় সমবেত সমর্থকরা ‘আমেরিকা’, ‘আমেরিকা’, ‘আমেরিকা’ বলে চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন সব বাধা অতিক্রম করেছি যা কেউ সম্ভব বলে ভাবেনি। এটি এখন স্পষ্ট যে আমরা সবচেয়ে অবিশ্বাস্য রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছি। এটি রাজনৈতিক বিজয়।
‘আমেরিকান জনগণের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত বিজয় যা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বাস্তবায়নে আমাদের সহায়তা করবে।’
সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘প্রতিটি দিন আমি আপনাদের জন্য লড়াই করে যাব।’
ট্রাম্পের রানিং মেট ওহাইওর সিনেটর জেডি ভ্যান্স ও তার পরিবার মঞ্চে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন। ভ্যান্স তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন দেখছি।’
ট্রাম্প আপাতত বিজয়ী হলেও সরকারিভাবে ফল ঘোষণার পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি।
আরও পড়ুন:হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়নি। তবে রিপাবলিকান এই প্রার্থীর বিজয় ঘোষণা যে এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান প্রথমে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
এক্স-এ লেখা এক পোস্টে জেলেনস্কি তাদের সাম্প্রতিক আলোচনার কথা স্মরণ করে ট্রাম্পের প্রতি উষ্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমার দারুণ বৈঠক হয়েছে। সে সময় আমাদের মধ্যে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদারত্ব, বিজয় পরিকল্পনা এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক্স-এ উদযাপনমূলক বার্তা পোস্ট করেছেন। তাতে ট্রাম্পের প্রত্যাশিত বিজয় সম্পর্কে তার খুশির উল্লেখ করেছে লিখেছেন, ‘প্রিয় ডোনাল্ড এবং মেলানিয়া ট্রাম্প, ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তনের জন্য অভিনন্দন! হোয়াইট হাউজে আপনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য একটি নতুন সূচনা এবং ইসরায়েল ও আমেরিকার মধ্যে মহান মৈত্রীর প্রতি একটি শক্তিশালী পুনর্ব্যক্তি এনে দেবে। এ এক বিশাল বিজয়!’
ডানপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এই বিজয়কে ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তন’ বলে অভিহিত করেছেন। অরবান তার পোস্টে যোগ করেন, ‘অভিনন্দন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! বিশ্বের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় বিজয়!’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফরাসি ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘অভিনন্দন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দিয়ে তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে আরও শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা চার বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।’
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের দায়িত্ব নেয়া লেবার পার্টি থেকে নবনির্বাচিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন। সামনের বছরগুলোতে আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মোদী লেখেন, ‘নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের জন্য বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্তরিক অভিনন্দন। আপনি আপনার আগের মেয়াদের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে জয় পেয়েছেন।
‘আমি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বিস্তৃত বৈশ্বিক এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে আমাদের সহযোগিতা নবায়নের অপেক্ষায় রয়েছি। আসুন, আমরা একসঙ্গে আমাদের জনগণের উন্নতির জন্য এবং বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করি।’
আরও পড়ুন:আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প।
দেশটির ফ্লোরিডায় একটি নির্বাচনি প্রচারের ওয়াচ পার্টিতে হাজির হয়ে ট্রাম্প নিজেই তার বিজয় ঘোষণা করেন।
ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মঞ্চে তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্স, স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও তার প্রচার দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি একটি ‘অসাধারণ বিজয়’ পেয়েছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, এটি হবে আমেরিকার ‘স্বর্ণযুগ’।
তিনি বলেন, ‘এটি আমেরিকার মানুষের জন্য একটি অসাধারণ বিজয়, যা আমাদের আবার আমেরিকাকে মহান করতে সাহায্য করবে।’
সর্বশেষ পাওয়া ফল অনুযায়ী, ট্রাম্প ২৪৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান। নির্বাচনে জয়ের জন্য তার প্রয়োজন ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।
যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, নেভাডা ও অ্যারিজোনায় ভোট গণনা চলছে। এ পাঁচ অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট গণনার পর ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জয়ের সম্ভাবনা প্রতি ঘণ্টায় ক্ষীণ হচ্ছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প হারিয়েছেন বলে এডিসন রিসার্চের পূর্বাভাসে উঠে এসেছে।
গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের জয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে জয়ের সম্ভাবনা সংকুচিত হয়ে গেছে কমলার।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভাগ্য নির্ধারণী আরও পাঁচটি রাজ্যের ফল অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, দেশজুড়ে শক্তিমত্তা দেখাচ্ছেন ট্রাম্প। সর্বশেষ পাওয়া ফল অনুযায়ী, ট্রাম্প ২৪৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। বিপরীতে কমলা পেয়েছেন ১৮২টি ইলেকটোরাল কলেজের সমর্থন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়।
জয়ের সম্ভাবনা বাড়তে থাকার মধ্যে ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজ বাড়ির কাছের একটি কনভেনশন সেন্টারের উদ্দেশে ট্রাম্প রওনা হন বলে জানান তার এক প্রচার সহকারী।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনি ঐতিহ্যটা বলা যায় অদ্ভুত। এর একটি ডিক্সভেল নচের মধ্যরাতের ভোট। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেটের ক্ষুদে এই শহরে ঐতিহ্য ধরে রেখে এবারও স্থানীয় সময় মধ্যরাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে।
রসায়নবিদ থেকে ব্যবসায়ীতে পরিণত হওয়া নিয়েল টেলিটসন ১৯৬০ সালে শহরের বালসামস গ্র্যান্ড রিসোর্ট হোটেলে মধ্যরাতে ভোট দেয়ার এই ঐতিহ্য চালু করেন।
নিয়েল টেলিটসনের ছেলে ৭৯ বছর বয়সী টম টিলোটসন ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক মিনিট আগে বলেন, ‘আমাদের কাছে এটি স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।’
শহরটির ভোটার খুব কম হওয়ায় দ্রুত ভোট গণনা করে ফলও প্রকাশ করে দিতে পারে তারা। এখানে নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে চারজন রিপাবলিকান ও দু’জন অঘোষিত ভোটার ছিলেন।
ভোট শুরু হওয়ার ১২ মিনিট পরই যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রথম ফল ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রটি থেকে। নির্বাচনে কানাডার সীমান্তবর্তী শহরটির ছয়জন নিবন্ধিত ভোটার ভোট দিয়েছেন।
ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ছয়জন ভোটারের তিনজন ভোট দিয়েছেন কমলা হ্যারিসকে ও অপর তিনজন ভোট দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। অথচ ২০২০ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিপক্ষে কেন্দ্রটি থেকে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প একটি ভোটও পাননি।
এর আগে জানুয়ারিতে জিওপি প্রাইমারিতে সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক গভর্নর নিকি হ্যালির পক্ষে ছয়টি ভোট পড়ে শহরটি থেকে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে শহরটির নিবন্ধিত ভোটারের চেয়ে হোটেলে উপস্থিত সংবাদকর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য