দীপাবলি উৎসব সামনে রেখে ভারতীয় ব্র্যান্ড ফেবইন্ডিয়া নতুন একটি বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ডানপন্থি বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের ক্ষোভের জেরে বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক, আসবাব, হস্ত ও কারুশিল্প আর খাবার প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ফেবইন্ডিয়া। আসন্ন দীপাবলি উপলক্ষে নতুন কিছু পোশাকের সম্ভার বাজারে নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এর নাম দেয়া হয় ‘জাশন্-ই-রিওয়াজ’।
উর্দু ভাষী শব্দগুচ্ছ ‘জাশন্-ই-রেওয়াজ’-এর অর্থ ‘ঐতিহ্যের উদযাপন’।
বিজ্ঞাপনটিতে উর্দু ভাষা ব্যবহারে ক্ষুব্ধ কট্টর হিন্দুরা। তাদের আপত্তির বিষয়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসবকে ঘিরে করা বিজ্ঞাপনে উপমহাদেশের অনেক মুসলিমের ভাষা উর্দুর ব্যবহার নিয়ে।
বিজ্ঞাপন সম্বলিত একটি টুইট তাদের ক্ষোভের উৎস। সোমবার ভাইরাল হওয়া টুইটটিতে লেখা হয়, ‘ভালোবাসা ও আলোর উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে আমাদের এ সম্ভার ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী’।
টুইটটিতে ক্ষুব্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, হিন্দুদের আলোর উৎসব দীপাবলি। এ উৎসবকে ঘিরে নির্মিত বিজ্ঞাপনে উর্দু ভাষায় ‘ঐতিহ্যের উদযাপন’ বলার অর্থ হলো উৎসবের অন্য ব্যাখ্যা দাঁড় করানো।
এর মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে ফেবইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র জানান, ‘জাশন্-ই-রেওয়াজ’ দীপাবলির পোশাকের সমাহার ছিল না।
কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হননি অনেক গ্রাহক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ব্র্যান্ডটি বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা বলেন, ‘দীপাবলি উৎসব কোনো জাশন্-ই-রেওয়াজ নয়’।
টুইটারে ফেবইন্ডিয়া বর্জনের ট্রেন্ডটি শীর্ষে উঠে আসে।
এর জেরে টুইটটি প্রত্যাহার করে ফেবইন্ডিয়া, পরে বিজ্ঞাপনটিও সরিয়ে নেয় তারা।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ ইতিহাসের ধারক উর্দু ভাষা। গত কয়েক শ বছরে অসংখ্য শক্তিশালী সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে এ ভাষায়। উর্দুভাষী অনেক সাহিত্যিক ও কবি এখনও ভারতে দারুণ জনপ্রিয়।
তবে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের দৌরাত্ম্যে গত কয়েক বছরে ভারতে উর্দুর ব্যবহার নিয়ে প্রচুর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাষা এবং হিন্দুদের উৎসব বা রীতিতে এ ভাষা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
ফেবইন্ডিয়ার আগে গত কয়েক বছরে ডানপন্থি হিন্দুদের চাপে পড়তে হয়েছে আরও কয়েকটি বহুজাতিক ব্র্যান্ডকে। পোশাক প্রস্তুত ও বিপণনকারী মান্যবর এমনই একটি প্রতিষ্ঠান।
মান্যবরের সাম্প্রতিক এক বিজ্ঞাপনে প্রখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাটকে বিয়ের পোশাকে দেখা যায়। ওই বিজ্ঞাপন নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনটিতে ভারতীয়দের বর্ষপুরোনো ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এবং হিন্দুদের বিয়ের রীতির ওপর আঘাত সেটি।
এ ছাড়া জনপ্রিয় জুয়েলারি ব্র্যান্ড তানিশক্ও একটি বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো হয়েছিল, দুই ধর্মের অনুসারী এক দম্পতির অনাগত সন্তানকে স্বাগত জানাতে মুসলিম শ্বশুরবাড়িতে হিন্দু পুত্রবধূর জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ডানপন্থি হিন্দুদের অভিযোগ, তানিশকের বিজ্ঞাপনটিতে ‘লাভ জিহাদ’-এর প্রচার চালানো হয়েছে। হিন্দু নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে মুসলিম পুরুষরা কৌশলে তাদের ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে বলে দাবি কট্টর হিন্দুদের, যেটিকে তারা আখ্যায়িত করে ‘লাভ জিহাদ’ হিসেবে।
এ বিজ্ঞাপনের জেরে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোপের মুখে পড়ে তানিশক্। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি বিষয়টি। দ্রুতই সেটি শারীরিক লাঞ্ছনা অবধি গড়ায়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মীর নাম উল্লেখ করে অনলাইনে হুমকি দেয়াও শুরু হয় সে সময়।
আরও পড়ুন:রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার চর হরিনাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র নাজমুল হোসেন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এখন শয্যাশায়ী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে দ্রুত রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সে উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুছিদাহ গ্রামের মো. ইসলাম মন্ডলের ছেলে।
দরিদ্র পরিবারের পক্ষে নাজমুলের চিকিৎসার বিপুল ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তার পিতা মো. ইসলাম মন্ডল একজন সাধারণ ভ্যানচালক সংসারের দৈনন্দিন খরচ চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে সন্তানের ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা তাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই নাজমুলের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ। স্বপ্ন ছিল একদিন ডাক্তার হয়ে সমাজের সেবা করবে। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন থেমে যেতে বসেছে শুধুমাত্র অর্থের অভাবে।
তাই সমাজের সকল সহৃদয় ও বিত্তবান ব্যক্তিদের প্রতি পরিবারটি সহানুভূতি এবং সহযোগিতা কামনা করেছেন।আপনারা যদি যার যার সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে হয়তো নাজমুল আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
নাজমুলের চিকিৎসার জন্য যারা সাহায্য করতে ইচ্ছুক, তারা বিকাশ নাম্বারে অর্থ পাঠাতে পারেন: বিকাশ নম্বর: 01874802351 (নাজমুল হোসেনের পিতা – মো. ইসলাম মন্ডল)। আপনাদের সামান্য সহযোগিতা একটি জীবন বাঁচাতে পারে। সাহায্য পাঠানোর আগে যাচাই করে নিতে পারেন।
কুমিল্লা নগরীতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে নগরীর কালিয়াজুড়ি খেলার মাঠের পাশের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের মৃত্যুর সময় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
নিহতরা হলেন গৃহিনী তাহমিনা আক্তার ফাতেমা (৫২) ও তার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার রিন্তি (২৩)। সুমাইয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৬ ব্যাচের তৃতীয় বষের শিক্ষার্থী ছিলো।
বাড়ির মালিক আনিছুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, চার বছর আগে কুমিল্লার আদালতের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাড়িটি ভাড়া নেন। গত বছর তার মৃত্যুর পর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ফাতেমা (৫০), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে সুমাইয়া আফরিন রিন্তি (২৪) তার আরও দুই ছেলে বাড়িটিতে থাকছেন।
বাড়ির মালিক আনিছুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, বাড়িতে তারা থাকতেন। তারা অন্য কারো সাথে তেমন কথা বলতেন না। গতকাল রাতে তার দুই ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় আসলে তারা ঘরের দরজা খোলা দেখে। এই সময় তারা ভাবে তাদের মা ও বোন ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু বাসায় ঢুকার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাদের কোন সারা শব্দ না পেলে জাগাতে গিয়ে দেখেন তারা নড়ছে না। পরে ৯৯৯ এ কল পেয়ে সোমবার ভোরবেলা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং কুমিল্লা মেডিকেল এর মর্গে পাঠায়।
তিনি আরো জানান, টিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে একজন ব্যক্তি রবিবার দিনের বেলায় তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করেছিল। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
নিহত তাহমিনার বড় ছেলে মোঃ তাজুল ইসলাম ফয়সাল (৩৪) জানান, তারা দুই ভাই এক বোন। ছোট ভাই কুমিল্লা ইপিজেড
চাকুরী করে। সে ঢাকায় আইন পেশায় নিযুক্ত। গতকাল ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে যান। তার ভাইও বাসায় ফিরে নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেন৷ তখন তার মাকে বার বার ডেকেও সাড়া না পেয়ে মায়ের রুমে যান। সেখানে তার মায়ের নিথর দেহ দেখতে পান। পরে বোনের কক্ষে গিয়েও বোনের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
তাজুল ইসলাম আরো জানান, দূর্বৃত্তরা তার মা ও বোনকে হত্যা করে মোবাইল ল্যাপটম, কানের দুল নিয়ে যায়।
কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে কিভাবে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
শেষ দিনে জমে উঠে ডাকসুর নির্বাচনী প্রচারণা। লিগ্যাল নোটিশ, ডলার, বুকমার্ক, কার্ডসহ সাধারণ লিফলেটের মাধ্যমে শেষ মুহূর্ত্বে ব্যস্ত সময় পার করেন প্রার্থীরা।
ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শেষ দিনের প্রচারণায় পুরো ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের লিফলেটে। তবে, কেবল ভোট নয় অভিনব ডিজাইনের লিফলেট ও প্রচারপত্রগুলো ব্যক্তিগত সংগ্রহেও রাখছেন অনেক শিক্ষার্থী।
ভোট পেতে ভোটারদের লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন ডাকসুতে মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী মু. মেহেদী হাসান মুন্না।
ঢাবির সর্বাপেক্ষা সুন্দরী রমণী এবং সুদর্শন পুরুষদের লক্ষ্য করে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতাকে মানবাধিকারের পক্ষে অনুরুদ্ধ হয়ে এই মর্মে অবহিত করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানবাধিকার পড়ালেও কাঠামোগত এবং গঠনতান্ত্রিক সংঘাত দ্বারা শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করে। মু. মেহেদী হাসান মুন্না ওরফে মানবাধিকার মুন্না পূর্ব এবং বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চায়।
তবে কেবল লিগ্যাল নোটিশ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি মুন্না। নারী ভোটারদের নজর কাড়তে নিজের ইশতেহার-সংবলিত প্রজাপতি আকৃতির প্রচারপত্রও দিয়েছেন তিনি।
এদিকে জেন-জি প্রজন্ম স্বভাবতই তাদের নিজস্ব ও পছন্দের বিষয়গুলো দেখে আকৃষ্ট হয়। তাই, এবারের ডাকসু নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ কিছু জেন-জি স্টাইলের প্রচারণা দেখা গেছে।
ডাকসুতে স্বতন্ত্রভাবে সদস্য পদে নির্বাচন করা সামসুদ্দোহা নবাব জনপ্রিয় আমেরিকান টিভি সিরিজ ব্রেকিং ব্যাড-এর পোস্টারের আদলে লিফলেট বানিয়েছেন।
এই প্রার্থীর লিফলেটের একেবারে উপরের দিকে ইংরেজিতে লেখা ‘লেট হিম কুক অন ৯ সেপ্টেম্বর’। এরপর লেখা ‘কেন্দ্রীয় সদস্য পদপ্রার্থী’। আর মাঝে তার ব্যালট নম্বর ১৬২। লিফলেটের একেবারে নিচের দিকে কিউআর কোডের পাশাপাশি রয়েছে ব্রেকিং ব্যাড-এর পোস্টারের আদলে ইংরেজিতে লেখা ‘সামসুদ্দোহা নবাব’।
এদিকে, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম রানা এর মধ্যেই কোরিয়ান ভাষা, জাপানিজ স্টাইলে লিফলেট দিয়ে জেন-জিকে আকৃষ্ট করেছেন। পাশাপাশি বিখ্যাত স্টুডিও গিবলি আর ভ্যান গগের কালজয়ী চিত্রকর্ম 'দ্য স্টারি নাইট'-এর অনুপ্রেরণায় বানানো বুকমার্কও বিলি করেছেন তিনি। অন্য আরেকটি সেটে তিনি তুলে ধরেছেন ঢাবির ঐতিহাসিক ‘অপরাজেয় বাংলা’ ও মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’কে। দুটি বুকমার্কেই বড় করে লেখা জুলাই অভ্যুত্থানে চানখারপুলে দাঁড়িয়ে তার বলা বহুল আলোচিত বাক্য— ‘প্লিজ, দয়া করে কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’।
টাকা ও ডলারের আদলে প্রচার
স্যার এ এফ রহমান হল সংসদ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নাইমুর রহমান। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ইউএস ডলারের আদলে লিফলেট বানিয়ে সাড়া ফেলেছেন তিনি। হল সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে তার ব্যালট নাম্বার ১ হওয়ায় এক ডলারের আদলে লিফলেট বানিয়েছেন তিনি।
ডলার আকৃতির এই লিফলেটে দেখা যায়, ডলারের চার কোনায় যেখানে পরিমাণ লেখা থাকে, সেখানে লিফলেটে তিনি ব্যালট নাম্বার ‘এক’ লিখেছেন। আর ওপরের অংশে লেখা ফেডারেল রিজার্ভ নোট। মাঝে লেখা ‘আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন–২০২৫’। স্যার এ এফ রহমান হল সংসদে ভিপি পদপ্রার্থী (স্বতন্ত্র)। তার নিচে লেখা ‘নাইমুর রহমান, দর্শন বিভাগ, সেশন ২০১৯–২০’। এর পাশেই দেওয়া আছে কিউআর কোড, যেটি স্ক্যান করলেই তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে যাওয়া যাবে। আর লিফলেটের শেষ অংশে লেখা রয়েছে ‘ওয়ান ডলার’। যেটা মূলত তার ব্যালট নাম্বার।
এদিকে, ডাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সদস্যপদে প্রার্থীতা করা আরাফাত হোসেন বানিয়েছেন টাকার আদলে লিফলেট। এই প্রার্থীর এক হাজার টাকার নোটের আদলে বানানো এই ব্যালটের সামনের অংশে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’–এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘ডাকসু ভোট ব্যাংক’। এরপর লেখা হয়েছে ‘চাহিবামাত্র ইহার প্রার্থীকে একশত সত্তর ব্যালটে ভোট দিয়ে বাধিত করবেন’। আসল নোটে যেখানে গভর্নরের নাম লেখা থাকে, সেখানে ব্যালটে লেখা হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কার্যকরী সদস্য পদপ্রার্থী মো. আরাফাত হোসেন’।
এছাড়াও, প্রার্থীরা নানা ধরনের অভিনব কৌশলে বানানো লিফলেটের মাধ্যমেও নিজেদের প্রচারণা চালিয়েছেন, চেষ্টা করেছেন ভোটারদের মন জয় করার।
তফসিল অনুযায়ী, কাল মঙ্গলবার ডাকসুর ২৮টি ও হল সংসদ নির্বাচনের ১৩টি মিলিয়ে মোট ৪১টি ভোট দেবেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এজলাসকক্ষে সময় টিভির প্রতিবেদক আসিফ হোসাইনকে মারধরের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গণমাধ্যমকর্মীরা মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ তাঁকে আদালত থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান গণমাধ্যমকর্মীরা।
গণমাধ্যমকর্মীরা বলেছেন, সাংবাদিকদের মারধর করা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এজলাসের মতো জায়গায় বিচারকের সামনে সাংবাদিককে মারধর করা হলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৪ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক মনজুরুল আলমের (পান্না) জামিন শুনানি চলাকালে মারধরের শিকার হন আসিফ হোসাইন। তিনি অভিযোগ করেন, আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি তাকে মারধর করেছেন। তবে আইনজীবী তা অস্বীকার করেছেন।
মানববন্ধনে অভিযুক্ত আইনজীবীর শাস্তি দাবি করে সময় টিভির সাংবাদিক ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘আদালতের এজলাসে মব সৃষ্টি করে হামলা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই ঘটনা দেখিয়ে দিল বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না।’ এই ঘটনায় কোনো বিচার হবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
সময় টিভির আরেক সাংবাদিক হারুনর রশীদ বলেন, অপরাধীকে আদালত থেকে বহিষ্কার করা হোক। সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।
একাত্তর টিভির সাংবাদিক শাহনাজ শারমিন বলেন, সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হলে কেউ প্রতিবাদ করে না। সবার কাছেই সাংবাদিকেরা মার খায়। সাংবাদিক মারা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। একসময় সাংবাদিকেরা মার খেলে সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসে সুরাহা করত। কিন্তু এখন প্রতিবাদটুকুও হয় না। কারণ, সাংবাদিকদের মধ্যে সেই ঐক্য নেই। সাংবাদিকদের এক হতে হবে।
মানববন্ধনে গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, সাংবাদিকেরা এখন আদালতেও মার খাচ্ছেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এজলাসে হামলার মতো ঘটনা লজ্জার।
মানববন্ধনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৫’।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে ইউনেস্কো এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে— “প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার”।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো আজ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এবং ১৯৭২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে।
অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো সাক্ষরতা অর্জন করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সাক্ষরতার সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও, ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো সর্বজনীন একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। তখন শুধু কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো।
পরবর্তীতে প্রায় প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে এবং ১৯৯৩ সালের একটি সংজ্ঞায় ব্যক্তিকে সাক্ষর হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়।
শর্ত তিনটি হচ্ছে— ১. ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, ২. ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে ও ৩. ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে।
সাক্ষরতা ও উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। নিরক্ষরতা উন্নয়নের অন্তরায়। টেকসই সমাজ গঠনের জন্য যে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন, তা সাক্ষরতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই সতর্কবার্তা জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যাবশ্যক পরিষেবা। এ সেবায় বাধা দেওয়া বা বিঘ্ন ঘটানো অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সরকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের দাবিসমূহ সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কাজে নিয়োজিত এবং গণছুটির নামে অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে, শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন এসে দাবি আদায়ে রোববার থেকে গণছুটিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীর টঙ্গী থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইতালিতে পাচারের সময় সাড়ে ৬ কেজি ভয়ংকর মাদক ‘কিটামিন’ জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। জব্দকৃত মাদকদ্রব্য বিশেষ কায়দায় তোয়ালের ভেতরে দ্রবীভূত অবস্থায় রাখা ছিল। এ ঘটনায় চাঁদপুর ও ফরিদপুর থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।
গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক হাসান মারুফ।
ডিএনসি মহাপরিচালক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মাদকচক্র কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে পাচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারির অংশ হিসেবে টঙ্গীর ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে অভিযান চালানো হয়। ফেডেক্স কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ঢাকা থেকে ইতালাগামী একটি পার্সেল জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, অস্বাভাবিক ওজন এবং সন্দেহজনক অবস্থার কারণে পার্সেলটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, একটি খাকি রংয়ের কার্টনের ভেতরে সাতটি সাদা তোয়ালে রাখা। ডিএনসির রাসায়নিক পরীক্ষক ঘটনাস্থলেই পরীক্ষা চালিয়ে তোয়ালের ভেতর থেকে দ্রবীভূত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি কিটামিন শনাক্ত করেন।
জব্দকৃত পার্সেলের প্রেরকের ঠিকানা, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে চাঁদপুরের মতলব উত্তর এলাকা থেকে প্রেরক মো. মাসুদুর রহমান জিলানী’কে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চালান ফরিদপুরের মো. আরিফুর রহমান খোকা’র (৪৩) সহযোগিতায় বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছিল।
এরপর ডিএনসির একটি অভিযানিক দল ফরিদপুরের সালথা থানার আটঘর বাজার থেকে খোকাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি অ্যান্ড্রয়েড ও একটি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও কুরিয়ারের মাধ্যমে ‘কিটামিন’ পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে ডিএনসি।
ডিএনসি জানিয়েছে, পাচারকারীরা কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশন পদ্ধতিতে তোয়ালে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকিয়ে ফেলে। এতে কাপড়টি দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে মাদক মিশে থাকে। পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেসের মাধ্যমে কাপড় থেকে মাদক আলাদা করা হয়।
ডিএনসি জানিয়েছে, কিটামিন মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ, যা একসময় অস্ত্রোপচারের আগে রোগেীকে অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি পার্টি ড্রাগ হিসেবে অপব্যবহার হচ্ছে। কিটামিন স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, মূত্রথলি ও মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। নিয়মিত সেবনে এটি জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ায়।
ডিএনসি মহাপরিচালক হাসান মারুফ জানান, এই চক্রের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ঢাকায় তাদের কোনও সদস্য অবস্থান করে না। তারা মাদক সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এবার যে চালানটি জব্দ হয়েছে, তার গন্তব্য ছিল ইতালি।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
ডিএনসি মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাদকপাচারের রুট কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে প্রতিটি দেশেই চাহিদার ভিত্তিতে মাদক প্রবেশ করে। ইয়াবার ক্ষেত্রেও আমাদের সীমান্ত এলাকায় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
জনবল সংকটের কারণে গোয়েন্দা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা রয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে অপারেশন ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে মাত্র ১ হাজার ৬২২ জন কাজ করছেন। সীমিত জনবল দিয়েই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। গত ছয় মাসে আমাদের অভিযান সংখ্যা বেড়েছে।’
মন্তব্য