সীমান্তে বিবাদ মেটাতে ভারত ও চীনের সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে ১৩তম বৈঠক শেষ হয়েছে কোনো সমাধান ছাড়াই।
চুসুল-মালদো সীমান্তে রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় দুই দেশের কর্মকর্তাদের শুরু হওয়া আলোচনা শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে এ বৈঠকের দিকে দেশ দুটি তাকিয়ে থাকলেও মূলত কোনো সমাধানে আসতে পারেনি কোনো পক্ষই।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আশঙ্কা করছেন, চীন সেনাবাহিনী পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকা ও গোগরার কাছে এখনও সক্রিয়। অস্ত্রশস্ত্রও মজুত করে রাখা হয়েছে। চীনা সেনারা নতুন করে সীমা লঙ্ঘন করে ভারত নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যে হামলা চালাতে পারেন, সে ধরনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না দিল্লি। এমনই প্রেক্ষাপটে ১৩তম সীমান্ত বৈঠক শুরু করেছে চীন ও ভারত।
তবে বৈঠকে সীমান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য তারা গঠনমূলক পরামর্শ দিলেও চীন সে প্রস্তাবে সম্মত নয়, তারাও কোনো দূরদর্শী প্রস্তাব দিতে পারেনি। কিন্তু যোগাযোগ অব্যাহত রাখা ও সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। ভারতের প্রত্যাশা, চীন সেনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় রাখবে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও প্রটোকল সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার সময় অন্য সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে কাজ করবে।
বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দায়িত্বে থাকা লেহভিত্তিক ১৪ কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি জি কে মেনন। অন্যদিকে চীনের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন জিনজিয়াং সামরিক জেলার কমান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিন।
ভারত-চীন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিভিন্ন স্থানে চীনের আগ্রাসনের ক্রমবর্ধমান রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। কিছুদিন আগে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং-এ ভারত ও চীনের টহলদারি সেনারা মুখোমুখি হয়েছিলেন। আগস্টের শেষে চীনের সৈন্যরা উত্তরাখণ্ডের বারাহোতির নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করেছিল।
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারাভানে গত শনিবার বলেন, চীন ওই অঞ্চলে থাকার জন্যই চীন সেখানে অবকাঠামো তৈরি করছে। গত বছরের মে মাসেই সীমান্ত থেকে সেনা সরানো নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরেও একাধিক আলোচনা হয়েছে। বারবার কর্পস কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে। এত কিছুর পরও কোনো সমাধান বেরিয়ে আসেনি।
ভারতের সেনা সূত্র জানায়, এ দিন প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয় দুই দেশের সামরিক স্তরে। ভারত আবারও সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে সেনা সরানোর জন্য চীনের ওপর চাপ তৈরি করে। মূলত প্যাট্রলিং পয়েন্ট ১৫ থেকে চীনা সেনাকে পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার ওপর জোর দেয় ভারত। তবে চীনা সেনারা বৈঠকে কী বলেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
ভারতীয় সেনাপ্রধান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, পূর্ব লাদাখের সবকটি স্পর্শকাতর এলাকা থেকে চীন এখনও সেনা সরায়নি। তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তখনই দুই দেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আসতে পারবে যখন উভয়ের মধ্যে বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করা হবে। দিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লাদাখ সীমান্তে কোনো ধরনের আগ্রাসন সহ্য করবে না ভারত। চীন আগ্রাসনের চেষ্টা করলে ভারতও তার উপযুক্ত জবাব দেবে।
সীমান্ত সমস্যা সমাধানে এর আগে ভারত-চীন বৈঠক হয়েছিল ৩১ জুলাই। ওই সময়ে বৈঠকের পর গোগরা এলাকা থেকে লাল ফৌজ সরিয়ে নিয়েছিল চীন। এখন বাকি এলাকা থেকেও যাতে চীনা সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়, তার ওপর জোর দিয়েছেন ভারতীয় সেনারা।
এর আগেও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বিশ্ব সম্মেলনেও চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখনও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন তারা।
মূলত গত বছর মে মাসে পূর্ব-লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দখল নেয়া ঘিরে সংঘর্ষ বাধে। জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। ভারতের ২০ জন সেনা সদস্য তখন নিহত হন।
চীনের তরফ থেকে প্রথমে এ ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে জানানো হয়, গালওয়ানের সংঘর্ষে তাদেরও বেশ কিছু জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। এরপর এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও দেশ দুটির সীমান্ত নিয়ে সমস্যা এখনও মেটেনি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের উদয়নগর এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১১৫টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)। গত বুধবার বিকেলে এই সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পদ্মা নদীর প্রবল ভাঙনে উদয়নগর বিওপির দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা, ফসলি জমি ও বহু বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে অবশিষ্ট অংশটিও নদীতে তলিয়ে যায়।
ঝুঁকি বিবেচনায় বিজিবির সদর দপ্তরের নির্দেশে ১৩, ১৪ ও ১৫ আগস্ট তারিখে উদয়নগর বিওপির অধিকাংশ স্থানান্তরযোগ্য সরঞ্জাম পাশ্ববর্তী চরচিলমারী বিওপিতে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে অবশিষ্ট অস্ত্র, গোলাবারুদ, অফিসিয়াল নথিপত্র, যানবাহন ও জনবল নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোটের মাধ্যমে নিরাপদে স্থানান্তর করা হয়।
বর্তমানে উদয়নগর বিওপির সকল সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্রোল আইটেম নিরাপদে রয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।
বিজিবি আরও জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও সীমান্ত সুরক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সবসময় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে বিজিবি কর্তৃক জানিয়েছেন।
সীমান্ত সুরক্ষার স্বার্থে উদয়নগর বিওপি সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছেন। বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা, স্পিডবোট ও রেসকিউ বোটের মাধ্যমে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া, পূর্ববর্তী অবস্থানের নিকটবর্তী এলাকায় একটি নতুন ও উন্নত মানের বিওপি নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মোর্শেদ রহমান জানান, ‘বিজিবি দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় সবসময় অটল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অবকাঠামো নষ্ট করতে পারে, কিন্তু আমাদের মনোবল বা দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার কখনোই দুর্বল করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। সীমান্ত নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং জনগণের স্বার্থে বিজিবি আগের মতোই নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন বলে তিনি জানান।
কিশোরগঞ্জের ইটনায় কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টাকালে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৭ হাজার ৮৫১ কেজি চাল জব্দ করেছে পুলিশ। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার বাদলা বাজার থেকে ৩ হাজার ৬০০ কেজি ও মৃগা পূর্বপাড়া এলাকা থেকে ৪ হাজার ২৫১ কেজি চাল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ট্রলারসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন আজহারুল ইসলাম লেলিন (৪০), নিয়ামুল মিয়া (২৪) ও সাইদুল মিয়া (১৯)। তারা মৃগা এলাকার বাসিন্দা।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল আকরাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মৃগা গ্রামের ডিলার জানু মিয়ার নামে ১০ হাজার ৮৩০ কেজি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনি সেগুলো সংগ্রহ করে কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টাকালে পৃথক দুটি স্থান থেকে ৭ হাজার ৮৫১ কেজি চাল জব্দ করা হয়েছে।
বাদলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আব্দুস সামাদ জানান, কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশে একটি ট্রলারে করে তাড়াইল নিয়ে যাওয়ার সময় ৭২ বস্তা চালসহ তিনজনকে আটক করা হয়। সরকারি বস্তা পরিবর্তন করে সাধারণ বস্তায় ভরে চালগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
ইটনা থানার উপপরিদর্শক ফাহিম ফয়সাল জানান, বাদলা থেকে ৭২ বস্তা চাল উদ্ধারের পর ডিলার জানু মিয়ার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার বাড়ি থেকে আরও ৮৫ বস্তা চাল জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, চালগুলো আত্মসাতের উদ্দেশে নির্ধারিত স্থানে না রেখে অন্যত্র রেখেছিলেন ডিলার জানু মিয়া তার ছেলে দেলোয়ার হোসেন। ওই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, অতীতে আমরা দেখে এসেছি মন্ত্রীর এলাকায় প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত উন্নয়ন বরাদ্দ হয়, যাতে উক্ত জেলার অন্যান্য উপজেলা বঞ্চিত হয়। মানুষকে বঞ্চিত করে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার অধিকার কারো নেই। তাই এ ধরনের প্রাকটিস থেকে সরে আসুন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বিবেচনায় সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্পৃক্ত করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিন। পাশাপাশি পল্লী বিদ্যুৎকে জেলার সকল অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশনা দেন। শিল্প মালিকরা যেন বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে হয়রানি না হয় সে বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ করেন বিশেষ সহকারী। এর বাইরে
গোমতীতে আগামী শীতে ম্যারাথন আয়োজনের নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় জেলার এমপিওভুক্ত স্কুলের ইনস্পেকশন দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সভায় জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি জেলায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ সময়মতো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আসন্ন দূর্গাপূজা উদযাপন যেন নির্বিঘ্ন হয় সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছারের সভাপতিত্বে সভায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহ আলম, আইসিটি বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইফুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধান, কুমিল্লার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হলদে রঙের শাড়ি, খোপায় সাদা কাঠগোলাপ, পায়ে আলতা, নুপুর সাজে সেজেছে ওড়াঁও সম্প্রদায়ের নারীরা। পুরুষের ঢোল ও মন্দিরার তালে নেচে গেয়ে নিজেদের বড় ধর্মীয় আয়োজন কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসবের আমেজে মাতোয়ারা হয়ে উঠে ঠাকুরগাঁওয়ের ওড়াঁও সম্প্রদায়ের মানুষ।
আয়োজকরা জানান, বাংলা খ্রিষ্টাব্দের ভাদ্র মাসের শেষ রাত বুধবার থেকে তাদের পূজা আর্চনা শুরু হয়ে পরদিন পহেলা আশ্বিন বৃহস্পতিবার দুপর পর্যন্ত চলে আনন্দ উৎসব। এ সময় নিজ ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে কারাম গাছের ডাল এনে পূজা আর্চনা ও নাচগানে মাতোয়ারা থাকে এ সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষরা।
সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচপীর ডাঙ্গা গ্রামে উৎসবের রাতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন আয়োজন। ওড়াঁও সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এ উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম। এসময় বিভিন্ন ধর্মের রাজনীতিক নেতা, সমাজ ওসাংস্কৃতিক কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও আমন্ত্রিত ছিলেন।
এছাড়াও গ্রামের সকল ধর্মের মানুষ এই কারাম উৎসব দেখতে আসেন। এদিন সম্প্রিতির বন্ধনে আরও একবার আবদ্ধ হন গ্রামের মানুষ।
শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিদের নাচ ও গানের তালে তালে বরণ করে নেন ওড়াঁও সম্প্রদায়ের মানুষ। পরে ফুল দিয়ে সকল ধর্মের মানুষদের বরণ করেন তারা। এরপর নাচ ও গান পরিবেশন করেন অতিথিদের সামনে। পরে উৎসবের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য করেন আয়োজকরা এবয় নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার উপদেষ্টা আইনজীবী ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, কারাম উৎসব দুই রকম ভাবে উদযাপন করা হয়। একটি নিজ কারাম ও অপরটি দশ কারাম। নিজ কারাম হলো যারা একটু স্বচ্ছল তারা নিজেদের বাড়িতে এ উৎসবের আয়োজন করে থাকে। আর দশ কারাম হলো যেখানে সবার সহযোগিতায় একখানে এ উৎসবের আয়োজন করা হয় এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস মতে কারাম গাছের পূজা করা হয়। ওড়াঁও সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করে কারাম গাছ প্রাকৃতিক নানা রকম দূর্যোগ মোকাবিলায় তাদের সহযোগিতা করেছে। এ গাছের ডালকে আঁকড়ে ধরে তারা যুগ যুগ ধরে বেঁচে ছিলো।
কারাম উৎসবে এসে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে জসিম উদ্দীন বলেন, এ সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন যাপন খুব সহজ সরল। তারা অনেক পরিশ্রমী। তাদের উৎসবের আমেজ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। আমি দারুন উপভোগ করছি। তাদের সরল আতিথিয়েতা আমাকে খুব আপন করে নেয় তাদের।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার খাইরুল ইসলাম উৎসবমুখোর পরিবেশ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, ওড়াঁও সম্প্রদায় একটি অনন্য জাতিসত্তা। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও সৃষ্টি কালচার রয়েছে। তাদের ধর্মীয় উৎসব চমৎকার। তাদের নিজস্ব সত্তা যেন কালের বিবর্তনে হারিয়ে না যায়। যেন সহস্র বছর ধরে তারা টিকে থাকে এবং স্বাবলম্বী হতে পারে এর জন্য প্রশামনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।
সাময়িক বরখাস্তের পর রাতের আঁধারে কোয়ার্টার থেকে পিকআপযোগে নিজস্ব ও সরকারি মালামাল সরানোর সময় ১৭ বিয়ে কান্ডের সেই বরখাস্তকৃত বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীকে আটক করেছে স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে বরিশাল বিমানবন্দর থানা পুলিশ জনরোষ থেকে তাকে (কবির) বুধবার দিবাগত রাতে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় বন বিভাগের কোস্টাল সার্কেল কার্যালয়ের সামনে থেকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যান। পরবর্তীতে বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে পুলিশ রাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দর থানার ওসি মো. আল-মামুন উল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন-১৭ বিয়ে কান্ডের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তের পর গত বুধবার রাত নয়টার দিকে কোয়ার্টার থেকে পিকআপযোগে নিজস্ব ও সরকারি মালামাল নিয়ে কবির হোসেন পালানোর চেষ্টা করছিলেন। পরে এলাকাবাসী তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।
বরিশাল সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান সাকিব বলেন, দায়িত্বে থাকাবস্থায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারী বিভিন্ন সময় ধার বাবদ আমার কাছ থেকে ছয় লাখ ৯৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয়দের কাছ থেকেও সে বিভিন্ন সময় টাকা নিয়ে আর পরিশোধ করেনি। হঠাৎ করেই বুধবার রাতে সরকারি বাংলো থেকে মালামাল নিয়ে তিনি চলে যাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে আমিসহ অন্য পাওনাদাররা এসে তাকে আটক করেছি। তাছাড়া তিনি পিকআপযোগে যে মালামাল নিচ্ছিলেন তার মধ্যে সরকারি কিছু মালামালও রয়েছে। সেগুলো আমি নামিয়ে রেখেছি।
বরিশাল বিমানবন্দর থানা পুলিশ জানায়, সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন বাংলো থেকে সরকারি মালামাল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বরখাস্তকৃত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারী। এছাড়া তিনি ওই কর্মকর্তার কাছে টাকা পাবেন। এলাকার বেশ কিছু মানুষও তার কাছে টাকা পাবে বলে আটকে রেখেছেন।
আরও জানন, উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিত্বে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই বন কর্মকর্তাকে স্থানীয়দের কাছ থেকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে আনেন। তবে পালিয়ে যাবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাময়িক বরখাস্তকৃত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারী। এ বিষয়ে তিনি বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে উল্টো সাংবাদিকদের অভিশাপ এবং হুমকি দেন।
বরিশাল বিমানবন্দর থানার ওসি মো. আল-মামুন উল ইসলাম বলেন, বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে রাতেই তাকে (কবির) ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে নানা প্রলোভনে ১৭ বিয়ে করে দেশব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি করা বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কবির হোসেন পাটোয়ারীকে ১৬ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ এপ্রিল বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে বিয়ের নামে প্রতারণা, যৌতুক দাবি এবং নির্যাতনের অভিযোগ এনে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন খুলনা জেলার সোনাডাঙা এলাকার বাসিন্দা খাদিজা আকতার। তার আগে ২০১৯ সালে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন তার (কবির) আরেক স্ত্রী বাগেরহাটের মোংলা এলাকার নাসরিন আকতার দোলন। সেই মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। সবশেষ গত ৯ এপ্রিল দেয়া স্ত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইদুর রহমান বরিশালে সরেজমিন তদন্তে আসেন। নগরীর কাশিপুরে কোস্টাল সার্কেলে বসে অভিযোগকারী দুই স্ত্রী, তাদের স্বজন এবং বন কর্মকর্তাদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন।
ওইদিনই বিয়েপাগল বন কর্মকর্তার বিচার দাবিতে বন বিভাগের কোস্টাল সার্কেল অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী স্ত্রী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে প্রাথমিক শাস্তির অংশ হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সূত্রমতে, চাঁদপুর জেলার তুষপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেন পাটোয়ারীর ছেলে কবির হোসেন এর আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। বন বিভাগের উচ্চ পদ ব্যবহার করে ফাঁদে ফেলেন অনেক নারীকে। এ কারণে একই অভিযোগে পূর্বে আরও দুইবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন বন কর্মকর্তা কবির হোসেন। তবে পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী দীপু মনির সুপারিশে তিনি চাকরিতে পুনর্বহাল হন।
অপরদিকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ছাড়াও ১৬ সেপ্টেম্বর বরিশাল মহানগর আদালতে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফিজ আহমেদ বাবলু। আদালতের বিচারক মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।
আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩১৩টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩৫৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১০২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বুধবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য