জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি দুই দশক ধরে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার প্রক্রিয়া ২০ বছরেও শুরু করতে পারেনি ওয়াশিংটন।
সহস্রাব্দের প্রথম জঙ্গি হামলার ২১তম বার্ষিকীর চার দিন আগে হামলার মূল হোতা খালিদ শায়খ মোহাম্মদসহ আরও চারজনের আইনজীবীদের মধ্যে ১০-দিনব্যাপী বিচারপূর্ব কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পর্যায়ে দুই পক্ষের আইনজীবীরা মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করবেন।
২০০৬ সালে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তারের পর বিনা বিচারে আটক থাকা গুয়ান্তানামো বে-তে শুরু হয়েছে বিচারের এমন প্রাথমিক ধাপ।
এই বিচারের দায়িত্বে থাকা সামরিক আদালত জানায়, সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বিচারক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে চলতি বছরের ৭ নভেম্বর।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
একই সঙ্গে ওই হামলায় সৌদি আরবের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতার বিষয়ও প্রকাশ করতে বলা হয়।
সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হামলায় নিহতদের পরিবারের সাম্প্রতিক মামলা ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে আইনসভা কংগ্রেসের জোরালো চাপের পরই এফবিআইকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানায় দ্য গার্ডিয়ান।
এদিকে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক এবং সংঘাতপূর্ণ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, নাইজেরিয়ার সরকার এমন মামলার বিচার কাজ শেষ করা থেকে যোজন-যোজন দূরে রয়েছে।
বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার মামলায় দীর্ঘসূত্রতা
গত দুই দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালানো ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মামলাগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায়, অধিকাংশ মামলা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে আছে। বিচার প্রক্রিয়ায় দেখা দিয়েছে দীর্ঘসূত্রতা, দোদুল্যতা ও অনিশ্চয়তা।
তবে দুই দশক ধরেও এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের ১৩০ বছরের ফেডারেল আদালত।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১৯ জঙ্গি ছিনতাই করা চারটি উড়োজাহাজ নিয়ে হামলা চালায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগনসহ অন্তত পাঁচটি লক্ষ্যবস্তুতে। এতে নিহত হন অন্তত ৩,০০০ মানুষ।
হামলার পর দায় স্বীকার করে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। এটি ছিল সহস্রাব্দের প্রথম জঙ্গি হামলা।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর জানানো হয়, সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বিচারক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর।
স্পেনের মাদ্রিদে ২০০৪ সালে ট্রেনে বোমা হামলায় জড়িত তিন জঙ্গিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় দেশটির আদালত। ইউরোপের ইতিহাসে ভয়াবহ এই হামলায় নিহত হন অন্তত ১৯১ জন।
দুঃখজনকভাবে, জঙ্গিদের মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই হামলার মূল হোতাসহ তিনজনকে মুক্তি দেয়। নিহতদের স্বজনেরা এতে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অন্তত ১৩০ জন। কনসার্টের হল, স্টেডিয়ামসহ একাধিক স্থানে চালানো এই বন্দুক হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
হামলার চার বছর পর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে মামলার তদন্ত শেষ হয়। এরপর সবাইকে হতাশ করে ফ্রান্সের আইনজীবী জানান, আটক ১৪ জঙ্গিসহ অভিযুক্ত ২০ জঙ্গির বিচার শুরু হবে চলতি বছরে। তবে এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি শুনানির দিনক্ষণ।
২০১৬ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে গাড়িবোমা হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। শপিং মলের কাছে সেই ভয়াবহ হামলায় নিহত হন ৩০০-এর বেশি মানুষ। সংঘাতপূর্ণ দেশটির সরকার এখনও এই হামলার বিচারের কাজ শুরু করতে পারেনি।
সন্ত্রাসী হামলার মামলার বিচার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভারতের বিচার বিভাগ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা, ২০১৬ সালের উরি হামলা।
তবে, দক্ষিণ-এশিয়ার অন্যান্য দেশ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান জঙ্গি হামলার মামলা নিষ্পত্তিতে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
জঙ্গিসংক্রান্ত মামলার সুরাহা করতে পাকিস্তান সরকারের অনীহা, মামলা নিষ্পত্তিতে ধীর গতি ও রাজনৈতিক কারণে সন্ত্রাসীদের প্রতি একধরনের ছাড় দেয়ার প্রবণতা দেশটিকে জঙ্গিদের চারণভূমিতে পরিণত করেছে।
২০১৪ সালে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী একটি আদালত মুম্বাই হামলায় জড়িত জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার শীর্ষ কমান্ডার জাকিউর রেহমান লাখভিকে জামিন দেয়ার ঘটনায় ভারতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ১৬৬ জন।
প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদ ও স্বজনহারাদের আহজারি তোয়াক্কা না করে পরের বছর ১৫ জুলাই, লাহোরের সন্ত্রাসবিরোধী আদালত মুম্বাই হামলার মূল হোতা হাফিজ সায়ীদ ও তার সহযোগী হাফিজ মাসুদসহ তিনজনকে জামিনে মুক্তি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের করা বিশ্বব্যাপী কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের অন্যতম ছিল এই হাফিজ সায়ীদ। তার সম্পর্কে তথ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্র ২০১২ সালে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত চার ব্যক্তিকে চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি মুক্তি দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। একে বিচারের নামে প্রহসন উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই সাংবাদিকের পরিবার।
প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিকটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান ড্যানিয়েল পার্লকে ২০০২ সালে করাচি থেকে অপহরণ ও পরে তার শিরোচ্ছেদের ভিডিওচিত্র যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয় জঙ্গিরা।
হামলায় দায় স্বীকার ও পরবর্তীতে কালক্ষেপণ
হামলার পরপরই নিজেদের সক্ষমতার জানান দিতে দায় স্বীকার করে ভিডিও বার্তা, বিবৃতি দেয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ৯/১১-এর হামলার দুই মাস পর দায় স্বীকার করেন।
সুস্পষ্ট প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও বিচার কাজে এমন দীর্ঘসূত্রতায় নিহতের স্বজনেরা হতবাক প্রকাশ করেছেন। তারা জানতে চেয়েছেন স্বীকারোক্তি দেয়ার পরও কেন কেবল অভিযুক্তদের মানবাধিকারের প্রশ্নে বিচারের দাবি কেঁদে মরছে।
একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত জঙ্গিদের জন্মগত মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত, অন্যদিকে পরাক্রমশালী দেশটির নির্বাহী বিভাগ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে জঙ্গিদের উৎস দেশে সেনা অভিযান চালিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে চালানো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ১৭ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ লাখ ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন দ্বৈতনীতিতে হতবাক প্রকাশ করেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহতদের স্বজনেরাও। সন্ত্রাসী নির্মূলের অজুহাতে অন্য দেশে হামলা চালানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ভাবিয়েছে বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের।
অন্যদিকে, তাদের দেশে বিভিন্ন কারাগারে আটক জঙ্গিদের বিচার নিষ্পত্তির বিষয়ে ফেডারেল আদালতের অনীহাও হতবাক করেছে বিশ্ববাসীকে।
স্বঘোষিত জঙ্গিদের বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটকে রেখে আবারও বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
৯/১১-এর ওপর দেয়া মার্কিন সামরিক কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার মূল হোতা খালিদ শায়খ মোহাম্মদসহ আরও চারজন ২০০৬ সালের পর বিনা বিচারে গুয়ান্তানামো বে-তে আটক রয়েছেন।
৯/১১-এর পরবর্তী সময়ে ‘শত্রু যোদ্ধা’দের আটক রাখতে কিউবায় অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিতে অবস্থিত এই কারাগারটিকে অবিচারের প্রতীক, নির্যাতন আর আইনের শাসনের পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠান আমেরিকান সিভিল লিবারটিস ইউনিয়ন।
চাঞ্চল্যকর মামলা বিশেষত জঙ্গি হামলার ঘটনায় দীর্ঘসূত্রতাকে এড়িয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত বিচারিক রায় একটি দেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পরিচয় বহন করে। একই সঙ্গে, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার বিচারে ধীর গতি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রযন্ত্রের অনীহার পাশাপাশি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জেল হত্যা, বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাভোগ এমন সব অপ্রত্যাশিত অপরাধ ও নৈরাজ্যকে উসকে দেয়।
আরও পড়ুন:সুদানের উত্তরাঞ্চলে একটি স্বর্ণেও খনি ধসে অন্তত ছয়জন নিহত এবং প্রায় ২০ জন আটকা পড়েছে। শনিবার দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।
খার্তুম থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
রিভার নিল প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় উম অড এলাকার সোনার খনিতে গতকাল শুক্রবার এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কর্মকর্তা হাসান ইব্রাহিম কারার জানান, খনিতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে খনি ধসের কারণ তিনি উল্লেখ করেননি।
সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে উভয় পক্ষই তাদের লড়াইয়ের ব্যয় বহন করছে স্বর্ণ শিল্পের মাধ্যমে।
দেশটির সরকারি ও এনজিও সূত্রগুলো বলছে, সুদানের স্বর্ণ বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আরএসএফ-কে আমিরাত অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে, সেই অভিযোগ আমিরাত বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বৃহত্তম শহর দখলের পরিকল্পনার আগে স্বাধীনতাকামী হামাসের ব্যবহৃত উঁচু ভবনগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালানোর ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শুক্রবার গাজা শহরের একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে।
গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা অভিযান বন্ধ করার জন্য দেশে-বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও ইসরাইল রিজার্ভ বাহিনীকে ডেকে বোমাবর্ষণ তীব্র করছে এবং গাজা শহরের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
গাজা সিটি থেকে এএফপি আজ এই খবর জানায়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘গাজা শহরের বিভিন্ন অবকাঠামোগত স্থানে বিশেষ করে উঁচু ভবনগুলোতে হামাসের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত করেছে’। তারা ‘আগামী দিনে’ সেই স্থানগুলোকে টার্গেট করে অভিযান চালানোর হুমকি দিচ্ছে।
তারা বলেছে, এক ঘণ্টারও কম সময় পরে তারা এমন একটি বহুতল ভবনে আঘাত হেনেছে এবং হামাসকে ‘এলাকায় সৈন্যদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য’ এই ভবন ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছে।
এএফপি ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের আল-রিমাল পাড়ায় অবস্থিত মুশতাহা টাওয়ারটি হামাসের ঘাঁটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর ধসে পড়েছে। এর ফলে ধোঁয়া এবং ধুলোর ঘন মেঘ আকাশে উড়ছে।
এএফপি’র পরবর্তী ছবিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ এবং ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলার আগে, ‘বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল’। এর মধ্যে পূর্ব সতর্কতাও জারি করা ছিল।
গাজা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি তাঁবুতে বসবাসকারী ৫০ বছর বয়সী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আরেজ আহমেদ এএফপি’কে বলেছেন, তার স্বামী ‘মুশতাহা টাওয়ারের বাসিন্দাদের ওপরের তলা থেকে তাদের জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলতে দেখেছেন যাতে তারা হামলার আগে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে’।
তিনি টেলিফোনে বলেছেন, ‘সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার আধ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে টাওয়ারটিতে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল’।
‘কোনা নিরাপদ জায়গা নেই’
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল ইসরাইলকে ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নীতি’ অনুসরণ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। অথচ সেখানে তারা উঁচু ভবন লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজা শহরের ভেতরে এবং আশপাশে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার পুরো অঞ্চল জুড়ে কমপক্ষে ৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এএফপি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা এই প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করবে না।
গাজায় মিডিয়ার বিধিনিষেধ এবং অনেক এলাকায় প্রবেশের অসুবিধার ফলে এএফপি স্বাধীনভাবে নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা বা ইসরাইলি সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত টোল এবং বিবরণ যাচাই করতে পারছেনা।
আহমেদ আবু ওতফা (৪৫) বলেছেন, ‘ইসরাইল টাওয়ার এবং অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোতে বোমা হামলা শুরু করার খবরটি ভয়াবহ’। তিনি পশ্চিম গাজা শহরের তার আত্মীয়দের আংশিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পঞ্চম তলার অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমার সন্তানরা আতঙ্কিত এবং আমিও। কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। আমরা কেবল আশা করি মৃত্যু দ্রুত আসবে।’
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ইজ্জত আল-রিশক বলেছেন, ইসরাইল দাবি করছে হামাস গোষ্ঠীটি বহুতল ভবনগুলোতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এই অভিযোগ ‘একটি তুচ্ছ অজুহাত এবং স্পষ্ট মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’
জাতিসংঘের অনুমান গাজা শহর এবং এর আশপাশে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ বাস করে। যে অঞ্চলে গত মাসে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস গাজায় অনাহারে মৃত্যুর ‘বিপর্যয়’ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৭০ জনেরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে মারা গেছে।
এদিকে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভোট এএফপি’কে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘এই বিশাল মানবিক সংকটে তার দায়িত্ব পালন করছে না’।
‘নরকের দরজা’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘গাজার নরকের দরজা থেকে এখন বোল্টটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে’। তিনি যুদ্ধ শেষ করার জন্য হামাসকে ইসরাইলের শর্ত মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অভিযান তীব্রতর করার অঙ্গীকার করেছেন।
ইসরাইল আশা করছে, তাদের নতুন আক্রমণ দক্ষিণে প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে।
যুদ্ধের সূত্রপাতকারী ইসরাইলের ওপর আক্রমণের সাতশ’ দিন পর হামাসের সশস্ত্র শাখা ফুটেজ প্রকাশ করেছে যেখানে গত মাসের শেষের দিকে গাজা শহরে হামলায় আটক দুই জিম্মিকে জীবিত দেখানো হয়েছে।
ভিডিওটিতে জিম্মি গাই গিলবোয়া-দালালকে একটি গাড়িতে করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা শহরে পরিকল্পিত আক্রমণ না চালানোর জন্য আহ্বান জানাতে দেখা যাচ্ছে।
পরে এটিতে তাকে আরেক বন্দী অ্যালন ওহেলের সাথে দেখা করতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলার সময় অপহরণের পর তাকে প্রথমবারের মতো কোনো ভিডিওতে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, নেতানিয়াহু উভয় জিম্মির পরিবারের সাথে কথা বলেছেন।
নেতানিয়াহু তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত মন্তব্যে বলেছেন, ‘কোনো খারাপ প্রচারণামূলক ভিডিও আমাদের দুর্বল করতে পারবে না অথবা হামাসকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্প থেকে সরাতে পারবে না।’
জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি চুক্তির দাবিতে শুক্রবার জেরুজালেম এবং তেল আবিবে জিম্মিদের আত্মীয়স্বজন এবং সমর্থকরা সমাবেশ করেছেন।
হামাসের হামলায় আটক ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৪৭ জন এখনও গাজায় রয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি এরমধ্যে ২৫ নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, এই হামলার ফলে ১,২১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
কর ফাঁকির অভিযোগ স্বীকার করার পর শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনার। তিনি লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার পদও ছেড়ে দিয়েছেন।
এটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের জন্য একটি নতুন ধাক্কা। ৪৫ বছর বয়সী রেনার হলেন মন্ত্রীপরিষদের অষ্টম সদস্য, যিনি স্টারমারের সরকার থেকে বিদায় নিলেন।
স্টারমারকে লেখা চিঠিতে রেনার কর ফাঁকির কথা স্বীকার করে বলেছেন, 'আমার ভুলের জন্য আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।'
সাম্প্রতিক জরিপে লেবার পার্টি ব্রিটেনের জনপ্রিয় রিফর্ম ইউকে'র চেয়ে পিছিয়ে থাকায় স্টারমার তার কর্তৃত্ব এবং দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই সময় ডেপুটি হারানো তার জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর, বিশেষ করে রেনার।
উপ-প্রধানমন্ত্রী একজন শ্রমিক শ্রেণীর কিশোরী মা থেকে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে উন্নীত হয়েছেন। তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য লেবারের বাম এবং মধ্যপন্থী শাখার মধ্যে মধ্যস্থতা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বলতে গেলে দলে স্টারমারের চেয়েও তার আবেদন ব্যাপক বিস্তৃত ছিল।
স্টারমারের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত রেনার এর আগে গত বুধবার কর পরিশোধের ক্ষেত্রে ভুল স্বীকার করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, স্টারমারের সরকার যে ৮ জন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যকে হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনই অন্যায় কাজের জন্য পদত্যাগ করেছেন। ১৯৭৯ সালের পর থেকে ব্রিটেনে স্টারমারের সরকারেই সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও রাশিয়াকে চীনের কাছে হারিয়ে ফেলেছে। সেই সঙ্গে পোস্টে তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে তিনটি দেশেরই ‘সমৃদ্ধ’ ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন।
বেইজিং যখন একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ওয়াশিংটনের নেতা নয়াদিল্লি ও মস্কোকে নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন।
সপ্তাহের শুরুতে তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে আতিথ্য দেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা ভারত এবং রাশিয়াকে সবচেয়ে গভীর অন্ধকারতম চীনের কাছে হারিয়ে ফেলেছি। তাদের একসঙ্গে দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ হোক।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্যগুলো নয়াদিল্লি, মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে গভীরতর সম্পর্কের বিষয়ে ট্রাম্পের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রকাশ্য স্বীকৃতি।
তিন পারমাণবিক শক্তিধর দেশের নেতা বেইজিংয়ে প্রকাশ্যে জ্বালানি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ববাণিজ্য নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ চলছে।
কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটন ভারতকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে আসছে। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক উভয় প্রশাসনই নয়াদিল্লিকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করেছে।
ট্রাম্প নিজেই তার প্রথম মেয়াদে ভারতের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ রেখেছিলেন। তবুও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে ফাটলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জ্বালানি বাণিজ্যের সমালোচনা ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ককে দুর্বল করে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এক দিনে কমপক্ষে আরও ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৪ জন। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্বিচার বোমা বর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে গাজা সিটির পাড়ামহল্লা। আতঙ্কে পালাতে চাইছেন মানুষ, কিন্তু গোটা উপত্যকাতেই নিরাপদ আশ্রয় নেই। টানা ২৩ মাস ধরে চলছে এ নির্মম হামলা।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ইতোমধ্যেই গাজা সিটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘আতঙ্কের নগরী’ বলে। গত বৃহস্পতিবার তাল আল-হাওয়া এলাকায় একটি তাঁবুতে হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজনই শিশু।
হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত তাঁবুগুলোর সামনে ফিলিস্তিনিরা ভাঙাচোরা মালপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রক্তে ভেজা একটি গোলাপি রঙের স্যান্ডেলও মেলে। ইসরা আল-বাসুস এএফপিকে বলেন, ‘আমি ও আমার সন্তানরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বোমা পড়ল, শরীরে টুকরো এসে লাগল, আমার চার সন্তান আতঙ্কে চিৎকার শুরু করল।’
গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়াবহ বোমা বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। তুফাহ পাড়ায় অন্তত আটজন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন বলে জানান সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল।
শুজাইয়ায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। আর জেইতুনে ধ্বংসস্তূপ থেকে আল-ঘাফ পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছেন নিরাপত্তার খোঁজে, কিন্তু যেখানে যাচ্ছেন সেখানেও ইসরায়েলি বিমান ও গোলাবর্ষণ তাদের পিছু ছাড়ছে না।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেছেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ আটকা পড়েছেন এই ‘ভয়, পালানো ও জানাজায় ভরা নগরীতে’। শুধু গত বৃহস্পতিবারই গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন।
ইসরায়েলি সেনাদের তথ্যানুসারে,তারা এখন গাজা সিটির ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে অভিযান আরও জোরদার করবে।
আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি স্যাটেলাইট ছবিতে অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান জেইতুন এলাকায় মোতায়েন থাকতে দেখেছে।
গাজা কতটা দখলে, জানাল ইসরায়েলি বাহিনী
বর্তমানে গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। একই সঙ্গে হামাসকে পরাজিত করার জন্য অভিযান আরও জোরদার করছে।
গত বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফরিন বলেন, অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আগামী দিনে তা আরও সম্প্রসারিত হবে।
এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেন এবং প্রায় ৮০ হাজার রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেন। চলমান অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গিডিওনস চারিয়টস বি’। সেনাদের দাবি, আগের ধাপে গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হামাসকে বন্দি বিনিময়ের চাপে রাখা হয়েছিল।
হামাস নতুন এই অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের আলোচনাকে উপেক্ষা করছে। সংগঠনটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেও যেকোনো সমঝোতার ‘প্রধান অন্তরায়’ বলে অভিযুক্ত করেছে।
অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে বন্দি মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়া এবং গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তবে ইসরায়েল এখনো সব বন্দিকে একসঙ্গে মুক্তির দাবি করছে।
এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার আল-সাবরা এলাকায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। একটি বাড়ি ও বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে হামলায় আরও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ২৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে ক্ষুধায় বা সহায়তা চাইতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে সুমুদ ফ্লোটিলা
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। তাদের লক্ষ্য হলো- ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অবরোধ ভেঙে সেখানে সাহায্য পৌঁছানো, যেখানে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত রোববার স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জাহাজগুলো যাত্রা শুরু করে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে তারা প্রথমে ফিরে যায়, পরে সোমবার আবার যাত্রা শুরু করে।
ঝড়ের পর মেনোরকায় জাহাজগুলো কিছু মেরামতকাজ সম্পন্ন করে এবং গত বৃহস্পতিবার তিউনিসিয়ার উদ্দেশে আবার যাত্রা শুরু করে।
আগামী কয়েকদিনে তারা তিউনিসিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য অংশগ্রহণকারী নৌযানের সঙ্গে মিলিত হবে।
সুমুদ ফ্লোটিলা একটি আন্তর্জাতিক নাগরিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং ইসরায়েলি নৌঅবরোধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ জানানো।
টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা যদি নতুন একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেন, তবে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারেন। প্রস্তাবিত প্যাকেজ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য অর্জিত হলে মাস্ককে দেওয়া হবে অতিরিক্ত ৪২৩.৭ মিলিয়ন টেসলা শেয়ার। বর্তমান বাজারদরে এর মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে এই শেয়ার হাতে পাওয়ার শর্ত হচ্ছে- আগামী বছরগুলোতে টেসলার বাজার মূল্য নাটকীয়ভাবে বেড়ে ৮.৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছাতে হবে। ফলে বর্তমানের তুলনায় শেয়ারগুলোর দামও কয়েকগুণ বেড়ে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হবেন মাস্ক। বর্তমানে টেসলার বাজারমূল্য ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এনভিডিয়ার তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে ৪.১৭ ট্রিলিয়ন বাজার মূল্যের এনভিডিয়া বিশ্ববাজারে সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি।
টেসলার পক্ষ থেকে শেয়ার হোল্ডারদের দেওয়া নথিতে মাস্কের এই পেমেন্ট পরিকল্পনার পাশাপাশি আরেকটি প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, টেসলা যেন মাস্কের মালিকানাধীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান এক্সএআই-এ বিনিয়োগ করে। এক্সএআই সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার) কিনে নিয়েছে। ২০২২ সালে মাস্ক ব্যক্তিগতভাবে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে এই মাধ্যমটি অধিগ্রহণ করেছিলেন।
শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, বর্তমানে মাস্ক টেসলার ৪১০ মিলিয়ন শেয়ারের মালিক, যার বাজার মূল্য ১৩৯ বিলিয়ন ডলার। স্পেসএক্স, এক্সএআই এবং অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের কারণে তিনি ইতোমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৭৮ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০১৮ সালে মাস্ককে দেওয়া আরেকটি শেয়ার অপশন প্যাকেজ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করেছিলেন। তবু শেয়ার হোল্ডাররা বারবার তার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রচেষ্টায় মাস্ক বর্তমানে টেসলার মোট শেয়ারের প্রায় ১৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে টেসলার শেয়ার প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় উঠলেও রাজনৈতিক সম্পর্ক, বিক্ষোভ ও বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে পরে শেয়ারের দর পড়ে যায়। বর্তমানে কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও গত ডিসেম্বরের শীর্ষ অবস্থান থেকে এখনো ২৬ শতাংশ নিচে রয়েছে।
তারপরও মাস্ক দাবি করছেন, স্বচালিত গাড়ি ও রোবোট্যাক্সি সেবা ভবিষ্যতে বিপুল মুনাফা বয়ে আনবে। পাশাপাশি তিনি এমন মানবাকৃতির রোবট বাজারে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা গাড়ির ব্যবসাকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে এসব এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন প্রস্তাবের পর প্রি-মার্কেট ট্রেডিংয়ে টেসলার শেয়ারের দাম অবশ্য সামান্য বেড়েছে।
শ্রীলঙ্কায় স্থানীয় পর্যটকবাহী একটি বাস সবুজ চা বাগানঘেরা পাহাড়ি শহর ভ্রমণের সময় প্রায় এক হাজার ফুট (৩০০ মিটার) নিচে পড়ে গিয়ে ১৫ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে শুক্রবার পুলিশ জানিয়েছে।
কলম্বো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির রাজধানী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার (৮১ মাইল) পূর্বে পাহাড়ি এলাকা এল্লায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় সময় বাসে থাকা আরও ১৬ জন আহত হয়েছেন।
পর্যটক বহনকারী বাসটি শীতল পাহাড় থেকে ফেরার পথে অন্য একটি বাহনকে ধাক্কা দেয়। ফলে রেলিং ভেঙে বাসটি রাস্তা থেকে প্রায় এক হাজার ফুট নিচে পড়ে যায়।
মে মাসের পর থেকে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ওই সময় কোটমালেতে একটি বাস দুর্ঘটনায় ২৩ জন যাত্রী নিহত হয়।
দ্বীপের আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তাগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কায় প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।
মন্তব্য