তালেবানের নিয়ন্ত্রণমুক্ত আফগানিস্তানের একমাত্র প্রদেশ পাঞ্জশির উপত্যকার দখল নিয়ে তীব্র লড়াই হয়েছে সংগঠনটির যোদ্ধা ও স্থানীয় বিদ্রোহীদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবারের ওই সংঘর্ষে দুই পক্ষই ব্যাপক প্রাণহানির দাবি করে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুল পতনের পর কয়েক হাজার স্থানীয় মিলিশিয়া, আফগান সেনাবাহিনী ও বিশেষ বাহিনীর সাবেক সদস্যদের নিয়ে পাঞ্জশিরে জাতীয় প্রতিরোধ বাহিনী (এনআরএফএ ) গড়ে তোলেন স্থানীয় নেতা আহমেদ মাসুদ।
আশির দশকে সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা ছিলেন আহমেদ শাহ মাসুদ। তারই ছেলে আহমেদ মাসুদ।
সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নৈপুণ্যের জন্য আহমেদ শাহ মাসুদ ‘পাঞ্জশিরের সিংহ’ পরিচিতি পান।
পাঞ্জশিরে নব্বই দশকেও তালেবানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আহমেদ শাহ মাসুদ।
২০০১ সালে আততায়ীর হাতে প্রাণ হারান ৪৮ বছর বয়সী সাবেক মুজাহিদীন কমান্ডার মাসুদ।
হিন্দুকুশ পর্বতমালার নিকটবর্তী পাঞ্জশির আজ পর্যন্ত কখনও তালেবানের হাতে পড়েনি।
পাঞ্জশির উপত্যকাটি খাড়া। ভৌগোলিক এ অবস্থানের কারণে বাইরে থেকে এর ওপর হামলা চালানো কঠিন।
এনআরএফএ বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন রয়েছে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহর।
কাবুল পতনের দিন ঘানির দেশত্যাগের পর নিজেকে আফগানিস্তানের ‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন সালেহ।
পাঞ্জশিরকে ঘিরে তালেবান ও এনআরএফএর সমঝোতার চেষ্টা বিফলে গেছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ জন্য দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করছে।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধারা পাঞ্জশিরে ঢুকে কয়েকটি অঞ্চল দখল করেছে।
‘স্থানীয় সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় আমরা সেখানে সামরিক অভিযান শুরু করি।’
অবশ্য এনআরএফএর এক মুখপাত্র দাবি করেন, পাঞ্জশিরের সব প্রবেশপথ ও গিরিপথের নিয়ন্ত্রণ তাদের যোদ্ধাদের হাতেই রয়েছে।
ওই মুখপাত্র বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী পারওয়ান প্রদেশের জবুল-সরাজ শহর থেকে পাঞ্জশিরের শতুল জেলায় ঢোকার বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে শত্রুরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের শুরুতে সংঘর্ষ বাধার পর দুটি ফ্রন্টে এরই মধ্যে অনেক তালেবান যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে।’
হতাহতের বিষয়ে তালেবান ও এনআরএফএ কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা দিচ্ছে, রয়টার্সের পক্ষে যা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, চারদিক থেকে পাঞ্জশির ঘিরে ফেলা হয়েছে। বিদ্রোহীদের বিজয় অসম্ভব।
এদিকে তালেবানের হাতে আত্মসমর্পণ করবে না বলে জানিয়েছে এনআরএফএ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত জসীম উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম নিজউবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাড্ডা থানায় একটি মারামারির ঘটনায় জসীম উদ্দীন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গ্রেপ্তার আসামিকে বাড্ডা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল আজ উপস্থিত ছিলো। এই বৈঠকে সবাই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে একমত পোষণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অপপ্রচার ও উস্কানির বিরুদ্ধে আমরা সাহসী, অটুট ও ঐক্যবদ্ধ থাকবো। ভবিষতে কোনো ধরনের উস্কানি এলে আমরা আমাদের ঐক্য আরও বেগবান দেখানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা গোটা জাতি ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। আমরা সবাই মিলে একটি সমাবেশ করতে পারি কি-না, এমনকি নিরাপত্তার কাউন্সিল করতে পারি কি-না সেই প্রস্তাব বৈঠকে আনা হয়েছে।
‘এই সভার মূল সুর ছিলো- আমাদের মধ্যে মত, পদ, আদর্শের ভিন্নতা থাকবে; কিন্তু দেশ, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে আমরা সবাই এক। সবার ওপরে দেশ এবং এটা থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হবো না।’
বাংলাদেশকে দুর্বল, শক্তিহীন, নতজানু ভাবার কোনো অবকাশ নেই বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
আরও পড়ুন:নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, অতীতের নির্বাচনে অনেক অপরাধ হয়েছে। সেসব অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। সেটাও আমরা আলোচনা করেছি। যারা অপরাধ করেছেন, যাদের অপরাধ প্রমাণ হবে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আসতে হবে।
নির্বাচন ভবনে বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
বিগত তিন কমিশন নাকি সব কমিশনকে বিচারের আওতায় আনা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘যারা অপরাধ করেছে, সবাইকে আসতে হবে। এগুলো তো সুস্পষ্টভাবে আলোচনা হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ৭৩ থেকে ৯০ ধারার মধ্যে নির্বাচনের অপরাধের বিষয়গুলো বর্ণনা করা আছে। এগুলোর যাতে যথাযথ প্রয়োগ হয় সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশন তদন্তসাপেক্ষে নির্বাচন বাতিল করতে পারতেন। শুধু বাতিল নয়, তদন্তসাপেক্ষে পুনঃনির্বাচন দেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ক্ষমতা তারা ব্যবহার করেননি।’
তিনি আরও বলেন, নতুন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর। আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে সুচারুভাবে, সম্পূর্ণভাবে শেষ করার জন্য সংস্কার প্রস্তাব দেবো। যেগুলোর কিছু তারা বাস্তবায়ন করবে, আবার কিছু সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবায়ন করবে।’
কমিশন প্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন ও তাদের দায়দায়িত্ব, ক্ষমতা, স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার হওয়া উচিত, আদালতের কী ভূমিকা থাকবে, হলফনামা না ভোট, সীমানা পুনঃনির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালট, প্রবাসী ব্যালট, ভোটার তালিকা, নির্বাচনি অপরাধ, এনআইডিসহ নির্বাচনের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি, কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছি। এগুলো নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমাদের এখনও এক মাস সময় আছে। আশা করি এক মাসের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে দিতে পারবো। ওনাদের (ইসি) কিছু মতামত চেয়েছি, ওনারা কিছু শেয়ার করতে চাইলে শেয়ার করবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে দিনকে রাত, রাতকে দিন করা ছাড়া সবই কমিশন করতে পারে। আইনে বলা আছে, আদালতের সুস্পষ্ট বলা আছে।
‘আলতাফ হোসেন বনাম আবুল হোসেনের মামলায় আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে- সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে আইন-কানুন বিধিবিধানের সঙ্গে সংযোজন করতে পারে। যেখানে অস্পষ্টতা আছে, যেখানে গ্যাপ আছে, সেগুলো তারা পূরণ করতে পারে।’
নতুন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাদের কোনো মতামত দিয়েছে কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়নি৷ আমাদের মতবিনিময়ের মাধ্যমে অনেক কিছু উঠে এসেছে। মনে হলো আমাদের কোনো মতপার্থক্য নেই৷ ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। আমরা সহায়তা করতে একপায়ে রাজি আছি। আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই।’
এর আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা ও সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে থাকলে বা থাকতে পারলে নির্বাচন যতটা কঠিন হতো, তার চেয়েও আগামী নির্বাচন বেশি কঠিন হবে। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে এবং অনেক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বুধবার ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা যাদের ভাবতাম তারা মাঠে নেই বা মাঠে দুর্বল, আল্লাহর ওয়াস্তে এ কথা মন থেকে সরিয়ে দিন।
‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আপনি যেহেতু এ দলের প্রতিনিধি, আপনার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দল- যা-ই হোন না কেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এটা একটু চিন্তা করুন যে বহু ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে আমাদের ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আচরণ সেরকম হতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিশিরাতের নির্বাচনে, ব্যালট চুরির নির্বাচনে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ম্যান্ডেটে। আমরা সেই নির্বাচনে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে, স্বচ্ছভাবে, সুন্দরভাবে, নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দেবে।
‘সেটা অর্জন করতে হলে আপনাদের অনেক কিছুর পরিবর্তন করতে হবে। আপনাদের আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা পরিবর্তন করতে হবে। বারে বারে আমি বলছি- আপনারা জনগণকে সঙ্গে রাখুন, জনগণের সঙ্গী হোন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কেউ ক্ষমতায় যাব না। আপনারা কেউ কিন্তু ক্ষমতায় যাবেন না। আপনারা মানুষের সমর্থন পেলে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতা দেবে না, মানুষ আপনাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে।
‘পার্থক্যটা বুঝতে হবে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ওরা জনসমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়নি। ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় ছিল। আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে।’
বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে ১৫ বছরে আমাদের দেশের ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যেই তা আবিষ্কার করা গেছে। এর মানে ভেতরে আরও অনেক কিছু আছে। দেশের কয়েক বছরের বাজেটের সমান টাকা চলে গেছে।
‘পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের টাকা আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একটা সামঞ্জস্যের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
‘ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লোকাল ফোরামের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু করেছে। আমরা অবজারভ করব, তারা সেটা কতটুকু করতে পারে। যদি পারে তাহলে ভালো, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাবো। আর কী পারে সেটা দেখে জনগণ যদি আমাদের ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ দেন; তাহলে বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বন্দোবস্ত করেই ছাড়ব।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামের সহযোগিতা নেব। তবে এর বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রাইভেট সংস্থাগুলো আছে; তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। আমাদের দেশের সম্পদ (পাচার হওয়া টাকা) দেশের মানুষের সম্পদ যে এনে দিতে পারবে; আমরা তার সঙ্গেই কথা বলব, বসব।’
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ২৫ জনকে সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানকে হত্যাচেষ্টার মামলা থেকে খালাস দিয়েছে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
পুলিশ বুধবার মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় বিএনপি চেয়ারপারসনসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালতের মহানগর হাকিম (এমএম) শরিফুর রহমান।
খালাস পাওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের ব্যানারে শাহজাহান খানের নেতৃত্বে শত শত মানুষ গুলশান এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করে। এ সময় মামলার আসামিরা সমাবেশে বোমা নিক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
ঢাকা জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বাদী হয়ে বেগম খালেদা জিয়াসহ ১৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
তবে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী ও প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবদুস সোবহান।
আরও পড়ুন:তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ভারতের শাসক গোষ্ঠী বিভেদের রাজনীতি ও বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছে। ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো দু’দেশের জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি চায় না।
মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ও এক্স অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে তথ্য উপদেষ্টা একথা বলেন।
বাংলাদেশে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার ও সহিংসতা এবং আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে তিনি এই বিবৃতি দিলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে; তারা আমাদের স্টেকহোল্ডার। বাংলাদেশে চলমান গণঅভ্যুত্থানের সময় কলকাতা ও দিল্লির ছাত্ররা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনার নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
ভারতের এই গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষেরা বাংলাদেশের বন্ধু উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘তবে ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো এ ধরনের গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি চায় না। তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং এর ছাত্রদের রাজনৈতিক জাগরণকে হুমকি হিসেবে দেখে। ফলে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করছে।’
ইংরেজিতে লেখা বিবৃতিতে তিনি বলেন, “দিল্লি ‘সংখ্যালঘু নিপীড়ন’-এর ধুয়া তুলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও দেশ-পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।”
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা জোর দিয়ে আসছি যে ভারত সরকারকে বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা বন্ধ করতে হবে এবং ন্যায়, ন্যায্যতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
‘বাংলাদেশ হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পূর্ণ নাগরিক অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আওয়ামী লীগের আমলেই সংখ্যালঘুরা সর্বোচ্চ নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছে। তবুও দিল্লি নিঃশর্তভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে।’
ভারত তার নিজের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়নকারী ও গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে আশ্রয় ও সমর্থন দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, গণহত্যা ও শিশু হত্যার জন্য দায়ী পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ভারত সরকার অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকিতে রয়েছে।
‘ভারতের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা ভুলে গেলে চলবে না।
বিজেপি বাংলাদেশকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে এমনটি হলে তা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ-বিরোধী ও মুসলিম-বিরোধী রাজনীতি ভারতের জাতীয় স্বার্থে কাজ করবে না বা এর ঐক্যে অবদান রাখবে না। তাই আমরা ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করে গণতন্ত্রের প্রতি সম্প্রীতি ও সম্মান বজায় রাখার আহ্বান জানাই।’
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐক্যের ডাকের সঙ্গে বিএনপি একমত। তবে সেসঙ্গে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ চায়। নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ হয়ে গেলে আর কেউ ষড়যন্ত্র করার সাহস পাবে না বলে মনে করে দলটি।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। এর আগে তার নেতৃত্বে বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এই সদস্য বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
‘জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রকেও এদেশের ছাত্র-জনতা মিলে আমরা সবাই মোকাবিলা করব।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘এই সরকার জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। তাই আমরা বলেছি অতি দ্রুত সংস্কার সাধন করে নির্বাচনের জন্য একটা রোডম্যাপ দিতে। জনগণ রোডম্যাপ পেয়ে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে যেসব ষড়যন্ত্র এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেসব ষড়যন্ত্র আর কেউ করার সাহস পাবে না।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ এই ডিসেম্বরে লাখো মানুষের শাহাদাতের বিনিময়ে গণতন্ত্রের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য স্বাধীনতা পেয়েছে। আজকের এই বিজয়ের মাসে আমাদের সবার প্রত্যয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এই দেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পতিত সরকার বিদেশ থেকে যে ষড়যন্ত্র করছে সেই ফ্যাসিস্ট, পতিত সরকারের বিরুদ্ধে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন।’
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছি যে জনগণ যেমনিভাবে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছে, তাদের এবং তাদেরকে যারা সহযোগিতা করছে তাদের ষড়যন্ত্রকে সেভাবে এদেশের ছাত্র-জনতা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য