পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭৩ জনের বেশি স্কুলশিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আট মাসে এক হাজারের বেশি স্কুলশিক্ষার্থী অপহরণের শিকার হয়েছে।
জামফারা প্রাদেশিক পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ শিহু এক বিবৃতিতে জানান, প্রত্যন্ত কায়া গ্রামে স্থানীয় সময় বুধবার সকালে একটি সরকারি স্কুলে হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের বড় একটি দল।
তিনি বলেন, ‘হামলার পরপরই স্কুলের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্র ডাকাতরা।’
শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
নাইজেরিয়ায় বিভিন্ন অপরাধী চক্র স্থানীয়ভাবে ‘ডাকাত’ হিসেবে পরিচিত। অনেক বছর ধরে স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি তৈরি করে চলেছে সন্ত্রাসীরা। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে বেশ হিমশিম খাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো।
প্রায়ই বিপুলসংখ্যক স্কুলশিক্ষার্থীকে অপহরণের পর অভিভাবকদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হলেও হত্যার শিকারও হয়েছে অনেকে।
চলমান পরিস্থিতিতে জামফারাসহ নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি প্রদেশে বাসিন্দাদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। গণঅপহরণ ও অন্যান্য সহিংসতা ঠেকাতে নেয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়া একটি বাসের ৪৬ যাত্রীর মধ্যে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পরিবহন বিভাগ।
আল জাজিরা জানায়, বৃহস্পতিবারের ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী আট বছর বয়সী এক মেয়ে, যাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, জোহানেসবার্গ থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে মামাতলাকালা এলাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেতুর ব্যারিয়ারে ধাক্কা খায় বাসটি। পরে ১৬৪ ফুট নিচের খাদে পড়া যানটিতে আগুন ধরে যায়।
পার্শ্ববর্তী দেশ বতসোয়ানা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার লিমপোপো প্রদেশের মরিয়া যাওয়ার পথে বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ইস্টার সানডে উপলক্ষে লিমপোপোতে জনপ্রিয় উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ বছর ৩১ মার্চ দিবসটি উদযাপন করা হবে।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পূর্ণ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবহনমন্ত্রী সিন্ডিসিওয়ে চিকুঙ্গা।
দুর্ঘটনায় কিছু কিছু যাত্রীর দেহ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া তা শনাক্ত করা যাবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার দপ্তর জানায়, বাস দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বতসোয়ানার প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন:পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে একটি যাত্রীবাহী বাস সেতু থেকে নদীতে পড়ে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে মালিয়ান শহর কেনিয়েবা থেকে বুরকিনা ফাসো যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাসটিতে মালিসহ পশ্চিম আফ্রিকার অন্য দেশের নাগরিকও ছিলেন।
পশ্চিম আফ্রিকায় বেশির ভাগ গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া ও বেপরোয়াভাবে চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
২০২৩ সালে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকাতে বিশ্বের যানবাহন সুবিধার মাত্র দুই শতাংশ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে মহাদেশটিতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর একটি মসজিদে হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে একই দিনে একটি ক্যাথলিক গির্জায় হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
একটি নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে জানায়, স্থানীয় সময় রোববার ভোর ৫টার দিকে ফজরের নামাজের সময় কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি নাটিয়াবোনি শহরের একটি মসজিদে ঢুকে হামলা চালায়। এতে নামাজে থাকা অনেক মুসলিম নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই পুরুষ। নিহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
বেনিন এবং টোগোর সীমান্তের কাছাকাছি বুরকিনার এ অঞ্চলটি ২০১৮ সাল থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা নিয়মিত আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
এদিকে মসজিদে হামলার একই দিনে বুরকিনা ফাসোর সাহেল অঞ্চলের ডোরি শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এসসাকানে গ্রামে সমাবেশের সময় একটি ক্যাথলিক গির্জায় হামলা করা হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ জন বেসামরিক নিহত এবং দুজন আহত হয়েছে বলে জানান গির্জার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
সম্প্রতি বুরকিনা ফাসোর উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি সামরিক দলও হামলার শিকার হয়।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি) অনুসারে, ২০১২ সালে মালি থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় বুরকিনা ফাসোতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গেছে। জাতিসংঘ বলছে, দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বুরকিনা ফাসোর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা বর্তমানে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। দেশটির কর্তৃপক্ষ মালি থেকে আসা আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এসব গোষ্ঠী সাহেল অঞ্চলের বিশাল অংশ দখল করেছে এবং লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।
এ ছাড়া গত তিন বছরে দেশটির মসজিদ ও গির্জাগুলোকে বারবারই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগে দুইজন নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
নাইরোবির এমবাকাসি পাড়ায় স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতে একটি গ্যাস রিফিলিং কোম্পানিতে বিস্ফোরণটি ঘটে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
দেশটির সরকারের মুখপাত্র আইজ্যাক মওয়াউরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, আগুনের ঘটনায় গ্যাস রিফিলিং কোম্পানির ভবনটি পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দগ্ধ অবস্থায় দুইজনকে হাসপাতালে নেয়া হলে তাদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও ২২২ জনের মতো আহত হয়েছে।
রয়টার্সকে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এ আগুন নিকটবর্তী একটি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এতে ওই স্থানের বেশ কয়েকটি যানবাহন এবং বাণিজ্যিক ও আবাসিক সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
কেনিয়ার রেড ক্রস জানিয়েছে, নাইরোবির বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৭১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:আফ্রিকার দেশ মালিতে এক দশক পর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার।
মিশনটির মুখপাত্র ফাতৌমাতা কাবার বরাত দিয়ে সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মালিতে জাতিসংঘের ইউএন মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্টাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি (এমআইএনইউএসএমএ) নামে পরিচিত মিশনটির রাজধানী বামাকোর সদর দপ্তরে জাতিসংঘের পতাকা নামিয়ে ফেলেছে।
মুখপাত্র কাবা জানান, পতাকা নামিয়ে ফেলার বিষয়টি প্রতীকী, যা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি বোঝায়।
তবে মিশনের কিছু কাজকর্ম এখনও চলছে, যেগুলো জানুয়ারির পর সমাপ্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
দেশটিতে ২০১৩ সালে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করেছিল জাতিসংঘ। ২০২০ সালে সামরিক সরকার মালির শাসনক্ষমতা নেয়ার পর গত জুনে তারা এ শান্তিরক্ষা মিশনটি বন্ধ করার দাবি জানায়।
তারা আর মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতি দেখতে চায় না বলে জানান।
আরও পড়ুন:নাইজেরিয়ায় বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে চালানো সামরিক ড্রোন হামলায় ভুলবশত ৮৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
আল জাজিরার মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাদুনা রাজ্যের তুদুন বিরি গ্রামে রোববার রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। মুসলমানরা সেখানে ধর্মীয় উৎসবে জড়ো হয়েছিলেন।
কাদুনা গভর্নর উবা সানি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় ভুলে বেসামরিকদের হত্যা করা হয়েছে। এ হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন।’
ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, ৮৫টি মরদেহ এখন পর্যন্ত কবর দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অনুসন্ধান কাজ চলছে।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নাইজেরিয়া দপ্তর ওই এলাকায় তাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের বরাত দিয়ে বলছে, হামলায় অন্তত ১২০ জন নিহত হয়েছেন।
অ্যামনেস্টির নাইজেরিয়ার পরিচালক ইসা সানুসি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে।
নাইজেরিয়ার উপদ্রুত অঞ্চলে বাসিন্দাদের ওপর ‘ভুল’ বোমা হামলার সবশেষ ঘটনা ছিল এটি। এর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাইজেরিয়ার একটি সামরিক বিমান বোর্নো রাজ্যের দাগলুনে বোমা ফেলে ২০ জন বেসামরিককে হত্যা করে ও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক এলাকায় এই ধরনের বোমা হামলার অন্তত ১৪টি ঘটনার রেকর্ড রয়েছে।
এ হামলায় নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের কিছু অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে চলতি বছরের জুলাইয়ে হওয়া সামরিক অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ও সেনা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
এক টেলিভিশনে রোববার দেয়া সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, ‘ফ্রান্স তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন কূটনীতিক ফ্রান্সে ফিরে আসবেন।’
নাইজারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা ‘শেষ’ জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে থাকা দেড় হাজার সেনাকে আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সবাইকে দেশে নিয়ে আসা হবে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্ষমতার দখল নেয়া সামরিক বাহিনীর চাপ ও জনতার বিক্ষোভের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট উল্লিখিত ঘোষণা দিলেন।
নাইজারে গত ২৬ জুলাই হওয়া অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি না দেয়া মাখোঁর কাছে ফ্রান্সের সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সামরিক নেতারা। সেনা প্রত্যাহারের কাঙ্ক্ষিত সেই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
জাতীয় টেলিভিশনে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠ করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই রোববার আমরা নাইজারের সার্বভৌমত্বের পথে নতুন ধাপকে স্বাগত জানাচ্ছি। এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যাতে নাইজারের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য