আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
ওই নেতাদের মধ্যে দেশটির কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের এক প্রতিনিধিও রয়েছেন।
গত কয়েক দশকে নিজেদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিতে সফল হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক।
আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ কয়েকটি হামলার সঙ্গে ঘুরেফিরে বারবারই হাক্কানি নেটওয়ার্কের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই সব হামলায় বেসামরিক আফগান নাগরিক থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা ও বিদেশি সেনা প্রাণ হারায়।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানজুড়ে এই সংগঠন ব্যাপক কুখ্যাতি কুড়ালেও তালেবানের এবারের শাসনামলে তারা প্রভাবশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে।
কারা এই হাক্কানি
আশির দশকে সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে আলোচিত যোদ্ধা জালালুদ্দিন হাক্কানি প্রথম হাক্কানি নেটওয়ার্ক গঠন করেন।
ওই সময় জালালুদ্দিন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর মূল্যবান সম্পদ। পাকিস্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ সোভিয়েতবিরোধী এই মুজাহিদীনদের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মুজাহিদীনদের প্রতিরোধের মুখে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হলে একপর্যায়ে ওসামা বিন লাদেনের মতো বাইরের দেশের জিহাদিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন জালালুদ্দিন।
পরে তালেবানের সঙ্গে সখ্য হয় জালালুদ্দিনের। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবান বসলে মন্ত্রিত্ব পান তিনি।
রোগে ভুগে ২০১৮ সালে জালালুদ্দিনের মৃত্যুর খবর বিশ্বকে জানায় তালেবান।
জালালুদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে সিরাজুদ্দিন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান হন।
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলেই মূলত হাক্কানি নেটওয়ার্কের ঘাঁটি। তবে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমেও তাদের ঘাঁটি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
গত কয়েক বছরে তালেবানের নেতৃত্বে আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক।
২০১৫ সালে তালেবানের উপনেতা হিসেবে নিয়োগ পান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।
একসময় আফগান সরকারের হাতে বন্দি ও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সিরাজুদ্দিনের ছোট ভাই আনাস হাক্কানি গত সপ্তাহে কাবুল পতনের পর আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও ঘানি সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
জালালুদ্দিন হাক্কানি। ছবি: এএফপি
কেন আতঙ্কের নাম হাক্কানি নেটওয়ার্ক
গত দুই দশকে আফগানিস্তানে নির্মম কয়েকটি হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে।
এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এ ছাড়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রয়েছে সংগঠনটি।
কোনো জায়গায় হামলা করতে হলে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের ব্যবহার করে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এসব হামলাকারী গাড়ি বা ট্রাকে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য বোঝাই করে বিস্ফোরণ ঘটায়।
আফগানিস্তানে সেনাবাহিনীর স্থাপনা, দূতাবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হাক্কানি নেটওয়ার্কের লক্ষ্যবস্তু।
২০১৩ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে হাক্কানি নেটওয়ার্কের একটি ট্রাক আটকায় আফগান সেনারা।
ওই ট্রাকে প্রায় ২৮ টন ওজনের বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার।
হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার অভিযোগও রয়েছে।
২০০৮ সালে তারা আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ছাড়া মুক্তিপণ ও বন্দি বিনিময়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাসহ পশ্চিমা দেশের নাগরিকদের অপহরণেরও অভিযোগ রয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
অবশ্য পাকিস্তান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হাক্কানি নেটওয়ার্ককে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার ‘যথার্থ অস্ত্র’ হিসেবে ২০১১ সালে অভিহিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা অ্যাডমিরাল মাইক মুলেন।
এই নেটওয়ার্ককে তালেবানের ‘যুদ্ধের জন্য সর্বদা প্রস্তুত বাহিনী’ হিসেবে জুনে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তালেবান ও আল-কায়েদার সম্পর্কের মাধ্যম হাক্কানিরা।
তালেবানের নতুন শাসনামলে হাক্কানি নেটওয়ার্কের ভূমিকা কী
গত সপ্তাহে কাবুল পতনের পর হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন আনাস হাক্কানি।
অন্যদিকে আনাসের চাচা খলিল হাক্কানিকে শুক্রবার কাবুলের এক মসজিদে জুমার নামাজের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
সিরাজুদ্দিন ও খলিল উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছেন। ওয়াশিংটন তাদের মাথার দর নির্ধারণ করেছে কয়েক লাখ ডলার।
তালেবানের এবারের রাজনৈতিক প্রকল্পে হাক্কানিরা যে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তা কাবুলে একই সময়ে আনাস, সিরাজুদ্দিন ও খলিলের উপস্থিতিতে টের পাওয়া যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় হাক্কানিদের অংশগ্রহণ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, গত এক সপ্তাহে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক, খারকিভ এবং জাপোরিজঝিয়া অঞ্চলের মোট ১০টি নতুন বসতির দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ থেকে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে এই এলাকাগুলো রুশ নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, একই সময়সীমায় ইউক্রেনীয় সেনাদের ২২টি অস্ত্রাগার ও সামরিক সরঞ্জামাগার ধ্বংস করা হয়েছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনীয় বাহিনী একাধিকবার বিমান হামলার চেষ্টা করলেও প্রতিবারই তা ব্যর্থ হয়েছে।
রুশ পক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ১৭ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ইউক্রেন হারিয়েছে একটি এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমান, চারটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ১৮টি গাইডেড বোমা, ১৫টি হিমার্স রকেট এবং ১,৪৪১টি ড্রোন।
রাশিয়ার এই দাবির বিষয়ে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
উল্লেখ্য, ন্যাটো জোটে যোগদানের ইচ্ছা এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া ইস্যু ঘিরে কয়েক বছর ধরে উত্তেজনা চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।
গত তিন বছরে রুশ সেনারা ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিজঝিয়া ও খেরসন প্রদেশের অংশবিশেষ দখল করেছে, যা ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় এক-দশমাংশ। দখলকৃত এলাকা পুনরুদ্ধারে ইউক্রেনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত এখনো দেখা যাচ্ছে না।
রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টিহীন আবহাওয়ায় গরমের দাপট কমছে না। সকালে কিছুটা শীতল বাতাসে স্বস্তি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে অস্বস্তি ফের বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য প্রকাশিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজও তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দিনের বেলায় ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ছিল ৮৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ২৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ১ মিনিটে।
অন্যদিকে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে আজ চট্টগ্রাম বিভাগের দু–একটি স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সরকারি চাকরিজীবীদের ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করে নতুন বেতন নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন। নতুন বেতন স্কেল আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কার্যকর হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই কার্যকর হতে পারে নতুন বেতন স্কেল। সে হিসাবে ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই নতুন বেতন স্কেলে বেতন-ভাতা পেতে পারেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
গত ২৭ জুলাই গঠন করা হয় জাতীয় বেতন কমিশন। যারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে চায় আগামী ডিসেম্বরে।
তবে এ খসড়া প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের ওপর অর্থনৈতিক বাড়তি চাপ আসবে। নতুন কাঠামোতে শুধু যে সরকারের ব্যয় বাড়াবে তা নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যয় করার মতো আয়ও আগের তুলনায় বাড়বে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। সম্প্রতি জাতীয় পে-কমিশনকে এমন মত দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
এর আগে, নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন এবং অর্থনৈতিক চাপ সামাল দেওয়ার বিষয়ে মত চেয়েছিল পে-কমিশন। ওই মতামতে অর্থ বিভাগ আরও বলেছে, ২০১৫ সালের পর বিগত এক দশকে বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়নি চাকরিজীবীদের। ফলে বর্তমান বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য হয়ে পড়ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করছে অর্থ বিভাগ। পে-কমিশন সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে সংকটকালীন চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য পে-কমিশন গঠন করে সরকার। যে কারণে অর্থের সংস্থান নিয়ে পে-কমিশনও কিছুটা উদ্বেগে আছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার মানসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বেতন বাড়ানোর হার শতভাগ হতে পারে। কারণ ২০১৫ সালের পর থেকে আর কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। যদিও প্রতিবছর চাকরিজীবীদের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো। কিন্তু জীবনযাত্রার মান বেড়ে যাওয়ায় সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সর্বনিম্ন বেতনধারীরা খুবই কষ্টে আছেন। তবে বেতন দ্বিগুণ হারে বাড়লে সরকারের ব্যয়ও বর্তমানের তুলনায় এ খাতে দ্বিগুণ হবে। এর চাপ এসে পড়বে সার্বিক অর্থনীতিতে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের মধ্যেই গ্যাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে, পরের রাজনৈতিক সরকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না। আর সেটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হবে চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে নতুন পে-স্কেল যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই সেজন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বাজেট সংশোধন শুরু হবে ডিসেম্বরে, সেখানে নতুন পে-স্কেল কার্যকর করার বিধান যুক্ত করা হবে।
অর্থ বিভাগ মনে করছে, সর্বনিম্ন বেতন সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের আয়কর পাবে সরকার। যা নতুন বেতন কাঠামোর বাড়তি অর্থ সংস্থানে জোগান দেবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে চাকরিজীবীদের বাড়িভাড়া। চাকরিজীবীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারি আবাসনে বসবাস করেন। বেতন কাঠামো সমন্বয়ের ফলে সরকারি বাসাবাড়ির ভাড়ার হার বাড়বে। ফলে ওই উৎস থেকেও সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের সব জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি ‘রেইনবো নেশন’ (রংধনু জাতি) গড়ে তুলবে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় গারো সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২২ সালে যে ৩১ দফা ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— বিএনপি একটি রেইনবো নেশন গঠন করবে। এমন একটি জাতি, যেখানে সব সম্প্রদায় অংশগ্রহণ ও অবদান রাখার সুযোগ পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সরকারে এলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমস্যাগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।’
গারো সম্প্রদায়ের দাবির প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ কর্মসূচিতে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় পৃথক অধিদপ্তর গঠনের ঘোষণা ছিল। আগামীতে সরকারে এলে ঢাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পৃথক সাংস্কৃতিক একাডেমি গঠন করা হবে। পাশাপাশি গারোদের ‘ওয়ানগালা’ উৎসব সরকারিভাবে পালনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী দর্শনের মূল লক্ষ্যই হলো সব সম্প্রদায়কে একই জাতীয় পরিচয়ের ছায়াতলে আনা। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন— যেখানে শুধু বাঙালিই নয়, দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘বিএনপি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির সংরক্ষণে কাজ করবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আপনারা (গারো সম্প্রদায়) নিজেদের দুর্বল ভাববেন না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা আপনাদের ভাই। আপনাদের দাবি ও অধিকার আদায়ে আমরা পাশে আছি এবং সংসদে আপনারা প্রতিনিধি পাঠালে আমরা তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে কথা বলব।’
সঞ্চয় নাফাকের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী দলের সভাপতি মৃগেন হাগিদক, ক্রিস্টিয়ান সার্ভিস সোসাইটির পরিচালক বাপন মানকিন, বিরিশিরি কালচারাল অ্যাকাডেমির পরিচালক পরাগ রিটসিল ও আয়োজক কমিটির শুভজিট স্যানগমা নাকমাসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
প্রায় তিনমাস ধরে ঊর্ধমুখী রয়েছে কাঁচাবাজার। বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ টাকার ওপরে। বৃষ্টির অজুহাতে দাম বাড়ানো হলেও এখনো তা কমছে না। সপ্তাহখানেক আগে বিক্রেতারা বলেছিলেন— বৃষ্টি কমলে সবজির দাম কমবে। কিন্তু বাজার এখনও লাগামহীন। তবে এবার বিক্রেতারা বলছেন, মোটামুটি দুই মাসের বেশি সময় ধরে চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। শীতের সবজির সরবরাহ শুরু হলে দাম কমতে পারে।
শীতের সবজি বাজারে আসতে এখনো ২০–৩০ দিন সময় লাগতে পারে। তবে সাধারণত এই সময়ে বাজারে শীতের আগাম কিছু সবজি আসে। ফলে অন্যান্য সবজির দাম কমতির দিকে থাকে। ফলে আগামী দুই–তিন সপ্তাহে সবজির দাম কমার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
শুধু সবজিই না একইসঙ্গে ঊর্ধমুখী রয়েছে মাছ, মাংস ও রসুনের দামও। এখন অবশ্য বিক্রেতারা বলছেন— ঋতু পরিবর্তন ও পণ্যের ঘাটতির কারণে দাম বাড়তি রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে সবজি, মাছসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দাম লক্ষ্য করা গেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে কয়েকটি সবজির দাম কমলেও এখনও তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি। ক্রেতারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
গতকালের বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় টমেটো ১২০ টাকা, দেশি টমেটো ১৪০-১৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ -১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ২০০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, কাকরোল ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০- ১২০ টাকা, পটল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটল ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০-৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ৩০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০ টাকা, পেপে ৩০-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০-১০০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা। এছাড়া, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ভারতীয় টমেটো, সাদা গোল বেগুন, দেশি শসা, করল্লা, দেশি পটল, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, মূলার দাম কমেছে ২০ টাকা করে। হাইব্রিড শসা ও মিষ্টি কুমড়ার দাম কমেছে ১০ টাকা করে। আর শিমের দাম কমেছে ১৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচের দাম কমেছে ৪০ টাকা।
এছাড়া প্রতি কেজিতে চায়না গাজরের দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা, কালো গোল বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কাকরোলের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, প্রতি পিসে চাল কুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটে বেসরকারি চাকরিজীবী তানভীর হোসেন বলেন, সবজির বাজার যে আমাদের নাগালের মধ্যে আসছে না, আমাদের যে কষ্ট হচ্ছে...এটা দেখার কেউ নেই দেশে! মনে হয় যেন এই দায় কারোই না। দিনের পর দিন দাম বাড়তে থাকবে, আর আমরা শুধু সহ্য করে যাবো। কোনো মতে খেয়ে পড়ে বাঁচব।
মিরপুর ৬ নাম্বার কাচাবাজারে কামরুল হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, এই বাজার মনে হয় কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আগের সরকারগুলোও পারে নাই, এই সরকারও পারছে না। কিন্তু আমাদের মতো অল্প বেতনের মানুষগুলো হচ্ছি ভুক্তভোগী।
এদিকে সবজির দাম বাড়তি থাকা নিয়ে বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, আসলে অসময়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে, গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই সবজির দামও বেড়ে গিয়েছে। এখন বৃষ্টি নাই, কিন্তু সিজন চেঞ্জ হচ্ছে তাই দাম কমছে না। শীত আসতে শুরু করলেই দাম কমে যাবে, আশা করি।
দেশি রসুন, চায়না রসুনের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। পাশাপাশি বেড়েছে চায়না আদার দামও। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে প্রায় অপরিবর্তিত।
সপ্তাহে দুয়েক আগে দেশি রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও আজকে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। আর চায়না রসুন ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার ৪০-৫০ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি। এছাড়া চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হলেও আজকে ২০০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। আর দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা করে।
আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। এরমধ্যে ছোট পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, লাল আলু ২০-২৫ টাকা, সাদা আলু ২০-২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০-৩৫ টাকা, দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মান ভেদে ১৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে বিক্রেতা মো. লিটন বলেন, এখন রসুনের দাম একটু বাড়তি আছে। বাজারে একটু ঘাটতি হলেই দাম বেড়ে যায়। তবে বেশিদিন বাড়তি দাম থাকবে না। নতুন রসুন এলেই দাম কমে যাবে।
শুক্রবার মাছ মাংসের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। ফের বেড়েছে কক মুরগির দাম। এছাড়া অন্যান্য মাংসের দাম রয়েছে স্থিতিশীল।
বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। বয়লার মুরগি ১৭০- ১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৭৫- ৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১২০-১৩০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১৫-১২৫ টাকা, হাঁসের ডিম ১৯০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেখা যায়, প্রতি কেজিতে কক মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর দেশি মুরগির দাম কমেছে ২০ টাকা। হাঁসের ডিমের দাম প্রতি ডজনে বেড়েছে ১০ টাকা করে।
আল-আমিন চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, বয়লারের দাম শীতে কমবে। আর এরমধ্যে দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা নাই।
এছাড়া বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী রুই মাছের কেজি ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০- ৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২২০-৭০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০- ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০- ১২০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, কাজলী মাছ ১০০০- ১৪০০, বোয়াল মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের পণ্যের দামে কোনও পরিবর্তন আসেনি। প্রতি কেজি প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ৯০-১৩০ টাকা, ছোট মুসরের ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১০৫ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেশারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা মাশকালাইয়ের ডাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৪৫০ -১৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ টাকা, খোলা চিনি ১০০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি ৪৭৫০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবংগ ১২৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১৩৫০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে আশা করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। পাশাপাশি তিনি জানান, চলতি মাসে অন্তত ২০০ আসনের প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেবে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন।’
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট কোনও তারিখ আছে কিনা, জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুব শিগগিরই নির্ধারিত তারিখটি জানতে পারবেন। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই তিনি ফিরবেন।’
জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোন কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তো অবশ্যাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন— তিনি তো সেটা সাক্ষাৎকারে বলেই দিয়েছেন। আসন পরে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশের যে কোনও আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে কোন কোন আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন করবেন কিনা। আমরা তো চাই তিনি নির্বাচনে অংশ নেন।’
সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, চলতি মাসে ২০০ আসনে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে।
এনসিপির সঙ্গে জোট হবে কিনা, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে। তবে বিএনপি আর এনসিপি জোটভুক্ত হবে কিনা, সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।’ যদিও জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘জোটভুক্ত হলে দলগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারতেন। এটি পরিবর্তনে সম্মতি ছিল বেশিরভাগ দলের। আমরা আশ্বস্ত ছিলাম, কিন্তু যেভাবে আরপিও পাস হলো, তাতে আকারে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না।’
এছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের যে খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হয়েছে, তা নিয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এই খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তারা চিঠি দেবে।
কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া গতকাল বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত বিষয়গুলোর অনেকগুলোতে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আরপিওর যে খসড়াটা উত্থাপন করা হয়েছে, এটাতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।’
জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজস্ব দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এটাতে তাদেরও (ছোট রাজনৈতিক দলগুলোরও) সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে একতরফাভাবে কেন উত্থাপন করা হলো জানি না। আরপিওর অধ্যাদেশের খসড়ার ওপরে মতামত চেয়েছিলেন। আমরা মতামত জানিয়েছিলাম।’
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, ‘অধ্যাদেশের জন্য যেসব সংশোধনী এসেছে, তার অধিকাংশের সাথে আমরা একমত। কিন্তু প্রতীকের (নিজস্ব প্রতীকের বাইরে জোটের প্রতীক নিতে পারবে না) এ বিষয়ে আমরা সম্মত হইনি কখনো। আমার মনে হয় আমাদের একটা সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে এটা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ কথা আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে জানিয়েছি, আমরা হয়তো আনুষ্ঠানিক চিঠিও দেব নির্বাচন কমিশনে এবং আইন উপদেষ্টার কাছে।’
উল্লেখ্য, অনুমোদিত খসড়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।
এছাড়া পলাতক আসামিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না রাখা, প্রার্থীদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা, ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার–সম্পর্কিত বিধান বিলুপ্ত, ৫০ হাজার টাকার বেশি চাঁদা বা অনুদান ব্যাংকে লেনদেনসহ আরও কিছু সংশোধনী রয়েছে অনুমোদিত খসড়ায়।
হলফনামায় বিদেশে সম্পদের উল্লেখ করা, সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা, আদালত ঘোষিত পলাতক আসামিকে নির্বাচনের অযোগ্য করা, ৫০ হাজার টাকার বেশি চাঁদা বা অনুদান ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে বিএনপির আপত্তি নেই। এসবে দ্বিমত নেই জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিরও।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এর আগে নির্বাচনসংক্রান্ত আইনে বড় রকমের পরিবর্তন আনছে সরকার।
ছবি: সংগৃহীত
মন্তব্য