দুই দশকের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করা তালেবানের মধ্যে পরিবর্তন খুব সামান্যই দেখছে বিশ্ব। সেই সামান্য পরিবর্তনের একটি হলো আধুনিক যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এবিসি নিউজের একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, একদিকে দেশের ভেতরে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আশ্রয় নিচ্ছে তালেবান, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি পেতেও সামাজিক মাধ্যমকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে আফগানিস্তানের বর্তমান শাসক দল।
ক্ষমতা দখলের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আনার দাবি করেছে তালেবান। নারী অধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ নানা আশ্বাস দিয়েছে গোষ্ঠীটি, কিন্তু এসব আশ্বাস সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে বহির্বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রনেতা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শঙ্কা, তালেবানের শাসনামলে আবারও আল-কায়েদার মতো নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর চারণক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ গোষ্ঠীটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা উদ্বেগজনক ও ভীতিকর।
কারণ এবার ক্ষমতায় এসে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নিজেদের প্রতি ঢালাও সমর্থন দেখছে গোষ্ঠীটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বড় অংশ অনিয়ন্ত্রিত বলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উগ্রবাদীদের আকৃষ্ট করা ও নিজেদের উগ্রবাদী আদর্শ আরও ছড়িয়ে দেয়া সহজ হবে তালেবানের জন্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণেই এবার বহির্বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে সক্ষম হয়ে উঠেছে তালেবান, যা আগে কঠিন ছিল। এভাবে দেশ ও দেশের বাইরে অনেক ঘটনাবলিও এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবাদ ও সংবাদমাধ্যমবিষয়ক জ্ঞানের অভাব আর অপপ্রচারকে পুঁজি করে জনসমর্থন নিজেদের দিকে টানতে তালেবান দীর্ঘদিন ধরেই বেশ কৌশলী। এভাবেই আফগান সরকারকেও অবস্থানগতভাবে দুর্বল করে তুলেছে গোষ্ঠীটি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ছবি, ভিডিও আর বিবরণীতে কাবুলে চলমান নৈরাজ্যের চিত্র অস্পষ্ট। অথচ তালেবানশাসিত অঞ্চলগুলোতে গোষ্ঠীটি প্রচার করছে শহরের পরিস্থিতি ‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল, যা আগে ছিল না।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্মমতা আর নিপীড়ক নীতির জন্য সমালোচিত তালেবান সম্প্রতি ভাবমূর্তি তৈরির জন্য বিপরীতমুখী বার্তা দিচ্ছে অনলাইনে। তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায়। তাই আফগানিস্তানের বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পশ্চিমাদের ধোঁকা দেয়ার এ কৌশল নিয়েছে গোষ্ঠীটি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক থিংকট্যাংক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিসের সিনিয়র ফেলো টম জোসেলিন বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে কৌশলী তালেবান…নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে বেশ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গোষ্ঠীটি। বিভিন্ন ঘটনায় আফগান সরকার প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই তালেবানের বক্তব্য জানতে পারতাম আমরা।’
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে তালেবান, এটাই মুখ্য বিষয়। তারা জানে কীভাবে সাংবাদিকদের নাচাতে হয়। তারা জানে কীভাবে কী বললে সে বক্তব্য পশ্চিমা দেশগুলোর কানে তা শ্রুতিমধুর শোনাবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয় গোষ্ঠীটি।’
বার্তার বন্যা তালেবানের
২০১৭ সালে সবশেষ প্রকাশিত তথ্যে বিশ্বব্যাংক জানায়, আফগানিস্তানে মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১১ দশমিক চার শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়। নব্বইয়ের দশকে তালেবানের আগের শাসনামলে এ হার ছিল শূন্য।
১৭ বছরের ব্যবধানে দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠী তৈরি হলেও আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক থেকে ৪৯ শতাংশ পিছিয়ে ছিল আফগানরা।
অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শ্রোতা হিসেবে আফগানরা নয়, তালেবানের লক্ষ্য বহির্বিশ্ব।
অন্যদিকে তালেবানের স্থানীয় শ্রোতা, অর্থাৎ আফগান সমর্থকরাও দেশটির সংবাদমাধ্যম অবকাঠামোর ভগ্নদশার বলি। ক্ষমতাসীনদের মিথ্যা বিবৃতির ফাঁকফোকর ধরতে সেসব সংবাদমাধ্যম ব্যর্থ। সাধারণ আফগানদের জন্যও ঘটনার সত্যতা যাচাই করা কঠিন।
তার ওপর বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মতো আফগানিস্তানেও ইন্টারনেটবিষয়ক শিক্ষার হার সামান্য বলে মনে করেন গবেষকরা। ফলে সত্যের চেয়ে অপপ্রচারের বিস্তারই সেখানে বেশি।
জোসেলিন জানান, তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুইটারে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভীষণ সক্রিয়। গত সপ্তাহের আলোচিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছিলেন মুজাহিদ।
ইংরেজি, আরবি, পশতু ও উর্দুসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় তালেবান নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের বার্তা প্রচার করে থাকে।
জোসেলিন বলেন, ‘তালেবান প্রতিদিন যত ভাষায় বার্তা প্রকাশ করে, তত সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও করে না।’
অনলাইনে উগ্রবাদের প্রচার ঠেকাতে পদক্ষেপ নিয়েছে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও দেশ। এতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থকদের ইন্টারনেটভিত্তিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে এলেও তালেবান এখনও বাধাহীনভাবেই সামাজিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।
তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালেবান ইস্যুতে কোনো নির্দেশনাও পায়নি। তাদের তালেবানবিরোধী কোনো নীতিমালাও নেই।
এর ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গোষ্ঠীটিকে নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠিন।
অথচ বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ফেসবুক-টুইটারসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ। এ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর দ্বিমুখী নীতি নিয়ে সরব ট্রাম্পবিরোধীরা।
ফেসবুকের দাবি, প্রতিষ্ঠানটির ‘বিপজ্জনক সংগঠনবিষয়ক নীতি’র আওতায় কয়েক বছর ধরেই নিষিদ্ধ তালেবান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলাদা কালো তালিকায় তালেবানের নাম না থাকলেও সরকারের কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে গোষ্ঠীটির ওপর। সে হিসেবেই ফেসবুকেও তারা নিষিদ্ধ।
তালেবান বা তালেবানের পক্ষে পরিচালিত অ্যাকাউন্টগুলো মুছে দেয়া হয়েছে বলে দাবি ফেসবুকের।
এ ধরনের অ্যাকাউন্ট শনাক্তে আরবি, পশতুসহ বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ একটি বিশেষজ্ঞ দলও গঠন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিবৃতিতে ফেসবুক বলেছে, ‘কোনো দেশে স্বীকৃত সরকারের বিষয়ে ফেসবুক সিদ্ধান্ত নেয় না; বরং সে ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়ের গৃহীত পদক্ষেপে শ্রদ্ধাশীল থাকাকেই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে। ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, সে হিসেবে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও আমাদের নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে টুইটার এখনও কোনো অবস্থান ঘোষণা করেনি। আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে টুইটারে যাবতীয় তৎপরতা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক আগেই ফেসবুক-টুইটারে তালেবানকে নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল।
জোসেলিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তালেবানকে নিজস্ব একটি বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। আত্মঘাতী হামলা থেকে শুরু করে নারীদের ওপর নিপীড়ন, কঠোর শরিয়াহ আইন প্রয়োগের বিষয়গুলোতে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করেছে তারা।’
যোগাযোগের সস্তা ও কার্যকর মাধ্যম
জার্মান থিংকট্যাংক মার্শাল ডিজিটাল ফান্ডের সহকারী গবেষক অ্যাড্রিয়েন গোল্ডস্টেইন জানান, টুইটারে সক্রিয় কমপক্ষে ছয়জন তালেবান কর্মকর্তা। তাদের অনুসারী সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ।
এ নেতাদের সাম্প্রতিক সব টুইটেই তালেবানকে দেখানো হয়েছে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হিসেবে। গোষ্ঠীটির সংবাদ সম্মেলনেও এমন ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
তালেবানের টুইট অপপ্রচার আর মিথ্যায় ভরপুর বলে অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিডিয়া এশিয়া জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনেও এ ধারণাতেই সমর্থন দেয়া হয়।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও পরামর্শক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে ভিন্ন কিছুই প্রকাশ করে তালেবান; হোক তা সামাজিক বা অন্য কোনো মাধ্যমে।
২০১৮ সালে গবেষণাটি করার সময় কেউ ধারণাও করেনি যে তিন বছরের মাথায় আবারও আফগানিস্তান দখল করবে তালেবান। কিন্তু গোষ্ঠীটি সে সময় ঠিকই আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চেয়েও বেশি ও বিভিন্ন ভাষায় টুইটারে বার্তা প্রকাশ করত নিয়মিত।
একটি ঘটনা নিয়ে তালেবান ও সংবাদমাধ্যম আর বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যের অসংগতি ছাড়াও গবেষণায় বেরিয়ে আসে সামাজিক মাধ্যমের ওপর তালেবানের নির্ভরশীলতার তথ্যও।
কারণ বিস্তৃত পরিসরে বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য এর চেয়ে সস্তা ও সহজ আর কোনো মাধ্যম নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য কোনো আধুনিক অবকাঠামো বা বিশেষজ্ঞেরও প্রয়োজন হয় না।
বিষয়টির সুযোগ নিয়ে ন্যূনতম অর্থ ও সময় ব্যয় করে আফগান সরকারের চেয়েও অনলাইনে বেশি প্রচার চালিয়েছে তালেবান।
অথচ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় যেকোনোভাবে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিল এ তালেবানই। নিষেধাজ্ঞা অমান্যে পেতে হতো কঠোর শাস্তি।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমেই পরিবর্তনীয়। টুইটার ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ আফগানদের অনেকেই এখন দেশটির অবস্থা সম্পর্কে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবহিত করে ও সাহায্য চায়।
আরও পড়ুন:আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পাহাড়ি বাদার এলাকায় যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তীব্র গোলাগুলির পর ১২ জন সেনা এবং ১৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছে।
পাকিস্তানি তালেবান নামক একটি জিহাদিগোষ্ঠী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, সৈন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং ড্রোনও দখলে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে হামলার পর তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে আকাশে হেলিকপ্টার দেখতে পেয়েছে।
পাকিস্তানি তালেবানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় সাধারণত সামরিক যান চলাচলের আগে কারফিউ জারি করা হয়। পথগুলো স্ক্যান করা হয়।
ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, ভারতের সহায়তায় আফগানের তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানি তালেবানদের আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল এবং নয়াদিল্লির এই অভিযোগ অস্বীকার করে। সশস্ত্র গ্রুপটি আফগান তালেবান থেকে অনুপ্রাণিত।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে এই গোষ্ঠীটি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে। ফলে সেনাসহ শত শত বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা সাইবারস্পেসে আটকে থাকার চেয়ে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন উদার মানুষ হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে এক কালচারস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যতের বিশ্বে মানুষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
পুতিন বলেন, মানবতার ভবিষ্যৎ তাদের হাতে, যারা ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এবং পরিবারকে মূল্য দেয়- সাইবারস্পেসে আটকে থাকা অহংকারী একাকীদের চেয়ে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ভবিষ্যতের পৃথিবী অহংকারীদের জগৎ নয়, যারা সম্পূর্ণরূপে সাইবারস্পেসে ডুবে আছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী ‘নিজের জন্য’ নীতিতে বিশ্বাসী একাকী লোকদেরও নয়, বরং এমন লোকদের জগৎ যারা এখনো ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বকে মূল্য দেয়, তাদের প্রিয়জনদের লালন করে, সমাজের সঙ্গে তাদের অবিচ্ছেদ্য সংযোগ এবং এর প্রতি দায়িত্ব বোঝে।
তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং প্রবণতা ভবিষ্যদ্বাণী করে। তবে আমি বিশ্বাস করি বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সামাজিক ক্ষেত্রে আবিষ্কার এবং অগ্রগতির উপযোগী মৌলিক সমাধানগুলো শুধু মানুষের অনুপ্রেরণা, প্রতিভা এবং স্রষ্টার অনুপ্রেরণা ও প্রতিভার মাধ্যমেই দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, মানবজাতিকে এই নতুন বাস্তবতাকে ‘অধিগ্রহণ’ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, রাশিয়ান পরিচয় এবং জাতীয় চরিত্র উভয়ই ‘পরিবারের শেকড়ে প্রোথিত।’
পুতিন গত বছরের গোড়ার দিকে ‘পরিবার’ নামে একটি জাতীয় প্রকল্প চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল- শিশুসহ পরিবারগুলো সহায়তা করা এবং দেশে জন্মহার বাড়ানো।
মস্কো তখন থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা চালু করেছে, যেমন- পরিবারে প্রতিটি সন্তানের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান, বিস্তৃত মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং পরিবারগুলোতে চলমান আর্থিক সহায়তা।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি সম্প্রতি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বা তার অধীনস্থরা কোনো আইনি পরামর্শের তোয়াক্কা করেননি।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুদ্ধের প্রথম ১৭ মাস ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) নেতৃত্ব দিয়ে গত মার্চে পদত্যাগ করেন হালেভি। সম্প্রতি দক্ষিণ ইসরায়েলের এক কমিউনিটি সভায় তিনি বলেন, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা প্রায় ‘২ লাখেরও বেশি মানুষ’। তার এ অনুমান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের কাছাকাছি, যা এতদিন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘হামাসের প্রোপাগান্ডা’ বলে উড়িয়ে দিত। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বরাবরই এই তথ্যকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৭১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জন। এছাড়া বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত শুক্রবারও ইসরায়েলি হামলায়, বিশেষ করে গাজা সিটির আশপাশে, আরও ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
ফাঁস হওয়া ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত নিহতদের ৮০ শতাংশের বেশি বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ২০০ জন, যার মধ্যে ৮১৫ জন ছিলেন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক। নিহতদের অনেকেই সামরিক সদস্য ছিলেন।
হালেভি সভায় বলেন, ‘এটি কোনো কোমল যুদ্ধ নয়। আমরা প্রথম মিনিট থেকেই গ্লাভস খুলে ফেলেছি।’ তার দাবি, ৭ অক্টোবরের আগেই ইসরায়েলের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইডিএফ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমার মধ্যেই কাজ করে, তবুও স্বীকার করেন যে তিনি কখনোই আইনি পরামর্শকে গুরুত্ব দেননি।
তার ভাষায়, ‘কেউ আমাকে একবারও থামায়নি। একবারও না। সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি, যার আমাকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই, তিনিও না।’
তবে ওয়াইনেট নিউজে প্রকাশিত রেকর্ডিংয়ে হালেভির এই বক্তব্য ছিল না। পত্রিকাটির বরাত দিয়ে আরও জানানো হয়, হালেভির দৃষ্টিতে সামরিক আইনজীবীদের আসল কাজ হলো- আইডিএফের কর্মকাণ্ডকে বৈধ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা।
এই মন্তব্য নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান আইডিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিকে ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সফার্দ বলেন, হালেভির বক্তব্য নিশ্চিত করেছে যে সামরিক আইনি উপদেষ্টারা কার্যত ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে কাজ করেন।
এর আগে হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, হালেভির উত্তরসূরি বর্তমান আইডিএফ চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামিরও সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেলের আইনি পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। তোমের-ইয়েরুশালমি জানিয়েছিলেন, গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ মানুষকে দক্ষিণে সরে যেতে বলার আগে সেখানে পর্যাপ্ত আশ্রয় ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেই হামলা চালানো হয়। গত শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলায় নিহত অনেক ফিলিস্তিনি সম্ভবত ওইসব মানুষ, যারা দক্ষিণে যেতে পারেনি বা ঘরবাড়ি ছাড়তে অনিচ্ছুক ছিল- কারণ দক্ষিণেও ইসরায়েলের বোমা হামলার ঝুঁকি থেকে যায়।
‘হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন’ গঠনের প্রস্তাব পাস জাতিসংঘে
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েল এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলেও জাতিসংঘ তা কার্যকর রাখতে অনঢ় রয়েছে। তবে ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হামাস। খবর রয়টার্সের। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সাধারণ পরিষদের ১৪২টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। তাদের মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
এই প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। ঘোষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা যেমন- নিন্দনীয়, তেমনি গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও অনাহারও অমানবিক। এতে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট, সময়সীমাসাপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগের দিনই ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিন কখনোই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে না। জাতিসংঘের ঘোষণাও প্রত্যাখ্যান করে তেল আবিব।
গত শুক্রবার ভোটের পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন বলেন, ঘোষণায় হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ না করাই প্রমাণ করে যে সাধারণ পরিষদ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে পরিণত হয়েছে।
যদিও, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান উপেক্ষা করে নিজেদের ঘোষণায় অনড় থাকার সিদ্ধান্ত জানায় জাতিসংঘ।
তবে, হামাস এই ঘোষণা অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা এটিকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের সাধারণ পরিষদ বৈঠকে কিছু দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও জানায় গণমাধ্যম।
দেশটির একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি একথা জানিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইনের নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে।
তারা গত বছর সেখানকার বেশ কিছু ভূখণ্ড দখল করে নেয়।
২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি’র বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে মিয়ানমারে যে রক্তাক্ত বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়, রাখাইন লড়াই সেগুলোর অন্যতম।
এএ শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাতের ঠিক পরেই কিয়াউকতাও শহরের দুটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলায় ১৫ থেকে ২১ বছর বয়সী ১৯ জন শিক্ষার্থী নিহত ও আরও ২২ জন আহত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর জন্য আমরা নিহতদের পরিবারের মতোই দুঃখিত ।’
তারা হামলার জন্য জান্তাকে দায়ী করেছে, কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য জান্তার মুখপাত্রের কাছে এএফপি’র আহ্বানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালিন একটি জান্তা যুদ্ধবিমান সেখানে দুটি ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলেছে।
ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে, ‘নৃশংস হামলার’ নিন্দা জানিয়েছে।
এএফপি কিয়াউকতাওয়ের আশপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। সেখানে ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা অচল রয়েছে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন ফ্রন্টে সেনাবাহিনী তাদের শাসনের বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বেসামরিক সম্প্রদায়ের ওপর বিমান ও কামান হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
নেপালের রাজধানী ধীরে ধীরে শান্ত পরিস্থিতির দিকে ফিরছে। কারফিউ শিথিল হওয়ায় দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
শনিবার সকালের মধ্যে রাস্তার পরিবেশ অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে মঙ্গলবার ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।
নেপালে ২০০৮ সালে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের অবসান ও রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিক্ষোভে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছে।
দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভের ফলে সরকার পতন এবং সংসদে আগুন দেওয়ার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় বুধবার থেকে রাস্তায় বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এখন সেখানে রাস্তায় সৈন্যদেরর উপস্থিতি কমিয়ে আনা হয়েছে। খবর এএফপি’র।
এদিকে শপথ নেয়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য অবস্থান ঘোষণাকারী সুশীলা কার্কি শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যত গঠনের দায়িত্ব পেলেন। দুর্নীতিমুক্ত দেশ বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি।
নেপালে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে অনেক নেপালি কার্কির নিয়োগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
সমাজকর্মী সুরজ ভট্টরাই (৫১) বলেন, নেপাল তার প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রী, আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রাখবেন এবং সুশাসনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
কাঠমান্ডুর একটি দোকানে কর্মরত ২৩ বছর বয়সী দুর্গা মাগার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত আপাতত ভালো।
তিনি আরও বলেন, এই সময়ে জনগণের, বিশেষ করে তরুণদের কাছে প্রধান সমস্যা হল দুর্নীতি।
তিনি আরও বলেন, ‘জেন জেড’ অথবা বড় কোনো রাজনৈতিক নেতা যেই এটি করুক, তা বিবেচ্য বিষয় নয়, এটি কেবল বন্ধ করা দরকার।
দুর্গা মাগার আরও বলেন, আমরা জানি না ভবিষ্যতে কী হবে, তবে আমরা আজ সন্তুষ্ট। আশা করি ভবিষ্যতে পরিস্থিতি এতটা উত্তেজনাপূর্ণ থাকবে না।
তবে দুর্নীতি নির্মূল করার আশা এতো সহজ হবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিদেশি নাটক-সিনেমা দেখা বা শেয়ার করার মতো কাজের জন্য উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে - জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম জং উনের নেতৃত্বে গত এক দশকে দেশটিতে প্রযুক্তি-নির্ভর দমননীতি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খবর আল জাজিরা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়, সাত দশক ধরে কিম রাজবংশ উত্তর কোরিয়ায় পরম ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এর ফলে জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই ভীতি, দমন-পীড়ন ও সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে বাস করছে।
জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়া মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রধান জেমস হিনান জেনেভায় ব্রিফিংয়ে বলেন, কোভিড-যুগের বিধিনিষেধের পর থেকে রাজনৈতিক ও সাধারণ অপরাধ উভয়ের জন্যই মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় কে-ড্রামা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষকে ইতিমধ্যেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি দিক এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি শিশুদেরও বাধ্যতামূলকভাবে কয়লাখনি ও নির্মাণকাজের মতো কঠিন শ্রমে নিয়োজিত করা হচ্ছে।
এ প্রতিবেদনকে জাতিসংঘ বলছে গত এক দশকের বিস্তৃত পর্যালোচনা। এর আগে ২০১৪ সালের ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন, অনাহার এবং ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে কারাগারে আটকে রাখার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ উঠে এসেছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করে বলেন, “যদি উত্তর কোরিয়া বর্তমান গতিপথে এগিয়ে চলে, তবে জনগণ আরো বেশি নির্মম দমননীতি, ভয় ও ভোগান্তির শিকার হবে।”
নতুন প্রতিবেদন নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি উত্তর কোরিয়ার জেনেভা মিশন কিংবা লন্ডন দূতাবাস।
জাপানে ১০০ বা তারও বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যা নতুন এক রেকর্ড। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতবর্ষী এসব মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জাপান। যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একদিকে যেমন জাপানের জনসংখ্যা কমছে, অন্যদিকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাপানে মোট ৯৯ হাজার ৭৬৩ জন শতবর্ষী ছিলেন। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৪ হাজার ৬৪৪ জন বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশই নারী।
জাপানের সবচেয়ে প্রবীণ নাগরিক হলেন ১১৪ বছর বয়সি শিগেকো কাগাওয়া। তিনি কিয়োটোর কাছে নারা অঞ্চলে থাকেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছেন, এ নারীর বয়স যখন ৮০ বছর ছিল তখনও তিনি চিকিৎসক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘজীবী হওয়ার ব্যাপারে কাগাওয়া বলেন, ‘রোগীর বাড়ি বাড়ি হেঁটে গিয়ে সেবা দেওয়ার অভ্যাস আমার পা দুটিকে মজবুত করেছে, আর এটাই আমার বর্তমান প্রাণশক্তির মূল উৎস।’
বয়স ১১৪ হলেও তিনি এখনো খালি চোখে ভালো দেখতে পান। তার দিন কাটে টিভি দেখে, খবরের কাগজ পড়ে ও ক্যালিগ্রাফি করে।
জাপান গত কয়েক বছর ধরেই জনসংখ্যার সংকটে রয়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ায় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু এই ব্যয় মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশক্তির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।
গত মাসে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা গেছে যে, ২০২৪ সালে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ ৯ লাখেরও বেশি কমেছে।
দেশটির সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ওই সময় এ পরিস্থিতিকে ‘নীরব জরুরি অবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। জনসংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা ঠেকাতে তিনি পরিবার-বান্ধব নানা উদ্যোগ হিসেবে কর্মঘণ্টার নমনীয়তা এবং বিনামূল্যে ডে-কেয়ারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলো এখনো জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্কতা রোধে তেমন কোনো কার্যকর প্রভাব রাখতে পারেনি।
মন্তব্য