এখন পর্যন্ত তালেবানের আয়ের প্রধান উৎস আফিম ও হেরোইন। খনিজে সমৃদ্ধ আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে দেশের সব সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ এখন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির হাতে। সীমান্তের ওপারে নিকটতম পরাশক্তিধর প্রতিবেশী চীনেরও নজর আছে এতে।
বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত তালেবান। ২০ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক কারণে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানকে একঘরে করার উপায় নেই দেশগুলোর।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফগানিস্তানের ভূগর্ভে ২০১০ সালে সঞ্চিত ছিল এক ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদ। লোহা, তামা, লিথিয়াম, কোবাল্ট ও বিরল আকরিকের বিপুল ভান্ডার রয়েছে দেশটিতে।
জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, অব্যাহত সংঘাত-সহিংসতার কারণে গত এক দশকেও এসব সম্পদে মানুষের স্পর্শ খুব একটা লাগেনি। অনুত্তোলিতই থেকে গেছে প্রায় পুরোটা। আর এই সময়ে এসব খনিজ সম্পদের বাজারমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে।
২০১৭ সালে তৎকালীন আফগান সরকারের পুনর্মূল্যায়নে জানা যায়, জীবাশ্ম জ্বালানিসহ কাবুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা খনিজ সম্পদের মূল্যমান প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার।
বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের ব্যাটারিতে ব্যবহৃত লিথিয়ামের চাহিদা গত কয়েক বছর ধরে আকাশচুম্বী। কয়েক বছর আগেও এর বার্ষিক চাহিদা ছিল পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ, যা বর্তমানে ২০ শতাংশ।
এনএসএনার্জি বিজনেসের গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভূগর্ভে আট কোটি টন লিথিয়ামের নিশ্চিত মজুত বলে শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তুলনায় এক বছরে শনাক্তকৃত লিথিয়ামের মজুত বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
বিশ্বে লিথিয়ামের সবচেয়ে বড় মজুত এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ায়। দেশটিতে লিথিয়ামের মজুত রয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একটি নথিতে বলা হয়, আফগানিস্তানেও লিথিয়ামের সম্ভাব্য মজুত বলিভিয়ার সমপরিমাণ।
করোনাভাইরাস মহামারি চলমান থাকা অবস্থায় যখন বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে, তখন বেড়েছে তামার চাহিদাও। এক বছর আগের তুলনায় তামার চাহিদা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
চীন-রাশিয়া ও পাকিস্তানের নজর
তালেবানকে আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব। বিপরীতে তালেবানের সরকার গঠনের আগেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছে চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান।
তবে এ দৌড়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে চীন।
সারা বিশ্বের শিল্পপণ্যের প্রায় অর্ধেকই উৎপাদন করে চীন। লক্ষ্য- নিত্যপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে শীর্ষে থাকা। কয়েক দশকের রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্র দরিদ্র আফগানিস্তানেও এসব চাহিদা তৈরি ও পূরণে দেশটির অবকাঠামো পুনর্গঠনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বেইজিং।
এরই মধ্যে আফগানিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগের শীর্ষে পৌঁছেছে চীনা সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, চীনে শিল্পপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের চাহিদা মেটাতে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের ওপর নজর রয়েছে বেইজিংয়ের। এ জন্য আফগান ভূখণ্ডে খনিজবিষয়ক অবকাঠামো ও কার্যকরী খনন ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও সহযোগিতা করতে চায় চীনা সরকার।
অস্ট্রিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপিয়ান অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির জ্যেষ্ঠ ফেলো মিখাইল তানশুম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এসব খনিজ সম্পদের সংকটের সময়েই আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য অমূল্য এসব সম্পদ দরকার চীনের। আফগানিস্তান থেকে এসব খনিজ সম্পদ সংগ্রহে এরই মধ্যে দেশটিতে নিজেদের অবস্থানও তৈরি করেছে দেশটি।’
এশিয়ায় খনিজ সম্পদ উত্তোলনে অন্যতম প্রতিষ্ঠান চীনের মেটালার্জিক্যাল করপোরেশন অফ চায়না (এমসিসি)। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের অনুর্বর লোগার প্রদেশে তামা উত্তোলনের দায়িত্ব নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ৩০ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে খনি অঞ্চল।
তবে মাদক উৎপাদন ও বিক্রি করে যে পরিমাণ আয় করে তালেবান, সে অর্থের পরিমাণও বেশ বড় অঙ্কের। এ অবস্থায় দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার তালেবান নষ্ট করতে চাইবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেক বিশ্লেষক। প্রশ্ন আছে তালেবানের সক্ষমতা নিয়েও।
কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রজেক্টের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হ্যান্স-জ্যাকব শিন্ডলার বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকেও এসব সম্পদ আফগানিস্তানে ছিল। কিন্তু তখন এগুলো উত্তোলন করতে পারেনি তালেবান। আফগানিস্তানের অর্থনীতি সম্প্রসারণ করতে কিংবা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারেও তাদের সক্ষমতা কতটুকু, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।’
এমন পরিস্থিতিতেই সম্প্রতি বেইজিংয়ের আমন্ত্রণে চীনের তিয়ানজিন সফর করে তালেবানের একটি প্রতিনিধিদল। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন খোদ তালেবানের পরবর্তী সম্ভাব্য নেতা ও বর্তমান রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার।
সে সময় বারাদার বলেন, ‘আফগানিস্তান পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আগের চেয়েও বড় ভূমিকায় থাকবে চীন।’
এশিয়া ও ইউরোপকে সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথে যুক্ত করতে যে বিতর্কিত ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে চীন, সেই ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড কর্মসূচি’র মাধ্যমেও লাভবান হওয়ার কথা আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ সরকারের।
আরও পড়ুন:নতুন অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেটে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। রবিবার (২২ জুন) প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁওয়ের অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাজেট অনুমোদন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেট অনুমোদন হয়েছে। বাজেটের অঙ্ক পরিবর্তন হবে না। আমরা কোনো মেগাপ্রকল্প নিচ্ছি না। পাশাপাশি, পুরোনো অনেক প্রকল্প বাদ দিয়ে দিয়েছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) টাকা মোটামুটি একটা বাস্তব পর্যয়ে নিয়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে বাজেট নিয়ে যা লেখালেখা হয়েছে, তার মধ্যে তিনটি বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। একটা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা ছিল, সেটা পরিবর্তন করে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
‘দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ডব্লিউটিওর একটি চুক্তি আছে যে আমরা রফতানি খাতে প্রণোদনা চারধাপে কমিয়ে আনবো। এরইমধ্যে দুইধাপ আমরা করেছি। তারা বলেছিল, জুলাই থেকে তৃতীয় ধাপ শুরু করা। কিন্তু আমরা বলেছি, জানুয়ারির আগে আমরা শুরু করবো না। প্রস্তুতির জন্য আমাদের সময় লাগবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংসদ না থাকায় এবার উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে সরকারের ব্যয় ও সংশোধিত অর্থ অধ্যাদেশ অনুমোদন করা হয়েছে। অর্থ অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে নির্দিষ্টকরণ অধ্যাদেশের গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়ে যাবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। গত ২ জুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সংসদ না থাকায় তার বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আগামীকাল সোমবার (২৩ জুন) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
রবিবার (২২ জুন) সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে এই কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম।
এর আগে, বেলা সোয়া ১১টার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিচ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন কর্মচারীরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা সচিবালয়ের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করেন।
মিছিল থেকে ‘অবৈধ কালো আইন, মানি না, মানবো না’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘ফ্যাসিবাদী কাল আইন, মানি না মানবো না’, ‘আপস না লড়াই, লড়াই লড়াই’, ‘সারা বাংলার কর্মচারী, এক হও লড়াই কর’-সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
চাকরি নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা হ্রাসের আশঙ্কায় একাধিক বিভাগের সরকারি কর্মচারীরা যে ধারাবাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন, আজকের কর্মসূচি ছিল তারই অংশ।
এর আগে, ১৯ জুনও সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তারা।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
কোনো এক ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা উচিত না বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার (২২জুন) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমন কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে প্রস্তাব করেছিলাম—একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়্ত্বি পালন করতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদের ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার নেই। তিনটি দল ছাড়া সবাই এই প্রশ্নে এক জায়গায় এসেছি।’
‘অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সেটা যত বারই হোক। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা, আমি মনে করি। এটিই আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে, বলেন জামায়াতের এই নায়েবে আমির।
তিনি বলেন, ‘এমন নজির বহুদেশে আছে। এটা বাংলাদেশেও জরুরি বলে আমরা মনে করি। এ নিয়ে আমরা প্রায় ঐকমত্যে এসেছি। বিকালে আরও দুটো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হবে।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এরআগে গেল ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর পরেরদিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল তারা।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশগ্রহণ করা সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ বারবার সরে যেতে বললেও স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ এবং প্রেসক্লাব ফাঁড়িতে বসেই তাদের কথা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভাইভায় রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীকে ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন তারা এনটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র- এমন আশঙ্কার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে রহস্যময় জাম্বো জেট। বিশালাকার সেই বিমানটি চোখে পড়তেই সাধারণ মার্কিনিদের চোখ কপালে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের একাংশের দাবি, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই কারণে গুপ্তঘাঁটি থেকে অতিশক্তিশালী ওই বিমানকে বের করেছে মার্কিন বিমান বাহিনী। যদিও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার রাজধানী ওয়াশিংটনের যুগ্ম সামরিক ঘাঁটি ‘অ্যান্ড্রুজ’-এ হঠাৎই অবতরণ করে মার্কিন বিমান বাহিনীর রহস্যময় জাম্বো জেট ‘ই-৪বি নাইটওয়াচ’। কেউ কেউ অবশ্য একে ‘ডুম্সডে’ (কেয়ামত) উড়োজাহাজ বলেও উল্লেখ করে থাকেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে’ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার সময়ে শেষ বার বিমানটিকে ওয়াশিংটনে উড়তে দেখা গিয়েছিল। প্রায় আড়াই দশক পর গায়ের ধুলো ঝেড়ে ‘নাইটওয়াচ’-এর প্রকাশ্যে আসাকে কেন্দ্র করে তাই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ‘৭৪৭-২০০’ মডেলের ‘নাইটওয়াচ’ বিমানটিকে দীর্ঘ দিন ধরেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে আসছে মার্কিন সরকার। এটি মাঝ-আকাশে ‘ন্যাশনাল এয়ারবর্ন অপারেশন্স সেন্টার’ বা এনএওসি হিসাবে কাজ করে থাকে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের কাছে এর পরিচয় ‘উড়ন্ত পেন্টাগন’। পরমাণু যুদ্ধ বা ওই ধরনের কোনো জরুরি অবস্থা তৈরি হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা এবং পারমাণবিক যুদ্ধের সময় কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশে এটি নির্মাণ করেছে বোয়িং।
পেন্টাগন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের হাতে মোট চারটি ‘নাইটওয়াচ’ বিমান রয়েছে। এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট কমান্ডের হাতে। সংশ্লিষ্ট বিমানটি সরাসরি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএমের (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল) ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম।
এদিকে বিমানটিতে অত্যন্ত কম এবং উচ্চ কম্পাঙ্কের দুধরনের অ্যান্টেনা রয়েছে, যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যোগাযোগ করতে পারেন পাইলট ও ক্রু সদস্যেরা। শুধু তাই নয়, এই বিমানটিকে সব সময় সর্বশেষ প্রযুক্তিতে আপডেট করার প্রক্রিয়া চালু রেখেছে পেন্টাগন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জাম্বো জেটের পারমাণবিক বিস্ফোরণ, তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র এবং যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক হামলা সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। সেই কারণে বিমানটিতে কোনো জানালা রাখা হয়নি। একবার জ্বালানি ভরলে ৭ হাজার মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে বিমানটি। তবে এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন আকাশেও থাকতে পারে, কারণ আকাশেই জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা রয়েছে এতে। এছাড়াও বিমানে রয়েছে আধুনিক ডিজিটাল যোগাযোগ ও সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা।
‘নাইট ওয়াচ’ সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা হলো, এটি একদিকে যেমন পরমাণু অস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে আবার পারমাণবিক যুদ্ধের সময় একে কমান্ড সেন্টার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে ওয়াশিংটন। আর ঠিক সেই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ইরানে হামলার জন্য বিমানটিকে কি পশ্চিম এশিয়ায় নিয়ে যাবে মার্কিন বিমান বাহিনী?
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে মার্কিন বিমান বাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজন পড়তে পারে বলেই ধারণা করছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, গত শতাব্দীতে ‘স্নায়ু যুদ্ধের’ সময়ে প্রথম বার পরমাণু হামলা সহ্য করার মতো উড়োজাহাজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে যুক্তরাষ্ট্র। সেইমতো ১৯৭০-এর দশকে বোয়িংয়ের হাত ধরে জন্ম নেয় ‘নাইটওয়াচ’। কারণ স্নায়ু যুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) থেকে পরমাণু হামলার আশঙ্কায় ভুগছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ধারণা ছিল- যেকোনো সময় পারমাণবিক হামলা চালাবে মস্কো। তখন পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রয়োজন হবে ‘ডুম্সডে’ বিমানের।
কিন্তু ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে সংশ্লিষ্ট বিমানটির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। তার পর থেকে আর কখনোই একে ওড়ায়নি মার্কিন বিমান বাহিনী। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মহড়ায় অংশ নিয়েছে ‘ডুম্সডে’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিদেশ ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’- এর ব্যাকআপ হিসেবেও মাঝেমধ্যে নাইটওয়াচকে ব্যবহার করেছে ওয়াশিংটন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
রবিবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও উপস্থিত ছিলেন।
এমন এক সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন ফখরুলসহ বিএনপির আরও আট নেতার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আজই বেইজিং সফরে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
মন্তব্য