২০ বছরের দখল শেষে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সেই সুযোগে ইতোমধ্যে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান। রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের সবকিছুই এখন তাদের দখলে।
এ ঘটনায় দুই দশক আগের তালেবান শাসনামলের স্মৃতি ফিরে আসছে আফগান নারীদের বয়ানে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের শাসনামলে শরিয়াহ আইন কায়েমের নামে আফগান নারীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল তারা।
এবার মসনদে বসার আগে নিজেদের কিছুটা উদার দেখানোর চেষ্টা করছে তালেবান।
কাতারের রাজধানী দোহায় মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের অন্যতম মুখপাত্র সুহাইল শাহিন জানান, ক্ষমতা দখলের পর এবার নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করবে না তারা। তবে মাথা ঢাকতে পারে এমন হিজাব পরতে হবে।
ওই সাক্ষাৎকারে সুহাইল আরও জানান, আফগান নারীরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষায় পর্যন্ত অংশ নিতে পারবেন।
নারী অধিকার প্রশ্নে তালেবানের এমন অবস্থান গোষ্ঠীটির ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেউ বলছেন মিথ্যা আশ্বাস।
মঙ্গলবারই কাবুলে আরেক সংবাদ সম্মেলনে গোষ্ঠীটির আরেক মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদিন দাবি করেছেন, ২০ বছরে অনেক বদলে গেছে তালেবান। আফগানিস্তানের নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে এটি শরিয়াহ আইন অনুযায়ী করা হবে বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন জাবিহুল্লাহ।
শরিয়াহ আইনের আওতায় যেসব কঠোর শাস্তি রয়েছে
শরিয়াহ আইনে দুই ধরনের অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এই আইনে গুরুতর অপরাধকে বলা হয় ‘হদ্দ’। এর জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে অপরাধ ‘তাজির’; এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ভর করে বিচারকদের রায়ের ওপর।
‘হদ্দ’ অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো চুরি ও বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক। শরিয়াহ আইনে চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কাটার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের শাস্তি পাথর ছুড়ে হত্যা।
অনেক ইসলামি সংগঠন ও আলেমের দাবি, ‘হদ্দ’ অপরাধের শাস্তি দেয়ার আগে অনেক জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এ কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবে এই শাস্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পাথর ছুড়ে হত্যার বিধানকে নির্মমতা ও অমানবিক হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।
সব মুসলিম দেশে ‘হদ্দ’ অপরাধের জন্য এ ধরনের শাস্তির বিধান নেই। শরিয়াহ আইনে শাস্তি কার্যকর নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতভেদও রয়েছে।
শরিয়াহ আইনের প্রয়োগ যেভাবে
যেকোনো আইনি ব্যবস্থার মতো শরিয়াহ আইনও জটিল। এর জন্য প্রশিক্ষিত এবং উঁচু মানের ইসলামি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। ইসলামি বিচারকরা শরিয়াহ আইন-সম্পর্কিত বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এর ধরনের দিকনির্দেশনাকে ‘ফতোয়া’ বলা হয়।
শরিয়াহ আইনের পাঁচটি ঘরানা রয়েছে। সুন্নি মুসলমানদের এই ঘরানাগুলো হলো হানবালি, মালিকি, শাফেই এবং হানাফি। অন্যদিকে শিয়া মুসলমানদের একটিই ঘরানা- শিয়া জাফারি। শরিয়াহ আইনের প্রয়োগ কীভাবে হবে সেটি ঘরানার ওপর নির্ভর করে।
তালেবান যেভাবে শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করেছিল
আগের শাসনামলে শরিয়াহ আইনের কঠোর প্রয়োগের কারণে তালেবান কুখ্যাত হয়ে রয়েছে।
১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনামলে গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানে প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে হত্যা, অঙ্গচ্ছেদ এবং ফাঁসি দেয়ার শাস্তি কার্যকর করেছিল।
সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি ক্ষমতা দখলের পর গান ও বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করেছিল। শুধু ‘দাফ’ নামে একধরনের বাদ্যযন্ত্রের অনুমোদন ছিল, যেটি প্রকাশ্যে হাত কাটা ও পাথর ছুড়ে হত্যার মতো শাস্তি কার্যকরের সময় বাজানো হতো।
শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের অজুহাতে তালেবানরা জীবন্ত কোনো কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে এমন চিত্রকর্ম, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করেছিল।
তালেবানের ওই শাসনামলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন আফগানিস্তানের নারীরা। ওই সময় আক্ষরিক অর্থেই তাদের গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হতো। নারীদের কাজের বা শিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না।
আট বছর বয়স থেকেই কন্যাশিশুদের বোরকা পরতে হতো। ঘরের বাইরে যেতে হলে সঙ্গে থাকতে হতো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ কোনো পুরুষ সঙ্গী।
একতলা বাড়িগুলোর জানালা তক্তা মেরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে নারীরা ব্যালকনিতেও যেতে পারতেন না।
নারী প্রশ্নে গণমাধ্যমের ওপরেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল তালেবান। সংবাদপত্রে বা ম্যাগাজিনে নারীদের ছবি ছাপানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ ছাড়া রেডিও, টেলিভিশন বা জনসমাগমে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
নারীদের যারা তালেবানের আইন অমান্য করতেন বা পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই বাইরে আসতেন, তাদের রাস্তায় প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করত গোষ্ঠীটি।
তালেবানে ‘বিশ্বাস নেই’ আফগান নারীদের
মঙ্গলবার কাবুলের সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘আফগান নারীরা কোনো সহিংসতার শিকার হবেন না।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে তিনি জানিয়েছেন, অধিকার ইস্যুতে নারীদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে বিশ্ব সম্প্রদায়গুলোকেও নারীর অধিকার নিশ্চিতে তালেবানের ‘প্রধান মূল্যবোধের’ প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
এর আগে তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগানি বলেছিলেন, ‘তালেবান নারীদের ভোগান্তির কারণ হতে চায় না। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী তাদের সরকারকাঠামোয় থাকা উচিত।’
তালেবানের এমন সব প্রতিশ্রুতির পরেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না আফগান নারীরা।
গোষ্ঠীটি কাবুল দখল নেয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে খোলা চিঠি দিয়েছেন আফগানিস্তানের চলচ্চিত্র নির্মাতা সাহরা কারিমি। দেশটির নারীদের রক্ষা করার আকুতি ঝরেছে তার ওই চিঠিতে।
কারিমি চিঠিতে লিখেছেন, ‘তারা নারী অধিকার ছিনিয়ে নেবে। আমাদের নিজ ঘরে ছায়া হয়ে থাকতে হবে। আমার কণ্ঠস্বর, আমাদের প্রকাশভঙ্গিকে তারা চেপে ধরবে। তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন স্কুলে কোনো মেয়ে ছিল না। তাদের যাওয়ার পর ৯০ লাখ আফগান মেয়ে এখন স্কুলে পড়ছে। এই কয়েক সপ্তাহে তারা অসংখ্য স্কুল ধ্বংস করে দিয়েছে ও ২০ লাখ শিশু স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
‘নিজ দেশে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে আমি যে পরিশ্রম করেছি তার সবকিছুই এখন হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। তালেবানরা ক্ষমতায় এলে শিল্পকে নিষিদ্ধ করে দেবে। আমি ও অন্য নির্মাতারা তাদের হিটলিস্টে চলে আসব।’
নারীদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে তালেবানের প্রতিশ্রুতির দিনই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসে কলাম লিখেছেন নোবেলজয়ী পাকিস্তানি মানবাধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই।
‘আই ফিয়ার ফর মাই আফগান সিস্টারস’ শিরোনামের কলামে তিনি লিখেছেন, ‘কিছু তালেবান বলছে তারা নারীদের শিক্ষা ও কাজের অধিকারকে খর্ব করবে না। তবে নারীদের ওপর তালেবানের নিপীড়নের ইতিহাস বলে, আফগান নারীদের ভয় পাওয়াটা কাল্পনিক কিছু নয়। আমরা ইতোমধ্যে এমন খবর শুনছি যে, নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেয়া হচ্ছে না। অনেক নারীকে কাজে যোগ দিতে বাধা দেয়া হয়েছে।’
এখনও দেরি হয়ে যায়নি উল্লেখ করে আফগান নারীদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মালালা।
আরও পড়ুন:শিশুদের টাইফয়েড প্রতিরোধে “টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫” সফল বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে অ্যাডভোকেসী সভা আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় নগরভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম উপর্যুক্ত সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। দেশব্যাপী ৯ মাস হতে ১৫ বছর কম বয়সী সকল শিশুদের এক ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিবি) টিকা প্রদানের অংশ হিসেবে ডিএসসিসি এলাকায় ১২ অক্টোবর থেকে এই টিকা প্রদান শুরু হবে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য আগামী ৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের দেওয়া এ সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও নিহাদ কবির। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম। আর আদালতে ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর, ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
তবে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সাংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে বলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিটটি করেন।
২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এই রায়ে হাইকোর্টের দেয়া আট দফা নির্দেশনার কিছুটা সংশোধন করে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো:-
১. যেহেতু সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, তাই বিরোধপূর্ণ প্রিসিডেন্সে সাংবিধানিক পদধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
২. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে জেলা জজ ও সমপদমর্যাদাসম্পন্নরা সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বরে অবস্থান করবেন।
৩. জেলা জজদের পরেই অতিরিক্ত সচিবেরা ১৭ নম্বর ক্রমিকে থাকবেন।
এক পর্যায়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পরবর্তীতে রিভিউ আবেদনে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা পক্ষভুক্ত হয়।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার ৩২টি প্রাতিষ্ঠানিক পুকুরে ২৫০ কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) পোনা বিতরণ করা হয়।
চলতি অর্থ বছরের রাজস্ব বাজেটের আওতায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে পোনা মাছ বিতরণ ও অবমুক্তকরণে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার মো.আতিক উল্লাহ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.জাফরিন জাহেদ জিতি, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.রুমন তালুকদার, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাঈম হাসানসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা শহর নওগাঁ। প্রতিদিন সকাল শুরু হয় শহরবাসীর যাটজটের মধ্য দিয়ে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তীব্র যানজটে নাকাল শহরবাসী ও পথচারীরা। এযেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে শহরবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনার কারনে শহরের প্রাণকেন্দ্রেই যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। দিন দিন লম্বা হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোজট। এ ছাড়া সড়কে বড় যানবাহন রেখে মালামাল খালাস অন্যতম কারণ। এর ফলে পথচারীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জরুরি সেবার গাড়িগুলোও।
নওগাঁ পৌরসভার তথ্যমতে, নওগাঁ শহরের মোট আয়তন ৩৮ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সাল থেকে শহরে চলাচলে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে পৌরসভা। ২০১৬ সালের পর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ছোট এই শহরে পৌরসভার লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরো প্রায় ১০ হাজারের মত। সিএনজি, রিক্সা,ভ্যান, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাসসহ ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে আরও প্রায় দশ হাজার। অন্যদিকে পৌর কৃর্তপক্ষ ও সড়ক বিভাগ বলছে, যানজট নিরসনে চারলেনের রাস্তা নির্মানসহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ শহরের মেইন রোডের কাঁঠালতলী থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড, তাজের মোড়, ব্রীজের বাটার মোড়, সরিষাহাটির মোড়, মুক্তির মোড়, কাজীর মোড়, রুবির মোড়, দয়ালের মোড় হয়ে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৪কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগে থাকে। এছাড়া শহরের মধ্যে রাস্তার দুই পাশে স্থায়ী দোকান থাকার পর দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান পরিচালনা করেন। স্থায়ী দোকানীরা তাদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে মালামাল রাখে। এতে করে রাস্তায় ভ্যান, রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও ছোট যান চলাচল করায় পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ দোকানীদের দখলে থাকায় পথচারীরা রাস্তার দুই পাশ দিয়ে যেতে পারেননা ঠিকমত।
আপেল মাহমুদ নামের পথচারী বলেন, শহর অনেক ছোট কিন্তু তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাস্তার পাশে দিয়ে হেটে যাওয়ার মত অবস্থা নাই। দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে। কবে আমরা পরিত্রান পাবো জানা নেই।
আবুল কালাম আজাদ নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শুনছি লেনের রাস্তা হবে। কবে হবে বাস্তবায়ন হবে জানিনা। গত প্রায় ৮-১০বছর থেকে শহরে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শহর পরিকল্পনা ব্যবস্থা উন্নত করা না গেলে সামনে যানজট আরও ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮পর্যন্ত শহরের ভিতরে কোন ভাড়ি যানবাহন চলাচলের নিয়ম নাই। কিন্তু অনেক সময় ভারি যাববাহন চলাচল করতে দেখা যায়। সার্বিকভাবে পৌর কৃর্তপক্ষ ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছি।
শহরের কাপড়পট্টির সুধির চন্দ্র, অখিল চন্দ্র, রুবেল হোসেনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, এ শহর এখন জানযটের শহর। সকাল শুর হয় জ্যামের মাধ্যামে আমাদের। মটরসাইলকেল ভ্যান, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে -সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখে। অনেক সময় আমাদের দোকানগুলোর সামনেও দাঁড় করায়। এগুলোর কারনেও যানজট বেড়ে যায়। এত যানবাহনের চাপ, সে তুলনায় রাস্তা ছোট। আর শহরে কোন গোল চত্বরও নেই। চরম ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের।
সোহেল রানা ও নাজমুল হোসেন নামের দুই চালকের সাথে কথা হলে তারা জানান, নওগাঁ শহরে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। তাহলে আমরা কোথায় দাঁড় করাবো। যার কারনে অস্থায়ী ভাবে শহরের বেশ কয়েকটি মোড় থেকে আমরা যাত্রী উঠা-নামানো করে থাকি। এছাড়্া অনেক অবৈধ ইজিবাইক চলাচল করছে শহরের ভিতরে। সেগুলোকে কৃর্তপক্ষের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নওগাঁ শহরের প্রধান সড়ক ফোর-লেনে উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের স্টেক হোল্ডার সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখিত প্রকল্পের আওতায় সান্তাহার মোড় থেকে চৌমাসিয়া চত্বর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক ফোরলেনে উন্নীত করণ এবং বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মান পরিকল্প তুলে ধরা হয়েছে। এর সম্ভাব্য ব্যায় ধরা হয়েছে ১২’শ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শহরের যানযটের ভোগান্তি লাঘোবসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে।
নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, নওগাঁ শহরের যানজট নিরসনে চার লেনের সড়ক তৈরির প্রকল্পের উদ্যোগ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমবে যাবে। চার লেনের ১৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রাস্তা শুরু হবে শহরের ঢাকা মোড় থেকে শুরু শহরের ব্রিটিশ আমলে তৈরি লিটন ব্রিজ হয়ে নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের চৌমাশিয়া পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে।
তিনি আরো বলেন, এই মেগা প্রকল্পে থাকবে ৭ফুটওভার ব্রিজ, ২০টি মিনি বাসস্টপ, ১৩টি কালভার্ট, ৪টি ব্রিজ, সড়কবাতি, ফুটপাত ও উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আধুনিক সব সড়ক কাঠামো ব্যবস্থা। বর্তমান যে রাস্তা আছে তা প্রশস্ত করে ৮০ ফুট করা হবে। আমরা করছি খুব দ্রতই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, নওগাঁ শহরের প্রধান সড়কটি দ্রুত চার লেনে উন্নীত করা হলে যানজট কমবে, শহর হবে আধুনিক। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মেহেরপুরে সাপে কেটে মৃত্যু হয়েছে ফারিয়া আক্তার নামের ৮ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে সাপে কামড় দেয়।
রাত দেড়টার দিকেই পরিবারের সদস্যরা আহত অবস্থায় তাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে , জেলার গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের ওলিনগর গ্রামের বাবুল আক্তারের মেয়ে ফারিয়া আক্তার প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার রাতে তার দাদীর সাথে ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়ে ছিল। রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ ফারিয়া কান্না শুরু করে।
পরিবারের অন্য সদস্যরা দ্রুত ফারিয়ার কাছে ছুটে আসে। পরে পরিবারের সদস্যরা ফারিয়ার পায়ে সাপে কাটার চিহ্ন দেখতে পেয়ে তাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
ফারিয়ার বাবা বাবুল আক্তার জানান, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কখন তাকে সাপে কেটেছে তারা টের পাইনি। যখন তার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে তখন সে কান্না শুরু করে। কান্না শুনে পাশের ঘর থেকে গিয়ে দেখি মেয়ের মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। পায়ে খেয়াল করে দেখি সাপে কাটা দাগ। তার অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রুবেল পারভেজ বলেন, এবছর মৌসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়াই খাল- বিল, মাঠ, ঘাট পানিতে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় বিষধর সাপ গুলো সব শুকনো জায়গাই এসে আশ্রয় নিচ্ছে। বতর্মানে আমার এলাকার বিভিন্ন বাড়িতেই সাপের দেখা মিলছে। তাই আমার সকলকেই একটু সতর্ক হতে হবে।
কর্ণফুলী টানেলের মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য ট্রাফিক ডাইভারসনের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী টানেলের রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ (জেট ফ্যান পরিষ্কার/ রক্ষণাবেক্ষণ ও রোড মার্কিং) কাজের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) থেকে আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দিবাগত রাত ১১টা হতে ভোর ৫টা পর্যন্ত ‘পতেঙ্গা হতে আনোয়ারা’ টিউব ট্রাফিক ডাইভারসন করে ‘আনোয়ারা হতে পতেংগা’ টিউবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিতভাবে যানচলাচল অব্যাহত রাখা হবে।
এ সময় বিদ্যমান ট্রাফিকের পরিমাণ অনুযায়ী সর্বনিম্ন পাঁচ হতে সর্বোচ্চ দশ মিনিট টানেলের উভয়মুখে যাত্রীদের অপেক্ষমাণ থাকার প্রয়োজন হতে পারে।
কর্ণফুলী টানেলের নিরাপদ ও কার্যকর রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নাগরিকদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪ দিনব্যাপী (২৫-২৮ আগস্ট) ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন আজ শেষ হয়েছে।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ছাড়াও মাননীয় উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, যৌথ নদী কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণও প্রতিনিধিত্ব করেন। অপরদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দালজিৎ সিং চৌধুরী, আইপিএস এর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ছাড়াও ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাগণও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নে প্রদত্ত হল :
ক. বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতের বেলায় টহল জোরদার করে সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন। উভয় পক্ষ যৌথভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা সম্পর্কে প্রেষণা প্রদান এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণ, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
খ. বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ কর্তৃক অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ, ভারতীয় নাগরিক ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক (FDMN) বাংলাদেশে পুশইনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান। বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে পারস্পরিকভাবে সম্মত প্রক্রিয়া অনুযায়ী ফেরত পাঠানোর আশ্বাস দেন।
গ. সীমান্ত দিয়ে মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য, স্বর্ণ, জাল মুদ্রা নোট (FICN) এবং অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (Coordinated Border Management Plan-CBMP)’এর গুরুত্ব তুলে ধরে উভয় পক্ষ পাচার ও পাচারকারীদের রিয়েল-টাইম তথ্য শেয়ার এবং অধিক সতর্কতার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সতর্ক ও দৃঢ় থাকার বিষয়ে একমত হয়।
ঘ. উভয় পক্ষ সীমান্তবর্তী জনগণকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানবপাচার, সীমান্ত স্তম্ভ উপড়ে ফেলা ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ থেকে বিরত রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়। সার্বিকভাবে উভয় পক্ষ সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
ঙ. উভয় পক্ষ সীমান্ত শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হয়। এছাড়া যৌথ নদী কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সহজতর করা এবং সীমান্তবর্তী অভিন্ন নদীগুলোতে অননুমোদিত কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়।
চ. ‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় তিনবিঘা করিডরের মাধ্যমে দহগ্রামকে সংযুক্ত করার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।
ছ. উভয় প্রতিনিধিদল আন্তঃসীমান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী অবস্থান করলে সে ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রিয়েল-টাইম তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হন।
জ. বিজিবি মহাপরিচালক ফেনীর মুহুরীর চর এলাকায় স্থায়ী সীমান্ত পিলার নির্মাণ এবং ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল ও হারিয়াভাঙ্গা নদী এলাকায় সীমান্ত রেখা নির্ধারণের কাজ সম্পন্নের ব্যাপারে জোর তাগিদ দেন। বিএসএফ মহাপরিচালক এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।
ঝ. উভয় পক্ষ কোনো ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করার বিষয়ে একমত হয়। ভবিষ্যতে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না ঘটে সেজন্য পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট সম্পর্কে রিয়েল-টাইম তথ্য শেয়ারের মাধ্যমে পরস্পরকে অবহিত করার বিষয়ে সম্মতি জানায়।
ঞ. উভয় পক্ষ নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যমে পরস্পর বিরোধী বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার /গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে যাতে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে উভয় দেশের গণমাধ্যমকে পরামর্শ প্রদানের বিষয়ে একমত হয়।
উভয় মহাপরিচালক সম্মেলনের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য