× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

আন্তর্জাতিক
Resurrection of Taliban
google_news print-icon

কোণঠাসা তালেবান যেভাবে আবার অপ্রতিরোধ্য

কোণঠাসা-তালেবান-যেভাবে-আবার--অপ্রতিরোধ্য
আফগানিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি নিয়ে রোববার তালেবান যোদ্ধাদের বিজয়োল্লাসের একটি দৃশ্য। ছবি: এএফপি
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে তালেবানের নব্বইয়ের দশকের শাসনামল স্থায়ী হয়েছিল ছয় বছর। যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনাদের অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় তালেবানের ভবিষ্যৎ শাসন কতটা দীর্ঘ হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত বিশ্ব।

১০ দিন পেরোনোর আগেই আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর ২২টি দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। কান্দাহার, হেরাত, মাজার-ই-শরিফ, জালালাবাদসহ দেশের সবগুলো বড় শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর রাজধানী কাবুল ঘিরে ফেলেছে গোষ্ঠীটি।

আফগান সরকারের আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় এখনই কাবুলে প্রবেশ না করলেও পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাজধানী।

দুই দশকের সামরিক অবস্থানে ইতি টানতে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো চলতি বছরের মে মাসে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। এরপর মাত্র তিন মাসে সংঘাতপ্রবণ দেশটিতে নতুন করে বিপুল শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে তালেবান। নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল।

তিন লাখ আফগান সেনার বিপরীতে তালেবানের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৮৫ হাজার। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ ২০ বছর পর অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বিজয় অর্জন করেছে গোষ্ঠীটি। দেশজুড়ে কট্টরপন্থি ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীটির রয়েছে অগনতি সমর্থক ও সহযোগী।

তালেবান প্রতিষ্ঠার পটভূমি

আরবি ভাষায় ‘তালেবান’ শব্দটির অর্থ হলো জ্ঞান অর্জনকারী বা শিক্ষার্থী।

তালেবান সদস্যদের বেশিরভাগই শিক্ষা গ্রহণ করেছেন আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের আফগান সীমান্ত এলাকার রক্ষণশীল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে।

সাবেক সোভিয়েত আমলে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছরের লড়াই করে আফগান স্বাধীনতাকামীরা। ‘মুজাহিদিন’ হিসেবে পরিচিত স্বাধীনতাকামীদের একটি অংশ ছিল তালেবানও।

মূলত ১৯৭৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে আফগানিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ দাউদ খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়া থেকে এ লড়াইয়ের শুরু। ওই অভ্যুত্থান ঘটাতে সমাজতান্ত্রিক নেতাদের মদদ দিয়েছিল তখনকার সোভিয়েত সরকার।

এরপরই ১৯৭৯ সাল থেকে সোভিয়েত উপনিবেশের বিরুদ্ধ সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে মুজাহিদিনরা। আশির দশকজুড়ে এ বিপ্লবে মুজাহিদিনদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোভিয়েতবিরোধী নীতির আওতায় ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী মুজাহিদিনদের সহযোগিতার দায়িত্ব নিয়েছিল ওয়াশিংটন। কারণ সে সময় স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ ছিল তখনকার সোভিয়েত সরকার বা ‘ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকস’, সংক্ষেপে ইউএসএসআর, অর্থাৎ বর্তমান রাশিয়া।

তুমুল গোলমেলে পরিস্থিতির মধ্যে ১৯৮৯ সালে আফগান ভূখণ্ড ছাড়ে সোভিয়েত সেনারা।

নেতৃত্ব সংকটে সে সময় চরম অস্থিতিশীলতার মুখে পড়ে আফগানিস্তান। ১৯৯২ সালে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লড়াইয়ে জড়ায় খোদ মুজাহিদিন কমান্ডাররাই। সম্পর্ক ছিন্ন করে আলাদা হয় তালেবান।

এতে বিভক্ত হয় কাবুল। প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক শ রকেট এসে পড়ত রাজধানী নগরীটিতে।

তালেবানের উত্থানের শুরু যেভাবে

নব্বইয়ের দশকের এ গৃহযুদ্ধের মধ্যেই মূলত ১৯৯৪ সালে শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তালেবান। আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বড় শহর পশতু অধ্যুষিত কান্দাহার দখল থেকে শুরু হয় উত্থান।

সে সময় ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় তালেবানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুজাহিদিন কমান্ডার ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

১৯৯৬ সালে প্রথমবার রাজধানী কাবুল দখল করে তালেবান। কাবুল স্কয়ারে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলায় আফগানিস্তানের শেষ বামপন্থি প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহ আহমাদজাইকে।

এরপরই আফগানিস্তানকে ‘ইসলামি আমিরাত’ ঘোষণা করে তালেবান। শুরু হয় তালেবানের নিজস্ব ব্যাখ্যায় দাঁড় করানো কট্টর শরিয়াহ আইনের বাস্তবায়ন।

শুরুর দিকে কিছুটা স্বীকৃতি পেয়েছিল তালেবান

বেশ সহজেই অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল তৎকালীন তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার।

কারণ আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিল গোষ্ঠীটি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শুরুর দিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল তালেবান।

জনসাধারণকে আশ্বাস দেয় নিরাপদ নাগরিক জীবনের। বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধে অতিষ্ঠ আফগান জনতাও স্বাভাবিকভাবেই নতুন জীবনের আশায় স্বাগত জানায় তালেবান যোদ্ধাদের। এভাবে একে একে আফগানিস্তানের সব শহরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

পরে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানসহ মোট তিনটি দেশ আফগানিস্তানের শাসক দল হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়।

ছয় বছরের কঠোর শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন

শুরুর দিকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের যুক্তি হিসেবে গৃহযুদ্ধকালীন অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর কথা বলেছিল তালেবান। কিন্তু পরে সেসব বিধিনিষেধ আর প্রত্যাহার করেনি।

এসব বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল নারীদের শিক্ষাগ্রহণ ও চিকিৎসা বাদে অন্য সব ধরনের পেশায় তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলো।

ধর্মীয় রীতির নামে নিষিদ্ধ ছিল গান শোনা, টেলিভিশন দেখাসহ বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর নির্দোষ নানা মাধ্যমের ব্যবহার।

খেলাধুলাও নিয়ন্ত্রণ করা হতো কঠোরভাবে। শুধু পুরুষরাই খেলাধুলায় অংশ নিতে পারত, কিন্তু তাদের রক্ষণশীল পোশাক পরে খেলতে হতো এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় বিরতি বাধ্যতামূলক ছিল।

তালেবানের শাসনামলে এসব কঠোর বিধিনিষেধ কেউ না মানলে তাকে প্রকাশ্যে পেটানো হতো বা কারাদণ্ড দেয়া হতো।

ছয় বছরের শাসনজুড়ে আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরও চরম নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে।

২০০১ সালে বামিয়ান প্রদেশে গৌতম বুদ্ধের ঐতিহাসিক ভাস্কর্য ধ্বংসে তালেবানের সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয়েছিল বিশ্বজুড়ে।

তালেবানের বিরুদ্ধে তৎপর বিশ্ব সম্প্রদায়

সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৯৯৯ সালে তালেবানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় জাতিসংঘ।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রে একযোগে কয়েকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়, যাতে প্রাণ যায় প্রায় তিন হাজার মানুষের।

নাইন-ইলেভেন নামে পরিচিত ওই হামলার অভিযোগে আফগানিস্তানে লুকিয়ে থাকা আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তরের জন্য তালেবানকে অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্র।

সাবেক মুজাহিদিন কমান্ডার আব্দুল রব রসুল সায়াফের আমন্ত্রণে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন সৌদি নাগরিক ওসামা বিন লাদেন। তখন থেকে সেখানেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

ওসামাকে হস্তান্তরে ওয়াশিংটনের ওই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে তালেবান। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের কাছে নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলায় বিন লাদেনের ভূমিকার প্রমাণ চায় গোষ্ঠীটি। পাশাপাশি ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনারও প্রস্তাব দেয়।

দুটি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করে বুশ প্রশাসন। বিন লাদেনকে হস্তান্তর না করায় ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।

এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের জোটবদ্ধ বিমান হামলার মুখে কয়েক মাসের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান।

তালেবান পরবর্তী আফগানিস্তান ও তালেবানের পুনরুত্থান

২০০১ সালের ডিসেম্বরে হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে গঠিত হয় একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার।

এর তিন বছর পর প্রণয়ন হয় নতুন সংবিধান। ষাটের দশকের সংশোধিত সংবিধানের আলোকে তৈরি নতুন সংবিধানে নারী ও আদিবাসী সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়।

১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ বছর আফগানিস্তান শাসন করেছিলেন বাদশাহ মোহাম্মদ জহির শাহ। দুররানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে দেশ শাসন করা জহির শাহ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রথমবার আফগান নারী ও আদিবাসী সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকারের অনুমোদন দিয়েছিলেন।

এদিকে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের শাসনামলেই ২০০৬ সাল নাগাদ আবারও সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে তালেবান। বিদেশি সেনা ও তাদের আফগান সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুরু হয় যোদ্ধাদের এক ছাদের নিচে আনা।

দুই দশক কোণঠাসা থেকে নতুন করে শক্তি অর্জন

গত ২০ বছরে দেশজুড়ে অসংখ্য হামলা চালিয়েছে তালেবান। বেসামরিক মানুষের পাশাপাশি আফগান, এমনকি বিদেশি সেনাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের হামলায় প্রাণ গেছে ৪০ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষের। নিহত হয়েছে আফগান সেনা ও পুলিশের কমপক্ষে ৬৪ হাজার সদস্য আর আন্তর্জাতিক জোটের সাড়ে তিন হাজারের বেশি সেনা।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে শান্তি আলোচনার চেষ্টা

বিদেশি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম এই যুদ্ধ আর অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে আমেরিকান সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার।

দিনে দিনে বেড়ে চলছিল আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের খরচ বেড়ে চললেও এখনও আফগানিস্তানে দারিদ্র্য প্রকট; ভঙ্গুর অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সব খাত।

এ অবস্থায় ২০১১ সালে কাতারের দোহায় তালেবানের একাংশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন।

আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের সরকারের সঙ্গে তালেবানকে মুখোমুখি আলোচনায় বসানোর লক্ষ্যে হয় ওই আলোচনা।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দোহায় তালেবানের একটি কার্যালয় চালু হয়।

কিন্তু পাঁচ বছরে আলোর মুখ দেখেনি রাজনৈতিক সমাধানের সেসব চেষ্টা।

আফগান সরকার ও তালেবানের দ্বন্দ্ব

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির বেসামরিক সরকারের সঙ্গে প্রথমবার আনুষ্ঠানিক ও সরাসরি আলোচনায় বসে তালেবান, কিন্তু লাভ হয়নি। কোনো সমঝোতাতেই পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষ।

শান্তিচুক্তি

শেষ পর্যন্ত আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছাড়াই গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র।

ওই চুক্তিতে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের শর্তে তালেবানবিরোধী সেনা অভিযান বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেয় আন্তর্জাতিক জোট।

চুক্তিটির মাধ্যমে সে সময় আন্তর্জাতিকভাবে কিছুটা বৈধতা অর্জন করতে সক্ষম হয় তালেবান।

ট্রাম্পের উত্তরসূরি জো বাইডেনও ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বদলাননি।

ফের আগ্রাসী রূপে তালেবান

চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ১ মের মধ্যে বিদেশি সেনা পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু তারিখ কিছুটা পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর নেয় বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার ২০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে নতুন তারিখটি নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সেনা প্রত্যাহারের তারিখ পেছানো নিয়ে ক্ষুব্ধ তালেবান মে মাসেই আগ্রাসন শুরু করে।

সহিংসতা বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে আবারও তারিখ পাল্টান বাইডেন। সময় কিছুটা এগিয়ে চূড়ান্ত সেনা প্রত্যাহারের নতুন তারিখ হিসেবে ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করেন তিনি।

কিন্তু নমনীয় হয়নি তালেবান; চালিয়ে গেছে আক্রমণ। কিন্তু আক্রমণের লক্ষ্য ছিল মূলত আফগান সরকার, সেনাবাহিনী ও তাদের প্রতি বিশ্বস্তরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া চুক্তি মেনে এখন পর্যন্ত আমেরিকার নিরাপত্তা অবকাঠামো লক্ষ্য করে কোনো ধরনের হামলা চালায়নি গোষ্ঠীটি। কিন্তু আফগান সেনাবাহিনী ও জনসাধারণের ওপর চালিয়েছে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা।

গত এক মাসে তালেবান ও আফগান বাহিনীর সহিংসতায় এক হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গৃহহীন হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

ব্যর্থ শান্তি আলোচনা

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তির মাধ্যমে আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনার পথ খুলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনা শুরুও হয়েছিল।

কিন্তু আফগান ভূখণ্ডে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের তীব্র সহিংসতার কারণে ভেস্তে যায় দোহার আলোচনা।

ব্যাখ্যা হিসেবে তালেবান জানিয়েছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে কোনো অবদান ছিল না পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত আফগান সরকারের।

মে মাসে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু করে তালেবান। দখলে নিতে শুরু করে প্রতিবেশী দেশ ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো।

আফগানিস্তানের ৪১৯টি জেলার অর্ধেকের বেশি এখন তালেবানের দখলে।

নতুন করে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মাইলি গত মাসেই সতর্ক করে বলেছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ‘কৌশলগত বিজয়’ অর্জনের পথে আছে তালেবান।

শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থা আফগানিস্তানকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে শঙ্কা জোরালো হচ্ছিল তখন থেকেই।

বিভিন্ন অঞ্চলে কট্টরপন্থি তালেবানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে স্থানীয় বেসামরিক আফগানরা। তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করেছিল আফগান সরকার।

তালেবানের মুখপাত্র সোহেল শাহীন সে সময় জানান, গৃহযুদ্ধ চায় না তার দল। দোহায় শান্তি আলোচনা ফের শুরু করতে হলে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে পদত্যাগ করতে হবে বলে শর্ত বেঁধে দেন তিনি।

বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শাহীন বলেন, ‘একচেটিয়া ক্ষমতায় তালেবান বিশ্বাসী নয় বলে আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। তালেবান যোদ্ধারা অস্ত্র নামিয়ে রাখবে।

‘কিন্তু এটা তখনই সম্ভব, যখন আলোচনার ভিত্তিতে সর্বসম্মত কোনো সরকার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসবে।’

তালেবানের প্রধান হায়বতুল্লাহ আখুনজাদা গত সপ্তাহে ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’র আহ্বান জানান। কিন্তু সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান অব্যাহত রাখতে নিজ দলের যোদ্ধাদের মধ্যেই চাপের মুখে তিনি।

‘সমান্তরাল সরকার’

‘ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান’ নামে স্বঘোষিত সমান্তরাল রাষ্ট্র কায়েম করেছে তালেবান। নিজস্ব একটি সাদা পতাকাও আছে তাদের।

আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশে নিজেদের ছায়া সরকারের প্রশাসনকে নেতৃত্ব দিতে ছায়া গভর্নরও নিয়োগ দিয়েছে গোষ্ঠীটি।

তালেবানপ্রধান একটি পরিষদে নেতৃত্ব দেন। পরিষদটি অর্থ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ ১২টির বেশি কমিশন দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। তাদের নিজস্ব আদালত ব্যবস্থাও আছে।

তালেবান সদস্য ও জাতিসংঘের একটি কমিটির তথ্য অনুযায়ী, তালেবানের এ ছায়া সরকারের বার্ষিক আয় প্রায় দেড় শ কোটি ডলার।

আঞ্চলিক মাদক ব্যবসায় জড়িত স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতেও রাজস্ব পায় তালেবান। মেথামফেটামিনধর্মী এক ধরনের মাদক উৎপাদনও করে গোষ্ঠীটি। গত বছর খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও বিক্রি থেকেও শত-কোটি ডলার আয় করেছে তারা।

তালেবানের নিজস্ব কর সংগ্রহ ব্যবস্থা আছে। বিদেশ থেকেও বিপুল অঙ্কের অনুদান পায় তারা। ধারণা করা হয়, ইরান ও পাকিস্তানে তালেবানের অনেক আর্থিক পৃষ্ঠপোষক আছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে গোষ্ঠীটি।

তালেবান শাসনের ভবিষ্যৎ

বিদেশি সেনা প্রত্যাহার পুরোদমে শুরুর আগেই এবং শান্তি আলোচনা চলাকালে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সহিংসতায় হতাহত হয়েছে এক হাজার ৮০০ বেসামরিক আফগান। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।

গুপ্তহত্যার শিকার অনেক সংবাদকর্মী। অনেক অধিকারকর্মীর মৃত্যুও হয়েছে। এ জন্য তালেবানের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েছে সমালোচকরা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনারা পূর্ণরূপে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পর কী ঘটবে, তা নিয়ে।

২০১৯ সালের উল্লেখযোগ্য একটি জনমত জরিপে উঠে এসেছে, বর্তমানে তালেবানের প্রতি কোনো রকম সহানুভূতি রাখেন না এমন আফগান ৮৫ শতাংশ।

আফগানিস্তানে আবারও তালেবান পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে দেশটিতে জনজীবনের কী হাল হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত আফগানরা।

এমনকি সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা সংবিধানটি তালেবান ছুড়ে ফেলে দেবে কি না, ঘনিয়ে উঠছে সে শঙ্কাও।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি উপসম্পাদকীয়তে বলা হয়, এ বিষয়ে মোটামুটি স্বচ্ছ ধারণা দিয়ে রেখেছে তালেবান। তারা জানিয়েছে যে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা। সে ব্যবস্থায় শিক্ষা থেকে শুরু করে পেশাগত বিষয় পর্যন্ত সবকিছুতে নারীরা কেবল ততটুকু অধিকারই পাবেন, যতটুকু ইসলাম ধর্মে তাদের দেয়া হয়েছে।

যদিও তালেবান মুখপাত্র শাহীন চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হিজাব বা মাথা ঢাকা পোশাক পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া, এমনকি রাজনীতিতেও অংশ নিতে পারবেন নারীরা।’

বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আগে থেকেই এ চর্চা বিদ্যমান।

নাইন-ইলেভেন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে তালেবানের নব্বইয়ের দশকের শাসনামল স্থায়ী হয়েছিল ছয় বছর।

যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনাদের অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় তালেবানের শাসন কতটা দীর্ঘ হবে, তা নিয়েও শঙ্কিত বিশ্ব।

আরও পড়ুন:
কাবুলের উপকণ্ঠে তালেবান
পতনের মুখে আফগান সরকার
আফগান শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যের শিক্ষাবৃত্তি স্থগিত
অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তালেবানের আধিপত্যের নেপথ্যে
এবার জালালাবাদের পতন, পূর্বাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন কাবুল

মন্তব্য

আরও পড়ুন

গাজায় নৌবহর প্রতিবাদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ

গাজায় নৌবহর প্রতিবাদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ

গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহর ইসরাইলি নৌবাহিনী হাতে আটকের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভকারীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এর জবাবে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।

প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত, বিক্ষোভকারীরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতি অসদাচরণের নিন্দা জানাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গত মাসে বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। জাতিসংঘ প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে বলে জানিয়েছে।

ইসরাইলি একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদ এবং জলবায়ু প্রচারক গ্রেটা থানবার্গসহ ৪শ’ জনেরও বেশি লোক বহনকারী ৪১টি জাহাজকে বুধবার থেকে ইসরাইলি নৌবাহিনী থামিয়ে দিয়েছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।

স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনার পৌর পুলিশ বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রায় ১৫হাজার মানুষ বার্সেলোনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভমিছিল করে, ‘গাজা, তুমি একা নও’, ‘ইসরাইলকে বয়কট করো’ এবং ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা’ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

স্প্যানিশ সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের একটি অংশকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।

বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আদা কোলাউকে বহনকারী একটি নৌকাও এগিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ তার সহকর্মীদের ইসরাইল কর্তৃক নির্বাসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ডাবলিনে আইরিশ পার্লামেন্টের বাইরেও কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী মিছিল করে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকে প্রায়শই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আয়ারল্যান্ডের শতাব্দীব্যাপী সংগ্রামের সাথে তুলনা করা হয়।

মরিয়ম ম্যাকনালি নামে এক নারী বলেছেন, তিনি ডাবলিনের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তার মেয়ে নৌবহরের সাথে যাত্রা করেছে।

ম্যাকনালি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি আমার মেয়ের জন্য উদ্বিগ্ন, কিন্তুসে যা করছে তা নিয়ে খুব গর্বিত’।

তিনি বলেছেন, ‘মারাত্মক বিপদের মুখেও সে মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’

এএফপি’র একজন সাংবাদিক দেখেছেন, প্যারিসের প্লেস দে লা রিপাবলিক-এ প্রায় এক হাজার মানুষ মিছিল করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ ফ্রান্সের বন্দর শহর মার্সেইতে ইসরাইলের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির অভিযোগে অস্ত্র প্রস্তুতকারক ইউরোলিংকসের অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশের সময় বিক্ষোভকারীরা আটকানোর চেষ্টা করলে বিকেলে প্রায় একশ’ ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এএফপি সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন, বার্লিন, দ্য হেগ, তিউনিস, ব্রাসিলিয়া এবং বুয়েনস আয়ারসেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
- ‘অসহনীয়’ -

ইতালিতে দেশের প্রধান ইউনিয়নগুলো ফ্লোটিলার সাথে সংহতি জানিয়ে শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে কর্মীদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।

রোম ছাড়াও, পুলিশ জানিয়েছে, , মিলান, টোরিনো, ফ্লোরেন্স এবং বোলোগনাসহ অন্যান্য শহরেও ১০ হাজার মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় একই রকম বিক্ষোভের একদিন পর রাজধানীর বিক্ষোভকারীরা কলোসিয়ামে জড়ো হয়ে মিছিল করে ইসরাইলের প্রতি অতি-ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা জানায়।

বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়েছে, ‘আমরা সবকিছু অবরুদ্ধ করতে প্রস্তুত। গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

তুরস্কের সরকার ইসরাইলের আক্রমণের তীব্র সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম। বিক্ষোভকারীদের একটি দীর্ঘ দল ‘দখলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা’সহ ব্যানার নিয়ে ইস্তাম্বুলে ইসরাইলি দূতাবাসের দিকে মিছিল করে।

২১ বছর বয়সী ছাত্রী এলিফ বোজকুর্ট এএফপিটিভি’কে বলেছেন, ‘আমরা সুমুদ নৌবহরের সকল সদস্য এবং সকল বন্দীর মুক্তি দাবি করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমরা দাবি করছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণহত্যাকারী ইসরাইলি রাষ্ট্রের সাথে সকল শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করা হোক।’

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় সংসদ ভবনের সামনেও প্রায় ৩ হাজার বিক্ষোভকারী বিক্ষোভে অংশ নেয়। সেখানে একটি ব্যানারে ইইউকে ‘অবরোধ ভাঙার’ আহ্বান জানানো হয়। এ সময় ভিড়ের মধ্যে ধোঁয়াটে বোমা এবং পটকা ফাটানো হয়েছিল।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া আইসিস নামে একজন বিক্ষোভকারী এএফপিটিভি’কে বলেছেন, ‘বার্তাটি হল প্রতিটি নৌকাকে রক্ষা করতে হবে,’ ‘প্রতিটি নৌকাকে রক্ষা করতে হবে।’

তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সাথে ব্লকের চুক্তির মাধ্যমে ‘ইসরাইলে পাঠানো জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত অর্থ’ বন্ধ করার আহ্বান জানান।
- ‘বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ -

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন এএফপি সাংবাদিক এবং সুইস সম্প্রচারকদের মতে, জেনেভায় একই আকারের জনতা সমাবেশ করেছিল। বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারী কেন্দ্রীয় স্টেশনের কাছে আগুন জ্বালিয়েছিল।

এরপর বিক্ষোভকারীরা সুইস শহরের মন্ট ব্লাঙ্ক ব্রিজের দিকে রওনা দিয়ে লেক জেনেভার শেষ প্রান্তের দিকে অগ্রসর হলে সেখানে দাঙ্গা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে দাঙ্গাপুলিশ লাঠিচার্জ করে পিছু হটিয়ে দেয়।

গ্রীক রাজধানী এথেন্সে বিক্ষোভকারীদের একটি দল আতশবাজি এবং অগ্নিসংযোগ শুরু করে।

গ্রীসের ওয়ার্ল্ড অ্যাগেইনস্ট রেসিজম অ্যান্ড ফ্যাসিজম গ্রুপের সমন্বয়কারী পেট্রোস কনস্টান্টিনো এএফপিটিভি’কে বলেছেন, ‘সুমুদের নৌবহরের ওপর আক্রমণ, এটি ইসরাইলি বর্ণবাদ রাষ্ট্রের বর্বরতার বহিঃপ্রকাশ। তারা গাজায় মানবিক সাহায্যের জন্য একটি পথও খুলতে চায় না’।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনেও কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী সমাবেশও মিছিল করেছে।সূত্র : বাসস

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Global Sumud flotillar is a Seized all ships except

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব জাহাজ আটক

আটক ৩১৭ জনকে ইউরোপে পাঠাবে ইসরায়েল * ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি 
বাদে সব জাহাজ আটক

গাজা উপত্যকার উদ্দেশে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজাগামী ত্রাণবাহী ৪৪টি জাহাজের মধ্যে একটি জাহাজ ছাড়া সবগুলোকে আটক করা হয়েছে।
আটক হওয়া কর্মীরা এসেছেন নানা দেশ থেকে—স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ৩৭টি দেশের নাগরিক রয়েছেন তাদের মধ্যে।
বাংলাদেশের শহিদুল আলম ছাড়াও সুমুদ ফ্লোটিলায় রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহি আক্তারও। শহিদুল আলম ‘কনশায়েন্স’ নামে একটি বড় জাহাজে রয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেটি আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে—গাজামুখী ত্রাণবাহী বহরে থাকা কর্মীদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে। ভূমধ্যসাগরে একের পর এক নৌযান আটক করার পর এই ঘোষণা আসে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে জানায়, ‘নিজ নিজ ইয়টে থাকা যাত্রীরা নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে ইসরায়েলে পৌঁছাচ্ছেন। সেখান থেকেই তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন এবং সুস্থ আছেন।’ এ সময় গ্রেটা থুনবার্গসহ আটক কর্মীদের ছবি প্রকাশ করা হয়।
সংগঠকদের দাবি, ফ্লোটিলার অন্তত ২২৩ জন কর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এক্সে জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫টি নৌযান আক্রমণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আরও আটটি নৌযান আক্রমণের শিকার হতে পারে বা বর্তমানে আক্রমণের মুখে রয়েছে। এছাড়া ফ্লোটিলা তাদের ইনস্টাগ্রামে আটক হওয়া ২২৩ জন কর্মীর নাম ও জাতীয়তা প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, গাজার নৌ অবরোধ ভাঙতে ও সহায়তা পৌঁছে দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত শত কর্মী ৪৪টি নৌযানে অংশ নিয়েছেন। তবে ইসরায়েল এর আগেও এ ধরনের ফ্লোটিলা অভিযাত্রা ব্যর্থ করেছে। এবারের যাত্রাও একই পরিণতির মুখে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে ইসরায়েলি বাহিনীর লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) পাঠানো হবে। ত্রাণ বহরের সঙ্গে থাকা আইনজীবীদের বরাতে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি জাহাজে থাকা আল জাজিরার হাসান মাসুদ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, নৌবহরে থাকা আইনজীবীরা ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবিক ও সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করছেন। ইসরায়েলি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো আইসিজেতে পাঠানো হবে।
হাসান মাসুদ বলেন, ‘আমরা সমস্ত ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, বেশ কয়েকটি নৌকা এখনো গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এমনকি যদি কেবল একটি নৌকা গাজায় পৌঁছায়, তবুও এটি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্য অর্জন করবে।’
তিনি আরও জানান, ইতালির সিসিলি থেকে রওনা হওয়ার পর আরেকটি নৌবহর এখন গাজার দিকে যাত্রা করছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, কর্মীরা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি নৌকমান্ডোরা গ্লোবাল ফ্লোটিলার ৪৪টি জাহাজের মধ্যে প্রায় ৪০টিতে উঠে পড়ে। তারা জিপিএস সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়ে জাহাজে থাকা শত শত কর্মীকে আটক করে।
রয়টার্সের যাচাই করা ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিওতে গ্রেটাকে সৈন্য-বেষ্টিত একটি ডেকের ওপর বসে থাকতে দেখা গেছে। আটক যাত্রীদের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাও রয়েছেন।
গাজামুখী নৌবহরটিতে ইসরায়েলি এমন হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এটিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক। একই সঙ্গে এ ঘটনায় স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসসহ বহু দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ইসরায়েলের বাধা পেরিয়ে গাজার জলসীমায় ঢুকে পড়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ। পথে রয়েছে আরও ২৩টি। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, মিকেনো নামে ওই জাহাজ বর্তমানে গাজার জলসীমায় অবস্থান করছে। তবে সেটি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে পড়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
আল জাজিরা জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক কর্মী-সামাজিক আন্দোলনকারীকে বন্দি করেছে ইসরায়েল। গাজার অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে যাওয়া এই বহরে ৪০টিরও বেশি জাহাজ ছিল।
এর আগে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়, জলকামান ছুড়ে আক্রমণ চালায় এবং আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে কর্মীদের আটক করে।
তবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলছে, এই বাধা তাদের মিশন থামাতে পারবে না। ইসরায়েলকে ফাঁকি দিয়ে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুমুদ ফ্লোটিলার অন্তত ৩০ জাহাজ। গাজা উপকূল থেকে আর মাত্র ৮৫ কিমি দূরে রয়েছে তারা।
সংগঠনটির ভাষ্যমতে, অবৈধভাবে চালানো ইসরায়েলি বাধা সত্ত্বেও তারা গাজার অবরোধ ভাঙতে এবং একটি মানবিক করিডোর খুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য এই নৌবহর খাদ্য ও মানবিক সহায়তা বহন করছে।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Elon Mask is the owner of and 1 billion

৫০ হাজার কোটি ডলারের মালিক হলেন ইলন মাস্ক

৫০ হাজার কোটি ডলারের মালিক হলেন ইলন মাস্ক

বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন অর্থাৎ ৫০ হাজার কোটি ডলার নিট সম্পদের মাইলফলক ছুঁয়েছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ফোর্বসের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী গত বুধবার তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার ১০ কোটি ডলারে।

ফোর্বসের তালিকায় মাস্কের পর দ্বিতীয় স্থানে আছেন ওরাকল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। গত বুধবার পর্যন্ত তার নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ৭০ কোটি ডলার।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মূলত টেসলার শেয়ারের পুনরুত্থান ও নিজের মালিকানাধীন অন্যান্য প্রযুক্তি উদ্যোগের (স্টার্টআপ) বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ায় এই রেকর্ড গড়তে পেরেছে ইলন। টেসলার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার তার মালিকানায় রয়েছে। চলতি বছরে টেসলার শেয়ারমূল্য এরই মধ্য ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে ও বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার আরও ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে মাস্কের সম্পদে একদিনেই যুক্ত হয় প্রায় ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার।

রয়টার্স বলছে, ইলন মাস্কের জন্য বছরের শুরুটা অস্থির থাকলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসায় টেসলার শেয়ার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। টেসলা বোর্ডের চেয়ারম্যান রবিন ডেনহোলম গত মাসে জানান, হোয়াইট হাউসে কয়েক মাস ব্যস্ত থাকার পর মাস্ক এখন আবার ‘সম্মুখসারিতে ও একেবারে কেন্দ্রে’ ফিরে এসেছেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই মাস্ক নিজেই টেসলার প্রায় ১০০ কোটি ডলারের শেয়ার কিনে কোম্পানির ভবিষ্যতের প্রতি আস্থার বড় বার্তা দেন।

তবে গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়া ও মুনাফার চাপ অব্যাহত থাকায় শেয়ার কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে টেসলা। এর ফলে তথাকথিত ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ গ্রুপের বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে টেসলা অন্যতম খারাপ পারফরমার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত মাসে টেসলা বোর্ড মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা প্রস্তাব করে, যেখানে উচ্চাভিলাষী আর্থিক ও কার্যকরী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে মাস্কের আরও বড় শেয়ার দাবিও এতে বিবেচনায় আনা হয়।

মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি এক্সএআই ও রকেট নির্মাতা স্পেসএক্স এ বছরেও বাজারমূল্যে বড় সাফল্য পেয়েছে। জুলাই পর্যন্ত এক্সএআইয়ের মূল্য ছিল ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে সিএনবিসির খবরে বলা হয়, নতুন তহবিল সংগ্রহের পর এর মূল্য ২০ হাজার কোটি ডলার হতে পারে। তবে মাস্ক তখন জানান, তারা কোনো মূলধন সংগ্রহ করছেন না।

অন্যদিকে ব্লুমবার্গের জুলাই মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেসএক্স নতুন অর্থ সংগ্রহ ও অভ্যন্তরীণ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছে, যা কোম্পানির মূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করবে।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Yogi turned off the Internet in Uttar Pradesh Issue I Love Muhammad Poster Issue

‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টার ইস্যু উত্তর প্রদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করলেন যোগী

‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টার ইস্যু উত্তর প্রদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করলেন যোগী

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই সহিংসতার জেরে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তেজনা যাতে না বাড়ে, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

জেলা প্রশাসনের জারি করা আদেশে বলা হয়, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ইতোমধ্যে দাঙ্গা ও সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের দশেরা ও দুর্গাপূজার উৎসব ঘিরে জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে বেরেলিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্ট্যাবুলারি (পিএসি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ)। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় নজরদারির জন্য ড্রোনও ব্যবহার করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

বেরেলির পাশাপাশি শাহজাহানপুর, পিলিভিত ও বদায়ুঁ জেলা প্রশাসনকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ভূপেন্দ্র চৌধুরী।

গত শুক্রবার ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ পোস্টার ইস্যুতে একটি বিক্ষোভ ডেকেছিলেন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ তৌকির রাজা খান। ওই ডাকে জুমার নামাজের পর কোটওয়ালি এলাকার একটি মসজিদের বাইরে প্রায় ২ হাজার মানুষ জড়ো হন। সেখানে হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনাও ঘটে।

ওই ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার শহরের সিবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারা চিকিৎসাধীন থাকলেও পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।

তৌকির খান তার কয়েক সহযোগী, একজন আত্মীয়সহ বর্তমানে কারাগারে আছেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ১০টি এফআইআর দায়ের করেছে, যাতে ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ২ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত ৪ সেপ্টেম্বর ঈদে-মিলাদুন্নবীর মিছিলের সময়। কানপুরে মিছিলের পথে একটি তাঁবুতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা পোস্টার ঝোলানো হয়েছিল। স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলো অভিযোগ তোলে, ওই জায়গাতেই রামনবমীর মতো হিন্দু উৎসব হয়। তাই এই পোস্টার ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়া হয়েছে।

এরপর থেকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু সংগঠনগুলোর দাবি, তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিমরা অভিযোগ করেন, নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করায় তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

কয়েক সপ্তাহ পর বারানসিতে পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়। ধর্মীয় নেতারা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টারের প্রতিবাদে ‘আই লাভ মহাদেব’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেন। তারা দাবি করেন, উসকানিমূলক পোস্টারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Flood warnings in the coastal region in fear of the Philippine cyclone injury

ফিলিপাইন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আশঙ্কায় উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার সতর্কবার্তা

ফিলিপাইন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আশঙ্কায় উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার সতর্কবার্তা

ফিলিপাইনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বৃহস্পতিবার উপকূলীয় অঞ্চলে বিপজ্জনক বন্যার সতর্কবার্তা দিয়েছেন। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় ম্যাটমো দুর্যোগ কবলিত দেশটিতে আঘাত হানার আশঙ্কায় এ সতর্কতাবার্তা দেওয়া হয়েছে।

ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৭ মাইল) বেগে বাতাস বয়ে আনা এই ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সকালে লুজনের প্রধান দ্বীপে পৌঁছানোর কয়েক ঘন্টা আগে তীব্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, ‘উত্তর ও পূর্ব লুজনের নিম্নভূমি বা উন্মুক্ত উপকূলীয় এলাকায় ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ১.০ থেকে ৩.০ মিটার (৩-১০ ফুট) উচ্চতার প্রাণঘাতী ঝড়ো হাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

ঝড়ো হাওয়া যখন সমুদ্রের বিশাল ঢেউ উপকূলের দিকে ঠেলে দেয়, তখন বন্যা, সম্পত্তির ক্ষতি ও মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দেয়।

তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়ার কোনও নির্দেশ দেয়নি। তবে আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং সমুদ্র উত্তাল এবং সকল ধরণের জাহাজের জন্য সমুদ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হবে।

মধ্য ফিলিপাইনে ৬.৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৭২ জন নিহত এবং প্রায় ৬০০টি বাড়ি ধ্বংস হওয়ার মাত্র তিন দিন পর, আফটারশকের (ভূমিকম্পন পরবর্তী কম্পনের) ভয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়েছে।

ফিলিপাইনে প্রতি বছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। এগুলো প্রায়ই দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় আঘাত হানে, ওই স্থানগুলোতে লাখ লাখ অসহায় মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে মানব-চালিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রহ উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

গত সপ্তাহে উত্তর ফিলিপাইনে টাইফুন বুয়ালোইয়ের আঘাতে ৩৭ জনে প্রাণহানি ঘটেছে এবং ৪ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে টাইফুন রাগাসার আঘাতে দেশটিতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সূত্র : বাসস

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Netanyahu under two way pressure on Trumps proposal?

ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমুখী চাপে নেতানিয়াহু?

ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমুখী চাপে নেতানিয়াহু?

গাজা যুদ্ধের অবসান এবং বিধ্বস্ত ওই অঞ্চল পুনর্গঠনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটি মেনেও নিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘণ্টাখানেক পরই ভোল পাল্টেছেন তিনি।

নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি কখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেবেন না এবং গাজার অধিকাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি অব্যাহত থাকবে। ট্রাম্পের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু বারবার এটার নিন্দা করে আসছিলেন।

ওই প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়ে এই পরিকল্পনায় কিছুটা গতি এনে দিয়েছে জর্ডান, মিসর, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কের মতো শীর্ষস্থানীয় আরব ও মুসলিমপ্রধান দেশ।

আলোচনার গতি বজায় রাখতে ট্রাম্প শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, এই প্রস্তাবে হামাস রাজি কি না ‘হ্যাঁ অথবা না’ তা জানাতে ‘তিন থেকে চার দিন’ সময় আছে। যদি উত্তর না হয়, তাহলে যুদ্ধ চলবে।

প্রস্তাবিত চুক্তিটি অনেকটাই জো বাইডেনের এক বছরেরও বেশি সময় আগে করা পরিকল্পনার মতো। এরপর থেকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, গাজায় আরও ধ্বংসযজ্ঞ এবং এখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মাসের পর মাস যন্ত্রণা এবং বন্দিদশা সহ্য করতে হয়েছে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যে বাইডেনের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার কারণ হলো, নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভার কট্টর ডানপন্থিদের চাপের মুখে নতুন দাবি যুক্ত করেছিলেন।

এত কিছুর পরেও যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রস্তাব একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। প্রথমবারের মতো, ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। যাতে চাপে পড়েছেন নেতানিয়াহু সরকারও।

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক
Continued to move on to the relief in Gaza despite the Israeli barrier

ইসরাইলি বাধা সত্ত্বেও গাজায় ত্রাণবহরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত

ইসরাইলি বাধা সত্ত্বেও গাজায় ত্রাণবহরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছবি : সংগৃহীত

গাজায় ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহর জানিয়েছে, ইসরাইলি নৌবাহিনীর বাধা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার তাদের কয়েক ডজন জাহাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দিকে ‘জোরালোভাবে’ এগিয়ে চলেছে।

জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে সুইডিশ জলবায়ু প্রচারক গ্রেটা থানবার্গসহ রাজনীতিবিদ এবং কর্মীদের বহনকারী প্রায় ৪৫টি জাহাজ নিয়ে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গত মাসে স্পেন ত্যাগ করে। জাতিসংঘ বলেছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।

বুধবার ইসরাইলি নৌবাহিনী নৌবহরটিকে তাদের অবরোধের আওতায় আসা জলসীমায় প্রবেশের বিরুদ্ধে সতর্ক করার পর বাধা দেয় এবং থানবার্গের জাহাজটিকে সামনের দিকে আরো এগিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়।

কিন্তু নৌবহরটি জানিয়েছে, ইসরাইলি বাধা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের বেশিরভাগ জাহাজ তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখে গাজা উপত্যকার উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছেছিল।

নৌবহরটি এক্স-এ টাইম স্ট্যাম্পসহ পোস্ট করেছে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ২০ মিনিটে (০০২০ জিএমটি) ‘ইসরাইলি দখলদার নৌবাহিনীর অবিরাম আগ্রাসন সত্ত্বেও মাত্র ৪৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ৩০টি নৌকা এখনো জোরেশোরে গাজার দিকে যাত্রা করছে’।
ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী ২শ’ জন যাত্রী ১৩টি নৌকা আটক করেছে। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই স্পেন এবং ইতালির নাগরিক ছিলেন।

কিন্তু, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মিশন চলছে’।

তিনি অবশিষ্ট জাহাজ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা অনুপ্রাণিত এবং আজ ভোরের মধ্যে অবরোধ ভাঙতে তারা তাদের সাধ্যমতো যা যা করার দরকার সবকিছু করছে’।

নৌবহরটি জানিয়েছে, বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে এই বাধাগুলো দেয়া হয়। তারা আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করার সময় এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে বর্ণনা করেছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘নিশ্চিত বাধার বাইরেও লাইভ স্ট্রিম এবং আরো বেশ কয়েকটি জাহাজের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’

ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এক পোস্টে বলেছে, ‘নৌবহরের বেশ কয়েকটি জাহাজ নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং তাদের যাত্রীদের ইসরাইলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে’।

এক্সে ২২ বছর বয়সি থানবার্গের জিনিসপত্র উদ্ধারের ফুটেজ পোস্ট করেছে এবং আরো বলেছে, ‘গ্রেটা এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।’

হামাস ‘আন্তর্জাতিক জলসীমায়’ নৌবহরের বাধাদানকে ‘জলদস্যুতা এবং সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদের অপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর অতর্কিত হামলা গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল।

স্পেন এবং ইতালি উভয়ই নৌ-প্রহরী পাঠিয়েছিল। তারা গাজা উপকূলে ইসরাইলের ঘোষিত নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশের আগে জাহাজগুলোকে থামার আহ্বান জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, তাদের ফ্রিগেটগুলো সেই সীমা অতিক্রম করবে না।

তিউনিসিয়ায় ১০ দিন যাত্রাবিরতির পর আয়োজকরা দুটি ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছেন। ফ্লোটিলা ১৫ সেপ্টেম্বর আবার যাত্রা শুরু করে।

গ্রুপটি জানিয়েছে, তাদের প্রধান জাহাজগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আলমা। জাহজটির চারদিকে ‘একটি ইসরাইলি যুদ্ধজাহাজ আক্রমণাত্মকভাবে প্রদক্ষিণ করেছিল।’ আরেকটি জাহাজ ‘সিরিয়াস’ ‘অনুরূপ হয়রানিমূলক মহড়ার’ শিকার হয়েছিল।

-‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’-

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ‘ভীতি প্রদর্শন’ কৌশল সত্ত্বেও নৌবহরটি এর আগে বিধ্বস্ত উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
গ্রুপটি এক্স-এ বলেছে, ‘পূর্ববর্তী নৌবহরগুলোকে যেখানে আটক করা হয়েছিল অথবা আক্রমণ করা হয়েছিল সেই এলাকায় প্রবেশ করার সময় আমরা সতর্ক রয়েছি’।

ইতালিতে ইতোমধ্যেই নৌবহরের সমর্থনে সাধারণ ধর্মঘট হয়েছে। বুধবার রাতে রোমে শত শত মানুষ তার সমর্থনে সমবেত হন।

নেপলসে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা দক্ষিণ ইতালীয় শহরের প্রধান স্টেশনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ট্রেন অবরোধ করে এবং পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানাতে ইউনিয়নগুলো শুক্রবার আবারও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেছেন, তিনি নৌবহরকে বাধা দেয়ার কারণে তার দেশে অবস্থানরত সমস্ত ইসরাইলি কূটনীতিককে বহিষ্কার করবেন।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটিকে ‘সন্ত্রাসবাদের একটি কাজ যা আন্তর্জাতিক আইনের সবচেয়ে গুরুতর লঙ্ঘন এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে’ বলে অভিহিত করেছেন।

জুন এবং জুলাই মাসে ইসরাইল একই ধরনের প্রচেষ্টা রুখে দেয়।

-‘এখন থামো’-

স্পেনের ডিজিটাল রূপান্তর মন্ত্রী অস্কার লোপেজ নৌবহরটিকে গাজা থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ইসরাইলের ঘোষিত নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

ইতালিও তাদের ফ্রিগেটটিকে সেই সীমায় থামার পর কর্মীদের ‘এখনই থামতে’ অনুরোধ করেছিল।

স্পেনের কর্মীরা বলেছেন, স্পেন এবং ইতালির সিদ্ধান্ত তাদের প্রচেষ্টাকে ‘নাশকতার’ একটি প্রচেষ্টা।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, কর্মীরা কোনো হুমকি নয় এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তাদেরকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

ইতালির জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, এই ভ্রমণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে বিপদে ফেলতে পারে, যা এখনো আলোচনাধীনে রয়েছে। সূত্র : বাসস

মন্তব্য

p
উপরে