আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফে তালেবান যেকোনো সময় হামলা করতে পারে।
এ আশঙ্কায় সেখান থেকে নিজেদের সব নাগরিককে দেশে ফেরাতে সামরিক বিমান পাঠিয়েছে ভারত।
একই সঙ্গে মাজার-ই-শরিফে থাকা আফগানিস্তানে নিজেদের শেষ কনস্যুলেটও বন্ধ করেছে নয়াদিল্লি।
ভারত সরকার মঙ্গলবার এসব উদ্যোগ নেয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
কনস্যুলেটটির কূটনীতিক ও নাগরিকদের বিশেষ বিমানে দেশে ফেরার আহ্বান জানায় ভারত সরকার।
আফগানিস্তানজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতের কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।
তালেবানের হামলার কারণে দেশটিতে নিজেদের সব কনস্যুলেট বন্ধ করল ভারত। শুধু রাজধানী কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস খোলা রয়েছে।
আফগানিস্তানে বসবাসরত শিখ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেশে ফেরাতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কংগ্রেস।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা জয়বীর শেরগিলের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে প্রায় সাড়ে ৭০০ শিখ ও হিন্দু আফগানিস্তানে অবস্থান করছে।
কংগ্রেসের আশঙ্কা, শিখ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তালেবানের হামলার শিকার হতে পারে।
শুক্র থেকে সোমবার এই চার দিনে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ছয়টি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেয় তালেবান।
সোমবার আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাক দখল করে তালেবান।
রোববার এক দিনেই কুন্দুজ প্রদেশের রাজধানী কুন্দুজ, সার-ই-পল প্রদেশের রাজধানী সার-ই-পল ও তাখার প্রদেশের রাজধানী তালোকান থেকে সরকারি বাহিনী হটাতে সক্ষম হয় তালেবান।
এর আগে শনিবার সকালে উত্তরাঞ্চলীয় তুর্কমেনিস্তান সীমান্তবর্তী জওজান প্রদেশের রাজধানী শেবেরঘান তালেবান নিয়ন্ত্রণে নেয়।
শুক্রবার রাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইরানের সীমান্তবর্তী জারাঞ্জ দখলের মাধ্যমে প্রথম দেশটির কোনো প্রদেশের রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় তালেবান।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান সরকার উৎখাতে মরিয়া তালেবান।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কের জেরে আফগানিস্তানে সে সময় সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো।
মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে ওই বছরই আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানকে উৎখাত করা হয়।
তালেবান উৎখাত হলেও আফগানিস্তানে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনারা।
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরাতে নিজেদের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে সেপ্টেম্বর নয়, চলতি মাসের শেষেই আফগানিস্তান ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা।
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট করার ব্যাপারেও অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। এছাড়া, জুলাই অভ্যুত্থান গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল একমত পোষণ করেছে বলে জানান তিনি।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষে সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে কোনো রকম দ্বিমত নেই। সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে ‘বহুত্ববাদ’ না রাখার ব্যাপারে অধিকাংশ দল মতামত দিয়েছে।
তিনি বলেন, অন্য চারটি মূলনীতির ব্যাপারে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। তবে অনেক দল এই চারটির বাইরেও অন্য বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কিছু দল অবশ্য এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণের প্রশ্নে এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে দলগুলোর মধ্যে। তবে এর পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। যারা সংসদের উভয় কক্ষের পক্ষে এবং যারা এক কক্ষবিশিষ্ট আইন সভার পক্ষে উভয় পক্ষই আইন সভার ব্যাপারে ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদল থেকে দেওয়ার পক্ষে। উচ্চকক্ষ গঠনকে সেসব দল সমর্থন করে তারা ১০০ জন সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের ব্যাপারে একমত। তবে এই প্রতিনিধিদের কীভাবে নির্বাচন করা হবে সংবিধান সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারের সুপারিশে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকলেও এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
তিনি বলেন, সংবিধানের (৪৮-ক) অনুচ্ছেদ যা কার্যত রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নির্ধারণ করে, তা সংশোধনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ৭০ অনুচ্ছেদ, অর্থাৎ সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিধান তা পরিবর্তনের ব্যাপারে কীভাবে হবে সেই প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। ঐকমত্য হলেও, কী কী বিষয়ে দলের পক্ষে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক হবে তার একটি আংশিক তালিকার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে।
অর্থ বিল, আস্থা ভোট, সংবিধান সংশোধন বিলের ব্যাপারে দলীয় অনুশাসনের বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে অধিকাংশ দল একমত, এর অতিরিক্ত আরও কিছু যুক্ত করা, যেমন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবিষয়ক বিল যুক্ত করার জন্যও কিছু দলের প্রস্তাব আছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, আইনসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিত্ব পদ বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের দেওয়ার ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। এই মর্মে বিশেষ কয়েকটি কমিটি যেমন- পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, এস্টিমেট কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের কাছে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপের ব্যাপার বিবেচনায় আছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, জুলাই-অভ্যুত্থান গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল একমত পোষণ করেছে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’ এর সংশোধন করার প্রস্তাবে সব দল একমত পোষণ করেছে। অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ সংশোধন করার প্রস্তাবে সব দল নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। বর্তমান পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে ৮ সদস্যবিশিষ্ট পৃথক তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য সংসদের স্থায়ী কমিটির মতো জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি করে ‘জেলা নাগরিক কমিটি’ ও ‘উপজেলা নাগরিক কমিটি’ গঠন করার ব্যাপারে দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ায়নি ও ফৌজদারি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পুনঃস্থাপন করার বিষয়ে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে।
আলী রীয়াজ জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করার প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। পৌরসভার চেয়ারম্যান সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।
তিনি বলেন, হিসাব বিভাগ হতে অডিট বিভাগ আলাদা করার বিষয়ে একমত সব রাজনৈতিক দল।
আলী রীয়াজ জানান, দেশের পুরোনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা, বিদ্যমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করা, ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে পৌরসভার চেয়্যারম্যান নির্বাচিত হওয়া এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে বেশিরভাগ দল একমত হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পক্ষেই মোটা দাগে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সুপারিশের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে।
তিনি জানান, দুদকের স্বাধীনতা, কার্যকরতা ও গতিশীলতার পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত সব সুপারিশমালা সম্পর্কে প্রায় সব দলই সম্পূর্ণ একমত। প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করার প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি জানান, দুর্নীতিবিরোধী ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি করে ন্যায়পালকে দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্রের যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতায়িত করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। তবে এই বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে গেছে কেননা কোনো কোনো দল এই বিষয়ে আংশিক একমত। রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আনীত প্রস্তাবে নীতিগতভাবে বা আংশিক একমত হয়েছে সবগুলো দল।
সেবা প্রদানকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (অ্যান্ড টু অ্যান্ড) অটোমেশনের আওতায় আনার প্রস্তাবে সব দল একমত পোষণ করেছে। কর ফাঁকি ও অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড ও উন্মুক্ত সরকার ব্যবস্থায় সহায়ক হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের’ পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত পোষণ করেছে। ইউএন কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনের অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে পৃথকীকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা। এই সুপারিশের ব্যাপারে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করার জন্য সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করার সুপারিশের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে সবগুলো দল।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে অসদাচরণ হিসেব বিবেচনা করে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করার সুপারিশের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট ও জেলা ইউনিটের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা প্রস্তাবে দলগুলো নীতিগতভাবে বা আংশিকভাবে একমত হয়েছে।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রদ করে আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কোনো কোনো দল প্রবীণতম তিনজন বিচারকের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা সাতজন নির্ধারণ এবং প্রধান বিচারপতির চাহিদা অনুযায়ী সময়ে সময়ে আপিল এবং হাইকোর্ট বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি জানান, জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক সাবেক বিচারপতিদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ, শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সতর্ক করা ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারপতি পদবি ব্যবহার থেকে বারিত করার সুপারিশের সঙ্গে সবদল নীতিগত একমত পোষণ করেছে।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ড স্থাপন এবং বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শন করার সুপারিশের বিষয়ে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে এক-দুইটি দল ভিন্নমত প্রকাশ করেছে।
তিনি জানান, আইনগত সহায়তাকে অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের সুপারিশে সব দল একমত পোষণ করেছে। আইনজীবী সমিতি নির্বাচন এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দলীয় রাজনীতির প্রভাব বিলোপের জন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের যেকোনো সংগঠনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রস্তাবের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। কোনো কোনো দল আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করার ব্যাপারে সব দল একমত পোষণ করেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি জানান, দল নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিধান করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ভবিষ্যতে সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি আলাদা স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত। তবে এ ব্যাপারে মতের ভিন্নতা আছে। নির্বাচন কমিশনের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রস্তাব কোনো মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের স্পিকারের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপনের বিধান করার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো।
সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা শপথ ভঙ্গ করলে কমিশনারদের মেয়াদ পরবর্তী সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ প্রস্তাবিত সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে সুপারিশসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর বিধান করার ব্যাপারে বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
আলী জানান, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর আওতাভুক্ত করার প্রস্তাবে বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বারিত করার লক্ষ্যে মানবতাবিরোধী (ট্রাইব্যুনাল) আইন ও আরপিও সংশোধন করার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। এর আইনি দিক বিবেচনার জন্যে অধিকাংশ দল গুরুত্ব দিয়েছে।
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এ সময় নির্বাচন ও সংস্কারের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এই দুইয়ের মধ্যে এক ধরনের কল্পিত বিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার- এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, নির্বাচন ও সংস্কারের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। এই বিষয়ে এক ধরনের কল্পিত বিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো বিরোধ নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া একরকম এবং জাতীয় সনদ তৈরির চেষ্টা, সেটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যেই করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে যেন রাজনৈতিক কাঠামো এমনভাবে হয়, যার মধ্যে স্বৈরাচারী ব্যবস্থাটি আবার উত্থিত হতে না পারে এবং নাগরিকদের অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকে।
সংবিধান সংস্কার হবে নাকি পুনর্লিখন হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার, সংশোধন নাকি পুনর্লিখন হবে- এটি প্রক্রিয়াগত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত রাজনীতিবিদরা নেবেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কী হবে- জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হওয়ার সময় যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়টি অনুল্লিখিত আছে। আমরা যখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত চাই, প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে আমরা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জানতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো মত দিয়েছে। সেগুলো আমরা একত্রিত করছি। পাশাপাশি এটিও আমাদের মনে রাখা দরকার, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করবে। এখানে জাতীয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি বিষয়গুলো অর্থাৎ, কোন কোন বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলোর বিষয়ে এক মতে এসে জুলাই সনদ তৈরি করতে পারি, তাহলে সে সময় বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার বিষয়টি আসবে। আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন জানিয়েছে, আমরা মনে করি একটি পথ তারা নির্ধারণ করতে পারবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, আমি আগেও বলেছি, কিছু কিছু বিষয়ে যেগুলো আশু করা যায়, সেগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে। সরকার সেগুলো কিছু কিছু বাস্তবায়ন করছে, আগামী কয়েক মাসে কিছু কিছু বাস্তবায়ন করবে।
সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের বৈঠক শেষ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে।
এই বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা আমরা দ্রুততার সঙ্গে শুরু করতে চাই। আমরা আশা করছি, জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমরা শুরু করব। আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি সম্ভব হয়, তাহলে মের শেষের দিকে শুরু করব। যদি সেটি না হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু করব। জুন মাসে একটি দীর্ঘ ছুটিও আছে। আমাদের লক্ষ্য হলো এই ছুটির আগেই যেন আমরা এটি শুরু করতে পারি।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা প্রথম পর্যায়ের আলোচনা থেকে কাঠামোগতভাবে ভিন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ১৬৬টি সুপারিশ এবং প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যেকের আলাদা আলাদা অবস্থান বোঝা। তো সেটি তারা তাদের মতামত দিয়েছে, সেটি নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা হবে বিষয়ভিত্তিক। বিশেষত প্রধান প্রধান বিষয়ে যেসব ভিন্নমত আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলাদা আলাদা দল নয়, একত্রভাবে দল ও জোটগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বসার পরিকল্পনা করছি।
এর আগে প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেই বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া।
২০২৪ সালের অক্টোবরে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরে ২০২৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে কমিশনগুলো। পরবর্তীতে ১২ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা তার নেতৃত্বে এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেন।
এই কমিশনের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো এবং একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা।
পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করে এবং তাদের মতামত চাওয়া হয়। দলগুলোর মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মের মধ্যে মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে বলেও জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে আজ রাতে জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। এ সফরে তিনি ৩০তম নিক্কেই ফোরামে যোগদান এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী এই সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সচিব বলেন, সফরে বিনিয়োগ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাজেট সহায়তা প্রদান এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথকে ডুয়েল-গেজ ডাবল-ট্র্যাকে উন্নীত করার বিষয়ে নোট বিনিময় করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, সফরসূচি অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে ক্যাথে প্যাসিফিকের একটি ফ্লাইটে হংকং হয়ে টোকিওর উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন।
স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে তিনি নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে জাপানের প্রটোকল প্রধান, ঊর্ধ্বতন জাপানি কর্মকর্তা এবং জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে অভ্যর্থনা জানাবেন।
টোকিওতে পৌঁছানোর পর প্রধান উপদেষ্টা বিকেল ৫টায় জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগের প্রেসিডেন্ট তারো আসোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সন্ধ্যায় অধ্যাপক ইউনূস তার সম্মানে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়া আয়োজিত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। এরপর জাপানের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা করবেন।
নিক্কেই ফোরামের আগে ২৯ মে নিক্কেই ইনকর্পোরেটেডের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এরপর তিনি ৩০তম নিক্কেই ফোরাম: এশিয়ার ভবিষ্যৎ-এর উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে মূল বক্তৃতা দেবেন। সেখানে তিনি ‘অশান্ত বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বক্তব্য দেবেন।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার তার ভাষণে আরও টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য এশিয়ান দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের ওপর জোর দেবেন।
ফোরামে উচ্চপদস্থ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবেন লাওস ও পালাউয়ের প্রেসিডেন্ট, জাপান ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নীতি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।
দিনের শেষে প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত একটি মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে যোগ দিবেন। সেমিনারে ৩০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি জাপানের দক্ষ কর্মীবাহিনীর চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা তুলে ধরে একটি বিশেষ ভাষণ দেবেন।
অধ্যাপক ইউনূস জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন, যাদের মধ্যে জাইকার প্রেসিডেন্ট ড. তানাকা আকিহিকোও থাকবেন। সেখানে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন সহযোগিতা এবং জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।
তিনি জাপানের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া হাউস, যেমন-নিক্কেই, এনএইচকে, আসাহি শিম্বুন, আসাহি টিভি এবং নিপ্পন টিভিকে একান্ত সাক্ষাৎকারও দেবেন।
২৯ মে সন্ধ্যায় তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট বক্তাদের সম্মানে নিক্কেই ফোরাম আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন।
সফরের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ৩০ মে সকালে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
বৈঠকের আগে অধ্যাপক ইউনূসকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি সহযোগিতা, মানবসম্পদ এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বিস্তৃত কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা জাপানের বৃহত্তম সংবাদপত্র ইয়োমিউরি শিম্বুনকে একান্ত সাক্ষাতকারও দেবেন।
দিন শেষে ড. ইউনূস দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করতে জেট্রোর প্রেসিডেন্ট কিমুরা ফুকুনারির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি জাপানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন এবং ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ যোগ দেবেন। সেখানে তিনি বিশ্বব্যাপী সিইও, সামাজিক ব্যবসা সার্কেলের সদস্য ও উভয় দেশের তরুণ পেশাদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সোকা বিশ্ববিদ্যালয় বিকেলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে। তিনি সেখানে বিশিষ্ট দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ হাউসে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার সফর শেষ করে ৩১ মে সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিও ত্যাগ করবেন এবং সিঙ্গাপুর হয়ে ওই রাতেই ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন চলছে সূচকের উত্থানে। এই সময়ে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২০ পয়েন্ট। বাকি দুটি সূচকের মধ্যে শরিয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ৬ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২১১টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৭৯টির কমেছে এবং ৭৮টির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১১ পয়েন্ট।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৮১টি কোম্পানির মধ্যে ৪১টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৩২টির কমেছে এবং ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ছাড়িয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
‘চোখ যে মনের কথা বলে, এটা তোমার কাজল রাঙা চোখ না দেখলে কোন দিন বিশ্বাস করতে পারতাম না। অথবা চোখে চোখে আশা, মনে মনে ভাষা, এরই নাম কি ভালোবাসা।’ এমন কব্যিক কথা প্রেমের গল্প উপন্যাসে পাওয়া যায়। কিন্তু কয়জন এমন ভালোবাসা খুঁজে পায়।
অধ্যাপক ডাক্তার শাহীন রেজা চৌধুরী এক অন্যরকম ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়েছেন ভাটি এলাকার মানুষের। সৃষ্টি হয়েছে কিশোরগঞ্জের: ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম; নিখলী, তারাইল, বাজিতপুর, হবিগঞ্জের: আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং; লাখাই, সুনারুঘাট এবং সুনামগঞ্জের: দিরাই, শাল্লাসহ গোটা ভাটি এলাকার অসহায় মানুষের ভালবাসার বন্ধন।
অধ্যাপক ডাক্তার শাহীন রেজা চৌধুরী চক্ষু সেবা দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন অসহায় দৃষ্টিহীনের দৃষ্টি। অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পাচ্ছে প্রান্তিক এলাকার অতি দরিদ্র মানুষজন। বিনামূল্যে ছানি অপারেশনসহ চক্ষু চিকিৎসার নানা রকমের সহযোগিতা দিয়ে মানবিক ডাক্তারে পরিণত হয়েছেন তিনি।
তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) ঢাকা, কলাবাগান, ভুতের গলি, ৪ সার্কুলার রোড, ঢাকা, ডাস চক্ষু হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর, চাঁদ উদ্যান ঢাকা। এছাড়া ঢাকায় প্রতি শুক্রবার কলাবাগানে আনোয়ার হোসেন ফ্রি ফাইডে চক্ষু সেবায় বিনা মূল্যে সপ্তাহে একদিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) ঢাকা-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মো শাহীন রেজা চৌধুরী এবং চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী।
দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থার সেবা শুধু ভাটি এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই। সারাদেশে তিনি এখন প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক লোককে চক্ষু সেবা দিতে পারছেন এবং প্রায় ৩৫ হাজার লোককে ডাসের ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে লেন্সসহ ছানি অপারেশন, ফ্রি ঔধষ, কালো চশমা দিয়েছেন।
যেভাবে অসহায় দৃষ্টিহীনের সেবা দেয়া হয়- তিনি যখন জানতে পারেন কোন একটি উপজেলায় দৃষ্টি সমস্যায় মানুষজন ভোগছে, সেখানে তিনি একটি ক্যাম্পের আয়োজন করেন। এতে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি চক্ষু সেবা ক্যাম্প পরিচালনা করেন। ক্যাম্পে আসা হাজার হাজার চক্ষু রোগীর চোখ পরীক্ষা করেন। সেখানে তিনি বিনামূল্যে চশমা, ওষুধ দেন। এছাড়া, ছানি অপারেশন প্রয়োজন এমন রোগী বাছাই করেন। বাছাইয়ের পর ঐ এলাকা থেকে রোগীকে বিনামূল্যে ঢাকায় এনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান অবস্থিত দৃষ্টি চক্ষু হাসপাতালে, আগারগাঁওয়ের লায়ন চক্ষু হাসপাতালে এবং হবিগঞ্জের ডা. সহিদ চক্ষু হাসপাতালে অপারেশনের ব্যবস্থা করেন। বিনামূল্যে ল্যান্স, ওষুধ এবং চশমা দেন। তাদের দুই দিন দৃষ্টি চক্ষু হাসপাতালে রাখেন। ডাসের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় রোগীদের নিজ নিজ বাড়ি পৌঁছে দেন।
চলতি (মে) মাসের ১৭ তারিখ কিশোরগঞ্জে ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের লাইমপাশা উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি ক্যাম্পের আয়োজন করেন হাজী তারা পাশা ফাউন্ডেশন। তিনি ওই চক্ষু সেবা ক্যাম্পে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেন। দিনব্যাপী প্রায় এক হাজার রোগীর চোখের পরীক্ষা, ছানি রোগ নির্ণয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ৭০০ জনকে ওষুধ ও ৫০০ জনকে চশমা প্রদান করা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার পর ১২০ জন ছানি রোগী বিনামূল্যে অস্ত্রোপচারের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। তালিকা থেকে ২১ মে প্রথম ব্যাচ ঢাকায় আসে এবং অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে ২৩ মে বাড়ি পৌঁছে। দ্বিতীয় ব্যাচ ২৩ মে ঢাকায় আসে এবং অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে ২৫ মে ডা. সহিদ চক্ষু হাসপাতালে আসেন এবং ২৬ মে নিরাপদে বাড়ি ফিরেন ডাসের ব্যবস্থাপনায়।
এর অর্থায়ন করেন আমেরিকার হিউম্যানিটি বিওনড বেরিআরস (HBB, আমেরিকা) প্রতিষ্ঠান। তিনি মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থার হাসপাতলে সারাবছর দৃষ্টি সেবা চালু রেখেছেন
সরকারি বিভিন্ন সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে ‘এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা’ স্লোগানে যাত্রা শুরু করেছে নাগরিক সেবা বাংলাদেশ।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই কার্যক্রমের পাইলট প্রকল্প শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রশিক্ষিত নাগরিক সেবা উদ্যোক্তগণ এই সেবাগুলো নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারণ নাগরিকদের প্রদান করবেন।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে গুলশান ও উত্তরার কেন্দ্র ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নীলক্ষেত কেন্দ্রও কার্যক্রম শুরু করবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং সরকারের আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে তৈরি এই সেবার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে, নানাবিধ হয়রানি রোধে ও ভোগান্তিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।”
একইভাবে সেবার সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এক ঠিকানায় প্রয়োজনীয় সকল সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সেবা কেন্দ্র তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নিতেও আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দেন তিনি।
এই সেবার আওতায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিতভাবে সেবার আপডেট ও সমন্বয়ের বিষয়ে জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, “সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলে সেবা এর আওতায় আনা যায় সবগুলোকে দ্রুত নিয়ে আসা।”
এসময় বিভিন্ন নাগরিক সেবার প্রসঙ্গ টেনে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “এমন ব্যবস্থা আমাদেরকে অবশ্যই দাঁড় করাতে হবে যাতে জন্ম গ্রহণ করা মাত্রই শিশুরা জন্ম নিবন্ধন সনদ পেয়ে যায়। এটাই যেন হয় তার নাগরিক স্বীকৃতি।”
নাগরিক সেবা কেন্দ্রের পরিচালনা ও মালিকানা সম্পর্কে তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা জায়গার মালিকদের সাথে চুক্তি করে ভাড়া পরিশোধ করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাড়া হ্রাসকৃত হারে নির্ধারিত হবে। উদ্যোক্তারা নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইউটিলিটির দায়িত্ব নিবেন। সেবা মান বজায় না রাখলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
তিনি বলেন, "নাগরিক সেবা বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি সেবা প্রদানের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার একটি আন্দোলন—যার ভিত্তি প্রযুক্তি এবং চালিকা শক্তি স্থানীয় উদ্যোক্তাবৃন্দ। অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও সম্প্রসারণশীল এই উদ্যোগ সারাদেশে নাগরিক সেবার আকর্ষণীয় রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবে।”
আইসিটি বিভাগের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, শূণ্য বাজেটে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে দেশের বিদ্যমান সম্পদ বব্যাবহার করেই সামনে এগিয়ে চলা সম্ভব।
তিনি বলেন, নাগরিক সেবা বাংলাদেশ" শীর্ষক এই উদ্যোগের মাধ্যমে পোস্ট অফিসসহ অব্যবহৃত সরকারি স্থাপনাগুলোকে রূপান্তর করে আধুনিক কো-ওয়ার্কিং স্পেসে পরিণত করা হবে এবং সেগুলো স্থানীয় উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত হবে।
তিনি জানান, নাগরিকদের জন্য হাঁটা-দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত এই নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয় উদ্যোক্তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, কর ফাইলিংসহ বিভিন্ন সরকারি ডিজিটাল সেবা প্রদান করবেন।
এই মডেলটি যেমন সরকারি সেবা নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য করবে, তেমনি দেশের যুবসমাজ ও নারীদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে জানিয়ে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, “সামাজিক ব্যবসার নীতিমালায় অনুপ্রাণিত ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চালিত এই উদ্যোগ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের প্রতিচ্ছবি।”
তিনি বলেন, এই সেবার লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যা নাগরিকদের জন্য কার্যকর এবং সহজলভ্য ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি জানান, নাগরিক সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের মধ্য কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০ জন নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করা হয়। তাদের ডিজিটাল লিটারেসি, গ্রাহক সেবা ও ডিজিটাল সেবা প্রদানে নিবিড় প্রশিক্ষণ শেষে ১০০ জন উদ্যোক্তাকে (৫০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ) সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ নূরুল আনোয়ার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
বিএনপির তিনটি অঙ্গসংগঠন—যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল—আগামী বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বড় ধরনের যুব সমাবেশ আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতে অন্তত ১৫ লাখ তরুণ অংশ নেবেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী।
তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের সমাবেশে তরুণদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। খুলনা ও বগুড়াতেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। ঢাকায় আমরা আশা করছি অন্তত ১৫ লাখ তরুণ অংশ নেবেন, যা পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে।’
তিনি জানান, ‘ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকে তরুণরা সমাবেশে যোগ দেবেন।’
জিলানী বলেন, ‘তরুণরা ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এই সমাবেশে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি তুলবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে তরুণদের অংশগ্রহণ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
১০টি বিভাগ থেকে তরুণদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে গত ২৮ এপ্রিল চারটি সেমিনার ও চারটি যুব সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপির এই তিন অঙ্গসংগঠন। এই কর্মসূচির শুরু হয় ৯ মে চট্টগ্রামে। এরপর খুলনা ও বগুড়ায় সমাবেশ হয়। শেষ সমাবেশটি হবে ২৮ মে (বুধবার) ঢাকায়।
ঢাকার সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে দলের রাজনৈতিক রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ কৌশল উপস্থাপন করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদও সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুনা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি জানান, ‘এই দুই দিনের কর্মসূচি তরুণ প্রজন্মকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে ‘তরুণদের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সেমিনার। এতে ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহের তরুণ প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বুধবার হবে ‘তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার’ সমাবেশ।
শেরপুরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়ি বহরে হামলার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরটি সঠিক নয়।
সোমবার (২৬ মে) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শেরপুরে পরিবেশ উপদেষ্টার গাড়ি বহরে হামলা বিষয়ে কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরটি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই খবরটি বিভ্রান্তিকর ও এটি সত্যনির্ভর নয়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘উপদেষ্টা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শেরপুরের নালিতাবাড়ীর দাওধারা গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মধুটিলা রেঞ্জে দীর্ঘমেয়াদি বাগান এলাকা পরিদর্শনের উদ্দেশে রওনা হন।
‘পরবর্তীতে তিনি মধুটিলাতে একটি জনসভা করেন। সেখানে তিনি হাতির আক্রমণে আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেন এবং হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব ও প্রাকৃতিক বন রক্ষার বিষয়ে মতবিনিময় করেন, যা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল।’
এসব অনুষ্ঠানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানানো হয়েছে। ‘এরপরে একটি স্থানে কয়েকজন সাংবাদিক ও কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে।’
তবে, এটি উপদেষ্টার সফরের সম্পর্কিত নয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মন্তব্য