পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে অস্থির আগ্নেয় পর্বত মেরাপি।
ঘনবসতিপূর্ণ জাভা দ্বীপে অবস্থিতি আগ্নেয়গিরিটি থেকে থেমে থেমে লাভা বেরিয়ে আসছে, গ্যাস নির্গত হচ্ছে।
আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের আকাশ ধোঁয়া ও ছাইয়ে ঢেকে গেছে বলে জানিয়েছে ইয়োগিয়াকার্তা শহরের আগ্নেয়গিরি ও ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয় প্রশমন কেন্দ্র। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই একটু একটু করে সক্রিয় হচ্ছিল মেরাপি পর্বত।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোববার কমপক্ষে সাতবার মেরাপি পর্বত থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। পাথর, কাদামাটি, লাভা আর গ্যাসের মিশ্রিত পাইরোক্লাস্টিক দ্রুত গতিতে নেমে আসছে পাহারের দক্ষিণ-পশ্চিমে সমতলের দিকে।
কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও উদগীরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। যদিও হতাহতের খবর মেলেনি।
প্রায় তিন হাজার মিটার উঁচু পর্বতটির অবস্থান ইয়োগিয়াকার্তার কাছে। প্রাচীন শহরটিতে কয়েক লাখ মানুষের বাস। বিশাল মেট্রো প্রকল্প ঘিরে রয়েছে শহরটিকে।
মেরাপির উর্বর ঢাল অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের গিরিমুখ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ভূতত্ত্ব ও আগ্নেয়গিরি গবেষণা সংস্থা। লাভার স্রোত বিপজ্জনক হয়ে ওঠে কি না, সে বিষয়েও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত ১২০টির বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় মেরাপি পর্বত। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার লাভা ও গ্যাস নির্গত হয়েছে মেরাপির গিরিমুখ থেকে।
শেষবার ২০১০ সালে মেরাপির সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের সাক্ষী হয় ইন্দোনেশিয়া। মৃত্যু হয় প্রায় ৩৫০ জনের।
ভূমিকম্পপ্রবণ ‘রিং অফ ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ যায় বিপুলসংখ্যক মানুষের।
আরও পড়ুন:রাজধানীর হাতিরঝিলে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ চার দফা নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে লেক মাছের অভয়ারণ্য করতে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে আদালত।
সম্প্রতি হাতিরঝিল নিয়ে একটি রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ৫৫ পৃষ্ঠার রায়টি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ৩০ জুন এ রায় দেয়।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে আউট প্ল্যানের নির্দেশনার বাইরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরে ওই রুলের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৩০ জুন রায় ঘোষণা করে আদালত।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল। আর রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন।
লিখিত রায়ে বলা হয়, ‘প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।’
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নিয়ে আদালত বলে, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোভাবেই ধ্বংস করা যাবে না।
হাইকোর্টের চার দফা নির্দেশনা
১. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা জনগণের সম্পত্তি।
২. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ।
৩. হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো।
৪. এ রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
হাতিরঝিলের বিষয়ে উচ্চ আদালতের পরামর্শ
হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে।
জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন ও নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের পান করার জন্য পানির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করতে হবে।
লেক মাছের অভয়ারণ্য করার জন্য ক্ষতিকর সব ধরনের যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি প্রকল্পটি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করার পরামর্শ এসেছে।
এ ছাড়া হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করার পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিলে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বিশেষ তাপপ্রবাহ দেখা যায় যাতে ৯০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই তাপপ্রবাহের শঙ্কা ৩০ গুণ বেশি হতে পারে।
ওই প্রতিবেদনে পরিবেশ বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক অটো বলেছেন, ‘মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সূচনা হওয়ার আগে, প্রতি ৩০ হাজার বছরে একবার এই ধরনের ঘটনার শঙ্কা থাকে।’
ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডাব্লিউএ) কনসোর্টিয়ামে ফ্রেডরিক এবং তার সহকর্মীরা দেখেন যে, ‘১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণতা দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহের শঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলেছে। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণতা নিরবচ্ছিন্নভাবে বেড়ে চলেছে। তাই এই ধরনের ভয়াবহ তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়বে।
মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার বর্তমান স্তরের কারণে এই তাপপ্রবাহের শঙ্কা ৩০ গুণ বেশি হয়েছে, গ্রুপের সমীক্ষায় সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পৃথিবীর ভূমি পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১ ডিগ্রির চার-পঞ্চমাংশ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে প্রতি পাঁচ বছরে একবার এই ধরনের তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
প্যারিস চুক্তির অধীনে কার্বন নির্গমনরোধ করা না গেলে ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈশ্বিক উষ্ণতা দেখা যেতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তান, চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এই তাপপ্রবাহে ৯০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এমন প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানে। সেখানে একটি হিমবাহের অগ্ন্যুৎপাত, বন্যার স্রোত; ভয়াবহ তাপ ভারতের জমিতে গমকে পুড়িয়ে দেয়।
ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে খাদ্য সংকটের কারণে এই ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। এর ফলে ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা কয়লার মজুতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন:চলতি শতকের শুরুতে রাজধানীবাসীকে বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে সড়ক থেকে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের সব যানবাহন তুলে দিয়ে চালু করা হয় ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন বাহন। পাশাপাশি বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে পেট্রল-ডিজেলের পরিবর্তে শুরু হয় কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজির ব্যবহার। এতে নগরীর বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে রাতারাতি পরিবর্তন আসে।
২০০০ সালের আগের ঢাকার বাতাস ছিল গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। নাক-কান জ্বালা করা কিংবা শ্বাসজনিত নানা রোগ ছিল নিত্যসঙ্গী। জ্বালানি হিসেবে সিএনজির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এসব সমস্যা অনেকাংশে কমে আসে।
দুই দশক পর রাজধানীতে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই কালো ধোঁয়া। কয়েক বছর ধরে বাস, ট্রাকসহ বেশকিছু যানবাহনের সিএনজি ছেড়ে ডিজেলে ফেরার প্রবণতাকে এ জন্য দায়ী মনে করা হচ্ছে।
পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করলে বায়ুদূষণ কমে আসে। তবে এতে গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ুষ্কালও একই সঙ্গে কমে যায়। পাশাপাশি ডিজেল এবং সিএনজির দামে পার্থক্যও অনেক কম। এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে যেগুলো বড় পরিবহন হিসেবে পরিচিত, যেমন: বাস বা ট্রাক, এ বাহনগুলোতে ডিজেল ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।
জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে সিএনজি ব্যবহার করলে কালো ধোঁয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণ কমে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/ নিউজবাংলা
তেলচালিত এসব বাহন ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এগুলো বাতাসে ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে চলাচল করা বাস, ট্রাক, পিকআপ বা সরকারি মালিকানাধীন গাড়িগুলোই কালো ধোঁয়ার প্রধান উৎস।
২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর টু-স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সিসহ পুরাতন যানবাহন বন্ধের পর এক দিনে ঢাকার বায়ুতে দূষণের মাত্রা কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে ২০১৩ সাল থেকে তা আবারও বাড়তে থাকে। গত নয় বছরে সেই দূষণ বাড়তে বাড়তে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্তত ৪০ ভাগের জন্য দায়ী এই কালো ধোঁয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বায়ুদূষণের একটি বিরাট অংশ যানবাহন থেকে আসে। আমরা যে তিনটি মেজর সোর্স ধরি বায়ুদূষণের তার মধ্যে কালো ধোঁয়া, একটি ব্রিক ফিল্ড এবং কনস্ট্রাকশন। গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে যেটা আসে এটা প্রায় ৪০ শতাংশ।’
কালো ধোঁয়া কী এবং কেন বের হয়?
গাড়ির ইঞ্জিন মূলত জ্বালানি তেল পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে যেটি দিয়ে গাড়িটি চলে। কালো ধোঁয়া হলো এই জ্বালানির না পোড়া অংশ। সাধারণত গাড়ি পুরাতন হয়ে গেলে এবং এটিকে ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে এই কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মূলত দুই কারণে বের হয়। গাড়ি যত পুরাতন হতে থাকে এর কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে। গাড়িতে যে তেল ব্যবহার করা হয় সেটা থেকে তার এনার্জি তৈরি হয়। কিন্তু গাড়ির কর্মক্ষমতা কমে গেলে এই তেলটা কমপ্লিট বার্ন হয় না বা কনভার্সন হয় না। যখনই এটা হয় না, তখনই তার একটি অংশ একজস্টের সাথে বের হয়ে আসে। এটাকে বলে ইনকমপ্লিট কনভার্সন।
‘গাড়ির একটি রেগুলার মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি হলে নিয়মিত প্রতি ৩ হাজার কিলোমিটার চলার পর মোবিল পরিবর্তন করা। এটা করা হয় না। এ কারণে গাড়ির যে লুব্রিকেটিং ফাংশন, এটা ঠিকভাবে কাজ করে না। সেখান থেকে পলিউশন হয়।’
অনেক সময় তেলের পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের গুণগত মান ঠিক না থাকলেও কালো ধোঁয়া তৈরি হতে পারে। অধ্যাপক সালাম বলেন, ‘আবার যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, সেটাও অনেক সময় ভালো মানের থাকে না। এটাও দূষণের কারণ। মুলত এই তিন কারনে কালো ধোয়াটা তৈরি হয়।
‘কালো ধোঁয়ার একটি বড় অংশ হলো টক্সিক কার্বন। এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং মানুষের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে থাকে অনেকগুলো ক্ষতিকর উপাদান যেমন হাইড্রো কার্বন, কাবন মনোঅক্সাইড এবং জ্বালানি তেলের আনবার্ন্ট কিছু অংশ। এগুলো প্রত্যেকটাই খুব ক্ষতিকর।’
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি রোধে বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা করতে হবে, গাড়ির জ্বালানিটি কোয়ালিটি ধরে রাখতে হবে এবং গাড়ি নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করতে হবে। মূলত পুরাতন গাড়িই এর জন্য দায়ী।
‘আমাদের এখানে নিয়ম আছে যে ২০ বছরের পুরাতন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না। এখন এটা ঠিক মতো মেইনটেইন করা হয় কিনা জানি না। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।’
কালো ধোঁয়া যে ক্ষতি
আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও কালো ধোঁয়া মুলত মানুষের ফুসফুস ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের একটি বড় কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মানেই হলো কার্বন মনোঅক্সাইড, ডাই-অক্সাইড এবং ধাতব পদার্থ– মূলত সিসা। এগুলো মানুষের শরীরে গেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং এক ধরনের প্রদাহ তৈরি করে। এর ফলে আমাদের শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো বেড়ে যায়।
‘এর মধ্যে হাঁপানি কাশি ও কারও কারও অ্যাজমাটিক সমস্যাও হতে পারে। দীর্ঘদিন এটি গ্রহণে আমাদের ফুসফুসে ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কার্বন মনোক্সাইড শরীরে শোষিত হয়ে আমাদের লিভার ও কিডনিতে জটিলতা তৈরি করে এবং নারী পুরুষের বন্ধ্যাত্ব তৈরি করতে পারে। বায়ু দূষণের একটি বড় উপাদান এই কালো ধোঁয়া। শিশুদের জন্য এর প্রভাব মারাত্মক। এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ এফেক্ট বাড়িয়ে দেয়। এর কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ে, জলবায়ূ পরিবর্তনে প্রভাব রাখে।’
দায় এড়াচ্ছেন পরিবহন মালিক ও ট্রাফিক বিভাগ
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি জানার পরেও এটি ছড়ানোর দায় নিতে চায় না পরিবহন মালিকরা। তাদের দাবি, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিতই সদস্যদের তাগাদা দেয়া হয়।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সতর্কতার কথা সব সময় বলা হয়। এটা তো মালিকের বিষয় না। পাম্পের তেলের সমস্যার কারণে অনেক সময় কালো ধোঁয়া হয়।
‘কালো ধোঁয়া পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও অনেক সময় ব্যবস্থা নেয়। বাসে কোনো কালো ধোঁয়া নেই। ম্যাক্সিমাম গাড়ি তো খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে না। কয়েকটি গাড়ি দিয়ে তো সবগুলোকে মূল্যায়ন করা যায় না। আমরা সব সময় বলি গাড়ি ঠিক রাখার জন্য। যারা করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেক। আমরা সব সময়ই বলে থাকি।’
দেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হলে তা জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অবশ্য খালি চোখে কালো ধোঁয়ার সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্রের অপেক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ট্রাফিক বিভাগ। তাদের দাবি, কালো ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় চাইলেও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী কোনো যানকে জরিমানার আওতায় আনা যাচ্ছে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে অ্যাকশন নিতে হলে আমাদের ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র লাগবে, সেটা আমাদের দেশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ধোঁয়ার নির্ণয়ক মান নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কিন্তু আমরা তো খালি চোখে সেটা মাপতে পারব না।
‘তাই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা এই ব্যাপারে একেবারেই নিরুপায়। তবে ধোঁয়া ডিটেকটরের জন্য ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে আবেদন করে রেখেছে। এটা পেলেই আমরা কালো ধোঁয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করতে পারব।’
২০২১ সালের হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৯৩টি। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ১৬ লাখের বেশি গাড়ি।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তানে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে উত্তর পাঞ্জাবের মরু অঞ্চল চোলিস্তান। তাপে শুকিয়ে গেছে সব জলাধার। খাওয়ার পানির দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। আর এই সংকটের মুখে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। পানির অভাবে দিন দিন বাড়ছে গবাদিপশুর মৃত্যু। পাকিস্তানের দরিদ্রতম এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবিকা এই গবাদিপশুর ওপর নির্ভর করে।
চোলিস্তানের বাসিন্দাদের দুরবস্থা দেখতে সেখানে চষে বেড়িয়েছে ভাইস নিউজ। মধ্য দুপুরে তারা দেখতে পান, বৃদ্ধ এক খামারি লুটিয়ে পড়েছেন কাদামাটিতে। আশপাশের লোকজন তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন। তবে দাঁড়ানোর সক্ষমতা ছিল না বৃদ্ধের।
এ ঘটনার মাত্র কিছু আগে নিজের মারা যাওয়া পশুদের দেহ নিয়ে আসার জন্য ওই কর্দমাক্ত জলাশয়ের কাছে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ ব্যক্তিটি।
একপর্যায়ে তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘হে ঈশ্বর, তাদের (পাকিস্তান সরকার) ধ্বংস করুন। আমার গবাদিপশু তৃষ্ণায় মারা গেছে। আমাদের কোনো রক্ষক নেই। তারা যা করেছে তার জন্য ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’
ওই বৃদ্ধের আবেগঘন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে নিজ দেশের সরকারকে অভিশাপ দিতে দেখা যাচ্ছে অসহায় এই খামারিকে। তার অভিযোগ, সরকারের উদাসীনতার জন্যই চোলিস্তানের মরু অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছে।
سیف سٹی کے ساتھ ساتھ سیف چولستان کے بارے میں بھی سوچیں۔ ایک کیمرہ چولستان پر بھی لگائیں۔۔جہاں بے زبان جانور پانی ہی قلت اور شدید گرمی کی وجہ سے کررہے ہیں۔#چولستان_کو_پانی_دو pic.twitter.com/lsw9UMtpFy
— Valentina Reece (@reece_valentina) May 11, 2022
মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহে পাকিস্তানের ২২০ মিলিয়ন জনসংখ্যার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশে তীব্রতর হয়েছে, চালিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাদ জুগনু বলেন, ‘যদি পরিস্থিতি না বদলায়, তবে আমরা মারা যাব। আপনি খবরে দেখতে পাবেন চোলিস্তানের বাসিন্দারা মারা গেছে।
‘ঈশ্বরের ভালোবাসার জন্য, সরকারকে চোলিস্তান সম্পর্কে ভাবতে হবে। আমাদের পানি দেয়া উচিত। অন্যথায় আমরা মারা যাব।’
বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে ১ শতাংশেরও কম নিঃসরণ করে পাকিস্তান। তবে জার্মানওয়াচের ২০২১ সালের সমীক্ষা বলছে, আবহাওয়ায় পরিবর্তনের কারণে দেশটি এখনও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় অষ্টম অবস্থানে আছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অঞ্চলের মানুষ এবং প্রাণীরা পানিশূন্যতায় ভুগছে, হিটস্ট্রোকের বড় ঝুঁকিতে আছে।
চোলিস্তানে তীব্র তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টিপাতের ফলে কূপগুলো শুকিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসল। বাধ্য হয়ে অঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছে বহু মানুষ।
রেহাই পাচ্ছে না পশু-পাখিরাও। এই অঞ্চলে বাস করা দুই লাখ মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস গবাদিপশু। গত কয়েক দিনে অন্তত ৫০ প্রাণী মারা গেছে। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সংখ্যাটা ২০০-র কাছাকাছি।
জুগনু বলেন, ‘চোলিস্তানের পরিস্থিতি ভয়াবহ। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় চারদিকে খরা। অনেক প্রাণী মারা গেছে। কিছুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
বিষয়টি আমলে নিয়েছে প্রশাসন। জরুরি ত্রাণ ও চিকিৎসা শিবির স্থাপন করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বিশুদ্ধ পানি আছে এমন জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মানুষ ও গবাদিপশুকে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে আরও পরিকল্পনা নিচ্ছে পাকিস্তান সরকার।
তবে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ব্যবস্থা আগেই নিতে পারত সরকার। এতে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা কমানো যেত অনেক। গ্রীষ্মে যখন থেকে তাপদাহ বাড়তে শুরু করেছিল, সে সময় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ভূগর্ভস্থ পানির জন্য ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টের অভাবকে দায়ী করছেন বাসিন্দারা। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য পুকুরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হতো না তাদের। সরকার প্রতিবেশী অঞ্চল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চোলিস্তানে পানি সরবরাহ করতে লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও, পাইপগুলো শুকিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে খরা মৌসুমে পানি সরবরাহের জন্য নিয়মিত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:আগামী ৪৮ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুবই কম, তবে চট্টগ্রামের দিকে বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
‘এ ছাড়া রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু এলাকায় ঝোড়ো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে রাতের দিকে সারা দেশে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের দিকে বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ। আর রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু এলাকায় ঝড়ের আশঙ্কা আরও কম; ২৫ শতাংশ। আগামী দুই দিনই এমন অবস্থা থাকতে পারে।’
এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘সামনে জুনে বর্ষাকাল আসছে। এ সময়টায় হালকা ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিপাত হয়। তাই দেশে এ অবস্থা এখন থাকবেই।’
২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গা এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:জলবায়ু সংকটের কারণে বিপর্যস্ত পৃথিবীকে কল্পনা করা অনেকের জন্যই অস্বস্তিকর। তারপরও আমাদের এই সত্যকে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রাকৃতির ভয়ংকর রূপ এড়ানোর সুযোগ দিনে দিনে কমে আসছে।
বিখ্যাত ফরাসি ফটোগ্রাফার এবং ডিজিটাল আর্টিস্ট ফ্যাবিয়েন বারাউ বলছেন, জলবায়ু বিপর্যয় নিয়ে ভাবতে গেলে আমাদের প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেতে হবে। কারণ আমরা এমন সত্যের সামনে পড়ব যেখানে দেখা যাবে দ্রুত পৃথিবীকে আমরা ডিস্টোপিয়ান দুনিয়ার (Dystopian world) দিকে নিয়ে যাচ্ছি।
‘নিউজ ফ্রম দ্য ফিউচার’ নামে এক ধারাবাহিকে বারাউ দেখিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জনপ্রিয় সব স্থাপনাগুলোর কী অবস্থা হতে পারে। এ কাজে তিনি ড্রোনের সাহায্যে ছবি নিয়ে, সেগুলোকে ফটোশপের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
নিজেকে ভবিষ্যতের একজন অনুসন্ধানকারী হিসেবে দেখেন বাররাউ। মরুকরণ, প্লাবন, ধ্বংস এবং ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত একটি নতুন বিশ্ব নিয়ে সব সময় ভাবেন এই ফটোগ্রাফার।
তিনি বলেন, এই সিরিজটি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতিগুলোর একটি ব্যক্তিগত কাজ। এটি কোনো বৈজ্ঞানিক কাজ নয় বরং একটি শৈল্পিক কাজ। যেখানে আমি আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) তথ্যের সম্ভাব্যতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
এই পরিণতিগুলো কল্পনা করার জন্য বারাউ ডিজিটালভাবে ড্রোন ফুটেজ এবং স্টক চিত্রগুলোকে পুনরুদ্ধার করেন। আইফেল টাওয়ার এবং কলোসিয়ামকে শুষ্ক চরমে নিয়ে যায়, স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকে কোমর-গভীর বন্যায় নিমজ্জিত করে (মূর্তির কোমর, আমাদের নয়), আর্ক ডি ট্রায়মফকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করে ফেলেন।
বারাউ বলেন, ‘শৈশব থেকেই আমি পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপস থিম এবং একটি সভ্যতার পতনের একজন বড় অনুরাগী ছিলাম। আমি তাই সিরিজকে সিনেমাটিক করার চেষ্টা করেছিলেন।
‘প্যারিসের আর্ক ডি ট্রায়মফের ওপরে দুটি তিমি সাঁতার কাটার চিত্রটি ফরাসি শিল্পী রোলান্ড ক্যাট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করছি। ১৯৭০ এবং ৮০-এর দশকে ডুবে যাওয়া শহরে সামুদ্রিক প্রাণীদের ঘোরাঘুরির ছবি কল্পনা করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া প্ল্যানেট অফ দ্য এপস, ম্যাড ম্যাক্স, আকিরা এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডকুমেন্টারি আফটারম্যাথ: পপুলেশন জিরোর মতো চলচ্চিত্রগুলো আমাকে উৎসাহী করছে।
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফটোগ্রাফি এবং ডিজাইনের ওপর কাজ করেছেন ফ্যাবিয়েন বারাউ। তিনি ব্র্যান্ড এবং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে ফটো রিটাউচার পদে কাজ করছেন। প্রায়ই তার চিত্রের মাধ্যমে পরিবেশবাদের অনুভূতি জাগায়৷
বারাউ বলেন, ‘ল্যান্ডস্কেপ এবং আর্কিটেকচার ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করি। চমৎকার পরিবেশের ছবি তুলতে আমার অনেক দেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমি ক্রমবর্ধমানভাবে জীববৈচিত্র্য, ল্যান্ডস্কেপ এবং মানুষের ওপর এই জলবায়ু সংকটের বিধ্বংসী প্রভাব অনুভব করেছি।’
আরও পড়ুন:কানাডার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ অন্টারিও এবং কুইবেকে ভয়াবহ ঝড়ের কবলে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা হাইড্রো ওয়ান অ্যান্ড হাইড্রো-কুইবেকের তথ্যমতে, প্রবল ঝড়ের কবলে এই দুই প্রদেশে শনিবার রাতে প্রায় ৯ লাখ বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সময় শনিবার অন্টারিও ও কুইবেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রীষ্মের একটি শক্তিশালী বজ্রঝড়ের কারণে চার জন মারা গেছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঝড়ের সময় পাকিং করা লরির ওপর গাছ পড়লে তার ভেতরে থাকা এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। ঝড়ের মধ্যে ৭০ বছরের বেশি এক নারী গাছের নিচে পড়ে পিষ্ট হন।
ফেডারেল রাজধানী অটোয়াতে ঝড়ের আঘাতে আরও একজনের প্রাণ গেছে। তবে স্থানীয় পুলিশ তার পরিচয় প্রকাশ করেনি।
চতুর্থ শিকার পঞ্চাশ বছর বয়সী এক নারী। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিবিসি জানিয়েছে, ঝড়ের সময় অটোয়া এবং কুইবেককে বিচ্ছিন্ন করা অটোয়া নদীতে তার নৌকা ডুবে গেলে তার মৃত্যু হয়।
কানাডার জনবহুল প্রদেশ অন্টারিওতে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বসবাস। কুইবেকে প্রায় ২০ শতাংশ।
প্রায় চার কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এদের একটি বড় অংশ অন্টারিও ও কুইবেকের বাসিন্দা।
মন্তব্য