বিশ বছরের আগ্রাসনের পর এ বছরের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরিভাবে পাততাড়ি গোটাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের দমনের জন্য আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সেই কট্টরপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবান দাবি করেছে, ইতোমধ্যে দেশটির ৮৫ শতাংশ এলাকা দখল করেছে তারা।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার ঘোষণার পর আঞ্চলিক রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা সমীকরণ। তালেবান এখনও রাষ্ট্রক্ষমতা না পেলেও প্রতিদিনই আফগান বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা। দখল করছে নতুন নতুন এলাকা।
আফগানিস্তানের ভবিষ্যত ক্ষমতা তালেবানের হাতেই যেতে পারে এমন সম্ভাবনা ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে। দেশটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় ইতোমধ্যেই কট্টরপন্থী তালেবানের সঙ্গে নানা দেনদরবার দর-কষাকষিতে জড়িয়ে পড়েছে আঞ্চলিক শক্তিগুলো। এর বাইরে নেই বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীনও।
আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রতিবেশী চীনের প্রায় ৮০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। ওয়াখান করিডর নামে ওই অঞ্চলটি পড়েছে চীনের উইঘুর মুসলমান অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে, উইঘুরদের বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে রেখে নিপীড়ন চালাচ্ছে চীন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিনজিয়াংয়ের স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম)। চীনের ভয়, তালেবান ক্ষমতা দখল করলে আরও নির্বিঘ্নে ওয়াখান করিডর ব্যবহার করতে পারবে ইটিআইএম যোদ্ধারা।
সম্প্রতি শিনজিয়াং সীমান্ত সংলগ্ন আফগান প্রদেশ বাদাখশানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলাও তালেবানের দখলে এসেছে।
আফগানিস্তানে তালেবানের অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রার মধ্যেই গোষ্ঠীটির প্রথম কোনো শীর্ষ নেতা হিসেবে চীন সফর করেছেন তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল ঘানি বারাদার। বুধবার চীনের উত্তরাঞ্চলের শহর তিয়ানজিনে তার নেতৃত্বে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয় তালেবানের নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সেখানে চীন আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করবে জানিয়ে তালেবানকে ইটিআইএমের সঙ্গে সম্পর্কছেদের আহ্বান জানান ওয়াং য়ি।
তিনি বলেন, ‘ইটিআইএম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তালিকাভুক্ত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন। এটি চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি।
‘ইটিআইমের বিরুদ্ধে লড়াই করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কর্তব্য। আমি আশা করি তালেবান এ ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। ইটিআইমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তালেবান শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নেও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’
বৈঠকের পর তালেবান নেতা মোল্লা বারাদারও প্রতিশ্রুতি দেন, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে কাউকে তৎপরতা চালাতে দেবে না তালেবান।
চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু জিজিন এক নিবন্ধে লিখেছেন, তালেবানকে আর সন্ত্রাসী সংগঠন বলে না যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসলে তাদের সঙ্গে কাজ করবে দেশটি। এমন মুহূর্তে চীন যদি তালেবানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে, তাহলে সেটি হবে নিজেই কূটনৈতিক ফাঁদে পড়ার মতো ঘটনা।
তিনি আরও লিখেছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বেশ জটিল। কিন্তু চীন জানে, তার জাতীয় স্বার্থ কোনটি। এমন নাজুক সময়ে আমাদের নিজেদের শত্রু তৈরি করা উচিত হবে না। আরও নির্দিষ্ট করে বললে তালেবানের পক্ষ থেকে যে সদিচ্ছা দেখানো হয়েছে সেটি সহজে প্রত্যাখ্যান করা ঠিক হবে না। এর মধ্যে আফগানিস্তানে চীনের প্রভাব বাড়ানো ও শিনজিয়াংয়ে স্থিতিশীলতা বাড়ানোর বিষয় রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক র্যান্ড করপোরেশনের বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান ফরেন পলিসিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী আফগানিস্তানে আরেকটি কারণে নিজের অবস্থান সংহত করতে চাইছে চীন। সেটি হলো দেশটির পর্বতাঞ্চলে মাটির নিচে থাকা ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ। চীন এই খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে চায়।
এছাড়া আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে পাকিস্তানের পেশওয়ার শহর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে চীন। এটি চীন ও পাকিস্তানকে যুক্ত করবে। এর ফলে চীনের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গেও যুক্ত হবে কাবুল।
আফগানিস্তানে এসব সুবিধা পাওয়ার আগে দেশটিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে চীনকে। আফগান সরকারের সঙ্গে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তালেবানের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা যত জোরালো হচ্ছে, আফগানিস্তানে চীনের জন্য সুখবরও তত বাড়ছে।
১০ জুলাই তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেন, ‘চীন বন্ধু দেশ। আফগানিস্তানে তাদের উন্নয়ন ও পুনর্গঠন কর্মসূচিকে আমরা স্বাগত জানাই। চীনারা যদি বিনিয়োগ করে, আমরা অবশ্যই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’
তালেবান উইঘুর মুসলমানদের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনে সমর্থন জোগাতে পারে চীনের এমন উদ্বেগের মুখে সুহাইল বলেন, ‘ফিলিস্তিন, মিয়ানমার, চীন যেখানেই হোক না কেন আমরা মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে সচেতন। একইসঙ্গে আমরা পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় অমুসলিমদের ওপর নির্যাতনেরও বিরোধী। কিন্তু আমরা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।’
ডেরেক গ্রমসনের মতে, এই কথাগুলো চীনকে খুশি করার জন্যই বলেছে তালেবান। কারণ গোষ্ঠীটি বুঝতে পেরেছে, আফগানিস্তানের উন্নয়নের বিপুল পরিমাণ টাকার জন্য চীনকে দরকার হবে তাদের।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ‘আফগানিস্তানে সরাসরি অর্থনৈতিক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের চেয়ে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এখন চীনের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
‘আফগানিস্তান এখন আর চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের জন্য অতি আবশ্যক নয়। মধ্য এশিয়ায় ঢোকার জন্য বা তাদের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আফগানিস্তানকে চীনের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। পাকিস্তান এবং ইরানের সাথে চুক্তি করে সেই লক্ষ্য তারা হাসিল করছে।’
কিন্তু ড. আলী মনে করেন, চীনের প্রধান চিন্তা যে আফগানিস্তানে যে কোনো অরাজকতা পাকিস্তানে এবং ইরানে তাদের শত শত কোটি ডলারের প্রকল্প, যা ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বিকল্প একটি বাণিজ্য রুট সেটিকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
চীনের নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষক ইয়ান ওয়েইর মতে, তালেবান ও চীনের মধ্যে সুসম্পর্ক দুই পক্ষের জন্যই জরুরি।
হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যমসাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তালেবান সরকার গঠন করুক আর না করুক তারা আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রধান ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে।’
ইয়ান ওয়েই বলেন, ‘তালেবান আফগানিস্তানের অন্য জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে দমন করবে। গোষ্ঠীটির মাধ্যমে চীনও অন্য জঙ্গীদের ওপর চাপ বজায় রাখতে পারবে। এটি চীনসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুন:দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়া একটি বাসের ৪৬ যাত্রীর মধ্যে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পরিবহন বিভাগ।
আল জাজিরা জানায়, বৃহস্পতিবারের ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী আট বছর বয়সী এক মেয়ে, যাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, জোহানেসবার্গ থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে মামাতলাকালা এলাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেতুর ব্যারিয়ারে ধাক্কা খায় বাসটি। পরে ১৬৪ ফুট নিচের খাদে পড়া যানটিতে আগুন ধরে যায়।
পার্শ্ববর্তী দেশ বতসোয়ানা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার লিমপোপো প্রদেশের মরিয়া যাওয়ার পথে বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ইস্টার সানডে উপলক্ষে লিমপোপোতে জনপ্রিয় উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ বছর ৩১ মার্চ দিবসটি উদযাপন করা হবে।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পূর্ণ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবহনমন্ত্রী সিন্ডিসিওয়ে চিকুঙ্গা।
দুর্ঘটনায় কিছু কিছু যাত্রীর দেহ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া তা শনাক্ত করা যাবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার দপ্তর জানায়, বাস দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বতসোয়ানার প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন:পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:গাজা উপকূলে ইসরায়েলি সৈন্যরা দুজন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর তাদের মরদেহ বুলডোজার দিয়ে বালুর নিচে চাপা দেয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচার করেছে আল জাজিরা।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য বুধবার জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিক অধিকার ও অ্যাডভোকেসি সংগঠন ‘দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর)’।
আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার সিএআইআরের এ আহ্বানের কথা জানানো হয়।
আল জাজিরার দুই মিনিটের ওই ভিডিওটিতে দুই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একজনকে হাত উঁচু করে সাদা কাপড়ের টুকরো ওড়াতে দেখা যায়।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদা কাপড় দেখিয়ে ওই ফিলিস্তিনি হয়ত বোঝাতে চাচ্ছিলেন তারা কোনো হুমকি নন। দুজনই উপকূল বরাবর একটি উন্মুক্ত এলাকায় হাঁটছিলেন, সম্ভবত তারা উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন।
সিএআইআর জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উপকূলে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে, যারা কোনো হুমকি ছিল না। এরপর তাদের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য একটি সামরিক বুলডোজার ব্যবহার করা হয়।
এমন জঘন্য যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়ে কাউন্সিল বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ‘ইচ্ছে মতো’ হত্যা করছে এবং তাদের মৃতদেহগুলো ‘আবর্জনার মতো’ ব্যবহার করছে।
গণহত্যামূলক ইসরায়েলি সরকারকে জাতিসংঘের তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন:ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির বিরুদ্ধে কংগ্রেস তাকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে বলে সূত্রের বরাতে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
বুধবার গোয়া, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং দমন ও দিউ- এই চার রাজ্যের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি (সিইসি) ১৮ জনের নাম অনুমোদন করেছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেস সানিয়া মির্জার জনপ্রিয়তা ও তার সেলিব্রিটি স্ট্যাটাসের দিকে নজর রেখে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কংগ্রেস সর্বশেষ ১৯৮০ সালে হায়দরাবাদে জিতেছিল এবং কে এস নারায়ণ সাংসদ হয়েছিলেন।
সূত্রের খবর, সানিয়ার নাম প্রস্তাব করেছিলেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক কংগ্রেস নেতা মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ২০১৯ সালে সানিয়া মির্জার বোন আনাম মির্জার সঙ্গে বিয়ে হয় ক্রিকেটারের ছেলে মহম্মদ আসাদুদ্দিনের।
আজহারউদ্দিন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যেখানে তিনি জুবিলি হিলস আসন থেকে ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) মাগন্তি গোপীনাথের কাছে ১৬০০০ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন।
এআইএমআইএম-এর একটি শক্ত ঘাঁটি হায়দরাবাদ, এই অঞ্চলে ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির’ (কংগ্রেস) সাম্প্রতিক পুনরুত্থান এআইএমআইএমের আধিপত্যের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যা একটি তীব্র কঠিন লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
১৯৮৪ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন ওয়াইসি হায়দরাবাদ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং পরে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এআইএমআইএম প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন।
এর পর আসাদ্দুদ্দিন ওয়াইসি ২০০৪ সাল থেকে এই আসনটি ধরে রেখে উত্তরাধিকার বহন করছেন। ২০১৯ সালে ওয়েইসির বিরুদ্ধে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি তার আধিপত্য বজায় রেখে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫৮.৯৪% পেয়ে আসনটি জিতেছিলেন।
এই লোকসভা নির্বাচনের জন্য হায়দরাবাদে বিজেপি মাধবী লতাকে প্রার্থী করেছে, এবং বিআরএস গদ্দাম শ্রীনিবাস যাদবকে প্রার্থী করেছে।
৫৪৩টি সংসদীয় আসনের নির্বাচন সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে, যা ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১ জুন শেষ হবে। তেলেঙ্গানায় ভোট হবে ১৩ মে।
রাশিয়ার মস্কোতে গত শুক্রবার কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও এ ধরনের আক্রমণের সামর্থ্য জঙ্গি সংগঠনটির আছে বলে বিশ্বাস করে না রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার তার দেশের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাখারোভা বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আইএসের আছে, এমনটি বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন।
সাম্প্রতিক ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৪৩ জন। আহত অনেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও এ দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।
রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর দায় স্বীকার করে আইএস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলাটি চালায় আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে ইউক্রেন, তবে জাখারোভার ভাষ্য, ইউক্রেনকে হামলার দায় থেকে বাঁচাতে ত্বরিত গতিতে আইএসের ওপর দায় চাপায় পশ্চিমা দেশগুলো।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিন ও দেশটির অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজার নির্যাতিত মানুষকে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে ইরান কখনও ইতস্তত বোধ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
গাজার শাসক দল হামাসের পলিট ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার তেহরানে সাক্ষাৎ করতে গেলে আয়াতুল্লাহ এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে প্রেস টিভি।
খামেনিকে উদ্ধৃত করে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং গাজার নিপীড়িত ও সহিষ্ণু জনগণকে সমর্থনের ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কখনও ইতস্তত বোধ করবে না।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় বিরতিহীন এ হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৩২ হাজার ৪১৪ জনের।
এমন বাস্তবতায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে ‘ঐতিহাসিক ধৈর্য’ ধরার জন্য গাজাবাসীর প্রশংসা করে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, এ ধৈর্য ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য মর্যাদা ও গর্বের উৎসে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের শাংলা জেলার বিশাম এলাকায় মঙ্গলবার গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় চীনের পাঁচ নাগরিকসহ কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মালাকান্দ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ আলি গান্দাপুরের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামাবাদ থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার দুসু এলাকার ক্যাম্পে যাওয়ার পথে চীনের প্রকৌশলীদের গাড়িবহরে বিস্ফোরকভর্তি গাড়িটি উঠিয়ে দেয় আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী।
তিনি আরও বলেন, ‘হামলায় চীনের পাঁচ নাগরিক ও তাদের পাকিস্তানি চালক নিহত হন।’
হামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাটি ঘিরে ফেলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্তে নামায় এ পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ইসলামাবাদে চীনা দূতাবাস গিয়ে রাষ্ট্রদূত জিয়াং জ্যায়দংয়ের কাছে শোক প্রকাশ করেন।
এক বিবৃতিতে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘চায়না-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডরের (সিপিইসি) শত্রুরা আরও একবার এ ধরনের কাপুরুষোচিত কাজ করে একে ব্যাহত করার চক্রান্ত করেছে, কিন্তু অশুভ অভিলাষ পূরণে কখনই সফল হবে না তারা।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য