নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী দলগুলোর কাছে তিনি সরাসরি এ প্রস্তাব দিয়ে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে সবাইকে জোটবদ্ধ হতে বলেন।
শহীদ দিবস পালনে বুধবার ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। এবারই প্রথম তৃণমূলের শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান জাতীয় স্তরে সম্প্রচার করা হয়। ২৮ বছর আগে ২১ জুলাই পুলিশের গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী নিহত হন। সেই থেকে শহীদ দিবস পালন করে আসছে তৃণমূল।
গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, ঝড়খান্ড, তামিলনাড়ু এবং দিল্লিতে সম্প্রচার হয় তৃণমূল নেত্রীর ভাষণ। দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বসে মমতার ভাষণ শোনেন দ্বিগবিজয় সিং, পি চিদাম্বরম, শারদ পাওয়ার, সুপ্রিয়া সুলে, কেশব রাও, রামগোপাল যাদবের মতো নেতারাও।
বিজেপিবিরোধী জোট গঠনের আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘ছেড়ে দিলে চলবে না। খেলা একটা হয়েছে, ৫ মে তার রেজাল্ট আপনারা পেয়েছেন। কিন্তু খেলা এখনো শেষ হয়নি। খেলা হবে, যতদিন না বিজেপি দেশ থেকে বিদায় নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জনবিরোধী মোদি সরকারকে উৎখাত করতে হবে। বিজেপিবিরোধী দলগুলোকে এখনই জোট গঠন করতে হবে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য ঐক্য প্রয়োজন।
‘দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন। বিরোধীদের বিরক্ত করা হচ্ছে। এজেন্সিগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে। কে বাদ আছে? শারদজি আপনিও না, চিদাম্বরমজিও নন। প্রতিবাদ করলে গুলি চলছে। গোলি, বোলি আর গালি, গোটা দেশে এই রাজনীতি করছে বিজেপি। বিভাজন মেরুকরণ আর সংঘাত।’
মমতা বলেন, ‘বাংলা দেখিয়েছে, এবার গোটা দেশ দেখাবে। দেশের সব রাজনৈতিক নেতাদের বলছি, নিজের পার্টিকে বোঝান, লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র আড়াই বছর বাকি। এখন থেকে পরিকল্পনা করুন। ফ্রন্ট তৈরি করুন। তাড়াহুড়ো যেমন নয়, তেমন ফেলে রাখাও নয়। বিজেপিকে দেশ থাকে তাড়াবই।'
তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের সময় জোট করলে হবে না। আগেই জোটবদ্ধ হতে হবে। আমি আপনাদের নির্দেশমতো সেই জোটের একজন কর্মী হিসেবে লড়াই চালিয়ে যাব।’
সংকীর্ণ স্বার্থ ভুলে গিয়ে, দেশের স্বার্থে পুরো বিজেপিবিরোধী দলগুলোকে একজোট হয়ে দেশকে বিজেপির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তারা গোয়েন্দাগিরি করছে। ফোনে যা কথা বলব, রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। পেগাসাস, ডেঞ্জারাস, ফেরোসাস। তারা গরিবদের টাকা না দিয়ে, টিকা না দিয়ে স্পাইগিরি করছে। গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভকে ধ্বংস করে দিয়েছে মোদি সরকার।’
২৬ জুলাই দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। তার দিল্লিতে থাকার সময় বিজেপিবিরোধী জোট গড়ার জন্য বৈঠকের আয়োজন করার জন্য শারদ পাওয়ার, চিদাম্বরমদের অনুরোধ করেন মমতা।
এর আগে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর দিল্লিতে গিয়ে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার এবং কংগ্রেস হাই কমান্ডের সঙ্গে মোদিবিরোধী মঞ্চের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেন, আমদানি করা যত পণ্য ছিল সব আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত সেটা আমরা খাতভিত্তিক নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করছি।
রোববার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যত ধরনের অভিযোগ আছে, প্রত্যেকটা অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। এখানে কারো কোনও ব্যত্যয় আছে কিনা সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উপদেষ্ট আরো বলেন, আমাদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগুনের পূর্ববর্তী এবং বর্তমান অবস্থান পুরো ঘটনা অনুসন্ধান করবে। তারপর অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সব তদন্ত সংস্থার সবাইকে একত্র করে এ রহস্য উদঘাটন করব।
তিনি বলেন, এখন যেসব পণ্য আসছে, কার্গো থেকে এসব পণ্য সরবরাহে যাতে কোনও জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আগামী সাতদিন ২৪ ঘণ্টা করে কাজ করবো। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ইন্সুরেন্স কভারেজ কী আছে এবং আমাদের বিমানবন্দরের ইন্সুরেন্স কাভারেজ কী আছে সবকিছু আমলে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হব।
তিনি বলেন, গতকালকে ২১টির মত ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে। এসব ফ্লাইটের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগামী তিন দিন অতিরিক্ত ফ্লাইটের সব ধরনের চার্জ মওকুফ করেছে সরকার।
বিদেশ যেতে না পেরে ক্ষোভে মাইক ভাড়া করে পুরো এলাকাবাসীকে গালাগাল করেছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার এক যুবক। পরে সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান গ্রামে। ওই যুবকের নাম সারোয়ার হোসেন রাব্বি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তিনি বিদেশ যেতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাব্বি বিভিন্ন এনজিও ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কেউ সহযোগিতা না করায় তার মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নেয়। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে তিনি ক্ষোভের বশে ৫০০ টাকা খরচ করে একটি মাইক ভাড়া নেন এবং পুরো গ্রামজুড়ে মাইকযোগে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে গালাগাল করেন।
পরে তিনি গালাগালের ভিডিও নিজ ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন। ভিডিওতে রাব্বি অভিযোগ করেন, তিন-চার মাস ধরে সৌদি যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও মাত্র এক লাখ টাকা জোগাড় করতে না পারায় তার ভিসা ও মেডিকেল মেয়াদ (৩০ অক্টোবর) শেষ হতে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সমিতির কাছে ঋণ চাইলেও কেউ সহযোগিতা করেনি। এমনকি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকেও লোন নিতে গেলে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
রাব্বি বলেন, “মানুষের কারণে আগেও দু’বার আমার ভিসা নষ্ট হয়েছে। এবারও কেউ সাহায্য করল না। তাই রাগের মাথায় ভুল করেছি।”
ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেনন “প্রথমে ক্ষমা চাইছি। আমি অনেক খারাপ ভাষায় গালাগাল করেছি। আমি কেন এমন করেছি, শুনুন।”
রাব্বি জানান, তিনি বিবাহিত এবং এক ছোট সন্তানের পিতা। জীবিকার তাগিদে তিনি অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি বিকাশের কাজ করেন।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীরা প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও পরে ভিডিওটি ভাইরাল হলে অনেকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হন। কেউ কেউ আবার রাব্বির মানসিক কষ্ট ও পারিবারিক চাপের প্রতি সহানুভূতিও প্রকাশ করেছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তবে এখন চায়ের দোকান থেকে ঘরোয়া আড্ডা সব জায়গায় রাব্বির ঘটনাই আলোচনার বিষয়।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম স্বৈরাচারের মতো, তাদের রিমোট কন্ট্রোল অন্যের হাতে।
রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে শাপলা অর্জন করা হবে। মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাদের মতো আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। গণবিশ্বাসী ও জনবান্ধব আচরণ হওয়া উচিত ছিল।
এনসিপির এ নেতা বলেন, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার মতো বর্তমান কমিশনের কোনো যোগ্যতা নেই। নুরুল হুদার মতো পরিণতি যাতে না হয় এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক দলের জন্য তৈরি করা প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকায় এনসিপির আবেদন বারবারই নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নিরাপদ ও দখলমুক্ত সড়কের দাবিতে ফার্মগেটে বিক্ষোভ করেছে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও সরকারি সাইন্স হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট মোড়ে শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে প্রথমে মানববন্ধন করে। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের স্কুল ও কলেজের সামনে অটোরিকশাগুলো জ্যাম তৈরি করে। গেটের সামনে রিকশাগুলো লাইন ধরে থাকে। এই এলাকায় স্কুল, কলেজ ও বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী এই রাস্তা দিয়ে পারাপার করতে হয়। অটোরিকশা একটার পর একটা থাকায় জ্যাম সৃষ্টি করে। রাস্তা পারাপারের সমস্যা হয়। রাস্তা যখন ফাঁকা থাকে, তখন তারা ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালায়। অটোরিকশার যে ব্রেক, তা দিয়ে কন্ট্রোল করা সম্ভব না। অনেক সময় তারা শিক্ষার্থীর উপরে রিকশা তুলে দেয়। ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হতে হয়।
পাঁচ দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনের সড়কে অবিলম্বে স্পিড ব্রেকার স্থাপন করতে হবে। পর্যাপ্ত ল্যাম্প পোস্ট লাগাতে হবে। লেন ডিভাইডার এবং ট্রাফিক আইল্যান্ড স্থাপন করতে হবে। ফুটপাথ থেকে সব অবৈধ দোকান, অস্থায়ী স্থাপনা, পার্কিং স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে হবে।
বাড়িভাড়ার ৫ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পরপরই এ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতার প্রজ্ঞাপন আমাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়। কিন্তু ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে রোববার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় শহিদ মিনারে ৮ম দিনের মতো অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে দুপুর ১২টায় শিক্ষাভবন অভিমুখে ভুখা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাড়ি ভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ, মেডিকেল ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
এর আগে এদিন সকালে বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এবং সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা বৃদ্ধিতে সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ।
উপসচিব মিতু মরিয়মের স্বাক্ষর করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, ৬ শর্ত পালন সাপেক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) দেওয়া হবে। আদেশ আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নং গেটের কার্গো ভিলেজ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ২১ ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ধ্বংসস্তূপ ভবনে এখনও পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টার পরও এমন চিত্র দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, আগুন এখনও পুরোপুরি নির্বাপণে আসেনি। এজন্য ধোঁয়া উড়ছে। তবে আমাদের ২২ ইউনিট আগুন নির্বাপণের কাজ করছে। আগুন যেন বাড়তে না পারে সেজন্য অনবরত পানি ছিটানো হচ্ছে।
এদিকে, সকাল থেকেই বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসছেন ভুক্তভোগীরা। উৎসুক জনতার ভিড়ও দেখা গেছে। তবে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টে কর্মরত রেজাউল করিম রনি বলেন, শুক্র-শনিবার আমদানি বন্ধ থাকে। কিন্তু রপ্তানি সবসময় খোলা থাকে। সেই সুবাদে শনিবার দিন সকালে আমি এক্সপোর্ট করতে আসি। বৃহস্পতিবার আমরা টাকাও জমা দিয়েছি। কিন্তু মালামাল নিতে পারিনি। রোববার নেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আগুনের প্রভাব পড়বে দেশের তৈরি পোশাক কারখানায়। কারণ এখানে এমন পণ্য সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে শনিবার বা ছুটির দিন এমন ঘটনা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এছাড়া আগুনে হাজারও কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। একইসঙ্গে কাজ করেন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন, দুই প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ-আনসার সদস্যরা।
সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজটি মূলত পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি জায়গায় বা আট নম্বর গেটের পাশে। আর আগুন লেগেছে আমদানির কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে। এখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হয়। আগুনে এখানকার প্রায় সব মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ভয়াবহ আগুনের কারণে বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ঢাকার বদলে সব বিমান চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে, তিনটি ফ্লাইট সিলেটে, চেন্নাই ও দিল্লি থেকে দুটি ফ্লাইট কলকাতায় অবতরণ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রাত ৯টার পর উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হয়। তবে ছয় ঘণ্টায় ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী।
তথ্য মতে, আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার ফাইটার, সিভিল অ্যাভিয়েশন, আনসারসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আনসার সদস্যই রয়েছেন ২৫ জন। তাদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিমানবন্দরের সূত্রমতে, তৈরি পোশাক কারখানার জন্য আমদানি করা বিপুল পরিমাণ কাপড় ও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল আগুন লাগা ভবনে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লেগেছে। কবে নাগাদ ফের কার্গো ভিলেজ চালু করা যাবে তা পরে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারে মিষ্টির বক্সের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিরোধের জেরে টর্চলাইট জ্বালিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের ইমামবাড়ি বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ১০ অক্টোবর বানিয়াচং উপজেলার সন্দলপুর গ্রামের আমির উদ্দিনের মালিকানাধীন নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারের ‘ভাই ভাই হোটেল’ থেকে কালিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সাদমান আহমেদ ইমন মিষ্টি ক্রয় করেন। মিষ্টির বক্সে অতিরিক্ত ওজন ধরা পড়লে ইমন বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। এতে হোটেল মালিকপক্ষ ও ইমন মিয়ার পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত শনিবার সন্ধ্যার পর উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় টর্চলাইট জ্বালিয়ে চলে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারজুড়ে টর্চের আলো আর চিৎকারে আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী।
মন্তব্য