করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আবারও পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ব। দেশে দেশে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। ক্ষীণ হয়ে আসছে করোনাপূর্ব স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা, শঙ্কা বাড়ছে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের।
টানা ৯ সপ্তাহ বিশ্বজুড়ে করোনায় দৈনিক মৃত্যু নিম্নমুখী থাকার পর গত সপ্তাহ থেকে এ সংখ্যা বাড়তে শুরু করে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত সপ্তাহে ৫৫ হাজার মানুষের মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে যা আগের সপ্তাহের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত সপ্তাহে করোনার বৈশ্বিক সংক্রমণও ছিল ১০ শতাংশ বেশি। নতুন করে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের দেহে সে সময় ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া আর যুক্তরাজ্যে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, মহামারির এ পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করার অন্যতম কারণ টিকা কার্যক্রমের ধীর গতি, মাস্ক পরা ও অন্যান্য পূর্ব সতর্কতামূলক বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যাওয়া এবং এ সুযোগে অধিক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত বিস্তার।
করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তিত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এ পর্যন্ত ১১১টি দেশ ও অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। আগামী কয়েক মাসে এটাই বৈশ্বিক মহামারির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদ্রোস আধানম বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে... তৃতীয় ধাক্কার শুরুটা কেবল দেখছি আমরা।'
মহামারির বিস্তার বাড়তে থাকার মধ্যেই ১১তম দেশ হিসেবে লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনায় বুধবার করোনায় মৃত্যু এক লাখ ছাড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহে করোনায় রেকর্ড মৃত্যু দেখেছে রাশিয়া। বেলজিয়ামে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাড়ছে ডেল্টার সংক্রমণ; এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এ সংখ্যা। যুক্তরাজ্যে ছয় মাসে প্রথমবার এক দিনে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মিয়ানমারে দিন-রাত চলছে মরদেহ সমাধিস্থ করার কাজ। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার মৃত্যু দেখেছে ইন্দোনেশিয়া; দিনে নতুন শনাক্ত ৫৪ হাজারের বেশি, যা এক মাস আগেও ছিল আট হাজারের নিচে।
বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে করোনা প্রতিরোধে গণটিকাদান চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সেখানেও গত দুই সপ্তাহে শনাক্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গড় ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও দৈনিক মৃত্যু এখনও নিম্নমুখী।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে মঙ্গলবার টানা পঞ্চম দিনের মতো দৈনিক শনাক্ত এক হাজারের বেশি ছিল। শিকাগোতে বাইরে থেকে শহরে আসা মানুষজনকে টিকা না নেয়া থাকলে হয় কোভিড নেগেটিভ টেস্ট দেখাতে হবে, না হলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
কানেক্টিকাটে জরুরি ব্যবস্থার সময় বাড়াতে পার্লামেন্টে ভোট হয়েছে। মাস্ক না পরলে টিকা থাকার প্রমাণ সঙ্গে রাখতে হবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে অ্যালাবামার সামরিক ঘাঁটি থেকে।
এশিয়ায় করোনার বিস্তার ঊর্ধ্বমুখী বলে চতুর্থবারের মতো চলতি মাসে জরুরি অবস্থা জারি করেছে জাপান। দেশটিতে দ্রুত হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে রোগীতে। সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজধানী সিউলে এযাবৎকালের কঠোরতম সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় ৫০ লাখ বাসিন্দার সিডনিতে জারি করা হয়েছে কঠোর লকডাউন, যা চলবে কমপক্ষে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত।
ইউরোপের মধ্যে স্পেনের বার্সেলোনায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। লন্ডনে বাস ও ট্রেনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র সাদিক খান। বিদেশগামী সকলকে দেশে ফিরতে হলে কোয়ারেন্টিনের শর্ত পূরণ করতে হতে পারে বলে সতর্ক করে ইতালি।
বিশ্বজুড়ে করোনা প্রতিরোধী গণটিকাদান কার্যক্রম চলছে সাত মাস ধরে।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, দিনে বৈশ্বিক মৃত্যু কমেছে প্রায় আট হাজার করে, জানুয়ারিতে যা ছিল ১৮ হাজারের বেশি। দৈনিক সংক্রমণ এখন সাড়ে চার লাখের নিচে, যা এপ্রিলের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
এমন সময়ে অনেক দেশের ওপর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার চাপ বাড়ছে।
কিন্তু পূর্ব সতর্কতামূলক সব বিধিনিষেধ শিথিলে ভাইরাস বিস্তারের সুযোগ আরও বাড়বে এবং মহামারি দীর্ঘায়িত হবে বলে সতর্ক করেছে ডব্লিউএইচও।
এ অবস্থায় সংক্রমণের গতি রোধে টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়াতে বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ বাড়ছে।
করোনার সংক্রমণে শীর্ষ দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনগোষ্ঠীর ৫৫ শতাংশ, প্রায় ১৬ কোটি আমেরিকান দুই ডোজ টিকা গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন।
ভারতে এ হার মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য