মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা সফরকালে মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এ সমর্থনের কথা জানান।
লাভরভ জানান, অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স (আসিয়ান) মিয়ানমার নিয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। এর মাধ্যমে সংকটে জর্জরিত দেশটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় আসিয়ানের অবস্থানের প্রতি আমাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছি।
‘আমরা মনে করি, আসিয়ানের প্রস্তাব মিয়ানমারের সংকট নিরসনের ভিত্তি হতে পারে।’
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদির সঙ্গে আলোচনা শেষে ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে লাভরভ এসব কথা বলেন।
মিয়ানমারের চলমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ার গভীর সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে লাভরভের বক্তব্যে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে আসিয়ানের পাঁচ দফা প্রস্তাবের প্রতি জোর দেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারসুদি।
প্রস্তাবে মিয়ানমারের সহিংসতা দ্রুত বন্ধে দেশটির সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা শুরুর কথা বলা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
সে সময় সামরিক নেতাদের হাতে গৃহবন্দি হন দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে মিয়ানমারের জনগণের চলমান আন্দোলনে সামরিক জান্তা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মানুষ নিহত হয়েছে। কারাবন্দি হয়েছে অনেকে।
আন্তর্জাতিক মহলও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার।
মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক নেতা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে বৈশ্বিক আহ্বানও জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
তবে রাশিয়া শুরু থেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে নীরব থেকে সেনা কর্মকর্তাদের কার্যকলাপে সমর্থন দিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় একসময় অবৈধ কারখানায় ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির দায়ে জেল খাটা এরশাদ আলী (৫৫) এবার শিশু চিকিৎসক সেজে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
‘ডাক্তার’ সেজে তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার আহসানগঞ্জ এলাকায় মেহেদী মেডিকেল হল ফার্মেসিতে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। অথচ তার কোনো বৈধ চিকিৎসা ডিগ্রি বা সনদ নেই, এমনকি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকও নন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এরশাদ আলীর ভুল চিকিৎসায় শিশুরা মারাত্মক শারীরিক জটিলতায় পড়ছে, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
জানা যায়, জেলার আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাত্র ৯০০ মিটার দূরে আহসানগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল মার্কেটে অবস্থিত ‘মেহেদী মেডিকেল হল ফার্মেসিতে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভিড় করেন। সপ্তাহে মাত্র একদিন এখানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বিধান কুমার শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বাকি ছয় দিন ফার্মেসির মালিক এরশাদ আলী নিজেই চিকিৎসকের ভূমিকায় শিশুদের নানা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেন।
স্থানীয়রা জানায়, এরশাদ আলী রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের গাদু শেখের ছেলে। অতীতে তিনি ঢাকার চানখারপুল এলাকায় বাসায় অবৈধ ওষুধ কারখানা স্থাপন করে ভেজাল ওষুধ তৈরি করতেন এবং তা বিভিন্ন ফার্মেসিতে সরবরাহ করতেন। এ ঘটনায় একটি গোপন অভিযানে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত তার কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ জব্দ করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের রায়ে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরশাদের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন অনেকেই।
উপজেলার বেলঘড়িয়া গ্রামের হযরত আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ১৩ মাস বয়সি কন্যাশিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। লোকমুখে শোনে এরশাদ আলীর কাছে নিয়ে গেলে তিনি একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকসহ সাতটি ওষুধ দেন। পরে জানতে পারি তিনি কোনো বৈধ চিকিৎসক নন।’
জাত আমরুল গ্রামের আরিফুল ইসলাম জানান, ‘তার মেয়ের জন্য প্রকৃত চিকিৎসক যে ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন, মেহেদী মেডিকেল হল ফার্মেসিতে গেলে এরশাদ আলী তা পরিবর্তন করে ইনজেকশন দেন। ইনজেকশনটি ভুলভাবে প্রয়োগ করায় তার মেয়ের হাত ফুলে যায় এবং পরবর্তীতে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে তাকে নিজের জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রওনক রাজীব বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ঔষধ প্রশাসন যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এরশাদের মতো ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এরশাদ আলী দাবি করেন, আমি ফার্মেসিস্ট কোর্স সম্পন্ন করেছি, ফলে আমি চিকিৎসা দিতে পারি। সরকারের পক্ষ থেকে আমার ড্রাগ লাইসেন্সও রয়েছে। হ্যাঁ আমি কিছু দিন জেলে ছিলাম। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। আর আপনাদের কোনো সনদ দেখাতে বাধ্য নই।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌর প্রশাসনের জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে পৌরসভাটির চিত্র। প্রাণ ফিরে পেয়েছে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বাজার উন্নয়নের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকাসহ ভানুগাছ বাজারের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা তাদের অর্থ দিয়ে নির্মাণ করেছেন দোকানকোটা। যা থেকে পৌরসভা মাসিক ভাড়া গ্রহণ করতে পারবে যা পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে। নতুন করে নানামুখী উন্নয়নের মাধ্যমে কমলগঞ্জ পৌরসভাকে বদলে দেওয়ার কারিগর হিসেবে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মাখন চন্দ্র সূত্রধর।
জানা যায়, কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজারে পূর্ব ও পশ্চিম পাশের নালার ওপর প্রকল্প কর্তৃক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার থেকে ইজিপিতে দরপত্রের মাধ্যমে ড্রেন স্ল্যাবসহ নির্মাণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। তৎকালীন পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদের সিদ্ধান্ত ছিল কালভার্টে স্ল্যাব নির্মিত হলে পূর্ব ও পশ্চিম অংশ ভবিষ্যতে পৌর কর্তৃপক্ষ সালামির বিনিময়ে সেখানে সেমিপাকা দোকান গৃহনির্মাণ করে পৌরসভার মাসিক ভাড়া গ্রহণ করতে পারবে যা পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে। সে লক্ষ্যে কালভার্টের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে স্ল্যাবসহ কালভার্ট নির্মিত হওয়ার পর জায়গাটি অরক্ষিত থাকায় ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ীসহ খুচরা ফল বিক্রেতারা সে জায়গার ওপর ময়লা-আবর্জনা ফেলে জায়গাটি দখল করে নষ্ট করে ফেলতেছে। তাই পৌর কর্তৃপক্ষ বর্তমানে সিদ্ধান্ত নেয় যে, জায়গাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেলামির ভিত্তিতে সেমিপাকা দোকান গৃহনির্মাণ করে দিলে জায়গাটি সুরক্ষিতসহ পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
অতিসম্প্রতি একটি কুচক্রীমহল ইর্ষান্বিত হয়ে কমলগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ভানুগাছ বাজারের দোকানকোঠা নির্মাণ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কাজী মামুনুর রশীদ, আবু তালেব, আরমান হোসেন দুলনসহ অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, পৌরসভার এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। আরও আগে যদি এমন উদ্যোগ নেওয়া হতো তাহলে কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজারের চিত্র পাল্টে যেত। বর্তমানে বাজারের ভেতরে দোকান ঘর নির্মাণ ও পৌরসভার ভেতরে ড্রেনের ওপর দোকানকোটা নির্মাণ করায় পৌর এলাকার ভানুগাছ বাজারের চিত্র পাল্টে গেছে। সবগুলো চালু হলে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মানুষজন এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। যা থেকে সরকার ভালো রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
নিজ অর্থায়নে পৌরবাজারে ঘর নির্মাণ করা রাজন, পারভেজ, শুভ, বুলবুল, মুক্তাদিরসহ অনেকেই জানান, আমরা পৌরসভায় আবেদন করি। তার পরিপ্রেক্ষিতে নিজ অর্থায়নে দোকানকোটা নির্মাণ করি। যা থেকে পৌরসভা মাসিক ভাড়া আমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন। এতে করে সরকারের বাড়তি রাজস্ব আয় হবে। তারা জানান, বর্তমানে কিছু কুচক্রী মহল পৌরসভার এমন উন্নয়নের চিত্র দেখে ওঠে পড়ে লেগেছে নিন্দা করার জন্য। তারা ফায়দা লুটতে না পারায় বিভিন্ন ফেক আইডি ব্যবহার করে পৌরসভার বদনাম ছড়াচ্ছে। যা তারা কখনো সফল হতে পারবে না।
ভানুগাছ বাজার পৌর বণিক সমিতির সভাপতি ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সফি বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তা ও বণিক সমিতির সহায়তায় বাজারে দোকানকোটা নির্মাণ করা হয়। যা পৌর বণিক সমিতির যেমন লাভ হবে, তেমন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পৌরসভার আয় বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও জানান, বর্তমান পৌর প্রশাসক যেকোনো ধরনের নাগরিক সমস্যার কথা জানালে তিনি ছুটে যান সেই সমস্যা সমাধানে। এভাবে তিনি অল্প সময়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এত অল্প সময়ে প্রশাসক হিসেবে যে সকল কাজ হাতে নিয়েছেন সেগুলো ছিল পৌরবাসীর প্রাণের দাবি।
আলাপকালে কমলগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ বেলাল আহম্মদ জানান, পৌরসভার ভানুগাছবাজারে ঘর নির্মাণ ও ড্রেনের ওপর দোকান কোটা নির্মাণের পর বাজারের পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। যা আগের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এসব ঘর ও দোকানঘর থেকে পৌরসভা রাজস্ব আয় করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত, অক্টোবর ৬, ২০০৯ সালের পৌরসভার সম্পত্তি চুক্তি ৪৪-১ (ক) বিধি মোতাবেক ‘পৌরসভার মালিকানাধীন অথবা তার ওপর ন্যস্ত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়নের জন্য বিধান করিতে পারিবে’ এবং ৪৪-২ (খ) বিধি মোতাবেক ‘নিজস্ব অথবা সরকার অথবা অন্য কর্তৃপক্ষ হতে প্রাপ্ত সম্পত্তির সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং উন্নতি সাধন করতে পারবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কমলগঞ্জ পৌর প্রশাসক মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, তিনি নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন। যতদিন দায়িত্বে রয়েছেন ততদিন কমলগঞ্জ পৌর ও উপজেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। এ বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
নাটোর জেলার সেপ্টেম্বর মাসের শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বড়াইগ্রাম থানা। একই সঙ্গে জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন বড়াইগ্রাম থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) রাকিবুল ইসলাম। মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেপ্তারে বিশেষ সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন।
বড়াইগ্রাম থানার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ থানার পুরস্কার গ্রহণ করেন ওসি মো. গোলাম সারোয়ার। গত মঙ্গলবার নাটোর জেলা পুলিশ লাইন্স কনফারেন্স রুমে সেপ্টেম্বর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশ সুপার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম পুরস্কার ও সন্মাননা স্মারক তুলে দেন। সভায় জেলার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মামলার নিষ্পত্তি, ওয়ারেন্ট তামিল, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক মামলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, চুরি-ডাকাতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, নাটোর জেলার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। তিনি চাঁদাবাজি রোধ, রাত্রিকালীন টহল জোরদার এবং চুরি-ডাকাতি ও দস্যুতা নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদারের নির্দেশনা দেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইফতে খায়ের আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমিন নেলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শোভন চন্দ্র হোড়, জেলার সব থানার ওসি, সিআইডি প্রতিনিধি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি গোলাম সারোয়ার বলেন, এই অর্জন বড়াইগ্রাম থানার পুরো টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। মাদক নির্মূল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি। এই স্বীকৃতি আমাদের আরও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করবে। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া কোনো সাফল্য সম্ভব নয়, তাই জনসাধারণের সহযোগিতাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
সারাদেশে চলমান টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫ উপলক্ষে গাজীপুরের কালীগঞ্জে শিশুদের মাঝে জুস ও চকলেট বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে বালিগাঁও মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক মিলনের উদ্যোগে বালিগাঁও মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শামসুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে জুস ও চকলেট তুলে দেওয়া হয়।
জানা যায়, কোমলমতি শিশুদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার লক্ষ্যে গত রোববার থেকে সারাদেশে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। কিন্তু অনেক শিশুর মধ্যেই টিকা গ্রহণে অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এই অনাগ্রহ কাটাতে উৎসাহমূলক উদ্যোগ হিসেবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে জুস ও চকলেট বিতরণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেড়ে গেছে। তারা আনন্দের সঙ্গে টিকা নিচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশে উৎসবমুখরতা বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, জুস ও চকলেট হাতে পাওয়ার পর টিকা নিতে গিয়ে যে ব্যথা পেয়েছিলাম তা একেবারেই ভুলে গেছি। আমরা খুবই আনন্দিত।
এ বিষয়ে উপস্থিত অভিভাবকেরা বলেন, এই উদ্যোগে বাচ্চারা উৎসাহ পেয়েছে। যারা আগে ভয় পেত, তারাও আগ্রহ নিয়ে টিকা নিয়েছে। বিএনপি নেতাদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’
বালিগাঁও মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ‘অনেক শিক্ষার্থী টিকা নিতে ভয় পাচ্ছিল। পরে বিএনপি নেতারা জুস ও চকলেট নিয়ে মাঠে উপস্থিত হয়ে ঘোষণা দেন- যারা টিকা নেবে না, তারা উপহার পাবে না। এতে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পায় এবং সবাই টিকা নেয়। এতে স্কুলে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।’
এ সময় কালীগঞ্জ পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করে মোট ১২ টি নতুন কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক গতকাল একটি সরকারি আদেশ জারী করা হয়েছে। কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ দু’টির বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে জনবল বৃদ্ধি এবং নতুন ১২টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে ৩৭৩টি ক্যাডার পদ এবং ৩,২২৪ টি নন-ক্যাডার পদসহ মোট ৩,৫৯৭টি পদ নতুনভাবে সৃজন করা হয়েছে।
কর জাল সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে স্বনির্ভরতা অর্জন, সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি পরোক্ষ কর ব্যাবস্থাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং মন্ত্রি পরিষদ বিভাগসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক উক্ত আদেশ জারী করা হয়। উক্ত আদেশ অনুযায়ী ৩ পর্যায়ে ৫টি নতুন মূল্য সংযোজন কর কমিশনারেট, ৪টি নতুন কাস্টমস হাউস এবং ৩ টি বিশেষায়িত দপ্তর সৃজন করা হলো।
নতুন ১২ টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন ছাড়াও উক্ত সরকারি আদেশের মাধ্যমে বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের সম্প্রসারণ, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাস্টমস কার্যক্রম এবং কাস্টমস ও ভ্যাট গোয়েন্দা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ফলে পরোক্ষ কর আহরণ কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
তিতাস গ্যাস কর্তৃক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার শনাক্তকরণ এবং উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত ৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ২০২৫ তারিখে বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ সিমন সরকার -এর নেতৃত্বে মেট্রো ঢাকা বিক্রয় বিভাগ -৪ এর আওতাধীন গুলশান সংলগ্ন কড়াইল বস্তিতে অবৈধ গ্যাস লাইন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন অত্র কোম্পানির মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ. শাহনেওয়াজ পারভেজ মহোদয় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে নিজে উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শনসহ জরুরী দিক নির্দেশনা প্রদান করেন এবং বিভিন্ন গ্রাহক আঙ্গিনায় অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান।
কড়াইল বস্তির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানে দেখা যায়, উক্ত বস্তিতে বসবাসরত একশ্রেনীর অসাধু লোকজন অবৈধ উপায়ে পুকুরের পানির নীচ দিয়ে ও ম্যানহোলের ভিতর দিয়ে জিআই পাইপ, কয়েল পাইপ ও প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। উক্ত অভিযানে রোড-৩৪, গুলশান-২ গ্রাহকের সার্ভিস লাইন হতে অবৈধভাবে প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে কড়াইল বস্তিতে গ্যাস সংযোগ পরিলক্ষিত হওয়ায় সংযোগটি বিচ্ছিন্নপুর্বক বিভিন্ন সাইজের ১০০ ফুট প্লাস্টিক পাইপ অপসারণ করা হয়েছে। রোড-৩৩, গুলশান-২ এ একজন গ্রাহকের সার্ভিস লাইন হতে অবৈধভাবে প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে কড়াইল বস্তিতে গ্যাস সংযোগ পরিলক্ষিত হওয়ায় সংযোগটি বিচ্ছিন্নপুর্বক আনুমানিক ২০০ ফুট প্লাস্টিক পাইপ অপসারণ করা হয়েছে। রোড-৩২, গুলশান-২ এ কড়াইল বস্তিতে প্লাস্টিক পাইপের সাহায্যে গ্রাহকের সার্ভিস লাইন হতে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করার কারণে সংযোগটি বিচ্ছিন্নপুর্বক আনুমানিক ৭০ ফিট প্লাস্টিক পাইপ অপসারণ করা হয়েছে। রোড-২৩/সি, গুলশান-২ এ গ্রাহকের সার্ভিস লাইন হতে অবৈধভাবে প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে কড়াইল বস্তিতে গ্যাস সংযোগ পরিলক্ষিত হওয়ায় সংযোগটি বিচ্ছিন্নপুর্বক আনুমানিক ১৩০ ফুট প্লাস্টিক পাইপ অপসারণ করা হয়েছে।
Gulsan lake view নামক হোটেলে গ্রা: সং:নং: ১২৮-২১৬২১ এর বিপরীতে মিটার বিহীন আবাসিক রাইজার হতে ২৫ ঘ.ফু স্টার বার্ণার ২টি এবং ২টি ২১ ঘনফুট এর মডিফাইড ডাবল চুলা সহ সর্বমোট ৯২ ঘ.ফু হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস ব্যবহার পরিলক্ষিত হওয়ায় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ৬০,০০০/- টাকা নগদ জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ১টি রেগুলেটর, প্লাস্টিক পাইপ- আনুমানিক ৫০ ফুট অপসারণ করা হয়েছে এবং গাওসুল আজম মসজিদ ( গুলশান মহাখালী রোড সংলগ্ন), ১৫ নম্বর রোডে পুলিশ বক্সের সাথে সার্ভিস লাইন হতে অবৈধভাবে কড়াইল বস্তিতে প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার পরিলক্ষিত হওয়ায় আনুমানিক ১৫০ ফিট প্লাস্টিক পাইপ অপসারণ করা হয়েছে।
এক সময় দেশের অর্থনীতির প্রধান ভরসা ছিলো সোনালি আঁশ পাট। উত্তরাঞ্চলের কৃষক আজও এই ঐতিহ্যবাহী ফসলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু একের পর এক মৌসুমে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গাইবান্ধার পাটচাষিদের মনে দানা বাঁধছে হতাশা। এবছর বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি থাকলেও সেই বাড়তি লাভ পৌঁছায়নি কৃষকের ঘরে। ফলে হাট-বাজারজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে বঞ্চনা আর নিরাশার দীর্ঘশ্বাস।
পাটচাষের সঙ্গে জড়িত কৃষক ও স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি তৎপরতার ঘাটতি, পাটকল মালিকদের প্রভাব এবং ফরিয়া-সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যই এই সংকটের মূল কারণ। তাদের আশঙ্কা এই অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে কৃষক।
কমছে চাষের পরিমাণ:
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জেলায় পাট চাষাবাদের ৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কেবল চলতি মওসুমে (২০২৫-২০২৬ অর্থ বছর) মাত্র ৩২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বাড়লেও গত কয়েক বছর থেকে কমছে পাট চাষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয় পাট। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ৬৮৭ হেক্টর কমে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টর, ২০২৩ সালেও একই পরিমাণ এবং ২০২৪ সালে আরো ৫২৩ হেক্টর কমে চাষ হয় ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর পাট।
অন্যদিকে, কোনোও বছরই চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
এ বছর দাম বাড়লেও নেই কৃষকের লাভ:
ফুলছড়ি হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৯০০ থেকে চার হাজার ২০০ টাকায়— যা দেড় মাস আগেও ছিলো দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে। দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কৃষকের ঘরে নেই আনন্দ। কারণ, অধিকাংশ কৃষক আগেই কম দামে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন ঋণ শোধের চাপে।
চাষি আব্দুল হালিম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এখন দাম ভালো, আমাদের ঘরে তো পাট নাই । কাটার সময় দাম ছিলো আড়াই-তিন হাজার। ধার শোধ করতে না পারলে তো চলবে না। এখন যারা মজুদ রেখেছে, তারাই লাভ করছে।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের খোলাবাড়ি গ্রামের পাটচাষী জসমত আলী বলেন, “সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক— সবকিছুর খরচ বেড়েছে। আবার বন্যা-খরার ঝুঁকি নিতে হয়। এত পরিশ্রম করেও দাম না পাওয়ায় পাট চাষ এখন বোঝা মনে হয়। কিছু করারও নাই আমাদের। এসব চরের জমিতে এই সময়ে পাট ছাড়া কিছু করতেও পারিনা আমরা।
একই আরেক পাট বিক্রেতা আলিম উদ্দিন হোসেন বলেন, সরকার যদি মৌসুমের শুরু থেকেই আমাদের কাছ থেকে পাট কিনে, তাহলে আমরা একটু বাঁচতে পারবো। না হলে এই চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।” আমরা সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিবছর মরে যাচ্ছি।
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বাজার:
কৃষকদের অভিযোগ, বন্যা-খরাসহ নানা দুর্যোগের ঝুঁকি, হারভাঙ্গা খাটুনি আর ধার-দেনা করে পাট চাষ করে কৃষক। আর মৌসুমের শুরুতেই পাটকল মালিক ও ফড়িয়ারা আঁতাত করে দাম কমিয়ে রাখেন। পরে সেই পাটই তারা মজুদ করে অধিক দামে বিক্রি করেন। বছরের পর বছর এই ‘অদৃশ্য সিন্ডিকেট’ই বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।
পাইকারদের ভিন্ন ব্যাখ্যা:
অন্যদিকে কৃষকদের অভিযোগের দায় নিচ্ছেনা পাইকাররা । ফুলছড়ি হাটের পাইকার শাহ আলম বলেন, “আমরা নিজেরা দাম ঠিক করি না। মিল মালিকরা যে দামে কিনতে বলেন, সেই দামে আমরা পাট কিনি।”
কৃষকদের আক্ষেপ, প্রত্যাশা সরকারি হস্তক্ষেপ:
একদিকে বন্যা, খরা, আগাম বর্ষা-প্রকৃতির অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে বাজারের অন্যায় খেলা-সব মিলিয়ে পাট চাষ এখন কৃষকদের কাছে লাভের নয়, বরং লোকসানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবুও আশা ছাড়েননি। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ভাঙবে 'সিন্ডিকেটের জাল’, ফিরবে পাটের সোনালী অতীত এমনই প্রত্যাশা গাইবান্ধার পাটচাষিদের।
উন্নয়ন সংগঠন সাদ্দাম হোসেন বলেন, হাটে-হাটে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কেনা হলে কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবেন। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এই কৃষকরা। কৃষিনির্ভর এই দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে কৃষককে আগে বাঁচাতে হবে। "কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পাট কেনা হচ্ছে না ফলে লাভবান হচ্ছেন ফড়িয়া-পাইকারেরা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, “জেলায় বর্তমানে পাটের বাজার স্থিতিশীল। কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। তবে পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারি সব দপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
মন্তব্য