বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে পরিচিত হিন্দু-অধ্যুষিত ভারতে বেশির ভাগ মানুষ নিজেদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উদার ও সহিষ্ণু মনে করেন। কিন্তু তারাই দুই ধর্মের নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ের ঘোর বিরোধী।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপকেন্দ্রিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।
উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে দুই ধর্মের মানুষের বিয়েকে অপরাধ বিবেচনায় আইন কার্যকরের পর হলো এ গবেষণা।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী ভারতীয়রা জরিপে বলেছেন যে দুই ধর্মের নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণার জন্য ভারতজুড়ে ২৬টি রাজ্য ও তিনটি কেন্দ্র সরকারশাসিত অঞ্চলের ১৭টি ভাষাভাষী ৩০ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে পিউ।
জরিপে অংশ নেয়া ইসলামের অনুসারীদের ৮০ শতাংশ জানান, তাদের ধর্মের মানুষকে অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করতে দেখতে চান না তারা।
হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একই মত দিয়েছেন ৬৫ শতাংশ মানুষ।
জরিপে ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্ন জাতীয়তা বা নাগরিকত্বের মানুষের মধ্যে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
দেখা গেছে, বেশির ভাগ হিন্দু ধর্মীয় পরিচয় ও জাতীয় পরিচয়কে এক বলে মনে করেন।
জরিপে অংশ নেয়া হিন্দুদের ৬৪ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই মনে করেন, ‘প্রকৃত ভারতীয়’ হতে হলে হিন্দু হওয়া খুব জরুরি।
গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ধর্মবিশ্বাস আর মূল্যবোধে কিছু মিল থাকলেও তা অনুভব করেন না তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতীয়দের সবাই ধর্মীয় সহিষ্ণুতা চর্চার বিষয়ে বেশ উৎসাহী। কিন্তু আবার ধর্মীয় সম্প্রদায়ই নিজেদের অগ্রাধিকার দিয়ে পৃথক জীবনচর্চায় অভ্যস্ত। একসঙ্গে থেকেও বিচ্ছিন্ন তারা।’
বন্ধু হলেও ধর্মীয়ভাবে পৃথক জীবনযাপন করেন অনেক মানুষ। অন্য ধর্মের মানুষকে নিজেদের এলাকা বা গ্রামে থাকতে দিতেও রাজি নন তারা।
রক্ষণশীল ভারতীয় পরিবারগুলোতে হিন্দু-মুসলিম বিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয়। কিন্তু এখন হিন্দু-মুসলিম দম্পতিরা আইনিভাবেও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন ভারতে।
ভারতে বিশেষ বিবাহ আইনের সংশোধনীতে দুই ধর্মের মানুষের বিয়ের ৩০ দিন আগে প্রশাসনকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের আমলে ভারতের কিছু রাজ্য এ বিষয়ে আরও এক ধাপ আগে। দুই ধর্মের মানুষের বিয়েকে ‘জোরপূর্বক বা প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে ধর্মান্তরিত করা’ বিবেচনায় আইনিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাজ্যগুলোতে।
দুই ধর্মের মানুষের বিয়েকে ‘লাভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়ে ভারতের কট্টর ডানপন্থি হিন্দু সংগঠনগুলো ভিত্তিহীন কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোতে দাবি করা হয়, হিন্দু নারীদের ইসলাম ধর্ম নিতে বাধ্য করতে তাদের ভুলিয়েভালিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন মুসলিম পুরুষরা।
এ তত্ত্বের জেরেই এসব আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করেছে হিন্দুত্ববাদী রাজ্য সরকারগুলো।
সাত ঘণ্টা ধরে জ্বলছে গাজীপুরের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কারখানার আগুন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
কারখানার লার্জ ভলিউম প্যারেন্টাল ইউনিটে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন লাগে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, প্রথমে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ও মির্জাপুরের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
আগুন বাড়তে থাকলে কালিয়াকৈর থেকে আরও একটি, মির্জাপুর থেকে একটি, টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে দুটি, সাভার ইপিজেড থেকে দুটি, জয়দেবপুরের দুটি ও ফায়ার সার্ভিসের হেডকোয়ার্টার থেকে দুটি ইউনিট এসে যোগ দেয়।
স্টেশন মাস্টার বলেন, ‘কারখানার নিচতলা, দ্বিতীয় তলা, তৃতীয় তলাসহ প্রতিটি ফ্লোরেই আগুন ছড়িয়েছে। যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সেখানে ওষুধ তৈরির নানা কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ রয়েছে। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে এখনও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’
এ ঘটনার তথ্য ও ছবি সংগ্রহে কারখানা এলাকায় সংবাদকর্মীদের বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
চ্যানেল-২৪-এর গাজীপুর প্রতিনিধি রফিক খান নিউজবাংলাকে বলেন, আগুন লাগার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। তবে কারখানার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পাশের সিমেন্ট কারখানা থেকে অনেক কষ্টে ফুটজ ও ছবি সংগ্রহ করছি।
তবে এই অভিযোগের বিষয়ে কারখানার নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলতে চাননি।
আরও পড়ুন:ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে মাস্ক কেনা সংক্রান্ত জালিয়াতির মামলায় প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার আসামির করা জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক।
মামলার অন্য আসামি ডেলটা লাইফের ডিএমডি ও সিওও মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামরুল হক, ইভিপি এম হাফিজুর রহমান খানের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সমন জারি হলেও তারা আদালতে হাজির হননি।
মাস্ক কেনায় দুর্নীতি অভিযোগ এনে মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক এবং অডিট কমিটির সদস্য জেয়াদ রহমান মামলাটি করেন। শুনানি শেষে আদালত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে পাঠায়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রমজান আলী সরদার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিএমডি ও সিওও মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামারুল হকের অনুমোদনে ২ লাখ ১৫ হাজার পিস মাস্ক ১ কোটি ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ৫০ টাকা। যা ওই সময়ের বাজারমূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি।
ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লাজিম মিডিয়াকে কার্যাদেশ দিয়ে ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়। ক্রয় আদেশের ২ লাখ ১৫ হাজার পিস মাস্কের মধ্যে বিভিন্ন জোনাল অফিসে ১৯ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়। বাকি ১ লাখ ৯৬ হাজার মাস্কের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নিউ পারচেজ অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড গেমেন্ট-এর বিধি অনুযায়ী ৮ লাখ টাকার ওপরে কোনো কিছু কিনতে হলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করতে হয়।
কিন্তু সাবেক প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা এর কোনোটিই না করে নিকটাত্মীয়কে কাজটা পাইয়ে দেন। এতে কোম্পানির পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি হলেও তারা নিজেরা লাভবান হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তেও ঘটনার সত্যতা উঠে আসে। আদালত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে।
আরও পড়ুন:তিন মাস আগেই বিয়ে হয়েছিল। নববধূর হাতে মেহেদির রং এখনও শুকায়নি। এর মধ্যেই বিষপান করে একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী-স্ত্রী! কিন্তু এ ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলছে তাদের স্বজন ও পরিচিতরা। কারণ মাত্র তিন মাসেই সুখী দম্পতি হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন তারা।
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ভাটি দাপুনিয়া এলাকায় রোববার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নবদম্পতির এমন মৃত্যুকে রহস্যজনক বলছে পুলিশও।
নিহত দম্পতির মধ্যে ২২ বছর বয়সী স্বামী রনি মিয়া ভাটি দাপুনিয়া এলাকার মৃত শামসুল হকের ছেলে। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। আর ১৯ বছর বয়সী স্ত্রী সেতু আক্তার নগরীর বলাশপুর কসাইপাড়া এলাকার তারা মিয়ার মেয়ে।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক ফারুক হোসেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, তিন মাস আগে রনি ও সেতুর বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ছিল। রোববার মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে বিষ পান করেন তারা।
বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় লোকজন ওই নবদম্পতিকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর ৪টার দিকে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সেতু আক্তারের বাবা তারা মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা স্বামী-স্ত্রী সুখেই ছিল। প্রায় দিনই মোবাইলে কথা বলতাম। গত রাত ১২টার দিকেও মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছি। তখন তারা ভালোই ছিল। কথা বলার আধঘণ্টা পর শুনি মেয়ে অসুস্থ। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি মেয়ে আর জামাই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না। কীভাবে কী হলো বুঝতে পারছি না।’
দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে গেছি। এরা এভাবে মারা যাবে কল্পনাও করিনি। মৃত্যুটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। কারণ দুইজনের সুখের সংসার ছিল।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ‘মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যু রহস্যজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:দেশের সাধারণ মানুষ ওয়াকিটকি বহনকারী ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। আর এই জনমানসিকতাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। তারা ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।
দেশে একটি চক্র অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সেট মজুত ও বিক্রি করে আসছে। তাদের ক্রেতা মূলত অপরাধ জগতের সদস্যরা। অবৈধ কারবারিরা এভাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আবার এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে একের পর এক অপরাধ সংঘটনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
অবশেষে ওয়াকিটকি সেট অবৈধভাবে বিক্রি চক্রের হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন অলেফিল ট্রেড করপোরেশনের মালিক ও চক্রের হোতা আব্দুল্লাহ আল সাব্বির এবং তার সহযোগী আল-মামুন। এ সময় ১৬৮টি ওয়াকিটকি সেট, ওয়াকিটকি সেটের ৩৫টি ব্যাটারি, ৩২টি চার্জার, ৬৩টি এন্টেনা, ৬টি মাউথ স্পিকার ও ছয়টি ব্যাক ক্লিপ জব্দ করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, র্যাব-৩ ও বিটিআরসির যৌথ অভিযানে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট বিক্রি চক্রের হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, একটি চক্র অধিক মুনাফার আশায় দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে অপরাধীদের কাছে কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট বিক্রি করে আসছে। অথচ বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
গ্রেপ্তার দুজন অলেফিল ট্রেড করপোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অবৈধভাবে বেতারযন্ত্র ওয়াকিটকি সেট মজুত করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছিল। তারা উদ্ধারকৃত ওয়াকিটকি সেটগুলোর ব্যবহারসংক্রান্ত লাইসেন্স ও কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্টজ। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়া আধ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব।
এ ছাড়া বহুতল ভবনের মধ্যে উপরতলা থেকে নিচতলায় যোগাযোগ করা সম্ভব। এসব ওয়াকিটকির মূল্য পাঁচ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত।
র্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, ‘আসামি আল সাব্বির ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী মজুত রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার অপরজন আল মামুন দুই বছর ধরে সাব্বিরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত তারা দুই হাজার ওয়াকিটকি সেট বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন।
দেশের নিরাপত্তা হুমকির উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ ওয়াকিটকি বহনকারী কাউকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবেই গণ্য করে। এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভুয়া ডিবি, র্যাব, ডিজিএফআই ও এনএসআই সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে।
‘এতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে গেলে জনসাধারণ তাদের ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরবর্তীতে অপরাধী শনাক্তকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে, যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে এক যুবককে হত্যার দায়ে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আরেক ধারায় তাদের ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক বেগম সালমা খাতুন সোমবার দুপুরে এই রায় দেন।
তাতে বলা হয়, দণ্ড পাওয়া তিন আসামির মেয়েকে ওই যুবক উত্ত্যক্ত করতেন। এ কারণে তিন বাবা পরিকল্পিতভাবে মেয়েদের উত্ত্যক্তকারীকে হত্যার পর মরদেহ গুম করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত আইনজীবী ওয়াজ করনী লকেট এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন এনায়েতপুর থানার খুকনী কান্দিপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম খলিফা, আব্দুর রহমান ও খুশি আলম ওরফে সাইফুল ইসলাম। দুই আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও পলাতক রয়েছেন আব্দুর রহমান।
নিহত যুবকের নাম ইয়াকুব মোল্লা। তার বাড়ি এনায়েতপুরের রুপনাই গাছপাড়া গ্রামে।
তিনি খুকনী কান্দিপাড়া গ্রামের তিন তরুণীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। এতে ক্ষিপ্ত ছিলেন ওই তিন মেয়ের বাবা আব্দুর রহিম, আব্দুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম। তারা পরিকল্পনা করে ২০২০ সালের ৫ থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যে কোনো এক দিন ইয়াকুবকে বাইরে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মরদেহ গুম করার জন্য এনায়েতপুর থানার খুকনী ইসলামপুরের একটি সরিষা ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রাখেন।
এ ঘটনায় ইয়াকুবের বাবা ইয়াসিন মোল্লা অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন আব্দুর রহমান। তার স্বীকারোক্তিতে গ্রেপ্তার হন সাইফুল ইসলাম। তবে ঘটনার পর থেকেই পলাতক আব্দুর রহমান।
আরও পড়ুন:দুই সপ্তাহ ধরে লাগাতার বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জের হাওরের জনপদ। টানা ছয় দিন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শনিবার রাত থেকে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে সুনামগঞ্জে বাড়ি-ঘর থেকেও বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও হাওরপাড়ের মানুষের বেড়েছে দুর্ভোগ। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির সঙ্কটে পড়েছেন বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জ শহরের শান্তিবাগের বাসিন্দা বিমল রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চার দিন আগে ঘরে পানি উঠেছিল। এখন পানি নামা শুরু করেছে, কিন্তু ঘরে পানি আইয়া সব জিনিস নষ্ট করি দিসে। ছেলেটাও অসুস্থ হই গেছে এই পানিতে থেকে।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা লালপুর এলাকার শ্রমজীবী রোকন আলী বলেন, ‘পানি কমলেও সারা ঘর জুড়িয়া পানির পচা গন্ধ। আমরা নদী থাকি পানি আনিয়া খাইতাম, এখন এই পানিও ভালা না। অনেক দূর থেকে টিউবওয়েল থেকে পানি আনিয়া খাইরাম।’
শহরের উত্তর আরপিন নগর এলাকা লুকনা বিবি বলেন, ‘দুই মেয়ে স্বামী নিয়া তিনদিন হাঁটু পানিতে থেকেছি। এখন পানি নামছে তো বড় মেয়ের ডায়রিয়া আর ছোট মেয়ের সারা শরীরও চুলকানি। ফার্মেসি থাকি তারার বাবায় ওষুধ আনিয়া দিসোইন এগুলো খাওয়াচ্ছি।’
শহরতলির ভাদেরটেক গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী বলেন, ‘১২ মে সড়ক ভেঙে করচার হাওরের উঁচু এলাকায় পানি ঢুকে ধান ডুবেছিল। পানির নিচ থেকে কেউ কেউ ধান কেটে এনেছিলেন, কিন্তু এই ধান শুকানোর সুযোগ না পাওয়ায় পচে নষ্ট হচ্ছে আবার অনেক ধানে চারা উঠে গিয়েছে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামছুদ্দোহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সোমবার সকালে সুরমা নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আবহাওয়া এখন ভালো, ২৪ ও ২৫ মে বৃষ্টি কমবে। এই দুদিন উজানেও (মেঘালয়-চেরাপুঞ্জি) বৃষ্টি কম হবে।’
বানের জলে ভেসে গেছে ১২৫০ পুকুরের মাছ
জেলায় পাহাড়ি ঢলে ধানের পাশাপাশি মাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাবে ১ হাজার ২৫০টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
সেরা মৎস্য খামারির পুরস্কার পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুর রহিম জানান, ব্যাংক থেকে ১২ লাখ টাকা ঋণ তুলে মাছ চাষ করেছিলেন তিনি। বলেন, ‘রুই, মৃগেলসহ দেশীয় জাতের পোনাও বেশি ছেড়েছিলাম এবার। কিন্তু চাষের বেশির ভাগ মাছই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখন কী করবেন বুঝতে পারছি না।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সীমা রানী বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলার ২০ হাজার ৪৬৯টি মাছের পুকুরের মধ্যে ১ হাজার ২৫০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ১৬ হাজার ৫০০ খামারির মধ্যে ১ হাজার ১০০ খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
‘প্রায় ৩ কোটি টাকার বড় মাছ, ৩০ লাখ টাকার পোনা মাছ ভেসে গেছে। ১২ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৫টি উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার্ত এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাল, নগদ টাকা ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন, আমরা তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সেখানও ত্রাণসামগ্রী দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ পিছিয়ে ৫ জুলাই ঠিক করেছে আদালত।
ঢাকা মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলাম প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ঠিক করেন।
সোমবার মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ঠিক ছিল। কিন্তু এদিন মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ প্রতিবেদন দিতে পারেনি।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান এ তথ্য জানান।
গত ২৪ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনির কাঁচা বাজারসংলগ্ন রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে শাহজাহানপুর আমতলা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। এ সময় তার মাইক্রোবাসের পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়িচালক মুন্না।
এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার পর ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
এরপর আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা হলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ ও আরফান উল্লাহ দামাল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য